প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫২
Drm Shohag
ইরফান খুব লো ভয়েসে শিস বাজাতে বাজাতেই মাইরার পাশের ড্রাইভিং সিটে এসে বসে। মাইরা পানির পট থেকে পানি খাচ্ছিল। হঠাৎ ইরফানের শিস কানে আসতেই বেচারি ইরফানের দিকে চেয়ে কেশে ওঠে। ইরফান নিজেকে স্বাভাবিক করে ঘাড় বাঁকিয়ে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরার মুখে পানি ছিল, কেশে ওঠায় মুখ থেকে পানি ছিটকে ইরফানের মুখে গিয়ে পড়ে। মাইরা চোখ বড় বড় তাকায়। ডান হাতে মুখ চেপে ধরে। হায় আল্লাহ! এই লোকটার সাথেই শুধু অঘটন ঘটতে হয়? এমনিতেই কেমন রেগে ছিল। দাঁত ফেলার বদলে খু’ন করতে চেয়েছে। এখন তাকে কি করবে?
ইরফান রেগে বলে,
“স্টুপিট গার্ল, বড় হবে না তুমি?”
মাইরা অসহায় মুখ করে তাকায়। সে তো বড়ই। ভুল করে কিছু হয়ে গেলেও এই লোক তাকে শুধু বলতে থাকে বড় হবে না! বড় হবে না! ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
“আমি বড় হয়েছি। আপনি চশমা কিনুন। এতো বড় আমিকে শুধু ছোট দেখেন।”
ইরফান ডান হাতে তার মুখে লেগে থাকা পানির কণা মুছে নেয়। মাইরার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলে,
“আর ইউ সিইওর?”
মাইরা মাথা উপর-নিচ করে হ্যাঁ সূচক সম্মতি দেয়। ইরফান ঘাড় ঘুরিয়ে সামনে তাকায়। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে স্টিয়ারিং ঘোরায়, ঠোঁট বাঁকায় সামান্য। দৃষ্টি রাস্তার পানে রেখে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“ওকে। ভেরি সুন, প্রুভ নিয়ে নিব।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মাইরা বোকাচোখে তাকিয়ে থাকে ইরফানের দিকে। হাতে থাকা পানির পট থেকে আরও কিছুটা পানি খেয়ে নেয়। এরপর পানির পটটি ব্যাগে রেখে দু’পা সিটের উপর তুলে বসে। পায়ের মুজো খুলে, সিটে মাথা এলিয়ে শান্তিতে চোখ বুজে নেয়। একটু পর কিছু একটা ভাবতেই তড়াক করে চোখ মেলে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফানকে একা একা কথা বলতে শুনে মাইরা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। কানে ফোন নেই, দু’হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরাচ্ছে। তাহলে একা একা কার সাথে কথা বলছে? ভাবনা অনুযায়ী মাইরা একটু এগিয়ে গিয়ে ইরফানের মুখের সামনে তার মুখ নিয়ে গিয়ে দেখার চেষ্টা করে ইরফান কি করছে, বেচারি সঠিকভাবে কিছু করতে তো পারে না। ঠাস করে ইরফানের কোলের উপর মুখ থুবড়ে পড়ে যায়।
ইরফান কথা বলতে বলতে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় তার দু’পায়ের উপর উপুড় হয়ে থাকা মাইরার দিকে। মাইরা দ্রুত মাথা তুলে বলে ওঠে,
“স্যরি স্যরি!”
কথাটা বলেই দ্রুত তার সিটে ঠিক হয়ে বসতে গেলে ইরফান বা হাতে মাইরাকে টেনে তার কোলে বসায়। ড্যাশবোর্ডের উপর থেকে ফোন নিয়ে লাইন কেটে আবারও ফোন সেখানে রেখে দেয়। মাইরা ঢোক গিলে ঘাড় ঘুরিয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলে,
“স্যরি! আসলে আমি চোক চেক করছিলাম, আপনি পা’গ’ল হয়ে গেলেন কি-না!”
ইরফান সাথে সাথে বলে ওঠে, “হয়েছি।”
মাইরা অবাক হয়ে বলে, কি?
ইরফান বা হাতে মাইরার মাথা সামনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। দৃষ্টি সামনে রেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হেসে বলে,
“পা’গ’ল।”
মাইরা কি বলবে বুঝল না। এই লোকটা কি সত্যি সত্যি পা’গ’ল হলো না-কি? নিজেই নিজেকে পা’গ’ল বলছে।
ইরফান বা হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে ডান হাতে কানের ব্লুটুথ খুলে গাড়ির ড্যাশবোডের উপর রাখে। মাইরা বোকাচোখে দেখল ইরফানের ফোনের পাশে ব্লুটুথ রাখলো ইরফান। এবার বুঝল আসল কাহিনী। ধ্যাত! তার মাথায় এটা আসেনি কেন!
ইরফান মাইরার হিজাব এর নিচ দিয়ে তার বা হাত ঢুকিয়ে দেয়। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠার আগেই ইরফান মাইরার গলা চেক করে মৃদুস্বরে বলে,
“শীত লাগছে?”
মাইরা ঢোক গিলে। ইরফানের হাত তার গলায় বিচরণ করছে। মাইরা উশখুশ করে। ইরফানের হাত ধীরে ধীরে গলা থেকে নিচের দিকে নামতে নিলে মাইরা হিজাবের উপর দিয়েই ইরফানের হাত তার দু’হাতে ধরে মিনমিন করে বলে,
“কি করছেন?”
ইরফান ডান হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরায়। দৃষ্টি রাস্তায়। গম্ভীর গলায় বলে,
“অামাকে বলো নি কেন?”
মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। অনেকক্ষণ থেকে এসি চলছে। সে তো বেশিক্ষণ এসি সহ্য করতে পারেনা। কিন্তুু এই লোকটা তো ঘেমে যায়। মাইরাকে চুপ থাকতে দেখে ইরফান ধমকে বলে,
“স্টুপিট গার্ল। অ্যান্সার করছ না কেন?”
হঠাৎ ধমকে মাইরা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। ইশ! এই লোকটা আস্ত এক খ’বি’শ। শুধু ধমক দেয়। ইরফান গাড়ির এসি অফ করে, গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দেয়। এরপর ফোঁস করে শ্বাস ফেলে মৃদুস্বরে বলে,
“ছেলে দু’টো কি করেছিল তোমায়?”
মাইরা বিচার দেয়ার মতো করে বলে,
“জানেন, ওরা খুব খারাপ। আমাদের গ্রামেও এমন বখাটে ছেলে ছিল, এদের মতোই। আমি ক্লাস টেন এ ওঠার পর স্কুলেই যেতে পারতাম না ওদের জন্য। এতো ডিস্টার্ব করতো পথে। প্রায় তিন মাসের মাথায় সেই ছেলেগুলো আর জ্বালায়নি। সবচেয়ে বড় কথা ওরা কানা হয়ে গিয়েছিল।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“একটি চোখ ভালো ছিল।”
মাইরা কথার তালে বলে,
“হ্যাঁ হ্যাঁ। কিন্তুু ওরা ওই একটা চোখ দিয়েও আমাকে আর কখনো দেখেনি। ডিস্টার্ব করা তো দূর। কিভাবে যে এমন….”
বলতে বলতে মাইরা থেমে যায়। কিছু একটা ভেবে অবাক হয়ে বলে,
“আপনি কি করে জানলেন?”
ইরফান মাইরার আড়ালে একপেশে সামান্য হাসে। গলা নামিয়ে বলে,
“I know everything.”
মাইরা বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে। লোকটা তো সেই গ্রামে যেত। জানতেই পারে। এটা ভেবে মাইরা এসব ভাবনাকে বিদায় দিল। মনে পড়ল, তার তো কলেজের জুতো নেই। সে ছুঁড়ে ফেলেছে। এখন কলেজে কি পরে আসবে? ঘাড় বাঁকিয়ে ইরফানকে দেখে আবদার করে বলে,
“আমাকে এক জোড়া জুতো কিনে দিবেন?”
ইরফান আড়চোখে একবার তাকায় মাইরার দিকে। মাইরা উত্তরের অপেক্ষায় চেয়ে আছে। ইরফান ছোট করে বলে,
“দিব।”
মাইরার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
প্রায় ২০ মিনিটের মতো গাড়ি ড্রাইভ করে ইরফান একটি ‘শু স্টোর’ এর সামনে গাড়ি সাইড করে। মাইরা ইরফানের বুকে ডান গাল ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ইরফান বেশ কিছু সময় চুপচাপ বসে রইল। ডান হাতে মাইরার মুখটা উঁচু করে ধরে। মাইরা ঘুমের ঘোরে একটু কেঁপে উঠে আবারও গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। ইরফান মাইরার ঠোঁটের নিচে ডান হাতের বুড়ো আঙুলের সাহায্যে আলতো চাপ দেয়। মাইরা শব্দ করে শ্বাস ফেলে। চোখেমুখে বিরক্তির আভা ফুটে ওঠে। ইরফানের ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম হাসির রেখা। মৃদুস্বরে বলে, “মাই বার্ডফ্লাওয়ার।”
ইরফান মাইরাকে ড্রাইভিং সিটে বসিয়ে দেয়। এরপর মাইরার দিকে কিছুটা ঝুঁকে মাইরার মাথার হিজাব আলগা করে দিয়ে মাইরাকে ভালোভাবে রেখে গাড়ির ডোর শব্দবিহীন লাগিয়ে দেয়। এরপর শু স্টোরের দিকে এগিয়ে যায়।
মাইরার কলেজে পরার জন্য চার জোড়া ক্যানভাস শু, চার জোড়া স্নিকার্স শু, আর চার জোড়া অক্সফোর্ড শু চুজ করে নিয়ে নেয় ইরফান। এরপর ‘শু স্টোর’ ঘুরে ঘুরে চার জোড়া বুটস, চার জোড়া লোফার শু, পাঁচ জোড়া পাম্প শু মোট ২৫ জোড়া শু নিয়ে নেয়। এরপর আবারও চোখ বুলিয়ে ব্ল্যাক কালার এর আরও পাঁচ জোড়া শু নিয়ে নেয়। এরপর ইরফান শু গুলোর বিল মিটিয়ে একজন লোক দ্বারা সবগুলো শু গাড়ি পর্যন্ত আনিয়ে নেয়। ইরফান গাড়ির ডিকি খুলে দিলে লোকটি সবগুলো জুতোর বক্স ডিকির ভিতর রেখে দেয়।
ইরফান আর এক সেকেন্ডও সময় নষ্ট না করে দ্রুত পায়ে গাড়ির ডোর খুলে মাইরাকে দু’হাতে আগলে নিয়ে সে সিটে বসে ঘুমন্ত মাইরাকে তার কোলে বসালো। মাইরা নড়েচড়ে আবারও ঘুমে তলিয়ে যায়।
যিনি জুতোর বক্সগুলো ইরফানের ডিকিতে তুলে দেয়, তিনি জানালার কাছে এসে শব্দ করে কিছুটা রেগে বলে,
“আজব ভাই তো আপনি! টাকা না দিয়ে..
কথার মাঝেই ইরফান জানালার ফাঁক দিয়ে তার ডান হাত বাইরে বের করে লোকটির কলার থেকে আরেকটু নিচের শার্ট এর অংশ চেপে ধরে রাগান্বিত চোখে তাকায়। কণ্ঠ নিচু করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“গলায় এতো জোর কেন? দেখছিস না ও ঘুমাচ্ছে?”
লোকটি অদ্ভুদভাবে তাকায় ইরফানের দিকে, দৃষ্টি ঘুরিয়ে মাইরার দিকে তাকালে ইরফান রেগে বলে,
“বাস্টার্ড চোখ নিচে, আদারওয়াইজ চোখ তুলে নিব।”
ইরফানের কণ্ঠ খুবই ক্ষীণ তবে কঠোর শোনায়।
লোকটি এ পর্যায়ে একটু ভয় পায়। চোখ সরিয়ে নেয় দ্রুত মাইরার থেকে। মাইরা নড়েচড়ে উঠলে ইরফান লোকটির শার্ট ছেড়ে মাইরার দিকে তাকায়। লোকটি এবার নরম কণ্ঠে বলতে নেয়, “স্যার আমার…
ইরফান ডান হাত উঁচু করে লোকটিকে থামিয়ে দেয়। লোকটি থেমেও গেল। এতক্ষণে এইটুকু বুঝেছে ইরফান খুব বেশি সুবিধার নয়। ইরফান মাইরাকে শান্ত হতে দেখে তার ওয়ালেট থেকে একটা হাজার টাকার নোট লোকটির দিকে বারিয়ে দেয়। ভদ্রলোক ভদ্রতার সহিত বলে,
“স্যার খুচরো নেই।”
ইরফান মৃদুস্বরে বলে, “পুরোটা রাখো।”
এরপর গাড়ির গ্লাস উঠিয়ে দেয়। গাড়ির এসি ছেড়ে দেয়। এরপর ডান হাতে মাইরার মুখে লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে দেয়। বা হাতে মাইরার কপাল কিছুটা উঁচু করে গলার ভাঁজে লেগে থাকা ঘাম মুছে দেয়।
মাইরা ঘুমের ঘোরে এতো নড়াচড়া পেয়ে ভীষণ বিরক্ত হয়। চোখমুখে বিরক্তির ভাঁজ। ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে ডাকে, ‘শিসওয়ালা?
ইরফান সাথে সাথে প্রতি উত্তর করে, “বলো বার্ডফ্লাওয়ার।”
মাইরা অস্পষ্ট স্বরে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে আওড়ায়, “তুমি আমার শিসওয়ালা।”
ইরফান কেমন অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকায় মাইরার দিকে। ইরফানের কেমন অস্থির লাগলো মাইরার মুখে তুমি ডাক শুনে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মাইরার শুকনো ঠোঁটজোড়ায় একটা গাঢ় চুমু আঁকে। মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফান দু’হাতে মাইরাকে তার বুকে চেপে ধরল।
মাইরা ঘুমে বিভোর। ইরফান ঠোঁট চওড়া করে হাসে। মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“yeah, Birdflower, I am only yours, the whistler. [হ্যাঁ বার্ডফ্লাওয়ার, আমি শুধু তোমারই শিসওয়ালা।]
এরপর ইরফান সোজা হয়ে বসে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। চোখেমুখে ঘুমের বন্যা। মাইরা ইরফানকে ঝাপসা দেখে, ঘুম জড়ানো কণ্ঠে আদো আদো স্বরে বলে,
“কিছু বললেন?”
ইরফান মাইরাকে চোখ খুলতে দেখে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে গম্ভীর গলায় বলে, “নো।”
মাইরার আবারও চোখ বুজে আসে। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। তবুও কোনোরকমে নিজেকে সামলে ইরফানের বুক থেকে উঠে বসে। দুলতে দুলতে ডান দিকে ঠাস করে পড়তে নিলে ইরফান দ্রুত মাইরাকে আগলে নেয়। বা হাতে মাইরার মাথা তার বুকে চেপে মৃদুস্বরে বলে,
“স্টুপিট গার্ল, ঘুমাও।”
এরপর গাড়ি স্টার্ট দেয় ইরফান। মাইরাও আর নড়াচড়া করল না। আবারও ঘুমিয়ে গেল।
মাইরা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নেয়। এরপর বই নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে একটু আধটু পড়াশুনা করে। একটু পর পর বাগানের দিকে তাকায়। যেখানে ইরফান কতভাবে যে ব্যয়াম করল সেই ঘণ্টাখানেক হলো। মাইরা দুই মিনিট বইয়ের দিকে তাকিয়েছে, দশ মিনিট ইরফানকে দেখেছে। কিছুক্ষণ পর ইরফানকে আর দেখতে না পেয়ে ঘরে চলে আসে। হঠাৎ মনে পড়ে তার কলেজের জুতো কেনা হয়নি। ঘরে এসে ইরফানকে না দেখে হতাশ হলো। তাহলে কি তার আজ কলেজ যাওয়া হবে না? ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে রিতার সাথে দেখা হয়। মাইরা রিতার হাত ধরে বলে,
“চলো রিতা আপু, আজ আমরা সারাদিন গল্প করি। আমার কলেজ যাওয়া হবে না।”
!
কেন?
!
আমার জুতো নেই। তোমার ইরফান ভাইকে কিনে দিতে বলেছিলাম। দেয়নি। কিপ্টা লোক। একজোড়া জুতোই তো চেয়েছি।
মাইরার কথায় রিতা হেসে ফেলল। মাইরার হাত ধরে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে একটা নতুন জুতোর র্যাকের সামনে দাঁড় করিয়ে বলে,
“এই পুরো র্যাক ভর্তি জুতো। তুমি কালকে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ায় দেখতে পারোনি।”
মাইরা জুতোর র্যাক খুলে দেখল, আসলেই এইটা ভর্তি জুতো। বেশ কয়েকটা বক্স চেক করে অবাক হলো। রিতাকে সহ আরও দু’জন কাজের মেয়ে সহ মাইরা, সবাই যে যে কয়টা পারলো, হাতে হাতে করে ইরফানের ঘরে নিয়ে যায়। ইচ্ছে টা মাইরার। সে সবগুলো এখন পরে পরে দেখবে। মেঝেতে সব রাখা হলে মাইরা সবগুলো জুতো বক্স থেকে বের করে। বক্সগুলো এক সাইডে রেখে সব গুলো জুতো সাজিয়ে রাখল। এতোগুলো জুতো একসাথে দেখে তার মনে হচ্ছে সে হকারি করতে নেমেছে। শুধু এটা ঘর না হয়ে রাস্তা হলেই একদম মিলে যেত। মাইরা মাথায় হাত দিয়ে জুতোগুলোর সামনে বসে আছে। পুরো ৩০ জোড়া জুতো। এতোগুলো জুতো কার জন্য কিনেছে?
ভাবনা রেখে মাইরা একটা একটা করে জুতো ট্রাই করতে লাগলো। প্রতিটা জুতো পরে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তিন ধরনের জুতো, যেগুলো কলেজের জন্য। বাকিগুলো এখানে ওখানে পরার জুতো। মাইরা এক জোড়া জুতো পরে আয়নার সামনে স্টাইল করে হাঁটছে। পরনের ওড়নাটা খুলে রাখলো, এটা ডিস্টার্ব করছে। চুলগুলো খোপা করে নিলেও হাঁটাহাঁটির ঠেলায় খুলে গিয়েছে। মাইরা জুতো পরে র্যাম শো এর মতো করে হেঁটে হেঁটে আয়নার সামনে নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখছে। মুখে হাসি।
ইরফান ঘরের দরজার সামনে বেশ অনেকক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে আছে। মাইরার কার্যকলাপ নিশ্চুপ হয়ে দেখছে। মাইরা ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখছে। এখানে কালো জুতোর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মাইরার সবগুলো জুতোই ভীষণ পছন্দ হয়েছে। লাস্ট জুতো চেঞ্জ করে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। আবারও কোমড় এদিক-ওদিক করে হাঁটে। ইরফান দু’হাত আড়াআড়ি ভাবে বুকে গুঁজে মাইরাকে সূক্ষ্ম চোখে পরোখ করে। মাইরার ঢং করে হাঁটা দেখে বেশ কয়েকবার অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটেছে।
মাইরা লাস্ট জুতো পরে কোমড়ে বা হাত রাখে। ডান পাশ আয়নার দিকে হয়ে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে একটু হাঁটে। এরপর চুলগুলো ঝাড়া দেয়ার মতো করে ডান দিকে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়। দৃষ্টি পিছন দিকে চলে যায়। দরজায় ইরফানকে দেখে মাইরার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। দ্রুত পিছন ফিরে জিহ্বায় কা’ম’ড় দেয়। চোখমুখ খিঁচিয়ে নেয়।
ইরফান ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে।
মাইরা দ্রুত জুতো খুলে পিছু ফিরেই দৌড়ে গিয়ে ওড়না টা গায়ে জড়িয়ে নেয়। এখন কি করবে? সব মানসম্মান শেষ। এই লোকটা এসেছে তাকে একবার বলেওনি। পিছু ফিরলে ইরফানকে তার কাছে দেখে আবারও চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ঘাড় ঘোরাতে নিলে ইরফান মাইরাকে তার দিকে ফিরিয়ে দাঁড় করায়। মাইরা মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে,
“আসলে আমি দেখছিলাম..
থেমে যায়। তার কি যে ল’জ্জা লাগছে! একটু পর নিজেকে সামলে চোখ তুলে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান গম্ভীর চোখে মাইরার দিকেই চেয়ে। দু’জনের চোখাচোখি হয়। মাইরা মিনমিন করে প্রশ্ন করে,
“এতোগুলো জুতো কার জন্য কিনেছেন?”
ইরফান সাথে সাথে উত্তর করে,
“যাস্ট ফর ইউ।”
মাইরা অবাক হয়ে বলে,
“এতোগুলো কিনেছেন কেন?”
ইরফান মাইরার কপালের বাম পাশ থেকে ডান পাশে বুড়ো আঙুল আলতো হাতে ঘোরায়। মাইরার চোখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“মাই উইশ! পছন্দ হয়েছে?”
মাইরা কথার তালে খুশি হয়ে বলে,
“ভীষণ!”
কথাটা বলে কেমন যেন অস্বস্তিতে পড়ে যায় মেয়েটা। মাথা নিচু করে নেয়।
ইরফান সূক্ষ্ম হেসে ছোট করে বলে, “গুড গার্ল।”
এরপর উল্টো ঘুরে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। ছোট করে একটুখানি শিস বাজায়।
মাইরার বুক ধড়ফড় করে। তার প্রিয় শিস।
ইরফানের উম্মুক্ত ফর্সা ঘামযুক্ত পিঠটার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইরফানকে তার সবভাবেই খুব ভালো লাগে। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি লেগে।
ফারাহ ভার্সিটিতে পা রেখে এদিক-ওদিক চোখ ঘুরিয়ে শুদ্ধকে খোঁজে। মেয়েটার গায়ে হালকা জ্বর। গতকাল শুদ্ধ তাকে ভুল বুঝেছে। এরপর থেকে ফারাহ কতগুলো যে কল করেছে শুদ্ধকে। শুদ্ধর কোনো রেসপন্স পায়নি। গতকাল ভার্সিটি আসতে পারেনি, জ্বর বেড়েছিল খুব। আজ একটু কম লাগছে। যদিও তার মা আসতে নিষেধ করেছিল, সে শোনেনি। শুদ্ধকে সে নিজে থেকে কল দিতো না সেভাবে। তাদের এই অনুভূতির একদম প্রথম প্রথম ফারাহ দিনে হিসাব ছাড়া কল করতো শুদ্ধকে এটা ওটার বাহানায়। শুদ্ধ প্রথম দিকে তাকে ভীষণ এভোয়েড করতো। কথাটা মনে আসতেই চোখের কোণে জলকণার আবির্ভাব হলো।
মাথা নিচু হাঁটতে লাগলো। সেই দিনের কথাগুলো ভাবলে হাসি পায়। ভীষণ পা’গ’লামি করতো শুদ্ধর সাথে একবার কথা বলার জন্য। এরপর যখন একটু আধটু বুঝতে শুরু করেছিল শুদ্ধকে, তখনই মিশকার জন্য শুদ্ধ তাকে থাপ্পড় মারলো। এরপর থেকে ফারাহ’র অভ্যেস বদলে যায়। পা’গ’লা’মির লাগাম টানে। শুদ্ধ তাকে সবসময় অন্য মেয়েদের নিয়ে নয়তো তাকে তিরস্কার করে কথা বলতো। কিন্তুু কালকের মতো এতোটা এভোয়েড কখনো করেনি।
কোথা থেকে শাহেদ দৌড়ে এসে ফারাহ’র পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“কি রে? কখন আসলি?”
ফারাহ মাথা তুলে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“তুই আমার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবি।”
শাহেদ অসহায় মুখ করে বলে,
“আমি আবার কি করলাম?”
তোর জন্যই তো শুদ্ধ ভাই..
থেমে যায় ফারাহ। দূর থেকে নুসরাত দৌড়ে এসে ফারাহ’র পাশ থেকে বলে,
“আরে শুদ্ধ দুলাভাই খষ্ট পায়। তিনি খষ্ট পেলে আমাদের ফারাহ বেবিও খষ্ট পায়। বুঝিস না?”
ফারাহ রেগে তাকালো নুসরাতের দিকে। কিছু না বলে ধুপধাপ পা ফেলে তার ক্লাসরুমের দিকে যায়। সাজিদ শাহেদ এর দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই মেয়েদের গায়ের উপর পড়িস কেন? তোর জন্য ওর সাথে শুদ্ধ স্যারের ঝামেলা হচ্ছে।”
নুসরাত আর শাহেদ একসাথে বলে ওঠে,
“এই যে আসছে আমাদের মহৎ, ভদ্র, সুশীল, বিদ্যাসাগর কালা মানিক।”
সাজিদ বিরক্ত হয়ে তার ক্লাসের দিকে পথ ধরে। নুসরাত আর শাহেদ একসাথে হেসে ওঠে।
ফারাহ’র মন খারাপ। আজ শুদ্ধর ক্লাস নেই। কখন ক্লাস শেষ হবে, সে শুদ্ধর সাথে কথা বলবে। ছটফটানি মন নিয়ে মেয়েটা প্রথম ক্লাস শেষ করল। এরপর কোনোদিকে না তাকিয়ে দ্রুত ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে যায়। পিছন থেকে তার ফ্রেন্ডের ডাক শুনলো না। ফিরেও তাকালো না।
ফারাহ আশেপাশে চোখ বুলায়। মূলত শুদ্ধকে খুঁজছে। হাঁটতে হাঁটতে শুদ্ধর অফিস রুমের দিকে চলে এসেছে। শুদ্ধ তার অফিস রুমের দিকে হেঁটে যাচ্ছিল। ফারাহ এক প্রকার দৌড়ে শুদ্ধর পিছনে গিয়ে ডাক দেয়, “শুদ্ধ ভাই?”
শুদ্ধর পা থেমে যায়। তবে পিছু ফিরলো না। ফারাহ আবারও অপরাধীর ন্যায় বলে,
“শুদ্ধ ভাই, আমি স্যরি!”
শুদ্ধ পিছু ফিরে তাকায়। রেগে বলে,
“এখান থেকে যাও ফারাহ। এটা তোমার বাসা নয়, এটা ভার্সিটি।”
ফারাহ অসহায় কণ্ঠে বলে,
“শুদ্ধ ভাই আমার কথাটা…”
শুদ্ধ ধমক দেয়, “ফারাহ, আমি কিন্তুু থাপ্পড় দিয়ে দিব যেকোনো টাইমে। এখান থেকে যাও।”
ফারাহ’র চোখজোড়ায় জলকণা চিকচিক করে। সে মানলো না। দু’পা এগিয়ে এসে ভাঙা গলায় ডাকে,
“প্লিজ শুদ্ধ ভাই একবার..”
শুদ্ধ এবার আগের চেয়েও জোরে ধমক দেয়,
“ফারাহ যাবে তুমি, নাকি মার খাবে?”
ফারাহ মাথা নিচু করে নেয়। শুদ্ধ ফারাহকে এখনো এখানে দেখে আবারও ধমকে বলে,
“ফারাহ তুমি একটা বে’য়া’দ’ব নারী, বুঝেছ? যাও এখান থেকে।”
ফারাহ চোখে টইটুম্বুর পানি নিয়ে মাথা তুলে তাকায়। কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিলে শুদ্ধ এবার বেশ কড়া একটা ধমক দেয়। ফারাহ কেঁপে ওঠে। শুদ্ধ তার অফিস রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা আটকে দেয়।
ফারাহ মাথা নিচু করে বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। শুদ্ধ যদি দরজা খুলে সেই আশায়। কিন্তুু শুদ্ধ দরজা খুললো না। ফারাহ নিরব অশ্রু সাথে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে ভার্সিটির মাঠের এক কোণায় নিরিবিলি একটা জায়গায় বসে।
কিছুক্ষণের মাঝে ফারাহ’র পাশে নুসরাতে এসে বসে। অবাক হয়ে বলে,
“এখানে একা কি করছিস? তোর যে ক্লাস ছিল।”
ফারাহ মাথা নিচু করে বিরক্ত হয়ে বলে,
“আমি এই স্যারের ক্লাস করি না।”
!
কেন?
!
কারণ এই সৌভিক স্যার একটা বে’য়া’দ’ব।
নুসরাত অবাক হয়ে বলে, “কেমনে জানলি? দেখতে তো ভালোই লাগে।”
!
ভেতরে ভেতরে কালো তে ভরা।
সৌভিক স্যারকে ফারাহ’র একদম পছন্দ নয়। একদিন তাদের বাড়ি গিয়েছিল ওই সৌভিক। তাকে বাজে কথা বলেছিল। শুদ্ধ সেদিন রেগেছিল খুব। তখন ফারাহ চিনতো না এই স্যারকে। কারণ তাদের ক্লাস নিতো না তখন। পরে তার ভাইয়ের থেকে এই সৌভিক স্যারের ব্যাপারে শুনেছিল।
নুসরাত ফারাহ’র কাঁধে হাত দিয়ে বলে,
“এভাবে কাঁদছিস কেন?”
ফারাহ’র চোখ থেকে আবারও পানি গড়িয়ে পড়ে। নাক টেনে কালকের শুদ্ধকে থাপ্পড় মারার ঘটনা বলে। শুদ্ধ তার সাথে কথা বলছেনা সেসব বলে। নুসরাত একহাতে ফারাহকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আরে বাবা! এতো কান্নার কি আছে? সবার-ই একটু আধটু ঝামেলা হয়। তাই বলে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে হবে? এমনি ঠিক হয়ে যাবে। শুদ্ধ স্যার এমনিতেও ভালোই আছে।”
ফারাহ নাক টেনে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,
“তুই শুদ্ধ ভাইকে ভালো বলছিস কেন?”
নুসরাত গায়ে হাওয়া খাওয়ার ভঙ্গি করে বলে,
“নিতে যাচ্ছিনা তোর জামাইকে। রিলাক্স ফারাহ বেবি।”
ফারাহ কান্নামাখা গলায় বলে,
“শুদ্ধ ভাই আগে কখনো এমন করেনি। আমি ইচ্ছে করে থাপ্পড় দিইনি, সত্যি!”
নুসরাতের মায়া লাগলো। ফারাহকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
“একটু রেগে আছে। ঠিক হয়ে যাবে। কান্না অফ কর তো!”
শুদ্ধ চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে হঠাৎ-ই হেসে ফেলল। এই ফারাহ’র ত্যাড়ামি এভাবে ছুটবে জানলে কত আগেই এসব ডোজ দিত! কি সাংঘাতিক কাজ করেছে! তাকে থাপ্পড় মেরেছে। এসব মানবে না তো! বউ কেন মারবে? শুদ্ধর মেজাজ বেশ ভালো চড়া ছিল। ফারাহ’কে কাঁদতে দেখে একটু ঠাণ্ডা হয়েছে। পকেট থেকে ফোন বের করে ফাইজকে কল করে। রিসিভ হলে শুদ্ধ ডেকে ওঠে,
“দোস্ত!”
!
বল?
!
কই তুই?
!
কাজে এসেছি।
শুদ্ধ অবাক হওয়ার ভান করে বলে,
“কাজি ডাকতে গিয়েছিস? ওয়াও! হাউ কিউট শা’লা!
অতঃপর লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলে,
কি দুষ্টু রে তুই! যেই বললাম তোর বোন ওর ভার্জিনি ঘেটে নেয়ার জন্য কেঁদেকেটে অস্থির। ওমনি পরেরদিনই ভাই হয়ে বোনের কান্না সহ্য করতে না পেরে, বোনের ভার্জিনিটি নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছিস। তোর মতো ভাই তো ঘরে ঘরে দরকার সোনা।”
ফাইজ রেগে বলে,
“এই বে’য়া’দ’ব আমি ফারাহ’র বড় ভাই।”
শুদ্ধ হাসি হাসি মুখ করে বলে,
কি কিউট বড় ভাই রে তুই! শা’লা হিসেবে তো আরও ভেরি ভেরি কিউট! আমাকে শা’লা বানানোর জন্য কি সুন্দর উঠে পড়ে লেগেছিস!
আমার তো বিয়ের শেরওয়ানি বানানো হয়নি। সোনা। তোর বোন আমাকে শার্ট প্যান্ট পরে বিয়ে করবে?”
ফাইজ হতাশ! এই বে’য়া’দ’ব কোথা থেকে উঠে এসেছিল?
শুদ্ধ এবার কিছুটা সিরিয়াস হওয়ার ভান করে বলল,
“সুন্দর দেখে একটা কাজি আনিস বুঝলি? কাজি টাক হলে কিন্তুু বিয়ে করব না। ওর হাওয়া লেগে যদি আমি টাক টুক হয়ে যাই। তখন আবার আরেক জ্বালা!”
ফাইজ ওপাশ থেকে হেসে ফেলল। অতঃপর বলে,
“তোর বিয়েতে আমি টাক কাজিই খুঁজে খুঁজে আনবো। শা’লা বান্দর।”
শুদ্ধ ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে থাকে। অতঃপর বলে,
বলছি, তোর বোনকে একটু স্যাড ছঙ পাঠা তো!
কেন?
!
আরে তোর বোনের ঘাড়ের ত্যাড়া রগে একটু টান দিয়েছি। বেচারি কষ্ট পাচ্ছে। তোর বোনটার কি কষ্ট! ওকে একটু স্যাড ছঙ পাঠা সোনা।
ফাইজ রেগে বলে,
“এই বে’য়া’দ’ব তুমি আবার আমার বোনের পিছে লাগছিস? ওকে কিন্তুু এবার আমি সত্যি সত্যিই বিয়ে দিয়ে দিব আরেক জায়গায়।”
শুদ্ধ চেয়ারে হেলান দিয়ে আফসোসের সুরে বলে,
“ইনায়া টার জন্য সেই কষ্ট হচ্ছে জানিস সোনা! তোর পা’ছা’র মানচিত্র পাল্টে দিলে বেচারিটা কতই না কাঁদবে! নতুন নতুন জামাইয়ের এই হাল আমার বোনটা কি করে মেনে নিবে!”
ফাইজ ওপাশ দাঁত কিড়মিড় করে। শুদ্ধ হেসে বলে,
“পদ্ধতি টা কি বর্ণনা দেয়া শুরু করব?”
ফাইজ কল কেটে দেয়। শুদ্ধ এপাশ থেকে শব্দ করে হাসে। একটু পর থামে। ফারাহ’র সাথে এভাবে কথা বলে খারাপ লাগছে। কিন্তুু এই মেয়েটাকে সোজা করতে হবে। বিড়বিড় করে,
“কত জ্বালাইলা ফারাহ পাখি! এবার একটু তুমিও জ্বলে যাও। আমি সুযোগ বুঝে উপর থেকে পানি ছিটিয়ে দিব। সামিয়াটা আসলেই বহুত ভালো! কিন্তুু ওর প্রতি তো বোনের ফিলিংস আসে!”
কথাগুলো বলে নিজেই হেসে ফেলল। ইরফান আর অন্তরার ব্যাপারটা আজ কিছুটা অনুধাবন করল।
ভাবুক ভঙ্গিতে বলে,
“ফিলিংস ব্যাপার টা অদ্ভুদ! হুট করে কার প্রতি যেন এসে যায়! শা’লা আমাদের মনটাও বেঈমানী করে। আমাদের খবর না দিয়ে হুট করে একজনের উপর পিছলা খায়।”
চোখ বুজে কপালে আঙুলে টোকাতে টোকাতে বিড়বিড় করে,
“আমার এক পিছ ফারাহ পাখি, কত ভালোবাসি গো তোমায়!”
ফারাহ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে ভার্সিটির গেইটের সামনে। ডেইলি শুদ্ধ তাকে ডাকে। কিন্তুু আজ ডাকলো না। বরং একবারও তাকালো না ফারাহ’র দিকে। ফারাহ’র চোখ আবারও ভিজে যায়। সে আবারও শুদ্ধর দিকে এগিয়ে গেলে শুদ্ধ তার আগেই তার গাড়িতে উঠে বসে। ফারাহকে সরাসরি এভোয়েড করল। একটুও সময় নষ্ট না করে শুদ্ধ গাড়ি স্টার্ট দেয়। সামনের আয়নায় রাস্তার পাশে দাঁড়ানো ফারাহকে দেখে একটু হাসে। পকেট থেকে ফোন বের করে ইরফানকে বলে, ফারাহ কে নিয়ে তাদের বাড়ি যেতে।
ফারাহ বেশ অনেকক্ষণ চুপ করে সেখানে দাঁড়িয়ে রইল। এরপর উল্টো পথে একা একা হাঁটতে থাকে। মাথা নিচু। একটু পর পর চোখের পানি মুছে নেয়। মাথা কেমন যেন ঘুরছে। জ্বর বেড়েছে হয়তো। বেশ অনেকক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ-ই ফারাহ’র হাত ধরে কেউ জোরে টান দেয়। ফারাহ দ্রুত মাথা তুলে মাইরাকে দেখে অবাক হয়। মাইরা ভীত কণ্ঠে বলে,
“কিভাবে হাঁটছিলে আপু? এক্ষুনি তোমাকে ওই গাড়িটা মেরে দিচ্ছিল!”
ফারাহ দ্রুত চোখ মুছে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করল। অতঃপর বলে,
“তুমি এখানে?”
মাইরা পিছন দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে,
“ওইতো আমার কলেজ। তুমি এইদিকে এসেছ যে!”
ফারাহ মৃদুস্বরে বলে,
“এমনিই।”
মাইরা ফারাহ’র চোখমুখ লাল দেখল। ফারাহ’র হাত ধরলে অবাক হয়ে বলে,
“আপু তোমার গায়ে তো জ্বর!”
ফারাহ মাথা নেড়ে বলে,
“প্রবলেম নেই।”
মাইরা আশেপাশে তাকালো। ইরফান যে কই! ভাবলো এগিয়ে যাওয়া যাক! অতঃপর ফারাহ’র হাত ধরে বলে,
“আসো আপু। উনি এক্ষুনি চলে আসবে। তোমাকে রেখে আসবে, এসো।”
ফারাহ নিষেধ করল না। ফাইজ আজ বাসায় নেই। শুদ্ধ তো নিয়ে গেল না। ইরফান তার বড় ভাইয়ের মতোই। উল্টে সে ইরফানকে বললেই ইরফান তাকে পৌঁছে দিবে।
মাইরা রাস্তার ডান পাশে, বা পাশে ফারাহ। মাইরা সামনের দিকে এক পা রাখতেই হঠাৎ জোরেসোরে এক ধাক্কা খেয়ে রাস্তার মাঝে পড়ে যায়। ফারাহ চোখ বড় বড় করে তাকায়। দ্রুত মাইরার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে মাইরার কাঁধ ধরে বলে,
“মাইরা ঠিক আছো?”
মাইরা চোখ খিঁচে নিয়েছে। হাঁটুতে আর হাতের তালুতে বেশ ব্য’থা পেয়েছে। সাথে কোমড়েও মনে হয় ভালোই ব্য’থা পেয়েছে। বেশ অনেকটা বেগ পুহিয়ে দু’হাত পিচঢালা রাস্তা থেকে তুলে বসে।
নাছিম দ্রুত গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তায় মাইরাকে দেখে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। বিচলিত কণ্ঠে বলে,
“স্যরি স্যরি বার্বি ডল! অনেক ব্য’থা পেয়েছ না-কি?”
পরিচিত কণ্ঠ পেয়ে মাইরা মাথা তুলে তাকায়। নাছিমকে দেখে বুঝল এই লোকের গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে সে পড়েছে। বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“না আঙ্কেল। খুব আরাম পেয়েছি।”
নাছিম তব্দা খেয়ে চেয়ে আছে। অদ্ভুদভাবে আওড়ায়, “আঙ্কেল?”
মাইরা নছিম এর এক্সপ্রেশন দেখে মাথা নিচু করে একটু হাসলো। এই লোকটাকে তার বরাবরই বিরক্ত লাগে। কেমন অদ্ভুদ নামে ডাকে।
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫১
ফারাহ বোকাচোখে একবার মাইরার দিকে তাকায়, আরেকবার নাছিম এর দিকে।
মাইরা একা একা উঠতে নিলে নাছিম নিচু হয়ে মাইরাকে ধরতে চায়, সাথে বলে,
“আমি তোমাকে হেল্প করছি বার্বি ডল।”
মাইরা কিছু বলার আগেই ইরফানের শক্ত কণ্ঠ ভেসে আসে,
“ডোন্ট টাচ হার।”