প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৮

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৮
Drm Shohag

মাইরা ছটফটিয়ে ওঠে। ইরফান দু’হাতে মাইরাকে নিজের দিকে আরেকটু টেনে নেয়। পিছনে মাইরার হাতের বাঁধন শক্ত করে। মাইরা সময় নিয়ে শান্ত হয়। নিঃশ্বাস নেয়ার আশায় আবারও ছটফটায়। ইরফানের চোখেমুখে বিরক্তির ভাঁজ। একটুর জন্য ছেড়ে ইরফান বিড়বিড়িয়ে বলে,
“স্টুপিট, ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
মাইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার আগেই ইরফান ডান হাতে মাইরার গাল চেপে আবারও আঁকড়ে ধরে।
পুরো তিন মিনিট পর মাইরার ঠোঁটজোড়া ছেড়ে দেয় ইরফান।
মাইরার চোখ বন্ধ। মেয়েটা শব্দ করে শ্বাস নেয়। ইরফান মাইরার মুখটা উঁচু করে ধরে রেখে পুরো মুখাবয়বে দৃষ্টি বুলায়। পিছনে রাখা মাইরার হাত ছেড়ে বা হাতে মাইরাকে নিজের সাথে চেপে, ডান হাতে মাইরার ভেজা ঠোঁটজোড়া মুছে দেয়। মাইরা কেঁপে ওঠে। বন্ধ চোখেই মাথা নিচু করে নেয়। ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হাসে। ক্ষীণ স্বরে বলে,

“চকলেট খেয়েছিলে?”
মাইরা মাথা নিচু করে ইরফানের বুকে কপাল ঠেকিয়ে রাখে, যেন ইরফান তাকে একদমই দেখতে না পায়। ইরফান ডান হাতে মাইরার হিজাবের পিনগুলো ধীরে ধীরে খুলতে থাকে। ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“First chocolate is my favourite.”
মাইরা ইরফানের কথার অর্থ বুঝতে পেরে ল’জ্জায় বন্ধ চোখজোড়া আরও খিঁচিয়ে নেয়। ইরফান মাইরাকে টেনে তার থেকে সরিয়ে দেয় হিজাব খুলবে বলে। মাইরা আবারও লেপ্টে দাঁড়ায় ইরফানের সাথে। ইরফান তার ফেস দেখলেই যেন সে শেষ হয়ে যাবে। কিছুতেই ইরফানকে তার মুখ দেখানো যাবে না। ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
“ইট’স ওকে। আমি তোমাকে ঘুম পাড়াচ্ছি।”
মাইরা ঢোক গিলে ইরফানের থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়। তবে মাথা তোলে না। ইরফান মাইরার গাল ধরে মাথা উঁচু করে, মাইরার ঠোঁটজোড়ায় আঙুলের আলতো স্পর্শ দেয়, সাথে গম্ভীর গলায় বলে,
“ইন ফিউচার, কাউকে জান প্রাণ বলে ডেকেছ তো, কথা বলার জন্য এটা আস্ত রাখব না। স্টুপিট।”
লাস্ট ওয়ার্ড টা ধমকে বলে।
মাইরা কেঁপে ওঠে। চোখ বুজেই তার ঠোঁটজোড়ায় অবস্থানরত ইরফানের হাত তার ডান হাতে সরিয়ে দিতে চায়। ইরফান হাত সরিয়ে নেয়। এরপর মাইরার হিজাব খুলতে নিলে মাইরা মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“দরজা খুলে দিন।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হোয়াই?”
“আমার ঘরে যাব।”
“ওই ঘর আর তোমার নেই। ওটা স্টোর রুম হয়ে গিয়েছে।”
সাথে সাথে মাইরা মাথা তুলে তাকায়। অবাক হয়ে বলে,
“কেন? তাহলে আমি কোথায় থাকবো?”
ইরফান ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“এখানেই থাকবে।”
ইরফানের দৃষ্টিতে মাইরা আবারও মাথা নিচু করে নেয়। এখানে থাকবে মানে? এই লোকের সাথে এক ঘরে? ভাবতেই কেমন গলা শুকিয়ে আসলো। ইরফান মাইরার হিজাব টান মেরে খুলে দেয়। মাইরা দ্রুত মাথা তুলে তাকায় ইরফানের দিকে। আমতা আমতা করে বলে,

“এটা খুললেন কেন?”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“স্টুপিট, সারারাত মাথা বেঁধে রাখার ইচ্ছে ছিল?”
মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। ইরফান হাতের হিজাব বেডের উপর ছুঁড়ে ফেলে। মাইরার মাথার পিছনে হাত দিয়ে শক্ত খোঁপা খুলে দেয়। ঝরঝর করে চুল খুলে পিঠ ছড়িয়ে যায়, কিছু চুল কাঁধ পেরিয়ে সামনে হেলে আসে। ইরফান তার দু’হাতের আঁজলায় মাইরার দু’গাল নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“আই ডোন্ট লাইক ইউ। কজ, ইউ আর আ লিটল অ্যান্ড স্টুপিট গার্ল।”
মাইরা অদ্ভুদচোখে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান মাইরার মুখাবয়বে দৃষ্টি বুলায়। অতঃপর মাইরার গাল ছেড়ে উল্টো ঘুরে সোফায় গিয়ে বসে। পায়ের উপর পা তুলে গম্ভীর গলায় বলে,
“ঘুমাও।”

মাইরা ইরফানের দিকে পিটপিট করে চেয়ে আছে। ইরফান তার ল্যাপটপ নিয়ে বসল। বহু কাজ বাকি। মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে। মাথা নিচু করে একবার তার পায়ের দিকে তাকালো। সেদিন ইনায়া শুদ্ধ ভাইয়াকে যেমন জুতো ছুঁড়ে মেরেছিল, মাইরার ইচ্ছে করল ইরফানের দিকে ওভাবে জুতো ছুঁড়ে মেরে ‘আই ডোন্ট লাইক ইউ’ বাক্য এই লোকের মাথা থেকে ডিলিট করে দিতে।
বিড়বিড় করল, “খ’বিশ লোক।”
ইরফান ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে মাইরার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“তোমার কি পেট ভরে নি? আমি আসবো, নাকি ঘুমাবে?”
কথাটা বলে ইরফান ল্যাপটপ হাতে নিয়েই দাঁড়িয়ে যায়।
মাইরা ঢোক গিলে দ্রুত বেডের অপর কোণায় গিয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়লো। ইরফান এগিয়ে গিয়ে মাইরার পাশে বেডে হেলান দিয়ে বসল। ঘাড় বাঁকিয়ে মাইরার দিকে চেয়ে রেগে বলে,
“মেঝেতে ঘুমাতে চাইছ?”

মাইরা কিছু বললো না। সেই কোণাতেই পিঠ ফিরিয়ে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকলো।
ইরফান বিরক্ত হয়ে বাম হাতে মাইরার হাত ধরে টেনে তাকে ঘেঁষে শুইয়ে দেয়। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। ইরফান বা হাত মাইরার পেটে রেখে ডান হাতে মাইরার গাল চেপে তার দিকে ফিরিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“জ্বালিয়ো না আমায়। এগেইন চকলেট খাওয়া স্টার্ট করলে সারারাতেও পেট ভরবে না আমার।”
মাইরা ঢোক গিলে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। ইরফানের হাত তার গাল থেকে সরিয়ে দিতে চায়, তবে পারেনা। চোখ নামিয়ে মিনমিনে গলায় বলে,
“আমি ঘুমাবো।”
ইরফানের গম্ভীর স্বর, “ওকে।”
মাইরা ভাবলো ইরফান তাকে ছেড়ে দিবে। কিন্তুু ইরফান শুধু মাইরার গাল ছাড়লো। পেট থেকে হাত সরালো না। মাইরা ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান তার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে। মাইরা আবারও মৃদুস্বরে বলে, “ছাড়ুন।”
ইরফান ছেড়ে দিল মাইরাকে। মাইরা উল্টো ঘুরে চুপ করে চোখ বুজল। আর নড়লো না একটুও। ইরফান ল্যাপটপ অন করে কাজে মন দেয়।

“লিটল কুইন, তোমাকে কে কল করেছিল?”
“কি হলো বলছো না কেন? থা’প্প’ড় খাবে, আমার মাথা পুরো বিগড়ে দিয়েছে।”
ইনায়া তার দু’হাতে ফাইজের হাত তার মুখ থেকে সরাতে চায়, উমউম করে। মানে তার মুখ চেপে বলছে কথা বলছে না কেন? এই লোকটাকে কি বলা উচিৎ? ফাইজ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ইনায়ার মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলে, “ওহ, স্যরি!”
ইনায়া হাঁপানো কণ্ঠে চেঁচিয়ে বলে,
“আপনার প্রবলেম কি? এতো রাতে আমার ঘরে এসেছেন কেন?”
ফাইজ রেগে বলে,
“একদম আমার উপর চেঁচাবে না। যার তার কথা বিলিভ করেছ কেন? আমার এক্স ছিল? আর তোমার পিছনে কে পড়েছে? আমাকে বলোনি কেন?”
ফাইজকে রাগতে দেখে ইনায়া চুপসে যায়। মিনমিন করে বলে,
“আমি বিলিভ করিনি।”
“তাহলে আমাকে ব্লক করলে কেন?”
ইনায়া কি বলবে বুঝতে পারছে না। ফাইজ ধমকে বলে,

“এই মেয়ে এই আমাকে তোমার রোবট মনে হয়? কানের নিচে থা’প্প’ড় দিয়ে কান ফাটিয়ে দিব। তামাশা কর আমার সাথে? ব্লক করলে কেন? হাত শিরশির করে? আর আমি ওদিকে ছটফট করে মরি।”
ইনায়া ভয়ে চুপসে যায়। এই লোক তো মারাত্মক রেগে আছে মনে হচ্ছে। এইজন্যই তার ভালো লাগে না। অ’স’হ্য একটা। একদম তার ভাইয়ের মতো। ফাইজ ইনায়ার গাল চেপে বলে,
“কোন বেয়া’দব তোমার পিছে পড়ে আছে? আমাকে বলো নি কেন? আগে তোমাকে থাপড়িয়ে সোজা করব। তারপর ওই ছেলেকে।”
ইনায়া ফাইজের হাত সরিয়ে দেয় তার গাল থেকে। আমতা আমতা করে বলে,
“কেউ পিছে পড়ে নেই। আমার কাজিন রাতুল ভাইয়া ফান করেছে।”
ফাইজ তব্দা খেয়ে চেয়ে থাকে কিছু সময়। ইনায়া ফাইজের দিকে চেয়ে আবারও বলে,
“আর মাইরা আপনার এক্স সেজে মজা করেছে।”
ফাইজ অদ্ভুদভাবে আওড়ায়, “হোয়াট?”

ইনায়া ঢোক গিলল। ফাইজ দু’হাত কোমড়ে রেখে হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,
“এতোগুলো ব্রিটিশের আমদানি কবে হলো আমার জীবনে?
বিরক্ত কণ্ঠে বলে,
শা’লা বউটাও ওদের সাথেই গিয়ে যোগ দিয়েছে।”
ইনায়ার দিকে এগিয়ে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“তোমার একটুও মায়া নেই? আমি যে ছটফট করি, তুমি মজা নাও? কালকে হতে দাও। তোমার মজা বোঝাবো আমি, ওয়েট। সবগুলো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করল আমাকে।”
ইনায়া মাথা নিচু করে নখ খুঁটছে। ফাইজ আফসোসের সুরে বলে,
“সবগুলো শুদ্ধর জমজ ভাইবোন। আর ইরফানের বউ তো শুদ্ধর কপি ভার্সন। ওটাকে কোথায় পেয়েছিল তোমার বাবা?”
ইনায়া রেগে বলে,

“আপনি মাইরাকে উল্টাপাল্টা বলছেন কেন? ভাইয়াকে কিন্তুু বলে দিব।”
ফাইজ চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ইনায়ার দিকে। কেমন নাকের পাটা ফুলিয়ে তার দিকে চেয়ে আছে। ফাইজ শান্ত চোখে চেয়ে থাকে ইনায়ার দিকে। ইনায়া চোখ নামিয়ে মিনমিন করে বলে,
“আপনি যান।”
ফাইজ মৃদুস্বরে বলে,
“যাবো না।”
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে বলে,
“মানে?”
ফাইজ ইনায়ার দিকে দু’পা এগিয়ে এসে মৃদু হেসে বলে,
“কালকে তো আসতেই হবে বিয়ে করার জন্য। তাই আর যাবো না কষ্ট করে। একেবারে তোমাকে বিয়ে করে সাথেই নিয়ে যাবো।
কথাটা বলে ইনায়ার হাত ধরে টেনে বলে,
আসো ঘুমাই।”
ইনায়া চোখ বড় বড় করে বলে,
“মানে? কি বলছেন? আমার হাত ছাড়ুন।”
ফাইজ পিছু ফিরে ইনায়ার দিকে এগিয়ে গেলে ইনায়া পিছিয়ে যায়। ফাইজ গম্ভীর গলায় বলে,
“এ জীবনে বহুত জ্বালালে লিটল কুইন। তোমাকে যে ঠিক কি করব, সেটা ভেবেই কুল পাই না আমি।”
ইনায়া ঢোক গিলে। ফাইজ ইনায়ার হাত ছেড়ে ইনায়ার বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে পড়ে। ইনায়া চেঁচিয়ে বলে,
“কি করছেন? আপনার বাড়ি যান।”
ফাইজ পাত্তা দিল না। মৃদুস্বরে বলে,
“ঘুমাবো, ডিস্টার্ব কর না।”

ইনায়া বোকা চোখে চেয়ে থাকে ফাইজের দিকে। এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আমরা একঘরে থাকতে পারবো না। আমাদের তো এখনো বিয়ে হয়নি।”
কথাটা শুনেই ফাইজ মাথা কাত করে ইনায়ার দিকে তাকায়। চোখের পলকে বেড থেকে নেমে ইনায়ার সামনে দাঁড়ায়। ইনায়া ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায় একটু। ফাইজ মৃদু হেসে বলে,
“তবে চলো লিটল কুইন, আজকেই বিয়ে করে নিই।”
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আপনি কি পা’গ’ল?”
ফাইজ ডান হাত প্যান্টের পকেটে রেখে ইনায়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“পা’গ’ল বানিয়ে বলছো পা’গ’ল কি-না! হাউ ফানি!
এরপর ইনায়ার হাত টেনে বলে,
“আসো তো ঘুমাই। কাল আবার বিয়ে।”
ইনায়া ফাইজকে ঠেলে সরায়৷ এই লোকটা আসলেই পা’গ’ল। রেগে বলে,
“আপনি যাবেন? নয়তো আমি সবাইকে ডাকবো বলে দিচ্ছি।”
ফাইজ ভাবলেশহীনভাবে বলে, “ওকে। ফাস্ট।”

ইনায়া থতমত খেয়ে তাকায়। ফাইজ হাসল। ইনায়াকে আর জ্বালালো না। সে ভালোভাবে গিয়ে শুয়ে পড়লো। ইনায়া কপাল চাপড়ালো। এমন হবে জানলে মাইরাকে জীবনেও এসব ফাজলামি করতে দিতো না।
ইনায়া একটা চেয়ারে বসে পড়ে। অসহায় মুখ করে রেখেছে। বারবার হাই তুলছে। ঘুম পেয়েছে তার। বিরক্ত লাগছে। এভাবে বসে থাকতে থাকতে চেয়ারে হেলান দিয়েই কখন যে ঘুমিয়েছে বুঝতেই পারেনি। ফাইজ নিজেও ঘণ্টা এক এর মতো ঘুমিয়েছে, এরপর ঘুম ভাঙলে দ্রুত শোয়া থেকে উঠে রুমের আশেপাশে চোখ বুলায়। ইনায়াকে চেয়ারে বসে ঘুমাতে দেখে অবাক হয়। তার নিজের মাথায় বারি দিতে ইচ্ছে করল। ইনায়া ঘুমের ঘরে চেয়ার থেকে ঠাস করে পড়তে নিলে ফাইজ দ্রুত ইনায়াকে ধরে ফেলে। এরপর তাকে কোলে করে বেডে শুইয়ে দেয়। ডান গালে আলতো করে হাত রেখে মৃদু হেসে বলে,

“মাই লিটল কুইন।”
এরপর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
ইরফান মনোযোগ সহকারে ল্যাপটপে আঙুল চালায়। মাইরা ঘুমিয়ে গিয়েছে। ইরফান মাঝে মাঝে মাইরার দিকে তাকায়। মেয়েটা মাথার বালিশ রেখে তার পা কোলবালিশ, আর বালিশ বানিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ইরফান মাইরাকে সরায়নি। মাইরা ঘুমের ঘোরে ইরফানের পুরো দু’পায়ের উপর উঠে পড়ে। ইরফান ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে মাইরার দিকে। অদ্ভুদ চোখে চেয়ে আছে মাইরার দিকে। বিড়বিড় করল, “স্টুপিট বাঁদর। সারাদিন বাঁদরামি করে ঘুমের মাঝেও স্টার্ট করে দিয়েছে।”
ইরফান এবারেও মাইরাকে সরালো না। মাইরা নড়েচড়ে উঠলে ঠাস করে মেঝেতে পড়তে নেয়, ইরফান দ্রুত ডান হাতে মাইরার কোমড় টেনে ধরে। রেগে বলে,
“স্টুপিট, কি প্রবলেম?”
মাইরার ঘুম ভাঙেনি। ইরফান তার ল্যাপটপ ঠাস করে রেখে দু’হাতে মাইরাকে চেপে, মাইরার দু’পা তার দু’পায়ের মাঝে রেখে শুয়ে পড়লো।
তখনই তার ফোনে কারো কল আসে। ইরফান বিরক্ত হয়। কল ধরল না। মাইরাকে জড়িয়ে গলায় মুখ গুঁজে লম্বা শ্বাস টানে। মাইরা ঘুমের মাঝেই হালকা কেঁপে ওঠে।
অনবরত কল বাজছে, ইরফান চরম বিরক্ত হয়। মাইরাকে ডিঙিয়ে হাত টেনে ফোন নিয়ে ফাইজের কল দেখে রিসিভ করে।

“বাইরে আয়।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হোয়াই?”
ফাইজ অসহায় কণ্ঠে বলে,
“আরে আয় রে ভাই। তারপর বলছি।”
ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়ে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“পারবো না।”
ফাইজও বিরক্ত হয়ে বলে,
“থাক তাহলে। গেট খোলাই থাক। আমি গেলাম।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হোয়াট? তুই কোথায়?”
“এসে দেখে যা।”

ইরফান বেড থেকে নেমে দাঁড়ালো। মাইরার পাশে দু’টো বালিশ রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ফাইজকে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইরফান অবাক হয়ে বলে,
“তোর না নেক্সট ডে বিয়ে?”
ফাইজ কোমড়ে বা হাত দিয়ে ডান হাতে কপাল চুলকে বলে,
“এক্সসাইটমেন্টে আজকেই চলে এসেছি।”
ইরফান রেগে বলে,
“ফাজলামো করছিস? তুই এখানে কেন?”
ফাইজ বিরক্ত হয়ে বলে,
“যে বিচ্ছু বউ আমদানি করে এনেছিস। সে তো আমার জীবন ত্যানাত্যানা করে দিচ্ছে। এসব খবর রাখিস না?”
ইরফান রেগে বলে,
“ওকে নিয়ে, নো কমেন্টস।”
ফাইজ কিছু একটা ভেবে হেসে বলল,

“তোর বউ তো আমায় জান প্রাণ ভাবে। তোর তো কপাল পুড়লো। বেচারির আমাকে ছাড়া ঘুম হয় না, খেতে পারে না।”
ইরফান ফাইজের কলার ধরে রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ওর এসব কথা তুই শুনলি কেন?”
ফাইজ অদ্ভুদ চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। লে হালুয়া, ওর বউ বলেছে, তার দোষ নেই, সে শুনলো কেন সেটাই তার দোষ হয়ে গেল! ফাইজ বিরক্ত হয়ে বলে,
“এই বিচ্ছু বউকে নিয়ে সংসার কিভাবে করছিস? এক শুদ্ধকে নিয়েই পারিনা, আরেকটা আমদানি করলি তুই। এর চেয়ে ওকে ডিভোর্স দিয়ে দে।”
লাস্ট কথাটা বলে আড়ালে একটু হাসলো।
ইরফান সাথে সাথে চিৎকার করে ওঠে, “ফাইজ?”

ফাইজ ইরফানকে সত্যি সত্যি রাগতে দেখে ইরফানের কাঁধে হাত রেখে বলে,
“আরে ইরফান সিরিয়াস হচ্ছিস কেন? ফান করলাম আমি।”
ইরফান ফাইজকে গায়ের জোরে ধাক্কা দিয়ে রেগে বলে,
“বের হো এখান থেকে।”
ফাইজ বিরক্ত হয়ে বলে,
“আরে আমি তোর বোনের বর হতে যাচ্ছি। একটু সম্মান তো দে।”
ইরফান ফাইজকে আবারও ধাক্কা দিয়ে ফাইজের কলার ধরে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“ফার্দার ওকে নিয়ে একটা ওয়ার্ড ফান করলে তোকে ছাড়বো না বলে দিলাম।”
ফাইজ বিরক্ত হয়ে বলে,
“বা’ল ফান করেছি, এতো সিরিয়াস হওয়ার কি আছে?”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলল,
“এতো রাতে এখানে কেন এসেছিস?”
ফাইজ অসহায় মুখ করে বলল,
“আজ রাতে কোনোভাবে আমার বিয়েটা দিয়ে দেয়া যায় না?”
ইরফান বিরক্ত হয়ে বলল,
“রাত-বিরেতে আমার বোনের ঘরে গিয়েছিলি কেন? থা’প্প’ড় খাবি?”
ফাইজ হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,

“তোর বউ তো একাই একশ। শুদ্ধকে টেক্কা দিয়ে দিয়েছে। ইনায়াকে দিয়ে আমায় ফোন করিয়ে বলেছে, ইনায়া জেনে গিয়েছে আমার এক্স আছে, এরপর তোর বউ নিজের হাতে ব্লক করেছে আমার বউয়ের নাম্বার থেকে আমার নাম্বার।
একটু থেমে বলে,
এখানেই থামলে তাও হতো। ওরে বাবা, তোর বউ তো থেমে যাবার পাত্রী নয়। সে তোর কোন কাজিন রাতুল ফাতুলকে দিয়ে ইনায়াকে দিয়ে পাখি পুখি সব ডাকিয়ে ফেনা তুলিয়ে ফেলেছে, আজকেই ইনায়াকে বিয়ে করবে এসব হুমকি দিয়েছে। ভাবতে পারছিস তোর বউ কি অত্যা’চার টাই না চালিয়েছে আমার উপর?”
ইরফান বিরক্ত চোখে চেয়ে আছে ফাইজের দিকে। ছোট বাচ্চারা দুষ্টুমি করলে অন্য বাচ্চা এসে তার মাকে যেমন বিচার দেয়, ইরফানের নিজেকে তেমনি মনে হলো। ওই স্টুপিট এর বাঁদরামির ভাষণ তার বন্ধুর কাছে শুনতে হচ্ছে। কণ্ঠে বিরক্তি ঢেলে বলে,

“এসব আমাকে বলছিস কেন?”
ফাইজ অবাক হয়ে বলে,
“ওমা, বউ তোর,, তোকে বলব না তো কাকে বলব?”
এরপর চরম হতাশার শ্বাস ফেলে যেতে যেতে বলল,
“তোর বিচ্ছু বউটাকে একটু সামলা ভাই। শুদ্ধর জ্বালায় বাঁচিনা! তোর বউটাও অ্যাড হচ্ছে। জীবনডাই তেজপাতা!”

সাহেলের এক্সি’ডেন্টের কথা শুনে ইরফানের বড় ফুপির সে কী কান্না। কিছু সময়ের জন্য বাড়িটা কেমন নিস্তব্ধতায় ছেঁয়ে যায়। কিন্তুু বিয়ের আয়োজন সব শেষ। হুট করে তো আর কিছু করা যাবে না। শুদ্ধ গত রাতে সাহেলের কাছেই ছিল। সে সবাইকে বলেছে সাহেলের চিকিৎসা চলছে। ভালো আছে সে। সুস্থ হতে সময় লাগবে এটাই। হাত পা সব ভাঙা। শুদ্ধ আফসোসের সুরে সাহেলকে বলেছিল, ইরফানের পিছনে কেন লাগতে গেল, আগেই নিষেধ করেছিল। রগ ত্যাড়া, এবার বোঝ ঠ্যালা।
সাহেলের মাকে শিহাব, রাতুল হসপিটালে আনলে সকাল সকাল শুদ্ধ উঠে ফাইজের বাড়ি চলে আসে।

ফারাহ খুব সুন্দর একটি স্টোনের পিংক কালারের লেহেঙ্গা পরেছে। উপরে ম্যাচিং করে হিজাব বেঁধেছে। ঘড়ির কাটায় দেখল দুপুর একটা বেজে পাঁচ মিনিট। একদম রেডি হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে। পার্লারে গিয়েছিল, আসতে আসতে লেট হয়েছে। তার মাকে একবার জড়িয়ে ধরে বলে,
“আম্মু গেলাম।”
ফারাহের আম্মু মেয়ের গালে হাত বুলিয়ে বলে,
“সাবধানে থাকবি। সবসময় বাবার সাথে থাকবি। বিয়ে বাড়িতে অনেক মানুষ থাকবে কিন্তুু।”
ফারাহ মাথা নেড়ে দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। শুদ্ধ বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ির বাইরে অপেক করছিল ফারাহের জন্য। মূলত ফাইজের সাথে সে আর ফারাহ যাবে। পিছনে আরও চারটে গাড়ি, যেখানে ফাইজদের সব আত্মীয়স্বজন উঠেছে। শুদ্ধ যতটা বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষা করছিল, ফারাহকে দেখে তার চেয়ে হাজারগুণ মুগ্ধতা তাকে ঘিরে ধরল। ফারাহ শুদ্ধর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

“শুদ্ধ ভাই আমার ফোন দাও।”
গতকাল রাতে শুদ্ধর কাছেই ফারাহের ফোন রয়ে গিয়েছে। সেটাই চাইছে ফারাহ। শুদ্ধর কোনো রেসপন্স না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে ডেকে ওঠে,
“শুদ্ধ ভাই?”
শুদ্ধ মৃদু হেসে ফারাহের দিকে একটু ঝুঁকে বলে,
“ফারাহ যাওয়ার পথে তুমি আর আমি বিয়ে করে নিব ওকে বেইবি?”
ফারাহ হঠাৎ-ই ডেকে ওঠে,
“আব্বু?”
শুদ্ধ থতমত খেয়ে কটমট দৃষ্টিতে তাকায় ফারাহের দিকে। ফারাহ মিটিমিটি হাসছে। পিছনের গাড়ি থেকে ফারাহের বাবা নেমে এসে ফারাহকে জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে আম্মু? কোনো সমস্যা হয়েছে?”
ফারাহ তার বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আমার দিকে ব’খাটে ছেলে নজর দিচ্ছে আব্বু।”
শুদ্ধ হা করে তাকায়। কত বড় ফা’জিল। তাকে ব’খাটে বলছে। শুদ্ধর বাবা রাস্তার আশেপাশে চেয়ে দেখল। এরপর ফারাহের হাত ধরে বলে,

“তুমি আমার পাশে বসবে, এসো।”
“শুদ্ধ ভাইয়ের কাছে আমার ফোন আছে। দিতে বলো।”
ফারাহের বাবা শুদ্ধর দিকে তাকালে শুদ্ধ জোরপূর্বক হেসে পকেট থেকে ফারাহের ফোন বের করে দেয়। ফারাহ ফোনটা নিয়ে ভদ্র মেয়ের মতো বাবার সাথে যায়।
শুদ্ধ ছ্যাঁকা খাওয়া পাবলিক এর ন্যায় মুখটা অসহায় করে ফারাহের দিকে চেয়ে রইল। কি অবস্থা! তার না হওয়া বউ তাকে জ্বালাচ্ছে। এসব মানা যাচ্ছে না। ফারাহ পিছু ফিরে একবার তাকায়। শুদ্ধর সাথে একবার চোখাচোখি হয়। ফারাহ মুখ বাঁকায়। শুদ্ধ ইচ্ছে করল কানে ধরে উঠবস করে বলতে,
“ফারাহ বেইবি তুমি আমার পাশে বসো, এই দেখো আমি জোকার সেজেছি তোমার জন্য।”
মনের কথা মনেই রইল। বলা আর হলো না।
ফাইজেরা পৌঁছে যায় ইনায়াদের বাড়ি। গাড়ি থেকে নামলে ইনায়ার বাবা ফাইজের বাবার সাথে হাত মেলায়। কোলাকুলি করে। ফাইজের বাবা তারেক নেওয়াজ এর পিঠে হাত দিয়ে বলে,

“অবশেষে দলিলে পাক্কা বেয়াই হতে চলে আসলাম বেয়াই সাব।”
ফাইজের বাবার কথায় সবাই হাসলো। তারেক নেওয়াজ হেসে বলে,
“আর আমি অপেক্ষা করছিলাম আপনার বেয়াই সাব হওয়ার।”
একে একে ফাইজের কাকা মামা সবার সাথে হাত মেলায় তারেক নেওয়াজ। এরপর ফারাহকে জিজ্ঞেস করে,
“কেমন আছো মামুনি?”
ফারাহ মৃদু হেসে বলে,
“আলহামদুলিল্লাহ আঙ্কেল ভালো।”
এরপর সবাই একে একে ভেতরে যায়। শুদ্ধর মুখ ফ্যাকাশে। সে ফারাহের শোকে শোকাহত। সারা রাস্তা ছটফট করতে করতে এসেছে। এখন শুধু গলা শুনতে পেল। দেখতে আর পেল না। খুব ভালোই বুঝল তাকে জ্বালানোর ফন্দি করেছে এই মেয়ে। ফাইজের পাশে যেতে যেতে অসহায় মুখ করে বলে,
“দোস্ত আমিও বিয়ে করব। তোর বোন আমাকে জ্বালাচ্ছে। আমার ভেতর বাহির সব জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে তোর বোনকে দেখতে না পারার শোকে।”
ফাইজ শুদ্ধকে পাত্তা দিল না। চুপচাপ হাঁটতে লাগলো।

ফারাহ ইনায়ার পাশে এসে বসেছে। ফারাহের আরও অনেক কাজিন এসেছে, তারাও ফারাহকে ঘিরে বসেছে। মেরুন রঙের ভারী লেহেঙ্গা পরিয়েছে। ইনায়ার মনে হচ্ছে এটার ওজন তার চেয়েও বেশি। এতো ভারী কাপড় ইহজীবনে পরা হয়নি। ফারাহ ইনায়াকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তোমাকে দেখে আজ আমার ভাইয়ার কি হবে সেটাই ভাবছি, বুঝলে ভাবি?”
ইনায়া ল’জ্জা পায়। তার কাজিনমহলের মাঝ থেকে তামান্না বলে ওঠে, “এর ক্রেডিট আমাদের গো ইনায়ার ননদিনী। তোমার ভাইয়াকে বইলো আমাদের জন্য গিফট রেডি রাখতে।”
তামান্নার কথায় সবাই হাসলো।
হঠাৎ-ই মাইরা কোথা থেকে প্রায় দৌড়ে এসে ইনায়ার রুমে ঢুকে পড়ে। তার রেডি হতে লেট হয়েছে। হাঁপানো কণ্ঠে বলে ওঠে,

“আমাকে ছাড়া কেউ মজা কর না আপুরা।”
সবাই দরজায় তাকালে মাইরাকে দেখে অবাক হয়। ইনায়া আর তার কাজিনমহল অবাক না হলেও ফারাহের কাজিনেরা ভীষণ অবাক হয় মাইরাকে দেখে। মেয়ে হয়েও তাদের চোখেমুখে মুগ্ধতা।
মাইরা কালো রঙের ফ্যাব্রিকে তৈরি, যার উপর সূক্ষ্ম স্টোন এমব্রয়ডারি কাজ করা। লেহেঙ্গাটি মূলত ইরফান নিজেই গিয়ে কিনে এনেছে। কিন্তুু মাইরা এটা জানে না। সে ভেবেছে তারেক নেওয়াজ সবার জন্য যখন কিনেছে, তার জন্যও এটা কিনেছে। মনে করার কারণও আছে অবশ্য। সে তো আলাদা করে পায়নি এই লেহেঙ্গা। তবে মাইরার সবার মাঝে তার নিজের লেহেঙ্গা টাই সবচেয়ে ইউনিক লেগেছে। সে তো তার শ্বশুর মশাই কে ধন্যবাদ দিতে দিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে। তারেক নেওয়াজ এর কোনো কথাই শোনেনি।
লেহেঙ্গার সাথেই ম্যাচিং করা একটা হিজাব পেয়েছে সেটাই খুব সুন্দর করে বেঁধেছে। ফর্সা গায়ে কালো রঙের লেহেঙ্গা কেমন জ্বলজ্বল করছে। ইনায়াকে সাজাতে বাড়িতেই কয়েকটা মেয়ে এসেছিল। তারা সবাইকে সাজিয়ে দিয়েছে। মাইরাও এই প্রথম এতো সাজলো।
এগিয়ে এসে অনেক অপরিচিত মুখ দেখে বলে,

“হাই তোমরা সবাই কারা?”
ফারাহ হেসে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল মাইরাকে। মাইরা সবার সাথে হেসে কথা বলে। মেয়েগুলো নিজেদের মাঝে বলাবলি করে মাইরাকে নিয়ে। মেয়ে হয়েও তারা মাইরাকে তাদের কাছে একটু পুতুল পুতুল লাগলো।
ফারাহের পাশে অপরিচিত একটি মুখ দেখে ফারাহ জিজ্ঞেস করে,
“মাইরা তোমার পাশে এটা কে?”
মাইরা হেসে বলে,
“ওর নাম সামিয়া। আমার আম্মাজানের হবু বউ মা বুঝলে? আমাদের গ্রামের-ই।”
ফারাহ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“তোমার আম্মাজান কে?”
মাইরা কিছু বলার আগেই ইনায়ার ফুপি ভেতরে এসে ফারাহকে জিজ্ঞেস করে,
“আম্মু কেমন আছো? তুমি আমাদের জামাইয়ের বোন না?”
ফারাহ সম্মতি দেয়। এরপর টুকটাক কথা বলতে থাকে সবাই।

মাইরা অসহায় মুখ করে ইনায়ার ঘর থেকে বের হয়ে আসে। তার খোঁপা খুলে গিয়েছে। হিজাবের নিজ দিয়েই অনেকক্ষণ ট্রাই করেছে খোঁপা করার, ব্যর্থ হয়ে বেরিয়ে আসলো। সব ঘরেই মানুষ। তার ঘরটা ইরফানের কথামতো সত্যিই স্টোররুমে পরিণত হয়েছে। বিয়ে বাড়ির যাবতীয় জিনিসপত্র সবকিছু ওই ঘরে রেখেছে। একমাত্র ইরফানের ঘরটাই ফাঁকা আছে। সকাল থেকে তো মাইরা ওই ঘরে যায়নি। ইরফান যদি থাকে তবে কি করবে? ধীর পায়ে ইরফানের ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। দরজা ঠেলে ভেতরে চোখ বুলিয়ে দেখল ইরফান নেই। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দেয়। এরপর দ্রুত আয়নার সামনে গিয়ে মাথার হিজাব ফটাফট খুলে ফেলে।
এরপর কোমড় সমান চুলগুলো শক্ত করে খোঁপা করতে গেলে লেহেঙ্গার উপরের পার্টের চেইন ফরফর করে খুলে যায়। মাইরার কেঁদে দেয়ার মতো অবস্থা হলো। শুধু ঝামেলা বাঁধছে। বিরক্ত লাগলো। খোঁপা করা রেখে চুলগুলো ডান পাশে এনে রাখে। আগে চেইন লাগিয়ে তারপর খোঁপা করবে, ভাবনা এই। সেই অনুযায়ী দু’হাত পিছনে নিয়ে চেইন লাগানোর চেষ্টা করে, কিন্তুু পারছে না। প্রায় অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে কান্না পায় তার। এখন কি করবে? ভাবনার মাঝেই কেউ খট করে দরজা খুলল। মাইরা দ্রুত পিছু ফিরে তাকায়। ইরফানকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে যায়। হায় আল্লাহ! এটাই বাকি ছিল।

ইরফান দরজা ভিড়িয়ে দেয়। মাইরা পিটপিট করে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। কালো পাঞ্জাবি পরেছে লোকটা। মাইরা এর আগে সাদা পাঞ্জাবি পরে দেখেছিল, আজ কালো। পাঞ্জাবি পরে কেমন অন্যরকম লাগে ইরফানকে। মাইরা আপাতত ইরফানের ভাবনা বাদ রেখে নিজের করুণ অবস্থার কথা ভেবে ঢোক গিলল।
ইরফান মাইরার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বুলায়। তার পছন্দ করা লেহেঙ্গায় মুড়িয়ে মেয়েটাকে দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায় তার।
ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হাসে। বিড়বিড় করে,
“মাই বার্ডফ্লাওয়ার।”
ধীরপায়ে মাইরার দিকে এগিয়ে আসলে মাইরা ঢোক গিলে মিনমিন করে বলে,
“একটা আপুকে ডেকে দিবেন প্লিজ!”
ইরফান বোধয় শুনলো না। মাইরার দিকে অপলক চেয়ে এগিয়ে আসে। মাইরা স্বভাবসুলভ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। ইরফান মাইরার সামনে এসে দাঁড়িয়ে মাইরার পানে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় চেয়ে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করে,
“কোথায় ছিলে এতোক্ষণ?”
মাইরা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলে,
“আপুদের সাথে।”

ইরফান সামনে আয়নার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখে। মাইরার পিছনের চেইন খোলা, যেখানে পিঠের বাদামি তিল কেমন জ্বলজ্বল করছে। আয়নায় সৃষ্ট প্রতিবিম্বের দিকে কেমন অদ্ভুদ নজরে চেয়ে ইরফান শুকনো ঢোক গিলল।
মাইরা মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বুঝলো না, লোকটা আসলে কোনদিকে চেয়ে আছে। মনে হলো তার পিছন দিকে চেয়ে আছে। ভাবনার রেখে বলে,
“একটা আপুকে ডেকে দিবেন?”
ইরফান দৃষ্টি ঘুরিয়ে মাইরার মুখপানে তাকায়। আরেকটু মাইরার দিকে চেপে বা হাত পিছনে নিয়ে গিয়ে খোলা চেইনের ভাঁজে হাত গলিয়ে দিলে মাইরা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। কাঁপা গলায় বলে,
“ক কি করছেন?”

ইরফান মাইরার পিঠের তিলটার উপর বুড়ো আঙুলের সাহায্যে আলতো হাতে স্লাইড করে। মাইরার পা থেকে মাথা পর্যন্ত শিরশির করে। ইরফান মাইরার মুখাবয়বে দৃষ্টি বুলায়, ডাগর ডাগর চোখদুটো, ঠোঁটে ডার্ক রেড কালার লিপস্টিক। ইরফানের নিজেকে কেমন অস্বাভাবিক লাগলো।
তার ডান হাত মাইরার গালে ডুবিয়ে দেয়, হাতের বুড়ো আঙুল মাইরার ঠোঁটজোড়ার উপর রাখে। মাইরা চোখ নামিয়ে নিয়ে বারবার ঢোক গিলছে।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৭

ইরফান জিভ দিয়ে তার কালচে পোড়া শুষ্ক ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে মোহনীয় গলায় বলে,
“এতো সেজেছ কেন স্টুপিট?”
ইরফানের ভয়েস টোনে মাইরার শরীর যেন আরও অসাড় হয়ে আসলো।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৯