প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫৩
Drm Shohag
“আমি বাংলাদেশে এসেছি।”
শুদ্ধ গড়াগড়ি খাওয়ার মতে করে হেসে বলে,____”ওগো মিথ্যাবাদী,, মোর দাদি,, আমি খাট থেকে পড়লে সব দোষ তোমার গ্রান্ড মা।”
তারেক নেওয়াজ এর ফুপু বিরক্ত হয়ে বলে,___”এই বাঁদরের ছা। আমাকে তোমার লায়ার মনে হয়?”
শুদ্ধ এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বলে,____”সত্যি এসেছ?”
“হুম।”
শুদ্ধ মাথায় হাত দিয়ে বলে,___”ফাইনালি! আমি মাকে নিয়ে আসছি। কতদিন পর আমার একমাত্র বুড়ি বউটার চাঁদ মুখখানা দেখবো! আহ! ভাবতেই আমি ল’জ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি। বলছি তুমি কি গোলাপি হচ্ছো না মাই ফার্স্ট ওয়াইফ?”
শুদ্ধর দাদি হেসে বলে,____'”ইয়েস বাবু, আমি তোমার লাল মুখ ফুটন্ত গরম পানি দিয়ে ধুইয়ে দিব ভেবেই গোলাপি হয়ে গিয়েছি।”
শুদ্ধ ভোতা মুখ করে ডাকে, “গ্রান্ড মা?”
শুদ্ধর দাদি মৃদু হেসে বলে,
“তৃণাকে নিয়ে এসো। আমি ওয়েট করছি তোমাদের জন্য।”
“ওক্কে মাই ফার্স্ট ওয়াইফ।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ধরনীর বুকে সন্ধ্যার আমেজ নেমেছে। মাইরা ইরফানের বুকে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। ইরফানের দু’হাতের বাহুবন্ধনীর মাঝে মাইরা। ইরফানের থুতনি রাখা মাইরার মাথা বরাবর। সেও ঘুমিয়েছে বউকে সঙ্গ দিতে গিয়ে। মিটিমিটি ফ্যানের বাতাস, সাথে এসি মিলিয়ে মাইরার শরীর ভীষণ ঠাণ্ডা। তবে ইরফানের উষ্ণতায় তা মাইরাকে খুব বেশি কাবু করতে পারলো না।
ইরফানের ঘুম ভেঙে যায়। ডান হাতে কপাল স্লাইড করে। দুপুরে না খাওয়া সাথে অভ্যাসগত বিকেলে এক কাপ কফি না খাওয়ার ফল। বা হাত নাড়াতে গেলে পারলো না। চোখ মেলে তাকালে দেখল মাইরা তার বা হাতের বাহুতে মাথা রেখে শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে। ইরফান বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল মাইরার মুখপানে, যেন গভীর ভাবনা ভাবছে। হঠাৎ-ই চোখ সরিয়ে নিয়ে ঘূর্ণায়মান ফ্যানটির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মাইরাকে তার বালিশে শুইয়ে দিয়ে বেড থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেল। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মাগরিবের কাজা নামাজ আদায় করল। এরপর জায়নামাজের উপর আবারও সটান হয়ে শুয়ে পড়ে। দৃষ্টি ঘুরিয়ে মাইরার ঘুমন্ত মুখপানে কেমন নির্জীব চোখে চেয়ে থাকে। ভীষণ অস্থির লাগছে। ফোনের ভাইব্রেট শব্দে শোয়া থেকে উঠে কল রিসিভ করে। ওপাশ থেকে বলে, ______”স্যার কনফার্ম করব?”
ইরফান নিশ্চুপ। বা হাত প্যান্টের পকেটে রেখে মাইরার পানে চেয়ে আছে। প্রায় মিনিট তিন পেরিয়ে গেলেও ইরফানের কোনো অ্যন্সার না পেয়ে কলের ওপাশ থেকে লোকটি আবারও ডেকে ওঠে, _______’স্যার?’
ইরফান অস্থির হয়। এসির মাঝেও কেমন ঘামছে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। মাইরার দিকে এগিয়ে গিয়ে মাইরার দিকে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। ডান কানে এখনো ফোন। বা হাতে ঘুমন্ত মাইরাকে টেনে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে। ওপাশ থেকে লোকটির আবারও ডাক আসে। ইরফানের কপালে বিরক্তির ভাঁজ। তবে কিছু বললো না। মাইরার গলায় মুখ গুঁজে শ্বাস টানে। বিড়বিড় করে,________’মাই বার্ডফ্লাওয়ার।’
কথাটা বলে আবারও চুপ হয়ে যায়। কানে এখনো ফোন। বেশ কিছুক্ষণ পর মৃদুস্বরে বলে,_______”Maybe I won’t. But ok.” [হয়তো আমি পারবো না। কিন্তুু কনফার্ম কর।
মাইরা ঘুমের মাঝেই নড়েচড়ে ওঠে। উষ্ণতা পেয়ে আরও খানিক সিটিয়ে নেয় নিজেকে ইরফানের দিকে। ইরফান কল কেটে ফোন বেডের উপর ছুঁড়ে ফেলে। দু’হাতে মাইরাকে টেনে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নেয়। গলায় ছোট ছোট চুমু আঁকে। থেকে থেকে শ্বাস টানে দীর্ঘ। চোখ বন্ধ। কিছু সময় পেরোলে ইরফান মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে, _______ “আই ডোন্ট লাইক ইউ, স্টুপিট গার্ল।”
একটু থেমে হতাশ কণ্ঠে বিড়বিড় করে,______ “Why are you so little girl?” [তুমি এতো ছোট্ট মেয়ে কেন?]
বেশ কিছুক্ষণ পর মাইরাকে ছেড়ে ইরফান বেড থেকে নেমে পড়ে৷ ঘরের কম পাওয়ারের একটি লাইট জ্বালায়। কাভার্ড থেকে শার্ট, প্যান্ট, ব্লেজার সব বের করে দ্রুত রেডি হয়ে নিল। এরপর হাতে হাতঘড়ি পরে নিল। সাদা শার্ট, কালো ব্লেজার, কালো প্যান্ট পরিহিত ইরফান নিজেকে একবার দেখল। এরপর দৃষ্টি ঘুরিয়ে আয়নায় সৃষ্ট প্রতিবিম্ব ঘুমন্ত মাইরাকে দেখল। আবারও দৃষ্টি ঘুরিয়ে আয়নার তার চোখের দিকে তাকালো, সে নিজেকে মাইরার দেয়া বর্ণনাগুলোর সাথে মেলানোর চেষ্টা করছে। তার চোখগুলো সত্যিই বিড়ালের চোখের মতো? ইরফান হতাশ হয়! এটা কি মাইরার পছন্দ নয়? তার শিস মাইরার পছন্দ, এটা তো কনফার্ম। আর কিছু কি পছন্দ নয়? ইরফান চিন্তিত হলো। তার কি ট্রিটমেন্ট করানো উচিৎ? মাইরা যে তাকে বিদেশিদের মতো বলে, কিন্তুু সে বাংলাদেশিদের মতো হবে কি করে? গায়ের রঙ কালো করে কিভাবে? চোখের মণি কালো করবে কিভাবে? লেন্স লাগাবে কি?
ইরফান এসব উদ্ভট টপিক নিয়ে ভাবছে, এসব তার খেয়ালে আসতেই চরম বিরক্তিতে চোখমুখ কোঁচকালো।
ভাবনার ইতি ঘটিয়ে কিছু ফাইল চেক করে, বেছে বেছে ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল গুলো নিয়ে ঘর থেকে বেরোতে নিলে মাইরার ঘুম জড়ানো কণ্ঠ পায়,
“কোথায় যাচ্ছেন?”
ইরফানের পা থেমে যায়। পিছু ফিরে তাকায়। মাইরা ঘুমঘুম ফোলা চোখ-মুখে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান ঘরের বড় লাইট জ্বালিয়ে দিলে মাইরা চোখ কুঁচকে নেয়। ইরফান এগিয়ে এসে মাইরার সামনে দাঁড়িয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“অফিস। তোমার কিছু লাগবে?”
মাইরা পিটপিট করে তাকায় ইরফানের দিকে। কিছু একটা ভেবে বেড থেকে নেমে বলে,_____”আমার জন্য আইসক্রিম আনবেন?”
ইরফান অবাক হয়ে বলে,____”ফ্রিজে নেই?”
মাইরা দু’দিকে মাথা নাড়ায়। অর্থাৎ শেষ। ইরফান অবাক হয়ে বলে,_____”স্টুপিট, কবে খেয়েছ সব?”
মাইরা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। এই লোকটা একটা অলসের ডিব্বা। এজন্যই তাকে ফ্রিজ এনে দিয়েছিল। মাইরা এখন বুঝেছে। ফ্রিজ না আনলে তো ডেইলি দোকান থেকে আনতে হতো, তাই ফ্রিজ এনেছে। এনেছে তো এনেছে, তিন মাসের বেশি হয়ে গেল। তো সব শেষ হবে না? ইনায়ার বিয়েতে কতজন খেয়ে নিয়েছে। সে তো খেতেই পারেনি। আর এই লোক তাকে সব খাওয়ার অপবাদ দিচ্ছে। মাইরা কিছুটা রেগে বলে,______”আপনি এক ফ্রিজ আইসক্রিম দিয়ে কি আমাকে পুরো জীবন চালিয়ে নিতে বলছেন? কিপ্টে লোক একটা।”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,______”স্টুপিট গার্ল।”
একটু থেমে মৃদুস্বরে বলে,_____”আবার আনিয়ে দিব। আই হ্যাভ আ ইম্পর্ট্যান্ট কোয়শ্চন। অ্যান্সার কর।”
মাইরা খুশি হয়। মাথা নেড়ে বলে,___”বলুন।”
ইরফান গলা ঝেড়ে প্রশ্ন করে,____”Do you prefer a local person or a foreign person?”
মাইরা বোকা চোখে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান মাইরার বোকা চাহনী দেখে আবারও গলা ঝেড়ে বলে,
“আই মিন, তুমি ফরেন ছেলে লাইক কর অর আমাদের দেশের ছেলে?”
মাইরা এবার ভালো করে বুঝতে পেরে সহজ মনেই উত্তর করল,____”দেশি ছেলে থাকতে বিদেশি ছেলেদের কেন পছন্দ করতে যাবো? পা’গ’ল নাকি? আমাদের দেশের ছেলেরাই অনেক সুন্দর।
একটু থেমে ইরফানের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে,__” আপনার কি বিদেশি মেয়ে পছন্দ?”
ইরফান মাইরার প্রশ্ন শুনলো না। মাইরার প্রথম কথা শুনেই তার যেমন হতাশ লাগলো, তেমনি রাগ হলো। ডান হাতে মাইরার গাল চেপে রেগে বলে,_____”স্টুপিট গার্ল, এখন থেকে বিদেশি ছেলেদের লাইক করবে, নয়তো থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।”
কথাটা বলে ইরফান মাইরার গাল ছেড়ে গটগট পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। মাইরা অদ্ভুদভাবে ইরফানের দিকে চেয়ে থাকে। বিড়বিড় করে,____’খ’বি’শ লোক। আমার দেশি ছেলে ভালো লাগে, তাতেও এই লোকের সমস্যা। খ’বি’শের দাদা একটা।’
ইরফান নিচে নেমে তার দাদির রুমে গিয়ে ডাকে,__”গ্রান্ড মা?”
ইরফানের দাদি ইরফানকে দেখে বেড থেকে নেমে আসে। ইরফানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,____”আই থিংক, বিয়ে করে তুমি অনেক শুকিয়ে গিয়েছ।”
ইরফান বিব্রতবোধ করে। ইরফানের দাদি আড়ালে মিটিমিটি হাসে ইরফানকে বিব্রত করতে পেরে। ইরফান তার দাদির ফান ধরতে পেরে স্বভাবসুলভ গম্ভীর গলায় বলে,_____”আই থিংক, তুমি এখন আমার গ্রান্ড ফাদার কে ছাড়াও অন্যের গ্রান্ড ফাদার দের দেখা স্টার্ট করেছ। দ্যটস হোয়াই, তুমি ব্লাইন্ড হওয়ার পথে।”
ইরফানের দাদি থতমত খেয়ে তাকায়। কি ধরিবাজ ছেলে! এসব রেখে বলে,____”তুমি কি তোমার ওয়াইফকে লাইক করতে শুরু করেছ?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,___ “নো।”
ইরফানের দাদি হেসে বলে,____”নো প্রবলেম। তুমি ওকে হান্ড্রেড পার্সেট লাইক করবে। আমি ম্যানেজ করব।”
ইরফান বাইরে যেতে যেতে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,____”ওকে, ট্রাই ইট।”
মাইরা বেডের উপর গুটিশুটি হয়ে বসে আছে। তার পাশেই সেই বিদেশিদের মতো বয়স্ক মহিলাটি বসে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। কথা বলার মাঝে ইংলিশ টাই বেশি বলে। ইনি তারেক নেওয়াজের ফুপু অর্থাৎ তারেক নেওয়াজ এর বাবার বোন। ইরফানের দাদা দাদি ইরফানের ছোটবেলাতেই মারা গিয়েছে। তার দাদার এই একমাত্র বোন আছে, যে কানাডায় থাকে। বয়স্ক মহিলাটি ঘরে এসে প্রথমে মাইরার সাথে এসব গল্প-ই করেছে। কিছুক্ষণ পর তিনি কল কেটে মাইরার দিকে ফিরে বসে। মাইরার গালে হাত দিয়ে বলে,____”এই যে আমার দাদুভাইয়ের বউ, আমার কথা মন দিয়ে শোনো।”
মাইরা মাথা নেড়ে মৃদু হেসে জবাব দেয়,___”জ্বি দাদিমা বলুন।”
ইরফানের দাদি মাইরার গালে হাত রেখে বলে,___”তুমি খুব সুইট একটা মেয়ে। আমার ইরফান দাদুভাইয়ের সাথে খুব মানিয়েছে। আসলে আমি আসবো আসবো করে আসতে পারছিলাম না। আমার ছোট দাদুভাই খুব অসুস্থ ছিল। সে সুস্থ হলে এদেশে আসলাম। ইরফান তোমায় মানে না শুনেছিলাম। এখানে এসে তোমাদের একসাথে দেখে খুব ভালো লাগলো।”
মাইরা অবাক হলো, ইরফানের দাদিকে একদম বাঙালিদের মতো করে কথা বলতে দেখে। যদিও বাংলাতেই বলে, তবে থেকে থেকে ইংলিশ শব্দ বলে। তবে তার সাথে কথা বলার সময় এমন করল না। বয়স্ক মহিলাটি মাইরার জামা ধরে অবাক হয়ে বলে,___”এসব জামা পরে থাকো তুমি?”
মাইরা মৃদুস্বরপ বলে,__”জ্বি।”
ইরফানের দাদি হতাশ কণ্ঠে বলে,___”তোমার শ্বাশুড়ির তো দেখি কোনো খেয়াল নেই। ছেলে এমনিতেই বউ মানে না। বউটাকে ছেলের সামনে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবে, তা না করে উল্টে তোমাকে জামা পড়িয়ে রাখে। আমার দাদুভাই তোমাকে ভালোবাসবে কিভাবে তাহলে?”
মাইরা অদ্ভুদভাবে তাকায় ইরফানের দাদির দিকে। তিনি আবারও বলেন,____”তেমার শ্বাশুড়ির এই বিয়েতে মত ছিল না। আমি সব জানি। তাই কোনো চিন্তা কর না। আমি তোমার জন্য সব নিয়ে এসেছি। আমি তোমাকে যা যা বলব, তুমি এখন থেকে সেসব করবে, বুঝেছ?”
মাইরা পিটপিট চোখে চেয়ে থাকে। ইরফানের দাদি উঠে গিয়ে তার লাগেজ থেকে অনেক বড় একটি প্যাকেট বের করল। সাথে দুটি গয়নার বাক্স। এরপর মাইরার পাশে সেসব রেখে, প্রথমে বড় প্যাকেটটির ভিতর থেকে অনেকগুলো শাড়ি বের করে। তার মধ্যে থেকে একটা কালো সিল্কের শাড়ি মাইরার কাঁধে ধরে বলে,____”বাহ! খুব সুন্দর লাগছে। এখন এটা পরে এসো যাও।”
মাইরা কি বলবে বুঝলো না। বোকার মতো একবার শাড়ির দিকে তাকায় আরেকবার বয়স্ক মহিলাটির দিকে। তিনি মাইরার গালে হাত দিয়ে বলে,___”তুমি বোকা মেয়ে না-কি! জানো না? ছেলেদের এভাবে হাতে রাখতে হয়। বাঙালি মেয়ে হয়েও দেখছি কিছুই জানো না। আচ্ছা তুমি যদিও ছোট। আমি এসব শেখানোর জন্যই এসেছি। তারেক আমাকে বিয়ের পর থেকেই আসতে বলছিল। সে যাক, এবার এসেছি। তোমাকে সব শিখিয়ে পরিয়ে তবেই কানাডায় ফিরব।”
মাইরাকে এখনো বোকার মতো চেয়ে থাকতে দেখে তিনি আবারও বলেন,____”এখন থেকে সবসময় শাড়ি পরবে। আমার ইরফান দাদুভাইয়ের কাছে কাছে থাকবে। এসব জামা আর কখনো পরবে না। শাড়ি ছেলেদের দুর্বলতা। যদিও আমার ইরফান দাদুভাই গুড বয়। তবুও ছেলেদের বিশ্বাস নেই। তাই এখন থেকে আমি যা বলব সব মেনে চলবে বুঝেছ? শাড়ি পরে সেজেগুজে থাকলে ইরফান তোমাকে নিয়ে ভাববে।”
মাইরা বোকা চোখে চেয়ে বলে,____আমি জামা পরলেও উনি আমার কথা ভাবে তো!”
ইরফানের দাদি ভ্রু কুঁচকে বলে,___তোমাকে কোলে নিয়েছিল বলে তোমার এমন মনে হচ্ছে। ও তোমাকে হেল্প করেছে। বউয়ের ভালোবাসা আলাদা। এবার যাও শাড়িটা পরে এসো।”
মাইরা কথা বাড়ালো না। চুপচাপ এখানেই শাড়িটা পরে নিল। তার অস্বস্তি হচ্ছে, ব্লাউজের হাত কাটা, আর সাইজেও কেমন ছোট ছোট, যদিও মাইরা শাড়ি দিয়ে ঢেকে নিয়েছে। মাথায় আঁচল দিয়ে কাঁধও ঢেকে নিয়েছে। ইরফানের দাদি অসন্তুষ্ট চোখে চাইলেন মাইরার দিকে। এগিয়ে এসে বললেন,_____”এভাবে পড়লে হবে না। নো প্রবলেম, আমি ঠিক করে দিচ্ছি।”
এরপর তিনি শাড়ির আঁচল কাঁধে কুচি করে পরিয়ে দিলেন। সাথে মাইরা কোমড় ঢেকেছিল শাড়ি দ্বারা, তা উম্মুক্ত করে দিয়ে ঠিকঠাক করে দিয়ে বলে,____”এবার ঠিক আছে। এভাবেই শাড়ি পরবে। বুঝেছ?”
মাইরা চোখ বড় বর করে তাকায়। অসহায় কণ্ঠে বলে,_____”দাদিমা আমায় ক্ষমা করুন। আমি এভাবে পরতে পারবো না।”
ইরফানের দাদি অবাক হয়ে বললেন,___”আরে মেয়ে, আমার ছেলের বউ তোমার চেয়ে অনেক বড়। সে এভাবে বাইরে যায়। আর তোমাকে আমি বাসায় থাকতে বলছি, এটাই পারছো না? পারতে হবে। বুঝেছ?”
মাইরার হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করল। সে পা’গ’ল না-কি! এভাবে সে ঘুরবে? অসম্ভব! একবার এই ঘর থেকে বেরোলে সে সব খুলে ফেলবে। ইরফানের দাদি মাইরাকে বসিয়ে তার আনা গহনাগুলো পরিয়ে দিতে লাগলেন। গলায় একটি হার পরিয়ে দিলেন, দু’হাতে বালা। কানে দুল। ডান হাতের অনামিকা আঙুলে একটি আঙটি পরিয়ে দিলেন। সবগুলো সোনার। সবশেষে হাতে ছোট্ট একটা নোসপিন নিয়ে বললেন,_____”তোমার নাক ফুটো আছে?”
মাইরা মাথা ঝাঁকালো। অর্থাৎ আছে। ইরফানের দাদি নোসপিন পরিয়ে দিতে নিলে মাইরা নিজেই আয়না দেখে পরে নিল। তার বিয়ের কয়েকদিন আগে তার মা নাক ফুরিয়ে দিয়েছিল। এরপর একটা ছোট্ট সোনার রিং পরিয়েও দিয়েছিল। মাইরা রাগ করে খুলে দিয়ে দিয়েছিল, তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়ার জন্য। পরার সময় একটু ব্য’থা পায়, তবে ফুটো বন্ধ হয়নি এখনো।
মাইরা ইরফানের দাদির সামনে আসলে তিনি মাইরার থুতনিতে হাত দিয়ে বললেন,____”খুব সুইট লাগছে তোমাকে। এসব গহনা কখনো খুলবে না। আর এভাবেই শাড়ি পরবে সবসময়।”
কিছু একটা ভেবে প্রশ্ন করে, ____”কতদিন হলো ইরফানের সাথে এক রুমে থাকছো?”
মাইরা বোকাচোখে চেয়ে থাকে। ইরফানের দাদি আবারও বলেন,_____”তোমাদের মধ্যে কিছু হয়নি তাই না?”
মাইরা প্রশ্নাত্মক চোখে চেয়ে বলে,____”কি হবে?”
ইরফানের দাদি কপাল চাপড়ালেন। গলা আরেকটু নিচু করে সময় নিয়ে কিছু বেঝানোর মতো করে বলতে লাগলেন। মাইরা চোখ বড় বড় করে শব্দ করে বলে ওঠে,_____”আসতাগফিরুল্লাহ।”
ইরফানের দাদি ভ্রু কুঁচকে বলে,____”আসতাগফিরুল্লাহ নয়, বলো আলহামদুলিল্লাহ।”
মাইরা দ্রুত বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে,____”দাদিমা আমার বাথরুম পেয়েছে।”
বয়স্ক ভদ্রমহিলা বলে উঠলেন,____”পরে যেও। আগে আমার কথা শেষ করতে দাও। নয়তো স্বামীরা অন্য মেয়ের কাছে চলে যায়। আমার ছেলের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছিল। খুবই বাজে ব্যাপার হয়। তাই তোমাকে আগেই শিখিয়ে দিচ্ছি, এসো।”
মাইরার কেঁদে দেয়ার মতো অবস্থা। মাথা নেড়ে বলে,____সত্যি দাদি মা। আমার বাথরুমে যেতেই হবে।”
আচ্ছা আমার বাথরুমে যাও।
কিন্তুু আমার তো সবার বাথরুমে গেলে বাথরুমের চাপ আসে না।
হোয়াট?
মাইরা কোনোরকমে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে ইরফানের দাদি বলে,___”এই শাড়িগুলো নিয়ে যাও।”
মাইরা দ্রুত পিছু ফিরে শাড়িগুলো নিয়ে নেয়। নয়তো আবারও এনার সামনে পড়তে হবে। এরপর কোনো কথা না বলে একপ্রকার দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। পিছন থেকে ইরফানের দাদি বলে,____”আবার আসবে কিন্তুু। আরও অনেক কিছু শেখানোর বাকি আছে তোমাকে।”
মাইরা বিড়বিড় করল,____”জীবনে না। ইনি না যাওয়া পর্যন্ত আমি ঘর থেকেই বের হবো না। কিসব কথা বলে! ছিঃ!”
মাইরা তার ঘরে যেতে গিয়েও থেমে গেল। হায় হায় সে তো অনেক খোলামেলা হয়ে আছে। ছাদের সিঁড়ির দিকে চোখ পড়লে দেখল ফারাহ আর ইনায়া ছাদের দিকে যাচ্ছে। ইনায়ার চোখে মাইরাকে পড়লে মেয়েটা অবাক হয়। তবে বুঝলো এসব তার দাদির কাজ। মৃদু হেসে মাইরাকে বলল,___”মাইরা ছাদে এসো।”
মাইরা সম্মতি দিয়ে দ্রুত ইরফানের ঘরে গিয়ে শাড়িগুলো এক জায়গায় রেখে শরীরে একটি ওড়না জড়িয়ে নিজেকে ঢেকে নিল। এবার ভালো লাগছে। এরপর সময় ব্যয় না করে ছাদের উদ্দেশ্যে এগোলো। রাতে ছাদে যেতে তার অনেক ভালো লাগে, সাথে দু’জন সঙ্গী থাকলে তো কথাই নেই।
“মা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
তৃণা বেগম শুদ্ধর কথায় বেডের উপর বসে বললেন,____ “এখানে এসে বোস। এতো ব্যস্ত থাকিস। ভাবছি গ্রামে চলে যাবো এবার।”
শুদ্ধর মন খারাপ হলো। তার মা গ্রামে একা থাকলে তার একা একা এখানে থাকতে ভালো লাগে না। এগিয়ে এসে মায়ের পাশে বসল শুদ্ধ। এক পা বেডের উপর রেখে তার মায়ের দু’হাত ধরে দুঃখ দুঃখ মুখ করে বলে,_____”আমাকে কি তুমি অর্ধেক মাস পেটে রেখেছিলে মা?”
তৃণা বেগম ভ্রু কুঁচকে বলেন,______”অর্ধেক মাস মানে? অর্ধেক মাস রাখলে তুই বাঁচতি?”
শুদ্ধ আগের চেয়েও দুঃখ দুঃখ মুখ করে বলল,________”দশ মাস পেটে রাখলে এখন খেয়াল রাখার বেলায় কিপ্টামি করছ কেন? আমার মনে হচ্ছে তোমার ভুলে যাওয়ার রোগ আছে। আমাকে অর্ধেক মাস পেটে রেখেছ তো, তাই বছরের অর্ধেক সময় আমাকে আর মনে পড়ে না তোমার। বলছি বাকি অর্ধেক মাস আমাকে কে পেটে ধরেছিল গো?”
তৃণা বেগম বিরক্ত চোখে শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে। শুদ্ধ হতাশ কণ্ঠে বলল,______”বলো বলো। বাকি
পাঁচ মাস কে আমাকে ধার নিয়ে তার পেটে রেখেছিল। আহারে! সেই মা কে এখনো দেখতেই পেলাম না। তুমি কি হিংসুটে মা! যে তোমার ছেলেকে ধার নিয়ে এতো কষ্ট করে তার পেটে রাখলো, তাকে একবার আমার কাছে আনবে না? ইশ! কি যে কষ্ট হচ্ছে আমার!”
তৃণা বেগম শুদ্ধর কান টেনে ধরে বলে,_____”এই বাঁদর তোকে কে পেটে ধরবে? তোর মতো বাঁদরকে পেটে ধরবে ভাবলেই তো মানুষ বেহুশ হয়ে যাবে।”
আহ! মা ছাড়ো। আমার আরেক মাকে দেখতে চেয়েছি বলে তুমি চরম হিংসুটের পরিচয় দিচ্ছো। তুমি আমাকে যতই বাঁধা দাও না কেন, আমি সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে তাকে ঠিক খুঁজে নিব। তুমি কখনোই আমাদের মাঝে বাঁধা হতে পারবে না।
এই বাঁদর থামবি তুই? পেটের ভেতরেও দিনে দুইশো বার লাথি মেরে মেরে জ্বালিয়েছিস। বাইরে বেরিয়ে তো আস্ত বাঁদর হয়ে গেলি!
শুদ্ধ তার কান থেকে তার মায়ের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসলো। অতঃপর একটু মন খারাপ করে বলল,_______”আমি যেখানে তুমিও সেখানে। তোমার গ্রামের ওই বাড়ি তুলে এনে আমার বাড়ির ছাদের উপর রাখব। হবে না? বাঁদর হই আর হনুমান হই, তুমি এখানেই থাকবে। শেষ কথা।”
তৃণা বেগম এ পর্যায়ে মৃদু হেসে বললেন,_____”সে দেখা যাবে। তুই কি বলবি বলছিলি। বল।”
শুদ্ধ সিরিয়াস হলো। একটু থেমে গলা ঝেড়ে বলে,______”সামিয়া মেয়েটাকে আংটি কেন দিয়েছ মা? আমাকে কি একটা কথা বলা উচিৎ ছিল না তোমার?”
তৃণা বেগম ভ্রু কুঁচকে বললেন,___-“ওকে আংটি দিলে তোকে কেন বলতে হবে?”
আমার জন্য আংটি দিয়েছ। তো আমাকে বলবে না তুমি? তুমি তাকে আমার সাথে জড়িয়ে দিতে চাইছো। এটা অন্যকে বলার আগে আমাকে একবার বলবে না?”
তৃণা বেগম শুদ্ধর মাথায় হাত দিয়ে মৃদু হেসে বলেন,____-“ওকে আমার খুব পছন্দ তোর জন্য।”
কিন্তুু আমার ওকে পছন্দ নয় মা।
তৃণা বেগম বিস্ময় চোখে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ বসা থেকে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলে, _____”আমার অন্য কাউকে পছন্দ মা।”
তৃণা বেগম বিস্ময় চোখে তাকায় শুদ্ধর দিকে। অবাক কণ্ঠে বলে,______”সামিয়ার কি হবে তাহলে? ওকে আমি বলেছি ওকেই আমার বউমা বানাবো। ও তো কষ্ট পাবে বাবা। তুই তো আমাকে আগে বলিস নি তোর অন্যকাউকে পছন্দ।”
শুদ্ধ হঠাৎ-ই চেঁচিয়ে বলে,_____”আমি কিভাবে বলব? তুমি আমাকে সেই সুযোগ টাই তো দাও নি। আমাকে না জানিয়েই অন্যকাউকে কথা দিয়ে দিয়েছ। আমার বাড়ি এনে রেখে দিয়েছ। সে আমার সেবা করছে আমার বউ হবে বলে। অথচ আমি জানিই না। তুমি আমাকে আগে বলেছ ঠিক আছে। কিন্তুু আমাকে বলার আরও অনেক আগেই তো তুমি এই মেয়েটাকে কথা দিয়ে দিয়েছ। কেন? আমি কি রোবট? আমার মন নেই? তুমি আমার মনের কথা একটাবার শুনবে না? উল্টে এমন এমন ইমোশনাল কথা শোনাতে, আমি নিজেই ভেঙে যেতাম।”
একটু থেমে আবারও বলে,______”সবচেয়ে বড় কথা বাড়িতে আমি তোমায় নিষেধ করেছিলাম, এরপরও এটা নিয়ে তুমি এখনো কিভাবে পড়ে আছো? আমি নিষেধ করেছিলাম কি-না বলো?”
তৃণা বেগম নিরব চোখে ছেলের পানে চেয়ে আছেন। শুদ্ধর কণ্ঠে রাগ। আবারও শব্দ করে বলে ওঠে,_____”তুমি আমার কতো ভালো মা। অথচ আসল সুখ হাতে তুলে দেয়ার সময় আমার মতামত না শুনে নিজের মতামত আমার উপর চাপিয়ে দিতে চাইছো। কেমন মা তুমি বলো তো? নিজের ছেলের ভালো থাকার কথাটা একবার ভাববে না? নিজের কথা ভাবতে গিয়ে আমার কথা ভুলে গিয়েছ।”
তৃণা বেগম জড়িয়ে আসা কণ্ঠে ডাকে,____ “শুদ্ধ?”
শুদ্ধ তার মায়ের দিকে তাকালো না। ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,_______”লাস্ট একটা রিকুয়েষ্ট রাখো, মেয়েটাকে তার বাড়ি রেখে এসো, প্লিজ! আমি তোমাকে আর এই মেয়েকে নিতে পারছি না। এমনিতেই আমার জীবনে অশান্তির শেষ নেই।”
তৃণা বেগম ঝাপসা চোখে ছেলের প্রস্থান দেখলেন। সে ভালো মা হতে পারেনি? তার ছেলে তাকে নিতে পারছে না যে। হয়তো তার ভুল আছে। সে নাহয় সামলে নিতো কোনোভাবে। তার ছেলের সুখের জন্য কি কম কিছু করেছে? কিন্তুু তার ছেলে তাকে কিভাবে বলতে পারল, সে শুদ্ধর সুখের কথা ভুলে গিয়েছে? সামিয়া খুব লক্ষী একটা মেয়ে। শুদ্ধ সুখী হবে বলেই তো সামিয়ার মতো মেয়েকে তার ছেলের জন্য ঠিক করলেন।
সামিয়া শুদ্ধর বলা কথাগুলো শুনেছে। তৃণা বেগমের ঘরের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। শুদ্ধ হনহন করে বেরিয়ে গেল, সামিয়া ঝাপসা চোখে দেখল শুদ্ধর প্রস্থান। সামিয়ার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। দরজার কাছে এসে একবার তৃণা বেগমের দিকে তাকায় ছলছল দৃষ্টিতে। যিনি বেডের এক কোণায় কেমন নির্জীব হয়ে বসে রইছেন। বেশ কিছুক্ষণ পর বসা থেকে দাঁড়িয়ে ঘর থেকে বেরোনোর জন্য এগোলে দরজার সামনে সামিয়াকে দেখে অবাক হলেন। বুঝলেন না তিনি মেয়েটাকে কি জবাব দিবেন। নিজেকে সামলে নিল খুব দ্রুত। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদুস্বরে বললেন______”আমায় ক্ষমা করিস সামিয়া মা।”
সামিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। ঠোঁটের কোণে মলিন হাসি ফুটে ওঠে। অতঃপর উল্টো ঘুরে ধীরপায়ে তার বরাদ্দকৃত রুমের দিকে এগোয়। তার দমবন্ধ লাগছে।
তবুও সমস্যা নেই, না পাওয়ার অভ্যেস আছে তার। খুব বেশিদিনের স্বপ্ন তো নয়। কিন্তুু দীর্ঘদিনের অনুভূতি যখন একদিনের জন্য হলেও স্বপ্নে পরিণত হয়, তখন তার কষ্টের ভার হয়তো একটু বেশিই হয়। এই যে সামিয়ার হচ্ছে। মেয়েটা ঘাড় বাঁকিয়ে শুদ্ধর ঘরের দিকে তাকালো। শুদ্ধ তার ঘরে গিয়ে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। মেয়েটির দু’চোখের পাতা বেয়ে অবাধ্য বেদনাময় অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে।
মাইরা চিন্তিত বদনে বসে আছে ছাদের মেঝেতে। তার সামনে ইনায়া আর ফারাহ বসা। ফারাহ বেশ কেঁদেছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ফারাহ আর শুদ্ধর পুরো কাহিনী ইনায়া মাইরাকে বলেছে। এতেই মাইরা চিন্তিত হয়। তাহলে সামিয়ার কি হবে? এসব রেখে ফারাহ আর শুদ্ধর কথা ভাবলো। তারা দু’জন দু’জনকে চায়। এখানে সামিয়া মেয়েটা তো তৃতীয় ব্যক্তি। মাইরা ভাবলো সে তৃণা বেগমের সাথে কথা বলবে নাহয়। কিন্তুু এখন শুদ্ধ ভাইয়াকে ফারাহ’র কাছে কিভাবে আনা যায়? কিছু একটা মাথায় আসতেই চুটকি বাজিয়ে বলে,______”আইডিয়া! ফারাহ আপু চিন্তা কর না। শুদ্ধ ভাই তোমার দিকে লাফাতে লাফাতে আসবে।”
ফারাহ বোকা চোখে বলে,____”কিভাবে?”
মাইরা বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,____”ম্যাজিক করব। তুমি ইনায়া আপুর সাথে থাকো। আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি, ওয়েট।”
কথাটা বলে একপ্রকার দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে। ইরফানের ঘরে প্রবেশ করে। ওয়াশরুম থেকে পানির কলকল শব্দে বুঝল ইরফান ওয়াশরুমে। মাইরা ইরফানের ফোন খুঁজল। দু’মিনিটেই পেয়ে গেল। অন করলে পাসওয়ার্ড দেখে চিন্তিত হলো না। সে ইরফানকে অনেকবার খুলতে দেখেছে। পাসওয়ার্ড ~ ‘BIRDFLOWER’
মাইরা জানেনা এটা আসলে কি। বাংলা অর্থ তো ‘পাখি ফুল’ হয়। পাখি নাকি ফুল? এসব ভাবনা রেখে সে শুদ্ধর নাম্বারে একটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে সেটা ডিলিট করে দেয়। এরপর ইরফানের ফোন রাখতে গিয়েও কি মনে করে ফটোস এর মধ্যে গিয়ে ক্লিক করলে প্রথমেই ছোট ছোট অনেকগুলো পিক ভেসে ওঠে স্ক্রিনে। মনে হলো স্কুল ড্রেস পরা কোনো মেয়ের অনেক পিক। মাইরা পিকের উপর ক্লিক করার সাথে সাথেই ইরফান তার হাত থেকে ছোঁ মেরে ফোনটা কেড়ে নেয়। মাইরা দেখতেই পারলো না। দ্রুত হাত বাড়িয়ে বলে,_____”আরে দেখি দেখি! ওটা কার পিক?”
ইরফান তার ফোনের আলো অফ করে বেডের উপর ছুঁড়ে ফেলে। মাইরার দিকে রেগে তাকায়। মাইরা ইরফানকে তার দিকে রেগে তাকাতে দেখে আমতা আমতা করে। সে তো না বলে লোকটার ফোন নিয়েছিল।
ইরফান রেগে তাকালেও মুহূর্তেই দৃষ্টিতে একরাশ শীতলতা ভিড় করে। কেমন অন্যরকম লাগলো মাইরাকে। বিকেলেও তো স্বাভাবিক লেগেছে৷ পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলায়। কালো সিল্কের শাড়ি পরা, গলায় নেকলেস টাইপ কিছু লাগলো ইরফানের কাছে। হাতে বালা, কানে দুল, সবশেষে নাকের ডানপাশে জ্বলজ্বল করা ছোট্ট কিছুতে ইরফানের চোখ আটকায়।
মাইরা ঢোক গিলে। লোকটার ফোন নেয়ায় তাকে কি করবে? সুযোগ মতো ঘর থেকে এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়। ইরফান বিরক্তি চোখে তাকায়। বড় বড় পা ফেলে মাইরাকে ধরতে যায়, মাইরা বাইরে বেরিয়ে ইরফানের দাদিকে এদিকে আসতে দেখে চোখ বড় বড় করে আবারও উল্টো ঘুরে ভেতরে প্রবেশ করতে নিলে ইরফানের বুকে ধাক্কা খেয়ে পড়তে নিলে ইরফান ডান হাতে মাইরাকে টেনে তার সাথে চেপে ধরে। বা হাতে ডোর লক করে দেয়।
মাইরা অসহায় কণ্ঠে বলে,____”আপনার ফোন দিয়ে আমি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছি। প্লিজ কিছু বলবেন না।”
ইরফান মৃদুস্বরে বলে,_____”লক জানলে কি করে?”
মাইরা ধরা পড়ার মতো করে বলে,____”ভুল করে দেখে ফেলেছিলাম। স্যরি!”
মাইরা ইরফানকে তার দিকে শান্ত চোখে চেয়ে থাকতে দেখে বলে,_______”একটা কথা বলি?”
ইরফান ছোট করে বলে,____”হুম।”
“বার্ডফ্লাওয়ার মানে কি?”
ইরফান তড়াক করে মাইরার চোখে চোখ রাখে। মাইরার চোখে কৌতুহল। ইরফান মৃদুস্বরে অ্যান্সার করে,___”ইউ।”
মাইরা অবুঝ গলায় বলে,__”মানে?”
ইরফান আবারও বলে,___”স্টুপিট গার্ল।”
মাইরা বিরক্ত হয়ে বলে,___”আপনি একটা কথা সহজভাবে বলতে পারেন না?”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে আওড়ায়,___”গাধা।”
মাইরা ইরফানের কথা শুনে বিড়বিড়িয়ে বলে,___”গন্ডার।”
ইরফান শুনেছে কি-না। ছোট করে বলে,___”ওকে।”
মাইরা অদ্ভুদভাবে তাকায় ইরফানের দিকে। এই লোকটা কি পা’গ’ল টা’গ’ল না-কি!
ইরফান মাইরার মুখাবয়বে দৃষ্টি বুলায়। দৃষ্টি স্থির হয় মাইরার নোসপিনে, আঁখি জুড়ে মুগ্ধতা। নাকের সেই ছোট্ট বস্তুুটা, সাথে কানের দুল মিলিয়ে ইরফান যেন এক নতুন মাইরাকে আবিষ্কার করল। ডান হাত বাড়িয়ে মাইরার নোসপিনের উপর দু’আঙুল রেখে নোসপিন ঘুরায়। শীতল কণ্ঠে বলে,____”এটা কি পরেছ?”
মাইরা পিটপিট করে ইরফানের দিকে চেয়ে মৃদুস্বরে বলে,_____”নাকফুল।”
ইরফান মোহিত চোখে চেয়ে বিড়বিড় করে,____”নোস পিন! সো নাইস!”
এরপর মাইরার নোসপিন টা ঘোরাতে ঘোরাতে ঠাণ্ডা গলায় বলে,____”ইউ নো? লিটল গার্লদের এসব এভোয়েড করতে হয়।”
মাইরা কিছুটা তেজ নিয়ে বলে,____”আমি বড়।”
ইরফান মাইরার চোখে চোখ রেখে মৃদুস্বরে বলে,___”সিইওর?”
মাইরা সেই আগের ভঙ্গিতেই মাথা নাড়িয়ে জানায়,’অবশ্যই সে বড়।’
ইরফান ঠোঁট বাঁকালো সামান্য। মুখ এগিয়ে নিয়ে মাইরার নোসপিন বরাবর কিছুটা জায়গা জুড়ে দাঁত বসায়। মাইরা আর্তনাদ করে ওঠে। বেশ ব্য’থা পেয়েছে। চোখে পানি জমে গিয়েছে। ইরফান মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে লো ভয়েসে বলে,
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫২ (২)
“I want the proof right now. Don’t disturb me at all, okay? [আমি এক্ষুনি প্রমাণ চাই. আমাকে একদম ডিস্টার্ব করবে না, ওকে?]