প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৯

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৯
Drm Shohag

মাইরা গাল পেতে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। কোনো সাড়া না পেয়ে চোখ বুজে ঢোক গিলে। কেন যেন খা’রা’প লাগছে ভীষণ। কেন খা’রা’প লাগছে? উত্তর খুঁজে পায় না। ইরফানের দিকে তাকায় না। উল্টো ঘুরে দ্রুত পায়ে জায়গা প্রস্থান করতে চায়, তার আগেই ইরফান মাইরার পেট বা হাতে আঁকড়ে ধরে। নিজে চেয়ারে বসে তার কোলে মাইরাকে বসায়। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। তৃণা বেগম নিজেও অবাক হয়ে তাকায়। ইরফান গম্ভীর মুখায়বে তার ফুপির দিকে চেয়ে বলে,
“ফুপি খাবার দাও। আমার কাজ আছে।”
মাইরা দু’হাতে ইরফানের হাত সরানোর চেষ্টা করে। এগুলো কী ধরনের অসভ্যতামি? দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আমায় ছাড়ুন, অ’সভ্য লোক!”

ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছোট্ট আওয়াজে বলে,
“আমি খাবো, তুমিও এভাবেই বাকি খাবার ফিনিশ করবে,, দ্যটস ফাইনাল।”
মাইরা তৃণা বেগমের দিকে অসহায় চোখে তাকায়। তৃণা বেগমের দৃষ্টেতে বিস্ময়। মাইরা চোখ সরিয়ে নেয়। বিরক্তি, লজ্জা, রাগ সবমিলিয়ে ইরফানের হাতের উপর তার দু’হাতের নখ দাবিয়ে সব রাগ ঝেড়ে দেয়। নখ কয়েকদিন হলো না কাটায় বড় হয়েছে ভালোই। একদম র’ক্ত বেরিয়ে গেল। কিন্তুু ইরফানের হেলদোল নেই। গম্ভীর মুখে মনোযোগী চোখে মাইরার খামচি দেয়া দেখল। কিছুই বলল না। মাইরা এখনো হাত সরায়নি। ইরফান ডান হাতে মাইরার প্লেট এগিয়ে এনে মাইরার সামনে রেখে মৃদুস্বরে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“খেয়ে নাও।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মাইরা ইরফানের এমন ঠাণ্ডা গলা শুনতে পেয়ে ইরফানের হাতে খামচে ধরা দু’হাত আলগা করে দেয়। ফর্সা হাত অনেকটা জুড়ে জখম হয়ে আছে। কেটে গিয়ে কেমন র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। মুহূর্তেই বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে ফুলে উঠল। মাইরার নিজেরই খা’রা’প লাগলো। সে এমন রা’ক্ষ’সের মতো খামচে দিয়েছে? আর এই লোকের কিছুই যায় আসে না। ঘাড় বাঁকিয়ে ভেজা গলায় বলে,
“আপনার কি একটুও অনুভূতি নেই?”
ইরফান শান্ত চোখে মাইরার দিকে তাকায়। আবারও ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“ফিনিশ ইট। ফাস্ট।”
কথাটা বলে চোখ সরিয়ে তার বা হাতের দিকে তাকায়, যেখান থেকে বেয়ে গড়িয়েছে স্বল্প র’ক্তের ছিটেফোঁটা। কি মনে করে খুবই সূক্ষ্ম হাসে। সে হাসি বোঝার ক্ষমতা কারো নেই। তার মুখাবয়ব স্বাভাবিক থাকে, কে বুঝবে? শুধু সেই বোঝে হয়ত।
মাইরা অবাক হয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা এমন স্বাভাবিক কি করে? সে র’ক্ত বের করে দিয়েছে, অথচ এই লোকের হেলদোল নেই। তাকে থা’প্প’ড় কখন দিবে?
চোখ ঘুরিয়ে ইরফানের হাতের ক্ষ’ত হওয়া হাতের দিকে তাকায়। চোখজুড়ে অসহায়ত্ব ভিড় করে। কাজ টা ঠিক হলো না বোধয়।

তৃণা বেগম ইরফানের পাশে দাঁড়িয়ে ইরফানকে খাবার বেড়ে দেয়। ইরফানের হাতের অবস্থা তার চোখ এড়ায়নি। কিন্তুু কিছু বলল না। ইরফানকে তিনি খুব ভালোই বুঝেছেন, বউকে নিয়ে খুব চিন্তা। সে এখানে কি বলবে?
ইরফানকে খাবার দিয়ে সে তার ঘরে চলে যায়।
মাইরা রে’গে বলে,
“আমায় ছাড়ুন।”
ইরফান পরোটা ছিঁড়ে মুখে দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলে,
“এভাবেই খেতে হবে।”
মাইরার কান্না পায়। এই লোকটা এমন কেন। অসহায় কণ্ঠে বলে,
“প্লিজ ছাড়ুন। আমি এখানে বসেই খাবো।”
ইরফান কিছু বলল না। মাইরা ইরফানের খামচি দেয়া হাত আবারও দু’হাতে চেপে ধরে। ইরফান খাওয়া থামিয়ে একবার তাকায় মাইরার হাতের দিকে। চোখ সরিয়ে নেয়, কিছু বলে না। খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। মাইরা বিরক্ত হয়ে রেগে বলে,

“আপনি ছাড়বেন আমায়? বলেছি তো এখানে বসেই খাবো।”
ইরফান শুনলো না। মাইরার এতো রা’গ লাগছে। মনে মনে বিড়বিড় করে দু’চারটে কথা শুনিয়েছে এতোক্ষণে। ইরফানের হাতের দিকে তাকালে দেখল পুরো হাতের বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে ক্ষ’ত। বিড়বিড় করল, ‘ভালোই হয়েছে। অ’সভ্য লোক।’
নিজেকে সামলে মৃদুস্বরে বলে,
“প্লিজ ছেড়ে দিন। এভাবে খেতে পারব না। এখানে বসেই সব ভাত খাবো।”
ইরফান ঘাড় ঘুরিয়ে মাইরার দিকে তাকায়। বা পায়ে তার পাশের চেয়ার টেনে তার চেয়ারের সাথে লাগিয়ে মাইরাকে তার গা ঘেঁষে বসিয়ে দেয় চেয়ারে। মাইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ইরফানের থেকে সরতে নিলে ইরফান পিছন দিকে বা হাতে মাইরার কোমড় চেপে ধরে। মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আবার কোলে বসতে চাইছ?”
মাইরা বিরক্ত হয়ে নিজের কোমড় থেকে ইরফানের হাত সরাতে চায়। জখম হাতে আরও কতগুলো যে আঁচড় লেগেছে, তার হদিস নেই। তবে ইরফান সে ব্যাপারে নির্বিকার। মাইরা রে’গে বলে
“ছাড়বেন আপনি?”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“নো।”

মাইরা হাল ছেড়ে দিল। এই লোককে বলে লাভ নেই। ভাতের প্লেট এগিয়ে নিয়ে দ্রুত খেয়ে নিল। ইরফান দেখল মাইরার খাওয়া শেষ। নিজে থেকেই মাইরাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তার খাওয়া বেশ কিছুক্ষণ আগেই শেষ হয়েছে। মাইরার খাওয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। ফোনের দিকে তাকিয়ে সময় দেখল, এরপর দ্রুতপায়ে শুদ্ধর ঘরের দিকে যায়। মাইরা ভ্রু কুঁচকে ইরফানের প্রস্থান দেখল। পানি খেতে খেতে ভাবছে, লোকটাকে কেমন যেন অদ্ভুদ লাগছে। এসবের পিছনে কারণ খুঁজে পায় না।
ইরফান শুদ্ধর ঘরে গিয়ে শুদ্ধর ল্যাপটপ অন করে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে। শুদ্ধ তার ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“তোর বাবা।”
ইরফান কানে ফোন নেয়। বা হাতে ল্যাপটপে আঙুল চালায়। ডান হাতে কানে ফোন ধরে বলে,
“বলো।”
তারেক নেওয়াজ রেগে বলে,
“ওখানে কেন গিয়েছ?”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“কাজ ছিল।”

“তোমার অফিস এখানে। আর কাজ ওখানে? আমাকে কি শেখাতে চাও তুমি? তুমি আবার মাইরাকে মারতে গিয়েছ? আর একবার ওর গায়ে হাত তুললে আমি ভুলে যাব তুমি আমার ছেলে।”
ইরফান বিরক্ত হয়ে বলে,
“ওকে।”
তারেক নেওয়াজ রেগে বলে,
“হেয়ালি করছ আমার সাথে? আমি লইয়ারের সাথে কথা বলেছি। তোমার ডিভোর্সের ব্যবস্থা আমি করছি। তুমি আর ও বাড়ি যাবে না। এক্ষুনি….”
ইরফান রেগে শুদ্ধর ফোন আঁছড়ে ফেলে। শুদ্ধ ইরফানের পাশেই টানটান হয়ে চোখ বুজে শুয়ে ছিল। এমন ধুপ করে শব্দ পেয়ে দ্রুত চোখ খুলে উঠে বসে। ইরফানের দিকে তাকিয়ে দেখে তার ফোন নেই। ইরফানের হাত ফাঁকা। অসহায় কণ্ঠে বলল,
“আমার ফোন কি করলি?”
ইরফান শুদ্ধর কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এই ডিভোর্সের ব্যাপারে কেউ কিছু বললে তোকে ছাড়ব না আমি।”
শুদ্ধ হা করে চেয়ে আছে ইরফানের দিকে। যাহ বাবা, সে কি করল? অসহায় কণ্ঠে বলল,
“তোর বাপ করাতে চাইছে ডিভোর্স। আমি কি করলাম?”
“তুই এই ওয়ার্ড ফার্স্ট ইউস করেছিলি। এখন সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে এটা।”
শুদ্ধ অদ্ভুদচোখে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ ইনফারের দিকে। কিছু বলল না। সে বুঝে গেছে এদের বাপ, ছেলের যা-ই হবে সেই ঝড়ের হাওয়া তার গায়ে কোনো না কোনোভাবে লাগবেই। এটা লেখা হয়ে গেছে। বেড থেকে নেমে তার ফোনটা তুলে দেখল, ফোন অন-ই আছে। তবে কল কেটে গিয়েছে।

সময় দুপুর ২:৪৫।
মাইরা খেয়ে এসে কিছুক্ষণ বই পড়লো। কিছুক্ষণ শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করল। কিন্তুু চোখে ঘুম ধরা দেয় না। মাঝে আর একদিন আছে এক্সাম এর। একটু টেনশন হচ্ছে। তবে চিন্তাভাবনায় ইরফানের অংশ বেশি। কি যে ভাবে নিজেই বোঝে না। তবে একটা কথা ভেবে ভালো লাগলো, ইরফানকে এখন হিরো-ই লাগে তার কাছে। এর ক্রেডিট তার। কিন্তুু মানুষ তো ভালোর কদর করতে জানে না, তাই তাকে মে’রে চলে যায়। মাইরা একা একা মুখ বাঁকায়।
শুদ্ধর মায়ের ঘরে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরতে নিলে এদিকে ইরফানকে আসতে দেখে মাইরা অবাক হয়। যখন বুঝলো তার দিকেই আসছে, একদম কাছে চলে এসেছে দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করে তার ঘরের দরজা লাগাতে চায়, ইরফান ধাক্কা দেয়। মাইরা ব্যর্থ হয় দরজজা আটকাতে। ধাক্কায় দু’পা পিছিয়ে যায়। ইরফান ঘরের ভেতর এসে কিছুটা রেগে বলে,

“স্টুপিট, দরজা লাগাচ্ছিলে কেন?”
মাইরা ঢোক গিলে। সকালের খামচির জন্য মারতে এসেছে না-কি। একটু ভ’য় পায়। অতঃপর কণ্ঠে ঝাঁঝ ঢেলে বলে,
“আপনি এই ঘরে এসেছেন কেন? যান বলছি।”
ইরফান বিরক্ত হয়ে ঘরের দরজা আটকে দেয়। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফান দরজা আটকে মাইরার দিকে দু’পা এগিয়ে এসে শান্ত গলায় বলে,
“রেডি হও, ফাস্ট।”
মাইরা অবাক হয়ে বলে,
“কোথায় নিয়ে যাবেন আমাকে?”
“রেডি হতে বলেছি।”
মাইরা রেগে বলে,
“আপনার সাথে আমি কোথাও যাবো না।”

কথাটা বলে দরজার দিকে যেতে নিলে ইরফান মাইরাকে নিজের সাথে চেপে ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“যেতে হবে। রেডি হও।”
মাইরা মোচড়ামুচড়ি করে। ঠেলে ইরফানের থেকে নিজেকে ছাড়াতে চায়। চিৎকার করে বলে,
“অ’সভ্য লোক আমায় ছাড়ুন। আমি মরে গেলেও আপনার সাথে কোথাও যাবো না।”
ইরফান ডান হাতে মাইরার গাল চেপে বলে,
“আমায় রাগিয়ো না। চুপচাপ রেডি হয়ে নাও।”
মাইরা রে’গে বলে,
“আমি যাবো না। বুঝেছেন আপনি? ছাড়ুন আমায়।”
ইরফান চোখ বুজে শ্বাস টানল। রেগে প্রশ্ন করে
“হোয়াই?”
মাইরা চেঁচিয়ে বলে,
“তো কি আপনার সাথে নাচতে নাচতে ঘুরতে যাবো? আমার সৎ মা ও আপনার মতো এভাবে মারেনি, দু’দিনে আমাকে উঠতে বসতে মেরেছেন। ছাড়ুন আমায়।”
কথাগুলো বলতে বলতে চোখজোড়া পানিতে টইটুম্বুর হয়ে গেছে।
ইরফান থমকানো দৃষ্টিতে তাকায় মাইরার দিকে। অবাক হয়ে বলে,

“তোমার সৎ মা?”
মাইরা ইরফানকে গায়ের জোরে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। আবারও চেঁচিয়ে বলে,
“আপনি জেনে কি করবেন? বের হন এখান থেকে বলছি।”
বলতে বলতে ইরফানকে ঠেলে বের করতে চায়। ইরফান সম্বিৎ ফিরে শক্ত করে মাইরাকে তার সাথে চেপে ধরে। শান্ত গলায় বলে,
“স্যরি!”
মাইরা বিস্ময় চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। অবাক হয়ে বলে,
“কি বললেন?”
ইরফান থতমত খেয়ে বলে,
“নাথিং।”
মাইরা মুখে হাত দিয়ে বলল,
“আপনি স্যরি বললেন?”

ইরফান গম্ভীর মুখে মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
“নো।”
মাইরা রে’গে বলে,
“আপনি স্যরি বলেছেন, আমি নিজের কানে শুনেছি।”
ইরফান ধমক দেয়, “সাট আফ, স্টুপিট।”
মাইরা ধমক খেয়ে কেঁপে ওঠে। সে বুঝতে পারে না, এই লোকের হঠাৎ হঠাৎ কি হয়। কেমন অদ্ভুদ অদ্ভুদ কথা বলছে। ইরফান মাইরাকে চুপ থাকতে দেখে ধমকে বলে,
“রেডি হতে বলেছি আমি।”
মাইরা চিন্তা বাদ দিয়ে রেগে বলে,
“আমি কোথাও যাবো না।”
ইরফান বিরক্তর শ্বাস ফেলে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ইউ আর আ স্টুপিট। আমায় না রাগিয়ে শান্তি পাও না?”
মাইরা কিছু বলে না। ইরফান মাইরাকে বাম হাতে নিজের সাথে চেপে আলমারির কাছে যায়। ডান হাতে একটা পাল্লা খুলে ভেতর থেকে নেড়েচেড়ে একটা কালো বোরখা নেয়। মাইরার গলা থেকে ওড়না সরাতে নিলে মাইরা ভীত স্বরে বলে,

“কি করছেন?”
ইরফান শান্ত গলায় বলে,
“রেডি করাচ্ছি। ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
মাইরা তার ওড়না টেনে ধরে রেগে বলে,
“আপনি আসলেই একটা অ’সভ্য।”
ইরফান শান্ত চোখে মাইরার দিকে তাকায়। ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দেয়,
“ওকে।”
মাইরা কি বলবে বুঝতে পারছে না। এই লোকটা কি আসলেই পা’গ’ল হয়ে গেল? কেমন অদ্ভুদ বিহেভ করছে। মাইরার নিজেকেই পা’গ’ল লাগছে। ইরফান আবারও মাইরার ওড়না ধরে টান দিতে নিলে মাইরা ইরফানের হাত ধরে বলে,
“আমি রেডি হচ্ছি। প্লিজ আপনি যান।”
ইরফান গম্ভীর চোখে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরাকে ছেড়ে হাতঘড়িতে সময় দেখল। হাতের বোরখা বেডের উপর ছুঁড়ে ফেলে বাইরে যেতে যেতে বলে,
“পাঁচ মিনিটে আসছি। রেডি হও। ফাস্ট।”

মাইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কোথায় নিয়ে
যাবে তাকে? কোনো ধারণাই করতে পারলো না। তাকে বলেও না। বিরক্ত লাগলো। বোরখা পরে হিজাব বাঁধল। এরপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজেকে দেখল খানিক। ইরফান তাকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়? বিন্দুমাত্র আন্দাজ করতে পারলো না। তবে সে ঠিক করলো, সে যাবে না। যাবে না মানে যাবেই না ওই লোকের সাথে।
ঘর থেকে বেরিয়ে দেখল আশেপাশে কেউ নেই। বিকেল হতে চলল। শুদ্ধর মা হয়তো ঘুমিয়েছে। একবার ইরফানের ঘরের দিকে তাকায়। দরজা চাপানো। মাইরা তার ঘরের দরজা চাপিয়ে চুপচাপ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
ইরফান শাওয়ার নিয়েছে। এই মেয়েটার সাথে কথা বলতে গেলে তার মেজাজ বিগড়ে যায়। বিড়বিড় করে, ‘স্টুপিট গার্ল।’

গায়ে সাদা শার্ট আর কালো প্যাণ্ট জড়ালো। দ্রুত দু’হাতের শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করল। হাতঘড়ি হাতে পরতে পরতে আয়নার একবার নিজের প্রতিবিম্ব দেখে গম্ভীর মুখে। মুখাবয়বের কোনো পরিবর্তন নেই।
এরপর গাড়ির চাবি পকেটে রাখে। হাতঘড়িতে একবার সময় দেখে। ফোন হাতে নিয়ে কাউকে কল করে বলে,
“সন্ধ্যার পর আসছি।”
এরপর কল কেটে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
মাইরার ঘরের দরজা ঠেলে ভেতরে গিয়ে আশেপাশে তাকায়। কাউকে না দেখে ভ্রু কুঁচকে নিল। এগিয়ে গিয়ে ওয়াশরুম চেক করে। ঘরের আশেপাশে ভালোভাবে চোখ বুলিয়ে বুঝল নেই। বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে তার ফুপির ঘরের দিকে যায়। তৃণা বেগম ঘর থেকে বেরিয়ে ইরফানকে দেখে বলে,
“কোথাও যাচ্ছিস বাবা?”

ইরফান তার ফুপির দিকে তাকিয়ে বলে,
“হুম ফুপি কাজ আছে। ওই মেয়েটা কোথায়?”
“মাইরার কথা বলছিস?”
ইরফান নিরব থাকলো। তৃণা বেগম ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ও তো ওর ঘরেই আছে।”
“নেই।”
ভদ্রমহিলা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ঘর ছাড়া আর কোথায় যাবে। দাঁড়া আমি দেখছি।”
কথাটা বলে মাইরার ঘরের দিকে যায়। ধীরে ধীরে অন্যঘর গুলোতেও দেখল। কোথাও না পেয়ে অবাক হলেন তিনি। এক্সামের জন্য তো মাইরা বাইরেও যায় না। এই দুপুর সময় মেয়েটা কোথায় গেল? ইরফানের কাছে এসে জানালেন, ‘পেলেন না মাইরাকে।’
ইরফান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। পিছন থেকে শুদ্ধ তার ঘর থেকে বেরিয়ে বলে,

“কি হয়েছে?”
তৃণা বেগম ছেলের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“মাইরাকে দেখেছিস?”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“না তো। কেন নেই?”
“না, কোথাও পেলাম না তো।”
শুদ্ধ ইরফানের সামনে গিয়ে সিরিয়াস কণ্ঠে বলে,
“বাচ্চা মেয়ে। যদি বয়ফ্রেন্ড থেকে থাকে। এতোদিন পর গ্রামে এসে হয়তো বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ঘুরতে গেছে, নয়তো পালিয়ে গেছে। স্বামীর হাতে বেচারি মার খেয়ে খেয়ে বয়ফ্রেন্ড এর কাছে নালিশ করতে গেছে। চাপ নিস না।”
ইরফান শুদ্ধর দিকে তেড়ে যায়। শুদ্ধ এক লাফে দূরে গিয়ে দৌড়ে তার ঘরে চলে যায়। ইরফান জ্বলন্ত চোখে শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে। শুদ্ধ মিটিমিটি হাসছে, আবার সিরিয়াস হয়ে বলে,
“অবশেষে মাইরা এবার একটু স্বামীর আদর বয়ফ্রেন্ড এর থেকে পেতে যাচ্ছে। মাইরাকে দেখেই বলবে,”
এরপর শুদ্ধ নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে,

ওগো মাইরা বেবি, তুমি এসেছ? এক্ষুনি তোমার থা’প্প’ড় এর মেশিন ইরফান বাবুকে ডিভোর্স দিয়ে আমার কাছে চলে এসো। আমি তোমাকে..”
ইরফান হাতের কাছে একটা ফুলদানি পেয়ে শুদ্ধর ঘরের দিকে ছুঁড়ে ফেলে, রাগান্বিত স্বরে চিৎকার করে বলে,
“আই উইল কি’ল ইউ, শুদ্ধ।”
শুদ্ধ ঠাস করে তার ঘরের দরজা লাগিয়েছে। দরজার সাথে লেগে ফুলদানি ঠাস করে পড়ে গিয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
ওদিকে শুদ্ধ দরজা আটকে শব্দ করে হাসছে। এরপর আবারও দরজা খুলে একটু উঁকি দিলে তৃণা বেগম শুদ্ধর দিকে চেয়ে রে’গে বলে,
“এ্যাই চুপ কর, জ্বালাস না তো ওকে। আর কিছু বলবি না, বাঁদর হয়েছে।”
শুদ্ধ মায়ের কথা শুনে মিটিমিটি হাসতে হাসতে ইরফানের দিকে তাকালো। ইরফান চোখ বন্ধ দাঁড়িয়ে ডান হাতে ঘাড় ডলে। বাম হাত মুষ্টিবদ্ধ। অফিসের সব কাজ সকাল থেকে নাকেমুখে করল ল্যাপটপ, ফোন দিয়ে। মিটিং, ফোনকল, বাবার অহেতুক ঝাড়ি সবমিলিয়ে মাথাটা পুরোটা ব্লাস্ট হওয়ার উপক্রম। এখন এ্যাই স্টুপিট তার সাথে যাবেনা বলে কোথায় গেছে কে জানে। মেজাজটা চরম লেভেলের বিগড়ে গেল।
তৃণা বেগম ইরফানের গালে হাত দিয়ে বলে,
“রাগ করিস না বাবা। বাচ্চা মেয়ে। ওর কোনো বান্ধবীর বাড়ি গেছে হয়তো। গ্রাম তো, এখানে ওর অনেক বান্ধবী আছে।”
ইরফান কিছু বললো না। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে হনহন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

মাইরা তার এক ক্লাসমেট, নাম মিম, তার বাড়িতে এসেছে। মিমের সাথে তার সবচেয়ে বেশি সখ্যতা। গ্রামে না থাকায় অনেকদিন দেখা সাক্ষাৎ হয়না, তাই ভাবলো মিমের সাথেই আজ বিকাল কাটিয়ে যাক।
মাইরা একটু পর পর লাফ দিয়ে বড়ই গাছ থেকে বড়ই পারতে চায়, হাতের নাগালে পেয়েও যেন পায় না। ফসকে যায় বারবার। পাশে মিম বিরক্ত হয়ে বলল,
“ঘরে পারা আছে রে। ঘরের টা কি আমরা এঁটো করে রেখেছি?”
মাইরা পাত্তা দিল না। আরেকটু জোরে লাফ দিয়ে একটা ডাল টেনে ধরে। ফটাফট পাঁচ ছয়টা বড়ই ছিঁড়ে সবগুলো বড়ই বোরখার সাথে মুছতে মুছতে বলে,
“এভাবে খাওয়ার মজা তুই আজও বুঝলি না রে ছানা।”
বলে দু’টো একসঙ্গে মুখে দেয়। মিম মাইরার বা হাত ধরে সামনে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
“ওতো বোঝার দরকার নাই আমার। তুই তৈরী জিনিস খেতে পারিস না। এটা তোর প্রবলেম।”
মাইরা কিছু বললো না। আশেপাশে দেখছে। কতদিন পর গ্রামের ধুলোর রাস্তায় বান্ধবীকে নিয়ে হাঁটছে, বড়ই খাচ্ছে। মনটা ফুরফুরে লাগছে বেশ। মিম পাশ থেকে বলে,

“তোর জামাই এর কি খবর?”
মাইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“মানে না আমারে।”
মিম দাঁড়িয়ে যায়। অবাক হয়ে বলে,
“মানে?”
মাইরা বড়ই এর বিচি মুখ গোল করে ফেলে হেসে বলল,
“ক’দিনেই বাংলা ভুলে গেছিস? আমার হাওয়া ছাড়া সবার জীবনটা এভাবেই বেদনাময় হয়ে যায়। ক’ষ্ট পাস না। আবার তোকে ইংরেজ থেকে বাঙালি বানিয়ে দিব সুন্দরী।”
মিম রেগে ধুপ করে মাইরার হাতে একটা আলতো থা’প্প’ড় মেরে বলে,
“মজা করিস না, বল, আসলেই মানে না তোকে?”
মাইরার মুখটা কেমন মলিন হলো। মৃদুস্বরে বলল,

“হুম।”
মিম অবাক হয়ে বলে,
“তাহলে এখন কি হবে?”
মাইরা হেসে বলে,
“তোর হাড়িতে ভাগ বসাবো।”
“মানে?”
মাইরা মুখে থাকা বড়ই এর বিচি ডান পাশে ফেলে বলে,
“এতো মানে মানে করিস ক্যান? তোর জামাই এর গলায় ঝুলবো, তোর হাঁড়িতে ভাগ বসাবো। দুই সতিনে মিলে ঝা’ক্কাস এক সংসার সাজাবো।”
মিম রেগে গেল। এই বেয়া’দব টা জীবনেও সিরিয়াস হবে না। ভাবলো জামাই এর না মানার ব্যাপারেও মজা করে বলেছে। তাই আর কিছু বলল না। মাইরা সামনে ফুসকার এক ভ্যান দেখে বলে,
“আমি টাকা আনিনি। তুই খাওয়া আজ।”
মিম মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“বিয়ে হলো তোর। খাওয়াবি তুই, উল্টে আমাকে খাওয়াতে বলছিস?”
মাইরা মিম এর দু’হাত ধরে নাড়াতে নাড়াতে বলে,

“আরে খাওয়া। আজ হঠাৎ করেই বেরিয়ে এসেছি। আমি তোকে জামাই খুঁজে দিব, নে এবার খাওয়া।”
মিম ফুসকার দোকানের দিকে যেতে যেতে বলে,
“তোর কি আমাকে লোভী মাইয়া মনে হয়? এমন ভান করিস যেন হিসেব করে করে চলি আমরা!”
মাইরা চার প্লেট ফুসকা দিতে বলে এই দাদুকে। মিম আর মাইরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। কথা বলার মাঝে মাইরার পিছনে চোখ পড়লে মিম অবাক হয়ে বলে,
“দেখ, কি সুন্দর একটা ছেলে। পাশে গাড়িও আছে। আমি ক্রাশ খাইছি খালা।”
মাইরা ভ্রু কুঁচকে পিছন ফিরে তাকায়।
ইরফান বিরক্ত ভরা চোখমুখে মাইরার থেকে কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশে তাকিয়ে যেন কিছু খুঁজছে, হাতে থাকা ফোনে কিছু একটা দেখে আবারও আশেপাশে চোখ বুলায়। মাইরা চোখ বড়বড় করে তাকায়। দ্রুত উল্টো ঘুরে মিমের হাত ধরে। দোকানের বুড়ো দাদুকে বলে,
“ফুসকা খাবো না দাদু।”

কথাটা বলেই মিম এর হাত ধরে একপ্রকার দৌড় লাগায়। মিম হাঁপানো কণ্ঠে বলে,
“আরে যাচ্ছিস কেন? কি হয়েছে?”
মাইরা পিছু ফিরে তাকায় না। এই লোক তাকে পেলে থাপ’ড়াতে থাপ’ড়াতে তার সাথে নিয়ে যাবে। মাইরার দৌড় থেমেছে একদম মিমদের বাড়ির সামনে গিয়ে। দু’জনেই হাঁপাচ্ছে। মিম শ্বাস নিয়ে বলল,
“কি হলো? চলে আসলি কেন? অনেক সুন্দর ছেলে। চল যাই। তোর বর আছে বলে কি আমি কারো দিকে তাকাবো না না-কি!”
মাইরা দু’হাত কোমড়ে রেখে বলে,
“থা’প্প’ড় খাবি। বিবাহিত পুরুষের দিকে নজর দিতে ল’জ্জা লাগে না? বেদ্দপ মাইয়া।”
মিম অবাক হয়ে বলল,
“তুই কি করে জানলি সেই লোক বিবাহিত?”
মাইরা থতমত খেয়ে তাকায়। আমতা আমতা করে বলে,
“আমার দূরসম্পর্কের বোনের জামাই।”
মিম হেসে বলে,
“তার মানে তোর দুলাভাই। চল ট্রিট নিয়ে আসি। শালি হই আমরা তার।”
মাইরা রেগে যায়। তার বরকে দুলাভাই বানিয়ে দিচ্ছে। আবার ভাবলো সেই তো বানালো। মিম এর হাত ধরে বাড়ির ভেতর যেতে যেতে বলে,
“হাঁপিয়ে গিয়েছি। চল ঘরে বসে গল্প করব।”
“ফুসকা খেতে পারতাম। চলে আসলি কেন?”
মাইরা কিছু বলল না।

পুরো বিকেল গ্রামের এ মাথা ও মাথা মাইরাকে খুঁজে ব্যর্থ হয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছে ইরফান। ডাইনিং এর সাথেই ড্রইং রুমের সোফায় চুপচাপ বসে গা এলিয়ে দেয়। ডান হাতে সফেদ শার্টের দু’টো আলগা বোতামের নিচে আরেকটি বোতাম আলগা করে দেয়। মাথা পিছুন দিকে কিছুটা ঝুঁকে চোখ বুজে রাখে। দু’হাত আড়াআড়িভাবে বুকে গুঁজেছে। ডান পা ভাঁজ করা, বা পা মেলে রাখা। কপাল জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘামের ছিটেফোঁটা। চোয়াল শক্ত তার। এভাবেই স্ট্যাচু হয়ে প্রায় ঘণ্টা দুই বসে রইল।
রাত ৯ টা পেরিয়ে গিয়েছে।
শুদ্ধ বাইরে থেকে ভেতরে এসে ইরফানকে সোফায় স্ট্যাচু হয়ে গা এলিয়ে বসে থাকতে দেখে বলে,
“কোথায় গিয়েছিলি? কতগুলো ফোন করেছি দেখ তো। কাল ভার্সিটি আছে। যাবি না? বিকেলে যেতে চেয়েছিলাম। অথচ তোর খোঁজ নেই।”
ইরফান নিশ্চুপ। চোখ মেলে তাকালো না পর্যন্ত। শুদ্ধর ফোনে রিং হয়। রিসিভ করে ফোন কানে দিয়ে বলে,
“হ্যাঁ বল। ডাক্তারদের আবার টিচারদের কথা মনে পড়ে না-কি?”

ওপাশ থেকে সীমান্ত রেগে বলে,
“ইরফান কোথায়? ও ফোন তোলে না কেন?”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ওকে দিয়ে কি করবি? ও ছ্যাঁকা খেয়ে বেঁকে গেছে।”
“মানে? ও রিলেশন করল কবে?”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“এমনি বললাম। কি দরকার ওকে বল।”
“সন্ধ্যায় ওর আমার চেম্বারে আসার কথা। আমার বউ কতদিন পর একটু আবদার করল ঘুরবে বলে, এই ইরফাইন্নার জন্য তো পারলাম-ই না। ওর নাকি সিরিয়াস রোগী। তো সে কোথায়? আসেও না, আমার ফোনও তোলে না। মেজাজ খা’রা’প লাগে না?”
শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ইরফানের দিকে। অতঃপর বলে,
“রোগীর কি প্রবলেম রে?”
“অ্যাজমা।”
শুদ্ধ মুখ গোল করে লম্বা করে বলে,
“ওওওওওওওও”
ওপাশ থেকে সীমান্ত রেগে বলে,
“আরে থাম। ও কোথায়? আসবে কি? শুনে বল তো।”
শুদ্ধ হেসে বলে,

“রোগী তো পালাইছে মামা। তুই তোর বউ এর রাগ ভাঙা যা। ইরফান যাবে না।”
বলেই কল কেটে দেয়। এরপর ইরফানের দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“সীমান্তের কাছে মাইরার অ্যাজমার ট্রিটমেন্ট করাতে চেয়েছিলি?”
ইরফান কিছুই বলল না। চোখ খুলল না। সেভাবেই থাকলো, যেন ঘুমিয়েছে। শুদ্ধ বিরক্ত হয়ে বলে,
“আরে ও চলে আসবে। এতো চিন্তা….”
বাকিটা বলার আগেই ইরফান ঝড়ের বেগে উঠে দাঁড়িয়ে শুদ্ধর কলার ধরে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“ওকে এনে দে, রাইট নাও।”
শুদ্ধ অবাক হয়ে তাকায় ইরফানের দিকে। এর চোখের অবস্থা এমন কেন। চোখজোড়া অসম্ভব লাল। শুদ্ধ কিছু বলার আগেই গেইটের সামনে চোখ পড়লে দেখল মাইরা দাঁড়িয়ে আছে। শুদ্ধ মৃদু হেসে চোখের ইশারায় বলে,
“ওই যে এসেছে তোর ও।”
ইরফান শুদ্ধর কলার ছেড়ে দ্রুত পিছু ফিরে গেইটের দিকে তাকায়।

মাইরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে তো সন্ধ্যার পর পর-ই আসতে চেয়েছিল। কিন্তুু মিম এর মা রাতে না খাইয়ে আসতে দেয়নি। রাতে খাবার খাইয়ে মিম আর তার মা এই বাড়ি পর্যন্ত তাকে এগিয়ে দিয়ে গেছে। সে ভেবেছিল ইরফান, শুদ্ধ এরা চলে গিয়েছে। এতো রাতেও যায়নি দেখে যেমন অবাক হলো, তেমনি ইরফানকে দেখে ভয়ে কাঁপছে মেয়েটা।
মাইরার ভাবনার মাঝেই ইরফান বড় বড় পা ফেলে মাইরার সামনে দাঁড়িয়ে বাঘের ন্যায় গর্জন তুলে বলে,
“কোথায় গিয়েছিলি?”
ভয়ে মাইরার পুরো শরীর কেঁপে ওঠে। কিছু বলার আগেই ইরফান বা হাতে মাইরাকে তার সাথে শক্তহাতে চেপে ডান হাতে মুখ চেপে আগের চেয়েও শব্দ করে চিৎকার করে বলে,
“বল? কোথায় গিয়েছিলি? অ্যান্সার মি!”
মাইরা ইরফানের চোখের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয়। এমন ভয়ংকর চোখ এর আগে দেখেনি। এতো ভয়ংকর লালিত রাগ মিশ্রিত চোখে একবার চোখ রেখেই তার আত্মার পানি শুকিয়ে গিয়েছে। মেয়েটার ভয়েই চোখজোড়ায় পানির কণা জমলো। ইরফান আগের চেয়েও শক্তহাতে মাইরার গাল চেপে চিৎকার করে বলে,
“ড্যাম ইট, স্পিক আপ।”
মাইরা দু’গালে ব্য’থা পায়। তবে কিছু বলে না। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

“আমার ফ্রেন্ড এর বাড়ি।”
ইরফানের শক্ত কণ্ঠ, “ও ছেলে না মেয়ে?”
মাইরা ভয়েই ফটাফট বলে দেয়, “মেয়ে”
মাইরার কথাটা শুনে এক মুহূর্তেই ইরফান কেমন যেন শান্ত হয়ে যায়। মাইরার গাল ছেড়ে দেয়, বা হাতে মাইরাকে আঁকড়ে ধরা হাত সরিয়ে নেয়। চোখ বুজে শ্বাস টানে লম্বা। এরপর চোখ মেলে তাকায়।
মাইরার বাম গালে তার ডান হাত আলতো হাতে রেখে নরম সুরে বলে,
“ইট’স ওকে। নেক্সট উইকে নিয়ে যাব। রাতে খেয়েছ?”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৮

মাইরা ঝট করে চোখ তুলে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফানের চোখ অস্বাভাবিক লাল, তবে শান্ত, একটু আগের রাগের আভা নেই। উত্তরের অপেক্ষায় গম্ভীর মুখে চেয়ে মাইরার পানে।
মাইরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ইরফানের দিকে। কথা বলতে ভুলে গিয়েছে মেয়েটা। কি হলো, কি হচ্ছে সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২০