প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ১৪
আদ্রিতা নিশি
সারহান অরিত্রিকার সরল ও শিশুসুলভ কথাবার্তায় একটুও আনন্দিত হলো না। বরং বিরক্তির আভাস ফুটে উঠল তার মুখে। এক মুহূর্ত স্থির থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানিয়েই সে দাম্ভিকভঙ্গিতে বেলকনি থেকে সরে গেল।
অরিত্রিকা হতভম্বের মতো তাকিয়ে রইল তার বিদায়ী ভঙ্গির দিকে। বড় গলায় অপমান করেও নির্বিকার ভঙ্গিতে চলে গেলেন? হুঁহ্! প্রশংসা যখন করতে জানেন না তখন করতেই বা আসেন কেন, সারহান ভাই? মনে মনে বলে ক্ষ্রান্ত হলো। একপলক বেলকনির দিকে তাকিয়ে নিশ্চিত হলো সেবযন্ত্রমানবটির আর দেখা নেই। তুচ্ছ ভঙ্গিতে মুখ বাঁকিয়ে নিজের ঘরে প্রবেশ করল অরিত্রিকা। আজ আর আবেগে ভাসলে চলবে না। দ্রুত সকালের নাস্তা সেরে নিতে হবে, কারণ ভার্সিটিতে পৌঁছানোর তাড়া আছে।
চৌধুরী নিবাসের সকালের টেবিলে সবাই জড়ো হয়েছে। নাস্তার আয়োজন চলছে ব্যস্ততাপূর্ণ পরিবেশে। সাথী বেগম, তানিয়া বেগম ও ইসমা বেগম খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব নিয়েছেন। যদিও গৃহপরিচারকরা রয়েছেন তবু রান্না ও পরিবেশনের কাজ তিনজনই করেন।বাকি গৃহস্থালির দায়িত্ব তাদের হাতে।অরিত্রিকা সদ্য ফ্রেশ হয়ে এসেছে। অলস ভঙ্গিতে ধপ করে বসে পড়ল ডাইনিং টেবিলের এক ফাঁকা চেয়ারে। একবার চোখ বুলিয়ে নিল পরিবারের সবাইকে। বড় বাবা ও তার বাবা গল্পে মশগুল। খেতে খেতেই আলোচনা চলছে। ইশরা, সাদাত আর অরিন নীরবে খাবার চিবোচ্ছে। যেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিমগ্ন।টেবিলের বাকি দুইটি চেয়ার খালি। অরিত্রিকা কৌতূহলী দৃষ্টিতে ঘাড় বাঁকিয়ে সিঁড়ির দিকে তাকাল। সারহান ভাই কি বাড়িতেই নেই? নাকি উপরের ঘরে? তবে থাকলেও তার কিছু আসে যায় না। বরং দেখা হলে নতুন কোনো উপদেশ বা শাসনের খড়্গ তার ওপর নেমে আসবে। অতএব, না থাকাই ভালো!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তানিয়া বেগম প্লেট ভর্তি করে নাস্তা সাজিয়ে দিলেন। অরিত্রিকাকে সিঁড়ি দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন;
“ অরিত্রিকা সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো? ”
অরিত্রিকা ঘাড় ফিরিয়ে তাকায় তানিয়া বেগমের দিকে। চটপটে ভঙ্গিতে বলে ;
“ সারহান ভাই কী বাড়িতে নেই বড় মা?”
“ হ্যা আছে তো। ”
“ নাস্তা করবেন না উনি?”
“ এখন নাস্তা করবে না। রুমে বসে মিটিংয়ে ব্যস্ত। ”
“ ওহ। ”
অরিত্রিকা ছোট্ট প্রতিত্তোর করে ভদ্র মেয়ের মতো নাস্তা করতে মনোযোগী হলো। ধীরে সুস্থে আরামসে নাস্তা করছে আর কিছু একটা ভেবে চলেছে। সেই ভাবনা ভীষণ গুরুতর। তার পাশের চেয়ারে কাউকে হঠাৎ বসতে দেখে চমকে যায়। চমকিত নয়নে তাকায় পাশে। এতোদিন পর পাশে বসা মানুষটিকে দেখে বেশ অবাক হয়।
অরিত্রিকা বিস্ময় ভাব নিয়ে উচ্ছসিত কন্ঠে বলে উঠল ;
“ ইরফান ভাই আপনি কবে এসেছেন ঢাকা থেকে? ”
ইরফান অরিত্রিকার বিস্ময়কর ভাবভঙ্গি দেখে চমৎকার হাসল। স্বাভাবিক ভাবে বলল;
“ সপ্তাহখানেক আগে। কেমন আছিস অরিত্রিকা? ”
“ আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন? ”
“ আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”
“ আপনি এসেছেন এটা কেউ আমায় বলেনি। অসভ্য বেয়াদব ইশরা আর সাদাত ও লুকিয়েছ। ”
উপস্থিত সকলে হেসে উঠল। ইরফান হেসে উত্তর দিলো ;
“ আসলে আমি ওদের বলেছিলাম তোকে না জানানোর। প্ল্যান করেছিলাম হঠাৎ সামনে এসে সারপ্রাইজ দিবো তোকে। ”
“ ভালো। ”
অরিত্রিকা মুখ ভার করে উত্তর দিলো। ঘাড় বাঁকিয়ে কটমট করে তাকালো সাদাত আর ইশরার দিকে। সাদাত সেই চাহনি দেখল। দাঁত কেলিয়ে বলল ;
“ হে হে ইরফান ভাই বারন করেছিল তোকে বলতে। ”
অরিত্রিকা গমগমে কন্ঠে বলল;
“ তুই একটা আস্ত বজ্জাত। ”
সাদাত হাসি থামিয়ে বলল;
“ আর তুই বজ্জাতের বোন ছোট বজ্জাত। ”
“ সাদাত।”
অরিত্রিকা রেগেমেগে অস্থির হয়ে গেল। সাদাত মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে। ইশরা অরিত্রিকাকে উপেক্ষা করে নাস্তা করছে। যেন এসব কিছু শোনেনি সে। তানিয়া বেগম অবস্থা বেগতিক দেখে বললেন ;
“ আরে চুপ কর তোরা। খাওয়ার সময় এতো কথা বলতে হয় না। চুপচাপ খা। ”
অরিত্রিকা রাগে ফোঁস ফোঁস করে খাওয়ায় মনোযোগ দিল। ইরফান এদের কান্ড দেখে হেসে খাওয়ায় মনোযোগী হলো। আরশাদ সাহেবের মন আজ ভীষণ ভালো। কতোদিন পর সবাই একসাথে এক টেবিলে বসে সকালের নাস্তা করছে। কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে উঠলেন।
আরশাদ সাহেব বললেন ;
“ আজকের এই দিনটার জন্য আমি দুইবছর অপেক্ষা করেছি। সবাই এক ছাঁদের নিচে, এক টেবিলে সবাই একসাথে কবে পুনরায় একসাথে জমিয়ে খাবার খাব সেই সময়টার অপেক্ষা করেছি। আজ সেই সময়টা আসলো। ”
আজমল সাহেব হেসে বললেন ;
“ ভাইসাব এসব ভেবে আর নিজের কষ্ট বাড়াবেন না।
“ আমার আর কোনো কষ্ট নেই। তোমরা সবাই চলে এসেছো আর কোনো কিছুর দরকার নেই আমার। ”
অরিত্রিকা দ্রুত নাস্তা শেষ করল। টেবিল থেকে গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে শেষ করল। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে বলল;
“ বড়বাবা এক টেবিলে একসাথে খাওয়ার সময়টা আজ নয়। কারণ একজন এখনো মিসিং আছে। কে বলো তো! তোর বড় ছেলে এমপি সারহান ইদায়াত চৌধুরী। ”
আরশাদ সাহেব স্ব শব্দে হেসে উঠলেন ;
“ একদম ঠিক বলেছো আম্মা। কবে যে বাপ ব্যাটা একসাথে বসে খাবার খেয়েছি মনে নেই। ”
“ এমপি হয়েছেন উনি এখন কি আর সময় হবে তোমাদের সাথে টাইম স্পেন্ড করার। ”
“ আসলে আম্মা রাজনীতি জিনিসটাই এমন। এসবে একবার জড়িয়ে গেলে পরিবারও পর হয়ে যায়। ”
“ একদম ঠিক বলেছো বড়বাবা। ”
তানিয়া বেগম ইরফানকে ফলের জুস গ্লাসে ঢেলে দিলেন। তারপর আরশাদ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললেন ;
“ শুনুন সারহানের বাবা ছেলের এমন আচরণ মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ছেলেটা সারাদিন বাহিরে থাকে। রাতেও দেরি করে ফিরে এর একটা বিহিত করা দরকার। সারহানের বয়স হয়েছে। আমার মনে হয় ছেলের বিয়েটা দিয়ে দেওয়া উচিত। ঘরে বউ হলে হয়তো বাড়িমুখো হবে । ”
আজমল সাহেব একটু মজা করে বলে উঠলেন ;
“ ভাইসাব আপনার মনে আছে! আপনি ঠিক সারহানের মতো রাজনীতি করতেন। দিন রাত ভুলে পড়ে থাকতেন পার্টি অফিসে। বাবা এসব দেখে বেশ হতাশ হয়েছিলেন। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আপনাকে দ্রুত বিয়ে দেওয়ার জন্য। আপনি তখন বিয়ে করবেন না তাই বাড়িতে ফেরা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ”
আরশাদ সাহেব খুকখুক করে কেশে উঠলেন। একটু বিব্রতবোধ করলেন।ভরাট কন্ঠে বললেন ;
“ তখন বিয়ে করলে এতো সুন্দর বউ পেতাম বুঝি। ”
তানিয়া বেগম লজ্জা পেলেন। তিনি লাজুক হাসলেন। সকলে আরশাদ সাহেবের কথা শুনে হেসে দিলো। অরিত্রিকা চেয়ার থেকে দ্রুত উঠে দাঁড়াল। ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে তার। দুকদম এগোতেই ইরফান ডেকে উঠে।
“ কোথায় যাচ্ছো? ”
অরিত্রিকা থেমে গেল ব্যতিব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল;
“ ভার্সিটিতে যাব। সময় হয়ে গেছে। ”
ইরফান নাস্তা শেষ করে তড়িঘড়ি করে উঠে পড়ল চেয়ার থেকে। দ্রুত এগিয়ে গেল অরিত্রিকার কাছে। বলল;
“ আমিও ভার্সিটি এরিয়াতে যাব কিছু ফ্রেন্ড’দের সাথে দেখা করতে। তাহলে দুজন একসাথেই যাই। কি বলো!
অরিত্রিকা ইতস্ততবোধ করল। কিন্তু প্রকাশ করল না।স্বাভাবিক ভাবে বলল ;
“ ঠিক আছে। ”
অরিত্রিকা কোনোমতে কথাটা সম্পূর্ণ করে ছুট লাগাল রুমের দিকে। ইরফান মুচকি হেসে তাকিয়ে রইল সেদিকে। সাদাত খাওয়া শেষ করেছে। সে হেঁটে এসে ইরফানের পাশে দাঁড়াল। আনমনে হাসতে দেখে ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল। কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করল ;
“ ইরফান ভাই হাসছো কেনো?”
ইরফানের হাসি বন্ধ হয়ে যায় তৎক্ষনাৎ। সে কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। সাদাতের দিকে তাকিয়ে বলল;
“ একটা জোক্স মনে পড়ে গিয়েছিল তাই হাসছিলাম। ”
সাদাত বলল;
“ আমাকেও জোক্সটা বলো। আমিও একটু দিল খুলে হাসি। ”
“ পড়ে বলব। এখন বেরোতে হবে। ”
ইরফান কোনোমতে সাদাতের কথা কাটিয়ে প্রস্থান করল। সাদাত বোকার মতো তাকিয়ে রইল সেদিকে। বিরবির করে বলল;
“ কাহিনী কি হলো! ”
ইরফান বাড়ির সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার সদর দরজার দিকে নিবদ্ধ। ধৈর্য ধরেই অপেক্ষা করছে। কিন্তু অরিত্রিকার কোনো দেখা নেই। একবার ঘড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে সময় দেখে নিল নয়টা বেজে দশ। একটু বিরক্তিই লাগল। তবে মুখে প্রকাশ করল না।অবশেষে সদর দরজা দিয়ে হেলেদুলে বেরিয়ে এল অরিত্রিকা। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে আরামসে হেঁটে আসছে। সামনে তাকাতেই চোখে পড়ল ইরফান ভাই বাইকসহ দাঁড়িয়ে আছে তার অপেক্ষায়। মুহূর্তেই গতিপথ বদলে সে পায়ের গতি বাড়াল। দ্রুত বাইকের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল।
ইরফান অরিত্রিকার দিকে তাকিয়ে বলল ;
“ বাপরে এতো লেট করলি আসতে? ”
অরিত্রিকা হাসার ভাণ করে বলল;
“ আসলে অরিন আপুর সাথে জরুরী কথা বলার কারণে লেট হয়ে গেল। ”
ইরফান আর কথা বাড়ালো না। সে বাইক স্টার্ট দিতে লাগল। কিন্তু বিধি বাম। বাইক স্টার্ট নিচ্ছে না। বেশ কয়েকবার স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করলেও বাইক স্টার্ট হলো না। ইরফান মুখ গোমড়া করে বাইকের ওপর বসে অরিত্রিকার দিকে তাকাল। অরিত্রিকা হতাশায় জর্জরিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিশ্চয়ই ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে তার।
অরিত্রিকা মুখ ভার করে বলল;
“ ইরফান ভাই আপনার বাইক তো স্টার্ট নিচ্ছে না। ”
ইরফান বিরক্তি প্রকাশ করে বলল;
“ গতকাল তো বাইক ঠিক ছিলো।”
সারহান সদর দরজা পেরিয়ে পার্কিং প্লেসের দিকে পা বাড়াল। শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে এগিয়ে গেল সেদিকটায়। পথিমধ্যে ইরফান আর অরিত্রিকা মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থেমে গেল। এগিয়ে গেল দুজনের দিকে। শাণিত দৃষ্টিতে পরখ করে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল
“ হোয়াট হ্যাপেন্ড ইরফান? ”
অরিত্রিকা চমকে গেল। পাশে তাকাতেই দেখল সারহান দাঁড়িয়ে আছে গম্ভীর মুখে। সে কী যেন ভেবে একটু পরখ করল। সাদা শার্ট, ব্ল্যাক প্যান্ট, সানগ্লাস, ব্রেন্ডেড জুতা এবং ঘড়িতে সুদর্শন লাগছে। চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করেছে। তার ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে প্রবেশ করছে পারফিউমের তীব্র গন্ধ। পারফিউমের গন্ধটা জোস তো। একটা কিনতে হবে। কিন্তু নাম জানবে কি করে? আইডিয়া রুমে চুপিচুপি ঢুকে টুপ করে নাম দেখে আসবে। এতো ভাবসাব নিয়ে চলাফেরা করে তাই মেয়েরা এমপির দেওয়ানা।
ইরফান মুখ গোমড়া করে বলল;
“ বাইক স্টার্ট নিচ্ছে না। ”
সারহান নিঃশব্দে কিছুক্ষণ ইরফানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর ভরাট কণ্ঠে বলল,
“হয়তো কোনো প্রবলেম হয়েছে। কোথাও যেতে হলে গাড়ি নিয়ে যা।”
ইরফান বিরক্ত হয়ে বাইক ঠেলতে ঠেলতে পার্কিং প্লেসে নিয়ে গেল। সারহান অরিত্রিকার দিকে তাকাতেই দেখল ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। রাশভারি কন্ঠে বলল ;
“ আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছিস কেনো? কোনোদিন কি আমাকে দেখিস নি? ”
অরিত্রিকা দ্রুততার সহিত নজর লুকালো। অন্যদিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল;
“ আপনাকে কখন দেখলাম? আমি তো আপনার চোখের চশমাটা দেখছিলাম। ”
সারহান এসব নিয়ে আর প্রশ্ন করে না। সারহান পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে মেসেজ করে। সরু চোখে একপলক অরিত্রিকার দিকে তাকিয়ে পা বাড়ায় পার্কিং প্লেসের দিকে। অরিত্রিকার মেজাজ যেন তুঙ্গে। আজ সকালের শুরু হয়েছে সারহান ভাইয়ের মুখ দেখে। তাই তো বাড়ি থেকে বেরোতেই বাইক নষ্ট হলো। সে বিরক্তির ভঙ্গিতে পা বাড়াল মেইন গেটের দিকে। বাড়ির গাড়িতে ভার্সিটি যাওয়ার তার মুড নেই।
সারহান কিছুক্ষণ আগেই তার পার্সোনাল গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছে। চৌধুরী নিবাসের সামনে প্রশস্ত পাকা রাস্তা। যেখানে যানবাহনের আসা-যাওয়া লেগেই থাকে।অরিত্রিকা মেইন গেট পেরিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে অপেক্ষায় অটোরিকশার। কিন্তু দুর্ভাগ্য! প্রতিটি অটো যাত্রীতে পরিপূর্ণ। একটাও ফাঁকা নেই। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে অথচ সে দাঁড়িয়ে আছে নিরুপায়। আজ বোধহয় ক্লাস মিস যাওয়া নিশ্চিত। স্যারের বকুনির চিন্তা করতেই মুখটা কেমন কুঁচকে গেল।
রাস্তার দিকে তাকিয়ে চাতক পাখির মতো একের পর এক গাড়ি যেতে দেখল কিন্তু আশার আলো নেই। ঠিক তখনই, মেইন গেট খোলার শব্দ কানে এল। স্বভাবতই পেছনে তাকাল।সাদাত বাইক নিয়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
অরিত্রিকা বলে উঠল ;
“ ভাই আমায় ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে আয় প্লিজ। ”
সাদাত এক ভ্রু উঁচিয়ে ইশারা করে বলল;
“ বাইকে উঠ দ্রুত। ”
অরিত্রিকা মৃদু হেসে তড়িঘড়ি করে বসে পড়ল বাইকে। বলল ;
“ চল এবার।”
সাদাত বাইকে স্টার্ট দিয়ে চলল ভার্সিটির দিকে। জনমানসে পরিপূর্ণ ব্যস্ত রাস্তায় দৃষ্টি ফেলে বলে;
“ গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বাদ দিয়ে ভার্সিটিতে রাখতে যাচ্ছি তোকে। ”
অরিত্রিকা অবাক হওয়ার ভাণ করে বলল;
“ আমি কি বলেছিলাম, ভাই তুই গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলা বাদ দিয়ে আমায় নিয়ে চল। ”
“ তুই বলিসনি কিন্তু অন্য একজন বলেছে। ”
“ কে বলেছে? ”
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ১৩
অরিত্রিকার কৌতুহলী ভাব। সাদাত উত্তর দেয় ;
“ সারহান ভাই বলেছে। ”
অরিত্রিকা হতবাক! চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল এক মুহূর্তের জন্য। সারহান ভাই? এই ডোন্টকেয়ার ভাবওয়ালা মানুষটা নিজে থেকে তার ভার্সিটিতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে? এটা কি সত্যিই সম্ভব?