প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৬১
Drm Shohag
ভার্সিটি যাওয়ার আগে শুদ্ধ আজ ফারাহ’দের বাড়িতে এসেছে। ফারাহকে সাথে নিয়ে যাবে এজন্য। ফাইজ, ফাইজের বাবা নেই, সেজন্যই মূলত সে আসলো। দরজা ইনায়া খুলেছে। শুদ্ধ ফারাহ’র মাকে সালাম দেয়। ভদ্রমহিলা সালাম এর উত্তর নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে শুদ্ধর সাথে। ফারাহ’র পড়াশুনার ব্যাপারে একটু খোঁজ রাখতে বলে। এরপর তিনি তার ঘরে চলে যান।
ইনায়া বেশ কিছু নাস্তা সাজিয়ে দিয়েছে শুদ্ধর সামনে। শুদ্ধ শুধু চা খেয়েছে। এরপর ইনায়াকে ডেকে পাশে বসতে বলল। ইনায়া শুদ্ধর পাশে বসলে শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,___”এই বাড়ির সব সার্ভেন্ট কোথায়? তোকে দিয়ে কাজ করায় কেন?”
ইনায়া অবাক হয়ে বলে,___”আরে কি বলছ? তুমি এসেছ, তাই আমি সব এগিয়ে দিলাম। এসব মা, ফারাহ আপু শুনলে মন খা’রা’প করবে।”
শুদ্ধ ফারাহকে দেখে মনে মনে হাসলো।এরপর ভাবলেশহীনভাবে বলে,___”করুক। তোরে দিয়ে কাজ করাইলে আমাকে একটা টোকা দিবি। তাহলেই আমি এসে হাজির হয়ে যাবো।”
ফারাহ পাশ থেকে রে’গে বলে,___”সবাই তোমার মতো যে বাড়ির বউ কে দিয়ে কাজ করাবে।”
শুদ্ধ পাত্তা দিল না। ইনায়া ফারাহ’র পাশে গিয়ে বলে,___”আপু শুদ্ধ ভাই মজা করে বলেছে। জানোই তে সে কেমন!”
ফারাহ মুখ ফুলিয়ে রাখলো। শুদ্ধ থমথমে মুখে ফারাহ’র দিকে চেয়ে উঠে দাঁড়ায়। এরপর শার্টের হাতা গুটিয়ে ইনায়ার উদ্দেশ্যে বলে,___”তোর ননদের ডোজ লাগবে মনে হচ্ছে। স্পেশাল ডোজ।”
ইনায়া মৃদু হেসে বলে,___”বিয়ের মিষ্টি খাওয়ালে না কেন শুদ্ধ ভাই?”
শুদ্ধ দ্রুত ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বিস্ময় কণ্ঠে বলে,___”আসতাগফিরুল্লাহ! কে এসব কথা বলেছে?”
ফারাহ বলে ওঠে,___”আমি।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শুদ্ধ অসহায় মুখ করে বলে,___”হায় হায়, বউ হয়ে বরের সব ফাটিয়ে দিলে? তোমার হাত, পা, হাঁটু, গিরা, কব্জি, পিত্তথলি, কিডনি কিচ্ছু কাঁপলো না?
ফারাহ অদ্ভুদ চোখে শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে। ইনায়া হাসছে। শুদ্ধ ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,___”তুই আমার মাও, ছাও, পাও সব। ফাইজকে বলিস না। ও ইরফানের ছোটোখাটো ভার্সন। ঝামেলা করবে।”
ইনায়া মুখ টিপে হেসে বলে,___”আমি তো বলে দিয়েছি!”
শুদ্ধ মাথায় হাত দিয়ে বলে,___কিইইইইই?”
এটা বলে মুহূর্তেই স্বাভাবিক হয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে বলে,___”ফাইজের রিসোর্টে সব মেয়ের বয়বস্থা করছি, ওয়েট। মেয়েরা বিকি**
থেমে গিয়ে ফারাহ’র দিকে তাকায়। ফারাহ শুদ্ধর দিকেই চেয়েছিল। শুদ্ধ দুষ্টু হেসে এক চোখ টিপ দেয়। ফারাহ থতমত খেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।
শুদ্ধ ফোন কানে ধরে বলে,___”মাঝখানে ফাইজ, আর চারপাশে ফাইজকে ম্যাসাজ করার জন্য কিউট কিউট মেয়েরা। আহা! এক্ষুনি পাঠাচ্ছি।”
ইনায়া চোখ বড় বড় করে বলে,___”আরে আমি বলিনি তো। তুমি এসব ন’ষ্টা’মি করছ কেন?”
শুদ্ধ মেকি রা’গ বলে,___”তোর সত্যামি বের করতে। বে’দ্দ’প। বড় ভাইয়ের পিছে লাগিস! আমার সাথে লাগতে তোর আরও ২০০ বার জন্মগ্রহণ করা লাগবে।”
কথাটা বলে শুদ্ধ ফারাহ’র হাত ধরে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। গাড়িতে উঠে শুদ্ধ ফারাহ’র দিকে চেয়ে বলে,____”কি হয়েছে পাখি? তুমি রে’গে আছো কেন আমার উপর? তোমাকে ইয়ে কিনে দিইনি বলে?”
ফারাহ ভ্রু কুঁচকে তাকায় ফারাহ’র দিকে। শুদ্ধর চোখেমুখে দুষ্টুমি। ফারাহ মন খা’রা’প করে বলে,____”আমাদের বিয়ের ডেট ঠিক করছ না কেন?”
শুদ্ধ কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়, তার ফোনে কল আসায়। পকেট থেকে ফোন বের করে নাম্বারটা দেখে ফারাহ’র দিকে চেয়ে মৃদুস্বরে বলে,___”দুই সপ্তাহ ওয়েট কর, ইরফান থাকবে না। তাই এগোতে পারছি না। নয়তো লেট হতো না।”
কথাটা বলে কল রিসিভ করে খুব সিরিয়াসভাবে কথা বলায় ব্যস্ত হয়। ঘাড় বাঁকিয়ে ফারাহ’র দিকে তাকালে দেখল ফারাহ তার দিকেই চেয়ে আছে। শুদ্ধ বা হাত বাড়িয়ে ফারাহ’র ডান হাত আঁকড়ে ধরে। এরপর কথা বলতে বলতেই ফারাহ’র ডান হাতের উল্টো পিঠে একটু পর পর চুমু খায়।
মাইরা ইরফানের পাশের সিটে বসে আছে। ইরফান মনোযোগ সহকারে গাড়ি চালায়। সাথে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে কারো সাথে ঝরঝর করে ইংলিশে কথা বলছে। মাইরা বুঝতে পারছে না ঠিক। কিন্তু একটু পর পর-ই ইরফানের দিকে তাকাচ্ছে। মূলত কাল রাতের কথা ভাবছে। ইরফানকে কেমন অন্যরকম লাগছে৷ কালকে রাতের ঘটনাটুকুই ভুলতে পারছে না। ইরফান কি তাকে উদ্দেশ্য করেই গেয়েছে? মাইরাকে যখন বেলকনিতে সোজা করে দাঁড় করিয়েছিল তখন মাইরা ইরফানকে মাইরা জিজ্ঞেস করেছিল, – আপনি কি হেসেছেন?
ইরফানের গম্ভীর স্বরে উত্তর ছিল, – নো।
এরপর মাইরা জিজ্ঞেস করল, – আপনি গান গাইলেন কেন?
ইরফানের সেই এক উত্তর ছিল – মাই উইশ
ইরফান কথা বলার মাঝেই একবার মাইরার দিকে তাকালে দেখল মাইরা তার দিকেই চেয়ে আছে। গাড়ি থামিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
– হোয়াট?
মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
– আপনি আমাকে পছন্দ করেন?
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার পানে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
– নো।
একটু থেমে বলে,
– You’re that girl I never liked, and I never will.
[তুমি সেই মেয়ে, যাকে আমি কখনো পছন্দ করিনি, এবং কখনো করব না।]
মাইরা একটা কথাও বললো না। একা একাই বেশ কসরত করে গাড়ির দরজা খুলে বাইরে বেরতে নিলে ইরফান মাইরার হাত টেনে বলে,
– হোয়াট?
মাইরা চোখ নিচে নামিয়েই ছোট করে বলে,
– ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।
ইরফান কিছু বলল না। গাড়ির আধখোলা দরজা খুলে দিতে সে নিজেই মাইরার দিকে এগিয়ে আসে। মাইরার সাথে ইরফান ঘেঁষে আছে। মাইরা শক্ত হয়ে বসে থাকলো। ইরফান গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে মাইরার উদ্দেশ্যে বলে,
– ছুটির পর ভেতর থেকে বের হবে না। ওকে?”
মাইরা হালকা মাথা নাড়িয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে স্কুলে গেইটের ভেতর যায়। ইরফান মাইরাকে ভেতরে যেতে দেখে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
মাইরা ক্লাসে গেল না। সরাসরি কমন রুমের দিকে পথ ধরে। আজ মিলা কলেজ আসবে না বলে দিয়েছে। মাইরার আরও বেশি মন খা’রা’প হলো। মাথা নিচু করে চুপচাপ হেঁটে কমন রুমের এক কোণায় গিয়ে বসে। এক সাইডে রাখা বেঞ্চের কোণায় গিয়ে বসে মাথা গুঁজে রাখে দু’হাতের উপর। ইরফানের বলা কথাটায় তার ভীষণ খা’রা’প লাগছে। ইরফানের কাল রাতের করা কাজগুলোয়, আবার উপরের এই ইরফানের সাথে কেমন গুলিয়ে ফেলে। বিড়বিড় করে,
– নিষ্ঠুর শিসওয়ালা।
ভার্সিটির এসে ফারাহ নুসরাতের সাথে টুকটাক কথা বলছিল। নুসরাত আফসোসের সুরে বলে,
– “তুই অন্য কাউকে খুঁজে পাসনি? আমাদের স্যারকেই জামাই বানানো লাগলো? এখন একটু মজা করে বলতেও পারব না, দুলাভাই বিয়ের ট্রিট দিন।”
পাশ থেকে সাজিদ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– “তুই খাসনি জীবনে? এখন ওর জামাইয়ের থেকে তোর হাতানো লাগবে কেন?”
নুসরাত রেগেমেগে সাজিদের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলে,
– “এই কালা মানিক, আমার ইচ্ছা আমি খাবো। তাতে তোর চৌদ্দ গুষ্টির কি? জীবনে তো দশ টা টাকার কিছু খাওয়ালো না! কিপ্টুস শা’লা।”
সাজিদ রে’গে বলে,
– “তোকে আজ খাবারের মধ্যে চুবাবো।”
নুসরাত দ্রুত সাজিদের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
– “এই সত্যি? দশ-বারো প্লেট ফুসকা খাওয়ালেই হবে দোস্ত।”
সাজিদ চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– “রাস্তায় এতো অভুক্ত কু’কু’র থাকতে তোকে কোন দুঃখে খাওয়াতে যাব আমি?”
সাজিদের কথা শুনে ফারাহ শব্দ করে হাসতে লাগলো। নুসরাত দাঁত কটমট করে তাকালো সাজিদের দিকে। রে’গে বলে,
– তুই কোনোদিন বউ পাবি না, মিলিয়ে নিস।
সাজিদ মনে মনে হেসে বলে,
– সামান্য খাবার না পেয়ে এসব অভিশাপ দেয়া ঠিক নয়। কু’কু’র রা খেয়ে যা অবশিষ্ট রাখবে ওর মধ্যে তোকে হাবুডুবু খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে দিব।”
সাজিদের কথা শুনে নুসরাত চেঁচিয়ে বলে,
– কালা মানিকের বাচ্চা তোকে আমি দেখে নিব।
সাজিদ পাত্তা দিল না। মনে মনে একটু হাসলো। উপরে মুখাবয়ব স্বাভাবিক রেখে ফারাহ’র সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
– “কংগ্রাচুলেশনস দোস্ত!”
ফারাহ মৃদু হাসলো।
শুদ্ধ ভার্সিটির এক কোণায় দাঁড়িয়ে ফারাহ’কে দেখছিল। ফারাহকে ক্লাসরুমের দিকে যেতে দেখে সেও যেতে নিয়ে থেমে গেল ইরফানকে দেখে। ইরফান তার দিকে চেয়ে আছে। শুদ্ধ নিজের শার্ট ঠিক করতে করতে চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– কি অদ্ভুদ! আমাকে এভাবে দেখছিস কেন? বউ পাত্তা দিচ্ছে না?”
ইরফান বিরক্তি চোখে তাকালো শুদ্ধর দিকে।
গতকাল অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একটা কথা মনে পড়েছে। মাইরা তাকে বুড়ো বলে সম্মোধন করেছিল। সে কি আসলেই বুড়ো? ব্যাপারটা ভাবতেই কেমন বিশ্রী অনুভূতি হলো। তবুও নিজেকে দমাতে না পেরে শুদ্ধর থেকে শুনতে এসেছে তাকে কি বুড়োদের মতো লাগে কি-না কোনোভাবে।
শুদ্ধ ইরফানকে চুপচাপ তাকিয়ে থাকতে দেখে পকেট থেকে একটা ওয়ান টাইম মাস্ক বের করে। এরপর মাস্কটি মুখে দিতে দিতে বলে,
– নাহ, মানুষের নজর আর নেয়া যাচ্ছে না। শুদ্ধ বাবু তোকে এতো কিউট হতে কে বলেছিল বল তো! শেষমেশ ছেলেরাও নজর দিচ্ছে তোর উপর। আমার বউটার হকের দিকে আর কতজনের যে নজর পড়বে!
শুদ্ধর কথার তীব্র আফসোস ঝরে। ইরফান রে’গে টান মেরে শুদ্ধর হাত থেকে মাস্ক ছুঁড়ে ফেলে দেয়। শুদ্ধ চেঁচিয়ে বলে,
– ইন্না-লিল্লাহ! আমার কোটি টাকার মাস্ক!”
ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– ওর প্রাইজ অনলি টেন টাকা।
শুদ্ধ অসহায় মুখ করে বলে,
– ওটা আমার বউ এর সম্পদ ঢাকার মাস্ক ছিল। তাই ওটার দাম কোটি টাকা।
বেসুরা গলায় গায়,
– বোঝেনা রে বোঝে না!
কেউ যে আর বোঝে না!
শুদ্ধর বুকে কত ব্য’থা!
কষ্টের ঠেলায় ব্য’থা হয় মাথা!
ইরফান রে’গে শুদ্ধর কলার ধরে বলে,
– থা’প্প’ড় খেতে না চাইলে মুখ বন্ধ কর।
শুদ্ধ মেকি হেসে বলে,
– ওকে ডেয়ার!
ইরফান শুদ্ধ কে ছেড়ে সোজা হয়ে প্যান্টের পকেটে দু’হাত রাখে। এরপর বহু কষ্টে কয়েকটি শব্দ জিভ ঠেলে বের করে,
– আমাকে দেখতে বুড়োদের মতো লাগে?
শুদ্ধ ইরফানের কথাটা শুনে অবাক হয়ে তাকায়। কিন্তু খুব দ্রুত নিজেকে সামলে হেসে বলে,
– ইয়া আল্লাহ! তুই এই সত্যি কথা কি করে জানলি দাদু? তোকে তো এক পার্ফেক্ট দাদু দাদু লাগে। দাদু রে দাদু। ও দাদু। কি কিউট দাদু! ওগো বুড়ো দাদু!”
ইরফান রে’গে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
– হোয়াট দ্য হেল?
শুদ্ধ দ্রুত জায়গা প্রস্থান করতে দৌড় দিয়ে একটু গিয়েই থেমে যায়। ইশ! এটা ভার্সিটি। এভাবে দৌড়ালে স্টুডেন্ট রা কি ভাববে? পিছু ফিরে ইরফানের দিকে একবার তাকালো। শুদ্ধ বুঝলো না ইরফানের কি হয়েছে, তবে ইরফানের কান্ডে তার পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে। এ আবার নিজের চেহারা নিয়ে কবে ভাবতে শুরু করল?
ছোটবেলায় ইরফান প্রথম প্রথম যখন তাদের গ্রামে বেড়াতে গিয়ে তার সাথে বের হতো। শুদ্ধ কে যে কতজন জিজ্ঞেস করত, ইরফান বিদেশি না-কি! এজন্য। শুদ্ধর উত্তর দিতে দিতে মুখে ফেনা উঠে যেত যে ইরফান তার র’ক্তের মামাতো ভাই।
শুদ্ধর কাছে নরমাল-ই লাগে। ছোট থেকে একসাথে থাকছে। তবে মানুষের কথা শুনে সে ইরফানকে পরোখ করত। গায়ের রঙ টা একটু বেশি ফর্সা, সাথে চোখের মণি বাদামি। শুদ্ধর তো ছেলে হয়েও ইরফানকে দারুণ লাগে। তাহলে মেয়েদের আরও কেমন লাগবে? আর এই গর্ধোব নিজের চেহারা নিয়ে পড়েছে।
শুদ্ধদের গ্রামের অনেক মেয়েরা ইরফানের দিকে তাকিয়ে থাকলে ইরফান তার উপর রে’গে যেত। কি জ্বালা! সে কি ওদের তাকাতে বলেছে! ইরফানের রা’গের স্বীকার হতেও অবশ্য ভালোই লাগতো, এখনও লাগে।
গ্রামের এক মেয়ের সাথে একবার লাইন লাগিয়ে দিতে প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছিল, ওমনি ইরফানের হাতে থা’প্প’ড় খেয়েছিল।
ছোটবেলার কথা মনে করে শুদ্ধর মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে ওঠে। বেশ ভালো ছিল সেই দিনগুলো।
কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে মাইরা গোসল করে বের হলো। এরপর নামাজ পড়ে নিল।
ভীষণ গরম পরেছে। ইরফান তাকে নামিয়ে দিয়েই অফিস গিয়েছে। মাইরার মন টা খা’রা’প। সকালের ইরফানের বলা ওই কথাটুকুই সে মেনে নিতে পারছে না। ইরফান তাকে ধোঁয়াশার মাঝে রাখে। সে যখন-ই ইরফানকে একটু একটু বুঝতে চায়, তখনই ইরফান তার চাওয়ার উপর একগাদা বিরক্তির কারণ ঢেলে দেয়। মে’জা’জ খা’রা’প লাগে মাইরার। অ’স’হ্য একটা লোক। ওই লোক তাকে পছন্দ করবে না, সেও ওই লোককে ভালোবাসবে না।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুলগুলো মুছল। পরনে একটা প্লাজু, উপরে একটা গোল পাতলা জামা। মাইরা জানে না এগুলোর নাম। তবে গরমে পরে বেশ আরাম পাওয়া যায়। ইরফান হয়তো এনে দিয়েছিল। ঘরের এসি দেয়া। মাইরার গরম অনুভূত হলো না। তাই সে মনে মনে ভাবলো আজ সে শাড়ি পরবে। ইরফানের দাদির দেয়া শাড়ি নয়। ভালো শাড়ি। একদম মার্জিতভাবে, সুন্দরভাবে।
ভাবনা অনুযায়ী মাইরা কাভার্ড খুলে শাড়ি হাতালো। বেশ অনেকগুলো শাড়ি পেয়েছে। মাইরার কোনোটাই বাসায় পড়ায় মতো লাগছে না।
হঠাৎ মনে পড়ল, তার শ্বাশুড়ি বেশ কয়েকদিন আগে তাকে কয়েকটা সুতি শাড়ি দিয়েছিল। মাইরা ওগুলো নিচের দিকের তাকে রেখেছিল। তার মনেই নেই। সেখান থেকেই বেশ কয়েকটা শাড়ি বের করে। এর মাঝ থেকে একটা পার্পল কালারের শাড়ি চুজ করল মাইরা। এরপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সময় নিয়ে শাড়িটি গায়ে জড়ালো। একদম পার্ফেক্ট লাগছে। এইটা পরে মনে হচ্ছে এই শাড়ি বাসাতে পরার জন্যই। মাইরার মূলত মন খা’রা’প। এজন্য তার শাড়ি পরতে ইচ্ছে হলো। নিজেকে আয়নায় দেখে সত্যি সত্যি একটু হলেও মন ফুরফুরে লাগলো।
নিজেকে পরিপাটি করে বেলকনিতে যায়। বেলকনিতে সে নয়ন তারার গাছ লাগিয়েছিল, সেখানে বেশ ফুল ফুটেছে। মাইরা কয়েকটা গাছের সবগুলো ফুল বসে বসে ছিঁড়লো। অনেকগুলো হয়েছে। মাইরা শাড়ির আঁচলে ফুলগুলো নিয়ে ঘরে এসে বেডের উপর রাখে সব। এরপর কিছু একটা ভেবে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। নিচে নেমে রুমা নেওয়াজ কে দেখে জিজ্ঞেস করে,
– মা আপনার কাছে সুঁই আছে?
রুমা নেওয়াজ মাইরার মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখল। শাড়ি পড়ে মেয়েটাকে বেশ ভালো লাগছে, সাথে আগের চেয়ে কিছুটা বড় বড় লাগছে। ইরফান মাইরাকে ছোট ছোট বলে মানতো না। এখন তার ছেলেটা অনেকটাই মেয়নে নিয়েছে ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তবে তার মনে হয় ইরফান এভাবে মাইরাকে দেখলে এখনও যেটুকু মানতে নারাজ, সেটুকুর ঘাটতিও পূরণ হবে। অতঃপর মাইরার উদ্দেশ্যে বলে,
– তোমাকে আরও কয়েকটা এরকম শাড়ি আনিয়ে দিব। এখন থেকে শাড়ি পরবে বুঝেছ?
মাইরা বোকাচোখে তাকায় তার শ্বাশুড়ির দিকে। সে চাইলো সুঁই, আর ইনি তাকে বলছে শাড়ির কথা। রুমা নেওয়াজ কিছু না বলেই তার ঘরের দিকে চলে গেলেন। মাইরা বিরক্ত চোখে তাকিয়ে রইল। তার কাছে ইরফান আর তার শ্বাশুড়ি কে এক গোয়ালের গরু লাগে। মাইরার ইরফান আর তার শ্বাশুরিকে বলতে ইচ্ছে করে,
– হাসলে কি পাপ হবে? এইজন্য হাসেন না? বিশ্বাস করুন হাসলে পাপ হয় না। আপনরা এবার হাসতে পারেন।
ভাবনার মাঝেই রুমা নেওয়াজ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে মাইরার দিকে সুঁই সহ সুতো এগিয়ে দেয়। মাইরা অবাক হয়। সে ভেবেছিল দিবে না। বা নেই। তাই সে চলে যেতে নিয়েছিল। আর ইনি সুঁই এর সাথে সাথে সুঁতোও এনেছে। মাইরা খুশি হয়ে রুমা নেওয়াজ এর থেকে সুঁই সুতো নিয়ে স্বভাবসুলভ হেসে বলে,
– আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মা।
কথাটা বলে উল্টো ঘুরলে রুমা নেওয়াজ বলে ওঠে,
– দাঁড়াও
মাইরা আবারও উল্টো ঘোরার আগেই রুমা নেওয়াজ হাতের তোয়ালে দিয়ে মাইরার মাথা মুছতে মুছতে বলে,
– মাথা না মুছে, জ্বর-স্বর্দি বাঁধিয়ে কি প্রমাণ করতে চাও? তোমার শ্বাশুড়ি তোমাকে দিয়ে বাড়ির সব পানির কাজ করায়?
মাইরা থমথমে মুখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। কি অদ্ভুদ কথাবার্তা! সে তো এসব ভাবেইনি। রুমা নেওয়াজ মাইরার মাথা মুছে দিয়ে তার ঘরে ঘরে যেতে যেতে বলে,
– কাজ শেষে সুঁই ফেরত দিয়ে দিবে।
মাইরা মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে তার ঘরের দিকে যায়। তার কি রিয়েকশন দেয়া উচিৎ? তবে রুমা নেওয়াজ এর এই কাজটা তার ভালোই লাগলো। আবার খোঁচা দেয়ায় বিরক্ত লাগলো। এদের মা ছেলের ঘাড়ের সব রগ যে ত্যাড়া এটা মাইরা বুঝে গিয়েছে।
ঘরে গিয়ে মাইরা সুঁইয়ের মাঝে সুঁতো লাগায়। এরপর একটা একটা করে ফুল দিয়ে মালার মতো বানায়। এরকম প্রায় অনেকগুলো বানায় হাতের মাপে। গ্রামে থাকতে এসব কত করতো! আজ অনেকদিন পর করতে পেরে বেশ ভালো লাগছে মাইরার।
এসব করতে করতেই সন্ধ্যা নেমে যায়। মাইরার মোট ছয়টা মালার মতো বানিয়ে সুঁই তার শ্বাশুড়ি মাকে দিয়ে আসে।
এরপর ঘরে এসে মাগরিবের নামাজ পরে হাতের মাপের মালাগুলো নিয়ে দু’হাতে তিনটে তিনটে করে পড়ল। ফুলগুলো অনেক ঘনঘন হয়ে থাকায় দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। মাইরা দু’হাত সামনে এনে মৃদু হাসে।
এশার নামাজ পড়ে মাইরা বসে বসে তার ফোন স্ক্রোল করছিল। যদিও সন্ধ্যার পর পড়েছে। আপাতত ভালো লাগছে না। তাই ফোন নিয়েছে।
ইরফান ঘরে এসে মাইরাকে দেখল মেয়েটা উল্টো হয়ে শুয়ে ফোনের মধ্যে যেন ঢুকে রয়েছে। সে রুমে এসেছে, তাকালোও না। ইরফান বিরক্ত হলো। এগিয়ে এসে মাইরার সামনে থেকে ফোন কেড়ে নেয়। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে,
– আরে আমার ফোন।
বলতে বলতে মাথা উঁচু করে ইরফানকে দেখে চুপ হয়ে যায়। দ্রুত সোজা হয়ে উঠে বসে। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে ফোনের দিকে চেয়ে আছে।
মাইরা রিলস দেখছিল, কাচ্চি বিরিয়ানি রান্নার ভিডিও। ইরফান আড়চোখে একবার মাইরার দিকে তাকালো। এরপর ফোনের আলো অফ করে তার ড্রয়ারে রেখে ড্রয়ার লক করে রাখলো। মাইরা দেখল ইরফানের কাজ। বিরক্তি চোখে তাকালো ইরফানের দিকে। এই লোকটার কি তার কিছুই ভালো লাগে না? মাইরার রেগেমেগে অনেক কথা শোনাতে ইচ্ছে হলো, কিন্তু সে কিছু বললো না। অ’স’হ্যকর লোক একটা। কথাই বলবে না এই লোকের সাথে সে। সকালেও তাকে উল্টাপাল্টা বলেছে, তার মন খা’রা’প ছিল, নিজে নিজে ভালো করল। আর এই বিরক্তিকর লোকটা তাকে একটু ভালো থাকতে দেখলে যেন গায়ে আগুন লেগে যায়! মাইরা মুখ ফুলিয়ে রাখে।
ইরফান তার পরনের ব্লেজার, শার্ট খুলল। হাতঘড়ি খুলতে খুলতে মাইরার দিকে একবার তাকায়।
মাইরা দু’হাঁটুতে থুতনি ঠেকিয়ে রেখেছে। মাইরাকে দেখতে একটু অন্যরকম লাগছে, খেয়াল করল মাইরা আজকে পার্পল কালারের শাড়ি পরেছে। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
– শাড়ি পরেছ কেন?
মাইরা কিছু বললো না। মাথা নিচু করে মুখ বাঁকালো। তার ইচ্ছে হয়েছে, সে পরেছে। ইরফান মাইরাকে চুপ দেখে এগিয়ে এসে বলে,
– কি প্রবলেম? কথা বলছো না কেন?
মাইরা এবারেও কিছু বললো না। সে পণ করেছে ইরফানের সাথে কথা বলবে না। ইরফানের বিরক্ত লাগলো। মাইরাকে এখনো চুপ দেখে আবারও ধমকে বলে,
– স্টুপিট গার্ল।
এরপর ওয়াশরুমে চলে যায়। ইরফান ওয়াশরুমে যেতেই মাইরা বেড থেকে নেমে টেবিলের উপর রাখা ইরফানের ফোন নেয়। সেও এই ফোন লুকিয়ে রাখবে ভাবলো।
তার মনে পড়ল, ইরফানের ফোনে কার যেন পিক দেখেছিল, এই ভেবে ফোনের লক খুলতে চাইলো বার্ডফ্লাওয়ার লিখে, কিন্তু পাসওয়ার্ড ভুল দেখায়। মাইরার এতো রাগ হলো। এই লোকটা সব তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে করে। রেগেমেগে ইরফানের ফোন ছুঁড়ে ফেলল।
ছুঁড়ে ফেলার সাথে সাথে দু’হাতে নিজের মুখ চেপে বলে ওঠে, – ইন্না-লিল্লাহ!
দৌড়ে গিয়ে ইরফানের ফোন কুড়িয়ে নিয়ে চেক করল ঠিক আছে কি-না। উপরের গ্লাস ফেটে গিয়েছে। মাইরার চোখেমুখে অসহায়ত্ব। শেষ, ইরফান তাকে কাঁচা চিবিয়ে না খায়। ফোন যেখানে ছিল সেখানেই রেখে মাইরা ভদ্র হয়ে বেডের উপর গিয়ে বসে।
তখনই ইরফান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। শাওয়ার নিয়েছে। মাইরা আড়চোখে একবার তাকিয়ে আবারও চোখ নামিয়ে নিল। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরাকে দেখে। তখনই তার ফোনে কেউ কল করে। ইরফান এগিয়ে গিয়ে ফোন রিসিভ করতে গিয়েও স্ক্রিনের উপর চোখ পড়লে ভ্রু কুঁচকে যায়। মাত্র ভালো ফোন রেখে গিয়েছে, এতো বড় ফাটা দাগ কিভাবে পড়ল? ঘাড় বাঁকিয়ে মাইরার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
– ফোন নিজেই নিজেকে থা’প্প’ড় মেরেছে না-কি!
ইরফানের কথা শুনে মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায় ইরফানের দিকে। দ্রুত বলে ওঠে,
– আমি ফেলিনি আপনার ফোন।
কথাটা বলে মাইরা জিভেয় কা’ম’ড় দেয়। দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয়। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে গম্ভীর স্বরে বলে,
– Oh, I see.
কথাটা বলে সামান্য ঠোঁট বাঁকিয়ে বিড়বিড় করে,
“লিটল গার্ল
এরপর কল রিসিভ করে কথা বলায় ব্যস্ত হয়। মাইরা ইরফানকে কথা বলতে দেখল। মন খা’রা’প করে বসে রইল। একটু পর বেড থেকে নেমে বেলকনিতে যায়। ইরফান মাইরাকে বেলকনিতে যেতে দেখে কথা বলতে বলতে সেও বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। মাইরা পিছু ফিরে ইরফানকে দেখেই আবারও সামনে তাকালো। ইরফান আর মিনিট দুই কথা বলে ফোন রাখলো। এরপর মাইরার উদ্দেশ্যে বলে,
– রুমে এসো।
মাইরা যেন ইরফানের কথা শোনেনি। ইরফান চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। এতো শান্ত মেয়ে মাইরাকে সে টলারেট করতে পারছে না। রে’গে বলে,
– স্টুপিট, কি প্রবলেম কথা বলছো না কেন?
মাইরা তবুও কথা বললো না। ইরফান মাইরাকে টেনে তার দিকে ফিরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– কথা বলবি না-কি থা’প্প’ড় খাবি?”
মাইরার চোখ টলমল করে ওঠে। মাথা উঁচু করে ভারী গলায় বলে,
– আপনি একটা অ’স’ভ্য লোক। আমি কথা বলবো না আপনার সাথে। সরুন বলছি।
বলতে বলতে দু’হাতে ইরফানের উদাম বক্ষে ঠেলে সরিয়ে দিতে চায়। ইরফান হাতের ফোন বেলকনির কোনায় থাকা টেবিলের উপর ফেলে রেখে বা হাতে মাইরাকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। ডান হাত মাইরার গালে রেখে শীতল কণ্ঠে বলে,
– হোয়াট হ্যাপেন্ড?
মাইরা চুপ করে থাকে। ইরফান মাইরার গালে হাত দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– এই শাড়ি কোথায় পেয়েছ?
মাইরা নাক টেনে বলে,
– মা দিয়েছে।
ইরফান মাইরার গলা পেরিয়ে চুলের ভাঁজে আঙুল চালিয়ে বলে,
– শাড়ি পরেছ কেন?
মাইরা চুপ থাকে। ইরফান মাইরার ঘাড় থেকে চুলগুলো সরিয়ে, মাইরার ঘাড়ে ঠোঁট দাবিয়ে চুমু আঁকে। মাইরা ঢোক গিলে চোখ বুজে নেয়। ইরফান ধীরে ধীরে মাইরাকে তার দিকে টেনে নেয়।এলোমেলো হয় খানিক। মাইরা ইরফানের দিকে হেলে যায় না চাইতেও। ইরফান সূক্ষ্ম হাসলো। বিড়বিড় করে, – মাই বার্ডফ্লাওয়ার।
মাইরা তার শাড়ি খামচে কাঁপা কণ্ঠে বলে,
– কি করছেন?
ইরফান থামে। শুকনো গলা ভিজিয়ে মাইরার গলা থেকে মুখ উঠিয়ে নেয়। চোখ দু’টো লাল। অন্ধকারে মাইরা দেখতে পেল না। ইরফান মাইরাকে ছেড়ে দাঁড়ায়। মৃদুস্বরে বলে,
– গ্রামে যাবো। রেডি হয়ে নাও ফাস্ট।
কথাটা শুনেই মাইরা যেন একটা ঘোরের মাঝ থেকে ফিরলো। অবাক হয়ে বলে,
– সত্যি নিয়ে যাবেন?
ইরফান ছোট্ট করে বলে,
– আজকেই ব্যাক কর। সো, ফাস্ট রেডি হও।
মাইরা এবার ইরফানের ডান হাত ধরে আবদার করে,
– আজকে রাতটা থাকি প্লিজ!
ইরফান সাথে সাথে শব্দ করে বলে ওঠে,
– ইম্পসিবল।
মাইরা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। ইরফান নিজেও থতমত খায়। ভয়েস টোন না চাইতেও কেমন দৃঢ় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওই স্টুপিট বয়ের সাথে রাতে থাকা অসম্ভব। তার বউয়ের কাছে এসে ভাগ বসায়। অতঃপর মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
– তোমার ভাই স্টুপিট বয়।
মাইরা রে’গে বলে,
– হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা সবাই শুধু স্টুপিট, আর আপনি হলেন আসমান থেকে নেমে আসা ফেরেস্তা! অ’স’হ্য লোক একটা। আমার ওইটুকু ছোট ভাইটাকেও কথা শোনায়।
ইরফান কিছু বলতে গিয়েও বললো না। মাইরাকে আগের রূপে দেখতে পেয়ে ভালো লাগছে তার। কিছু না বলেই মাইরার হাত ধরে ঘরের ভেতর নিয়ে গিয়ে বলে,
– ফাস্ট কর।
মাইরা আর কথা না বাড়িয়ে রেডি হতে লাগলো। না থাকলেও গিয়ে দেখতে তো পাবে, একটু সময় থাকতে পারবে, এটাও শান্তি। এই ভেবেই মন ফুরফুরে হয়ে গেল।
ইরফান বাড়ির মেইন গেইটে দাঁড়িয়ে আছে। মাইরা জুতোর র্যাকে তার জুতা খুঁজে পায় না। ইরফান বিরক্ত হয়ে নিজেই এসে জুতোর র্যাক মেলে ধরে। পুরো র্যাক ফাঁকা দেখে ইরফান অবাক হয়। সে মাইরাকে যতগুলো জুতো কিনে দিয়েছিল, তা দিয়ে এই র্যাক পুরো ভরে গিয়েছিল। সব গেল কোথায়? সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মাইরার দিকে তাকালে মাইরা বলে ওঠে,
– আমি তো এইখানেই রেখেছিলাম। রিতা জানে হয়তো।
ইরফান গলা উঁচু করে রিতাকে ডাকে। রিতা ইরফানের গলা পেয়ে একপ্রকার দৌড়ে আসে। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
– ওর জুতো কোথায়?
রিতা দ্রুত এই র্যাক থেকে কিছুটা দূরে থাকা র্যাক থেকে মাইরা জুতো বের করে এনে রাখে। এই র্যাক পরিষ্কার করেছিল সে। তাই মাইরার জুতো এখান থেকে সরিয়েছিল। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
– বাকিগুলো কোথায়?
রিতা অবাক হয়ে বলে,
– আর তো নাই ভাইজান।
ইরফান অবাক হয়ে বলে,
– হোয়াট?
মাইরা জুতো জোড়া পরে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। এরপর ইরফানের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
– আমি এগুলো আমার পরিচিত সবাইকে দিয়ে দিয়েছি। আমার জন্য দুই জোড়া রেখেছি। বুঝেছেন?”
ইরফান বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় মাইরার দিকে। তার মনে পড়ল, সে যখন মাইরাকে বার্ডফ্লাওয়ার দিয়েছিল, তখনও মাইরা তার দেয়া বার্ডফ্লাওয়ার সবাইকে বিলিয়ে দিয়েছিল। সে ধরে নিল তখন মাইরা জানতো না তার কথা। কিন্তু এখন?
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৬০
ইরফানের চোয়াল শক্ত হয়। দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগান্বিত চোখে মাইরার দিকে তাকায়। ইচ্ছে করছে একে থা’প্প’ড় দিতে দিতে আজ মানুষ বানাতে। আর সহ্য করা যাচ্ছে না একে।
মাইরা ইরফানকে দেখে একটু ভ’য় পায়। মনে হচ্ছে অনেক রে’গে গিয়েছে। মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কিছু বলতে চায়, তার আগেই ইরফান মাইরার মুখ ডান হাতে শক্ত করে চেপে রাগান্বিত স্বরে বলে,
– কি বললি? আবার বল?
মাইরা মুখে ব্য’থা পায়। ইরফানের আচরণেও অবাক হয়। আজ অনেকদিন পর যেন আগের ইরফানকে দেখতে পেল। ইরফান চিৎকার করে বলে,
– স্টুপিট গার্ল, কাকে দিয়েছিস এসব? স্পিক আপ।
