পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫২
সাদিয়া আক্তার
নীল অম্বরে ধূসর রঙা নীরদের ঘনঘটা। তবে বারিধারায় এখনো ভিজেনি রাস্তাঘাট জনজীবন।
দুপুর সাড়ে তিনটা বাজলেও সন্ধ্যা হয়েছে এমন দেখা যায়। সারাদিন পুনমের জঘন্যতম দিন গেছে। চন্দ্রর কোনো খোঁজ খবর নেই প্রতিদিন দুপুরে খেতে আসলেও আজ আসেনি। সকালেও পুনম ভালো মতো খেতে পারেনি চন্দ্র না খেয়ে বেড়িয়েছে শুনে।
শুধু বাবার পাশে বসে বাবার হাতে কোনো রকম এক টুকরো রুটি গিলেছিল সেই থেকে এই পযর্ন্ত খাওয়া হয়নি তবে মনের জ্বালায় খিদেটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে না।
চন্দ্রকে এবার কল দিলো পুনম ওপর পাশ থেকে রিসিভ ও হলো পুনম সালাম দিলো
— হুম ওয়ালাইকুম আসসালাম
— পৌনে চারটা বাজে এখনো খেতে আসলেন না,,
— আসব না কোচিং এ কাজ পড়ে গেছে
চন্দ্রের গম্ভীর স্বর। পুনম ঢোক গিলে আর কিছু বলার আগেই কলটা কেটে গেলো এবার না পেরে পুনম কেদেঁ দিলো।
তখনই ঝপঝপিয়ে নেমে এলো বারিধারা। পুনমের সাথে মনে হয় আকাশ ও কাদছে। পুনম কাদতে কাদতে দৌড়ে বারান্দা থেকে কাপড় আনতে যায়। চন্দ্রের কাপড় উঠিয়ে নিজের শাড়িতে হাত দিতেই পুনমের কিছু মনে পড়ে যায়।
কান্না অবস্থাতেই মুচকি হাসে বিড়বিড় করে বলে — এবার শের “এ আলী সাহেবের রাগ না ভেঙ্গে কোথায় যাবে
রাতে বেলা সবাই খেয়ে দেয়ে ঘুমানোর পর এগারোটার দিকে চন্দ্র বাসায় ঢোকে পুনমকে ড্রয়িং রুমে না দেখে বেশ অবাক হয় বিড়বিড় করে বলে — রেগে আছি কোথায় রাগ ভাঙ্গাবে তা না মহারানি ঘুমিয়ে গেছে
ঘরে যেয়ে অন্ধকার পায় ঘর তবে উজ্জল আকাশের নিয়ন আলোয় দেখতে পায় সবই পুনমকে না পেয়ে ভ্রু কুচকে যায় ওয়াশরুমে চেক করলে সেখানেও পায়না হঠাৎই কারো গুনগুন শব্দ কানে যেতে বারান্দায় যায় চন্দ্র।
বারান্দার চারকোণে সুগন্ধি ক্যান্ডেল চারটা জ্বালিয়ে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে পায়ে আলতা পড়ছে পুনম সাথে গুনগুন করে চলেছে
— ওগো আমার,,,হুম উহুম হু
চন্দ্র মোহিতো দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে জোহরা বধূয়ার দিকে লাল সাদা মিশেলে শাড়ি অটপৌড়ে ভাবে পড়া ব্লাউজের নিচ থেকে কোমর পযর্ন্ত পুরোটাই উন্মুক্ত। ঘন কালো কেশরাশি ঢিলে খোপা করা সেই খোপায় আছে গুটি কয়েক নয়নতারা ফুল। পায়ের আলতা দেয়ার জন্য হাতের চুড়ি রিনিঝিনি বাঝছে।
ঢোক গিলল চন্দ্র — আয় হায় এতো দেখি মেরে ফেলার জন্য এমন সাজছে আমার অবস্থা এখন এমন যে বিরিয়ানি সামনে সাজানো তা খেতে পারছি না ধরতেও পারছি না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বিড়বিড় করে বলে গলা খাকাড়ি দিলো চন্দ্র যাতে পুনম নিজেকে গুছিয়ে নেয়।
চন্দ্রের গলা খাকারি শুনে পুনম মুচকি হাসল সে অনেক আগেই চন্দ্রর আসার আভাস পেয়েছিল তবে পিছন ফিরে তাকায়নি নিজের কাজ করেছে আড়চোখে চন্দ্রের গতিবিধি লক্ষ্য করেছে।
— এভাবে আর কতক্ষণ বসে থাকবে ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়ো
বলেই চন্দ্র টিশার্ট ও ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে যায় ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরোতেই পুনমও বারান্দা থেকে আসে পুনমকে এবার সামনে থেকে দেখে আরো অবস্থা খারাপ চন্দ্রর হালকা সেজেছেও বড় বড় আখি জোড়ায় মোটা করে কাজল পড়েছে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে পুনমকে।
পুনম চন্দ্রর সামনে দাড়ায় মুচকি হেসে চন্দ্রর গলায় ঝুলে পড়ে — এতো রাগ কেনো শের “এ আলী সাহেবের। এতো সুন্দর মানুষের রাগ মানায় না। ফের গেয়ে ওঠে
“- ওগো আমার সুন্দর মানুষ
একটা কথা শোনো
চন্দ্র পুনমের হাতের মাঝখান থেকে নুয়ে বের হয়ে যায় বারান্দায় তোয়ালে মেলে পিছনে ফিরতে আবার পুনম চন্দ্রের গলায় ঝুলল এবার পায়ের উপর পুনমের পা রেখে দাড়ালো
-” ওগো আমার সুন্দর মানুষ
একটা কথা শোনো
ওগো আমার সুন্দর মানুষ একটা কথা শোনো
“” তুমি বীনে আমার তো
নাই গতি কোনো
— মাফ করে দেন না শের “এ আলী সাহেব,,, ঠোট উল্টে বলল পুনম
চন্দ্র শান্ত স্বরে বলল — আমার স্পর্শ আপনার জন্য বেদনাদায়ক
— ভালোবাসার আরেক নামই তো বেদনা
— আমি স্পর্শ করলে কষ্টে জর্জরিত হবে
— সেই কষ্টেই আছে ভালোবাসাময় সুখ
পুনমের কথা শুনে চন্দ্রের ঠোটের কোণে হাসি ফুটল তবে পুনম দেখার আগেই মুছে ফেলল। আবার বলল — ভেবে বলো কিন্তু এই কষ্ট দেয়া মানুষের কাছেই কিন্তু থাকতে হবে
— আজীবন
বলেই পুনম চন্দ্রের ললাটে দীর্ঘ চুম্বন করে। চন্দ্র পুনমের কোমর আকরে ধরে মনে মনে বলল
— গো টু হেল উইথ ইয়্যুর কন্ট্রোল চন্দ্র
মিশিয়ে দেয় পুনমের অধের নিজের শুষ্ক অধর। প্রথমে হালকা থাকলেও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলে গভীরতা। সাথে চলে চন্দ্রের হাতে দৌড়াত্য যাতে পুনম খনে খনে কেপে উঠছে আর সেই কাপুনি চন্দ্রকে আরো বেপরোয়া করে তুলেছে।
বহুদিন পর কাঙ্খিত জিনিস পেয়ে আজ সে বেপরোয়া নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না।। ওষ্ঠপুট ছেড়ে পুনমকে কোলে তুলে আবারও মিলায় ওষ্ঠপুট সেভাবেই ঘরে ঢুকে পুনমকে আলতো হাতে শুয়িয়ে দেয়।
ঠোট ছেড়ে গলদেশে মুখ ডুবায় আচল সরিয়ে পুনম ও আজ কোনো বাধা দেয় না কেনো দিবে লোকটা যে তার স্বামী তার অর্ধাঙ্গ।। সময়ের সাথে ভেসে যায় দুজনেই ভালোবাসার জোয়ারে।।
—————– ভোরের আলো চোখে পড়তেই পুনম পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে চন্দ্র তার গলায় মুখ ডুবিয়ে বসে আছে পুনম নিজেদের অবস্থান দেখে লজ্জা পায়। বহু কষ্টে বলিষ্ট দেহী চন্দ্রকে সরিয়ে বিছানা থেকে নামতেই মাথা ঝিমঝিম দিয়ে ওঠে।
মিনিট খানিক বসে আবারো চাদর পেচিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। শাড়ি পড়ার চান্স না নিয়ে থ্রি পিছই পড়ে নেয় বের হয়ে দেখে ঘড়ির কাটা আটটা বাজতে আরো দশ মিনিট কিছু না ভেবে জায়নামাজ নিয়ে নামাজে দাড়ায়। নামাজ পরে ওড়না সেভাবেই রেখে বাইরে বের হয়।।
পারভেজ সাহেবের জৈন ভিজানো পানি এখন নিয়ে আসতে পুনমকে জিজ্ঞাসা করলেন
— কিরে মা শরীর খারাপ আম্মাজান এতো দেরীতে উঠলে
— উহু আব্বু উনি এসেছিল রাতে দেরীতে তাই ঘুমাতেও দেরী হয়েছে এজন্য উঠতেও দেরী
পারভেজ সাহেব আর কিছু না বলে চুপচাপ পানি খেয়ে সস্নেহে পুনমের কপালে চুমু খায়। পুনম মুচকি হেসে রান্নাঘরে শশুরের জন্য চা বানাতে চলে যায়।
— শরীর খারাপ মা তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো
রোজিনা বেগমের প্রশ্নে পুনম ঢোক গিলে জোর পূর্বক হেসে বলল — উহু আম্মু ঘুমাতে দেরী হওয়ার জন্য এমন লাগছে তুমি তো জানোই আমার কত ঘুম কাতুরে,,
রোজিনা বেগম মানতেই চাদনী বেগম রান্নাঘরে প্রবেশ করে সেও একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে পুনমও ক্লান্ত স্বরে সেই একই উত্তর দেয়।।
ব্রেকফাস্ট সেড়ে পুনম ঘরে এসে দেখে চন্দ্র এখনো গভীর ঘুমে। পুনম আস্তে করে পাশে শুতেই চন্দ্র ঝড়ের বেগে পুনমের গলায় মুখ ডুবায়।
— সকাল সকাল আমাকে না বলে বিছানা থেকে নেমেছ ক্যান
— তাও তো নেমেছি আব্বু আম্মু বাবা মায়ের কত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে আপনি জানেন ভাগ্য ভালো মুক্তি আপু বাসায় নেই ছোট চাচার বাসায় গেছে।
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫১
— উমম
চন্দ্রের মতিগতি বুঝে পুনম ধস্তাধস্তি করে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য গোয়ার চন্দ্র কি তা মানে উহু হাতের বাধন শক্ত করে।
— আমি গোসল করেছি
— আবার করবে আমরা একসাথেই করব সমস্যা নেই
— সবাই কি ভাববে
— কিছুই না এখন বেশী কথা না বলে চুপ থাকো বলেই চন্দ্র ওষ্ঠ মিলিয়ে দেয় পুনমের ওষ্ঠপুটে। চন্দ্রর হাতের দৌড়াত্য বেড়ে চলে সমান বেগে আবার ডুবে যায় দুজন ভালোবাসার জোয়ারে।।।