প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫২ (২)

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫২ (২)
Drm Shohag

ইরফানের কথা শুনে নাছিমের হাত থেমে যায়। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ইরফানের দিকে তাকায়। মাইরা ফারাহ দু’জনেও তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান গটগট পায়ে এগিয়ে এসে মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। মাইরা কিছু বলল না। তার হাত পা কোমড়ের সবকিছুর অবস্থা খারাপ সে বুঝতে পারছে। ইরফান মাইরাকে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসিয়ে দেয়। বিচলিত কণ্ঠে বলে,
“কোথায় লেগেছে?”
বলতে বলতে মাইরার হাতের বোরখা গুটিয়ে দেয়। মাইরা হাত উল্টে দেখালো ইরফানকে। কনুইয়ের অংশে চামড়া উঠে গিয়েছে। ইরফান ড্যাশবোর্ডের উপর থেকে ফাস্টএইড বক্স নেয় দ্রুত। এরপর মাইরার দু’হাতে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেয়। মাইরা পিটপিট করে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে।
ইরফান তার কাজ করে মাইরার দিকে তাকিয়ে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

“আর কোথায় লেগেছে?”
মাইরা কথার তালে বলে ওঠে,
“কোমড়ে, হাঁটুতে….”
এটুকু বলেই থেমে যায়।
ইরফান মাইরার বোরখা উপর দিকে তুলতে নিলে মাইরা দ্রুত ইরফানকে আটকে বলে,
“না না না। ব্য’থা পায়নি। ভুলে বলে ফেলেছি।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাইরার দিকে। হঠাৎ-ই রেগে বলে,
“স্টুপিট! মিথ্যা বললে থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।”
মাইরা মাথা নিচু করে নেয়। সে কোন দুঃখে এই পা’গ’ল লোকটাকে এসব বলতে গেল? মাইরা মিনমিন করে বলে,
“প্লিজ, বাড়ি গিয়ে পায়ে মলম লাগাবো। ফারাহ আপু বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“সো হোয়াট?”
কথাটা বলে বোরখা উঠিয়ে মাইরা পা থেকে পায়জামা উপর দিকে ওঠাতে চায়। কিন্তুু পারলো না। মাইরার পরনে চুড়ি পায়জামা। এটা তো উপরে ওঠে না। ইরফান চরম বিরক্তির শ্বাস ফেলে বলে,
“এটা কি পরেছ?”
মাইরা রেগে বলে,
“দেখতে পাচ্ছেন না? এটা পায়জামা!”
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে মাইরার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,
“লিটল গার্ল হয়ে আমাকে রাগ দেখাচ্ছ?”
মাইরা মাথা নিচু করে মুখ বাঁকায়৷ রাগ মনে হয় শুধু এই লোকেরই আছে। আর মানুষের রাগ সব হাওয়ায় ভেসে গেছে! ইরফান পায়জামার উপর দিয়েই মাইরার পায়ে হাত রেখে গম্ভীর গলায় বলে,
“এটা খোলো।”

মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায় ইরফানের দিকে। রেগে বলে,
“আপনি তো আচ্ছা অ’স’ভ্য লোক। দেখছেন না, আশেপাশে কত মানুষ! আপনার বন্ধুও তো আছে। সবার সামনে আমাকে কাপড় খুলতে বলছেন! অ’স’ভ্য লোক একটা।”
মাইরার কথা শুনে ইরফান আশেপাশে তাকিয়ে বুঝলো ব্যাপারটা। বা হাতে ধরে রাখা ফাস্টএইড বক্স ড্যাশবোর্ডের উপর রেখে মৃদুস্বরে বলে,
“ইট’স ওকে। বাট আমি এখনো অ’স’ভ্য’তা’মির ফাস্ট স্টেপ-ই ফুলফিল করতে পারিনি।
So, I am still a gentleman.”
কথাটা বলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। মাইরা বেকাচোখে ইরফানের দিকে তাকিয়ে রয়। ইরফান গাড়ির ডোর লাগিয়ে গটগট পায়ে এগিয়ে গিয়ে ফারাহকে ছোট করে বলে,
“গাড়িতে বসো।”
ফারাহ ইরফানের কথা মেনে এগিয়ে এসে গাড়িতে উঠে বসে। এরপর ইরফান নাছিমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নাছিম মৃদুস্বরে বলে,

“বার্বি ডল…..
নাছিমের কথা শেষ করার আগেই ইরফান নাছিমের মুখ বরাবর একটা ঘুষি মেরে দেয়। নাছিম কিছুটা দুলে ওঠে। ইরফান দু’হাতে নাছিমের শার্টের কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ওকে এই নামে ডাকতে নিষেধ করেছি না? কোন সাহসে ওকে টাচ করতে যাচ্ছিলি? তোর হাত আমি ভেঙে দিব নাছিম।”
নাছিম নিরবে চেয়ে থাকলো ইরফানের দিকে। ইরফান নাছিমকে ধাক্কা মেরে আঙুল উঁচিয়ে বলে,
“লাস্ট ওয়ার্নিং করছি, ওর থেকে কোটি কোটি মাইল দূরে থাকবি, নয়তো তোকে ছাড়বো না আমি।”
নাছিম মৃদু হেসে বলে,
“সাহেল এর মতো অবস্থা করবি না-কি!”
ইরফান জ্বলন্ত চোখে চেয়ে বলে,
“ওর চেয়েও করুণ অবস্থা করব।”

নাছিম হেসে ফেলল। ইরফান এবারও রেগে গিয়ে নাছিমকে আরেকটা ধাক্কা দেয়। নাছিম হাত উঠিয়ে বলে,
“এটা তুই আমার সাথে করতে পারবি না।”
ইরফান কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। উল্টো ঘুরে তার গাড়ির দিকে যেতে যেতে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“ঠিক যেমন তুই সাহেল এর মতো অ’মানুষ হতে পারবি না।”
নাছিম অসহায় চোখে চেয়ে রইল। দৃষ্টি ঝাপসা হলো খানিকটা। বিষাদ সুরে বিড়বিড় করল,
“যদি আমি ছিনিয়ে নিতে পারতাম! তবে বার্বি ডল কি আমার হতো! ও তো তোকে চায় ইরফান। ও আমার হতো না। অ’মানুষ হলে যদি বার্বি ডলকে পাওয়া যেত, তবে আমি অ’মানুষ হওয়ার সব ক্যারেক্টার নিমিষেই আয়ত্ত করে নিতাম!”

ইরফান তাদের বাসার এরিয়ার ভেতর গ্যারেজে গাড়ি সাইড করে। প্রথমে ফারাহ গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। ইরফান মাইরার পাশের সিটের ডোর খুলে মাইরাকে কোলে নিতে গেলে মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। ইরফান রেগে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরা মিনমিন করে বলে,
“বাইরে ফারাহ আপু। বাড়িতে সবাই। প্লিজ আমি হেঁটে যেতে চাই।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“নো।”
“আমার কোমড়, পা সব ঠিক আছে তো!”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ওকে, আমি ভেঙে দিচ্ছি।”
মাইরা অসহায় কণ্ঠে বলে,
“ইইইইই নাআআআ।”

ইরফান ঝট করে মাইরাকে তার কোলে তুলে নিল। এরপর গাড়ির ডোর পা দিয়ে লাগিয়ে দেয়। বাড়ির দিকে যেতে যেতে ফারাহ’র উদ্দেশ্যে গম্ভীর স্বরে দু’টো শব্দ বলে,
“ফারাহ এসো।”
মাইরা চোখ নামিয়ে রেখেছে। কি যে অস্বস্তি লাগছে মেয়েটার!

ফারাহ, ইরফান-মাইরাকে দেখে হাসলো। ইরফান ভাই মাইরার প্রতি ভীষণ সিরিয়াস, তেমনি পসেসিভ সাথে কেয়ারিং। ফারাহ একদিনেই ব্যাপারটা খুব নিঁখুতভাবে ধরতে পারলো যেন। ওদিকে শুদ্ধ শুধু তাকে কাঁদানোর উপায় খুঁজে বেড়ায়। গত পরশু রাতে শুনলোই না তার জ্বর এসেছে। সকালে আসলো। তার হাতে ভুল করে একটা থাপ্পড় লেগেছে বলে আবারও রাগ দেখিয়ে চলে গেল। আজ সারাদিন কত এভোয়েড করল! ফারাহ’র চোখজোড়া আবারও ঝাপসা হয়। মাথা ব্য’থা করছে। জ্বর কিছুটা বেড়েছে হয়তো। ভেতরে গিয়ে একটা নাপা খাবে মনে মনে ঠিক করল।
মেইন গেট থেকে বাড়ির ভেতরে পা রাখে ইরফান। কোনোদিকে তাকায় না। গটগট পায়ে এগিয়ে যায়। তবে মাইরার চোখে পড়ল, একজন বয়স্ক মহিলা, সাথে একটি বাচ্চা ছেলে, ইনায়া আর তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি সবাই মিলে তাদের দিকেই কিছুটা অবাক নয়নে চেয়ে আছে। ল’জ্জায় মাইরার কান্না পায়। মিনমিন করে বলে,

“আপনার পায়ে পড়ি, আমায় নামিয়ে দিন। আমি হেঁটে যাবো।”
ইরফান বিরক্তি হয়। সে কিছু বলার আগেই বয়স্ক মহিলাটি ইরফানকে ডাকলে ইরফানের পা থেমে যায়। বয়স্ক মহিলাটি ধীরপায়ে এগিয়ে এসে ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“কেমন আছো দাদুভাই?”
ইরফান স্বভাবসুলভ গম্ভীর গলায় উত্তর করল,
“I am fine. You?”
বয়স্ক মহিলাটি মিষৃটি হেসে ইরফানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“I am also fine my Grandfather.”
মাইরা অদ্ভুদভাবে বয়স্ক মহিলাটির দিকে চেয়ে আছে। কেমন বিদেশি বিদেশি লাগছে। ভদ্রমহিলাটি দৃষ্টি ঘুরিয়ে মাইরার দিকে চেয়ে হেসে বলে,
“তুমিই আমার ইরফান দাদুভাইয়ের লিটল গার্ল?”
মাইরা কি বলবে বুঝলো না। তার ভীষণ ল’জ্জা লাগছে। এটা কে? পিছন থেকে তারেক নেওয়াজ ইরফানের উদ্দেশ্যে বলে,

“মাইরার কি হয়েছে?”
ইরফান মৃদুস্বরে জবাব দেয়,
“ও সিক।
এরপর সামনে দাঁড়ানো তার বাবার ফুপুর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি তোমার সাথে পরে কথা বলছি গ্রান্ডমা।”
ভদ্রমহিলা মৃদু হেসে বলে,
“সিইওর দাদুভাই।
এরপর মাইরার মাইরার গালে হাত দিয়ে বলে,
“তুমি সুস্থ হয়ে গেলে আমি আর তুমি এক দীর্ঘ আলাপ করব, কেমন?”

মাইরা এমন বিশ্রী পরিবেশে জীবনে পড়েছে বলে মনে হয় না। এতোগুলো মুরুব্বি মানুষের সামনে বরের কোলে উঠে থাকার ব্যাপারটা কেমন যেন লাগলো। তবে এই বয়স্ক মহিলাটিকে এই ব্যাপারটাকে খুবই স্বাভাবিক ভাবে নিতে দেখে মাইরা অবাক হয়েছে। ইরফানের মতো ইংলিশ বলার অভ্যাস আছে। ইরফান মাইরাকে নিয়ে বড় বড় পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।
এদিকে ফারাহকে নিয়ে ইনায়া বসায়। তারেক নেওয়াজ এর ফুপু ফারাহ’র পাশে বসে তার সাথে আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত হয়।
ইরফান মাইরাকে তার ঘরে এনে বেডে বসিয়ে দেয়। মাইরার ইচ্ছে করছে এই লোকের সব চুল ছিঁড়ে ফেলতে। ইরফান চিন্তিত কণ্ঠে বলে,

“এসব খুলে ফেলো, ফাস্ট।”
মাইরা রেগে বলে,
“আপনি একটা নি’র্ল’জ্জ, অ’স’ভ্য লোক। একে তো আমাকে সবার সামনে কোল থেকে নামালেন না। এখন আবার সব খুলতে বলছেন।”
ইরফান রেগে মাইরার গাল চেপে বলে,
“স্টুপিট গার্ল, আমাকে রাগ দেখাতে নিষেধ করেছি না? থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।”
মাইরা ইরফানকে ঠেলে সরাতে চায়। খ’বি’শ লোক একটা। ইরফান নরম করে গাল চেপে ধরেছে। মাইরারকে রেগে এমন ফোঁসফোঁস করতে দেখে ইরফান কেমন অদ্ভুদভাবে তাকালো। কিছু সময় পর ইরফান মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করে,
“What are you to me. [তুমি আমার কে?]
মাইরার রাগ পড়ে যায় ইরফানের কথা বলার ধরনে। চোখের পাতা ফেলে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান মাইরাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বলে,
“অ্যান্সার মি স্টুপিট গার্ল।”
মাইরা কি বলবে খুঁজে পায় না। এই লোক তো তাকে ২৪ ঘণ্টা স্টুপিট গার্ল বলতে থাকে। মাত্র-ই আবারও বলল। ইরফান আবারও বিরক্তি কণ্ঠে বলে,

“অ্যান্সার কর।”
মাইরা হঠাৎ-ই মুখ ফুলিয়ে বাচ্চাদের মতো করে বলে ফেলে,
“স্টুপিট গার্ল।”
ইরফান বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরার থেকে এমন উত্তর বোধয় আশা করেনি। মাইরা নিজেও বোকাচোখে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান তার বা হাত মাইরার চোখের উপর রেখে ঠোঁট প্রসারিত করে নিঃশব্দে খুব সামান্য হাসে। ডান হাতে মাইরাকে জড়িয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়। মাইরা তার চোখের উপর থেকে দু’হাতে ইরফানের হাত সরাতে চায়, সাথে কোল থেকে নামতে চায়। ইরফান মাইরার কোমড়ে রেখে হাতের বাঁধন দৃঢ় করল। বা হাতে মাইরার বাঁধা হিজাব খুলে পাশে রাখল। এরপর দু’হাতে মাইরাকে নিজের দিকে টেনে নেয়। মাইরা ইরফানের থেকে ছাড়া পেতে চায়। ইরফান মাইরার চোখের দিকে তাকিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে,
“You know, I am a gentleman. So, don’t disturb me.”

কথাটা বলে মুখ এগিয়ে নিলে মাইরা দ্রুত মাথা ডান দিকে ঘুরিয়ে নেয়। ইরফানের মুখ গিয়ে ঠেকে মাইরার গলায়। ইরফান যেমন বিরক্ত হয়, তেমন রেগে যায় তার কাজে ব্য’ঘাত ঘটায়। মেয়েটার গলার এক কোণায় সর্বশক্তি দিয়ে দাঁত বসায়। মাইরা মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে। ইরফান ভাবলেশহীন। মাইরা দু’হাতে ইরফানকে ঠেলে সরাতে চায়। একটুও নাড়াতে পারলো না ইরফানকে, না তো নিজেকে ছাড়াতে পারলো। মাইরা দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইল। কিছু সময় পর ইরফান নিজে থেকেই ছেড়ে দেয় মাইরাকে। মাইরার মুখপানে তাকায়। মাইরার চোখ বন্ধ। ইরফান মাইরার নাকের ডগায় লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম ডান হাতের বুড়ো আঙুলের সাহায্যে মুছে দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“আর কখনো ডিস্টার্ব করবে না।”
এরপর মাইরার বোরখা হাঁটুর উপরে তুলে দেয়। এরপর পায়জামা টেনে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,
“এটা খোলো।”
মাইরা ইরফানের কোল থেকে নেমে বসে। ইরফান কিছু বলল না। তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে দেখে মাইরাকে। মাইরা তার মাথা নত করে রাখে। মিনমিন করে বলে,

“প্লিজ আপনি যান। আমি লাগাতে পারবো।”
ইরফান চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
“Are you sure?”
মাইরা মাথা নিচু করেই মাথা উপর-নীচ করে সম্মতি দেয়। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“আই নো, তুমি পারবে না।”
মাইরার রাগ হয়। মাথা তুলে রেগে বলে,
“যাবেন আপনি?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে, “নো।”
মাইরা দু’হাতে তার মাথা চেপে ধরে। উফ! এই লোকটা কি শুরু করেছে? আবারও মাথা তুলে রেগেমেগে শব্দ করে বলে,

“আপনি দয়া করে যান তো অ’স’ভ্য লোক। আমার সব ঠিক আছে। আমি এক্ষুনি নাচতে পারবো। আপনি চাইলে নেচে দেখাচ্ছি। দেখাবো?”
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় মাইরার রাগান্বিত মুখপানে। নাকের পাটা ফুলিয়ে ফেলেছে। চোখ দু’টো স্বাভাবিক এর চেয়ে বড়। ফর্সা মুখ কিছুটা লাল। ইরফান বিড়বিড় করল, ‘ইন্টারেসটিং!’
মাইরা আবারও রেগে বলে,
“কি হলো কিছু বলছেন না কেন?”
ইরফান বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। প্যান্টের পকেটে দু’হাত রেখে গম্ভীর গলায় বলে,
“ওকে। স্টার্ট নাউ। কোনটাতে কমফোর্ট? Song or Whistle [শিস]?”
মাইরা থতমত খেয়ে তাকায় ইরফানের দিকে। সে তো কথার কথা বললো। আর এই লোক সত্যি সত্যি ধরে নিয়ে তাকে অপশন দিচ্ছে গানের সাথে নাচবে নাকি শিসের সাথে। সে কি পাগল না-কি! এই লোকের সামনে সে নাচলে ল’জ্জায় কয়দিন অজ্ঞান থাকবে, সেটা ভেবেই যেন তার মাথা ঘুরে উঠছে।

ইরফান উল্টো ঘুরে ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হাসলো। এগিয়ে গিয়ে টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটি মলম আর একটি ব্য’থার ওষুধ বের করে মাইরার দিকে ছুঁড়ে দেয়। এগুলো মাইরার কোলের উপর গিয়ে পড়ে। ইরফান পরনের ব্লেজার খুলে ফেলল। এরপর পরনের শার্ট খুলে ওয়াশরুমে যেতে যেতে গম্ভীর গলায় বলে,
“From today, you can get angry, permission is granted.”
[আজ থেকে তুমি রাগতে পারো, অনুমতি দেয়া হলো]
মাইরা হা করে ইরফানের কান্ডকারখানা সহ ইরফানের কথাগুলো শুনলো। মনে হচ্ছে তার খালি পেটে বদহজম হয়ে যাবে। মাইরা হঠাৎ-ই প্রশ্ন করে ওঠে,
“আপনি-ই সেই তাই না?”
ইরফানের পা থেমে যায়। পিছু ফিরে ভ্রু কুঁচকে বলে,

“হু?”
মাইরা ঢোক গিলে বলে,
“শিসওয়ালা।”
ইরফান উল্টো ঘুরলো। মাইরা হতাশ হয়। আবারও বলে,
“বলুন না? কি হয় বললে?”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে, “নো।”
মাইরা রেগে বলে,
“আপনি একটা মিথ্যাবাদী।”
ইরফান আবারও পিছু ফিরে মাইরার দিকে তাকায়। এগিয়ে এসে মাইরার কাছে দাঁড়িয়ে দু’হাত বুকে আড়াআড়ি ভাবে রেখে গম্ভীর গলায় বলে,
“You know? তুমি ঠিক কতটা স্টুপিট?”
মাইরা অবাক হয়। সে কি বলল! আর এই লোক কি বলছে!

ইরফান হঠাৎ-ই মাইরার দিকে ঝুঁকে ডান হাতে শক্ত করে মাইরার গাল চেপে ধরে। মাইরা তার দু’হাতে ইরফানের হাত সরাতে চায়। ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“স্টুপিট গার্ল, কাউকে না চিনে না জেনে তার পিছু দৌড়ানোর সাহস কোথায় পেয়েছিলে? ইভেন, তখন রাত ছিল। এসব সাহস পুষে রাখলে, থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।”
কথাগুলো বলে মাইরার গাল ছেড়ে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। মাইরা বিস্ময় দৃষ্টিতে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে।
ইরফান আবারও শক্ত কণ্ঠে বলে,
“অপুষ্টির পেসেন্ট তুমি? মুখ থুবড়ে পড়তে কেন? এসব রোগ নিয়ে বাইরে বেরিয়েছিলে কেন? ইভেন রাতে বেরিয়েছিলে। ভয়ডর নেই মনে?”

মাইরা বোবা চোখে ইরফানের পানে চেয়ে আছে। কোনোরকমে বলে,
“আপনি-ই তো ছিলেন। ভয় পাওয়ার কি আছে?”
ইরফান আবারও রেগেমেগে মাইরার গাল চেপে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
“হ্যাঁ তো! চিনতে তখন? দেখেছিলে? অন্যকেউ হলে তোমাকে পাচার করে দিত, স্টুপিট। ইচ্ছে তো করে থাপ্পড় দিতে দিতে এই গাল দু’টোর মানচিত্র চেঞ্জ করে দিতে!”
মাইরার চোখ ভরে ওঠে। সে তো জানতোই ইরফান-ই তার শিসওয়ালা। তবুও ইরফান স্বীকার করায় মাইরার চোখে আনন্দ অশ্রু ভিড় জমায়। ইরফান মাইরার চোখে পানি দেখে দ্রুত গাল ছেড়ে দিল। কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। কিছুক্ষণ আগের বলা কথা ভেবে তার কেমন যেন বিব্রত লাগলো। অতঃপর বলে,

“হোয়াট হ্যাপেন্ড? মেরেছি? স্টুপিট!
এরপর ছোট করে বলে, “ডোন্ট ক্রাই।”
কথাটা বলে দ্রুতপায়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
মাইরার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। না চাইতেও ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। ভাবনার মাঝেই রিতাকে ভাত নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভেতরে আসতে বলে। রিতা ধীরপায়ে ভেতরে এসে ভাতের প্লেট রেখে যায়।
মাইরা ধীরে ধীরে বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। মনে হচ্ছে সোজা হতে পারছে না। ভালোই ব্য’থা পেয়েছে। ওভাবেই ধীরে ধীরে বোরখা চেঞ্জ করে জামা পায়জামা পাল্টে নেয়। এরপর আয়না দেখে দেখে কোমড়ে ব্য’থায় জায়গায় মলম দিল। দু’হাঁটুতে খুব সামান্য লেগেছে। তাই ওখানে আর মলম ছোঁয়ায় না। এরপর বেডের উপর বসে ভাত খেতে শুরু করে। এরই মাঝে ইরফান ওয়াশরুম থেকে বের হয়। মাইরা তাকায় ইরফানের দিকে। দু’জনের চোখাচোখি হয়। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে চাইলে মাইরা মাথা নিচু করে নেয়। ইরফান কিছু বললো না। মাইরা মুখের খাবার গিলে নিয়ে ইরফানের উদ্দেশ্যে বলে,

“আপনি আমাকে আগে থেকেই চিনতেন বলেই আমাদের বাড়ির সামনে গিয়ে শিস বাজাতেন?”
ইরফান বিস্ময় চোখে তাকায় মাইরার দিকে। রেগে বলে,
“স্টুপিট, আমাকে তোমার বখাটে ছেলে মনে হয়? লাইক ইউ!”
মাইরা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। সে বখাটে? খ’বি’শ লোক। রেগে বলে,
“আপনি আমাকে বখাটে বললেন?”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“ইয়াহ! ইউ আর আ স্টুপিট গার্ল।
একটু থেমে বলে,
“তোমাকে চিনতাম না। ইনফেক্ট ওই বাসায় যে তুমি নামের একটি স্টুপিট মেয়ে থাকতে, এটাও জানতাম না। আদারওয়াইজ, সেই রোডের আশেপাশে যেতাম না।”
মাইরার কেন যেন রাগ হয়। ইরফান মাইরাকে তার দিকে রেগে তাকাতে দেখে মাইরার কপালে একটা টোকা দিয়ে বলে,

“পুচকি মেয়ে, চোখ নিচে রাখবে। যা বলেছি, ইট’স ট্রু। আই ডোন্ট লাইক ইউ।”
মাইরার ইচ্ছে করল তার ভাতের প্লেট এই লোকটার মুখ বরাবর ছুঁড়ে মারতে। সে ইচ্ছেকে আপাতত চেপে রাখলো। কোলের উপর থেকে ভাতের প্লেট ঠাস করে বেডের উপর রেখে দেয়। এরপর হাঁটুতে ভর দিয়ে ইরফান বরাবর হয়ে এঁটে হাতের এক আঙুল উঁচিয়ে বলে,
“এই মিস্টার, আই হেইট ইউ। শুনতে পেয়েছেন?”
ইরফান বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। এই পুচকি মেয়ে এই নিয়ে আজ সেকেন্ড বার বলল তাকে নাকি হেইট করে ও। ইরফানের একবিন্দুও হজম হয় না এটা।
রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“স্টুপিট গার্ল, আমাকে রাগিয়ো না।”
মাইরাও রেগে বলে,
“আপনি যেমন আমাকে অপছন্দ করেন, এটা আমি শুনি। তেমনি আমিও আপনাকে…
আর বলতে পারে না।

ইরফান হঠাৎ-ই মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। মাইরা ছটফট করে নিজেকে ছাড়াতে। তাকে নিয়ম করে বলবে তাকে পছন্দ করে না। আবার শুধু কাছে আসবে। ইরফান দু’হাতে মাইরাকে শক্ত করে ধরল। মাইরার জেদ চাপে। এই লোকটাকে তো সে ছাড়বে না। তাকে পছন্দ করবে না কেন? মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে। ইরফান তীব্র বিরক্তিতে কপাল কোঁচকালো। ইচ্ছে করল ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে। একটু আগেই বলেছে, ডিস্টার্ব না করতে। বাট এ তো একটা আস্ত স্টুপিট।

বেশ কিছুকক্ষণ পর ইরফান মাইরাকে ছেড়ে দেয়। মাইরা মাথা নিচু করে নেয়। ইরফান মাইরার গাল উঁচু করে ধরে। ইরফান রেগে কিছু বলতে গিয়ে জিভ গুটিয়ে নেয় মাইরার বন্ধ চোখের পাতা বেয়ে গড়িয়ে পড়া জলকণা দেখে। মাইরাকে ছেড়ে দু’হাতের আঁজলায় মাইরার মুখটা নিয়ে বিচলিত কণ্ঠে বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড? কাঁদছো কেন?”
মাইরা পিটপিট করে তার ভেজা চোখজোড়া মেলে তাকায়। বাচ্চাদের মতো করে বলে,
“আপনি আমাকে পছন্দ করেন না?”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫২

ইরফান মাইরার চোখের দিকে তাকায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। গলায় পেঁচিয়ে রাখা মাইরার ওড়না টা দু’বার ঘুরিয়ে ছুঁড়ে ফেলে। এরপর দু’হাতে মাইরাকে খানিকটা উঁচু করে মাইরার গলার নিচ বরাবর তিলটায় আলতো ঠোঁট ছুঁইয়ে সূক্ষ্ম হাসে। এরপর গলায় মুখ গুঁজে বেশ কয়েকবার লম্বা শ্বাস টানে। ওভাবেই মৃদুস্বরে বলে,
“Lying girl. I really don’t like you.”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫৩