পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৬২
সাদিয়া আক্তার
হাটি হাটি পা পা করে কেটে গেছে বহুদিন। এই দুইবছরে সবই পরিবর্তন হয়েছে কিছু ভালো কিছু মন্দ। মন্দের মধ্যে হলো রানি বানু একবছর আগেই ইহকাল ত্যাগ করেছেন। চন্দ্রদের বাড়ি থেকে যাওয়ার পরপরই
অসুস্থ হয়ে পরে সেই অসুস্থতার থেকে বিছানা নেয় হঠাৎই একদিন ঘুমের মধ্যেই মারা যায়। তবে সেবার চন্দ্রদের বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে ঝিনুক ও রিশানের বিয়েটা দিয়েই যায় ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হয় তাদের কথা হয় ঝিনুকের গ্র্যাজুয়েশন শেষে শিহাবের বউ সহ একেবারে দুই বউ ঘরে তুলবে তারা।
আজ পুরো পরিবার হসপিটাল এসে হাজির হয়েছে। নিশার বাচ্চা হয়েছে খুব ফুটফুটে একটা ছেলে সন্তান। এই দুই বছরে রাশেদের অমূল ধৈর্য্য ভালোবাসা ও শাষনে নিশার আজ বিস্তর পরিবর্তন সেই নিশা যেনো কাপুর্বের মতো বিলীন হয়ে গিয়েছে।
ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চাকে নিয়ে সবার কত আহ্লাদ সাত মাসের পেট নিয়ে মুক্তির ও উল্লাসের শেষ নেই। রুপশার একছরের ছেলেটা তার মামা পূর্বের সাথে খেলছে সোফায় বসে। পূর্ব ও যেনো এইটুকু বয়সেই পাক্কা মামা হয়ে গেছে বোন পো নড়াচড়া করতে নিলেই গম্ভীর স্বরে তাকে থামায়। রিমান ঠোঁট উল্টে পূর্বের দিকে তাকিয়ে থেমে যায় ইহান আর লিমন অনেক্ষণ তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। পরে একেঅপরের দিকে তাকিয়ে বলল
— দ্বিতীয় চন্দ্র
ভার্সিটি শেষে চন্দ্র এসে হাজির হয় হয় হাসপাতালে নিশার কেবিনে যে যার মতো গল্প করছে পুনম ছোট্ট শিশুটির হাত পা নাড়াচাড়া করতে দেখে মুগ্ধ চোখে তাকায়। চন্দ্র কেবিনে ঢুকেই এসে এমন একটা দৃশ্য দেখে নিজেও মুগ্ধ হয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— ঐ তো চন্দ্র এসে গেছে
লিমনের কথায় পুনম বিস্তর হেসে চন্দ্রর দিকে তাকায়। চন্দ্র এগিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নেয় গম্ভীর চোখে তাকিয়ে পকেট হাতরে একটা রূপার চেইন পরিয়ে দেয়।
— ছেলেদের স্বর্ণ পড়া হারাম রাশেদ ভাই তাই রুপাই দিলাম
— আপনি ভালোবেসে যা দিবেন তাই সই স্নেহের মূল্য হয়না।
চন্দ্র বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে বাবুটার গাল ছুল নরম তুলতুলে গাল নবজাতকটি পিটপিট করে চন্দ্রের দিকে তাকায়। ফের গলা ফাটিয়ে কাদতে শুরু করে।
— ভাইয়া দাও ওর খিদে পেয়েছে,,
নিশার কোলে দিয়ে সবাই কেবিন থেকে বের হয়। আজ নিশাকে বাসায় নিবে না তাই লিমন ও ইহানরাও চলে যায় যদিও এখন মুক্তি যাবে বাপের বাড়ি পূর্বকে নিয়ে তারাও রওয়ানা হয় । বাইরে ওয়েটিং রুমে বসে আছে চন্দ্র পুনম।
— আল্লাহর রহমতে সবার কোলটাই পরিপূর্ণ
চন্দ্র তাকায় পুনমের দিকে পুনমও অশ্রুসিক্ত চোখে তাকায় চন্দ্র কিছু না বলে পুনমের মাথাটা বুকে চেপে বলল — তোমার কোলটাও আল্লাহ্ চাইলে পূর্ণ হবে জোহরা।
— আমিন
নিঃশব্দে কেটে যায় কিছু প্রহর রাশেদ বাইরে আসে চন্দ্রকে বলল — চন্দ্র আপনি চলে যান সারাদিন ভার্সিটি করে এসেছেন
— সমস্যা নেই রাশেদ ভাই আমরা আছি
— না না দরকার নেই এমনিতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখন মা ছেলে ঘুমাবে সেই রাতে উঠবে অযথা বসে থেকে লাভ কি আপনি বরং চলেই যান আর আমি আসি তো,,,
রাশেদের কথায় চন্দ্র সায় জানিয়ে চলে যায়। তবে যাওয়ার আগে পুনম আরেকবার বাবুটাকে দেখার আবদার করে। বাচ্চাটাকে আদর করে পুনম চন্দ্র চলে যায়।। গাড়িতে বসে দুজন রাস্তা পেরিয়ে চলে চারচাকাটা উদাসীন চোখে পুনম বাইরে তাকিয়ে থাকে।।
রাতের আকাশ আজ ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন। নিস্তব্ধ পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে কোথাও বৃষ্টি হয়েছে বারান্দা হতে ঘরে তাকায় পুনম গম্ভীর মুখে চন্দ্র ল্যাপটপে কাজ করে চলেছে সম্ভবত কালকের লেকচার তৈরী করছে।
পুনম আবার চোখ ঘুরিয়ে আকাশে তাকায়। পুনম চোখ ঘুরাতেই চন্দ্র তাকায় পুনমের দিকে গত একবছরে পুনম একটা বাচ্চার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। প্রথম মিস ক্যারেজ হওয়ার পর থেকে তো আরো।
ডাক্তার চন্দ্রকে প্রথম মিসক্যারেজের সময়ই জানিয়ে দিয়েছে পুনমের থাইরয়েডের সমস্যা তাই এরকম হয়েছে এমনিতে মেয়েটার রক্ত শূন্যতা দ্বিতীয় মিসক্যারেজে প্রান সংশয় থাকতে পারে। তাই আর বাচ্চার আশা করেনা চন্দ্র তার কাছে তার জোহরা থাকলেই হবে।
থাইরয়েডের ঔষধের পাশাপাশি পিল খাওয়ায় মেয়েটাকে খুব সাবধানে যাতে টের না পায়।
আট কদমে বারান্দায় জোহরাতে মিশে দাড়ায় চন্দ্র
পুনম চন্দ্রর বুকে মাথা এলিয়ে দেয়। চন্দ্র হাত বুলাতে মিনিট খানিকের মধ্যেই ঘুমিয়ে পরে পুনম। তাকে কোলে তুলে নেয় চন্দ্র খুব যতনে বিছানায় শুয়িয়ে পুনমের বুকে মুখ গুজে বিড়বিড় করে বলতে থাকে — আম সরি জোহরা বিবি আমার কোনো উপায় নেই আমার কাছে সবার আগে তুমি তারপর বাচ্চা। সেটা যদি সারাজীবন না হয় তবুও কোনোদিন আক্ষেপ থাকবে না। বলতে থাকে আরো অনেক কথা। বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে পরে টের পায়না।।
চন্দ্র ঘুমিয়ে যেতেই তরাক করে চোখ খুলে পুনম বুঝে যায় সব নিজে কি করবে তাও ভেবে নেয়। এখন তার প্রথম লক্ষ্য হলো পিলটা চন্দ্র কিভাবে খাওয়ায় সেটার গতিবিধি খেয়াল করা।।
পরদিন সকল থেকে পুনম চোরা চোখে খুব সূক্ষ্মভাবে চন্দ্রর গতিবিধি লক্ষ্য করেছে সাথে এটাও লক্ষ্য করেছে চন্দ্র বাইরে থেকে প্রতিদিন পুনমের জন্য কোনো না কোনো খাবার আনেই সন্ধ্যায় সেটা শুধু পুনমকেই দেয় এই একদিন মাঠা একদিন জ্যুস যেদিন ফুচকা আনে পুনমের জন্য আলাদা আনে।
বসা থেকে দাড়িয়ে যায় পুনম এগুলো এতোদিন খেয়াল করেনি সে।
বাম হাত মুষ্ঠি করে ডান হাতে ঘুষি মেরে বলল
— আপনি যদি শের “এ আলী হন আমি আপনার জোহরা যেকোনো মূল্যে বেবী তো আমার চাই
পুনম হেলতে দুলতে আলমারির দিকে এগিয়ে গেলো কিছুদিন আগে চন্দ্রর দেয়া কালো শাড়িখানা বের করে হাসল। মনে পড়ে গেলো দুইবছর আগে সেই রাগ ভাঙ্গানোর পন্থা। আপনমনেই লাজুক হাসল মেয়েটা।।
আজকেও চন্দ্র আসার সময় ফুচকা এনেছে। যথারীতি পুনমের জন্য আলাদা এনেছে পুনমের হাতে দিলে পুনম মুচকি হাসল মুক্তিরটা মুক্তিকে প্লেটে দিয়ে নিজের টেবিলে রেখে চন্দ্রর পিছু পিছু ঘরে চলে গেলো।
চন্দ্র ফ্রেশ হতে গেলে পুনম কাপড় বের করে রাখে বসে বসে পা দুলাতে থাকে গুনগুন করতে থাকে।
চন্দ্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে পুনমকে গুনগুন করতে দেখে অবাক হয় তবে বেশ খুশী হয় অনেক দিন পরেই মেয়েটা একটু খুশি হয়েছে চন্দ্র পিছন থেকে তাকে পাজা কোলে নেয়। বিয়ের আড়াই বছরেও পুনম এখনো চন্দ্রের হুটহাট অ্যাটাক হজম করতে পারেনি।
— হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতো
— উহু কখনও শুনছ স্বামীর আদরে হার্ট অ্যাটাক হয়।।
— আচ্ছা জী আপনার মতো স্বামী থাকলে অবশ্যই হয় এখন নামান।
— ফুচকাটা খেয়েছ
— উহু খাব আপনাকে কফি দিয়েই আপনি তো আবার আমার জন্য চা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
চন্দ্র পুনমের নাকে নাক ঘষে বলল — তাও তো মাঝে মাঝে লুকিয়ে খাও
বোকা হেসে পুনম বলল — ঐ বৃষ্টি হলে নিজেকে থামাতে পারিনা। এখন চলেন
নিচে নেমে পুনম রান্নাঘরের চলে যায় আর চন্দ্র মুক্তির পাশে বসে তার হালচাল জিজ্ঞাসা করে।
পুনম পুরোটা টক ফেলে দিলো রান্নাঘরে থাকা তেতুল দিয়ে আবার টক বানিয়ে সেগুলো নিয়ে আসল।
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৬১
চন্দ্রর কফি তার হাতে দিয়ে নিজের ফুচকার প্লেট নিয়ে বসল
চন্দ্র একপলক পুনমের খাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার মুক্তির সাথে কথা বলা শুরু করে।
খেতে খেতে পুনম মনে মনে ভাবল — আপনি যদি শের আমি আপনার বউ সোয়া শের হু।।