প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫৮
Drm Shohag
মাইরা অবাক হয়ে বলে,____”মানে?”
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,___নাথিং। এরপর গম্ভীর গলায় বলে,___”ওকে থাকছি। বাট নেক্সট ডে অনেক ভোরে রওয়ানা হব, আন্ডারস্ট্যান্ড?”
মাইরা মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। সাথে খুশিও হলো বেশ।
রাত বাজে প্রায় দু’টো। ইরফান বিরক্তি চোখে বেডের দিকে চেয়ে আছে। মাইরা আর লাবিব একে-অপরকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। ইরফানের জন্য লাবিবের অপর পাশে জায়গা রেখেছে মাইরা। ইরফান বিরক্ত। এর মধ্যে আবার এখানে এসি নেই, ফ্যানের বাতাস গায়ে লাগছে না, ঘেমে-নেয়ে একাকার। তার উপর তার বউকে আরেকজন নিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে। ইরফান বিরক্তি চোখে দুই ভাইবোনের দিকে চেয়ে আছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে শাওয়ার নেয়ার ডিসিশন নিল। কিন্তু ওয়াশরুম তো খুঁজেই পাচ্ছে না। কোথায় এটা? চরম বিরক্ত ইরফান। আগে জানলে শুদ্ধদের বাড়ির চাবি নিয়ে আসতো। শুদ্ধরা না থেকে সে ফেঁসে গিয়েছে।
ভাবনা রেখে একটা গামছা দিয়ে শরীর মুছল। এরপর মাইরার পাশে এসে দাঁড়ায়। সামান্য ঝুঁকে মাইরার থেকে লাবিব কে ছাড়িয়ে নেয় বেশ কসরত করে। লাবিব কে কোণায় রাখে, অপর পাশে একটা বালিশ রাখে যাতে লাবিব পড়ে না যায়। এরপর মাইরাকে মাঝে দিয়ে সে বাম কাত হয়ে মাইরাকে ঘেষে শুয়ে পড়ল। ডান হাতে মাইরাকে তার দিকে ঘুরিয়ে নেয়। মাইরাও ঘুমের ঘোরে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে। ইরফান এবার বোধয় একটু শান্তি পায়। মাইরার গলায় মুখ গুঁজে সূক্ষ্ম হাসে। একটু পর বাচ্চা কণ্ঠে ইরফান চোখ তুলে তাকায়। এই ঘরের জিরো লাইটের পাওয়ার টা একটু বেশিই। ইরফান সামান্য মাথা উঁচু করে দেখল লাবিব ঘুমঘুম চোখে বসে তার দিকে চেয়ে আছে। এগিয়ে এসে বলে,____”টুমি আপুইকে দুরছ কেনু?”
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে বলে,____”এটা আমার বউ। তাই আমি ধরেছি। তুমি ঘুমাও।”
লাবিব হাত বাড়িয়ে বলে,____”এতা আমার আপুই। আমি দুরব। টুমি ছাড়ো।”
ইরফান মাইরাকে শক্ত করে ধরে বলে,____”নো। এটা আমার বউ আমি ধরব। তুমি তোমার বউকে ধরে ঘুমাবে।”
লাবিব অবুঝ গলায় বলে,____”আমাল বুউ কুতায়?”
ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,____”তুমি বড় হলে তোমাকে বউ এনে দিব। এখন আমাকে ডিস্টার্ব কর না।”
লাবিব মানলো না। এগিয়ে এসে মাইরার কাঁধে হাত রেখে ডাকে,___”আপুই, আপ….”
ইরফান লাবিবের মুখ চেপে ধরে বলে,____”তুমি দেখছ না আমার বউ ঘুমাচ্ছে? ওকে ডিস্টার্ব করছ কেন?”
লাবিব ইরফানের হাত সরিয়ে বলে,____”আমি আপুইকে দরে গুমাবো। টুমি আপুইকে ছাড়ো।”
ইরফান মাইরার গালের সাথে গাল লাগিয়ে বলে,___”নো।”
লাবিব আরেকটু এগিয়ে এসে ইরফানের চুল টেনে ধরে দু’হাতে। ইরফান বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় লাবিবের দিকে। ডান হাতে তার চুল থেকে লাবিবের হাত ছাড়িয়ে রেগে বলে,___”স্টুপিট বয়, কি করছ?”
লাবিবও রাগী রাগী ভাব নিয়ে বলে,___”টুমি টুপিট বয়।”
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। কি সাংঘাতিক ছেলে! ইরফান কিছু না বলে মাইরাকে আরেকটু টেনে মাইরার গলায় মুখ গুঁজে রইল। লাবিবের এসব পছন্দ হলো না। তার আপুইকে তার থেকে কত দূরে সরিয়ে নিয়ে গেল। লাবিব আরেকটু এগিয়ে এসে মাইরার বাহুতে হাত দিয়ে ঝাঁকায় আর ডাকে,___”আপুই আপুই..
ইরফান মাইরার গালের সাথে তার গাল ঠেকিয়ে লাবিবের দিকে তাকালো। এরপর লাবিবের হাত ধরে বলে,___”তোমাকে চকলেট দিব, বুঝেছ? এখন ঘুমাও।”
লাবিব কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,___”আমি চলকেট খাবু না। আমি আপুই সাথে গুমাবো।”
ইরফান বুঝলো, এটা সাংঘাতিক বোন ভক্ত ছেলে। একে বোনের বদলে অন্যকিছু দিয়ে ভোলানো যাবে না। অতঃপর ডান হাতে মাইরার গা ঘেষে লাবিব কে শুইয়ে দিয়ে লাবিব এর হাত মাইরার হাতের উপর ঠেকিয়ে রেখে বলে,____”এখন ঘুমাও।”
লাবিব পিটপিট করে বলে,___”আপুইকে দিকতে পাই না। আপুইকে এদিকে করে দাও।”
ইরফান এবার রেগে গেল। এই বাচ্চার চাওয়ার শেষ নেই। বিরক্তি কণ্ঠে বলে,_____”নো। ও এদিক ফিরেই থাকবে।”
লাবিব এবার কেঁদে দেয় শব্দ করে। ইরফান থতমত খেয়ে তাকায়। লাবিব এর কান্নায় মাইরা জেগে যায়। শক্ত বাঁধন থেকে নড়াচড়া করতে চাইলে পারলো না। ইরফান বা হাতে মাইরাকে চেপে ধরে ডান হাতে লাবিব কে চুপ করতে বলছে। লাবিব থামছে না। মাইরা পিটপিট করে চোখ মেলে দু’হাতে ইরফানকে ঠেলে। ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,____”হোয়ার হ্যাপেন্ড?”
মাইরা ঘুম জড়ানো কণ্ঠে রেগে বলে,___”ছাড়ুন আমায়। দেখছেন না আমার ভাই কাঁদছে।”
ইরফান বিরক্ত হয়ে মাইরাকে ছেড়ে দিল। মাইরা ছাড়া পেয়ে উল্টো ঘুরে লাবিবের দিকে যায়। লাবিব তার বোনকে পেয়ে খুশি হয়। কান্না থেমে যায়। মাইরা লাবিব কে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে। এরপর ডান হাতে লাবিবের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,___”ঘুমা ভাইয়া।”
লাবিব মাইরার বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে নেয়। কতদিন পর তার আপুইকে পেয়েছে। আর ওই লোকটা তার আপুকে দিচ্ছিলো না। লাবিব একা একা বিড়বিড় করল,____”খুচিব ডুলাবাই।”
ইরফান মাইরার পাশে উঠে বসল। লাবিবকে চুপ হতে দেখে গম্ভীর গলায় বলে,____”থেমেছে কান্না। এখন ওকে ছেড়ে দাও।”
মাইরা ইরফানের কথা শুনে উল্টো ফিরে তাকায়। ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলে,__”আপনার প্রবলেম কি? দেখছেন না আমি আমার ভাইকে নিয়ে ঘুমাচ্ছি। আপনিই ওকে কাঁদিয়েছেন তাই না? অ’স’ভ্য লোক একটা। একদম আমাদের ডিস্টার্ব করবেন না বলে দিচ্ছি।”
কথাটা বলে লাবিব কে জড়িয়ে চোখ বুজল মাইরা।
ইরফান চোয়াল শক্ত করে দু’ভাইবোনের দিকে চেয়ে রইল কিছু সময়। কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। ইচ্ছে করল দু’টোকে একসাথে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলতে। বেড থেকে নেমে দাঁড়ালো। একটু পর লাবিবের দিকে চেয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বিড়বিড় করে,__”ডিজগাস্টিং শা’লা।”
এরপর আবারও কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে দুই ভাইবোনকে দেখে। এরপর মাইরার পাশে এসে শুয়ে পড়ে। মুখ টা মাইরার গালের উপর নিয়ে গিয়ে মাইরার ডান গালে দাঁত বসিয়ে দেয়। মাইরা মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে। কাঁচা ঘুম টা ভেঙে গেল। মাত্র চোখে ঘুম এসে ধরা দিয়েছিল। পিটপিট করে চোখ মেলে এদিক ফিরতে নিলে ইরফান মাইরার গাল থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। মাইরা ঘাড় ঘুরিয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে রেগে কিছু বলতে চায়, তার আগেই ইরফান মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে।
বেশ অনেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও মাইরা ছাড়া না পেয়ে ছটফটায়। ইরফানকে ঠেলে। ইরফান মাইরাকে ছেড়ে মাথা উঁচু করে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরার চোখ বন্ধ। ইরফান মাইরার গলায় মুখ গুঁজে চোখ বুজে গম্ভীর গলায় বলে,____”ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
মাইরা চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। লাবিব ঘুমিয়েছে, তার সাথেই লেপ্টে আছে। ইরফানও তাকে চিপকে আছে। মাইরা আর কাউকেই ধরল না। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে সেও চোখ বুজে নেয়।
সকাল সকাল মাইরা আর ইরফান ঘুম থেকে উঠে রওয়ানা হয়েছে ইরফানদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। মাইরা থাকার আবদার করেনি। কি হবে আবদার করে? যেখানে থাকতে চায়, সেই বাড়ির মালিক তাকে থাকতে দিবে? রাতে দিয়েছিল এটাই তো অনেক। লাবিব মন খা’রা’প করছিল। আপুইকে আসতে দিবে না। মাইরা বলেছে, কাঁদলে সে আর যাবে না। বোনের কথায় কান্না চেপে মন খা’রা’প করে বোনকে বিদায় দিয়েছে। মাইরাও মলিন মুখে মা আর ভাইকে বিদায় দিয়েছে। খুব মন খা’রা’প মাইরার।
বেশ কিছুক্ষণ পর ইরফান একটা বাজারের মতো জায়গায় গাড়ি থামিয়ে মাইরার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়, মাইরা ঘুমিয়ে গিয়েছে। ইরফান মাইরাকে আর ডাকলো না। গাড়ি স্টার্ট দেয়।
শুদ্ধ ফারাহকে সাথে নিয়ে ভার্সিটি থেকে সোজা এসেছে একটি শপিংমলে। দু’জনে পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটছে।
ফারাহ একটু পর পর শুদ্ধর দিকে তাকায়। শুদ্ধ হেসে বলে,____”তোমার হাসবেন্ড অনেক হ্যান্ডসাম তাই না পাখি?”
ফারাহ মাথা নিচু করে নেয়। শুদ্ধ এক সাইডে দাঁড়িয়ে বলে, ____”তোমার যেটা যেটা ভালো লাগে নিয়ে এসো।”
ফারাহ মাথা নেড়ে এগিয়ে যায়। তার ভীষণ সংকোচ লাগছে। এতোদিন তো ফাইজের সাথে এসে যা খুশি নিয়ে নিত। কিন্তু শুদ্ধর সাথে এসে যা খুশি নিয়ে নিতে পারবে না।
গতকাল যখন শুদ্ধ তার ভাইয়ের সাথে ভার্সিটির প্রাঙ্গণে কথা বলছিল ব্যবসা করবে না। ফারাহ সেটা শুনেছিল। শুদ্ধর অনেক টাকা ভালো লাগে না। ফারাহ বুঝেছিল শুদ্ধকে। আগে ভাইয়ের সাথে এসে যেভাবে পটাপট যা খুশি নিয়ে নিত। এটা তো শুদ্ধর সাথে পারবে না।
ফারাহ তবুও বেশ কয়েকটা জামা দেখে। অনেকগুলোর মাঝে এই জামাইটাই বেশ ভালো লাগলো। বেশ কয়েকবার নেড়েচেড়ে দেখল। হঠাৎ মনে পড়ল রেঞ্জের কথা। চেক করলে দেখল রেঞ্জ ২৫০০০ হাজার টাকা। ফারাহ কারেন্ট শক খাওয়ার মতো হাত সরিয়ে নেয়। তার ভাই অথবা বাবা থাকলে এটা নরমাল ছিল। বাট এখন তো শুদ্ধ। ফারাহ শপিংমল টা ভালোভাবে দেখল। শুদ্ধ ইচ্ছে করেই এতো বড় শপিংমলে এনেছে। কিন্তু কেন?
এখানে কম দাম এর জিনিস পাওয়া-ই যায় না। ফারাহ আগেও এসেছিল এখানে।
ফারাহ ঘুরে এসে দাঁড়ায় শুদ্ধর সামনে। মিনমিন করে বলে,____”এখানে কিছু ভালো না। আরেকদিন কিনবো।”
শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে বলে,____”তুমি এসব জায়গা থেকেই কিনতে। এখন ভালো না বলছ কেন ফারাহ? আমার কাছে কিন্তু সব খবর আছে।”
ফারাহ কি বলবে বুঝতে পারে না। কথা ঘুরিয়ে বলে,____”আমি ফুসকা খেতে চাই।”
শুদ্ধ কিছু বললো না। যেই জামাটা ফারাহ হাতে নিয়েছিল সেটা প্যাক করে দিতে বলে। এরপর জামাটি নিয়ে ফারাহ’র হাত ধরে শপিংমল থেকে বেরিয়ে যায়। ফারাহ মনে মনে অনুতপ্ত হলো। তার এই জামাটায় এতোবার হাত দেয়া উচিৎ হয়নি। শুদ্ধ ফারাহ’র জন্য ফুসকা প্যাকেট করে নিয়েছে। এরপর ফারাহকে নিয়ে ফারাহ’র বাড়ির সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করায়।
সন্ধ্যা নেমেছে ধরণীতে। আবছা দিনের আলোয় চারপাশটা ঝাপসা দেখা যায়। শুদ্ধ ফারাহ’র দিকে নিরবচোখে তাকিয়ে আছে। ফারাহ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে শুদ্ধর উদ্দেশ্যে বলে,____”বাড়িতে আসো।”
শুদ্ধ গাড়ির ভেতরের লাইট অফ করে দিল। এরপর ফারাহ’র দিকে এগিয়ে গিয়ে দু’হাতে ফারাহ’র মুখটা আগলে নেয়। মৃদুস্বরে বলে,____”তুমি এতো ভালো কেন ফারাহ পাখি? এতো ভালো হতে হবে না। বউয়ের শখ পূরণ করতে এই শুদ্ধ ইয়াশার খুব ভালোই পারে। বুঝলে পাখি?”
ফারাহ কি বলবে বুঝলো না। তবুও জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কিছু বলতে চায়, তার আগেই শুদ্ধ ফারাহ’র ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। ফারাহ স্তব্ধ হয়। সে বুঝতেই পারেনি। প্রথমবারের মতো ভালোবাসার মানুষের থেকে এমন স্পর্শ পেয়ে মেয়েটা কেমন নেতিয়ে যায়।
বেশ কিছুক্ষণ পর শুদ্ধ ফারাহকে ছেড়ে আদুরে সুরে বলে,___”তুমি অনেক টেস্টি তো ফারাহ পাখি!”
ফারাহ ল’জ্জায় চোখমুখ খিঁচিয়ে রাখে। শুদ্ধ তার সিটে বসে শার্টের তিনটে বোতাম খুলে ফেলে। ব্যস্ত স্বরে বলে,___”তুমি এক্ষুনি যাও ফারাহ পাখি। নয়তো সব্বনাশ হবে তোমার।
ইয়া আল্লাহ! শ্বশুর বাড়ির আশেপাশে বা’স’র সাড়লে আমার প্রেস্টিজ পাঞ্চার হয়ে যাবে।”
ফারাহ শুদ্ধর দিকে তাকালো না। দ্রুত গাড়ি থেকে বেরিয়ে এক প্রকার দৌড় দেয় বাসার দিকে। শুদ্ধ ফারাহ’র অবস্থা দেখে ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
শুদ্ধ ফারাহকে রেখে ইরফানদের বাড়ি এসেছে। এখানে তার মা আছে, সাথে গ্রান্ডমা। নিজের বাড়ি গিয়ে কি করবে?
কিন্তু ব্যাপারটা হলো এ বাড়ি এসে সে ইরফানের ঘরের সোফায় গা এলিয়ে বসে আছে। ডান পা মেলে পা নাড়ায় সাথে ফোনে মগ্ন। একটু পর পর ইরফানের দিকে তাকায়। যে রকিং চেয়ারে বসে ল্যাপটপে কিছু করছে। ইরফান-ই মূলত ডেকেছে শুদ্ধকে। ডেকেছে কেন এটা বলতে তিনঘণ্টা লাগাচ্ছে। শুদ্ধ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,___”তুই বলবি? না-কি আমি যাবো?”
ইরফান বিরক্তি ভরা চোখে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,____”কি মহান কাজ করতে হবে রে? গার্লফ্রেন্ড এর মতো তোর সামনে বসিয়ে রেখে ল্যাপটপে ডুবে আছিস।
কথাটা বলে শুদ্ধ একটু থামে, এরপর গাল চুলকে ভাবুক ভঙ্গিতে বলে,____এই এক মিনিট, তুই কি কোনোভাবে মাইরাকে আমার সাথে গুলিয়ে ফেলেছিস? বিশ্বাস কর সোনা, আমি তোর ভাই নট বউ।”
ইরফানকে এখনো তার দিকে চরম বিরক্তিভরা চাহনীতে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিছেমিছি অসহায় মুখ বানিয়ে উঠে দাঁড়ায় শুদ্ধ। এরপর ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শার্ট, প্যান্ট, দেখিয়ে দেখিয়ে বলে,____”এই দেখ আমি শার্ট পরেছি, প্যান্ট পরেছি।
চাপ দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে বলে,___”এই তো দাঁড়িও আছে। এবার চিনেছিস তো!”
ইরফান রে’গে বলে,____”থা’প্প’ড় খেতে না চাইলে চুপচাপ বোস বে’য়া’দ’ব।”
শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলে,____”তুই আমাকে এখনো বউ ভাবছিস? তাহলে একটা চুমু খা সোনা। এভাবে দূরে দূরে রাখছিস কেন? বলছি, কোথায় বসব?”
ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,____”আমার মাথার উপর।”
শুদ্ধ একটু উঁকি দিয়ে ইরফানের মাথা দেখার চেষ্টা করে। তারপর ইরফানের দিকে চেয়ে ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,____”সোনা? বলছিলাম যে, তোর মাথা খুব ছোট বুঝলি? আমার পা’ছা ধরবে না তোর মাথার উপর। তাহলে কিভাবে তোর মাথার উপর বসব? হাউ?”
ইরফান চিৎকার করে বলে,____”শুদ্ধ তুই লাথি খাবি এখন আমার পায়ে।”
শুদ্ধ দৌড়ে গিয়ে সোফার অপর কোণায় বসে পড়ে। ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,____”চো চরি! চো চরি!”
ইরফান রেগে হাতে ল্যাপটপ ছুঁড়ে মারতে নিলে শুদ্ধ চিল্লিয়ে বলে ওঠে,____”এই থাম থাম। ওটা ল্যাপটপ।”
ইরফান থামলো। বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে আবারও কাজে মনোযোগ দেয়। শুদ্ধ মিটিমিটি হাসলো। আর জ্বালালো না।
বেশ কিছুক্ষণ পর ইরফান শুদ্ধর সামনে একটি পেপার বাড়িয়ে দিলে শুদ্ধ ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ইরফানের ধরে রাখা পেপারটির দিকে তাকায়। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,____”এখানে একটা সাইন করে দে।”
শুদ্ধ ফোন সোফার উপর রেখে পেপারটি তার হাতে নেয়। এটা ‘শেয়ার ট্রান্সফার ডিড’।
ডিড এর একটা লাইনের চোখ পড়ল শুদ্ধর ~
‘আমি ইরফান নেওয়াজ, এই মর্মে ঘোষণা করছি যে আমি আমার মালিকানাধীন কোম্পানি [Nawaz Global Trade Ltd.] এর মোট ১০০০ শেয়ারের ৫০০ শেয়ার আমার ভাই শুদ্ধ ইয়াশার এর কাছে হস্তান্তর করছি।’
লেখাটা পড়ে শুদ্ধ বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় ইরফানের দিকে। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে থেমে থেমে বলে,____”তোর মাথা আছে না গেছে?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,____”আছে। সাইন করে দে।”
শুদ্ধ ছ্যাত করে ওঠার মতো করে বলে,____”হয়, আমারে পা’গ’লা কু’ত্তা’য় কা’ম’ড়া’ইছে যে আমি এটাতে সাইন করব। ধর এটা।”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,___”সাইন করে দে।”
শুদ্ধ মাথা চুলকে বলে,____”এসব কি পা’গ’লা’মি শুরু করলি? আমি বিজনেস করব রে। তুই আর ফাইজ, তোরা দু’জন একটু নিঃশ্বাস নে।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,____”ইউর উইশ। বাট এখন এটাতে সাইন করে দে।”
শুদ্ধ সাথে সাথে বলে ওঠে,___”অসম্ভব।”
ইরফান রে’গে বলে,___”চুপচাপ সাইন করে দে। নয়তো থা’প্প’ড় খাবি।”
শুদ্ধ কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। মাইরা হাতে একটা ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুদ্ধ মাইরার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,____”মাইরা তোমার বর আমায় বড়লোক বানাতে চায়। আমি এতো টাকা কি করব বলো তো? তাই ভাবছি, চলো আমি আর তুমি ডেইটে গিয়ে টাকাগুলো উরাধুরা খরচ করে আসি।”
কথাটা বলার সাথে সাথেই ইরফান শুদ্ধর হাত থেকে পেপার টি কেড়ে নেয়। শুদ্ধ আড়ালে হাসলো। ঠিক জায়গায় টোপ দিয়েছে।
এদিকে মাইরা বোকাচোখে ইরফান আর শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে।
শুদ্ধ সুযোগ বুঝে ঘর থেকে বেরোনোর জন্য দু’পা এগোলে ইরফান শুদ্ধর শার্টের কলার টেনে ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,____”সাইন না করে এক পা ও নড়তে পারবি না।”
শুদ্ধর মুখ আবারও অসহায় হয়ে যায়। উল্টো ঘুরে ইরফানের দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস হয়ে বলে,___”ইরফান আমি এটা নিতে পারবো না। প্লিজ জোর করিস না। আমি বসে বসে কেন তোর কোম্পানির শেয়ার নিতে যাব? আমার নিজের কাছেই নিজেকে ছোট লাগবে। আমি আমার বিজনেসটাতেই ফোকাস করব আগের মতো। আর পা’গ’লা’মি করিস না। সোনা ভাই তুই আমার।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,___”গিফট করছি। গিফট এক্সেপ্ট করতে হয়, রিজেক্ট নয়।”
শুদ্ধ কেমন অদ্ভুদভাবে তাকালো ইরফানের দিকে। ইরফান চোখের ইশারায় সাইন করতে বলল। শুদ্ধ নিজেকে সামলে নিল। মাঝে মাঝে এতো ইমোশনাল হয়ে যায় এই ঘাড়ত্যাড়া টার জন্য।
অতঃপর ইরফানের হাত থেকে পেপারটি নিয়ে হেসে বলে,____”গিফট এক্সেপ্ট করতে হয়, রিজেক্ট নয়। কথাটা মনে থাকে যেন!”
এটা বলে পেপারে সাইন করে দেয়। ইরফান শুদ্ধর থেকে পেপারটি নিয়ে সূক্ষ্ম হাসলো।
ঘড়ির কাটা জানান দেয় রাত ৮ টা। মাইরা মাগরিব এর নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছে।
শুদ্ধ যাওয়ার পর ইরফান ল্যাপটপে প্রায় ঘণ্টাখানেক এর মতো কাজ করল। ভার্সিটিতে কিছুদিন পর এক্সাম। সেসব কোয়শ্চন রেডি করল। এরপর উঠে দাঁড়ায় রেডি হতে।
আপাতত অফিসে ইম্পর্ট্যান্ট একটি মিটিং আছে।
শার্ট, প্যান্ট, ব্লেজার সহ সব পরে নেয়। এরপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতঘড়ি পরতে পরতে ঘড়ির ভেতর লেখা (Gucci) তে চোখ বুলালো। মাইরার বলা বুচি শব্দটা মনে পড়লে ঘাড় বাঁকিয়ে মাইরার ঘুমন্ত মুখপানে চাইলো। মুখাবয়ব গম্ভীর। না চাইতেও ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হাসলো। মাইরা ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে ডেকে ওঠে,____”শিসওয়ালা?”
ইরফানের কান সজাগ হয়। ঘরের ফ্যান বন্ধ। এসি দেয়া। এজন্য শুনতে অসুবিধা হয় না। ইরফান এগিয়ে যায় মাইরার দিকে। মাইরা ঘুমের ঘোরে আবারও ডেকে ওঠে,___”শিসওয়ালা?”
ইরফান মাইরার পাশে বসে মাইরার দিকে ঝুঁকলো। মাইরার ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ পায়। ডান হাত বাড়িয়ে মাইরার গালে রাখে। মাইরা আবারও ডেকে ওঠে,___”শিসওয়ালা?”
ইরফান ঠোঁট বাঁকায়। মাইরার ঘুমের ঘোরে কথা বলার হ্যাবিট টা বেশ ভালোই এনজয় করে। মৃদুস্বরে বলে,___”বলো।”
মাইরার কপালে বিরক্তির ভাঁজ। আদো আদো স্বরে বলে,____”তুমি যেও না।”
ইরফান মাইরার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে মৃদুস্বরে বলে,___”আমার অফিস আছে। যেতে হবে।”
মাইরা ঘুমের ঘোরেই এপাশ থেকে ওপাশ ফিরে বিড়বিড় করে,___”তুমি নিষ্ঠুর শিসওয়ালা।”
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরাকে দেখল। মাইরাকে তার দিকে ফেরালো। ডান হাতে গাল ধরে নাড়ালো। এই মেয়ে ঘুমে কাঁদা।
ইরফান বেশ কিছুক্ষণ মাইরার মুখপানে চেয়ে রইল। এরপর বেড থেকে উঠে দাঁড়ায়। তার অফিসের পিএ কে কল করে। ওপাশ থেকে কেউ বলে,___”জ্বি স্যার বলুন।”
ইরফান ডান হাতে কানে ফোন ধরেছে। বা হাত প্যান্টের পকেটে রাখা। মাইরার দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,____”রাকিব, আমি অফিসে আসছি না।”
রাকিব অসহায় কণ্ঠে বলে,____স্যার মিটিংয়ের কি হবে তাহলে? বড় স্যার রে’গে যাবে। আমায় বস্তা বস্তা কথা শোনাবে। আপনি মিটিং ক্যান্সেল করবেন না প্লিজ স্যার। স্যা….
ইরফান ধমকে ওঠে,_____”সাট আপ।”
রাকিব ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। টি-শার্ট টেনে বুকে থুতু দেয় দু’বার। সে বার বার এক ভুল করে কেন? এক জমের থেকে বাঁচতে আরেক জমের কাছে রিকুয়েষ্ট করে!
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,___”এট ফার্স্ট আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো।”
জ্বি স্যার!
আমি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিটিংয়ে জয়েন হবো। নেক্সট ফিফটিন মিনিট’স এর মাঝে ম্যানেজ কর।
জ্বি স্যার!
ইরফান কল কেটে দেয়।
রুমের এক কোণায় রকিং চেয়ারে সোজা হয়ে বসেছে ইরফান মাইরার দিক করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা টানা কথা বলে মিটিং শেষ করে। মাইরার থেকে অনেকটা দূরত্বে বসায় মাইরার ঘুম ভাঙেনি।
ইরফান মাইরার দিকে তাকালো। সে একটু পর পর মাইরার দিকে তাকিয়েছিল। মাইরার আপাতত পুরো বেড একবার রাউন্ড দেয়া শেষ। এখন আপাতত বালিশের উপর পা, আর মাথা উল্টো দিকে। ইরফান অবাক হলো না। তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার দিকে তাকিয়ে রইল।
মাইরা গড়াতে গড়াতে বেডের কোণায় চলে এসেছে। কয়েক সেকেন্ড এর মাঝেই মাইরা পড়বে পড়বে ভাব। ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই মাইরা বেডের উপর থেকে পড়তে নেয়। ইরফান কোলের উপর থেকে ল্যাপটপ ছুঁড়ে একপ্রকার দৌড়ে মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসে মাইরাকে ধরে ফেলে। মাইরাকে মেঝেতে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে পেরে ইরফান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আর এক সেকেন্ড লেট হলে এর ঘাড় ভাঙতো আজ নিশ্চিত।
ইরফান চোয়াল শক্ত করে তাকায় মাইরার দিকে। ইচ্ছে করল দু’গালে দু’টো থা’প্প’ড় দিয়ে একে ঘুমানোর স্টাইল শেখাতে। ঘুমন্ত মাইরার মুখপানে চেয়েই দাঁতে দাঁতে চেপে বলে,____”স্টুপিট গার্ল, বড় হবি না তুই?”
মাইরা একটু নড়েচড়ে ইরফানের দু’হাতের উপর-ই আরামে ঘুমায়। ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। বাম দিকে হেলে ইরফানের দিকে সেটে যায়। ইরফান শীতল দৃষ্টিতে তাকায় মাইরার দিকে। মুখ নামিয়ে মাইরার গালে একটা চুমু খায়।
এরপর মেঝে থেকে মাইরাকে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মাইরাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে উল্টো ঘুরে তাকায়। মেঝেতে চোখ পড়লে দৃষ্টিতে বিস্ময় ভর করে। ল্যাপটপ দু’ভাগ হয়ে পড়ে আছে। এগিয়ে গিয়ে খণ্ড দু’টো তুলে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। এটা কখন ছুঁড়লো! এখানে অফিসের কত ইম্পর্ট্যান্ট ডকুমেন্টস আছে!
ঘাড় বাঁকিয়ে একবার মাইরার দিকে তাকালো। হতাশার শ্বাস ফেলল সমানে। এমন বউ থাকলে এসব বোধয় নরমাল!
দরজায় কেউ নক করলে ইরফান দরজা খুলে তার বাবাকে দেখল। তারেক নেওয়াজ গম্ভীর স্বরে বলে,___”তুমি কি নতুন বউ হয়েছ? অফিস যাওনি কেন?”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,___”মাই উইশ বাবা। তোমার কি প্রবলেম? আমি সব ম্যানেজ করে নিয়েছি।”
তারেক নেওয়াজ রে’গে বলে,___”আমার কি প্রবলেম মানে? ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়ার মতো তোমাকে ঠেলতে হবে আমার? ঘরে শুয়ে মিটিং করলে, তারা তোমার সাথে ডিল করবে?”
ইরফান সাথে সাথে দৃঢ় কণ্ঠে বলে ওঠে,___”অফকোর্স।”
তারেক নেওয়াজ কথা খুঁজে পেলেন না। ইরফান ঠিকই বলেছে করবে। কিন্তু সে কথা দিয়েছিল তার ছেলে সশরীরে সেখানে উপস্থিত থাকবে, কিন্তু তার ছেলে তো একখান ত্যাড়া। কার কথা শুনবে? তারেক নেওয়াজ কিছুটা গলা উঁচু করে বলে,____”তুমি আমার কথা টা রাখবে না? আমি…. ”
ইরফান মাঝখান থেকে বলে ওঠে,___”বাবা তুমি যাও।”
“কোথায় যাবো?”
তোমার বউয়ের এর কাছে।
তারেক নেওয়াজ বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় ইরফানের দিকে। কোনোরকমে বলে, ___”মানে?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,____”আমার বউ ঘুমাচ্ছে। তুমি তোমার বউকে গিয়ে ডিস্টার্ব কর, প্লিজ!”
তারেক নেওয়াজ বাকহারা হয়ে চেয়ে রইল ইরফানের দিকে। তার বাড়িতে একটা বোমা বিস্ফোরণ হলেও সে বিশ্বাস করে নিতো তার শত্রু মঙ্গলগ্রহ থেকে সৃষ্টি হয়ে তাদের উপর হামলা চালিয়েছে। কিন্তু এটা তার ছেলে সেটা কি করে বিশ্বাস করবে? ঘোরের মাঝেই তারেক নেওয়াজ তার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।
ইরফান দরজা আটকে ড্রেস চেঞ্জ করে একটা প্যান্ট আর পাতলা টি-শার্ট পরে নেয়। এরপর মাইরার পাশে শুয়ে মাইরাকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। মাইরার ঘুমন্ত মুখপানে চেয়ে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। এরপর হঠাৎ-ই সুরেলা কণ্ঠে গেয়ে ওঠে,
এইতো ক’দিন আগেও ছিলে
তুমি অচেনা
আজকে চোখের আড়াল হলেও
ভালো লাগে না..
ওওও…আজ আমার চোখে
একি নেশা লাগে
আজ আমার চোখে
একি নেশা লাগে
করলে আমায় তুমি,
কত না রঙিন!
বসে বসে ভাবি
আমি সারাদিন
কি করে মেটাবো
তোমার এই ঋণ….
তিনটি ক্লাস শেষে মাইরা একটি গল্পের বই হাতে করে মিলার হাত ধরে ক্লাসরুম থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে। আবার ৩০ মিনিট পর ক্লাস আছে। মাইরা রুম থেকে বেরিয়ে মিলার হাত ধরে দৌড় দেয়। মিলা মাইরাকে টেনে বলে,___”আরে আস্তে আস্তে মাইরা। পড়ে যাব।”
মাইরা হেসে বলে,____”তাহলে পড়ে যা। তোর জামাই পক্ষীরাজ হয়ে এসে তোকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচাবে।”
মিলা মুখ বাঁকিয়ে বলে,____”আমার পক্ষীরাজ আছে না-কি! তোর পক্ষীরাজ আছে?”
মাইরা আর মিলা কলেজ মাঠের একটা ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে হাঁপায়। জোরে জোরে শ্বাস ফেলে দুই বান্ধবী। মাইরা একটু পর ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে,____”কে আমার পক্ষীরাজ?”
মিলা দু’হাত কোমড়ে রেখে বলে,_____”তোমার শিসওয়ালা কে গো ময়না? ওটা গরু নাকি ছাগল?”
মাইরা মিলার মাথায় একটা চাটি মেরে বলে,____”তুই উনাকে গরু ছাগল বলছিস কেন? থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত….
এই থুক্কু, ইশ এটা আমার ডায়লগ নয়।”
মিলা হাসতে হাসতে মাইরার গায়ের উপর ঢলে পড়ে। কোনোরকমে বলে,___”তোর তো ছোঁয়াচে রোগ হয়ে গেল রে মাইরা। তোর বর এর থেকে ছোঁয়াচে রোগ টা এসেছে তাই না রে?”
মাইরা ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে তাকিয়ে থাকে। ইশ, সারাদিন কানের কাছে এটা শুনলে মুখ দিয়ে তো অটোমেটিক বেরোবেই। তার কি দোষ!
মিলা মাইরার হাত ধরে মাঠের একদম ফাঁকা জায়গায় গিয়ে ঘাষের উপর বসলো। মাইরাও ঘাষের মাঝে লেপ্টে বসল। পায়ের কেডস খুলে রাখলো দুই বান্ধবী। এরপর মাইরা গল্পের বইটি মেলে তাতে মনোযোগ দেয়।
মিলি মাইরার দু’হাত ধরে বলে,_____”মাইরা একটা কথা বলবো?”
মাইরা বই থেকে দৃষ্টি উঠিয়ে মিলার দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলে,___”অনুমতি নিচ্ছিস কেন? বলে ফেল।”
মিলা কৌতূহলী চোখে চেয়ে বলে,____”তোর বর আর তোর সম্পর্ক কেমন যেন আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগে। আমি ফ্রেন্ড হিসেবেই বলছি। কিছু মনে করিস না।”
মাইরা মিলার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। এই মেয়েটা তার খুব আপন। অল্প কয়েকদিনের পরিচয় হলেও কত আপন ভাবে তাকে! মাইরাও তার ব্যাপারে টুকটাক কথা এসে মিলাকে বলে। মাইরা মৃদুহেসে বলে,_____”তুই অনেক ভাগ্যবতী মিলা।”
মিলা অবাক হয়। বিস্ময় কণ্ঠে বলে,_____”আমি ভাগ্যবতী না-কি তুই ভাগ্যবতী?”
মাইরা মিলার গালে ডান হাত দিয়ে বলে,____”তোকে যে ভালোবাসবে সে সত্যিকারের ভালোবাসবে। আর ভালোবেসে কি নাম দিবে জানিস? শ্যামাবতী, শ্যামাঙ্গিনী, শ্যামাপরী। এইসব নামে অনেক ভালোবাসা মিশে থাকে।”
মিলা অবাক হয়ে বলে,___”তোর বর এর মতো বর পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। কোনো কিছু একটা চাইলে দশটা এনে দেয়। তাছাড়া তোর যত্নও তো করে। তুই-ই তো এসব গল্প করিস বসে বসে। তোর বর তোকে অনেক ভালোবাসে জানিস না তুই?”
মাইরা মিলার কথা উড়িয়ে দিয়ে বলে,____”সেটা আবার কি? খায় না মাথায় দেয়?”
মিলা বিরক্ত হলো মাইরার হেয়ালিপনায়। বিরক্তি ভরা কণ্ঠে বলে,__”তুই এমন অবুঝ সেজে থাকিস কেন? ক্লাস সেভেন থেকে গল্পের বই পড়ে পড়ে তো প্রেমের উপর পিএইচডি করেছিস। আর জামাই এর ভালোবাসা বুঝিস না? আমি তো তোর মুখে গল্প শুনেই বুঝলাম তোর জামাই তোরে সেই ভালোবাসে।”
মাইরা পাত্তা দিল না। হাতে থাকা বইয়ের পাতায় দৃষ্টি দিলে মিলা মাইরাকে ঝাঁকিয়ে বলে,_____”তোর কি প্রবলেম বলছিস না কেন?”
মাইরা মাথা নিচু করেই বিরক্তি কণ্ঠে বলে,____”চুপ থাক তো! জ্বালাস না।”
মিলা অবাক কণ্ঠে বলে,____”তোর শিসওয়ালা কে ভালোবাসিস না মাইরা?”
মাইরা জবাব দেয় না। চুপচাপ বইয়ের মাঝে ডুবে থাকে। মিলা বিরক্ত হয়ে মাইরাকে আবারও ধাক্কা দেয়। মাইরা বিরক্ত হয়। তবে কিছু বলে না। মিলা মাইরাকে জ্বালাতেই থাকে। ধাক্কাতেই থাকে। অতঃপর বলে,_____”তোরা তো দু’জনেই দু’জনকে ভালোবাসিস তাই না! তাইলে তোদের মাঝে এমন দূরত্ব কেন রে! এই মাইরা? মাইরা?……
মাইরা হঠাৎ-ই রেগে চিল্লিয়ে বলে,_____”হ্যাঁ হ্যাঁ শিসওয়ালা কে ভালোবাসি আমি। আমি তাকে না দেখেই ভালোবাসি। সে খোড়া হলেও তাকে ভালোবাসি, কানা হলেও তাকেই ভালোবাসি। কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসে না মিলা। সে আমাকে বিয়ের পরে মানতে চাইনি। থা,প্প,ড় মারতো নিয়ম করে। সহ্য করতে পারতো না আমায়।
একটু থেমে আবারও ভেজা গলায় বলে,___”আর এখন কেন এতো দরদ কেন দেখায়? দু’দিনে এতো দরদ আসে কোথা থেকে জানিস?”
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫৭
কথাটা বলে মাইরা দু’হাতের বোরখার হাত কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে দু’হাত দেখিয়ে দেখিয়ে বলতে লাগলো,_____”এই যে এই সাদা চামড়ার জন্য। এই সাদা চামড়া পুড়ে গেলে এসব দরদ থাকবে না। টাকা আছে তাই উড়ায়। এসবকে ভালোবাসা বলে মিলা? যদি এসব ভালোবাসা হয়, তবে দু’দিনের মোহ কোনটা, বলবি?”
কথাগুলো বলতে বলতে মাইরার চোখ থেকে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। মিলা বিস্ময় চোখে বাকহারা হয়ে মাইরার দিকে তাকিয়ে রইল।