প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ শেষ পর্ব

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ শেষ পর্ব
অনন্যা

মৃদুমন্দ হাওয়ায় জানালার পর্দা উড়ছে।এই তো একটু আগেই ঝড়ের তাণ্ডব থেমেছে।এখন ঠাণ্ডা বাতাসে শরীরে কাঁটা ধরে যাচ্ছে যেন।এখনো আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।কি ঝড়টাই না গেল আজ! সাজ্জাদ শাহরিয়ার,রাহুল আর জেরিন বেগমকে পুলিশ নিয়ে গেছে।রাহুল যাওয়ার আগে রোদেলার দিকে তাকিয়ে ছিল শুধু।রাহুল জানে সে যা পাপ করেছে তাতে তার ফাঁসি’ই হবে।ধ’র্ষ’ণ করেছে সে।নারী পাচারের সাথেও যুক্ত।তার হয়ে কোনো উকিলও কেউ হায়ার করবে না।তাই সে ধরেই নিয়েছে তার ফাঁসি নিশ্চিত।তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় সে শুধু হেসেছিল।আর বলেছিল

-‘তোমাকে না পাওয়ার আফসোস আমার মরে গেলেও ফুরাবে না, বেইবিগার্ল।ব্যর্থ প্রেমিক আমি যে তার প্রেয়সিকে নিজের করতে পারেনি। তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি আর মৃত্যুর আগ অবধি বেসে যাবো। ভালোবাসি বেইবি…আই লাভ ইউউ…
চেঁচিয়ে বললো রাহুল।তার চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। অফিসার টেনে হিচড়ে নিয়ে যায় রাহুলকে।রাফি তেড়ে যেতে নিলে রোদেলা শক্ত করে রাফির হাত ধরে। রাফি থেমে যায়।তবে মনে মনে রাহুলকে গালি দিতে ভুললো না সে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

থেমে গেছে সব ঝড়।রাহুলকে তার উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে রোদেলা।সে পেরেছে, জিতেছে সে।মনটা তাও কেন এত খুঁতখুঁত করছে?রাহুল তাকে ভালোবাসতো।হ্যাঁ, সেও জানে এটা।তবে ভালোবাসলেই কি পেতে হবে? রোদেলাও তো ভালোবেসেছিল।সে কি পেয়েছে? কিছু অপ্রাপ্তি থাকা লাগে জীবনে।সব পেলে কি আর হয়! কিছু কিছু জিনিস না পাওয়াই ভালো।রাহুলের জন্য রোদেলার কোনোকালেই কোনো ফিলিংস ছিল না।রাহুলের ভালোবাসাটা ওয়ান সাইড। ছেলেটা তার জন্য সমস্ত খারাপ কাজ ছেড়ে দিয়েছিল।কিন্তু রোদেলার কি করার এখানে? তার তো রাহুলের জন্য কোনো অনুভূতি কাজ করে না।”আর রাফির জন্য?” রোদেলার ভেতর থেকে একজন প্রশ্নটা করলো।রোদেলার কাছে এর উত্তর নেই।সে কনফিউজড্ এটা নিয়ে।বিস্কুটখোর মদনা স্বামী হয় তার।স্বামী! রোদেলার গায়ের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়।সে মনে মনে নিজেকে যত বোঝায় আহনাফের পর সে আর কাউকে ভালোবাসবে না ঠিক তখন রাফি এসে সব এলোমেলো করে দেয়। মনে পড়ে যায় বিয়ের সময়টার কথা।

রোদেলাকে রাফি আহনাফের বাসায় নিয়ে যাবে বলেছিল।কিন্তু সে অন্য রাস্তার মোড় নেয়।ভরকে যায় রোদেলা।
-‘এই! এই! কোথায় যাচ্ছেন?
-‘চেঁচিও না, রোদ।
রোদ! চোরনি না বলে রোদ বললো নাকি মদনটা! রোদেলা বললো
-‘কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? এটা তো অন্য রাস্তা।
রাফি কিঞ্চিৎ হাসে।তবে কিছু বলে না।রোদেলা চেঁচিয়ে বললো
-‘এই মদনা! এটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?

রাফি হঠাৎ ব্রেক কষে।সামনের দিকে ঝুঁকে গেল তারা।হঠাৎ’ই রাফি রোদেলার হাত ধরে হেচকা টান মেরে তাকে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।রোদেলা থমকে যায়।পুরো ব্যাপারটা বুঝতে তার মিনিট খানেক লাগে।যখন’ই বুঝলো সে রাফির কোলে।রাগে মাথায় আগুন ধরে গেল তার।রাফির গালে দিল এক থাপ্পর।রাফি নিরব রইলো কিছুক্ষণ।থাপ্পরটা আশা করেনি সে।ক্ষিপ্ত নয়নে রোদেলার দিকে তাকায় সে।অনাকাঙ্খিত এক কাজ করে বসলো রাগের মাথায়।শাহরিয়ার পরিবারের ছেলে আর রাগ থাকবে না! নেহাত’ই নিজেকে সামলে রাখতো তবে আজ আর সামলাতে পারলো না।সে রোদেলার কাঁধে দাঁত দাবিয়ে দিল।রোদেলা হকচকিয়ে গেল।চেঁচিয়ে উঠলো সে।

-‘এই মদনার বাচ্চা…ছাড়ড়ড়ড়…
রাফি একদম দাগ বসিয়ে এরপর ছাড়লো।রোদেলার চোখে পানি এসে পড়েছে।রাফি চেতে বললো
-‘তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী মদনা! আরেকবার বলে দেখ কি করি তোকে!
রোদেলা অবাক হলো রাফির পরিবর্তন দেখে।রাফি বললো
-‘কি ভেবেছিস? সবসময় ছেড়ে দেই বলে যা খুশি তাই করবি? চাপকে পিঠের ছাল তুলে ফেলবো।বেয়াদব!
রোদেলা ক্ষেপে বললো
-‘আমার পিঠ কি তোর বাপের সম্পত্তি?
রাফি বললো

-‘আমার বাপের হবে কোন দুঃখে?আমার সম্পত্তি এটা।শুধু পিঠ নয় তোর সবকিছুই আমার।বুঝেছিস?
রোদেলা এবার রাফির চুল ধরে টেনে বললো
-‘টেনে তোর চুল ছিঁড়ে ফেলবো হা’রা’মি।
রাফি ব্যথায় মুখ কুচকে ফেলে।তবে সেও পাল্টা রোদেলার চুল টেনে ধরে।
-‘আউচ! ছাড়..ছাড়..
-‘তুই ছাড় আগে..
-‘আহনাফ ভাইয়ের কাছে নালিশ করবো আমি তোর নামে..
রাফি হেসে বললো
-‘আমার ভাইয়ের কাছে আমার নামেই নালিশ করবি!
রোদেলা বললো
-‘ছাড়বি না তো..দেখাচ্ছি মজা…

রোদেলা রাফির আরেক গালে থাপ্পর বসিয়ে দিল।রাফির মাথাটা ঘুরে গেল।রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করলো সে।রোদেলা মোটেও ভয় পেল না।উল্টো আরেকগালে মারলো।রাফি ভড়কে গেল।এবার ছেলেটা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিল।সব রাগ শেষ! রোদেলা ওর চুল ছেড়ে দিল।ভড়কে গিয়েছে সে।রাফি কান্নার মাঝেই বললো
-‘থামলে কেন? মারো মারো…পুরো শাহরিয়ার পরিবার’ই তো আমাকে মারতে চায়।তুমিও মেরে নাও।আরিশকেই তো সবাই পেয়েছে মারার জন্য।
আরিশ! হোঁচট খেল যেন রোদেলা।আরিশ কোথা থেকে এলো? রাফি বললো
-‘আমিই আরিশ।আরিশ শাহরিয়ার…যাকে সবাই মৃত জানে।মারো মারো…তুমিও মারো।কেউ ভালো না তোমরা।এজন্য’ই আমাকে শাহরিয়ার পরিবার থেকে দূরে রেখেছে ভাই আর বাবা।
রোদেলা কপাল কুচকে বললো

-‘মানে?
-‘বলবো না তো…মেরেছো না তুমি আমাকে..বলবো না।
রোদেলা ‘চ’ সূচক শব্দ করলো বিরক্তিতে।বললো
-‘রাগাবেন না একদম..
রাফি আবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে আরম্ভ করে।রোদেলা ওর চুলের মুঠি ধরে বলে
-‘বল এটার মানে কি? বল..
রাফি বাচ্চাদের মতো কাঁদছে।রোদেলা জানে রাফি নাটক করছে।তাই সে ওকে খানিকটা ঝাঁকিয়েই বলে
-‘বলুন আপনার আসল পরিচ…
কিছু একটা পড়ার শব্দ।রোদেলা চমকে নিচে তাকায়।চক্ষু চড়কগাছ মেয়েটার।বন্দুক! রাফির দিকে তাকায় সে।রাফি তার দিকেই তাকিয়ে।এরপর হঠাৎ সে হাসতে লাগলো।কেমন শয়তানি মার্কা হাসি।গলা চিকন করে হাসছে।রোদেলা কপাল কুচকায়।রাফি তার দিকে ঝুঁকে বললো

-‘কিয়ো চোরনি! ভয় পেলে?
রোদেলার রাগ হলো আবার।কি বজ্জাত ছেলে! রাফি বললো
-‘আরিশ…আরিশ শাহরিয়ার আমি।আহান শাহরিয়ারের ছোট ছেলে আর আহনাফ শাহরিয়ারের এক মাত্র ছোট ভাই।যাকে সবাই মৃত জানে।
রোদেলার মাথায় বাজ পড়লো এটা শুনে।পরক্ষণেই সে বললো
-‘মিথ্যা বলার জায়গা পান না আর! যত্তসব ফালতু!
রোদেলা ওর কোল থেকে নামতে চাইলে রাফি ওকে আটকে দেয়।রোদেলা রেগে কিছু বলতে নিলে রাফি বললো

-‘ভালো করে দেখো আমাকে।আমার চেহারাটা দেখো…তাহলেই বুঝতে পারবে।
রোদেলা কপাল কুচকেই তার দিকে তাকায়। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে তার চোখ, নাক,ঠোঁট…ভালো করে খেয়াল করলেই যে কেউ বলে ফেলবে যে আহনাফের সাথে তার কোনো কানেকশন আছে।আশ্চর্য তো! রোদেলা আগে তো খেয়াল করেনি।হা হয়ে গেল সে।রাফি ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো।রোদেলা হতবিহ্বলিত স্বরে বলে
-‘এটা কি করে সম্ভব?
রাফি বললো

-‘সম্ভব চোরনি..সম্ভব।
রাফি এবার নিজ দায়িত্বে তাকে কোল থেকে নামায়।এরপর আবার গাড়ি স্টার্ট করে।রোদেলা হাজারো প্রশ্ন করে মাঝে কিন্তু রাফি উত্তর দেয় না।সে তাদের সেই গোডাউনের সামনে এসে থামে।নিজে নেমে রোদেলাকেও নামায়।রোদেলা কিছু বলছে না এখন আর।রাফির সাথেই ভেতরে প্রবেশ করে সে।আহান শাহরিয়ারকে বসে থাকতে দেখে রোদেলা আবার হোঁচট খেল।আহান শাহরিয়ার অমায়িক হাসলেন।রোদেলার অবাক হওয়া চেহারাটা দেখে আহান শাহরিয়ার ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লেন।এরপর সে নিজে তাকে শুরু থেকে সবটা জানালেন।আরিশের বিদেশ যাওয়া রাহুলদের সাথে এরপর তার সাথে ঘটা সব ঘটনা।রোদেলা সবটা শুনে থ হয়ে গেল।আহান শাহরিয়ার বললেন

-‘এখন নিশ্চই ভাবছো যে তোমাকে এসব কেন জানালাম?
রোদেলা তাকিয়ে থাকে শুধু।রাফি বললো
-‘রোদ! রাহুল তোমাকে ভালোবাসে মেইবি।হয়তো তুমিও..
-‘নাহ্….আমি বাসি না।সব নাটক…আহনাফ ভাই জানেন সব।
রাফি চমকায় একটু।ভাই জানে! একটু খুশিও হয় অবশ্য।
-‘আচ্ছা যাই হোক।তাহলে আরো সুবিধা হবে।
রোদেলা কপাল কুচকায়।রাফি আহান শাহরিয়ারের দিকে তাকাতেই তিনি বললেন
-‘তুমি আরিশকে বিয়ে করো।
রোদেলা বিস্ফোরিত নয়নে তাকায়।রাফি বললো

-‘রাহুলকে আঘাত করতে এটাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হবে।কুহু ভাবির কাহিনী তো জানোই মেইবি।আমরা চাই রাহুলকে কষ্টে জর্জরিত করতে।সে যা করেছে তাতে তাকে একদম মেরে ফেললে কম শাস্তি হয়ে যাবে।তিলে তিলে মারতে….
-‘আহনাফ ভাই জানেন এই বিয়ের বিষয়?
আহান শাহরিয়ার বললেন
-‘ও নিজেই এই আইডিয়া দিয়েছে।
রোদেলা জানে আহনাফ তার খারাপ হবে এমন কোনো কাজ করবে না।ভালো না বাসুক বোন হিসেবে স্নেহ তো করে সে।রোদেলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো

-‘আমি রাজি…
রাফি হাসলো। কাজী পাশের রুমেই ছিল। ব্যাস! হয়ে গেল বিয়ে।কবুল বলার সময় রোদেলা শেষবারের মতো করে আহনাফকে স্মরণ করলো অন্যরূপে।চোখে পানি এলো তবে ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি।বিয়ে তো করতেই হতো।আর আহনাফ ভাই যখন বলেছেন তখন রোদেলা রাজি না হয়ে পারে! তিন কবুল বলে হয়ে গেল সে অন্যকারো।নিজেকে লিখে দিল সে আরিশের নামে।

বাতাসের বেগ বাড়লো।রোদেলার মুখে এসে আছড়ে পড়ে ঠাণ্ডা শীতল বাতাস।ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে সে।বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।আকাশের পানে তাকায় সে।এখন আর আহনাফ ভাইয়ের জন্য তার তেমন খারাপ লাগে না।লাগবে কি করে? মদনাটা সারাক্ষণ বউ বউ নাহলে চোরনি চোরনি করতেই থাকে।আর রোদেলার কেমন কেমন লাগে যেন।এটা কি আর মদনাটা বুঝে!
-‘বউ!
হঠাৎ কানের একদম কাছে শব্দটা শুনে চমকে যায় রোদেলা।যার দরূন তার মাথা গিয়ে লাগে রাফির নাকে।সাথে সাথে সোজা হয়ে যায় ছেলেটা।

-‘উফ! চোরনি!
রোদেলা বলে উঠলো
-‘আরে! সরি..সরি..এই না কীসের সরি? আপনি এরকম ভূতের মতো এসে উদয় হয়েছেন কেন? ভয় পেয়েছি না আমি!
রাফি কপাল কুচকায়।এরপর তার দিকে ঝুঁকে বলে
-‘ভয়ের ঔষধ দিব?
রোদেলা পেছনে সরে যায়।বলে
-‘লাগবে না।
রাফি তার দিকে এগোতে এগোতে বলে
-‘উঁহু..লাগবে…
রোদেলা জানালার সাথে চেপে গেছে একদম।রাফি ফুলে সজ্জিত বিছানার দিকে তাকিয়ে বলে
-‘আজ আমাদের বাসর রাত চোরনি! আমার না বিশ্বাস’ই হচ্ছে না।
রোদেলা একটা শুকনো ঢোক গিললো।রাফি বুঝে রোদেলার অস্থিরতা।এরপর হতাশার শ্বাস ছেড়ে বললো
-‘গরিবের আবার বাসর রাত! যাও চেইঞ্জ করে ঘুমাও।বউ বেশে দেখলে বড়লোকও হয়ে যেতে পারি আবার।
রাফি কথাটা বলে বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দেয়।রোদেলা মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।রাফি রোদেলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো

-‘হোয়াট? বড়লোক বানাতে চাও নাকি?
রোদেলা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।এরপর সেও বিছানায় এসে বসে। বলে
-‘আমার গিফট্ কোথায়?আজকে গিফট্ দিতে হয় জানেন না?
রাফির সরাসরি জবাব
-‘ সে তো যারা বাসর করে তারা দেয়।আমি তো আর কিছু করছি না তোমাকে।দিব কিসের জন্য?আমার লাভটা কি হবে?আমি বাবা লাভ ছাড়া কাউকে কিছু দেই না।
রোদেলা রাফির দিকে তাকিয়ে রইলো শুধু।রাফি বললো
-‘কি? চাইয়া আছো কেন, বউ?কিছু বলবে?
রাফির টিটকারি মার্কা কথা শুনে রোদেলার রাগ হলো।বললো
-‘গিফট্ দিবি কিনা বল..
রাফি বললো

-‘একটু কিছু হলেই তুই তুই করো কেন? তোমার চেয়ে বয়সে কত বড় আমি জানো?বেয়াদব মেয়ে!
-‘বেয়াদব স্বামী! আমার গিফট্ না দিয়ে আমাকেই বকছে।করবো না আপনার সংসার।
রোদেলা উঠে যেতে নিলে রাফি হেসে ওর হাত ধরলো।টান মেরে বুকে আনলো তাকে।
-‘উমম..এত রাগ কেন আমার বউয়ের? তাও আবার বাসর রাতের উপহার নিয়ে!
রোদেলা কথা বলে না।মুখ গোমড়া করে রেখেছে সে।রাফি অবাক হয়।রোদেলা কি মেনেছে বিয়েটা? তাকে মেনেছে সে?রাফি বললো
-‘আমি আসলে গিফট্ নিয়ে ভাবিনি।আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে রুম থেকেই বের দিবে হয়তো।তুমি তো আর আমাকে…

-‘আমি নতুন করে সবটা শুরু করতে চাই আরিশ ভাই।
রাফির ভেতরটা কেঁপে উঠলো কথাটা শুনে।ঘনঘন পল্লব ঝাপটালো সে।বললো—“অ্যাঁ!”
রোদেলা তার বুকে থেকেই বললো
-‘ভুলতে চাই সব…আমি চাই আমার সবটা জুড়ে শুধু আমার স্বামী থাক..মন-মস্তিষ্ক সবটা জুড়ে শুধু সে থাক..
রাফি হকচকায়।আশা করেনি সে।সে খুকখুক করে কেঁশে বলে
-‘আমি জানি তুমি এখন কষ্টে আছো।সত্যিই তো মা এমন করলে খারাপ তো লাগবেই।আমি বুঝতে পারছি তোমার অবস্থাটা।ইটস্ ওকে।তুমি সময় নাও।
রোদেলা কপাল কুচকায়।বলে

-‘আমি কি বললাম আর আপনি কি বলছেন!
রাফি বললো
-‘আমি বুঝতে পারছি তোমার অবস্থাটা..
-‘কিসের অবস্থা? আমি..
-‘ইটস্ ওকে না! এসব থাক..যাও ফ্রেশ হয়ে এসো…
রোদেলা ঠিক হয়ে বসলো।বললো
-‘ওহ! বুঝেছি আমি।ইটস্ ওকে।
রোদেলা উঠে যেতে নিলে রাফি বললো
-‘কি বুঝলে?
-‘কিছু না।
রাফি বোকা বনে গেল।রোদেলা উঠে যেতে নিলে রাফি ওর হাত ধরে বললো

-‘এত রাগ?
-‘রাগ নেই।
-‘আমি চাই না তুমি আফসোস করো।তাই সময় দিচ্ছি..
-‘আচ্ছা..
-‘কি আচ্ছা?
-‘কিছু না।
রাফি হেসে ফেলে।রোদেলাকে টান মেরে বিছানায় ফেলে ওর ওপর আধশোয়া হয়ে বলে
-‘কিছু না! ম্যাডামের এত রাগ! খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা হয় তো!
রোদেলা রেগে তাকায়।

-‘উফ! এভাবে তাকাবেন না প্লিজ।
-‘সরুন..
-‘উঁহু..বউ রাগ করেছে তার ভাঙাবো না!
-‘লাগবে না।
-‘লাগবে..আমার লাগবে..ইশ! চোরনি আর বিস্কুটখোর কোনোদিন এক হবে কেউ ভেবেছিল! আমিই ভাবিনি।
রোদেলা বললো
-‘আমিও কি ভেবেছিলাম যে এই মদনা জুটবে আমার কপালে…?
-‘মদনা! আমি মদনা!
-‘হ্যাঁ, মদনা…মদনা..মদনা..
-‘তবে রে…
রাফি রোদেলাকে কাতুকুতু দিতে লাগলো।রোদেলা না চাইতেও জোরে জোরে হাসছে।রাফি থামছে না।রোদেলাও হাসছে।

-‘থামুন..হাহাহা..স্টপপ..
রোদেলা হাসছে আর রাফি কাতুকুতু দিচ্ছে।একটা পর্যায় হাঁপিয়ে উঠলো রোদেলা।রাফি থামলো।দুজনেই হাসছে।রোদেলা এবার উল্টো রাফিকে কাতুকুতু দিতে লাগলো।
-‘এই না! চোরনি..হাহাহা..হাহাহা..বউ..স্টপ..
-‘কেমন লাগে বুঝুন এবার!
আবার আরেকবার ঘরটা তাদের হাসির শব্দে ভরে উঠলো।রাফিও মনে মনে নিশ্চিন্ত হলো।রোদেলা আজ অনেকটা আঘাত পেয়েছে।একে একে অনেককিছু হারিয়েছে মেয়েটা তাই হয়তো আজ তাকেও হারানোর ভয় পেয়েছিল সে।এজন্য’ই অমন কথা বলছিল সে।রাফি সময় দিবে রোদেলাকে।সে তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না।আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হবে।

-‘নাতাশা!
নাতাশা আদিতদের সাথে কথা বলে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাহিরে যাচ্ছিল।একটু আগেই তারা আহনাফের রুমটা ফুল দিয়ে সাজিয়েছে।এজন্য’ই দেরি হয়ে গেল।নাতাশা পেছন ফিরে তাকায়।
-‘আরে আয়ান! বলো..
আয়ান একটু হেসে বললো
-‘রাত তো অনেক হয়েছে। একা যাবে?
নাতাশা বলতে চাইলো যে তার গাড়ি এসেছে তাকে নিতে কিন্তু কি মনে করে বললো না।উদাস স্বরে বললো
-‘কি করবো বলো!পৌঁছে দিয়ে আসার মতো তো আর আমার কেউ নেই।
আয়ান হাসলো। বললো

-‘চলো..
নাতাশা এক গাল হাসলো।পেছন পেছন গেল নিজেও।বাহিরে এসে ড্রাইভারকে হাতের ইশারায় চলে যেতে বললো।আয়ান বাইকে বসে নাতাশাকে বসতে বলে।নাতাশা উঠে বসতেই আয়ান বললো
-‘ঠাণ্ডা বাতাস ছেড়েছে।একটু বাইক রাইডে গেলে কেমন হয়?যাবে?
নাতাশা লাজুক হেসে বললো
-‘তুমি পাশে থাকলে আমার উত্তর হ্যাঁ-ই হবে।এটা জিজ্ঞাসা করার কি আছে আবার?
হেসে ফেললো আয়ান।স্টার্ট করলো বাইক।আয়ান বললো
-‘ভালো করে ধরো,..পড়ে যাবে..
নাতাশা আয়ানের কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর পিঠে মাথা রেখে বলে

-‘চলবে?
-‘একদম!
দুজনেই হাসলো।সবসময় ভালোবাসার কথা মুখে বলা লাগে না।আচরণেও প্রকাশ করা যায়।নাতাশা আর আয়ান হয়তো সেরকম’ই করলো।নাতাশা আয়ানকে জড়িয়ে ধরে শান্তির শ্বাস ছাড়ে।আয়ানের ঠোঁটে আলতো হাসি।প্রণয়ের অন্তিমক্ষণে এসে যে সে কাউকে পাবে ভাবেওনি বোধহয়।আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী এজন্য’ই বলে।

-‘রাজনীতি ছেড়ে দিব আমি।
সাখাওয়াত আলমের কথা শুনে আহান শাহরিয়ার বললেন
-‘অনেক দূর চলে এসেছিস।এখন আর ছাড়িস না।
-‘না রে! এসব আর ভালো লাগে না।না চাইতেও এখানে পাপ করা লাগে।আর শানায়াও এটা পছন্দ করে না।এবার আর আমি দাঁড়াবো না এলেকশনে।পদত্যাগ করবো।এটা নিয়েই দৌঁড়াদৌঁড়ি চলছিল এতদিন।
আহান শাহরিয়ার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন

-‘তোর ইচ্ছা।
-‘হুম..এই রাজনীতি অনেককিছু কেড়ে নিয়েছে।আমি চাই না আর এর সাথে যুক্ত থাকতে।
নিরব রইলেন দুজন।হঠাৎ আহান শাহরিয়ার বললেন
-‘তোর মাথায় টাক হলো কেমন করে রে? তুই তো আমার চেয়েও হ্যান্ডসাম ছিলি।
সাখাওয়াত আলম নিজের চকচকে টাকে হাত বুলিয়ে বললেন
-‘একদম নজর দিবি না আমার টাকের দিকে।আর তুই তো মেয়ের মানুষের থেকে বেশি প্রডাক্ট ইউস করিস মুখে।আমার অতো সময় কই?

-‘ভালো কথা বলেছিস..আয় তোকে একটা সিরাম লাগিয়ে দেই।সাত দিনে সুন্দর হয়ে যাবি বেডা…ওয়েট..
-‘এই না! থাক! তুই’ই দে ওসব।আমার অত রংঢং এর সময় নেই।
-‘যা শা’লা! আমি দিব বলেছি না!মানে দিব’ই।
আহান শাহরিয়ার উঠে গিয়ে একটার জায়গায় এক ঝুড়ি কি কি যেন নিয়ে এলেন।চোখ বড় বড় হয়ে গেল সাখাওয়াতের।
-‘ওরে বাবাগো!
আহান শাহরিয়ার শয়তানি হাসি হাসলেন।

-‘তোকে আমি একদম নায়ক বানিয়ে দিব সাখু।
-‘যা সর…কে হতে চেয়েছে নায়ক? বুড়ো বয়সে এসব নায়ক হওয়া লাগবে না আমার।
আহান শাহরিয়ার আবার শয়তানি হাসি দিলেন।সাখাওয়াত উঠতে নিলে ঠেলে বসিয়ে দিলেন ভদ্রলোক।একে একে সবকিছু তার মুখে ডলতে লাগলেন ভদ্রলোক।গান ধরলেন আহান শাহরিয়াথ
-‘সিরাম দিব..ক্রিম দিব..হাত দিয়ে ডলবো সামান্য…একটা লাল পরি লাগবে বন্ধুর জন্য..!
সাখাওয়াত চেঁচিয়ে উঠলেন
-‘বা/ল তোমার…
-‘তোর মতো খচ্চর নাকি আমি! আমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মানুষ।
সাখাওয়াত কিছু বলতে নিবে তখন হারুন রহমান এসে বললেন

-‘স্যারও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মানুষ।
-‘তুমি জানলে কি করে?
অবাক হয়ে আহান জিজ্ঞাসা করে।হারুন ভড়কে গেলেন।
-‘এটা না জানার কি আছে?
সাখাওয়াত বললেন
-‘চুপ করবে তুমি! না জেনে শুনে মাঝে কথা বলবে না তো।
আহান সন্দেহের চোখে তাকাতেই সাখাওয়াত বললেন

-‘কি? ছিঃ! আহান!
-‘ছিঃ বন্ধু!
সাখাওয়াত উঠে দাঁড়ালেন।
-‘শালা হারামি…
আহান দিলেন দৌঁড়।সাখাওয়াতও ছুটলেন।অল্প ছুটেই হাঁপিয়ে উঠলেন।হারুন বললো
-‘কি হলো? ছিঃ ছিঃ করলো কেন? আমি তো ভালো কথা বললাম।ভালো মানুষের দাম নেই রে…
কথাটা বলতে বলতে একটা সিরাম হাতে নিলেন ভদ্রলোক।
-‘আরিব্বাস! দাবি ড্রিংকস্ মনে হচ্ছে! খেয়ে দেখি একটু।এমন সুযোগ আর আসে নাকি কে জানে!
সিরামের মুখ খুলে মুখে অল্প খেতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।

-‘মিঠা মিঠা..কিন্তু গন্ধটা কেমন যেন..মজাই আছে অবশ্য।
আহনাফ কি মনে করে এই রুমে এসেছিল।
-‘বা..
হারুন রহমানকে সিরাম খেতে দেখে হা হয়ে গেল সে।
-‘এই কি করছেন?
হারুন ভড়কে গেলেন।আহনাফ সিরামের খালি বোতল দেখে বললো
-‘কি করলেন এটা?
হারুন রহমান ভয় পেলেন।
-‘সিরাম খেলেন কেন?আল্লাহ!
হারুন রহমান বললেন

-‘সিরাম এটার নাম? অনেক দাম বুঝি! আ’আমি আসলে এসব আগে খাইনি মানে দেখে তাই…
-‘আরে বলদের বলদ এটা আমার বাপে মুখে দেয়।চেহারায় দেয়…ফেইস প্রডাক্ট…
হারুন রহমান আকাশ থেকে পড়লেন।গলায় হাত দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন…”অমাগোওওওও..!!”
আহনাফ কপালে হাত দিল।

সময় পেরোলো।ঘড়ির কাঁটায় দুটো বাজে।কুহু একটা চাপাতি নিয়ে বসে আছে।আজ আসুক বাঙ্গির পোলা! কি এত কাজ ওর? তার তিলোত্তমা যে অপেক্ষা করছে এটা সে জানে না! কুহু চেইঞ্জ করে একটা নরমাল থ্রি পিস পড়েছে।হঠাৎ দরজার বাহিরে চেঁচামেচি শুনে কান বড় করলো মেয়েটা।আদিত আর আহনাফের গলা।
-‘রাত দুইটা বাজে ভাই।এখন কীসের টাকা? আমার বউ আমাকে মারবে ভাই।প্লিজ যেতে দে..
আদিত বললো

-‘দেখ ভাই! অনেক কষ্ট করে সাজিয়েছি আমরা।তারউপর সেই কখন থেকে আমি আর আরিফ বসে আছি তোর জন্য।কিরে আরিফ! বল কিছু!
আরিফ ঘুমে ঢুলছে।আদিত ঢাক্কা দিতেই বললো
-‘হু? হ্যাঁ..দিয়ে দে ভাই..
আহনাফ বিরক্ত নিয়ে বললো
-‘কত টাকা?
আদিত বললো
-‘দে পঞ্চাশ দে..
আহনাফ পকেট থেকে মানি ব্যাগ বের করে পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে দিল ওকে।
-‘নে..
আদিত হা হয়ে গেল।বললো

-‘আব্বে শালা! পঞ্চাশ টাকা না পঞ্চাশ হাজারর..
-‘কিহহহ!! টাকা কি গাছে ধরে রে!
-‘আমি কি জানি! হয় টাকা দে তানাহলে দাঁড়িয়ে থাক আমাদের সাথে।
আহনাফ ‘চ’ সূচক শব্দ করলো।সময় নিয়ে ভাবলো কিছু।এরপর ক্রেডিট কার্ডটা বের করে আদিতকে দিয়ে বললো
-‘নে এটা রাখ।যা লাগে নিয়ে নিস।পাসওয়ার্ড ……. যা এখন।
আদিত খুশি হয়ে বললো
-‘আহা আহা! সোনা বন্ধু আমার।হেই আমার এক বড় না দুই বড়..আহনাফের মন বড়….যাও বন্ধু তুমি বাসর কর। চল আরিফ।
আরিফকে নিয়ে হেলে দুলে চলে গেল সে।আহনাফ বাঁকা হেসে বললো
-‘দশ টাকা পড়ে আছে কার্ডে।পঞ্চাশ টাকা দিতে চাইলাম নিলি না।মারা খা এখন।
আহনাফ দরজা খুলে প্রবেশ করলো।নিভু নিভু আলো জ্বলছে।মনটা দুলে উঠলো তার।বিছানায় এক মায়া পরী বসে আছে বলে মনে হচ্ছে।আহনাফ আলো জ্বালালো না আর।এগিয়ে গেল।বিছানায় কাছে আসতেই কুহু চাপাতি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।

-‘ওরে বাবাগো!!!
আহনাফ ভয়ে পিছিয়ে গেল।কুহু লাফ দিয়ে নামলো খাট থেকে।
-‘কই ছিলেন এতক্ষণ আমার প্রিয় স্বামী?বলুন বলুন..
কুহু চাপাতি নিয়ে এগোচ্ছে আর বলছে।আহনাফ পেছোচ্ছে আর বলছে
-‘তিলোত্তমা লিসেন! আমি বলছি সবটা।এ’এটা রাখো সোনা বউ আমার।
-‘কোথায় ছিলেন?
আহনাফ দেয়ালে ঠেকে গেল।কুহু তার দিকে চাপাতি তাক করে বললো
-‘বলুন কোথায় ছিলেন?
-‘আরে তোমার বাপের এসিস্টেন্ট আমার বাপের সিরাম দামি ম’দ মনে করে গিলছে সবটা।তাকে নিয়ে হসপিটাল গিয়েছিলাম।
কুহু ভড়কে গেল।বললো

-‘কিহ্!!
আহনাফ সবটা বললো তাকে।কুহুর কেন যেন হাসি পেল শুনে।চাপাতিটা টেবিলে রেখে সে হেসে ফেললো।
-‘আল্লাহ! তিনি এমন কেন?এমন এক কাজ করেছেন যে দুঃখ না পেয়ে হাসছি আমি।আল্লাহ!
আহনাফের প্রতিউত্তর না পেয়ে কুহু পেছনে তাকায়।একি! কোথায় গেল আহনাফ? সামনে তাকাতেই চমকে উঠলো সে।আহনাফ একদম কাছে দাঁড়িয়ে।কুহু পিছিয়ে গেল।আহনাফ হঠাৎ বললো
-‘আরশোলা!
কুহু চেঁচিয়ে তার বুকেই আছড়ে পড়লো।
-‘আআআ!!ওরে বাবাগো! কোথায়!
আহনাফ ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো
-‘ইট ওয়াস অ্যা ট্রাপ বেইবি…অনেক সময় নষ্ট হয়েছে এবার চলো…
কুহুকে কিছু বলতে না দিয়েই আহনাফ তাকে কোলে তুলে নেয়।ভড়কে গেল কুহু।কিছু বলার আগেই তার পিঠ ঠেকলো নরম বিছানায়।কুহু বললো

-‘আ’আহনাফ..আ..
-‘শশশ…
আহনাফ তার ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে চুপ করিয়ে দিল।কুহু চুপ হয়ে গেল।ভেতরে তার ভূমিকম্প হচ্ছে।আহনাফ গোলগাল আদল খানা পরখ করে একটা শুকনো ঢোক গিলে। বড় বড় চশমার আড়ালে কুহুর ক্ষুদে অক্ষিদ্বয় নজর কাড়লো তার।চশমাটা খুলে পাশে রাখলো সে।
-‘তুমি আমার বহু অপেক্ষার ফল, তিলোত্তমা।আমার একাতিত্ব জীবনের সঙ্গিনী..আমার মুখে হাসি ফোটানোর কারণ তুমি।কখনো ছেড়ে যেও না আমাকে।বাঁচবো না আমি।বড্ড ভালোবাসি তোমাকে আমি।স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে তোমার জন্য আমি উন্মাদ, তিলোত্তমা।তোমার তুমিটাকে কি আজ দিবে আমাকে তুমি?দিবে তোমাতে মিশে যেতে?
কুহু প্রতুত্তর করে না।সে আহনাফের ওষ্ঠজোড়া আকড়ে ধরে।আহনাফ হাসলো।এভাবে উত্তর দেয় কেউ! দুষ্টু মেয়ে! আহনাফ আকড়ে ধরলো তার তিলোত্তমাকে।আঙুলে আঙুল স্পর্শ করলো।তীব্র হাওয়ায় জানালার পর্দাটা উড়ছে।শীতল হাওয়ায় ঘরটা ছেয়ে গেল।অধৈর্য আহনাফের বেসামাল স্পর্শে একটা সময় নিজেকে মানিয়ে নিল কুহু।ঝড়ের রাতটা সাক্ষী হয়ে রইলো তাদের ভালোবাসার।ঝড় ঝাপটা পেড়িয়ে শুরু হলো নতুন এক জীবনের।

-‘এতকিউত মি বাইয়া! তাত দিন…
-‘দিব না।কি করবি?
পাঁচ বছরের হিয়া উপর দিকে তাকায়।চোখের চাহনিতে যেন ধারালো কোনো অস্র নিয়ে ঘুরছে সে।বারো বছরের আহির বললো
-‘এএএএ চোখ নিচে..নিচে নামা চোখ! বেয়াদব!
-‘তোল নানি বেদব…
আহির ভড়কে গেল।বললো
-‘আল্লাহ খোদা! কি ভাষা! যত বড় মুখ না অত বড় কথা!
হিয়া ছোট্ট সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে ছোট ছোট পায়ে তাকে এড়িয়ে গেল।আহির ওর ভাবটা দেখছে শুধু।দুই পা সামনে যেতেই আহির ওর জামার উপরের অংশটা ধরে ওকে এক হাতে উঁচু করে ফেললো।হিয়া চেঁচিয়ে উঠলো
-‘তারো আমাকে…তারো..

আহির এক হাত পকেটে গুঁজে আরেকহাতে ওকে উঁচু করে রেখেছে আর হিয়া পা আছড়াচ্ছে ছাড় পেতে।তখন হঠাৎ..
-‘আহির কি হচ্ছে? ছাড়ো হিয়াকে…
আহির পেছনে তাকায়।চৌদ্দ বছর বয়সের আমান দাঁড়িয়ে পেছনে।পকেটে হাত গুজে অনেকটা গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে।আহির বললো
-‘ওয়াও! সূর্য আজ কোন দিকে উঠলো যে তুমি এলে এখানে!
হিয়া আমানকে দেখে চিক্কুর দিয়ে কেঁদে উঠলো।
-‘আমল বাইয়া…
আমান চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললো।আহির হো হো করে হাসতে লাগলো।হিয়াকে কোলে নিয়ে বললো
-‘উফ ছোট প্যাকেট! সেই সেই!
আমান বললো

-‘একদম হাসবে না আহির। আর হিয়া তোকে কতবার বলেছি যে আমান হবে আমল না।
হিয়া ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে।আমান ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বললো।
-‘বাদ দে…শুভ জন্মদিন।
-‘তনবাদ…
আহির খ্যাক খ্যাক করে হাসতে লাগলো।
-‘তুই ও কিউট তোর কথাগুলোও কিউট।উম্মাহ!
আহির হিয়ার গালে চুমু দিল।আমান বললো
-‘এই তোমাকে না বারণ করেছি যে ওকে চুমু দিবে না।
আহির বললো
-‘তাই?

বলেই ও হিয়ার গালে টপাটপ আরো চুমু খেল।আমান গিয়ে থাবা বসিয়ে হিয়াকে নিজের কোলে নিতে চাইলো।কিন্তু আহির ধরে ফেললো।আমান বললো
-‘ছেড়ে দাও ওকে..
-‘আহির শাহরিয়ার ছাড়ার জন্য ধরে না কিছু, আমান সিদ্দিকি।
-‘আমান সিদ্দিকির জিনিসে নজর দিও না।আগেও বারণ করেছি।
দুজন একে অপরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।হিয়া ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখছে শুধু।হঠাৎ’ই হিয়া আস্তে করে বায়ু দূষণ করে।
-‘ওহ নো! বড় আম্মুউউউউউউউ…
আহির চেঁচিয়ে উঠে।

শাহরিয়ার পরিবারের ছোট্ট রাজকন্যার আজ জন্মদিন।সবাই মিলে বাগান বাড়িতে এসেছে তারা। জায়গাটাকে সাজিয়েছে সুন্দর করে।একটা মাদুর পেতে সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছিল সবাই।মাঝে কেটে গিয়েছে পনেরোটা বসন্ত।অথচ মনে হচ্ছে যেন এইতো সেইদিন’ই কুহু ভার্সিটিতে গেল আহনাফের সাথে দেখা হলো।কত কাণ্ড! আর আজ নাকি তাদের একটা মেয়েও আছে।আহনাফ আর কুহুর মেয়ে আরাবি হিয়া শাহরিয়ার।
ছেলের চিৎকার শুনে রোদেলা ভড়কে গেল।রাফি বললো
-‘এই হতোচ্ছোরা আবার চেঁচায় কেন?
আয়ান বললো

-‘আমার ছেলে আর তোমার ছেলে একসাথে হলে ঝামেলা হয়না কোনদিন! আবার লেগেছে বোধহয় দুটো…
নাতাশা ‘চ’ সূচক শব্দ করলো।
-‘হিয়াকে নিয়ে আমার লেগেছে বোধহয় দুজনে…
তখন’ই হিয়াকে চ্যাংদোলা করে আমান আর আহির নিয়ে এলো।আহির বললো
-‘বড় আম্মু…তোমার মেয়ে ইয়ে করে দিয়েছে…ধরোওওও…
আমান আস্তে করে বললো
-‘বড় হলে লজ্জা পাবি তানাহলে আমিই পরিষ্কার করে দিতাম,আমার সুহাসিনী।
আহির বোধহয় শুনেছে।সে বললো
-‘আমার বেইবিগার্লকে বড় হতে দে এরপর দেখি না কি হয়! কাকে সে লজ্জা পায়..
আমান ঠোঁট বাঁকালো।কুহু গিয়ে মেয়েকে ধরার আগে আহনাফ গিয়ে ধরে।
-‘আমার আম্মা! কি করেছেন এটা আপনি? বলেছি না টয়লেট পেলে বলবেন!
-‘তলি বাবা..

আহনাফ মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বলে
-‘ওলে বাবাকি জান! এরপর থেকে বলবেন।কেমন?
-‘আততা…
হাসলো আহনাফ।মেয়ে তার প্রাণ।মা ডাক তার মেয়ের জন্য’ই জীবন্ত হয়েছে।তানাহলে মা বলে তো সে ডাকতেই পারেনি কোনোদিন।আহনাফ মেয়েকে চোখে হারায় এজন্য বলতে গেলে।কুহু হাসলো বাবা-মেয়ের কেমিস্ট্রি দেখে।
আদিতের পাশেই তার সিনিয়র বউ রাইফা বসে।কম খাঁটুনি হয়নি তার বিয়ের সময়! কত বলে কয়ে রাজি করিয়েছিল সে ভাভাগো!আদিত সেই কথা মনেও করতে চায় না।সে বললো
-‘আমাদের হতোচ্ছোরা কোথায়?
পাশ থেকে আরিফ বললো
-‘অবশ্য’ই আমার মেয়েকে নিয়ে চিপায় ঘুরছে।তুই শুনে রাখ আদিত তোর ঐ ডিস্কো ছেলের সাথে আমি মোটেও আমার মেয়ের বিয়ে দিব না।

-‘ঐ ছেলের কাছে কোন মেয়ের বাপ মেয়ে দিবে?ছেলেটাকে মানুষ করতে হবে।
-‘হেই ড্যাডি!
রাইফা বিরক্ত নিয়ে ছেলের দিকে তাকায়।বয়স চৌদ্দ হলে কি হবে দেখতে দামড়া।
-‘বাবা বললে কি তোর মুখে ঠাডা পড়বে রে হতোচ্ছারা!
আদিত কথাটা বলতেই আরাফ বললো
-‘কুল! হাইপার হচ্ছো কেন?
-‘ভদ্রভাবে কথা বলো আরাফ।আমান ভাইকে দেখেও তো কিছু শিখতে পারো।
কথাটা বললো আরিফের মেয়ে আফনান।বারো বছর বয়স।মাথায় হিজাব বাঁধা তার।নিধি ছোট থেকেই মেয়েকে অশ্লীল দুনিয়া থেকে দূরে দূরে রাখছে।হিজাব পড়া শিখিয়েছে মেয়েকে সে।আফনানের কথাটা শুনে আরাফ বললো

-‘আচ্ছা।
আদিত বললো
-‘বাপের কথা তো শুনো না।আবার আফনান বলায় আচ্ছা বলো!
আরাফ বললো
-‘ইয়ো ইয়ো কুল বাবা!
আদিত জুতোটা খুলতে নিলে রাইফা আটকে দিল।
-‘তোর ইয়ো ইয়ো পেছন দিয়ে দিব…কোথ্থেকে নিয়ে এসেছো একে রাইফেল? এ মোটেও আমার ছেলে নয়।হতেই পারে না।
সবাই হা করে তার দিকে তাকিয়ে।আহনাফ মেয়েকে ক্লিন করে আসছিল।কথাটা শুনে বললো
-‘এটা তোর’ই ছেলে।তোর মতোই বান্দর।এটাই তার প্রমাণ।
আরাফ বললো
-‘আংকেল অপমান্স করবেন না।ইয়ো! হিয়ামনি! হ্যাপি বার্থ ডে…
হিয়া ফোকলা দাঁত বের করে হেসে বললো
-‘তনবাত…
আরাফ হেসে বললো
-‘ওলকম।

সবাই হেসে ফেললো।আহান শাহরিয়ার আর সাখাওয়াত আলম গিয়েছিলেন হাঁটতে।এই বয়সে একটু হাঁটাহাঁটি না করলেই নয়! দুজন এসেই নাতনির উপর হামলে পড়লো।যত রূপকথা আছে সব শুনিয়ে ফেলবে যেন।আহনাফ বাবার পাকা চুল দেখে বললো
-‘কত তাড়াতাড়ি সময় চলে গেল।তাই না?
কুহু বললো
-‘হুম..মনে হচ্ছে যেন এই তো ঐদিন’ই আপনার সাথে দেখা হলো।
আহনাফ হাসলো।কুহু আহনাফের কাঁধে মাথা রেখে বললো
-‘প্রণয়ের অন্তিমক্ষণে এসে যে আপনার মতো কাউকে পেয়ে যাবো ভাবতেও পারিনি।ধন্যবাদ মিস্টার খাটাশ।
আহনাফ নাক কুচকায়।

-‘এতগুলো বছর হয়ে গেল তাও খাটাশ নামটা বাদ দিলে না!
কুহু খিলখিল করে হাসে।
রোদেলা কেক বের করে সাজাচ্ছিল।রাফি সবাইকে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রোদেলার গালে টুপ করে চুমু খেয়ে বসলো।রোদেলা চমকে তাকালো তার পানে।রাফি বললো
-‘ব্যাক দাও.. ব্যাক দাও এবার..
রোদেলা চোখ রাঙায়।রাফি বললো
-‘হয় ব্যাক দাও তানাহলে আহিরের ভাই-বোন আনার ব্যাবস্থা করবো আমি।
-‘ব্যাক দিও না আম্মু।আমার একটা বোন চাই।
রাফির মতোই ফিসফিস করে বললো আহির।রোদেলা ভরকে ছেলের দিকে তাকায়।রাফি বললো
-‘আচ্ছা তাহলে রাতে তুই অন্যরুমে ঘুমাবি।
-‘কেন কেন?

রোদেলা রাফির পিঠে ধরাম করে কিল বসায়।সবাই তাদের দিকে তাকায়।আহির বললো
-‘আরেহ তেমনকিছু না।বাবাকে মা মেরেছে।
সবাই হেসে ফেললো।রাফি বললো
-‘খুব উপকার করলেন সবাইকে জানিয়ে।বেয়াদব ছেলে! যা ভাগ এখান থেকে…
আহির ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে গেল।অখিল শাহরিয়ারের পাশে বসে তার সাথে গল্প করতে লাগলো।কীভাবে তাকে জেরিন বেগম ঠকিয়েছেন সেই কাহিনী তিনি তার প্রত্যেকটা নাতি-নাতনিকে শুনিয়েছেন।বারবার শোনান তিনি সেই কাহিনী।আর প্রত্যেকবার আহির বলে
-‘আলহামদুলিল্লাহ আমার কোনো ভাই নেই।
আনিসা বেগম বিদেশ চলে গিয়েছেন আবার।একা একাই থাকেন তিনি সেখানে।তাকে থাকতে বললেও তিনি থাকেননি এখানে।চলে গিয়েছেন।রোদেলা আর নিধি মিলে সব ঠিকঠাক করে সবাইকে ডাক দেয়।
-‘সব রেডি…সবাই চলে এসো…

বাচ্চারা চলে আসে দৌঁড়ে।মাদুরে কেক রাখা।কেকের মাঝে লেখা..”Happy Birthday Princess” নিচে ছোট্ট করে লিখা “Hiya”… হিয়া এখন তার নানা ভাইয়ের কোলে।মাদুরে বসিয়ে দিল তাকে সাখাওয়াত আলম।তার এক পাশে আহির দাঁড়ালো আরেকপাশে আমান।দুজন হাঁটু মুড়ে বসে ওর পাশে।তার দুইদিকে আরাফ আর আফনান দাঁড়িয়ে।আরিফ ক্যামেরা রেডি করলো।এত সুন্দর মুহূর্ত..ছবি না তুললে হয়!সবাই সুন্দর করে দাঁড়ালো।কিন্তু ছবিটা তুলবে কে? সবার মুখে চিন্তার ছাপ।হঠাৎ একটা গাড়ি এসে থামলো।তাকালো সবাই সেইদিকে।গাড়ি থেকে নামলো ওসি সাহেব।ভদ্রলোকের ভুড়ি এখন বিশাল হয়েছে।হিডেন ট্যালেন্টের পাওয়ারও বেড়েছে বোধহয়।আহনাফ অমায়িক হেসে এগিয়ে গেল।সে নিজেই ইনভাইট করেছিল তাকে।

-‘আরেহ! কেমন আছেন?
ওসি সাহেব হেসে বললেন
-‘এই তো আল্লাহ রেখেছেন।তবে আগের মতো আর খেতে পারি না।এটাই সমস্যা।
সবাই খুকখুক করে কেঁশে উঠলো।না খেয়েই এই এত বড় পেট! মনে হচ্ছে নয় মাসের প্রেগনেন্ট।ওসি সাহেব বললেন
-‘আজকাল যার তার সামনে আমার হিডেন ট্যালেন্ট বেরিয়ে যাচ্ছে।কি জ্বালা বলেন তো!
আহনাফ ভাবুক হয়ে বললো
-‘সত্যিই খুব চিন্তার বিষয়।
-‘এখন তো তাও অবসরে আছি বলে।এরকম হুটহাট হিডেন ট্যালেন্ট প্রকাশ পেলে চলতো নাকি!
আরাফ বললো

-‘হিডেন ট্যালেন্ট! আমরাও দেখি একটু আপনার হিডেন ট্যালেন্ট আংকেল।
সবাই চেঁচিয়ে উঠলো “নাআআআআআ”।ভদ্রলোক ভড়কে গেলেন।আরিফ মেকি হেসে বললো
-‘ইয়ে..হিডেন ব্যাপার স্যাপার হিডেন রাখাই ভালো।সবাই জেনে কি আর ভেল্যু থাকে! তাই আরকি..
-‘দামি কথা বলেছেন মিস্টার আরিফ।
আদিত বললো
-‘আচ্ছা ওসি সাহেব তাহলে আমাদের ছবিটা তুলে দিক।
ওসি সাহেব দেদার হেসে বললেন
-‘অবশ্য’ই দিব।আপনারা দাঁড়ান সবাই।
আরিফ ক্যামেরা দিল তার কাছে।ওসি সাহেব পেটে হাত বুলিয়ে বললেন
-‘রেডি সবাই?

“হ্যাঁ”..সবাই একসাথে বললো।আহনাফ কুহুর কোমড় পেঁচিয়ে ধরে টান মেরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে।কুহু ভড়কে তাকায় তার দিকে।আহনাফও তাকায়।তার ঠোঁটের কোণে হাসি।প্রাপ্তির হাসি।আহনাফ আজ পরিপূর্ণ।আল্লাহ’র কাছে কৃতজ্ঞ সে। এদিকে রাফি রোদেলার কোমড়ে চিমটি কাটে। রোদেলা রেগে তাকায় রাফির দিকে।রাফি ঠোঁট চোকা করে চুমু দেওয়ার মতো।আদিত রাইফার কাঁধে হাত দিয়ে ঠোঁটে হাসি ঝুলায়।আরিফ নিধির বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে হাসে।আরাফ আফনানের হিজাব ধরে টান মারে যার দরূণ বেচারি তার দিকে ঝুঁকে যায়। এদিকে আমান আর আহির দুজন একসাথে হিয়ার দুগালে চুমু বসায় আর হিয়া গোল গোল চোখ করে।ব্যাস! ক্লিক হয়ে গেল এভাবেই।ওসি সাহেব বললেন –“দুর্দান্ত!”

সবাই হেসে ফেললো।আরাফের কৌতুহল জেগেছে ওসি সাহেবের হিডেন ট্যালেন্ট নিয়ে।সে কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে এক কোণায় ওসি সাহেবকে নিয়ে গিয়ে বললো তার হিডেন ট্যালেন্ট দেখাতে।বেচারা অনেক এক্সাইটেড।ওসি সাহেব হো হো করে হাসেন।এরপর বললেন
-‘তুমি সিউর তো?
-‘হ্যাঁ হ্যাঁ..
ওসি সাহেব বুঝলেন এই ছেলের কৌতুহল বেশি।এতো কৌতুহল তো ভালো নয়।আজ এটা নিয়ে কৌতুহল দেখাচ্ছে কাল গাঞ্জা কি তা জানবে খেতে যে যাবে না তার কি গেরান্টি?ওসি সাহেব কিছু ভাবলেন।এরপর পেছন ঘুরে আরাফের মুখ বরাবর তার হিডেন ট্যালেন্ট প্রকাশ করলেন।ছেলেটা যেমন ছিল তেমনভাবেই দাঁড়িয়ে।ওসি সাহেব তার হাত ধরে নাড়া দিতেই সে নড়লো।

-‘এই ছেলে!
আরাফ হাত দিয়ে নাক চেপে বললো
-‘দোয়া করি এই হিডেন ট্যালেন্ট নিয়ে অনেক দূর যান…তবে আর ফিরে আইসেন না প্লিজজ…
আরাফ পেছন ঘুরে চলে গেল।মাতালের মতো হাঁটছে সে।আদিত ছেলের এমন অবস্থা দেখে বললো
-‘এই! কি হয়েছে তোর?
-‘তেমন কিছু না।ওসি সাহেব আমার মুখ বরাবর তার হিডেন ট্যালেন্টটা ছুঁড়ে মেরেছেন।
সবাই নিরব রইলো এরপরেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো সকলে।আরাফ লজ্জা পেয়ে ভেতরে দৌঁড় লাগালো।ওসি সাহেব পেটে হাত বুলিয়ে বললেন

-‘আর কেউ দেখবে নাকি আমার হিডেন ট্যালেন্ট?
সবাই হু হা করে হাসছে।বাকি বাচ্চারা বুঝলো না।তবুও বাবা-মায়ের হাসি দেখে হাসলো।সবশেষে কেক কাটা হলো।সবাই কেক খাওয়ার চেয়ে মাখামাখি নিয়ে ব্যস্ত বেশি।একেকজন কেক দিয়ে মাখামাখি করে ফেলেছে চেহারা।হিয়ার গালে একটু আগে আহির কেক মাখিয়েছে।হিয়া বলে উঠলো
-‘বাঙিল পলা!
সবাই আরেকদফা হাসলো।কুহুর কার্বনকপি এটা।আহনাফ কুহুর কানেকানে কিছু বলতেই কুহু বললো
-‘বাঙ্গির পোলা! যান ভাগেন!

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৪২

আহনাফ হেসে ফেললো।নিজ বাহুতে আকড়ে ধরলো তাকে।ভালোবাসা প্রথম দ্বিতীয় বলতে কি আদেও কিছু হয়?শেষ পর্যন্ত মনের গহীণে যে থেকে যায় সেই হচ্ছে আসল।প্রণয়ের অন্তিমক্ষণে এসে যদি সঠিক মানুষ পাওয়া যায় তবে ক্ষতি কি! এদের দুষ্টু-মিষ্টি সম্পর্কটা বহাল থাকুক সারাজীবন।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here