প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৩২
আদ্রিতা নিশি
আরশাদ সাহেব থ হয়ে বসে আছেন নিজ বিছানায়। মুখ অধিক থমথমে । মুখে কোনো কথা নেই। একবারও টু শব্দ করেননি। সব কথা যেনো গলদেশে আঁটকে গেছে। ছেলের মনে অরিত্রিকাকে নিয়ে এসব ভাবনা ছিলো তা শুনে এক মুহুর্তে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। অতিশয় চিন্তার রেখা কপালে ফুটে উঠেছে। রগগুলো টানটান হয়ে আছে। আধা ঘন্টা হয়ে গেলো তবুও কোনো সুরাহা করতে পারলেন না। এই বয়সে এসে সোনার টুকরো ছেলে যে তার নিজ ভাইকেই তারই বেয়াই বানানোর জন্য উঠে পরে লেগেছে এটাই অবাক করেছে আরশাদ সাহেবকে। ভাইয়ের সামনে কিভাবে যাবেন ছেলের সমন্ধ নিয়ে?স্কুল,কলেজের গন্ডি পেরিয়েছে সারহান কিন্তু মেয়ে ঘটিত কোনো রিপোর্ট শুনেননি। আর বিয়ের বয়সে এসে ছেলে যে কাউকে ভালোবাসবে তা যেনো আরশাদ সাহেবের কাছে কল্পনাতীত ছিলো। ভালোবাসা খারাপ নয়। কিন্তু তাই বলে নিজের চাচাতো বোনকে ভালোবাসতে হবে? এটা আরশাদ সাহেবের কাছে কঠিন অন্যায় মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে।
কঠোর দৃষ্টিতে সারহানের দিকে আরশাদ সাহেব তাকিয়ে আছেন। সারহান চিন্তামুক্ত হয়ে নির্বিকার চিত্তে ফোন টিপে চলেছে সোফায় বসে। মনে হচ্ছে কোনো চিন্তাই নেই। এতো বড় কথা বাবার সামনে বলে কেমন স্বাভাবিক ব্যবহার কেনো করছে তা আরশাদ সাহেব ভেবে পাচ্ছেন না।এই প্রথম কোনো ছেলেকে দেখলেন তিনি নিজ মুখে বিয়ের কথা বলতে। ভাবতেই উদ্ভট লাগলো।
আরশাদ সাহেব সারহানকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর গলায় বললেন~ আমি আজমলকে বিয়ের কথা বলতে পারবো না।তুমিও এ বিষয়ে কোনো কথা বাড়িতে না বললে খুশি হবো। অরিত্রিকার ভাবনা মাথা হতে ঝেড়ে ফেলো।
সারহান তাকালো আরশাদ সাহেবের দিকে তার দৃষ্টি সরল।সে বললো~ এখনই চাচার সঙ্গে বিয়ে নিয়ে কিছু বলার দরকার নেই। আর অরিত্রিকাকে ঘিরে ভাবনা মস্তিষ্ক হতে কখনোই যাবে না। ভাবনাগুলো মেমোরি কার্ডে আবদ্ধ নয়, যখন ইচ্ছা চাইলেই ডিলিট করে দিবো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরশাদ সাহেবের সারহানের হেঁয়ালি পূর্ণ কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে গেলো। তিনি বললেন~ তুমি কি চাইছো সঠিক বলবে? অরিত্রিকা আমাদের চৌধুরী বাড়ির ছোট মেয়ে। তোমাদের দুই ভাইকে যতোটা স্নেহ করি, ততোটা অরিত্রিকাকেও স্নেহ করি। ওকে নিয়ে এমন কিছু করো না যার কারণে আমাদের সম্মানে আঘাত লাগে।
সারহান বুঝলো বাবার বিচলিত ভাব। সে জানে আরশাদ সাহেব অরিত্রিকাকে অনেক ভালোবাসেন আর স্নেহ করেন। একজন বাবা মেয়েকে যতোটা আগলে রাখে ঠিক ততোটাই আগলে রাখার চেষ্টা করেন।
সারহান সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো~ আমি চাইছি অরিত্রিকা নিজেকে গুছিয়ে নিক। মাত্রই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।পড়াশোনা, নিজের জীবন এখনই গড়ে নেওয়ার সময়। নিজেকে কিছুটা সময় দিয়ে জীবনটা গুছিয়ে নিতে থাকুক। আমি না হয় একটু অপেক্ষা করে অরিত্রিকা কে নিজ জীবনে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করে দুজনের জীবন গুছিয়ে নিবো।
সারহানের কথা শুনে আরশাদ সাহেব কিছুটা নরম হলেন। তিনি বুঝেছেন ছেলে তার একরোখা। যা চাইবে তা যেকোনো মূল্যে নিয়েই ছাড়বে। অরিত্রিকাকে সারহান ভীষণ ভালোবাসে তা আরশাদ সাহেবের আর বুঝতে বাকি রইল না। ভাইকে কি ভাবে সবটা বলবেন তিনি?শেষ বয়সে এসে ছেলের জন্য এখন ভাইয়ের মেয়ের বিয়ের কথা বলতে হবে ভাবতেই বিরক্ত হলেন তিনি। চঞ্চল মেয়েকে তার বদ মেজাজি, গম্ভীর ছেলের সাথে সহজে বিয়ে দিতে চাইবেন না আজমল সাহেব। দুজন দুই মেরুর মানুষ। এদের বিয়ে কি আদৌও সম্ভব?
~ তোমার যে ভয়ংকর রাগ আজমল তার মেয়েকে তোমার হাতে সহজে দিবে না এটা মাথায় রেখো।
সারহান আরশাদ সাহেবের কথা শুনে বললো~ আমার রাগ অন্যায়কারীদের ওপর প্রকাশ করি। অরিত্রিকা কোনো অন্যায়কারী নয়। তাই রাগ নয় ভালোবাসা প্রকাশ করবো তার প্রতি। আমার ভালোবাসা,অনুভূতি ঠুনকো নয়। জীবন সঙ্গীনিকে কি ভাবে আগলে রাখতে হয় তা আমি জানি।
~ লজ্জা করছেনা বাবার সামনে ভালোবাসার কথা বলছো?
সারহান সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো। স্বাভাবিক ভাবে বললো~ ভালোবাসার কথা বলেছি এতে লজ্জা কেনো করবে? এমন করে বলছেন মনে হচ্ছে বিয়ের পর বাসর রাতের কথা আপনাকে বলছি।
আরশাদ সাহেব মুখ কুঁচকে বললেন~ নির্লজ্জ এটা।আমি অবাক হচ্ছি এটা জেনে তুমি আমার সামনে এসব বলছো! আগে তো এমন ছিলেনা।
সারহান আরশাদ সাহেবকে ব্যঙ্গ করে বললো~ আমি তোমার ছেলে।তোমার গুণ গুলোই তো আমি পাবো স্বাভাবিক। মায়ের সাথে রিলেশন তোমার থাকাকালীন ঘটনা আমি শুনেছি। সেগুলো আর না বললাম। এখন আবার বলো না আমি কার মতো হয়েছি?
আরশাদ সাহেব ছেলের মুখে এমন কথা শুনে লজ্জা পেলেন। লজ্জায় যেনো মাথা কা টা যাচ্ছে। সত্যি কথা শুনেই খুকখুক করে কেশে উঠলেন তিনি । এতোদিন ছেলেকে নিয়ে গর্ব করেছেন তিনি। সারহান তো তার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে। এসব গোপন খবর বাহিরে যাওয়া মানে তার সম্মান শেষ।
সারহান আবারও বলে উঠলো~ প্রস্তুতি নিন আপনার ভাইকে মানানোর। চাচাকে কিভাবে মানাবেন সেটা আপনার ব্যাপার। যদি না মানাতে পারেন তবে আলাদা পন্থা অবলম্বন করতে বাধ্য হবো আমি।
সারহানের ঠান্ডা মাথার হুমকি শুনে আরশাদ সাহেবের কাশি থেমে গেলো। অবিশ্বাস্য চাহনিতে ছেলের দিকে তাকালেন। ছেলে তো নয় যেনো মাফিয়া।সারহান আরশাদ সাহেবকে আর কিছু বললো না। ফুরফুরে মেজাজে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আরশাদ সাহেব সারহানের চলে যাওয়ার দিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলেন। নিজেকে প্রশ্ন করলেন “এই ছেলে আমার তো?”
সারহান আরশাদ সাহেবের রুম থেকে বেরোতেই চোখে পরলো সাদাত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে এগিয়ে গেলো সাদাতের কাছে। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো~ তুই এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস?
সাদাত দরজার পাশ হতে কিছুটা সরে এলো। দাঁত কেলিয়ে বললো~ রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিলাম। তোমরা তো জরুরী কথা নিয়ে আলোচনা করছিলে তাই।
সারহান ভাইয়ের দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে বললো~ তোকে পাহারা দিতে বলা হয়েছে?
সাদাত একটু ভাব নিয়ে বললো~ বলো নি। কিন্তু আমি তো তোমাদের সিক্রেট কথা কেউ না জানে তাই হেল্প করেছি। তোমার আমাকে ধন্যবাদ জানানো উচিত অথচ তা না করে কথা শুনাচ্ছো।
সারহান সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো~ফালতু কাজের জন্য তোকে কখনো ধন্যবাদ দিবো না।ওয়েট এ্যা মিনিট তারমানে তুই সব কথা শুনেছিস।
সাদাত ধরা পরা চোরের ন্যায় দৃষ্টি লুকালো। সে তো সারহান আর আরশাদ সাহেবের সব কথা শুনেছে। ইচ্ছে করে শুনেনি। নিচ তলায় যাওয়ার সময় অরিত্রিকাকে নিয়ে কথা হচ্ছিলো।তখন কি কথা হচ্ছে আগ্রহী হয়ে শুনেছে। প্রথমে কথোপকথন শুনে সাদাতের মাথা ঘুরে উঠেছিলো। সারহান যে অরিত্রিকার বিষয় নিয়ে এতোটা সিরিয়াস জানতো না। বিয়ের কথা শুনে যেনো দিন দুনিয়া ভুলে বসেছিলো সে। একের পর এক ধাক্কা খেয়েছে সে। এতেই চোখে অন্ধকার দেখছে। সারহান চাপা স্বভাবের সকলেই জানে। চাপা স্বভাবের আড়ালে নিজের অনুভূতি দমিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছে ভাবতেই সাদাতের অবাকতার রেষ আকাশ ছুঁয়েছে।
সাদাত মিনমিনে কন্ঠে বললো~ হুমম। শুনেছি।
সারহান সাবধানী কন্ঠে বললো~ যা শুনেছিস তা আর কারো কানে যেনো না যায়।
সাদাত দ্রুততার সহিত বললো~ ঠিক আছে ভাই। কাউকে বলবো না।
সারহান সেখান হতে চলে যাবে এমন সময় সাদাতকে ডেকে বললো~ চল আমার সাথে।
সাদাত বললো~ কোথায়?
~আমার রুমে। অনেকদিন আড্ডা দেওয়া হয় না তোর সাথে। দুই ভাই মিলে আজ আড্ডা দিবো সারারাত।
সাদাত সারহানের কথা শুনে লাফিয়ে উঠলো। তার ভীষণ ভালো লাগছে।কতোদিন পর ভাইয়ের সাথে আড্ডা দিবে ভাবতেই মন খুশি হয়ে গেলো। সাদাত আর দেরি করলো না সারহানের কাছে গেলো। সারহান আর সাদাত হাঁটছে। দুজনেই চুপ।
সাদাত হাঁটতে হাঁটতে সারহানকে বললো~ ভাই একটা কথা বলি। অনেকক্ষণ ধরে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে বিষয়টা।
সারহান হাঁটতে হাঁটতে উত্তর দিলো ~ বল।
সাদাত মুখ গোমড়া করে বললো~তোমার থেকে এমনটা আশা করিনি ভাই। চাচাতো বোনকে ভাবি ডাকতে হবে ভাবতেই অদ্ভুত লাগছে। তোমার থেকে তো আমি বেশী টেনশনে আছি। এখন থেকেই অরিকে ভাবী ডাকার প্রেকটিস করা শুরু করতে হবে। আবার তুমি হবে আমার দুলাভাই ভাবা যায়! কোন দিকে যাবো আমি? মাথা ঘুরে যাচ্ছে তো।
সারহান হাঁটা থামিয়ে সাদাতের দিকে তাকালো।সাদাতের মাথা নেড়ে দিয়ে বললো~ এসব নিয়ে টেনশন না করে পড়ালেখা নিয়ে টেনশন কর তাও রেজাল্ট ভালো হবে।
সাদাত চুপ মে’রে গেলো। সারহান সাদাতকে পিছু ফেলে নিজ রুমে প্রবেশ করলো। সাদাত গোমড়ামুখে সারহানের পিছুপিছু গেলো।
সকাল সকাল সারহানের বন্ধু মহল চৌধুরী বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছে। রাতেই রওনা দিয়েছিলো। সকাল থেকেই তানিয়া বেগম, সাথী বেগম মেহমান দের আপ্যায়নের জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছিলেন। রাই,মুন, পৃহাল, ইফাত ফ্রেশ সকলের সাথে সকালের খাবার খেয়েছে। আরশাদ সাহেব আর আজমল সাহেব খাওয়াদাওয়া করে নিজেদের অফিসে গিয়েছেন।
আরশাদ সাহেবের রাতের ঘটনার পর থেকে মন মেজাজ কোনোটাই ভালো নেই। সারহানকে এড়িয়ে চলছেন তিনি। সারহানের বন্ধু মহলের সাথে দুই একটা কথা বলেছিলেন। বাড়ির কারো সাথেই তেমন একটা কথা বলছেন না।গম্ভীর হয়ে আছেন। আজমল সাহেব আরশাদ সাহেবের আজব ব্যবহার খেয়াল করলেও তেমন পাত্তা দেননি। অফিসের দেরি হয়ে যাওয়া কোনো মতে সকলের সাথে কথা বলে দুই ভাই বেরিয়েছেন।
সকালের খাবার খেয়ে সকলে ছাদে উপস্থিত। শুধু তানিয়া বেগম, সাথী বেগম, সাদাত বাদে। তারা দুজনে কাজে ব্যস্ত এখনো। সাদাত বাড়িতে নেই।
অরিত্রিকা ছাদের এককোণে রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে রাস্তার গাড়ি দেখতে ব্যস্ত। কেমন ব্যস্ততা দেখিয়ে গাড়ি এক গাড়িকে পিছু ফেলে নিজ গন্তব্যে ছুটে চলেছে। যানবাহনে ভরপুর রাস্তাঘাট।মানুষও প্রতিদিনের ন্যায় নিজ কর্ম স্থানে যাচ্ছে। কি দ্রুততার সহিত জীবন চক্র চলছে। সকাল দশটা বেজে গেছে। আজ আকাশ মেঘলা। মেঘলা আকাশে মেঘগুলো তুলোর ন্যায় উড়ে যাচ্ছে। দেখতে মন্দ লাগছে না। শীতল বাতাস বইছে। রোদেরও তেমন দেখা মিলছে না। হয়তো বৃষ্টি নামবে ধরণীতে। প্রকৃতি আসলেই মন ভালো করে দেয়।আজও বৃষ্টি নামবে। ভাবতেই অরিত্রিকা লম্বা শ্বাস টেনে নিলো। এই তো দেড় মাস আগেও বৃষ্টি হয়েছিলো।সময়টা অনেক কষ্টকর ছিলো। সেই বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধিয়েছিলো সে। আচ্ছা সারহান ভাইকে সে জ্বরের ঘোরে কি বলেছিলো? তা আজও সারহানের থেকে উদঘাটন করতে পারেনি। অনেকবার চেষ্টা করেছে কিন্তু সারহান বিষয়টা এড়িয়ে গেছে।অরিত্রিকার চুলগুলো হালকা বাতাসে নড়ছে। গভীর ভাবনাতে মত্ত আজ সে। সারহান আজ ব্যস্ত তার বন্ধু মহলের সাথে। সকলে আজ আড্ডায় মজেছে। এতোদিনের নানা জমে থাকা কথা নিয়ে যেনো আড্ডা জমে উঠেছে। সাদাত ভার্সিটিতে গিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।কিছুদিন পরে পরীক্ষা তাই ক্লাস মিস দেওয়া যাবে না।
~ অরিত্রিকা তুমি একা এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো আমাদের সাথে জয়েন হও।
অরিত্রিকা মুনের কন্ঠস্বর শুনে তড়িৎ বেগে পেছনের দিকে তাকালো। মুন একা নয় রাই ও আছে।
অরিত্রিকা সংকোচ নিয়ে বললো~ ফ্রেন্ডরা মিলে সকলে আড্ডা দিচ্ছেন আমি ওখানে গিয়ে কি করবো?
মুন বললো~ আমাদের সাথে আড্ডা দিবে।
অরিত্রিকা বললো~ আপনারা সকলে আড্ডা দিন আমি এখানেই ঠিক আছি।
রাই তখনই গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো~ বড়দের কথা শুনতে হয়। আমরা তোমার অনেক সিনিয়র আর আমাদের কথা শুনছো না?
অরিত্রিকা ভড়কে গেলো।
রাই অরিত্রিকার হাত টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো~ আমাদের আপু বলেছো অথচ আপুদের সাথে আড্ডা দিতে সংকোচ করছো এটা কেমন কথা?
অরিত্রিকা আসলে লজ্জা সংকোচের কারণে সবার সাথে কথা আড্ডা দিতে যায়নি। যতোই হোক তার থেকে বড় বলে কথা। ছোট হয়ে বড়দের আড্ডা মহলে থাকা দৃষ্টিকটু দেখায়।তাই দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো।
সারহান, পৃহাল, ইফাত নিজেদের মাঝে কথা বলছে। সারহান নিজে ইলেকশন করবে তাও আবার এমপি পদে এটা শুনে সকলেই আশ্চর্যিত হয়েছে। আজই সারহান তাদের জানালো। এই নিয়ে তিন বন্ধু আলাপ শুরু করে দিয়েছে।
মুন, রাই,অরিত্রিকা তিনজনে সারহানদের কাছে আসলো। দেখলো তিনজনে রাজনৈতিক আলাপে ব্যস্ত।
রাই বিরক্ত হয়ে বললো~ তোদের এসব রাজনৈতিক আলাপ বাদ দে।
তিনজনে থেমে গেলো তখনই। তিনজনই রাইয়ের দিকে তাকালো। সারহান রাইয়ের কথায় তাকালেও তার দৃষ্টি আটকালো অরিত্রিকার দিকে। কাচুমাচু ভঙ্গিতে মুনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
মুন বললো~ এতোক্ষণ এতো বকবক করলি ভুলে গেছিস আমাদের সাথে অরিত্রিকা আছে। বেচারা মন খারাপ করে করে দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো।
অরিত্রিকা মুনের কথার বিরোধীতা করে বললো~ না,না আমি মন খারাপ করিনি। এমনই দাঁড়িয়ে ছিলাম।
পৃহাল বললো~ সত্যি মন খারাপ করোনি তো? আসলে অনেকদিন পর সারহানের সাথে সামনাসামনি আবার দেখা হলো তাই কথায় এতোটাই ব্যস্ত ছিলাম তোমার কথা আমাদের মনে ছিলো না।
অরিত্রিকা ধীরে বললো~ আমি কিছু মনে করিনি ভাইয়া।
পৃহাল মুনকে বললো~ দেখেছিস অরিত্রিকা মন খারাপ করেনি।
মুন পৃহালকে মুখ বাকালো।
রাই সবার উদ্দেশ্যে বললো~ গাইস আমি ভেবেছি আজ বিকেলে আমরা আমাদের ভার্সিটিতে ঘুরতে যাবো সকলে মিলে। আমাদের সাথে যোগদান করবে সাদাত, অরিত্রিকা আর ইশরা।অনেক মজা করবো।
সারহানের প্রস্তাবটা পছন্দ হলো। সে বললো~ ঠিক আছে যাওয়া যায়।
ইফাত আর পৃহালও দ্বিমত করলো না। তারাও রাজি হয়ে গেলো।
সারহান আশেপাশে তাকিয়ে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে বললো~ আবহাওয়া খারাপ। হয়তো বৃষ্টি হবে। তোরা ভেতরে যা।
সারহানের কথা শুনে সকলেই খেয়াল করলো আসলেই অন্ধকার হয়ে আসছে। আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছে।বাতাসের বেগও বেড়েছে। সারহানের বন্ধুমহল আর দেরী করলো না ছাদে দ্রুত পায়ে ছুটলো নিচে। সারহান নিচে যাবে তখন দেখলো অরিত্রিকা এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। সে আর না গিয়ে অরিত্রিকার কাছে আসলো। অরিত্রিকা সারহানকে পাশে এসে দাঁড়াতে দেখে কিছুটা চমকে গেলো।
সারহান ভরাট কন্ঠে শুধালো~ আজও কি বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছে হয়েছে?
অরিত্রিকা মাথা নাড়িয়ে বললো~ নাহহ।
~ তাহলে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
~ভালো লাগছে।
সারহান প্রগাঢ় দৃষ্টিতে অরিত্রিকার পাণে চাইলো। অরিত্রিকাকে কেমন উদাস মনে হচ্ছে। সারহান কিছুটা বিচলিত ভাব অনুভব করলো নিজের মাঝে। চিন্তিত হলো সে।
সারহান বিচলিত ভাব বুঝতে না দিয়ে বললো~ কি হয়েছে?
অরিত্রিকা সারহানের দিকে তাকালো।বললো~ জানি না। কিছু ভালো লাগছে না। অস্থির লাগছে খুব।
সারহান অরিত্রিকার কথা শুনে নিজ হাতের উল্টোপাশে দিয়ে অরিত্রিকার কপাল ছোয়ালো। তাপমাত্রা স্বাভাবিক। সারহান হঠাৎ কপালে হাত ঠেকানোতে অরিত্রিকা চমকে উঠলো।তার শরীর শিরশির করে উঠলো।সে একধাপ পিছিয়ে গেলো।
সারহান নিজের হাত গুটিয়ে নিয়ে বললো~ জ্বর আসে নি তো। তাহলে কি মন খারাপ?
অরিত্রিকা উত্তর দিলো না।
সারহান শাসনের স্বরে বললো~ আজ মন খারাপ থাকলেও বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না। আরেকবার কি হয়েছিলো মনে আছে?
অরিত্রিকা উদাসীন ভঙ্গিতে উত্তর দিলো ~হুমম।
সারহান কিছুটা মজার ছলে বললো~ তোর জ্বরের কারণে কিন্তু তোর মনের আশা পূরণ হয়েছে।
অরিত্রিকা অবুঝ কন্ঠে বললো~ কিভাবে?
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৩১
সারহান অদূর আকাশে তাকিয়ে অতি শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো~ কারো ভালোবাসার মানুষকে হারানোর আহাজারি শুনেছিলাম। ভালোবাসার গোপন অনুভূতির নাগাল পেয়েছিলাম। আমার মরুভূমির ন্যায় শুকনো হৃদয়ে প্রথমবারের মতো বৃষ্টি নেমেছিলো। বিচলিত হয়েছিলো মন। তবে তার আহাজারি কষ্টে জর্জরিত কথাগুলো ভালোবাসার মানুষটিই শুনেছিলো।