প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫৬
Drm Shohag
ইরফান মাইরাকে কোলে করে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিল। মাইরার দিকে কিছুটা ঝুঁকে মৃদুস্বরে বলে,____”কোথায় ব্য’থা পেয়েছ?”
মাইরার চোখ ভেজা। অন্ধকারে তেমন দেখতে পায় না। ফোনের ফ্লাশ উপুড় করে রাখায় খুবই ঝাপসা দেখল দু’জন দু’জনকে। মাইরা ইরফানের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নাক টেনে বলে,_____”আপনি কোথায় ছিলেন?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর গলায় বলে,____”অফিসে কাজ ছিল। কোথায় ব্য’থা পেয়েছ?”
মাইরা চোখ বুজে বলে,____”পাইনি।”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,____”বলবে না-কি থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার?”
মাইরার রাগ হয়। এই লোক আবার তাকে ধমকাচ্ছে। চোখ মেলে রেগে বলে,____”আপনি ভালোভাবে কথা বলতে পারেন না? তাছাড়া আমি জানি ভালো মানুষেরা কখনো রাত বিরাতে বাইরে থাকে না।”
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। কৌতুহলী গলায় বলে,____”তাহলে কোন মানুষেরা রাতে বাইরে থাকে?”
মাইরা উল্টো পাশ ফিরে চোখ বুজে বলে,____বখাটে, লুইচ্চা, দুর্নীতিবাজ, ভন্ড, অ….”
ইরফান ঝট করে মাইরাকে তার দিকে ফিরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,____”স্টুপিট গার্ল! বাই এনি চান্স, এসব তুমি আমাকে মিন করে বলছ?”
মাইরা ভাবলেশহীন ভাবে বলে,____”আপনি অনেক বুদ্ধিমান।”
ইরফান কিছু বলতে চায়, তখনই ঘরের সবগুলো লাইট একসঙ্গে জ্বলে ওঠে। হঠাৎ-ই অতিরিক্ত আলোর তোড়ে মাইরা চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। ইরফানের সর্বপ্রথম দৃষ্টি আটকায় মাইরার নোস পিন-টায়। ডান হাত বাড়িয়ে বুড়ো আঙুলের সাহায্যে মাইরার নোস পিন এর উপর আলতো করে আঙুল ঘুরিয়ে মৃদুস্বরে বলে,____”স্টুপিট, এসব ফা’ল’তু কথা কোথা থেকে শিখেছ?”
মাইরা ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। ইরফান আবারও বলে,_____”ইউ নো? বখাটে ছেলেরা কি করে?”
কথাটা বলে ইরফান মাইরার চোখের দিকে তাকায়। মাইরা ইরফানের দিকেই চেয়ে। মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। ইরফান দেখল তা। হঠাৎ-ই মুখ নামিয়ে মাইরার গলায় মুখ গুঁজে দীর্ঘ করে শ্বাস টানে। মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফান ঠোঁট বাঁকায়। গলার ভাঁজে দু’টো গাঢ় চুমু এঁকে মাথা তুলে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে ঢোক গিলে। ইরফান ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“ডু ইউ হ্যাভ অ্যানি আইডিয়া? আজ আমি কত কাজ করেছি? হেডএক হচ্ছে। আজ সারারাত তুমি আমার মাথার চুল টেনে দিবে, অ্যান্ডারস্ট্যান্ড?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কথাটা বলে ইরফান বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। মাইরা পিটপিট চোখে ইরফান কে দেখে। ইরফান হাতঘড়ি খুলে রাখলো টেবিলে। বডিতে জড়ানো ব্লেজার, শার্ট খুলে রাখলো। মাইরা শোয়া থেকে উঠে বসে। ইরফানের দিকে নিরব চোখে চেয়ে থাকে।
ইরফানের ফোনে কল আসলে কানে ফোন নিয়ে ইরফান কথা বলতে থাকে। কথা বলার মাঝে মাইরার দিকে চোখ পড়লে দেখল মাইরা তার দিকে চেয়ে আছে। ইরফান কথা বলতে বলতে এগিয়ে এসে মাইরার সামনে বসে। বাম পা ভাঁজ করে ডান পা মেঝেতে রেখে বসেছে। মাইরা চোখ নামিয়ে নেয় ইরফানকে কাছে দেখে। ইরফান ভ্রু কুঁচকে মাইরার গালে হাত দিয়ে বলে,_____”হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
মাইরা চোখ তুলে তাকায়। মিনমিন করে বলে,____”আপনি সত্যি অফিসে ছিলেন?”
ইরফান কল কেটে বেডের উপর ফোন রেখে দেয়। অতঃপর বিস্ময় কণ্ঠে বলে,____”স্টুপিট গার্ল, এসব অদ্ভুদ কোয়শ্চন করছ কেন? অফিস ছাড়া আর কোথায় থাকবো?”
মাইরা আবারও চোখ নামিয়ে নেয়। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার দিকে কিছু সময় চেয়ে থাকে। এরপর দু’হাতে মাইরাকে টেনে একটু তার দিকে নিয়ে আসে। মাইরার মাথা নিচু। ইরফান মাইরার মুখ উঁচু করে মাইরার ঠোঁটে দু’টো শুকনো চুমু খায়। ঠোঁট বাঁকায় সামান্য। এরপর মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,____”নাইট ক্লাবেও গিয়েছিলাম, তুমি যেতে চাও?”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফান সোজা হয়ে বসলে মাইরা চোখমুখ কুঁচকে বলে,____”ছিঃ! ওখানে তো ছোট ছোট কাপড় পরা বে’হা’য়া মেয়েরা থাকে।”
ইরফান মাইরার এক্সপ্রেশন দেখল তীক্ষ্ণ চোখে। এরপর গম্ভীর গলায় বলে,___”যেতে চাও তুমি?”
মাইরা রেগে বলে,___”আপনি একটা অ’স’ভ্য লোক।”
বলেই ঠাস করে শুয়ে পড়ে। ইরফান কিছু বললো না। সূক্ষ্ম হেসে চুপচাপ ওয়াশরুমে চলে গেল। ইরফান ওয়াশরুমে গেলে মাইরা মুখ বাঁকিয়ে বিড়বিড় করে,___”মিথ্যুক খ’বি’শ লোক।”
এরপর বেড থেকে নেমে রান্নাঘরের দিকে যায়। প্রায় মিনিট সাত পর মাইরা হাতে এক মগ ব্ল্যাক কফি নিয়ে ঘরে এসে দেখল ইরফান এখনো বের হয়নি ওয়াশরুম থেকে। মাইরা হাতের কফি মগ সেন্টার টেবিলে রেখে সোফায় বসল। বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকলেও ইরফানকে বেরতে না দেখে বিরক্ত হয় মাইরা। সোফায় দু’পা তুলে বসে, সামান্য হেলান দিয়ে মাথাটা ঠেকিয়ে রাখে। চোখে ঘুমের রেশ থাকায় এভাবেই কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমিয়ে যায় মাইরা।
বেশ কিছুক্ষণ পর ইরফান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মাইরাকে এভাবে ঘুমাতে দেখে বোধয় বিরক্ত হলো। একটু আগেই তো সোফা থেকে পড়ে গিয়ে আবার সোফায় গিয়ে ঘুমিয়েছে। ইচ্ছে করল আগে দু’টো থাপ্পড় দিয়ে সোফায় ঘুমানোর সাধ মেটাতে। গটগট পায়ে এগিয়ে এসে মাইরার সামনে দাঁড়ালো।
টেবিলের উপর কফি মগ দেখে হাত বাড়িয়ে কফি মগ টি তুলে নিল। কুসুম গরম আছে এখনো। ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে এক চুমুকে সবটুকু কফি খেয়ে রেখে দিল মগ। এই কাজ হয়তো মাইরার উপর রাগ থেকেই করলো। এরপর মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। শাওয়ার নেয়ায় ইরফানের বডি ঠাণ্ডা, ফলস্বরূপ মাইরা ঘুমের মাঝেই একটু কেঁপে উঠল। ইরফান তাকালো মাইরার দিকে। বেডের উপর মাইরাকে শুইয়ে দিয়ে মাইরার গলায় হাতের উল্টো পিঠে চেক করলে দেখল মাইরার শরীর ঠাণ্ডা। ইরফানের কপালে বিরক্তির ভাঁজ। এর বডিতে কি আসলেই ব্লা’ড নেই? এর জন্য তাকে কতবার যে এসি অফ অন করতে হয়! সবচেয়ে বড় কথা সে ফ্যানের বাতাসে ঘেমে যায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিমোট দ্বারা এসি অফ করে দিল।
ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়ে বেড থেকে উঠতে গিয়েও থেমে গেল। মাইরার চোখমুখে ব্য’থার ছাপ। সাথে ডান হাতটা মাথার চুলের ভাঁজে। ইরফান মাইরার দিকে আরেকটু ঝুঁকে চিন্তিত কণ্ঠে বলে,____”হোয়াট হ্যাপেন্ড লিটল গার্ল?”
মাইরা মাথার চুল টানে। ডান কাত হয়ে ইরফানের দিকে সেটে যায়। ইরফান মাইরার গালে হাত দিয়ে বিচলিত কণ্ঠে বলে,____”হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
মাইরা আদো আদো চোখ মেলে তাকায়। চোখেমুখে ঘুম উপচে পড়ছে যেন, চোখদুটো লাল। ইরফান মাইরার চোখে চোখ নিবদ্ধ করে রাখে। মাইরা চোখ বন্ধ করে আবার মেলে, বারবার এমন করে, এভাবেই অস্পষ্ট স্বরে বলে,___”আপনি আমাকে ভুলে যাবেন?”
কথাটা বলে মাইরা চোখ বুজে নেয়। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে। ইরফান অদ্ভুদ চোখে চেয়ে দেখে মাইরাকে। ডান হাতে মাইরাকে টেনে তার সাথে জড়িয়ে নেয়। মাইরার বাম গালে তার বাম গাল রেখে মৃদুস্বরে বলে,___”I will never forget you.”
মাইরার নড়াচড়া না পেয়ে ইরফান বুঝল মাইরা ঘুমিয়ে আছে। কিছু সময় পেরোতেই মাইরা আবারও নড়েচড়ে কেমন ফুঁপিয়ে ওঠে। ইরফান দ্রুত মাথা তুলে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা বা হাতে তার মাথার চুল টানে। ইরফান বোধয় কিছু বুঝলো। মৃদুস্বরে বলে,___”তোমার কি হেডএক হচ্ছে?”
মাইরা বা হাত তার মাথা থেকে সরিয়ে ইরফানের গলায় জড়িয়ে ধরার মতো করে রাখে। ইরফান মাইরার বালিশে মাথা রেখে মাইরাকে তার দিকে টেনে নিতে চায়, তার আগেই মাইরা নিজেই এগিয়ে এসে ইরফানের গলায় মুখ ঠেকিয়ে ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে,____”আমার মাথা খুলে যাচ্ছে।”
ইরফান চোখ বুজে রাখে। বা হাত মাইরার পেট বরাবর নিচ দিয়ে মাইরার কোমড়ে রেখে মাইরাকে টেনে নেয়, এরপর ডান হাতের মাইরার চুলের ভাঁজে আঙুল চালিয়ে মৃদুস্বরে বলে,____”ডোন্ট ওয়ারি, ঠিক হয়ে যাবে।”
মাইরার রেসপন্স পায় না। ভারী নিঃশ্বাস পায়। ঘুমিয়ে গিয়েছে। নাহ, ঘুম থেকে জেগে উঠলে তো ঘুমাবে! যা করে, যা বলে সব ঘুমের ঘোরে। কথাটা ভেবে ইরফান একটু ঠোঁট বাঁকালো। বিড়বিড় করে,___”স্টুপিট গার্ল।”
ডান হাতের আঙুলের সাহায্যে মাইরার চুল টেনে দিতে থাকে আলতো হাতে।
শুদ্ধ ফারাহদের বাসার সামনে গাড়ি দাঁড় করায়। তখন ঘড়ির কাটা ১২:৪০ এর কাছাকাছি। শুদ্ধ পকেট থেকে ফোন বের করে ফাইজের নাম্বারে কল করে ফোন কানে ধরে। সাথে ফারাহ’র দিকে তাকালে দেখল ফারাহ তার দিকেই চেয়ে আছে, যেন চোখেমুখে কৌতুহল। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কিছু একটা ভেবে বলে,____”তোমাকে আমার মা দেখতে চায়নি তো ফারাহ পাখি। আমার মা সামিয়াকে নিয়ে ঘুমায়, বুঝলে? তাই তোমাকে আমার বাড়ি নিয়ে যাবো না।”
ফারাহ’র মুখ কালো হয়ে যায়। শুদ্ধ আবারও হেসে বলে,____”তোমার ভাই কল ধরে না কেন? ওদিকে সামিয়া আমার খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে।”
মুহূর্তেই ফারাহ’র চোখজোড়া ঝাপসা হয়। তবে শুদ্ধর চোখ থেকে তার চোখ সরালো না। শুদ্ধ দেখল ফারাহ’র ভেজা চোখ। ফাইজ কল রিসিভ করল না। কান থেকে ফোন নামিয়ে ড্যাশবোর্ডের উপর রেখে দ্রুত গাড়ির ভেতরের লাইট অফ করে ফারাহ’র দিকে ঝুঁকে দু’হাতে ফারাহ’র গাল আগলে নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,____”এ্যাই ফারাহ পাখি ফান করেছি গো। কান্না কর না। এতো অসহায় মুখ করে কাঁদো। ইশ! আর ভালো লাগছে না আমার পাখির কান্না।”
ফারাহ নাক টেনে বলে,____”তুমি সবসময় আমাকে কাঁদাও।”
শুদ্ধ ফারাহ’র কপালে কপাল ঠেকিয়ে হেসে বলে,___”ফারাহ পাখি কার বলো তো! শুদ্ধ ইয়াশার এর একটামাত্র বউ পাখি। তাহলে আমি কাঁদাবো না তো আর কে কাঁদাবে? হু?”
ফারাহ মাথা নিচু করে বলে,____”ওই সামিয়া মেয়েটা তোমার বাড়িতে আছে। তুমি যাবে না ওখানে।”
শুদ্ধ ফারাহ’র গাল ছেড়ে ভাবুক ভঙ্গিতে বলে,___”তাহলে কোথায় থাকবো? আগে বললেই তো তোমার ভিলেন ভাইকে কল করতাম না। আমি আর তুমি নাহয় এই গাড়িতেই ছোটখাটো বা’স’র রাত পাস করে ফেলতাম।”
ফারাহ ল’জ্জা পায়। নত মাথা আরেকটু নত করে। মিনমিন করে বলে,____”তুৃমি আজকে আমাদের বাড়ি থাকো।”
শুদ্ধ মৃদু হেসে বলে,____”তোমার সাথে থাকতে দিবে?”
ফারাহ চুপ থাকে। শুদ্ধ ফারাহ’র গালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে সোজা হয়ে বসে। ড্যাশবোর্ডের উপর থেকে তার ফোনটা নিয়ে আবারও ফাইজকে কল করল। ফারাহ আড়চোখে শুদ্ধর দিকে চেয়ে বলে,____”তুমি ভাইয়ার সাথে থাকবে। আমি আর ভাবি একসাথে থাকবো।”
শুদ্ধ ফোন পকেটে রাখে। ফাইজ কল কেটে দিয়েছে। তার গাড়ি দেখেছে হয়তো। শুদ্ধ ফারাহ’র দিকে পুরোপুরি ফিরে বসে বলে,____”মা আর সামিয়া একা আছে।”
ফারাহ বুঝলো ব্যাপারটা। এবার মাথা তুলে বলে,____”তাহলে খেয়ে যাও এখানে। তুমি তো খাওনি।”
শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলে,____”বউ তো দেখি বহুত খোঁজ নেয়!”
ফারাহ মাথা নিচু করে উত্তর করে,____”বর যদি অন্য মেয়ের হাতের রান্না খেতে চায়, তখন বউদের খোঁজ নিতে হয়।”
শুদ্ধ হেসে বলে,____”কিন্তুু সামিয়ার হাতের রান্না বেশি টেস্টি। এতো টেস্টি খাবার রেখে অন্য রান্না মুখে তুলতে ইচ্ছে করে না।”
ফারাহ’র চোখ আবারও ভিজল। এতোদিন মেয়েটা শুদ্ধর বাড়ি আছে, শুদ্ধ অবশ্যই তার হাতের রান্না খেয়েছে। আর এখন তো প্রশংসাও করছে। শুদ্ধ মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে ফারাহ’র দু’হাত টেনে নেয়। ফারাহ তাকালো না শুদ্ধর দিকে। মাথা নিচু করে রাখে। শুদ্ধ আবেগমাখা কণ্ঠে বলে,_____”ফারাহ বিনতে মাহবুব,, শুদ্ধ ইয়াশার নামের এক আ’বা’ল কে ভালোবেসে, পূর্ণতা পেয়ে ফারাহ ইয়াশার হয়েছে। তবুও আমার ফারাহ পাখি কেন কাঁদে? অন্যের হাতের রান্নার প্রশংসা তো আমার জিহ্বা করে। আর আমার আগুন সুন্দরী ফারাহ পাখির সবকিছুর প্রশংসা আমার হৃদয় করে। তুমি শুনতে পাও না পাখি?”
ফারাহ’র ভেতর টা কেমন কাঁপলো তীব্র অনুভূতিতে। মাথা তুলে শুদ্ধর দিকে তাকালে দেখল শুদ্ধ হেসে তার দিকে চেয়ে আছে। ফারাহ মিনমিন করে বলে,___”শুনতে পাই। কিন্তুু তুমি মোটেও আ’বা’ল নও।”
“তাহলে আমি কেমন?”
ফারাহ মাথা নিচু করে ছোট করে বলে,___”রূপবান।”
শুদ্ধ হেসে ফেলে। হাত বাড়িয়ে ফারাহ’র চোখে লেগে থাকা পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,____”ফাইজ দাঁড়িয়ে আছে, যাও।”
“তুমি খেয়ে যাবে না?”
রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিব। তুমি তোমার হাতকে আপাতত রেস্ট দাও। আমি আবদার করা শুরু করলে তোমার হাত দু’টো রেহাই পাবে না।”
ফারাহ আর কিছু বলল না। চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে যায়। শুদ্ধ গাড়ির জানালা দিয়ে ফাইজের দিকে তাকালো। গলা উঁচিয়ে বলে,___”ইশ! ইনায়ার লাভার টা আমাকে কল দিয়ে দিয়ে জ্বালিয়ে মারছে।”
ফাইজ কটমট দৃষ্টিতে শুদ্ধর দিকে তাকালো। শুদ্ধ পাত্তা দিল না। গাড়ি স্টার্ট দিল। ফারাহ’র উদ্দেশ্যে বলে,____”ফারাহ পাখি বহুত ভালোবাসি তোমায়।”
শুদ্ধ এভাবে বলায় ফারাহ ল’জ্জা পায় ভাইয়ের সামনে। ফাইজ আওয়াজ করে বলে,___”নি’র্ল’জ্জ বাঁদর।”
শুদ্ধ গাড়ি থেকে বেরিয়ে এক পা গাড়ির বাইরে রাখে, বা হাত গাড়ির উপর রেখে গলা উঁচিয়ে বলে,____”আহারে ল’জ্জা’শীল সোনা! ল’জ্জার ঠেলায় এখনো ভার্জিন। আমার বোনটার কপাল কি পুড়িয়ে দিলাম না-কি!”
ফাইজ বিব্রতবোধ করে। একে কথার কথায় বলাই ভুল হয়েছে। কটমট দৃষ্টিতে তাকায় শুদ্ধর দিকে। ডান পায়ের জুতো খুলে শুদ্ধর দিকে ছুঁড়ে মারলে শুদ্ধ দ্রুত গাড়ির ভেতর বসে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়।
শুদ্ধ বাসায় লক করলে তার মা এসে দরজা খুলে দেয়। চিন্তিত কণ্ঠে বলে,____”ফারাহ কেমন আছে?”
শুদ্ধ জুতো খুলে রাখলো। দরজা আটকে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলে,_____”আমি বেশি ভেবেছিলাম মা, ও ঠিক আছে। টেনশন কর না।”
তৃণা বেগম আর কিছু বললেন না। চুপচাপ ঘরের দিকে নিলে শুদ্ধ পিছন থেকে তার মাকে জড়িয়ে ধরে। মৃদুস্বরে বলে,____”আমার উপর রাগ করে আছো মা?”
তৃণা বেগম মৃদু হাসলেন। ডান হাত বাড়িয়ে পিছন থেকেই শুদ্ধর গালে রেখে বলে,____”সন্তান রা ক্ষমা না চাইলেও মায়েরা ক্ষমা করে দেয়। সেখানে আমার ছেলে তো আমার কাছে কত করে ক্ষমা চেয়েছে। আমি কিভাবে রাগ করে থাকবো?”
শুদ্ধ মৃদু হাসলো মায়ের কথায়। তৃণা বেগম উল্টো ঘুরে শুদ্ধ কে নিয়ে সোফায় বসলেন। শুদ্ধ প্রশ্নাত্মক চোখে চাইলে তৃণা বেগম চিন্তিত কণ্ঠে বলে,____”ফাইজ, ওর বাবা, মা মানবে তোকে? জানিস না ওরা কত উঁচু পরিবারের! তুই তোর সেই ফেলে রাখা ব্যবসায় একটু হাত লাগা ভালোভাবে।”
শুদ্ধ তার মায়ের কথা বুঝলো। তার মায়ের চিন্তাভাবনা পছন্দ হলো না। সে তার মায়ের পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,____”ব্যবসা ফেলে রাখিনি তো। তোমার ইচ্ছে আমার গাড়ি থাকবে, আমি ব্যবসায় হাত লাগিয়ে তোমার এই ইচ্ছে পূরণ করেছি। তোমার আরও হাজারখানেক ইচ্ছে আমাকে জানিয়ো, আমি পূরণ করে দিব মা। কিন্তু আমার স্ট্যাটাস দেখে কেউ আমাকে ভালোবাসুক, কেউ আমার হাতে তার মেয়ে তুলে দিক আমি এসব চাই না মা।”
তৃণা বেগম এগিয়ে এসে বলেন,______”তুই ইরফানকে দেখেও তো শিখতে পারিস। ও ওর বাবার ব্যবসা পুরোটাই দেখে। তুই এতো অলস কেন?”
শুদ্ধ তার মায়ের হাত ধরে ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,____”শোনো মা, ব্যবসা করলে কোটি টাকার মালিক হওয়া যায়। কিন্তু আমি এটা চাই না। যা আছে অনেক। বাকিসময় তোমাদের সবাইকে হাসাই, এতেই আমার অনেক ভালো লাগে। আর ফারাহ খুব লক্ষী মেয়ে বুঝেছ? ও যত বড় ফ্যামিলি থেকেই আসুক না কেন! আমার যা আছে তা দিয়েই মানিয়ে নিবে।”
“তোর কি উচিৎ নয়? ওর ইচ্ছে গুলো পূরণ করা? ইচ্ছে যদি উঁচু লেভেলের হয়, তখন তো টাকা লাগবেই। আমি তো চুরি করতে বলছি না। শুধু সামান্য পরিশ্রমী হতে বলছি।”
শুদ্ধ ভাবলো তার মায়ের কথা। একটু পর বলে,___”তুমি ভুল বলোনি। কিন্তু ফারাহ আগে আসুক আমাদের কাছে, তখন যদি ও ভালোবাসার খাতিরে তোমার মতো ইচ্ছে পোষণ করে, তখন নাহয় পরিশ্রমী হওয়া যাবে। আপাতত এভাবেই থাকি।”
তৃণা বেগম হতাশ ভঙ্গিতে বলে,___”তুই কি ব্যবসায় হাত লাগাবি-ই না?”
শুদ্ধ অলস ভঙ্গিতে বলে,____”আমার হাত তো লাগানোই আছে। কিন্তু হাত নড়াচড়া করাতে ভালো লাগে না। আপাতত একটু রেস্ট নিই মা। আমার কাঁধে কত বড় দায়িত্ব, সবাইকে জ্বালানোর দায়িত্ব কি তুমি কম মনে করেছ? আর ইরফানের এসব কোনো দায়িত্ব আছে? ও তো আরামসে মুখ টা পেঁচার মতো করে রাখে, আর ব্যবসায় টাইম দেয়।”
তৃণা বেগম হতাশ হলেন। এই ছেলেটা জীবনে শুধরাবার নয়। তার একদিক থেকে মন খারাপও হলো।, সামিয়া মেয়েটাকে সন্ধ্যার পর পরই তার এক চাচা এসে নিয়ে গিয়েছে। সামিয়া নিজেই কল করেছিল। এই শহরেই বাড়ি। সেখানেই থাকবে। তিনি শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামিয়াকে জড়িয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন। তার ভুলের জন্য মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে। তৃণা বেগম মন থেকে দোয়া করেন, সামিয়া যেন খুব ভালো থাকে।
সকাল সকাল মাইরা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নেয়। এরপর একটু হাঁটাহাঁটি করে সোফায় বসে বই পড়ছিল। ইরফান ঘরে নেই। মাইরা আজ বাংলা বইয়ের প্রায় দু’টো গদ্য, একটি পদ্য পড়েছে। এরপর বইটি নিয়ে উঠে দাঁড়ায় মাইরা। টেবিলের তাকে গুছানো বইগুলোর মাঝ থেকে ফিজিক্স বই বের করে চোখ বুলায় বইটিতে। মাইরার মাথা ঘোরে। কিছুই তো বুঝতে পারে না। মাইরার একদম পিছনে ইরফান দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলে,___”কি করছ?”
মাইরার মনোযোগ পুরোপুরি বইয়ে থাকায় হঠাৎ আওয়াজে মেয়েটা ভয় পেয়ে ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। ফলস্বরূপ টেবিলের সাথে পা গিয়ে ধাক্কা খায়। মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে। ডান পা উঁচু করে ডান হাতে পায়ের দু’টো নখ চেপে ধরে। ইরফান দ্রুত মাইরাকে টেবিলের উপর বসিয়ে দেয়। মাইরা যে পা ধরে আছে, সেই পা নিজের বাম হাতের তালুর উপর নেয়। এরপর দেখার চেষ্টা করে কোথায় লেগেছে। মাইরা অদ্ভুদভাবে তাকিয়ে থাকে ইরফানের হাতের দিকে। দ্রুত ইরফানের হাতের উপর থেকে পা সরিয়ে নিতে চাইলে ইরফান মাইরার পা টেনে ধরে। রেগে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরা অসহায় মুখ করে তাকায় ইরফানের দিকে৷ ইরফান ধমকে বলে,___”স্টুপিট গার্ল, তুমি অপুষ্টির পেসেন্ট?”
মাইরা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। সে ব্য’থা পেয়েছে আর এই লোক তাকে ধম’কাচ্ছে। খ’বি’শ লোক একটা। এসব রেখে অসহায় মুখ করে বলে,____”আমি পায়ে ব্য’থা পেয়েছি।”
ইরফান দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ড্রায়ার থেকে মুভ স্প্রে বের করে আনে। এরপর মাইরার পা তার বা হাতের তালুতে নিয়ে মাইরার আঙুলে কয়েকবার স্প্রে করে দেয়। এরপর মাইরার দিকে চেয়ে মৃদুস্বরে বলে,___”কিছুক্ষণের মাঝে ব্য’থা কমে যাবে।”
মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান হাতের স্প্রে টি ড্রয়ারে রেখে এসে মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,____”নেক্সট ডে থেকে তোমার হোম টিউটর আসবে। ডোন্ট ওয়ারি!”
মাইরা তার ব্য’থা পাওয়া ডান পা টি বাম পায়ের উরুর উপর রেখে ডান হাত পায়ের গিরার উপর রাখে। ভুলে রাখা বাম পা দোলাতে দোলাতে বলে,____”আপনার সাথে আমার ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।”
ইরফান মাথা নিচু করে তার ডান পায়ের দিকে চেয়ে আছে। তার হাঁটু বরাবর এ পর্যন্ত মাইরার নাচানো পা কতবার যে বারি খেয়েছে, এই স্টুপিটের সেই হুশ নেই।
মাইরা ইরফানকে তার কথা পাত্তা না দিতে দেখে রেগে বলে,___”আপনি নিচে কি দেখছেন? আমার কথা টা শুনুন।”
কথাটা বলতে বলতে একটু নিচু হয়ে চোখ নামিয়ে দেখলে চোখ বড় বড় হয়ে যায়। পা নাড়ানো অটোমেটিক থেমে যায়। সে ভেবেছে এটা টেবিলের-ই একটা অংশ।
ইরফান মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা ধীরে ধীরে চোখ তুলে তাকায় ইরফানের দিকে। মিনমিন করে বলে,___”স্যরি! আমি বুঝতে পারিনি।”
ইরফানকে চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাইরা চোখ নামিয়ে নেয়। ডান হাতের বুড়ো আঙুলের কিছু অংশ মুখে নিয়ে ভাবছে কি করবে তাকে এই লোকটা। সামান্য কথা বললেই থা’প্প’ড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিতে চায়, সেখানে সে লাথি দিয়েছে লোকটাকে। ভাবতেই মাইরার নিজেরই কেমন যেন লাগলো। ইরফান ঝট করে মাইরার মুখে থাকা আঙুলটি বের করে তার মুখে নিয়ে দাঁত বসায়। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। অসহায় কণ্ঠে বলে,____”আমার আঙুল ছাড়ুন। উফফফ! ভেঙে গেল!”
ইরফান ছাড়লো না। মাইরার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ইতিমধ্যে মাইরার চোখে পানির কণা জমেছে, মেয়েটা বাম হাতে ইরফানের গলায় একটা খামচি দেয়। ইরফান তবুও ছাড়লো না। মাইরা অসহায় চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান কিছুক্ষণ পর মাইরার আঙুল ছেড়ে গম্ভীর গলায় বলে,____”ইট’স ইওর পানিশমেন্ট।”
মাইরা বা হাতে ডান হাতের আঙুলটি চেপে ধরে ইরফানের দিকে চেয়ে রেগে বলে,_____”আপনার পায়ে আমার পা একটুখানি লেগেছে বলে এমন করবেন? পা’ষা’ণ লোক একটা।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,____”এর জন্য পানিশমেন্ট দিইনি।”
মাইরা অবাক হয়ে বলে,_____”তাহলে আমি কি করেছি?”
ইরফান ঠাণ্ডা গলায় বলে,____”সিডিউস করার পানিশমেন্ট।”
মাইরা অদ্ভুদ চোখে তাকালো ইরফানের দিকে। ইরফানের চোখে চোখ পড়লে মাইরা চোখ নামিয়ে নেয়। সে তো ঠিকঠাক-ই আছে। ইরফান মাইরার গলায় বিদ্যমান তিলটায় ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে বুলিয়ে বলে,____”ভাবছি, এটা তোমার বডি থেকে উঠিয়ে ফেলব।”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান মাইরার এক্সপ্রেশনে ডানদিকে ঘাড় বাঁকিয়ে বা হাতে বাম গাল চুলকিয়ে আড়ালে ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হাসে। এরপর নিজেকে স্বাভাবিক করে ভ্রু কুঁচকে বলে,____”কি বলতে চাও? ফাস্ট বলো। আমার ভার্সিটি আছে।”
মাইরার কিছু মনে পড়তেই জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,_____”ওহ হ্যাঁ, আপনাকে কষ্ট করে টিউটর দিতে হবে না। আমি একটা কোচিং-এ পড়তে চাই আমার বান্ধবীর সাথে। বাসায় টিউটর এর চেয়ে ওখানে কলেজ শেষে পড়লে টাকাও কম লাগবে। আমি ওখানে পড়তে চাই।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,____”নো। বাসায় পড়বে, ইট’স ফাইনাল।”
কথাটা বলে ইরফান ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলে মাইরা বলে ওঠে,___”আমি আপনার টাকা বাঁচিয়ে দিতে চাইছি।”
ইরফান মাইরার সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,____”নো নিড। এসব ফা’ল’তু কথা বললে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব, স্টুপিট।”
মাইরা মুখ বাঁকায়। ভালো কথা বললেও থা’প্প’ড় দিতে চায়। কিছু একটা মনে পড়তেই মাইরা উৎফুল্ল মনে হলে,____”জানেন, আমি এসএসসি তে বৃত্তি পেয়েছি।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,____”আই নো।”
মাইরা মন খারাপ করে বলে,____”আপনি কি আমাকে কিছু টাকা ধার দিবেন? আমি বৃত্তির টাকা থেকে আপনাকে আবার দিয়ে দিব। আমাদের গ্রামে তো জিপিএ-ফাইভ পাইলেও মিষ্টি খাওয়ায়।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,____”তুমি কাকে খাওয়াতে চাও?”
!
এই বাড়ির সবাইকে। আমি যাদের যাদের চিনি তাদের সবাইকে। আমার ছোট ভাইকে।”
ইরফান ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে সূক্ষ্ম হেসে
ছোট করে বলে,____”ওকে, আনিয়ে দিব।”
মাইরার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
শুদ্ধ তার মাকে ইরফানদের বাসায় রাখতে এসেছে। সামিয়া চলে গিয়েছে শুনে শুদ্ধ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিল। একজন মানুষ হিসেবে তার ভীষণ খারাপ লেগেছে। অকারণেই মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু তার কি করণীয় ছিল? ফারাহ’কে নিয়েই চিন্তার শেষ নেই তার।
ইরফানের দাদি তৃণা বেগম আর শুদ্ধকে দেখে বলে,____”কেমন আছিস তৃণা?”
তৃণা বেগম তার ফুপুর দিকে এগিয়ে এসে মৃদু হেসে বলেন,___”আলহামদুলিল্লাহ ভালো ফুপু। তোমার শরীর কেমন?”
একদম অনেক ভালো। ভালো বলেই তো এলাম। তোরা তো যাবি না।”
এরপর শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আজ তোমার আসার সময় হলো?”
শুদ্ধ এগিয়ে গিয়ে তার গ্রান্ডমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে বলল,____”আহাগো! আমার সুন্দরী সুইট প্রথম বউ, এতো সুন্দর বউয়ের সামনে আমাকে যদি হ্যান্ডসাম না লাগে, তাহলে কি বিশ্রী ব্যাপার হবে বুঝতে পারছ? তাইতো তুমি এসেছ শোনার পর থেকে আমি নিজেকে হ্যান্ডসামভাবে প্রিপেয়ার করছিলাম।”
শুদ্ধর কান্ড দেখে তৃণা বেগম সহ রুমা নেওয়াজ, তারেক নেওয়াজ হাসছেন। শুদ্ধর দাদি শুদ্ধর কান টেনে বলে,_____”ওমা তাই নাকি ডার্লিং? কিন্তু তোমাকে তো একটুও হ্যান্ডসাম লাগছে না।”
মাইরা কলেজ বোরখা পরে ডাইনিং-এ এসে দাঁড়িয়েছে। ইরফানের দাদির কথা শুনে শব্দ করে হেসে ওঠে। শুদ্ধ ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,____”তুমি আমাকে এভাবে ইনসাল্ট করতে পারলে গ্রান্ডমা? আমি কত হ্যান্ডসাম জানো? তুমি কল্পনা-ই করতে পারছ না আমার সৌন্দর্য নিয়ে।”
কথাটা বলতে বলতে দেখল ইরফান সিঁড়ি বেয়ে নামছে। তার কান থেকে গ্রান্ডমা-র হাত সরিয়ে মাইরার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হেসে বলে,____”মাইরা আমি হ্যান্ডসাম নই বলো?”
মাইরা থতমত খেয়ে তাকায় শুদ্ধর দিকে। মেকি হেসে বলে,____”জ্বি ভাইয়া।”
শুদ্ধ হেসে বলে,____”কতটা সুন্দর একটু বর্ণনা করে বোঝাও তো মাইরা।”
মাইরা বিব্রতবোধ করে। শুদ্ধ ইরফানের দিকে তাকালে দেখল তার দিকে খেয়ে ফেলা চোখে চেয়ে আছে। গটগট পায়ে এগিয়ে এসে মাইরার পাশে দাঁড়িয়ে শুদ্ধর উদ্দেশ্যে বলে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,_____”লাইক বাঁদরের তিন নম্বর বাচ্চা।”
শুদ্ধ ভোঁতা মুখ করে তাকায়। ইরফানের কথায় সবাই শব্দ করে হাসে। মাইরা নিজেও হেসে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান ঘাড় বাঁকিয়ে গম্ভীর চোখে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। সবাই হাসছে, এই লোকের হাসতে কি প্রবলেম! তার ইচ্ছে করল দু’হাত ইরফানের মুখের ভেতর দিয়ে দু’পাশ থেকে টেনে ধরতে। ছোটবেলায় তারা এমন করত। কথাটা ভাবতেই মুখ চেপে আরও হাসতে লাগলো। ইরফান বিড়বিড় করে,___”স্টুপিট।”
ভার্সিটি প্রাঙ্গণে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করে শুদ্ধ। গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে একবার মাঠের কোণায় দাঁড়ানো হাস্যজ্জ্বল ফারাহ’র দিকে তাকায়। তার মুখেও হাসি ফুটে ওঠে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে একজায়গায় দাঁড়ায়। পাশেই ইরফান তার গাড়ি থেকে বেরিয়ে অফিস রুমের দিকে যায়।
শুদ্ধ ফারাহ’র দিকে আর এগোয় না। অফিস রুমের দিকে পথ ধরে। তার মায়ের বলা কিছু কথা মনে পড়ে। ইরফানের পিছু পিছু যেতে যেতে পিছু ফিরে আরেকবার ফারাহ’র দিকে তাকায়। ফারাহ’র পরনের কাপড়ের দিকে তাকালো। অনেক বেশি কোয়ালিটি ফুল কি! ব্যবসা ছাড়া ফারাহকে ভালো রাখতে পারবে না? বিরক্ত হয়। বিয়ে করে এসব ফা’ল’তু ভাবনা কেন ভাবছে। সামনে ফিরে ইরফানের পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলে,_____”ইরফান তুই বিজনেস করিস কেন?”
ইরফান দাঁড়িয়ে যায়। ভ্রু কুঁচকে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে,____”তোকে তো আগে মামা টেনেও অফিসে নিয়ে যেতে পারতো না। হঠাৎ এমন চেঞ্জ? বিয়ের কেরামতি না-কি সোনা?”
ইরফান বিরক্তি চোখে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ ভাবুক ভঙ্গিতে বলে,____”মাইরা গ্রামের মেয়ে বুঝলি? আমিও গ্রামের ছেলে। তোদের শহুরে ছেলেনেয়েদের মতো এতো টাকা লাগে না আমাদের।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,____”But, She wants to be a millionaire. [কিন্তুু ও কোটিপতি হতে চায়।]
শুদ্ধ বিস্ময় চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। অবাক কণ্ঠে বলে,____”অসম্ভব। মাইরা ওই ধরনের মেয়েই না।”
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে তাকায় শুদ্ধর দিকে। অতঃপর রেগে বলে,____”তোর থেকে ওর সার্টিফিকেট চায়নি আমি।”
শুদ্ধ মজা রেখে সিরিয়াস হয়ে বলল,___”আরে সার্টিফিকেট দিচ্ছি না। কিন্তু মাইরাকে দেখলেই বোঝা যায়, ও অনেক সহজ সরল একটা মেয়ে। এট লিস্ট টাকার ব্যাপারে এসব ফা’ল’তু চাওয়া নেই।”
ইরফান মৃদুস্বরে বলে,___”I know, She is a very honest and good girl.”
[আমি জানি, সে অনেক সৎ আর ভালো মেয়ে।]
শুদ্ধ কৌতুহলী চোখে চেয়ে বলে,___”মাইরা তোকে নিজে বলেছিল ও মিলিওনেয়ার হতে চায়?”
ইরফান স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,___”নো।”
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫৪+৫৫
“তাহলে জানলি কি করে?”
ইরফান কিছু না বলে শুদ্ধকে পাস করে আবারও অফিস রুমের দিকে এগিয়ে যায়। শুদ্ধ চিন্তিত বদনে ইরফানের দিকে চেয়ে থাকে। কিছু একটা ভেবে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,___”কবে জেনেছিলি এটা?”
ইরফানের গম্ভীর স্বর,____”2 years ago.”