প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ১০

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ১০
আদ্রিতা নিশি

~শুনলাম নিশাদের বাবাকে বলেছো অরিত্রিকার বিয়ে নিশাদের সাথে দিবেনা! এটা কি সত্যি?
আরশাদ সাহেব আর আজমল সাহেব সন্ধ্যার কিছুটা পর ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে চা খাচ্ছিলেন। এমন সময় আরশাদ সাহেব আজমল সাহেবের থেকে জানতে চাইলেন।
আজমল সাহেব চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন~ বলেছি।
আরশাদ সাহেব মুখ গম্ভীর করে বললেন~ কেনো বলেছো?ছেলের কোনোদিকে কোনো কমতি নেই।বড় ব্যবসা করে।দেখতেও ভালো।পরিবারও ছোট।তাহলে সমস্যা কোথায়? এতো বড় একটা ডিসিশন নিলে আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করলেনা।

আফজাল সাহেব দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন~ বুঝলেন ভাইজান তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে নেই কারণ এতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অধিক থাকে।আমিও রাগের মাথায় ছোট আম্মাকে বিয়ে দিতে চাইছিলাম।সেই হিসেবে ছেলেও পছন্দ হয়েছিলো।ভুল টা সেদিনই করেছিলাম। তবে সারহান আমাদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
আরশাদ সাহেব না বুঝে বললেন~ কি বলতে চাইছো খুলে বলো।
~আমরা শুধু নিশাদের পরিবার দেখে পছন্দ করে বিয়ে দিতে চেয়েছি।অথচ তাদের বিষয়ে আরও কিছু খোঁজ খবর নেওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু নেই নি। রাগের বশে মাথা কাজ করছিলোনা তখন। সারহান যদি না বলতো তাহলে তো নয়ন তালুকদারের ভাগ্নের সাথে বিয়েটা হয়ে যেতো।ভাবতে পারছেন তখন কি হতো।আগে থেকেই আমাদের নয়ন তালুকদারের সাথে রাজনীতি নিয়ে মন্যমালিন্য চলে আসছে।নয়ন তালুকদার আমাদের শ ত্রু মনে করে। ওই ঘরে মেয়ে বিয়ে দিলে নিশ্চয়ই আমার মেয়েটা সুখী হতো না।
আরশাদ সাহেব কিছুটা অবাক হয়ে বললেন~ নিশাদ নয়ন তালুকদারের ভাগ্নে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

~জ্বি।
আরশাদ সাহেব কিছুটা ভেবে নিশ্চিত হয়ে বললেন ~ নিশ্চয়ই এই কারণেই সারহান নিশাদকে মে রেছে।আমি জানি এটা সারহান না ছাড়া কেউ করতে পারেনা।
আজমল সাহেব হেসে বললেন~ আপনিও যখন রাজনীতি করতেন বাবার কাছে কতো রিপোর্ট এসেছে।কারো মাথা ফাটিয়ে ছেন, কারো হাত ভেঙ্গে ছেন। সারহান ঠিক আপনার মতোই হয়েছে। নিশাদকে মাঝপথে মে রে হসপিটালে পৌঁছে দিয়েছে।এই না হলো বাপ কা ব্যাটা।
আরশাদ সাহেব আজমল সাহেবের কথা শুনে হুহু করে হেসে উঠলেন। হেসেই বললেন ~ ছেলে তো বাবার মতোই হবে। বাবা যেমন ছেলেও তেমন। কিন্তু একটা চিন্তার বিষয় ও আছে?

~কি ভাইজান।
~তোমার ভাবিকে যে ভাবে পটিয়ে বিয়ে করেছি এমনটা যেনো সারহান না করে। তাহলে তো তোমার ভাবী আমায় উঠতে বসতে কথা শুনাবে যে যেমন বাপ তার তেমন ছেলে।
আজমল সাহেব উচ্চস্বরে হেসে বললেন~ আপনার ছেলে করতেও পারে।কিন্তু সারহানকে তেমন মনে হয় না।যথেষ্ট ভদ্র,সভ্য ছেলে সে। তবে সাদাত যে একটু হলেও আপনার এই গুন পেয়েছে বোঝা যায়। ছেলেকে দেখে রাখেন ভাইজান।
~ সারহান আছে সাদাতকে টাইট দেওয়ার জন্য।
আরশাদ সাহেব আর আজমল সাহেবের কথোপকথনের মাঝেই উপস্থিত হলেন সাথী বেগম,তানিয়া বেগম আর মিতা বেগম। আজমল সাহেব মিতা বেগমকে দেখে বললেন~ ভাবী দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? বসেন।
মিতা বেগম বললেন~ বসছি।
তানিয়া বেগম আর মিতা বেগম সোফায় বসে পরলেন।সাথী বেগম বললেন ~আমি নাস্তা নিয়ে আসছি। তারপর এসে গল্প করবো।
আজমল সাহেব সাথী বেগমকে ডেকে বললেন ~ সাদাত, অরিত্রিকা ওদের ডেকে নিয়ে এসো।

~ ঠিক আছে নিয়ে আসছি।বলেই সাথী বেগম আগে রান্না ঘরে গেলেন নাস্তা রেডি করার জন্য।
অরিত্রিকা মুখ গোমড়া করে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। তার মাথা গরম হয়ে আছে। পেছনেই ইফা আর ইশরা অরিত্রিকার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে।ইশারা আর ইফা দীর্ঘ দেড় ঘন্টা যাবত রাগ ভাঙানোর চেষ্টায় করতে করতে প্রায় ক্লান্ত।কিন্তু অরিত্রিকার রাগ কমেনি উল্টে কথা বন্ধ করে দিয়েছে। ইশরা করুণ স্বরে বললো ~ বইন মাফ কইরা দে আর কোনোদিন এমন করবোনা।
অরিত্রিকা মুখ বাঁকিয়ে সিড়ি বেয়ে নেমে সরাসরি তানিয়া বেগমের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
ইশরা কাঁদো কাঁদো মুখ করে ইফাকে বললো ~ আপু অরিত্রিকা তো ভীষণ রে গে আছে এখন কি হবে?কথাও বলছেনা
ইফা চিন্তিত হয়ে বললো ~রা গ ভাঙানোর জন্য আইডিয়া বের করতে হবে। চলো ওইদিকটায় যাই তারপর আইডিয়া খোঁজা যাবে।

~ওকে চলো।
তানিয়া বেগম ইশরা আর ইফাকে এদিকটায় আসতে দেখে বললো~ আরে মামণিরা কোথায় ছিলে?এখানে সবাই তোমাদের খুঁজছে।
ইফা একপাশে দাঁড়িয়ে হেসে বললো ~ আসলে আন্টি আমরা রুমে ছিলাম।
তানিয়া বেগম বললেন~ ওখানে না দাঁড়িয়ে বসো আমার পাশে।
ইফা তানিয়া বেগমের কথা মান্য করে তার পাশে গিয়ে বসে পরলো।ইশরা গিয়ে অরিত্রিকার পাশে দাঁড়ালো।তার এখন মনে হচ্ছে কেনো যে তখন না বলে পালিয়েছিলো?সারহান ভাই যে দাঁড়িয়ে ছিলো বলাই উচিত ছিলো।নিশ্চয়ই সারহান ভাই আবারও কিছু বলেছে তাই অরিত্রিকা মুখ গোমড়া করে আছে। ইশারার মনে হয় এরা সাপে আর নেউলে সম্পর্ক।সারাক্ষণ কিছু না কিছু নিয়ে ঝামেলা হয় এদের মাঝে। ইশরা অরিত্রিকাকে কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে বললো~ এই কথা বল প্লিজ।আমার ভালো লাগছে না। আর কতো বার সরি বলতে হবে বল?আমি বলছি তাও কথা বল।
অরিত্রিকা শুনেও যেনো শুনলো না। সে ওখানেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো।
আরশাদ সাহেব চা খেতে খেতে ইফাকে জিজ্ঞেস করলেন~মামনি এখন কোথায় পড়াশোনা করছো?
ইফা উত্তর দিলো ~আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি।
আরশাদ সাহেব হেসে বললেন~ বাহ খুব ভালো তো। ভালো করে পড়াশোনা করো।
~জ্বি আংকেল।

তানিয়া বেগম মিতা বেগমকে বললেন~ ভাবী মেয়ে তো দেখতে মাশাল্লাহ। পড়াশোনাতেও ভালো।বিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা আছে নাকি?
মিতা বেগম হেসে বললেন~ তেমন কিছু ভাবিনি এখনো।পড়াশোনা করছে করুক। পরে এ নিয়ে ভাববো।
ইফার কেমন যেনো অস্বস্তি হচ্ছে। এতোগুলো মানুষের সামনে বিয়ের কথা বললে একটু খারা/প লাগবেই।তাও আবার বড়দের সামনে।
তানিয়া বেগম বললেন ~ ভাবী যদি মেয়েকে বিয়ে দেন তাহলে আমার হাতে কিন্তু সুপাত্র আছে। আপনাদের অপছন্দ হবে না।
মিতা বেগম শুনে বললেন~ আচ্ছা যখন সময় হবে জানাবো। তো আপনার বড় ছেলেকে তো দেখলাম। পড়াশোনাও কমপ্লিট বিয়ের কথা ভাবছেন না?

তানিয়া বেগম হতাশা নিয়ে বললেন~ কি আর বলবো বলুন। ছেলে রাজনীতিতে এমন ভাবে জরিয়ে গেছে যে বিয়ের কথা বললে বলে এখনো দেরী আছে। এখনকার ছেলেরা পড়াশোনা কমপ্লিট না করতেই বিয়ে করে নেয় আর আমার ছেলে তার পুরো উল্টো। বলে কি ইলেকশন শেষ হলে ভেবে দেখবে। আমি আর কি করবো বলুন ছেলেকে বুঝিয়েও কাজ হচ্ছেনা। মনে হয় এ জনমে ছেলের বউয়ের মুখ দেখতে পারবোনা।
মিতা বেগম পুরো কথা শুনে বললেন ~ ছেলের হয়তো কোথাও পছন্দসই মেয়ে আছে। তাই হয়তো বিয়ে করতে চাইছে না। ভাবী ভালো ভাবে খোঁজ নিন। এখনকার ছেলে মেয়েদের ভরসা করতে নেই।
অরিত্রিকার তার মামীর কথা শুনে মস্তিষ্ক সচল হলো।তার মাথায় ঘুরছে মামীর বলা সারহানের কথাগুলো। আসলেই কি সারহান ভাই কাউকে পছন্দ করে?কখনো তো তেমন কিছু শুনেনি।আবার হতেও পারে এখনকার কাউকে বিশ্বাস করতে নেই।
তানিয়া বেগম গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে বললেন ~ সারহানকে দেখে মনে হয় না এমন কিছু আছে। তবুও জিজ্ঞেস করতে হবে?

~জিজ্ঞেস করে দেখুন। কার মনে কি আছে বলা মুশকিল।
সাদাত তখনি সবার কাছে এগিয়ে এসে বললো~ মা ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে ভেবোনা। আমার মনে হয়না তোমার ছেলের বউ দেখার স্বপ্ন পূরণ হবে!দেখোনা সারাদিন পার্টি অফিসে থাকে আর রাতে বাড়িতে থাকলেও নিজের রুমেই থাকে। আমাদের সাথে সময় কাটানোর সময়ও নেই।
তানিয়া বেগম একটু রে গে বললেন ~সব দোষ তোর বাবার। আমার ছেলের মাথায় রাজনীতির ভুত ঢুকিয়েছে। এর চক্করে ছেলে আমার বিয়ে বিদ্বেষী হয়ে গেছে।
আরশাদ সাহেব আহাম্মক বনে গেলেন। সব জায়গায় তার নাম না টানলে হয় না।তিনি বললেন ~আমি কি বলেছি তোমার ছেলেকে বিয়ে না করতে?আমারও তো ইচ্ছা আছে নাকি নাতী-নাতনীর মুখ দেখবো।
সাদাত নাটক করে বললো ~ তোমার মনে হয় এই জীবনে স্বপ্নটা পূরণ হবেনা বাবা।
তানিয়া বেগম বললেন ~ তোরা বাপ ব্যাটা সব এক ধাঁচের। আগে যদি জানতাম রাজনীতি করে তোর বাপ তাহলে বিয়েই করতাম না উনাকে।

আরশাদ সাহেব অসহায় হয়ে বললেন~ সব সময় সব কথায় আমাকে না টানলে হয় না?
~না। হয় না।
আরশাদ সাহেব আর কিছু বললেন না। জানেন অর্ধাঙ্গীনি রে গে আছেন।এখন কিছু বললেই আরও রে গে যাবেন। অরিত্রিকা চুপচাপ বড় বাবা আর বড় মার মিষ্টি ঝগড়া দেখছে। তাদের পরিবারের সবাই অনেক ভালো। সবাই মিলেমিশে আনন্দে দিন কাটিয়ে দেয়। যন্ত্র মানবটা ভালো হলেও রগচটা। কার গুণ পেয়েছে তাই ভাবে সে।অরিত্রিকা ওপরের দিকে তাকালো।তার দৃষ্টি সারহানের রুমের দিকে। আজ আর মানুষটার আশে পাশেও যাবে না সে। গেলেই তখনকার জন্য লজ্জা লাগবে। সে চোখ নামিয়ে ইফার দিকে তাকালো। দেখলো ইফা বার বার ওপরের দিকে তাকাচ্ছে। এটা দেখে অরিত্রিকার ভ্রু কুঁচকে গেলো। ওইদিকে তো সারহান ভাইয়ের রুম তাহলে তাকাচ্ছে কেনো?
সাথী বেগম নাস্তা এনে টি টেবিলে রেখে বললেন ~সবাই নাস্তা করো আর আড্ডা দাও।কতোদিন পরে সবাই আবার এক সাথে হয়েছি অনেক ভালো লাগছে।
সাদাত ইফাকে ওপরের দিকে তাকাতে দেখে বললো~ ইফা আপু ওপরে কি দেখছো?
ইফা সাদাতের কথায় কিছুটা চমকালো। সে চোখ সরিয়ে নিয়ে মেকি হেসে বললো~ আরে তেমন কিছু না এমনিই ওই দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
সাদাত বললো ~ ওহহ।আমি ভেবেছি হয়তো কাউকে খুঁজছিলে।
ইফা কথা ঘুরাতে বললো~ আরে তেমন কিছু না। তুমি কি আমার ভাইকে দেখেছো?
~আফ্রিদি ভাই তো বিকেলে কোথাও বেরিয়েছে।
~এটাই জানার ছিলো।
সাথী বেগম সবাইকে তাড়া দিয়ে বললেন~ আরে কথা বাদ দিয়ে খেতে শুরু করো সবাই।
সবাই নাস্তা করতে শুরু করলো। আবারও জমে উঠলো আড্ডা।

অরিত্রিকা নিজের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ভেতর থেকে ভেসে আসছে মৃদু গানের স্বর। দরজা আটকানো তাহলে ভেতরে কে গান ছেড়েছে?কৌতুহল নিয়ে দরজা খুলতেই দেখতে পেলো পুরো রুম বেলুন আর ছোট বাতি দিয়ে লাইটিং করা।তার পড়ার টেবিলে বাহারী রকমের চিপস, কোল্ড ড্রিংকস সাজানো। এতেই সে অবাক হয়ে গেলো এগুলো সব কে করলো? রুম পুরো ফাঁকা ইশরা, ইফাকেও দেখতে পাচ্ছেনা। কোথায় গেলো সবাই।সে রুমের ভেতরে ঢুকতেই ইশরা বেলকনি হতে বেরিয়ে এলো। ইশরাকে দেখে অরিত্রিকার চোখ কপালে এসব কি দেখছে সে?এরপর সাদাত আর ইফাকেও একই সাজে দেখে অরিত্রিকা রা গ ভুলে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।হাসার কান্ড ঘটিয়েছে সকলে। তিনজনে টি শার্ট, লুঙ্গি আর কালো কালি দিয়ে দাঁড়ি, গোঁফ বানিয়েছে।দেখতে জোকারের থেকে কম লাগছেনা। ইশরা,সাদাত আর ইফা অরিত্রিকার দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের কি দেখতে বাজে লাগছে খুব? অরিত্রিকার হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে গেছে। সে হাসি কোনো মতো আঁটকে বললো~ এইগুলো কি সেজেছিস সব? একদম জোকার লাগছে।

ইশরা মুখ ভার করে বললো~ আজকে আমরা সবাই মিলে আনন্দ করবো।এগুলো আমাদের পোশাকের থিম।
অরিত্রিকা হাসতে হাসতে বললো~ আর কোনো থিম পাসনি গাধী?
~নাহ পাইনি। এবার তোর পালা। ফটাফট রেডি হয়ে নে।
অরিত্রিকা হাসি থামিয়ে আবারও বললো~ আমাকেও পরতে হবে এসব?
সবাই একসাথে বলে উঠলো ~ অবশ্যই।
অরিত্রিকাও সায় দিলো তাদের কথায়। বললো~ আমার লুঙ্গি, টি-শার্ট কই?
সাদাত মন খারাপ করে বললো~ টি শার্ট তো সবার টা পেয়ে গেছি। কিন্তু লুঙ্গি তো নাই আর।
অরিত্রিকা অবাক হওয়ার ভাণ করে বললো~ তাহলে আমি কি পরবো?
ইশরা, সাদাত আর ইফা বিছানায় বসলো। তাদের মুখে চিন্তার ভাজ। অরিত্রিকা ভাবছে কই পাবে আরেকটা লুঙ্গি?
এর মাঝেই সাদাত নির্ভার হয়ে বলে উঠলো~ লুঙ্গির খোঁজ পেয়েছি।
অরিত্রিকা উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো~ কোথায়?
সাদাত মুখ কাচুমাচু করে বললো~ সারহান ভাইয়ের রুমে। বাবা ভাইকে একটা লুঙ্গি দিয়েছিলো।ওটা এখনো ভাইয়ের আলমারিতে আছে।

অরিত্রিকা সহসা বলে উঠলো ~অসম্ভব। আমি উনার লুঙ্গি আনতে পারবোনা।
ইশরা আর ইফা যতটুকু খুশি হয়েছিলো আবারও খুশিতে পানি ঢেলে বসে রইল।
সাদাত একটু ভাব নিয়ে বললো~ ভাই তো রুমে নেই। চল তুই আর আমি গিয়ে নিয়ে আসি।
অরিত্রিকা মুখ গোমড়া করে বললো~ তখন তোর ভাইয়ের সামনে পরে যে লজ্জা পেয়েছি। আমি আর ওইদিকে যাচ্ছিনা।
~আরে চল। ভাইকে বাহিরে যেতে দেখেছি। এখন গেলে ধরতেও পারবে না আমরা রুমে গিয়েছিলাম।লুঙ্গি নিয়ে আসলেও কিছু বলবেনা। কারণ ভাই তো লুঙ্গি পরে না।
~ঠিক আছে চল। আমারা সাথে তুই ও রুমে ঢুকবি। এবার আমি ধরা খেলে তুই ও খাবি?
~আচ্ছা চল।
অরিত্রিকা আর সাদাত সারহানের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে দরজার ফাঁকা দিয়ে রুম পর্যবেক্ষণ করছে।সারহান আছে কিনা তা দেখার চেষ্টা করছে।নাহহ নেই।দুজনে রুমে চোরের ন্যায় প্রবেশ করলো।অরিত্রিকা সাদাতকে ফিসফিসিয়ে বললো~ লুঙ্গি কোথায়?

~আলমারীতে।
~চাবি কই পাবো?
~আরে আলমারী খোলা আছে।
অরিত্রিকা আর সময় নষ্ট না করে আলমারী খুললো। খুলেই চোখ বুলালো কোথায় লুঙ্গি আছে।অবশেষে আলমারির এক কোণায় কাঙ্খিত জিনিসটি পেয়ে গেলো সে। এতেই সে উচ্ছসিত হলো।দ্রুত জিনিসটি নিয়ে আলমারী বন্ধ করে সাদাতকে বললো~ চল পালাতে হবে। না হলে ধরা পরে যাবো।
অরিত্রিকার বলতে দেরী হয়নি সাদাত শুনেই ভোঁ দৌড় দিলো।অরিত্রিকা আর দেরী না করে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। সে হাটছে আর ভাবছে আহা খুশি খুশি লাগছে আজ। যন্ত্র মানবটার লুঙ্গি চুরি করেও শান্তি পাওয়া যায়। তার মনে হচ্ছে কোনো যুদ্ধ জয় করে ফিরছে সে। লুঙ্গি পরে লুঙ্গি ড্যান্স করবে অনেক মজা হবে ভাবতেই লাফাতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। ভাবতে ভাবতেই সিঁড়ির কাছে কারো সাথে ধাক্কা খেলো অরিত্রিকা।তার হাত থেকে লুঙ্গিটা নিচে পরে গেলো।অরিত্রিকা লুঙ্গির দিকে তাকিয়েই বিরক্তি নিয়ে বললো~ এই কোন খাম্বারে আমাকে ধাক্কা দিলো।
~আমাকে দেখে তোর খাম্বা মনে হয়?

সারহানের রাশভারি গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনেই অরিত্রিকার কথা আঁটকে গেলো।তার ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেলো। শেষে কিনা আবারও দেখা হয়ে গেলো?সে করুণ চোখে একবার লুঙ্গির দিকে তাকাচ্ছে আবার সারহানের দিকে তাকাচ্ছে।সারহান চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। অরিত্রিকাকে মেঝেতে বারবার তাকাতে দেখে সেও তাকালো। দেখলো লুঙ্গি পরে আছে নিচে।লুঙ্গিটাকে যে তার চিনতে ভুল হলো না সারহানের। সে ভরাট কন্ঠে বলে শুধালো~ লুঙ্গি কই পেয়েছিস?
অরিত্রিকা এখন কি উত্তর দিবে?তারা মাথা ঘুরছে বনবন করে। সে নিশ্চুপ রইল।
সারহান ধমকে আবারও জিজ্ঞেস করলো ~ লুঙ্গী কোথায় পেয়েছিস?
অরিত্রিকা তোরে এই মাইনকার চিপায় থেকে কে বাঁচাবে এখন?কপালে ভ’য়ে ঘাম জমছে। ধমক খাওয়ার থেকে বলে দেওয়ায় ভালো।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৯

অরিত্রিকা কাচুমাচু ভঙ্গিতে মিনমিনিয়ে উত্তর দিলো~ আপনার রুম থেকে চুরি করেছি।
সারহান তৎক্ষনাৎ নাক মুখ কুঁচকে বললো~ তোর যে ছেলেদের মতো লুঙ্গি পরার ইচ্ছা আছে আগে তো জানতাম না। চাচাকে বলে তার গুণধর কন্যার জন্য লুঙ্গির ব্যবস্থা করতে হবে দেখছি।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ১১