প্রণয়ের প্রিয়কাহন পর্ব ৪
শার্লিন হাসান
ইশরাক পুনরায় বলে, “কবে মারা গেছে?”
জাইমা চটজলদি বলে, “গতকাল রাতে।”
সবাই জাইমার মুখপানে তাকায়। ইশরাক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, “আগামী তিনদিনের মধ্যে এসাইনমেন্ট কমপ্লিট করে জমা দিবেন। সীট ডাউন।”
জাইমা হাফ ছেড়ে বাঁচে। চুলের আগা আঙুলের মাথায় পেঁচাতে পেঁচাতে বসে পড়ে। ইশরাক জাইমার দিকে একবার তাকিয়ে নিজের ক্লাসে মনোযোগ দেয়। জাইমা চুপচাপ শোনে। ইশরাকের ক্লাস শেষ হতো বেরিয়ে আসলে জাইমাও পিছু ছুটে। করিডোর আসতে জাইমা পেছন থেকে বলে, “স্যার,ওয়ান মিনিট প্লিজ।”
ইশরাক দাঁড়িয়ে যায়। জাইমা তার সামনে দাঁড়িয়। গলা ঝেড়ে বলে, “গাড়ির গ্লাসের জরিমানা?”
ইশরাক জাইমার কথায় অবাক না হয়ে পারেনা। মেয়েটার তেমন লজ্জা নেই বুঝে নিলো সে। ইশরাক কিছু বলতে যাবে জাইমা চটজলদি বলে উঠে, “গাড়িটা আমার একটা ফ্রেন্ডের। আসলে কীভাবে বলব! আপনাকে না বললে গাড়িটা ঠিক করাও পসিবল না। আমার হাতে টাকা নেই, বাবাও দিতে পারবেনা।”
ইশরাক ভ্রু কুঁচকে বলে, “কেন?”
“সব বলব?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইশরাক আশেপাশে চোখ বুলিয়ে তাকায়। জাইমাকে বলে, “আপনার বলতে আপত্তি না থাকলো বলুন।”
জাইমা খুশি হয়ে যায়। হাত নাড়িয়ে বলে, “আসলে আমার বাবার তেমন টাকা পয়সা নেই। আমরা তিন ভাই-বোন। বড়বোনও ভার্সিটি পড়ছে। ছোট ভাইও ভালো একটা স্কুলে পড়ছে। আমিও পড়ছি! কত খরচ তাইনা? দাদী এতোদিন অসুস্থ হয়ে হসপিটালে ছিলো। আজকে তাড়াহুড়োয় বন্ধুর গাড়ি ধার নিয়ে ভার্সিটি এসেছি। এখন তো আপনি সেটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। আমি কোথা থেকে এতো টাকা আনব?”
জাইমার কথায় ইশরাক কিছুক্ষণ চুপ থাকে। জাইমাকে উপরনিচ পরখ করে। হাতের দিকে নজর যেতে দেখে নামী-দামী ব্র্যান্ডের ওয়াচ। গলায় একটা লকেট ঝুলছে। খুব সম্ভবত ডায়মন্ডের হবে। বেশভূষায় বড়লোক লাগলেও মেয়ের কথাবার্তা তো অন্য রকম লাগছে। ইশরাক জাইমার দিকে তাকিয়ে বলে, “আপনার হাতের ওয়াচ টা বেশ এক্সপেন্সিভ।”
জাইমা কৃত্রিম হাসি টেনে বলে, “আরেহ না। ফুটপাত থেকে আড়াইশ টাকা দিয়ে কিনেছে।”
“আমি দাম জানতে চাইনি।”
জাইমা মাথা নাড়ায়। দুহাতে নিজের চুল ঠিক করতে,করতে গলার লকেট লুকানোর চেষ্টা করলেও ইশরাকের চোখ সেটা এড়ায়নি। সে দেখেও না দেখার ভাণ করে বলে , “কত টাকা লাগবে?”
“লাগবে না। আপনি গাড়ির গ্লাস টা ঠিক করে দিবেন।”
“আপনাকে টাকা দিচ্ছি, ঠিক করে নিবেন। আমার হাতে তেমন সময় নেই।”
জাইমা মাথা নাড়ায়। ইশরাক জাইমার দিকে নিজের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বলে, “আগামী কালকে ফেরত দিবেন।”
“পাসওয়ার্ড?”
ইশরাক পাসওয়ার্ড বলে। জাইমা খুশি হয়ে বলে, “ধন্যবাদ স্যার।”
জাইমা চলে গেলে ইশরাক অস্পষ্ট স্বরে বলে, “স্ট্রেঞ্জ! এই মেয়ের সাথে আর দুই দিন কথা বললে আমি পাগল হয়ে যাব। ভারী অদ্ভুত মেয়ে তো! চেয়ে টাকা নিলো? সিরিয়াসলি?”
জাইমা ক্রেডিট কার্ড হাতে পেয়ে বেশ খুশি। এতো সহজে দিয়ে দিলো? আচ্ছা টাকা আছে তো এটায়? কত টাকা হবে? হয়ত টাকা নেই সেজন্য এতো সহজে দিয়ে দিয়েছে। টিচার্সরা কিপটে হয়। সেখানে ইশরাক নিজের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে দিলো জাইমাকে? জাইমার সন্দেহ হচ্ছে! কিসের বিশ্বাস আর ভিত্তিতে ইশরাক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে দিলো?
ওয়েট! ইশরাক তাকে চিনে না তো? তার বাবা তো খোঁজ খবর নেয় নিশ্চয়ই! ভেবেই জাইমার মাথায় হাত চলে যায়।
বাকী ক্লাসগুলো মনোযোগ সহকারে করতে পারলো না। বেরিয়ে নিজের গাড়ির কাছে আসে। ফাটা গ্লাসের দিকে নজর দেয়। এখন এটা ঠিক করার জন্য যেতে হবে। ভেবেই জাইমা কপাল চাপড়ায়। কিছুক্ষণ গাড়ির দিকে তাকিয়ে থেকে ভেতরে বসার জন্য উদ্বুদ্ধ হতে সেখানে একটা ছেলে উপস্থিত হয়। জাইমা তাকে দেখেও না দেখার ভাণ করে। কিন্তু ছেলেটা আগ বাড়িয়ে বলে, “এই গাড়িটা তাহলে তোমার?”
জাইমা উপরনিচ মাথা নাড়ায়। গাড়ির ডোর খুললে ছেলেটা বলে, “সো স্যাড! এতো সুন্দর এক্সপেন্সিভ গাড়িটার কী হাল করে দিলো। কে করেছে এরকম?”
“গোলামেরপুত। ”
জাইমার কথায় ছেলেটা মহা মুশকিলে পড়ে যায়। গালিটা কী তাকে দিলো? জাইমা ছেলেটার মুখের অবস্থা দেখে বলে, “গাড়িটার এই হাল যে করেছে, তার নাম গোলামেরপুত।”
তখন গাড়ির ডোর বন্ধ করার আওয়াজ আসতে জাইমা পাশ ফিরে তাকায়। ইশরাক গাড়িতে বসেছে। জাইমা তাকে দেখে জিভ কাটে। আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে গাড়ি নিয়ে রওনা হয় সে।
বাসায় এসে হাফ ছাড়ে ইশরাক। কী মেয়ের পাল্লায় পরল সে! ভেবেই বিরক্তিতে নাকমুখ কুঁচকে নেয়। ইশরাক সোফায় বসতে আগমন হয় দু’জন রমণী। একজন পোহা আরেকজন ইশরাত। পোজা ইশরাকের আন্টির মেয়ে। ইশরাত তার আপন বোন। ইশরাককে দেখে ইশরাত বলে, “ভাইয়া ক্রেডিট কার্ড দিও। আজকে সন্ধ্যায় শপিং করতে যাব।”
“আগামী কালকে যেও।”
“কেন? আজকে গেলে কী সমস্যা?”
“কার্ডে তেমন টাকা নেই। ত্রিশ হাজারের মতন আছে।”
“হয়ে যাবে।”
“আজকে আমার কাজ আছে। তুমি আগামী কালকে যেও।”
ইশরাকের কথায় ইশরাত পোহার দিকে তাকায়। পোহা চোখ দিয়ে ইশারা করে, আর কিছু না বলতে। তাঁদের ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় ইরা। এসেই ইশরাকের গলা জড়িয়ে ধরে বলে, “পাপা চককেত দাও।”
“তোমার পিপিকে বলো দিতে। পাপা টায়ার্ড মা।”
ইশরাকের থেকে আগ বাড়িয়ে ইরাকে নেয় পোহা। ইশরাক উঠে চলে যায়। পোহা ইরাকে নিয়ে নিজের রুমে যায়। দু’টো চকলেট ইরাকে ধরিয়ে দিয়ে বলে, “আমি তোমার কে হই বলোতো ইরা?”
ইরা চকলেট পেয়ে খুশি হয়ে বলে, “পুচা আন্তি।”
“না। বলো, পোহা মাম্মাম।”
“নো! পাপার বুউ আমাল মাম্মাম হবে। তুমি আন্তি।”
পোহা ইরার দুগাল চেপে ধরে বলে, “আমাকে মাম্মাম বলো।”
“নো!”
কথাটা বলে পোহার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় ইরা। দৌড়ে চলে আসে সেখান থেকে। পোহা ইরার যাওয়া দেখে বলে, “কোথায় যাচ্ছ?”
ইরা কোন জবাব দেয়না। সে সোজা তার আম্মুর রুমে চলে যায়। এসেই তার আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরে চুপ করে থাকে। কোন টুঁ শব্দ করেনা।
গাড়ির পেছনে গুনে,গুনে পঁচিশ হাজার টাকা গেছে জাইমার। সবটাই ইশরাকের কার্ড থেকে। সে তো ভেবেছিল তাকে ব্যালেন্স বিহীন কার্ড ধরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু না, বেটার কার্ডে ব্যালেন্স ছিলো। বেশভূষায় ভালোই বড়লোক মনে হয়।
জাইমা গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরে। গ্যারেজে গাড়ি থামিয়ে গাড়িকে সালাম করে বলে, “আজকেই শেষ। আর কোনদিন তোকে নিয়ে আমি বের হব না।”
পা টিপে, টিপে ভেতরে যায় জাইমা। নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। মনে,মনে একশএকবার তওবা পড়ে নেয়। আজকের দিনে কতগুলো মিথ্যে বলল সে। জিন্দা দাদীকে মৃত বানিয়ে দিলো। নিজের পরিবার নিয়ে একগাদা মিথ্যে বললো। কিন্তু, গাড়ির গ্লাস ইশরাক ভেঙেছে টাকা সেই দিবে। জাইমা কেন দিবে? টাকা উদ্ধার করা আসল কথা। সেটা যেভাবেই হোক।
কিন্তু তবুও নিজের কাছে কেমন জেনো লাগছে। প্রথমে তো নেচে,নেচে নিয়ে আসল। এখন তো খারাপ লাগছে। নিজের কাছে ছোট লাগছে। কবে জানি সে ধরা পড়ে যায়। ভেবেই শুকনো ঢোক গিলে।
সন্ধ্যায় রুপাকে নিয়ে বেরিয়েছে জাইমা। এসেছে একটা রেস্টুরেন্টে। মূলত ফাস্টফুড খাওয়ার জন্য। খাবার অর্ডার দিয়ে রুপার কাছে আজকের সব ঘটনা বলছে জাইমা। জাইমার কথাবার্তা শোনে রুপা কী বলবে ভেবে পেলো না। এই মেয়ের আজাইরা বুদ্ধি! তার বাবা-মা শোনলে নির্ঘাত বকাঝকা করবে। জামিলা শোনলে শিওর জাইমাকে কয়েক গা লাগিয়ে দিবেন।
এরকম উড়নচণ্ডী মেয়ের বর যদি গম্ভীর হয় তাহলে হলো! জাইমার সব উড়নচণ্ডী ভাব,আজাইরা কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাবে। রুপাকে ভাবনায় তলানো দেখে জাইমা বলে, “তুমি কী ভাবছ?”
“কিছুনা। ভাবছি তোমার বর যদি…
” দোয়া করো আমার বিয়েটা যাতে তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। এসব পড়াশোনা ভালো মানুষ করে? কী যন্ত্রণা! আজকে নাহয় একটা বলে সেরে গেলাম। ভবিষ্যতে আর কী,কী বানিয়ে বলব? দাদীকে মেরেছি, এরপর নাহয় দাদাকে মারব। তারপর কাকে মারব? নিজের বরকে?”
রুপাকে মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে জাইমা। রুপা জবাব দেয়,
“এরপর নিজেকে মৃত বলিও।”
“দেখা যাচ্ছে, সামনে তাই করতে হবে। রাহেলা বানু আমার বিয়েতে বাঁধা দেয় কেন? একে তো বললো ছেলে এনে দিবে। এখনো খবর নাই তার।”
প্রণয়ের প্রিয়কাহন পর্ব ২+৩
“হ্যাঁ শুনেছি।”
“কী শুনেছ?”
“তোমার বিয়ে নাকী আগে থেকে ঠিক করা।”
“কীহহহহহ্! কার সাথে? আমি কেন জানিনা?”