প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৫

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৫
আদ্রিতা নিশি

সকাল এগারোটা বেজে বিশ মিনিট। অরিত্রিকা আর ইশরা খেয়ে ডাইনিং রুমের সোফায় বসে প্ল্যান করছে আজকে বিকেলে পদ্মার পাড়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য।কিন্তু সমস্যা একটাই তাদের ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার মানুষ নেই।সাদাত থাকলে ভালোই হতো তিনজন মিলে যেতে পারতো।কিন্তু ওইটা আরেক বদ মাশ গার্লফ্রেন্ড নিয়ে কোথায় যে ঘুরতে গেছে কে জানে? কখন আসবে তারও কোনো ঠিক নেই।অরিত্রিকার মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় সারহান আর সাদাত কি নিজের ভাই নাকি? একজন সারাদিন রাজনীতির পিছে পরে থাকে আরেকজন গার্লফ্রেন্ডের পিছে।এই শহরে সিঙ্গেল মানুষ পাওয়া খুবই মুশকিল।আচ্ছা সারহান ভাইয়েরও কি গার্লফ্রেন্ড আছে? এমনটা কখনো শোনেনি।আছে কি নেই তা নিয়েও দোটানায় পরে যায় অরিত্রিকা।

অরিত্রিকা অন্যমনষ্ক হয় ভাবতে দেখে ইশরা বললো~ এই তুই কোথায় হারিয়ে যাস? এখনো কি সারহান ভাইয়ের কথা ভাবছিস?
অরিত্রিকা ইশারার কথা শুনে অবাক হয়ে বললো~ তুই কিভাবে বুঝলি?
ইশরা সন্দিহান হয়ে বললো~ এই তোর কি হয়েছে রে? তোর মতিগতি ভালো লাগছেনা। যখনই দেখি সারহান ভাইকে নিয়ে ভেবে যাস।
~ আমি উনাকে নিয়ে ভাবতে যাবো কেনো? আমি ভাবছিলাম উনার গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি?
~তোর মতিগতি ভালোলাগছে না। আজকাল দেখছি সারহান ভাইকে নিয়ে বেশীই ভাবছিস।
~আমার কাজ নেই ওই যন্ত্র মানবকে নিয়ে ভাবতে যাবো।যখন সামনে পাবে তখনি অপমান করবে।
~এসব ভাবিস না আর। আমাদের নিয়ে যাবে কে তাই ভাব।
~হুমম।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অরিত্রিকা আর ইশারা চিন্তামগ্ন হয়ে ডুবে গেলো ভাবনার সাগরে।কেউ কলিং বেল বাজাতেই ইশরা আর অরিত্রিকার ধ্যান ভঙ্গ হলো।এখনো বেল বাজিয়েই যাচ্ছে।অরিত্রিকা কাউকে দরজা খুলতে যেতে না দেখে নিজেই সোফা থেকে উঠে যেতে লাগলো।ইশরা অরিত্রিকা থামিয়ে দিয়ে বললো~ আমি যাচ্ছি।তুই বস।
অরিত্রিকা আর না গিয়ে আবারও বসে পরলো।ইশরা উঠে গেলো দরজা খোলার জন্য।সে সদর দরজা খুলে দিলো।
~হেই কিউটি অরি।কেমন আছো?
ইশরা সামনে দন্ডায়মান সুদর্শন হাসোজ্জল যুবকের মুখে কথাটা শুনেই ভড়কে গেলো।সে বিস্মিত চোখে ফর্মাল স্টাইলে থাকা ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে আছে।ইশরাকে এমন স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ব্যক্তিটি বললো~এমন করে তাকিয়ে আছো কেনো? আরে অরি আমায় তুমি চিনতে পারছো না? আমি আফ্রিদি।
ইশরা চোখের পলক ফেলে স্বাভাবিক হয়ে হাসার চেষ্টা করে বললো~আমি অরি নই। ইশরা।
আফ্রিদির ভ্রু কুঁচকে গেলো।তাহলে সে কি ভুল ঠিকানায় এসেছে?কিন্তু বাড়ির নেম প্লেটে তাকিয়ে দেখলো নামটা তো ঠিকই আছে “চৌধুরী বাড়ি”। সে বললো~ এটা অরিত্রিকাদের বাড়ি না?
অচেনা যুবকটির মুখে অরিত্রিকার নাম শুনে বুঝলো ইনি হয়তো অরিত্রিকার পরিচিত।ইশরা বললো~ এটা অরিত্রিকাদের বাড়ি।আমি ওর ফুপাতো বোন হই।
আফ্রিদি মাথা চুলকে হালকা হেসে বললো~ ওহহ।মাই মিস্টেক।সরি মিস আমি ভেবেছিলাম আপনি অরিত্রিকা তাই ভুলে বলে ফেলেছি।
ইশরা সৌজন্যতা বজায় রেখে বললো~ ইটস ওকে।

~আমায় কি এখানেই দাঁড়িয়ে রাখার ইচ্ছা আছে নাকি মিস? ভেতরে যেতে দিবেননা।
ইশরা আফ্রিদির কথা শুনে ল/জ্জা পেলো।দরজার একপাশে দাঁড়িয়ে বললো ~ ভেতরে আসুন।
আফ্রিদি হালকা হেসে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো।ইশরা দরজা আঁটকে দিয়ে আফ্রিদির পিছু পিছু অরিত্রিকার কাছে গেলো।সে ভাবছে এই ছেলেটা কে? কখনো তো দেখেনি।হঠাৎ কোথায় থেকে উদয় হলো?
অরিত্রিকা দরজার দিকে তাকিয়ে ইশরা আর ব্যক্তিটির কথোপকথন দেখছিলো। ইশরার জন্য ভালো করে দেখতে পায়নি ব্যক্তিটির মুখ।আফ্রিদি অরিত্রিকাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে বললো~আ’ম সিউর তুমি অরি।এবার আর আমার কোনো ভুল হয়নি।
অরিত্রিকা দন্ডায়মান ব্যক্তিকে খেয়াল করে অবাক স্বরে বললো~ আফ্রিদি ভাইয়া আপনি? কানাডা থেকে কবে ফিরলেন?

ইশরা এসে অরিত্রিকার আর আফ্রিদির কথা শুনে বোঝার চেষ্টা করলো এটা আবার কোন জায়গা থেকে টপকে পরা ভাই।
আফ্রিদি মৃদু হেসে বললো~ দুইদিন আগে এসেছি।ভাবলাম তোমাদের সাথে দেখা করে যাই।
~ মামা,মামী, ইফা আসেননি? আপনি একা এসেছেন?
~হুম একা এসেছি।আসলে একটা কাজের জন্য আজই আসতে হলো।কাজ না থাকলে সবার সাথে কাল আসতাম।
~ওহহহ।
~এই কে এসেছে রে? কার সাথে কথা বলছিস? সাথী বেগম রান্নাঘর থেকে আসতে আসতে বললেন।
~মা আফ্রিদি ভাই এসেছে।
সাথী বেগম ভাইপো আসার কথা শুনেই ড্রাইনিং রুমে আসলো।এসেই দেখলো আফ্রিদি দাঁড়িয়ে আছে।
সাথী বেগম আফ্রিদির সামনে এসে হেসে বললো~ কেমন আছিস বাবা? কবে এসেছিস?
আফ্রিদি হেসে উত্তর দিলো ~ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আমি দুই দিন আগে এসেছি।তুমি কেমন আছো ফুপি?
~আমিও ভালো আছি।ভাই,ভাবি, ইফা আসেনি?

~নাহহ।কাল আসবে ওরা।
~ অনেক দূর থেকে এসেছিস বস।আমি শরবত নিয়ে আসছি।
~ ঠিক আছে ফুপি।
সাথী বেগম শরবত বানানোর উদ্দ্যশ্যে রান্না ঘরে গেলেন।আফ্রিদি সোফায় বসে পরলো।ঢাকা থেকে এতোটা পথ নিজে ড্রাইভিং করে আসতেই সে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পরেছে।ইশরা আর অরিত্রিকাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আফ্রিদি বললো~ আরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো তোমরা? বসো।
অরিত্রিকার ইশরার হাত টেনে পাশের সোফায় বসে পরলো। আফ্রিদি অরিত্রিকাকে শুধালো~ পড়াশোনার কি খবর? শুনেছিলাম তো এবার মেডিকেলে এডমিশন দিয়েছিলে!

~ মেডিকেলে চান্স পাইনি।সেকেন্ড টাইম দিবো।আপাতত পাবলিকে এডমিশন দিবো।
~মন খারাপ করোনা।ভালো করে পড়াশোনা করো।
~হুমম।
~ আমি তো তোমার ফুপাতো বোনকে তুমি ভেবে কথা বলছিলাম।প্রায় পাঁচ বছর পর তোমার সাথে দেখা।তেমন যোগাযোগ ছিলোনা তোমার সাথে, তাই চিনতে পারিনি।
অরিত্রিকা একটু হাসার চেষ্টা করে বললো ~ বুঝতে পেরেছি।
সাথী বেগম অরিত্রিকাকে রান্নাঘর থেকে ডাকলেন~অরিত্রিকা এদিকে আয় তো।শরবত নিয়ে যা।
~আমি শরবত নিয়ে আসছি।বলেই অরিত্রিকা উঠে রান্না ঘরে গেলো।
আফ্রিদি আর ইশরা চুপচাপ বসে আছে। ইশরার অস্বস্তি হচ্ছে একা।তবুও ভদ্রতার খাতিরে উঠে যেতে পারছেনা।আফ্রিদি ইশরাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো~ মিস ইশরা আপনি কোন ক্লাসে পড়েন?
ইশরা অস্বস্তি নিয়েই বললো~ আমি আর অরিত্রি এডমিশন দিয়েছিলাম একসাথে।কপাল খা রাপ দুজনেই চান্স পাইনি।

~মন খারা প করবেন না। পড়াশোনা করুন পরবর্তীতে চান্স পেয়ে যাবেন।
ইশরা শুধু মাথা,দুলিয়ে হ্যা বললো।অরিত্রিকা শরবত হাতে এগিয়ে আসলো। সে টি টেবিলে শরবত আর নাস্তার ট্রে টা রেখে একটি শরবতের গ্লাস আফ্রিদির সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো~ ভাইয়া আপনার জন্য শরবত।
আফ্রিদি শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে বললো~ ধন্যবাদ।
অরিত্রিকা ইশরাকে এক গ্লাস জুস দিলো।সেও এক গ্লাস জুস নিয়ে বসে পরলো সোফায়।
আফ্রিদি শরবতের চুমুক দিয়েই বললো~ফুপির হাতের শরবতের টেস্ট আগের মতোই আছে।অনেক ভালো হয়েছে।
~হুমম।মা আসলেই ভালো শরবত বানায়।
সারহান সিঁড়ি বেয়ে নামতেই চোখ পরলো সোফায় বসে থাকা তিনজনের দিকে।ফর্মাল লুকে অচেনা যুবকে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেলো তার।যুবকটি আর অরিত্রিকা হেসে হেসে কথা বলছে।এতে কিছুটা বিরক্ত হলো সে। সারহান কিছু একটা ভেবে কৌতুহলবশত এগিয়ে আসলো তাদের দিকে। আফ্রিদি সারহানকে আসতে দেখে অরিত্রিকাকে জিজ্ঞেস করলো ~অরি। এটা কে চিনলাম না তো?

অরিত্রিকা চোখ ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখতে পেলো সারহানকে। সে অনেকটা অবাক হলো আজ যন্ত্র মানব পার্টি অফিসে না গিয়ে বাড়িতে আছে? প্রতিদিন তো এসময়ে বাড়িতে দেখাই মিলেনা। সে আফ্রিদিকে বললো~ আরে তুমি উনাকে চিনোনা? উনি সারহান ভাই মানে আমার বড় বাবার বড় ছেলে।
আফ্রিদি সোফা থেকে দাড়িয়ে একটু হেসে বললো~সরি। আসলে চিনতে পারিনি। ব্রো কেমন আছো?
সারহান ভদ্রতার খাতিরে গাম্ভীর্য এটেই বললো~ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি?
~ আমিও ভালো আছি। বসো ব্রো আমাদের সাথে নাস্তা করো।
ইশরা আর অরিত্রিকা সোফা থেকে উঠে একপাশে দাঁড়ালো। সারহান আয়েশি ভঙ্গিতে সোফায় গিয়ে বসলো।
আফ্রিদির মনে হলো সারহান হয়তো তাকে চিনতে পারেনি।তাই সে বসে বললো~ আমায় হয়তো তুমি চিনতে পারেনি?

সারহান আফ্রিদির কথা শুনে মৃদু হেসে বললো~ আফ্রিদি এহসান।সন অফ ইকবাল এহসান।অরিত্রিকার মামাতো ভাই তুমি।দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ কানাডায় ছিলে। ওখানে পড়াশোনা করতে। পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছো।
আফ্রিদি বিস্মিত হলো সারহানের কথায়।তার বিস্ময় যেনো কাটছেইনা।স্তম্ভিত হয়ে রইল সে। সারহানের সাথে তার শেষ দেখা হয়েছিলো আটবছর আগে।তখনও তেমন একটা কথা হয়নি তাদের অথচ তার সম্পূর্ণ খবর সারহান জানে?আবার মনেও রেখেছে। এতোটা তুখোড় বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি খুব কম দেখেছে সে।সেই তো সারহানকে ঠিকমতো চিনতে পারেনি।অথচ সারহান তাকে চিনে গেলো।অরিত্রিকা আর ইশরাও একটু অবাক হয়েছে। সারহান ভাই এক দেখায় বায়োডাটা ধরিয়ে দিলো?
সারহান অরিত্রিকা আরও ইশরাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রুষ্ট গলায় বললো~ মা তোদের কখন থেকে ডাকছে।অথচ তোরা যাচ্ছিস না। এক্ষুনি যেতে বললো তোদের।
অরিত্রিকা সারহানের কথা শুনে অবাক হয়ে বললো~ বড় মা আমাদের কখন ডেকেছে? আমরা তো শুনতে পেলাম না আর কেনোই বা ডাকছে?

সারহান খিচে যাওয়া মেজাজ নিয়ে বললো~ জানিনা। ডেকেছে কেনো শুনে আয়।
অরিত্রিকা আরও ইশরা আর এক মুহুর্ত দেরি করলোনা। তারা আর সেখানে না দাঁড়িয়ে দ্রুত প্রস্থান করলো। আফ্রিদিকে স্তম্ভিত হয়ে বসে থাকতে দেখে সারহান ভ্রু যুগল কুচকে বললো~ কি হলো আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
আফ্রিদি একটু নড়েচড়ে বসে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো~ব্রো তুমি আমায় আটবছর পরও কিভাবে চিনলে তাই ভাবছিলাম।আর এক দেখায় আমার বায়োডাটা বলে দিলে?তুখোড় বুদ্ধিমান তুমি।নিশ্চয়ই পুলিশে জব করো।
সারহান ফিচেল হেসে বললো~পুলিশ হলেই কি তুখোড় বুদ্ধিমত্তার মানুষ হয় আর কেউ হয়না?
~হয় তো।কিন্তু…..

সারহানের ফোন বেজে উঠেছে।সে আফ্রিদিকে ইশারা করলো কথা না বলার জন্য। আফ্রিদিও চুপ করে গেলো। সারহান ফোনটা রিসিভ করে বললো~ সারহান ইদায়াত চৌধুরী স্পিকিং।
ওপরপাশের ব্যক্তিটি কিছু বলতেই সারহান চোখ মুখ শক্ত করে বললো~ আমি আসছি। আমার আসার আগে কোনো ঝামে/লা করিসনা।আমি এসে তারপর ওদের দেখছি।
সারহান কথাটা বলেই কল কেটে উঠে দাঁড়ালো। সারহানকে উঠতে দেখে আফ্রিদি বললো~ কোথাও যাবে ব্রো।
~ হুম। পার্টি অফিসে যাবো।
আফ্রিদি অবাক হয়ে বললো~ তুমি রাজনীতির সাথে যুক্ত?
সারহান অবলীলায় বললো~ ছাত্রজীবন থেকেই যুক্ত আছি।

অরিত্রিকা গ্যারেজের সামনে দাঁড়িয়ে ইশরা, সাদাত আর আফ্রিদির জন্য অপেক্ষা করছে।এখনো আসছেনা কেনো?দুপুরের পর পদ্মারপাড়ে যাওয়ার প্ল্যান করেছে তারা চারজন।ইশরা যেতে চাই ছিলোনা কিন্তু অরিত্রিকা তাকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে।না যেতে চাওয়ার কারণটা আফ্রিদি।আফ্রিদি ইশরার অচেনা হওয়ায় যেতে চাইনি। অরিত্রিকা এখনো একটা বিষয় নিয়ে দুপুর থেকে ভেবে যাচ্ছে। সারহান বলেছিলো তাকে আর ইশরাকে বড়মা ডাকছে।কিন্তু তারা গিয়ে তানিয়া বেগমকে বললো, কেনো ডেকেছে? তানিয়া বেগম অবাক হয়ে বলেছিলো ডাকেনি তাদের।অরিত্রিকা ভেবে পাচ্ছেনা সারহান ভাই তাকে মি/থ্যা কেনো বললো?সে কখনো সারহানকে মিথ্যা বলতে শুনেনি। এই কাঠ ফাঁটা রোদ গরমে অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেছে। তিনজন এখনো না আসায় সে আর দাড়িয়ে থাকতে না পেরে গ্যারেজের পাশে থাকা একটা চেয়ারে বসলো।এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায় নাকি?বাড়ির বাহিরে গাড়ির আওয়াজ হতেই অরিত্রিকা গেটের দিকে তাকালো।এটা তো সারহান ভাইয়ের গাড়ির আওয়াজ এতো দ্রুত চলে আসলো আজ?

মেইন গেট দিয়ে সারহানের গাড়ি প্রবেশ করলো চৌধুরী বাড়িতে ।গাড়ি এসে থামলো ঠিক গ্যারেজের সামনের দিকটায়।সারহান গাড়ির দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে আসলো।অরিত্রিকা কালো শার্ট-প্যান্ট, কালো ঘড়ি আর কালো জুতা পরিহিত মানুষটির দিকে সরাসরি তাকালো।এই লুকে সারহান ভাইকে অনেক সুন্দর লাগছে তো? তিশা যদি দেখতো সারহান ভাইকে এই অবস্থায় নিশ্চিত পাগলা/মী শুরু করে দিতে।শার্ট ফোল্ড করা থাকায় হাতের কিছু অংশ দৃশ্যমান।সাদা ব্যান্ডেজের আস্তরণে হাতের তালুর অংশ মোড়ানো।তা খেয়াল করতেই অরিত্রিকা আতংকিত হলো। দুপুরেও তো হাতে ব্যান্ডেজ ছিলোনা!সারহান ভাই কি এক্সিডেন্ট করেছে?আর কোথাও লাগেনি তো।তার কি হলো সে জানেনা বিচলিত ভঙ্গিতে সারহানের কাছে দৌড়ে চলে গেলো।

সারহান কারো পায়ের আওয়াজের শব্দ শুনেই সামনের দিকে তাকালো।তাকাতেই দেখতে পেলো আতংকিত মুখশ্রীতে দৌড়ে আসছে অরিত্রিকা।এমন করে কেনো দৌড়ে আসছে তা সারহানের মস্তিষ্ক ধরতে পারলোনা তখনই।অরিত্রিকা দৌড়ে সারহানের কাছে এসেই সরাসরি হাত ধরে দেখতে লাগলো ক্ষ ত স্থানটি। র ক্তে ভিজে লাল হয়ে আছে।সে বিচলিত হয়ে ব্যান্ডেজের স্থান অবলোকন করতে করতে বললো~ সারহান ভাই আপনার হাতে কি হয়েছে? কিভাবে কা টলো এতোটা। আর কোথাও ব্যথা পেয়েছেন কি?
সারহান অরিত্রিকার হঠাৎ হাত ধরাতে কিঞ্চিৎ অবাক হলো।সে বিস্ময় নিয়ে তাকালো অরিত্রিকার দিকে। অরিত্রিকা কখনো এমন করেনি আগে।আগেও তো সে এমন আ হত অবস্থায় বাড়িতে এসেছে।তখন অরিত্রিকা দূরে দাঁড়িয়ে থাকতো কাছে এসে দেখতো না।তবে আজ কি হলো এ মেয়ের? সরাসরি তার হাত ছোঁয়ার সাহস দেখালো।একবারও ভালোনা যদি কিছু বলে সে?

অরিত্রিকা সারহানের উত্তর না পেয়ে করুণ স্বরে বললো~ কি হলো বলছেন না কেনো? কিভাবে এমন হলো?নিশ্চয়ই আবারও রাজনীতি নিয়ে ঝা মেলা হয়েছে।এমন কেনো আপনি? এতো বড় হয়েছেন নিজের খেয়াল রাখেননা?
সারহান বিচলিত ভঙ্গিতে তার হাত দেখতে থাকা অরিত্রিকার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে প্রতিত্তোর করলো~ আমার তেমন গুরুতর আ ঘাত লাগেনি। সামান্য লেগেছে।এতোটা ভ য় পাচ্ছিস কেনো বলতো? আগেও তো এর থেকে বেশী আ ঘাত লেগেছে তখন তো তোকে এতটা উতলা হতে দেখিনি। দূরে দূরে থেকেছিস।তবে আজ এতো অশান্ত কেনো তোর মন?

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৪

সারহানের বলা কথাগুলো শ্রবণ হতেই যেনো অরিত্রিকার হৃদস্পন্দন থমকে গেলো।সে স্তম্ভিত নয়নে সারহানের মুখ পাণে তাকালো।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৬