পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫৩

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫৩
সাদিয়া আক্তার

— ইন্টার প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর থেকেই মিহি, আমি,, নয়ন আমরা ফ্রেন্ড প্রথম প্রথম আমার ফ্রেন্ড থাকলেও মিহি আর নয়নের মধ‍্যে প্রেমের সম্পর্কটা শুরু হয় প্রথম বর্ষের অর্ধেকেই প্রথম প্রথম আমার থেকে লুকানো থাকলেও দুজনের হাবভাবে আমি টের পাই তাই দুজনকে চেপে ধরলে স্বীকার করে তখন থেকেই দেখতাম ওদের মধ‍্যে গভীর প্রণয় ছিলো। নয়ন বেশ পাগলামি ও করত মিহির জন‍্য।

তবে ইদানীং মিহি ক্লাসে কেমন উদাসীন থাকতো বিয়ের চাপে আবার অন‍্যান‍্য কাজে ওকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি গত পরসু মিহি নিজেই কাদতে কাদতে আমার কাছে বলে নয়ন নাকি ওর সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখতে চায়না। মিহি কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলে মিহিকে ওর এখন ভালো লাগে না তাই নয়নকে বোঝাতেই গিয়েছিলাম। তবে আমি যদি ঘুর্নাক্ষরে টের পেতাম নয়নের মনে এমন ছিলো তাহলে ওর সাথে যোগাযোগ রাখতাম না।
থামল পুনম চন্দ্রর বুকে মাথা রেখে নিজের সব কথা উগরে দিলো। চন্দ্র পুনমের মাথায় হাত বুলিয়ে চুমু খায় — চিন্তা করে না জোহরা ঐ নয়নকে ঠিক করা বা হাতের খেল ঐ ব‍্যাটা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এখন মিহিকে বলো ওর কাছে যেয়ে একটু সেবা যত্ন করতে তাহলেই হবে বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি।
চন্দ্রের কথা শুনে পুনম উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল — সত‍্যি

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— আমার জোহরার প্রিয় বান্ধবীকে কষ্টে দেখে আমার জোহরাও কষ্ট পাবে তা আমি স্বামী হিসাবে কি করে দেখী,,
পুনম চোখে হাসল। — হয়েছে এখন উঠেন খিদে পেয়েছে কখন থেকে ঘরে আটকে রেখেছেন ছাড়ুন
চন্দ্র হাসি মুখে ছাড়তেই পুনম নিজেকে গুছিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো চন্দ্র শিহাবকে ও রিশানকে ফোন করে ডাকল।
পুনম গোসল করে বের হতে চন্দ্র এগোতে গেলেই পুনম তড়াক করে সরে যায় — উহু এখন কোনো দুষ্টুমি না সেই সকাল থেকে ঘরে আটকে রেখেছেন।।
বলেই দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। চন্দ্র নাকমুখ কুচকে বিড়বিড় করে বলল — পাষাণ জোহরা,,
পুনম ঘর থেকে বের হয়ে কাউকে পায়না যে যার ঘরে তাই পুনম স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল রান্নাঘরে যেয়ে ভাত বেড়ে তরকারি গরম করতে দেয় এর
মধ‍্যেই কানে কেউ ফু দেয়। পুনম ভয় পেয়ে সরে যায়। তাকিয়ে দেখে মুক্তি

— ওহ আপু তুমি,, স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে পুনম।
— কি চলে ভভাআআবী
— কিছু না,,
— শুনলাম আজ কেউ কেউ নাকি সারাদিন রুম থেকে বের হয়নি
বলেই বাহু দিয়ে ধাক্কা মারে। পুনম লজ্জা পায় আমতা আমতা করে বলে — আমি তোমার বড় ভাবী ওকে সো কিছুতো রেসপেক্ট দাও,,
— উউ আসছে বড় ভাবী তুই আমার বোন আগে
— তাহলে নিজের ছোট বোনের পারসোনাল কথা শুনতে লজ্জা করে না ছিহ,,
বলেই টেবিলে খাবারের বাটি নিয়ে যায়। পুনমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুক্তি বিড়বিড় করে বলল
— বোকা পুনম দেখী চালাক হয়ে গেছে,,
পুনম খাবার বেড়ে দিয়ে চন্দ্র পুনমকে হ‍্যাচকা টান দিতে নিলে পুনম চোখ রাঙিয়ে বলল — মুক্তি আপু রান্নাঘরে
চন্দ্র হাত ছেড়ে দিয়ে ভাত মেখে পুনমের মুখে সামনে ধরে পুনম ও বিনাবাক‍্যে খেয়ে নেয়। পুনমকে খাওয়াতে খাওয়াতে নিজেও খেয়ে নেয়। খাওয়া শেষে চন্দ্র বাইরে যায় আর পুনম নিজের আগের ঘরে অনেক দিন রংতুলি হাতে নেয়া হয়না আজ নাহয় একটু আর্টই করা যাক।।
মুক্তি প্রথমে কয়েটা শটস নিয়ে চলে যায় পুনম সেটা কম্পিলিট করে আরেকটা ক‍্যানভাস নেয় আজকে সে চার্কোল স্কেচ করবে তাও প্রান প্রিয় স্বামীর।

হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে নয়ন তার পাশে বসে মিহি সমানভাবে কেদেঁ চলেছে। নয়ন মিহির কান্নাকাটি দেখে বেশ অবাক হয়
হতবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ক্রন্দনরত মিহির দিকে তখনই ঢুকে চন্দ্র রিশান শিহাব সাথে কাজী,,
— কাজী সাহেব শুরু করেন
বাবা আপনার বাবা মায়ের নাম ও ঠিকানা বলেন এখানে ভোটার আইডি কার্ড তো পাওয়া যাবে না আপাতত শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে হোক।
— তোর কাছে কত টাকা আছে আপাতত??
কাজীর পরপরই চন্দ্র নয়নকে জিজ্ঞাসা করে। নয়ন থতমত খেয়ে যায় হঠাৎই এখানে কাজী কেনো,,??
— আপনারা কি বলতেছেন কিছুই বুঝতেছি না।
রিশান নয়নের কাধে হাত রেখে মুচকি হেসে বলে
— ছোট ভাই যা যা জিজ্ঞাসা করবে শুধু সেটুকুই বলবে বাকিটা বললে আওয়াজ নিচে করার পন্থাটা খুব ভালোই জানি আমরা তাইনা শিহাব।

শিহাব আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলল — আরে বা*ল কয়েকদিন পর টিচারের খাতায় নাম লিখাব তখন তো কিছু করতে পারব না এখন টুকটাক হাত সাফাই হলে মন্দ হয় না।।
নয়ন ভয় পায় গরগর করে বলে দিলো তার বাবা মায়ের নাম ঠিকানা আর তার কাছে কত টাকা আছে। টাকাটা শিহাবের হাতে দিতে দিতে চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলল — ভাই আমার বাসা থেকে এই মাসে দশ হাজার টাকাই হাত খরচ পাঠিয়েছে এর মধ‍্যে হাসপিটাল বিল,,
— তোমার হসপিটাল বিলের চিন্তা করা লাগবে না বলেই কাজীকে নিজের কাজ সারার ইশারা করল।
কাজী সব ফর্মালিটি শেষ করে নয়নকে কবুল বলতে বললে নয়ন কবুল বলল না চুপ করে বসে রইল। মিহিকে সে কোনো মতেই বিয়ে করবে না।

— কিরে চন্দ্র এই ব‍্যাটা দেখী পূর্ণর থেকেও বেশী সময় নেয় পুনমের মতো লজ্জা পেলো নাকি,,
রিশানের কথায় শিহাব মিহি খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।। বিয়ের কনে সয়ং হাসতে দেখে কাজী অবাক বিড়বিড়িয়ে বলে — ইয়া খোদা আজকালকার মাইয়াগো একটুও লাজ শরম নাই।
নয়ন এখনো চুপ চন্দ্র আঙ্গুল ফুটায় চেয়ার ছেড়ে উঠে নয়নের সামনে দাড়িয়ে বলে — এতো লজ্জা কেনো ছোট ভাই কবুলটা বলে ফেলো।।
নয়ন গরগর করে তিন বারের জায়গায় ছয় বার কবুল বলল। — একটু আস্তে বলো বাকি তিনবার তো আমি বলব
মিহি লজ্জালু স্বরে বলল।।
কাজী এবার হেসে ওঠে তার দেখাদেখী শিহাব রিশানও হেসে ওঠে। মিহি কবুল বলতেই দুজনের বিয়ে সম্পন্ন হয়। চন্দ্র রিশান শিহাব কাজীকে নিয়ে বের হয়।।
তখনই নয়ন আঙ্গুল তুলে মিহিকে শাষায় — বিয়ে তো জোড় করে করে নিলি তবে কোনো দিনও তোকে আমার বউ হিসেবে মানব না।

— এই সব বাংলা সিনেমার ডায়লগ দেয়ার জন‍্য আমি তোমাকে অবশ্যই মুভিতে চান্স দিব তবে মিহির সাথে উল্টাপাল্টা কিছু হলে শা*লা তোমার মাংস আমার হাড্ডি তোমার বাবা মায়ের ওকেই,,,
চন্দ্রের থ্রেড শুনে নয়ন অনবরত ঢোক গিলে বলল — আপনার যাননি
— উহু ছোট ভাই কাজীকে এগিয়ে দিয়ে আসতে গিয়েছিলাম আর বিয়ে করেছ কিছু না খাওয়ালে হয় তাই শিহাবকে পাঠিয়েছি মিষ্টি কিনে আনার জন‍্য।।
নয়নের এখন হাত পা ছড়িয়ে কাদতে মন চাচ্ছে। মিহির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালে মিহি মুখ ভেংচি মারে। নয়ন ও মুখ মুচরে বসে থাকে শিহাব মিষ্টি নিয়ে আসতেই রিশান নয়নকে একটা মিষ্টি জোরজবরদস্তি খাওয়ায়। কাধ পরিষ্কার করতে করতে বলে — আমাদের চন্দ্র কিন্তু নিজের কথা রাখে মনে থাকে যেনো মাংস আমাদের হাড্ডি তোমার বাবা মায়ের আর হ‍্যা তোমার বাবা মায়ের চিন্তা করা লাগবে না তাদের পূর্ণ সম্মতি আছে।।
নয়ন অনবরত মাথা নাড়ায়। তা দেখে শিহাব বাকা হাসে তিনজন চলে যেতেই মিহি পাশে বসে নয়নের নয়ন ধীর স্বরে বলল — এটা না করলেও পারতি,,
— তুই কোনো ওয়ে রাখিসনি আমার সামনে
আর কোনো কথা হয়না দুজনের মধ‍্যে পিনপতন নিরবতা।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫২

চন্দ্র বাসায় ঢুকে দেখে গেট খুলে সোফায় বসে অধীর আগ্রহে তার জোহরা তার অপেক্ষা করছে চন্দ্র ফাজিল হেসে পুনমের সামনে যায় তার দিকে ঝুকে বলে — কি জোহরা বধূ বুঝি স্বামীর আদর এরমধ্যেই মিস শুরু করে দিয়েছে। আমাকে একবার বলবে না আম অলওয়েজ রেডী আদর করার জন‍্য,,,,,,

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫৪