পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫১

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫১
সাদিয়া আক্তার

— দেখ নয়ন তুই যেটা করতেছিস সেটা একদম ঠিক না মিহি তোকে অনেক ভালোবাসে সেই কলেজ লাইফ থেকে তোরা একে অপরকে পছন্দ করিস ভালোবাসিস।
— পছন্দ বদলায় ভালোবাসা ও বদলায় পুনম আর আমি বুঝেছি মিহি শুধু আমার মোহ ওকে আমি ভালোবাসি না,,, আমি শুধু তোকেই ভালোবাসি।
বলেই পুনমের হাত খানা ধরে নিজের হাতে নিয়ে নিলো
নয়নের কথায় অবাক হয় পুনম কি বলছে কি ছেলেটা পুনম কিছু বলতে যাবে তার আগেই কারো গর্জনে থেমে যায় পাশে তাকিয়ে দেখে চন্দ্র রক্ত চক্ষু নিয়ে তাদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। সেটা দেখে পুনম দ্রুত নিজের হাত ছাড়াতে নিলে নয়ন আরো আকরে ধরে কাতর স্বরে বলে — আমাকে একটু বুঝ পুনম
— আমার হাত ছাড় নয়ন
— নাহ

পিছন থেকে চন্দ্র গম্ভীর স্বরে বলল — ও ওর হাত ছাড়তে বলেছে নয়ন,,,
নয়ন তাকিয়ে দেখে চন্দ্র তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে তবুও পুনমের হাত ছাড়ল না আরো জোরে আকরে ধরল। ব‍্যাথায় পেলো পুনম ব‍্যাথায় কুকরে বলল — আহ
পুনমের ব‍্যাথা সূচক শব্দে বুঝি চন্দ্র রাগের বাধ ভাঙল নাক বরাবর ঘুষি মারল নয়নের পুনমের হাত ছাড়িয়ে নয়নের হাত মুচড়ে বলল — ও বলেনি ওর হাত ছাড়তে হ‍্যা বলেনি বল
নয়ন ব‍্যাথা পেলেও রাগল রাগী কন্ঠেই বলল
— ব‍্যাথা ও পেয়েছে আপনার কি হ‍্যা আপনি ওর আপন ভাই না চাচাতো ভাই
নয়ন কথাটা শেষ করতেই চন্দ্র নয়নের গালে পরপর কতগুলো থাপ্পড় দিতে থাকল। পুনম টানলেও চন্দ্রকে আটকাতে পারল না নিজের মতো দশটা থাপ্পড় দিয়ে থামল চন্দ্র পুনমকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে পুনমের কপালে দীর্ঘ চুমু দিয়ে নয়নের দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলল

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— এখন নিশ্চয়ই বুঝে গেছিস ও আমার কি। এখন একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ নেক্সট টাইম থেকে পুনমের আশে পাশে থাকলেও এর চেয়ে খারাপ অবস্থা হবে।
প্রথমে ঘুষি তারপর হাত মুচড়ে ধরা। এরপর বেশ জোরদার থাপ্পড়ে নয়নের অবস্থা খারাপ কিছু বলার মতো অবস্থায় থাকল না শুধু চন্দ্র ধাক্কা মেরে ছেড়ে দিতেই নয়ন পড়িমরি করে পালিয়েছে। জীবন থাকতে সে আর পুনমের আশপাশ ঘেষবে না।।
চন্দ্র পুনমের দিকে তাকিয়ে ওর হাত ধরে হনহন করে টানতে টানতে বাইকের সামনে ধাক্কা মারে পুনম চন্দ্রর দিকে তাকিয়ে দেখে সে অলরেডি বসে গেলে পুনম ও কি না বলে চুপচাপ চন্দ্রর পিছনে বসে পড়ে।
বাসার সামনের আসতেই পুনমের হাত ধরে টেনে হনহন করে টেনে নিয়ে যায় চন্দ্র

— আমার কথাটা শুনেন একবার
বলতে থাকে পুনম চন্দ্র কি তার কথা শুনে উহু। চাদনী বেগম ড্রয়িং রুমেই ছিলো পুনমকে টানতে দেখে দ্রুত বলে — কি হয়েছে আব্বা পুনমকে এভাবে টেনে এনেছিস কেনো মেয়েটা কাদছে চন্দ্র ছাড় ছাড়
বলতে বলতে চাদনী বেগম চন্দ্রের পিছন পিছন আসে। চন্দ্র পুনমকে ঘরে ছুড়ে দরজা আটকে দিয়ে ফ্লোরে পড়া পুনমের দিকে তাকায় ওদিকে চাদনী বেগম সমানে চিল্লাচিল্লি করে চলেছে।
চন্দ্র পুনমের সামনে বসে পুনমের গাল চেপে ধরে
— এই এই তোর হাত ঐ ব্লাডি বা** নয়ন কিভাবে ধরে ও সাহস পায় কিভাবে। এই তোকে আমি ক্লাসে বসিয়ে যাইনি হ‍্যা তুই ঐ পার্কে কি করছিলি বলল বলছিস না কেনো??
পুনমের চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝড়ছে। চন্দ্র পুনমের উত্তরের আশা করে না তাকে হিরহির করে টেনে ওয়াশরুমে দাড় করায় বেসিনের সামনে পুনমের হাত নিয়ে হ‍্যান্ড ওয়াশ ডলতে ডলতে বলল এই হাত এখনই পরিষ্কার করবি আমার জোহরার শরীরে এক ইঞ্চিও আমি ঐ বা** ছোয়া চাই না,,

— আহ লাগছে ছাড়েন,,, কাদতে কাদতে পুনম বলল
— ও এখন লাগছে তাইনা ওর ছোয়া ভালো লেগেছিল তাইনা,,
এবার পুনমও রেগে গেলো রেগেমেগে চন্দ্রকে ধাক্কা দিয়ে বলল — ওর ছোয়া আমার জন‍্য বেদনা দায়ক হলেও বর্তমানে আপনার ছোঁয়াও বেদনা দেয় আঘাতে জর্জরিত করে
— আমার ছোঁয়া তোমাকে আঘাত দেয়??
চন্দ্রর রাগের মাথায় কথা প্রশ্নে পুনমও রাগের মাথায় উত্তর দেয় — হ‍্যা
— নে ছুলাম না আর তুই পুনমকে যেমন আমি মাথার তাজ করে রেখেছিলাম আজ সেখান থেকে ছুড়ে ফেলে দিলাম। এই চন্দ্র তোকে না স্পর্শ করলে মরে যাবে না
বলেই ওয়াশরুম থেকে বের হয় গেলো যাওয়ার আগে ওয়াশরুমের দরজাটা জোরে ধাক্কা দিয়ে গেলো সেই শব্দে পুনম কেপে উঠল পরোক্ষনেই মনে পড়ল সে কি বলেছে। দৌড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় ততক্ষণে চন্দ্র বেড়িয়ে গেছে ঘর থেকে পুনম দৌড়ে বের হতে নিলে চাদনী বেগম সামনে পড়ে — কি হয়েছে পুনম??
চাদনী বেগমের কথায় পুনম ঝরঝরে কেদেঁ দেয়। চাদনী বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পুনম কান্নাভেজা কন্ঠে ভার্সিটির সব কথা বলতে লাগল।।

— থাক আর কাদে না মা চন্দ্র রেগে গেছে একটু পর রাগ থামতেই এসে পড়বে,,,,
পুনমকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দেয়। পুনম ঘরে যেয়ে দরজা বন্ধ করে উপুর হয়ে শুয়ে কাদতে থাকে। পুনমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে চাদনী বেগম ভাগ‍্যিস রোজিনা বেগম নেই সে পূর্বকে নিয়ে ঐ টিকা দিতে গেছে চাদনী বেগমের ও যাওয়ার কথা ছিলো তবে সে মাথা ব‍্যাথার কারণে যেতে পারেনি মুক্তিকে সাথে পাঠিয়েছে।।
দিন পেরিয়ে রাত হলেই পুনম ছটফট শুরু করে সারাদিন চন্দ্রের কোনো খবর নাই পুনম ফোন দিলেও ধরে না কয়েকটি ফোন দেয়ার পরপরই ফোন বন্ধ পাওয়া যায় সেই থেকে এই পযর্ন্ত ফোন বন্ধ। শিহাব রিশানকে জিজ্ঞাসা করেও কোনো খবর পেল না।।
রাতে চাদনী বেগমকে কোনো রকম বুঝিয়ে খাইয়ে ঘরে পাঠিয়ে নিজে বসে আছে জানালায় মাথা ঠেকিয়ে রাস্তায় নজর দিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে পুনম যখন কোনো বাইকের শব্দ পায় তখনই আশার আলো জেগে ওঠে তবে চন্দ্রকে না পেয়ে নিরাশ হয়।

— কোথায় গেলেন শের “এ আলী সাহেব আমি আপনাকে সেভাবে কথা গুলো বলতে চাইনি ফিরে আসুন না আমি
ফিকরে কেদেঁ ওঠে পুনম। কাদতে কাদতে সেভাবেই বসে পড়ে।। রাত একটায় ঘরে ঢোকে চন্দ্র বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকায় পুনমের দিকে নজর দিতে সেদিকে গেলো
পুনমকে পাজা কোলে নিতে গেলেই দুপুরের কথা মনে পড়ল।।
চন্দ্র সেভাবেই কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকল। হঠাৎই পুনমের ঘুম ভাঙল সামনে কারো পা দেখে লাফ চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরল — আমাকে মাফ করে দিন শের “এ আলী সাহেব আমি আমি,,
পুনমকে বলতে না দিয়ে চন্দ্র বলল — আমাকে ছাড়ুন আমি ছাড়াতে গেলে আপনার শরীরে ব‍্যাথার সৃষ্টি হতে পারে পরে সেই দায়ভার আমার উপর পড়বে।

চন্দ্রের কথা শুনে পুনম আরো জোরে কেদেঁ দেয় কান্নার জেরে হেচকি উঠে যায়। কিছু বলতে পারে না চন্দ্রও সেভাবেই দাড়িয়ে থাকে কান্না করতে কারতে পুনম কখন যে সেভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে টের পায় না।
চন্দ্র কিছুক্ষণ পর ফুপানো বন্ধ বলে বুকের দিকে তাকিয়ে দেখে পুনম ঘুম। চন্দ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনমকে কোলে তুলে বুকে জড়িয়ে ঘুম দেয়।
সারাদিনের না খাওয়া ক্লান্ত শরীরে দুজনেই খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে। ফোনের শব্দে চন্দ্রের ঘুম ভাঙে পিটপিট করে চোখ খুলে পুনমকে পাশে শুইয়ে ফোন চার্জ থেকে নিয়ে দেখে শিহাব কল দিয়েছে
চন্দ্র ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায় — হ‍্যা শিহাব বল

— ভাই ছেলেটাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি,,
— হুম বাসায় যা
বলেই কেটে দেয়। বাকা হেসে বলে — আমার জোহরার গায়ে হাত ঐ হাত দিয়ে অন্তত ছয়মাস কিছু করার অবস্থায় থাকবি না তুই নয়ন।
শাওয়ার নিয়ে আসতেই দেখে পুনম ঘুম থেকে উঠে গেছে বিছানায় বসে বড় আগ্রহ চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চন্দ্র সেদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে — এমন কিউট করে তাকিয়ে থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করা যায়। তবে জোহরা তোমাকে একটু শাস্তি দেয়া প্রয়োজন যাতে পরবর্তীকালে কেউ তোমার হাত বা গায়ে স্পর্শ করলে তাকে উচিৎ শিক্ষা দিতে পারো।।
চন্দ্র পুনমের দিকে একপলক তাকিয়ে কাবার্ড থেকে জামা কাপড় নিয়ে রেডি হতে থাকে।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫০

— কোথায় যাবেন আজ তো আমার ক্লাস ও আপনার কোচিং ও এখন নেই,,
চন্দ্র পুনমের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল — একটু দরকার আছে,,
পায়ে সু গলিয়ে গটগট পায়ে চলে গেলো সেদিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে থাকল পুনম।।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫২