প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৩
Drm Shohag
ফাইজ এগিয়ে আসে ছাদের দরজার দিকে। এখান থেকেই তো কিসের আওয়াজ আসলো। ইনায়া ভয়ে মৃদু কাঁপছে। বারবার ঢোক গিলছে।
ফাইজ ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে দেখল একটা পটকার প্যাকেট, ছেলেটা অবাক না হয়ে পারল না। এই বাসায় তো কোনো বাচ্চা নেই তার জানা মতে। তাহলে এই বাঁদরামি টা কে করলো? ফোন পকেটে রেখে ইনায়ার দিকে এগিয়ে এসে পকেটে হাত রেখে দাঁড়ায়। ইনায়ার মাথা নিচু।
ফাইজ আরও দু’পা এগিয়ে আসে। ইনায়া চোখ বড় বড় করে তাকায়। কাঁপা কণ্ঠে বলে,
“এগোচ্ছেন কেন?”
ফাইজ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল,
“লিটল গার্ল, তুমি অনেক বড় হয়ে গিয়েছ।”
ইনায়া দৃষ্টি নামিয়ে এদিক-ওদিক তাকায়। ফাইজ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“তোমার কোনো ফ্রেন্ডকে দাওয়াত করেছ?”
ইনায়া দু’দিকে মাথা নেড়ে বলে,
“না তো।”
“তাহলে এইসব বাঁদরামি কে করেছে? পটকা ফুটিয়ে আমার হাফ বউ এর হার্টবিট বাড়িয়ে দিয়েছে।”
ইনায়া পিছন দিকে আরেকটু চেপে যায়। আমতা আমতা করে বলে,
“মাইরা হয়তো।”
“এটা কে?”
“ভাইয়ার বউ।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ফাইজ দু’হাত আড়াআড়ি ভাবে নিয়ে ডান হাতের দু’আঙুল গালে রেখে ভাবুক ভঙ্গিতে বলে,
“ইরফানের বাচ্চা মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে শুনেছি। কিন্তুু এরকম মেয়ের সাথে? সিরিয়াসলি? ইরফানের বউ এরকম বাঁদর? আনবিলিভাবল!”
ইনায়া রেগে বলে,
“মাইরা অনেক ভালো।”
ফাইজ ভ্রু কুঁচকে তাকায় ইনায়ার মুখের দিকে। মেয়েটার কপালে বিরক্তির ভাঁজ, খানিক রাগের আভা। ফাইজ গম্ভীর মুখে বলে,
“লিটল কুইন, আমাকে রাগ দেখাবে না। আমার রাগ ভাঙাবে, বুঝেছ?”
ইনায়া মাথা নিচু করে মুখ বাঁকিয়ে বিড়বিড় করে,
“বয়েই গেছে আমার।”
কথাটা ফাইজের কানে পৌঁছেছে। মাঝের দূরত্ব ঘুচিয়ে নেয় আরেকটু। ইনায়া পেছাতে পেছাতে ছাদের রেলিঙে ঠেকেছে। ফাইজ ডান হাত রেলিঙের উপর ভর করে রাখে। মাথা নিচু করে ঘাড় বাঁকিয়ে ইনায়ার মুখপানে তাকায়।
নিজের মুখের সামনে ফাইজের মুখ দেখে ইনায়া চোখ বুজে মৃদুস্বরে বলে,
“দূরে সরুন প্লিজ!”
ফাইজ একপেশে হাসে। লো ভয়েসে বলে,
“বিয়ের পরের জন্য সব তুলে রাখছি লিটল কুইন। তুমি আমাকে ভীষণ জ্বালিয়েছ। এরপর আর একবার কল রিসিভ না করলে তোমার ভাবির পরীক্ষার ওয়েট করব না কিন্তুু।”
কথাটা বলে ইনায়ার থেকে দূরে সরে দাঁড়ায় ফাইজ। পকেটে দু’হাত গুঁজে আফসোসের সুরে বলে,
“আমি বুঝলাম না, আমাদের ছেলেদের কী বউ এর সান্নিধ্য পাওয়ার অপেক্ষা করার জন্য জন্ম হয়েছে না-কি? আমি, শুদ্ধ, ইরফানের সব এক কেস। আমাদের জ্বালা কেউ বোঝে না। বোঝে না।”
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে নিল। ইরফান ভাইয়ার আবার অপেক্ষা কিসের? ‘ওহ, হয়তো মাইরাকে তাড়ানোর অপেক্ষার কথা বলেছে।’
ইনায়ার মন খা’রা’প হয়। মাইরা কি তার ভাবি হয়ে সারাজীবন থাকবে না? মুখ ফসকে বলে,
“ভাইয়া বউকে ছাড়ার অপেক্ষা করে।”
ফাইজ শব্দ করে হেসে দেয় ইনায়ার কথা শুনে। ইনায়া বোকাচোখে ফাইজের দিকে তাকায়। এমন পা’গ’লের মতো হাসতে দেখে বিরক্ত হয়। সে ক’ষ্টের কথা বলছে, আর এই লোক হাসছে। অ’সহ্য। ফাইজ একটু পর নিজের হাসি চেপে বলে,
“লিটল কুইন, ইউ আর আ ভেরি সিলি গার্ল।”
ইনায়ার চোখেমুখে বিরক্তি। সে তো সত্যিটাই বললো। এই লোক উল্টো তাকে বোকা বলছে। ফাইজ আবারও আফসোসের সুর তুলে,
“বোঝেনা রে বোঝেনা। আমাদের দুঃখ কেউ বোঝে না।”
ইনায়া আড়চোখে ফাইজের দিকে তাকায়। চাঁদের আলোয় ফাইজ এর আফসোস-এর ভাড়ে নুইয়ে পড়া মুখটা দেখে ইনায়ার মায়া হলো।
ফাইজ হঠাৎ-ই ইনায়ার দিকে তাকালে ইনায়া থতমত খেয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। ফাইজ বিস্তর হাসে, সময় ব্যয় না করে ইনায়ার পাশে দাঁড়ায়, তবে মাঝে এক চিমটি পরিমাণ দূরত্ব রেখেছে। পকেটে দু’হাত রেখে ডান পা রেলিঙের সাথে ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“হাফ বউ এর লজ্জা ভাঙানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।”
ইনায়া চোখ বুজে নেয়। হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়েছে। ছাদ থেকে নামার উদ্দেশ্যে দ্রুতপায়ে এগোয়, কয়েক পা ফেললে ফাইজ ইনায়ার সামনে তার বাম পা রাখে। ইনায়া হোঁচট খেতে গিয়েও নিজেকে সামলে বলে ওঠে,
“আমাকে ছোঁবেন না।”
ফাইজের দু’হাত পকেটে। হবু বউ এর কথায় ঠোঁট প্রসারিত হয়। দু’পা পিছিয়ে ইনায়ার পিছনে দাঁড়ায়। ইনায়ার মাথা ফাইজের বুক সমান। ফাইজ ডান দিকে একটুখানি ঘাড় বাঁকিয়ে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি লেপ্টে ডাকে,
“বি রেডি, মাই লিটল কুইন, ফর আ হালাল টাচ।”
ইনায়ার ল’জ্জায় কান গরম হয়। এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে তার সব শক্তি ফুরিয়ে ঠাস করে পড়ে যাবে। আর দাঁড়ায় না, দৌড় দেয়। এক দৌড়ে ছাদ থেকে সিড়িতে গিয়ে নামে। ফাইজ শব্দ করে হাসে। দু’হাত তুলে টানা দিয়ে বলে,
“আহা! অপেক্ষা! লিটল কুইন, লাভ ইউ।”
ইনায়া ছাদের দরজা থেকে একবার পিছু ফিরে তাকায় হাস্যজ্জ্বল ফাইজের পানে। কিছুটা গলা চড়িয়ে বলে,
“বখাটে পুরুষ।”
ফাইজ অন্ধকারে চেয়েই আবারও শব্দ করে হেসে বলে,
“ইয়োর পার্সোনাল।”
“আমি কিছু বলেছি।”
মাইরা এবার রেগে যায়। অস’ভ্য লোক। তার সামনে শাড়ি খুলতে বলছে। চোখ তুলে ইরফানের পানে চেয়ে কোমড়ে দু’হাত রেখে রেগে বলে,
“আপনি আসলেই অস’ভ্য। আমার মতো মাসুম বাচ্চার কাপড় খুলতে বলছেন। আপনার সামনে আমি শাড়ি খুলব না। বুঝলেন?”
ইরফান রেগে মাইরার দিকে এগিয়ে আসে। মাইরা ভয় পেয়ে ডান দিকে কিছুটা হেলে দেয়ালের সাথে চেপে দাঁড়ায়। মাথা নিচু, তবে আড়চোখে ইরফানের দিকে দৃষ্টি রাখে।
ইরফান মাইরার হাত ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়। মাইরা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। লোকটা শুধু তার কাছে চলে আসে। আর তার ভেতর হয় সুনামি। উফ! তার ভাবনার মাঝেই ইরফানের শান্ত গলা ভেসে আসে,
“স্টুপিট, আমার সামনে শাড়ি খুলতে বলেছি? আই নো, ইউ আর আ লিটল বেবি।”
কথাটা বলে আশেপাশে তাকায়। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে ঘরের বাইরে বেরিয়ে যায়।
মাইরা ভাবনার জগৎে। এই জগৎে কীভাবে থাকবে? ইরফানের এতো শান্ত কণ্ঠ মেয়েটার হজম হচ্ছে না। বদহজম হবে আজ সিওর।
ইরফান বাইরে বেরিয়ে আসলে ইনায়াকে দেখতে পায়। ইনায়া এগিয়ে এসে বলে,
“কিছু বলবে ভাইয়া?”
ইরফান দোতলা থেকে তাদের ড্রয়িং রুমে তাকায়। সেখানে এখনো সবাই বসে। ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“রিতাকে বলবি ওই স্টুপিটের জামা আর একটা বই এনে আমাকে দিতে।”
ইনায়া অদ্ভুদভাবে তাকায় তার ভাইয়ের দিকে। স্টুপিট মানে যে মাইরাকে বুঝিয়েছে তার ভাই, এটা তার চেয়ে ভালো আর কে জানবে? মাইরা যা এক্টিং করে দেখালো, এরপর আর ভুল হওয়ার কোনো চান্স নেই। ইনায়ার এমন দৃষ্টিতে ইরফান কিছুটা বিব্রতবোধ করে। নিজেকে সামলে ধমকের সুরে বলে,
“হোয়াট?”
ইনায়া কিছু না বলে চলে যেতে নিলে মাইরা দরজা খুলে বলে,
“আপু আমাকে নিয়ে যাও।”
মাইরার কথা শুনে ইনায়া পিছু ফিরে তাকায়। ইরফান রেগে তাকায় মাইরার দিকে। সামনে তাকালে দেখল ফাইজ আসছে। আর নিচ থেকে শুদ্ধ আর ফাইজের সেই মামাতো ভাই উপরে আসছে। হাত মুঠো করে মাইরার দিকে তাকায়। তার শাড়ির অবস্থা বেহাল, সাথে চুল ভীষণ এলোমেলো। ইনায়া কিছু বলার আগেই ইরফান রেগে মাইরাকে তার ঘরের ভেতর গায়ের জোরে ধাক্কা দেয়। এরপর সে দ্রুত ঘরের ভেতর গিয়ে মাইরা পড়ে যাওয়ার আগেই মাইরাকে বামহাতে তার সাথে শক্ত করে আগলে ডান পা দিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। মাইরা চেঁচিয়ে উঠতে চায়, তার আগেই ইরফান মাইরার মুখ ডানহাতে চেপে ধরে।
মাইরা চোখ বড়বড় করে তাকায়। ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিব,
ইডিয়েট।”
মাইরা বা হাতে ইরফানের হাত তার মুখ থেকে সরাতে চায়। তবে পারে না ইরফানের শক্তির সাথে। ক্লান্তি নিয়ে শান্ত হয়ে যায়। অসহায় চোখে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান গম্ভীর চোখে মাইরার দিকে চেয়ে। মাইরা চোখ নামিয়ে নেয়।
দরজার ওপাশ থেকে ফাইজ নক করে ইরফানকে ডাকে। ইরফান মাইরার মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেয়। মাইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
ইরফান মাইরাকে ঠেলে তার থেকে দূরে সরায়। মাইরা কিছু বলতে নিলে তার আগেই ইরফান দাঁতে দাঁত পিষে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“যাস্ট একটা ওয়ার্ড উচ্চারণ কর,, আই সোয়ার, এই দু’গাল থাপড়ে লাল করব, স্টুপিট।”
মাইরা সাথে সাথে তার দু’হাত দু’গালে তুলে নেয়। একটু আগে বদহজম হওয়ার কথা ছিল, কিন্তুু তা ভ্যানিশ। এই লোকের আসল পরিচয় এটাই। তখন হয়তো ভূতে ধরেছিল, তাই স্বাভাবিকভাবে কথা বলেছিল।
ইরফান বা হাতে মাইরার ডান হাতের বাহু ধরে বাম দিকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। এরপর দ্রুত তার ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে দেয়।
মাইরা অসহায় মুখে বন্ধ দরজার পানে চেয়ে থাকে। এমন বন্দী জীবন আর ভালো লাগে না। অস’হ্য লোক একটা।
ইরফানকে দরজা লক করতে দেখে ফাইজ বলে,
“তোর ঘরে চল, আমি রেস্ট নিব।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“গেস্ট রুমে চল।”
“সারাজীবন তো তোর রুমে এসে রেস্ট নিলাম। আজ আবার নতুন নিয়ম কেন? বাদ দে। একটু শুতে দে। বিয়ের পর আর আসব না। তখন বউ এর ঘর-ই আমার ঘর। দেখি সর সামনে থেকে।”
কথাটা বলে দরজা খুলতে গেলে ইরফান রেগে ফাইজের বুকে হাত দিয়ে ঠেলে দাঁতে দাঁত চেপে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“আমায় রাগাস না। গেস্ট রুমে যা।”
ফাইজ অবাক হয়। এর ঘরে কি গুপ্তধন আছে না-কি? জীবনে তো এমন করেনি। বউ তো এর ত্রিসীমানায় থাকে না। থাকলেও তো কেউ এমন করে না। ফাইজ বিরক্ত হয়ে বলে,
“কি নাটক শুরু করলি!”
রিতা হাতে মাইরার একটা থ্রি-পিস আর একটা বই নিয়ে দাঁড়ায় ফাইজের পাশে। ইরফান হাত বাড়ালে রিতা বিনা বাক্যে কাপড়, বই ইরফানের হাতে দেয়। ফাইজ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে ইরফানের হাতের বই, জামার দিকে। দৃষ্টি সরিয়ে ইরফানের দিকে অদ্ভুদভাবে তাকিয়ে বলে,
“একটু বোঝাবি আমায়? বিলিভ মি, আমি তোর আচরণে নিজেকে গুলিয়ে ফেলছি।”
ইরফান কিছুই বলল না। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে ফাইজের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিল। ফাইজ তব্দা খেয়ে চেয়ে আছে।
একটু পর শুদ্ধ পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“এখানে কি করছিস?”
ফাইজ ইরফানের ঘরের সামনে থেকে কিছুটা সরে গিয়ে শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,
“আমি বুঝলাম না, তুই আমাকে মিথ্যে বললি কেন?”
শুদ্ধ অবাক হয়ে বলে,
“কি মিথ্যে বললাম?”
“ইরফান তো ওর বউকে নিয়ে থাকতে শুরু করেছে। তুই বললি, ও না-কি ওর বউকে মানে না।”
শুদ্ধ দ্রুত ইরফানের ঘরের বন্ধ দরজার দিকে তাকায়। আবার ফাইজের দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বলে,
“আর ইউ সিরিয়াস?”
ফাইজ শুদ্ধর পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বলে,
“ভিলেন এর সাথে মজা করার মুড নেই।”
শুদ্ধ রেগে বলে,
“তোর বোনকে থাপড়ে বিয়ে করব। ওকে বলে দিস।”
ফাইজ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। এর বিরহ যে তার বোন কবে শেষ করবে কে জানে।
ইরফান ঘরের ভেতরে গিয়ে হাতের কাপড় আর বই বিছানার উপর রাখে। মাইরা বিছানার উপর-ই বসে ছিল। জামা আর বই দেখে অবাক হয়ে বলে,
“বই এনেছেন কেন?”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“চেঞ্জ করে পড়তে বসবে।”
মাইরা কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
“আমি আজ পড়বো না। ইনায়া আপুর কাছে যাব আমি।”
কথাটা বলে বিছানা থেকে নেমে বাইরে বেরতে নিলে ইরফান মাইরার হাত টেনে তার সামনে এনে বলে,
“স্টুপিট, থা’প্প’ড় খেতে না চাইলে চুপচাপ যা বলেছি কর।”
মাইরা অসহায় মুখ করে রাখে। একটু ভেবে মাথা নিচু করে বলে,
“আমি আমার ঘরে গিয়ে চেঞ্জ করব।”
ইরফান এক পা এগিয়ে শার্ট এর হাতা গুটিয়ে রেগে বলে,
“ওকে ফাইন, আমি চেঞ্জ করিয়ে দিচ্ছি।”
মাইরা চোখ বড়বড় করে তাকায়। দু’পা পিছিয়ে গিয়ে দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে দ্রুত বলে,
“ন না, আমি এখানেই চেঞ্জ করছি।”
“গো।”
মাইরা অসহায় চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
“আপনি বাইরে যান।”
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে দরজা লক করতে ভোলেনি। মাইরার মুখ জুড়ে ভীষণ অসহায়ত্বের খেলা। ডানদিকে তাকালে ফ্লোর টু সিলিং আয়না চোখে পড়ে। মাইরা দ্রুতপায়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এতো বড় আয়না বেশ পর্যবেক্ষণ করে দেখতে লাগলো। তার খুব পছন্দ হলো। এমন আয়না সে কখনো দেখেনি। গ্রামে বড় হয়েছে, কিভাবে দেখবে। তবে ফোনে দেখেছিল। বাস্তবে দেখেনি। এই প্রথম সামনে থেকে দেখল।
আয়না থেকে চোখ সরিয়ে ঘরের অন্যান্য ফার্ণিচারের দিকে তাকালো। মাইরা ভীষণ অবাক হয়। ওমন ত্যাড়া, মাথার চুল ইয়া বড় বড় পা’গ’ল লোকের ঘর এতো গোছালো কি করে? কিছু ফার্ণিচার সাদা, আর কিছু কালো। অন্য কালারের একটা ফার্ণিচার-ও নেই। মাইরার তার স্বামীকে পছন্দ না হলেও তার এই গোছালো ঘর ভীষণ পছন্দ হলো।
পরনে এলোমেলো শাড়ির দিকে একবার তাকালো। খুলতে চাইলো, কিন্তুু ইনায়া এতো এতো পিন লাগিয়ে দিয়েছে, মাইরা একটু চেষ্টা করেই রেখে দিল। বিরক্ত লাগছে তার। মাথা ব্য’থা করছে। চুপচাপ গিয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ বুঝল। বিছানার চাদরটাও সাদা। মাইরা কিছু একটা ভেবে বিছানা থেকে নামতে চাইলো। কিন্তুু মাথা ব্য’থা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো, তাই আবার চুপচাপ শুয়ে পড়লো। বেশ কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করল, ছটফটায় মাথা ব্য’থায়। তার ঘরে গেলে একটা ওষুধ খেতে পারলে ভালো হতো। কিন্তুু এখন উপায় নেই। কিছুক্ষণের মাঝেই মাইরা ঘুমিয়ে যায়।
রাত বাজে ১১ টা। ফাইজেরা সবাই চলে গিয়েছে। রুমা বেগম ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিয়েছে। সবাই বেশ ক্লান্ত থাকায় আজ দ্রুত ঘুমিয়েছে। ইরফান তার ঘরে এসে দরজা লক করে উল্টো ঘুরে তাকালে বিছানায় নজর পড়লে চোখজোড়ায় বিস্ময় ভর করে।
মাইরা দরজার দিকে মাথা দিয়ে শুয়েছে। খাটের কিনারায় মাথা রেখে, চুলগুলো নিচে নামিয়ে দিয়েছে। কোমড়ের নিচ অব্দি চুলগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে লুটোপুটি খায়। মাইরা এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। ইরফান ঘরের ছাদের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখল ফ্যান ছাড়া। দৃষ্টি নামিয়ে মাইরার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ফ্যানের বাতাসে ছেড়ে রাখা চুলগুলো যেন দুলিয়ে দুলিয়ে নতুন ছন্দে নৃত্যরত।
ইরফান চোখ সরিয়ে নেয়। শার্টের তিনটে বোতাম খুলে। ঘেমে গিয়েছে। সোফার টেবিলের উপর থেকে এসির রিমোট নিয়ে এসি অন করল। ফ্যানের সুইচ অফ করতে গিয়েও কি মনে করে যেন করল না। ধীরপায়ে এগিয়ে মাইরার মেঝেতে পড়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলো বরাবর দাঁড়ায়।
সে যেখানে জামা আর বই রেখে গিয়েছিল সেগুলো সেখানেই আছে। গায়ের শাড়ির অবস্থা বেহাল। ইরফান মাইরার কাজে বিরক্ত হয়।
ফ্যানের হালকা বাতাসে মাইরার মুখের উপর ছোট ছোট চুলগুলো খেলা করে বেড়ায়। ফর্সা, গোলগাল, শান্ত মেয়ের মুখপানে ইরফান অনুভূতিহীন দৃষ্টিতে গম্ভীর মুখায়বে চেয়ে রইল কতক্ষণ নিজেও বুঝল না।
মাইরা ঘুমের মাঝেই নড়াচড়া করে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ে। দু’হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে দিলে একহাত ইরফানের দু’পায়ের মাঝ বরাবর গেলেও, আরেক হাত ইরফানের হাঁটুর সাথে লেগে যায়।
মাথার চুলগুলো উল্টো হয়ে নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়ায়, মাইরার ঘাড় উম্মুক্ত হয়ে যায়।
ইরফান অদ্ভুদভাবে মাইরার দিকে তাকালো। তার পায়ের সাথে লেগে থাকা মাইরার হাতের দিকে একবার তাকালো। এরপর চোখ তুলে তাকালে মাইরার ফর্সা উম্মুক ঘাড়ের পানে দৃষ্টি পড়লে চোখ সরিয়ে বিড়বিড় করে,
“স্টুপিট।”
এই বলে বেলকনিতে চলে যায়।
এসি প্লাস ফ্যানের বাতাসে মাইরার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে। মেয়েটা ঘুমের মাঝেই নিজেকে গুটিয়ে গুটিশুটি মেরে শোয়। তবুও ঠাণ্ডা কমেনা। বারবার এপাশ-ওপাশ করতে করতে এক পর্যায়ে বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে নেয়। ঘুম ভেঙে গিয়েছে। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। বোঝার চেষ্টা করছে সে আসলে কোথায়। ধীরে ধীরে শোয়া থেকে উঠে বসল। দেয়াল ঘড়িতে চোখ পড়লে দেখে ১১:৩০ প্রায় বেজে গিয়েছে। মাইরা চোখ বড়বড় করে তাকায়। আশেপাশে তাকালে ইরফানকে না দেখে দরজার দিকে তাকালো। ওই লোক কি এখনো আসেই নি? আসেনি ভাবলো, এসে যদি দেখত সে তার বিছানা পুরো দখল করে শুয়ে আছে নিশ্চিত তাকে দোতলা থেকে ফেলে দিত। বিড়বিড় করল,
“দয়ামায়াহীন লোক একটা।”
ডান হাতে মাথার চুল টেনে ধরল। মাথা ব্য’থা তীব্র হারে বেড়েছে। ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নামলো। দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজে নিজে খোলার চেষ্টা করল, পারছে না। এটা কিভাবে লাগায়। বিরক্ত হয় মাইরা। পিছন থেকে গম্ভীর গলায় ইরফানের কণ্ঠ আসে,
“কি করছ?”
ইরফানের গলা পেয়ে মাইরা দ্রুত পিছু ফিরে তাকায়। এই লোক কখন আসলো? আমতা আমতা করে বলল,
“দরজা খুলে দিন।”
ইরফান হ্যাঁ, না কিছুই বলল না। চুপচাপ মাইরার দিকে চেয়ে থাকে। মাইরার মুখ ফোলা, চোখ দু’টো হালকা লাল, ডান গালে কয়েকটা দাগ পড়েছে।
মাইরা ইরফানকে তার দিকে এমন চুপচাপ অনুভূতিহীন চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ নামিয়ে নেয়। আবারও চোখ তুলে তাকালে দেখে ইরফান সেভাবেই চেয়ে আছে। মাইরা আবারও আমতা আমতা করে বলে,
“দরজা টা খুলে দিন, প্লিজ!”
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে গটগট পায়ে এসে দরজা খুলে দিলে মাইরা ঘর থেকে বেরোনোর জন্য পা বাড়ালে মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে ওঠে। ইরফান মাইরার ডান বাহু চেপে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
মাইরা চোখ বুজে বা হাতে মাথার চুল টেনে ধরে। ইরফান মাইরার নিরবতায় ধমকে বলে,
“স্টুপিট! হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
মাইরা বিরক্ত হয়। এখন শুধু ইংলিশ ঝাড়বে। আর তাকে ধমকাবে। রেগেমেগে চোখ খুলে বলে,
“আপনার জন্যই তো ওষুধ খেতে পারিনি।
আমাকে বন্দী করে রেখেছিলেন কেন? উফ! মাথা আমার ছিঁড়ে গেল।”
ইরফান রেগে শক্ত হাতে মাইরার হাত চেপে বলে,
“স্টুপিট, বাজে না বকলে থাকতে পারো না? কি হয়েছে?”
মাইরা বিরক্তি নিয়ে রেগে বলে,
“মাথাব্য’থা করছে বুঝলেন? ও আপনি তো আবার ইংরেজ। বাংলা বলতে, বুঝতে কষ্ট হয়,, হেডএখ, হেডএখ…..”
ইরফান শক্ত হাতে মাইরার মুখ চেপে ধরে। সেভাবে ধরেই মাইরাকে তার ঘরে নিয়ে যায়। ড্রয়ার থেকে ফাস্টএইড বক্স বের করে। মাইরা দু’হাতে তার মুখ থেকে ইরফানের হাত সরাতে চায়। কিন্তুু বরাবরই ব্যর্থ।
ইরফান ফাস্টএইড বক্স থেকে টাফলিন নিয়ে মাইরার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। মাইরা উল্টো ঘুরে রেগে ইরফানের বুকে ধাক্কা দেয়।
শুধু তার মুখ চেপে ধরে। অস’হ্য লোক একটা।
ইরফান মাইরার গাল চেপে রেগে বলে,
“আমায় রাগিয়ো না। এটা খেয়ে এক্ষুনি বের হবে এখান থেকে।”
মাইরা বিরক্ত চোখে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে।
ইরফান মাইরার গাল ছেড়ে দেয়। মাইরা রেগে বলে,
“আমি থাকতে চেয়েছি এখানে? আপনি-ই তো আমাকে আপনার এই জেল’খানায় আটকে রেখেছেন। অস’হ্য লোক একটা।”
কথাটা বলে হনহন করে ঘর থেকে বেরতে নিলে ইরফান মাইরার হাত টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“অবাধ্যপনা করলে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিব, স্টুপিট।”
মাইরার এই লোকটাকে খু’ন করতে ইচ্ছে করছে। এগিয়ে এসে খপ করে ইরফানের হাত থেকে ওষুধ নিয়ে টেবিলের উপর থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে খেতে নেয়।
ইরফানের রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। আর নিতে পারছে না একে। মাইরাকে টান মেরে তার সামনে আনে। ফলস্বরূপ মাইরার হাত থেকে গ্লাস টা একদম ইরফানের পায়ের উপর ঠাস করে পড়ে। পানিগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে যায়।
তবে ইরফান নির্বিকার। সে মাইরার দিকে দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে। মাইরা মাথা নিচু করে ইরফানের পায়ের দিকে তাকায়। কাঁচের গ্লাস টা সোজা এই লোকের পায়ের উপর পড়লো, অথচ লোকটার কোনো হেলদোল নেই। আসলেই গণ্ডার এই লোক, অনুভূতি নেই। সবচেয়ে বড় কথা তার হাত ধরে মুখ ধরে এমন টানছে কেন এই লোক।
মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকালে দেখল, গিলে খাওয়া চোখে তার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা ইরফানের দৃষ্টিতে নিজের মাঝে বিদ্যমান বিরক্ত, রাগ সব হজম করায় ব্যস্ত হলো। আল্লাহই জানে সে করেছে টা কি।
ইরফান বা হাতে মাইরার কাঁধ চেপে ডান হাতে মাইরার গাল চপে ধরে। দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
“আর ইউ ম্যাড? খালি পেটে ওষুধ খাচ্ছিলে কেন?”
মাইরা অবাক হয়ে তাকায় ইরফানের দিকে। তার তো মনেই নেই। সেই দুপুরে খেয়েছিল, এখন ১২ টা বাজতে চলল। মাঝে ক্ষুধা লেগেছিল, কিন্তুু খায়নি। আর এখন এমন খালি পেটে ওষুধ খেতে যাচ্ছিল। বিড়বিড় করে, ‘নিজে পা’গ’ল তাই আমাকেও পা’গ’ল বলছে।’
চোখ নামিয়ে মিনমিন করে বলে,
“মনে ছিল না।”
ইরফান মাইরাকে ছেড়ে রেগে বলে,
“বকবক করেই তো পেট ভরিয়ে ফেলো। মনে থাকবে কি করে? স্টুপিট।”
মাইরা বিরক্ত চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। বকবক করে আবার কার পেট ভরে। যতসব আজগুবি কথা। উল্টো ঘুরে যেতে নিলে ইরফান আবারও মাইরার হাত শক্ত হাতে চেপে রেগে বলে,
“আবার কোথায় যাচ্ছ?”
মাইরা-ও রেগে ইরফানের দিকে তাকায়। তার হাত আর মুখ ব্য’থা বানিয়ে দিয়েছে, অস’হ্য। ইরফান রাগী চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা হতাশার শ্বাস ফেলে অসহায় কণ্ঠে বলে,
“দয়া করে ছাড়ুন, আমার প্রচণ্ড মাথা ব্য’থা করছে। কিছু খেয়ে ওষুধ খাবো।”
ইরফান থতমত খেয়ে মাইরার হাত ছেড়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“ওহ! ইয়াহ! সিওর, গো।”
মাইরা নিচে নেমে চারদিকে অন্ধকার দেখে। সবাই ঘুমিয়েছে বোধয়। খাবার যে কোথায় সে তো জানে না। কোথায় খুঁজবে। টেবিলে তো পানি ছাড়া কিছুই নেই। মিটিমিটি আলোর মাঝে মাইরা চেয়ার টেনে বসল। এরপর দু’গ্লাস পানি খেয়ে নিল। তৃতীয় গ্লাস পানি ঢালার সময় পাশ থেকে ইরফানের কণ্ঠ পায়,
“থা’প্প’ড় খাওয়ার জন্য এতো উতলা?”
মাইরা ধরফড় করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। কয়েক হাত দূরত্বে দাঁড়ানো ইরফানকে ঝাপসা দেখল। মাইরা ভ্রু কোঁচকালো। উপর থেকে নিচে আসলো কখন? ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“খাবার কই?”
মাইরার মিনমিন কণ্ঠ, “খুঁজে পাই নি।”
“ফ্রিজ চেক করেছিলে?”
মাইরা ভাবে, তাই তো। আসলে তার ঘুম পাচ্ছে। টেবিলে থাকলে ঝটপট খেয়ে নিত। আবার কে খুঁজতে যাবে। তাই পানি খেয়ে পেট ভরিয়ে ওষুধ খেতে চাইছিলো। মাইরার চুপ থাকায় ইরফান আরও রেগে যায়। ধমকে বলে,
“অ্যান্সার মি, স্টুপিট!”
মাইরা কেঁপে ওঠে। এই লোকটা তার পিছু ছাড়ছে না কেন। ‘অস’হ্য একটা।’ বিড়বিড় করতে করতে ফ্রিজ খুললে দেখতে পায়, একদম সামনেই একটা প্লেট। ইরফান ডাইনিং এর লাইট জ্বালিয়ে দিয়েছে। মাইরা প্লেট এর ঢাকনা সরিয়ে বুঝল হয়তো তার শ্বাশুড়ি মা তার জন্যই সজিয়ে রেখেছে প্লেটটা।
ধীরপায়ে এগিয়ে এসে চেয়ারে বসে খেতে শুরু করলো। আড়চোখে বা দিকে তাকালে ইরফানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খাওয়ার গতি কমালো। এভাবে তাকিয়ে থাকলে খাওয়া যায়? কিছুক্ষণ খাবার নেড়েচেড়ে ঘাড় বাঁকিয়ে থেমে থেমে বলে,
“আপনি যান।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এগিয়ে এসে মাইরার পাশের চেয়ারে বসে পড়ে। মাইরা থতমত খেয়ে যায়। ইরফান ফোন স্ক্রোল করতে করতে গম্ভীর গলায় বলে,
“ফিনিস ইট, ফাস্ট।”
মাইরা তার প্লেটের দিকে তাকায়। মুখটা অসহায়। ডানদিকে সরে এসে একদম চেয়ারের কোণায় বসে আড়চোখে ইরফানের দিকে একবার তাকায়। ইরফান দু’হাত মেলে টেবিলের উপর রাখায় তার হাত মাইরার হাতের সাথে লাগছে। মেয়েটা বাম হাত নামিয়ে তার কোলের উপর গুটিয়ে রাখলো। আরেকটু চেপে যেতে চাইলে ইরফান ফোনে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই গম্ভীর গলায় বলে,
“মেঝেতে বসে খেতে চাইছ?”
মাইরা চেয়ার থেকে আরেকটু সরতে গিয়ে পড়তে নিলে টেবিলের কোণা ধরে নিজেকে সামলে নেয়। ইরফান বিরক্ত চোখে মাইরার দিকে তাকায়। চোখমুখে তীব্র বিরক্ত সাথে রাগ। মাইরার কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আমতা আমতা করে মুখ ফসকে বলে,
“আপনি প্লিজ যান, আপনাকে ভূতে ধরেছে।”
ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“হোয়াট?”
মাইরা কেঁপে ওঠে। এরই মাঝে ইরফানের ফোনে কল আসলে ইরফান দৃষ্টি সরিয়ে ফোনের দিকে তাকায়। এরপর চেয়ার থেকে উঠে প্যাণ্টের পকেটে ডান হাত গুঁজে দাঁড়ায়। বা হাতে কল রিসিভ করে কানে ফোন ধরে সিরিয়াস হয়ে কথা বলতে থাকে।
মাইরা একটু স্বস্তি পায়। দ্রুত গপাগপ করে খেয়ে খাবার শেষ করে। তার ভয় লাগছে, ভাবছে ইরফানের উপর কোনো জ্বীন ভর করেনি তো? এর চেয়ে ঠাস ঠাস করে মেরে দেয়া ইরফান-ই ভালো। কম ভয় লাগতো। কিন্তুু এখন জ্বিনের কথা ভেবে মাইরার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
খাবার শেষে ওষুধ টা খেয়ে এক দৌড়ে তার ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় মাইরা। তার মনে হচ্ছে,, হয় ইরফানকে জ্বিন ধরেছে, নয়তো তার এতোবার মুখ ফসকে পা’গ’ল বলায় আল্লাহ তার কথা কবুল করে নিয়েছে। তাই ইরফান তার সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১২
ইরফান কথা বলার মাঝেই দেখল মাইরার দৌড়ানি। ফোন কেটে গম্ভীর চোখে মাইরার ঘরের বন্ধ দরজার পানে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। বিড়বিড় করল,
“স্টুপিট বাঁদর।”
এরপর ডাইনিং এর লাইট অফ করে দুই সিড়ি পর পর দ্রুতপায়ে উপরে উঠে যায়।