প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৬৫
আদ্রিতা নিশি
রাতের গভীরতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। অম্বরে অর্ধ-চন্দ্র দৃশ্যমান। সেই অর্ধচন্দ্রের ক্ষীণ আলোয় ঝলমল করছে পুরো অম্বর — ভেসে বেড়াচ্ছে ধূসর -সাদা মেঘপুঞ্জ। আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। উষ্ণ -শীতল হাওয়ায় মত্ত পরিবেশ। নীরব, নিস্তব্ধ এলাকার শেষপ্রান্তে রয়েছে দীঘি। দীঘির পাশের রাস্তার পাশে এক ল্যাম্পপোস্ট। ল্যাম্পপোস্টের আলো হালকা সাদাটে। শুনশান দীঘির পাড়ের কিছুটা দূরে অবস্থিত এক টঙের দোকান।
সে দোকানের বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে লন্ঠন। টিমটিম করে আগুনের ছোট আলোকশিখা জ্বলজ্বল করছে এবং আশপাশটা আলোকিত করছে। গ্রামীণ এ দৃশ্য যেন চোখে পড়া এ সময় দুষ্কর। ব্যস্ততম নগরী ছাড়িয়ে মন প্রাণ জুড়ানো প্রকৃতির মাঝে গ্রামের আঁকাবাকা রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে বাইক। বাইকে অবস্থান করছে কপোত-কপোতী। গন্তব্য হয়তো তাদের জানা নেই। আধো অন্ধকারাচ্ছন্ন দুমড়ে এক বিশাল বটগাছের নিচে থামল বাইকটি। কপোত-কপোতী নেমে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেল দীঘির পাড়ে। রাত- বিরেতে দীঘিতে না নেমে ওপরে খোলামেলা অম্বরের নিচে শান বাঁধাই করা স্থানে বসল দুজন। কাছাকাছি বসে থাকা নবদম্পতির সময় নির্বাক ভঙ্গিমায় কাটল কিয়ৎ সময়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অরিত্রিকার চোখেমুখে বিস্ময়,আনন্দ এবং উত্তেজনার ছটাক। সে গোল গোল মেলে এক দৃষ্টে দীঘির পানিতে ভেসে থাকা পদ্মফুল সমেত বড় বড় আকৃতির গাঢ় সবুজ পাতা দেখছে। এই প্রথমবার রাতের গ্রাম্য পরিবেশ ও অপস্ফুটিত পদ্ম দেখল। পূর্বে এমন মন ছুঁয়ে যাওয়া দৃশ্য বোধ হয় খুব কম দেখেছে। রজনীর গভীরে অস্পষ্ট চাঁদের স্নিগ্ধ দীপ্তিতে হৃদয় থমকে গেছে। মেয়েলী নেত্রপল্লব বিমোহন ধরিয়ে দেওয়া সেই দৃশ্য অপলক চেয়ে দেখছে। সারহান অরিত্রিকার এরুপ নিশ্চুপ চাহনি দেখে সরাসরি তাকায় দীঘির পানিতে। ভ্রুযুগল বেঁকে গিয়ে মধ্যাংশে ভাজ পড়ে। সে দৃষ্টি ঘুরিয়ে মেয়েলী মুখশ্রীর পানে চেয়ে অতি আগ্রহী কন্ঠে শুধালো ;
“মনোযোগী হয়ে কি দেখছিস?”
অরিত্রিকা না তাকিয়ে মৃদু হেসে জবাব দেয়;
“না ফোটা পদ্মফুল ও পদ্মপাতাগুলো দেখছিলাম। দেখুন কত্তো সুন্দর।”
অরিত্রিকার মুখাবয়বে মুগ্ধতার বিচরণ। সারহানের দৃষ্টিগোচর হলো না। সে কথামতো পুনরায় তাকাল দীঘিতে অপস্ফুটিত পদ্মগুলোর দিকে। রাতের আঁধারে তার কাছে সেই দৃশ্য আহামরি লাগল না। তবুও অরিত্রিকার মন রক্ষার্থে গম্ভীর ধ্বনি তুলে বলল;
“হ্যা।”
“আমি কখনো দীঘি, দীঘিতে ফোটা পদ্ম, রাতের গ্রামের দৃশ্য দেখিনি। এই প্রথম দেখলাম। বলে বোঝাতে পারব না — কতোটা আনন্দিত আমি। আমার জীবনে স্মরণীয় মুহুর্ত হয়ে থাকবে এ শুক্রবারের রাতটা।”
অরিত্রিকার উচ্ছসিত কন্ঠস্বর থামে। কন্ঠে চঞ্চলতা বাড়ে। ঝট করে সারহানের দিকে তাকায়। প্রাণচঞ্চল আমোদিত কন্ঠে বলে;
“আপনি আমাকে আমার জীবনের মূল্যবান মুহুর্তের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন — আপনি, আমি ও সেই নৈশফুল।”
সারহানের মনে পড়ে যায় অরিত্রিকাকে বলা কথা। সে নিঃশব্দে হাসে। অতি শান্ত কন্ঠে আওড়ায় ;
“আজও রাতে ফোটা নৈশফুলের থেকেও বেশী স্নিগ্ধ লাগছে তোকে।”
“আপনি বলেছিলেন, পদ্মার পাড়ে নিয়ে যাবেন। তবে শহর ছেড়ে হঠাৎ গ্রামে কেন এলেন?”
“শহরের কোলাহল, রাজনৈতিক ঝঞ্ঝাট, শত্রুরদের ভীড় থেকে দূরে আসার কারণ একান্তে দুজনে সময় কাটানো।”
“আগে কেন বলেননি আমায় গ্রামে নিয়ে আসবেন ? ”
“তোর জন্য সারপ্রাইজ ছিল।”
সারহান অরিত্রিকার হাতদুটো তার অমসৃণ হাতের মুঠোয় পুড়ে বলল। অরিত্রিকা কেঁপে উঠল। সামান্য স্পর্শে লজ্জা পেল। পাগলা ঘোড়ার ন্যায় হৃদপিণ্ড লাফাতে লাগল। অপরদিকে সারহান নির্বিকার, নির্লিপ্ত। শান্ত চাহনিতে প্রিয়তমার ভাব বাস পর্যবেক্ষণ করছে। অরিত্রিকা সুঠামদেহী শক্ত হাতের মুঠো থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করল না। এদিক ওদিক তাকাল পিটপিটিয়ে। মিনমিন করে এক প্রশ্ন করে বসল ;
“সারহান ভাই, আমরা কি প্রেম করছি?”
সারহানের মাঝে দোলাচল দেখা গেল না। অবলীলায় স্বীকারোক্তি টানলো;
“তাই তো মনে হচ্ছে।”
অরিত্রিকার চোখমুখ উজ্জল হয়ে উঠল। অদেখা দীপ্তি ছড়িয়ে পড়ল রন্ধ্রে রন্ধ্রে। অজানা উত্তেজনায় ভেতরটা লাফিয়ে উঠল। চঞ্চলচেতা ডাগর আঁখিযুগল উঁচিয়ে চাইল নিকটে বসা মানুষটির পানে। এক চিলতে হাসি যেন মেঘ ভেদ করে বেড়িয়ে আসে। প্রাণোচ্ছল কন্ঠে বলে;
“আপনি আমার এই ইচ্ছেটা পূরণ করার কথা বলেছিলেন?”
সারহান অরিত্রিকার হাত ছেড়ে দিয়ে সরাসরি এক হাত রাখে অরিত্রিকার গালে। অন্যহাতে বেষ্টিত করে মেয়েলী মেদহীন কোমড়। সন্নিকটে নিয়ে এসে সংযত কন্ঠে বলে;
“আমি তোর কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখব না। বলেছিলাম, সবার বিয়ের আগে প্রেম হয়। আমাদের না হয় বিয়ের পরে প্রেম হোক।”
অরিত্রিকা পুরুষালী স্পর্শে কেঁপে উঠল। শুকনো ঢোক গিলে রিনরিনে কন্ঠে বলল;
“আপনি মনে রেখেছেন তবে?”
“যে আমার মস্তিষ্কের পুরোটা জুড়ে অবস্থান করছে তার কথা বলা কথা মনে রাখা আবশ্যক।”
“আপনি আসলেই একটা গোলকধাঁধা। যাকে জানতে গেলেই হারিয়ে যেতে হয়। আপনাকে আমি সম্পূর্ণ রুপে কখনোই চিনতে পারলাম না।”
“এখন থেকে চেনার চেষ্টা কর।”
সারহানের কন্ঠস্বর ঠান্ডা দৃঢ় শোনাল। অরিত্রিকা সন্তর্পণে দৃষ্টি নত করল। লজ্জা,আড়ষ্টতায় বেহাল অবস্থা। খোলা অম্বর, দীঘির পানির কলকলানি ধ্বনি, দূর হতে ভেসে আসা বন্য পাখির আওয়াজ পরিবেশটাকে ভূতুরে করে তুলল। অরিত্রিকার কর্ণে প্রবেশ করল সেই শব্দ। সে ভয় পেয়ে গেল। খানিকটা দূরত্ব মিটিয়ে মাথা রাখল পুরুষালি প্রশস্ত বুকে। চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে লুকানোর প্রয়াস চালালো। সারহানের বুকে তখন সংকেত হীন ঝড়ের আবির্ভাব। মেয়েলী শরীরের স্পর্শে শরীর ঝিমঝিম করে উঠল। গলাটা বোধ হয় পানি খাওয়ার অভাব বোধ করল। গলদেশ শুষ্ক ;দেহ ও মনের মাঝে নিরব দ্বন্দ্ব। নিষিদ্ধ অনুভূতি উদ্দাম বেগে ছুটে এসে বিঁধছে বুকে। সে নিজেকে সংযত ও স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। এক হাত অরিত্রিকার মাথায় বুলিয়ে দিয়ে আশ্বস্ত করে। ক্ষীণ কন্ঠে বলে;
“ভয় পাচ্ছিস?”
অরিত্রিকা বুকে মাথা রেখে কম্পনরত কন্ঠে জবাব দিলো;
“একটু একটু।”
সারহান হঠাৎ ওষ্ঠ কামড়ে হাসল। মনে পড়ে গেল পুরনো স্মৃতি। অরিত্রিকার তখন চার- পাঁচ বছর হবে হয়তো। এক দুপুরে বাগানের পাশে মাটি নিয়ে খেলা করছিল। সেই দৃশ্য বেঞ্চে বসে দেখছিল সে। পুতুলের মতো বাচ্চাটার খেলার দৃশ্য গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল। আচানক ছোট্ট একটা সাপ কোথাও থেকে চলে আসে। অরিত্রিকা সেই সাপটি তার গড়া মাটির স্তুপের কাছে দেখে ভয় পেয়ে যায়। আতংকে, ভয়ে চিৎকার দিয়ে কান্না করে ওঠে। সারহান চমকে যায়। দৌড়ে এগিয়ে যায় কান্নারত অরিত্রিকার দিকে। মাটির স্তুপের কাছে সাপের বাচ্চা দেখে সে সময় না ব্যয় করে অরিত্রিকাকে কোলে তুলে নিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়। অরিত্রিকা সারহানের গলা জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না!অঝর নয়নে ওষ্ঠ উল্টে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। সারহান মাথায় হাত বুলিয়ে, আদর করে শান্ত করে। তারপর কোমল কন্ঠে জিজ্ঞেস করেছিল;
“এখনো ভয় করছে?” অরিত্রিকা নাক টেনে ভেজা কন্ঠে বলেছিল; “একটু একটু।”
শীতল হাওয়া যেন দমকে আসলো। ছুঁয়ে গেল মানব মানবীর শরীর। মেঘের গুরুমগুরুম গর্জনে অম্বর আর্তি জানালো বৃষ্টির। অরিত্রিকা মাথা তুলে পরিবেশটা পর্যবেক্ষণ করে বলে উঠল;
“মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। চলুন বাড়ি যাই।”
সারহানের ধ্যান ভাঙে। আকাশের পানে চেয়ে দেখে মেঘাচ্ছন্ন। তবুও সেথায় বসে রয়। শান্ত কন্ঠে বলে;
“আমরা আজ রাতে বাড়ি ফিরব না।”
অরিত্রিকা বাহুবন্দি অবস্থা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে এক লাফে দাঁড়িয়ে গেল। হতবাক হয়ে বলল ;
“আমরা সারারাত এখানে থাকবো? আপনি মজা করছেন আমার সাথে?”
সারহান উঠে দাঁড়ায়। অরিত্রিকার মুখপানে তাকিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল;
“আমি মোটেও মজা করছি না।”
“তাহলে কোথায় থাকবো?”
“জয়নাল চাচার বাড়িতে।”
“জয়নাল চাচা কে?”
“আমার পরিচিত।”
সারহানে ভাবমূর্তি অতি স্বাভাবিক। কেন যেন অরিত্রিকার তা সুবিধার লাগল না। মনে মনে ভয় পেল। শুকনো ঢোক গিলে তুতলিয়ে বলল;
“আপনার ভাবসাব ভালোলাগছে না আমার। আপনার জয়নাল চাচার বাড়িতে আমাকে কেন নিয়ে যেতে চাইছেন বলুন?”
সারহানের হাসি পেল। মেয়েটা নিশ্চয়ই উল্টোপাল্টা কিছু মনে করে ভয় পাচ্ছে তাকে। সে ভয় ভাঙালো না। পূর্বের ন্যায় বলে উঠল;
“রাতে এই খোলা আকাশের নিচে থাকতে পারবো না। তাই ওখানে যেতে চাইছি।”
“আমি.. আমি আপনার সাথে এক ঘরে শোবো না বলে দিলাম কিন্তু।”
“কেনো? এক ঘরে ঘুমালে সমস্যা কোথায়? আমরা এখন স্বামী-স্ত্রী।”
কথাটা বলতে বলতে এগিয়ে গেলো সারহান। দুজনের মাঝে দুরত্বটুকু মিটিয়ে নিলো সন্তপর্ণে। অরিত্রিকা হাস ফাঁস করে উঠল। কুন্ঠা ঠেলে বলল;
“এটা সঠিক সময় নয়।”
সারহান বুঝেও অবুঝ হয়ে রইল। ভাবলেশহীন ভাবে বলল;
“সঠিক সময় বলতে কি বোঝাচ্ছিস? মাথায় কি ওসব উল্টোপাল্টা ভাবনা চলছে?”
“হ্যা আমি প্রস্তুত নই। বাড়ি যাবো প্লিজ নিয়ে….
অরিত্রিকা বাকী কথাটুকু বলতে পারল না। অপূর্ণ রয়ে গেল কথাগুলো। শীতল হাওয়ার বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্ষনের পূর্বের মেঘ গর্জে উঠছে। সেই ধ্বনি ছাপিয়ে কর্ণে প্রবেশ করল ঘন শ্বাস-প্রশ্বাসের ধ্বনি। পুরুষালি ওষ্ঠদ্বয়ের নির্বার্তা স্পর্শ অনুভব করল মেয়েলী ওষ্ঠদ্বয়ে। আকস্মিক এহেন ছোঁয়ায় হতভম্ব হয়ে গেল অরিত্রিকা। বিস্ময়ে চক্ষুদ্বয় বড় হয়ে গেল। সেই কম্পনরত আঁখি তুলে চাইল সামনে দন্ডায়মান মানুষটির দিকে। সারহানও নিগূঢ় চাহনিতে তাকিয়ে রয়েছে। অপ্রত্যাশিত ভাবে চোখাচোখি হলো। সেই মুহুর্তে অরিত্রিকার হৃদস্পন্দন বাড়ল। বুকের গহীনে বইয়ে গেল শীতল স্রোত। সর্বাঙ্গে অনুভূতির জোয়ার বইল। বিবেক, বুদ্ধি তখন হতবুদ্ধির ন্যায় অন্তঃস্থিত মনের কাছে কড়া নাড়তে ব্যস্ত। হঠাৎ কি হলো বুঝতে সময় লাগল।
অরিত্রিকা সন্তর্পণে দৃষ্টি নামাল। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা না করে বোধ বুদ্ধি খুইয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সারহান মেয়েলী দেহখানা হাত দ্বারা পেঁচিয়ে নিজের কাছে টেনে নিলো। পুরুষালি হাতটা অনুভব করল অপরপাশের শরীরের কম্পন। এই প্রথমবার এতোটা ঘনিষ্ঠ হলো দুজনে। দুই সত্তা মত্ত হলো এক অজানা সুখে। বেসামাল হলো, অবাধ্য হলো। অনুভূতির সাগরে ডুব দিলো। অরিত্রিকার ছোট্ট দেহখানা কেঁপে কেঁপে উঠল। সারহান নিজের কাছে আরেকটু টেনে নিয়ে হাত রাখল অরিত্রিকার ঘাড়ের উন্মুক্ত অংশে। সেই উষ্ণ ছোঁয়ায় অরিত্রিকা শিউরে উঠল। দুহাতে আঁকড়ে ধরল সারহানের পাঞ্জাবি। ওষ্ঠ স্পর্শের তীব্রতা বাড়ল। অরিত্রিকার শরীর তখন অসাড় প্রায়। শরীরের শক্তিটুকু হারিয়ে গেছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ছোঁয়ায় দুজনে হুঁশে এলো। দীর্ঘ চুম্বনের সমাপ্তি ঘটল। সারহান আস্তে করে ছেড়ে দিলো অমৃত ন্যায় ওষ্ঠপুট। গলার উন্মুক্ত স্থান ছেড়ে হাত রাখল গালে মধ্যাংশে। অতি শান্ত সুগভীর কন্ঠে বলল;
“ ধীরে ধীরে এসব মানিয়ে নিতে শেখ জান!”
অরিত্রিকা চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে ফেলল তৎক্ষনাৎ। জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল। কেন যেন তীক্ষ্ণ চোখ জোড়ায় তাকানোর সাহস পেল না। যদি তাকায় তাহলে বোধ হয় পুনরায় সর্বনাশ ঘটবে। সে নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে রইল। সারহানের তৃষিত হৃদয় পুনরায় সুধা পান করার জন্য মরিয়া হলো। তবে সেসব অনুভূতিকে দমিয়ে ধীরজ কন্ঠে বলল;
“ফাইরুজ! তাকা আমার দিকে।”
“নাহ। আমি আপনার চোখে চোখ রাখতে পারবো না। ”
অরিত্রিকা কম্পনরত কন্ঠে বলল। সারহান নিবিড় চাহনিতে তাকিয়ে আগ্রহী কন্ঠে শুধালো ;
“কেনো?”
অরিত্রিকার অস্পষ্ট কন্ঠে বলল;
“লজ্জা লাগছে।”
“আমি তোর লাজে রাঙা মুখটা দেখতে চাই।”
সারহানের ঘোর লাগা স্বর। অরিত্রিকা দৃষ্টি মেলে তড়িৎ বেগে তাকাল সারহানের দিকে। লজ্জা – সরম ভুলে গেল। সারহান হাসল। তৃষ্ণায় ধুঁকিয়ে ওঠা চক্ষুদ্বয় তাল মেলালো। সেই চোখ জোড়া দিয়ে ল্যাম্পপোস্টের সাদাটে ক্ষীণ আলোয় দেখল প্রেয়সীর লাজে রাঙা মুখশ্রী।
“হেই তোমরা কারা? এতো রাইতে দীঘির পাড়ে কি করতাছো?”
কর্ণকুহরে প্রবেশ করল এক বৃদ্ধ লোকের কন্ঠস্বর। দুজনে ছিটকে দূরে সরে দাঁড়াল। অরিত্রিকা তড়িঘড়ি করে পেছন ফিরে তাকিয়ে লন্ঠন হাতে এক বৃদ্ধ লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠল ;
“ভূত, ভূত। ”
সে এক লাফে গিয়ে দাঁড়াল সারহানের পেছনে। ভয়ে দুহাতে পাঞ্জাবি আঁকড়ে ধরল। সারহান নিজেকে সামলে কপাল কুঁচকে তাকাল সামনে। বৃদ্ধ লোকটিকে দেখে অপ্রস্তুতভাব বুঝতে না দিয়ে মৃদু হাসল। সম্মানসূচক কন্ঠে বলল ;
“কেমন আছেন জয়নাল চাচা?”
জয়নাল চাচা চোখে পড়া চশমা ঠেলে ভালোভাবে তাকালেন। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে পরখ করলেন। অতঃপর হেসে জবাব দিলেন ;
“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?”
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”
“পেছনের মাইয়াডা কেডা বাবা? ”
“আপনার বউমা।”
“কবে বিয়া করছো বাবা?”
জয়নাল চাচা অবাক হয়ে শুধাইলেন। সারহান স্মিত হেসে বলল;
“আজ।”
জয়নাল চাচা অবাক হলেন। বাসর রাতে শহর থেকে গ্রামে আগমনে খটকা লাগলো। কৌতূহল মেটাতে জিজ্ঞেস করলেন;
“আজকে তোমাগো বাসর রাইত। তোমরা এইখানে কি করতাছো?”
“বউকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি।”
“রাতের বেলায় কেডা ঘুরতে আসে? ওই বউমা বরের পিছে না লুকাইয়ে বাইর হইয়া আসো। ”
শেষোক্ত কথাটি অরিত্রিকাকে উদ্দেশ্য করে বললেন। অরিত্রিকা বেরিয়ে আসলো। সৌজন্য বজায় রাখতে সহালকা হেসে বলল;
“কেমন আছেন আংকেল? ”
বৃদ্ধ লোকটির বোধ হয় আংকেল ডাকটি পছন্দ হলো না। কেমন অদ্ভুত নজরে তাকালেন। তারপর গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিলেন ;
“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো? ”
“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
“বাবা চলো আমার দোকানে গিয়া বসো। চা খাও আর গল্প করো দুজন মিইলা। মনে হইতাছে বৃষ্টি হইবো। এইখানে দাঁড়াইয়া থাইকো না আর। ”
“চাচা আজ নয় অন্য একদিন চা খাবো। এখন বাড়িতে ফিরতে হবে। অনেক রাত হয়েছে।”
জয়নাল চাচা একপ্রকার জেদ করে বললেন ;
“বউমারে লইয়া প্রথমবার গ্রামে আইছো খালি মুখে নিয়া যাইবা? আসো আমার দোকানে।”
সারহান বুঝতে পারল জয়নাল চাচা সহজে ছাড়বে না। সে মাথা দুলিয়ে বলল;
“ ঠিক আছে। আপনি হাঁটতে থাকুন আমরা আসছি।”
জয়নাল চাচা হেসে দোকানের দিকে হাঁটতে থাকলেন। সারহান অরিত্রিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল;
“চল।”
সারহান অরিত্রিকার এক হাত ধরল। অতঃপর দুজনে টঙের দোকানটার দিকে ধীরজ পায়ে হাঁটতে লাগল। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, দমকা শীতল হাওয়া ছুঁয়ে গেল তাদের। প্রকৃতি যেন গূঢ়ভাবে এক প্রেমকাহিনীর নিরব স্বীকৃতি প্রদান করল। যাহার সাক্ষী হলো মেঘ, বৃষ্টি, সমীরণ ও প্রকৃতি নিজে। অশান্ত প্রকৃতির মাঝে গুঞ্জন তুলল এক প্রেমিক পুরুষের প্রেমোমত্ত কন্ঠস্বর ;
“আমার শেষ চেষ্টা, শেষ ভালোবাসা, শেষ আশা, শেষ জীবনসঙ্গী, শেষ বিশ্বাস, শেষ শক্তি — তুই।”
সারারাত্রি ঝটিকা-বৃষ্টি প্রলয়রূপে তাণ্ডব পরিচালনা করেছে। সকাল হতে আবহাওয়ার প্রকৃতি অস্বাভাবিক। সূর্য দৃষ্টিগোচর। মেঘাচ্ছন্ন অম্বর সর্বত্র বিস্তৃত। স্বল্পক্ষণে পুনরায় বৃষ্টিপাত সম্ভাব্য।
সকাল দশটা বেজে পনেরো মিনিট। নাস্তা করে অফিসের উদ্দেশ্য বেরোচ্ছেন আরশাদ সাহেব এবং আজমল সাহেব। ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে দুজনে সিঁড়ি বেয়ে নামলেন। আজমল সাহেব আরশাদ সাহেবকে গাড়ি নিয়ে বেরোতে বললেন। আরশাদ সাহেব কথা না বাড়িয়ে পার্কিং প্লেসের দিকে গেলেন। অরিত্রিকা লেভিকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতেই দেখল আজমল সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন নিচে। সে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে দাঁড়ায় বাবার সামনে। মিষ্টি করে বলে ;
“গুড মর্নিং আব্বু।”
আজমল সাহেব হাসলেন ;
“গুড মর্নিং। আম্মা তুমি বাসায়! ভার্সিটিতে যাওনি কেন?”
অরিত্রিকার বলতে ইচ্ছে করল, বিয়ে করেছি — ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমার কয়েকদিন ছুটি প্রয়োজন আব্বু। কিন্তু বলতে পারল না। মুখ ভার করে ছোট্ট করে জবাব দিলো ;
“ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে।”
“আগামীকাল থেকে নিয়মিত ভার্সিটিতে যাবে। ওকে?”
“আচ্ছা।”
অরিত্রিকা বিরসমুখে জবাব দিলো। বিয়ের পর কেউ পড়াশোনা করে? আজমল সাহেব অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলেন। অরিত্রিকা সরাসরি গিয়ে বসলো সোফায়। লেভিকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে সেথায় হেলান দিলো। রাতে দেরী করে ঘুমানোর কারণে শরীরটা মেজমেজ করছে। গ্রাম থেকে বাড়ি ফিরতে তাদের রাত আড়াইটা বেজেছিল। সাদাত সদরদরজা খুলে দিয়েছিল ভেতর প্রবেশ করার জন্য। ছোট ভাই হয়ে বড় ভাইয়ের রোমান্সে সাহায্য করেছে ভাবতেই অবাক হয়েছিল। তারপর আর কি! এক দৌড়ে নিজের রুমে এসেছিল।
“গুড মর্নিং অরি।”
আফ্রিদি হেলেদুলে এসে পাশে বসে হাই তুলে বলল। অরিত্রিকা ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে তাকালো সামনের সোফায়। আফ্রিদিকে দেখে মৃদু হেসে বলল;
“গুড মর্নিং।”
আফ্রিদি আশে পাশে নজর বুলিয়ে কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল ;
“তোমার গ্যাংয়ের সদস্যরা কোথায়? ”
অরিত্রিকা স্বাভাবিক ভাবে বলল ;
“ইফা আপু ঘুমাচ্ছে, সাদাত মেবি রুমে বসে পড়ছে আর ইশরার খবর জানি না।”
“ইশরা মেয়েটা অনেক সুইট।”
“পছন্দ হয়েছে নাকি?”
“ওই আর কি ভালোলেগেছে?
“প্রেম করতে চাও নাকি বিয়ে?”
অরিত্রিকা ভ্রুযুগল কুঁচকে প্রশ্নাত্মক কন্ঠে বলল। আফ্রিদি থতমত খেল। একটু ভালোলেগেছে শুধু। প্রেম করবে নাকি বিয়ে করবে তা এখনো ভেবে দেখেনি। তাহলে উত্তর কি দেওয়া যায়? সে বেশী ভাবল না। আমতা আমতা করে বলল ;
“দুটোই।”
অরিত্রিকা মুখটা সিরিয়াস করে বলল;
“কোনোটাই হবে না। অন্য মেয়ে দেখো।”
আফ্রিদি বোকা বনে গেল। অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়ে রইল অরিত্রিকার দিকে। মেয়েটা কি তাকে অপমান করল? সাদাত গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে প্রবেশ করছে লিভিং রুমে। হঠাৎ আফ্রিদিকে বসে থাকতে দেখে গা জ্বলে যায়। রাগে গমগম করতে থাকে। তবে রাগ প্রকাশ না করে এগিয়ে এসে বসে অরিত্রিকা পাশে। পায়ের ওপর পা দিয়ে লাট সাহেবের মতো করে বসে।
“হ্যালো সাদাত!”
আফ্রিদি বলে উঠল। সাদাত সামনে না তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে জবাব দেয় ;
“হাই!”
আফ্রিদি বুঝতে পারল সাদাতের কিছু হয়েছে। তাই সে আর কথা বাড়ালো না। অরিত্রিকা সাদাতের পেটে কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে চাপা স্বরে বলল ;
“এই তোর কি হয়েছে?”
সাদাত নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল;
“কিছু হয়নি।”
“গতকাল থেকে মুখ হনুমানের পাছুর মতো করে আছিস কেন? কি হয়েছে বল!”
“মন ভালো নেই।”
“আবারও প্রেমে অসফল হয়েছেন! চিন্তা করবেন না। চৌধুরী বাড়ির ছোট মেয়ে কবিরাজ অরিত্রিকা ফাইরুজ চৌধুরীর নিক যান। যাদু -মন্ত্র করে প্রেমে সফলতা এনে দিবে।”
“একদম আমার সাথে মজা করবি না।”
সাদাত ধমকে বলে উঠল। অরিত্রিকা ফিক করে হেসে দিলো। হাস্যরত কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলল ;
“আমার কেন যেন মনে হচ্ছে প্রেম ঘটিত কোনো কাহিনী ঘটেছে। প্রেমে পড়েছিস! এ প্রেমটা হলো শাবনূর আর রিয়াজের মতো প্রেম। মানে তুই ওই মেয়েটাকে না পেলে ম*রে যাবি। কিন্তু মেয়েটা হয়তো তোকে পাত্তা দেয় না। কিন্তু তুই ওসব মনে না করে গোপনে, নিরবে ভালোবাসিস! আহ! ক্যায়া লাভ স্টোরি হে। উমমম ব্রো, তাকে বিয়ে করার চিন্তা ভাবনা নাকি ঘুরছে তোর মাথায়? ”
সাদাত চমকে গেল। বিস্মায়াবিষ্ট চাহনিতে তাকাল অরিত্রিকার পানে। থতমত খেয়ে বলল;
“এসব কি বলছিস?”
অরিত্রিকা সাদাতের চুল টেনে দিয়ে গমগমে কন্ঠে বলল;
“কি বলছি তাই না? ভালোবাসতে পারিস অথচ মুখে বলতে গিয়ে হাওয়া ফুস?”
“কি সব বকছিস? ”
“আমি লাল পানি খেয়ে বকছি না ব্রো। চোখের সামনে সিন চলে সেসব আমিও দেখি।”
“তোর মাথা গেছে একদম।”
“আমার মাথা না তোর মাথা গেছে।”
অরিত্রিকা রাগে ফুঁসে উঠে বলল। সাদাতের ভেতরটা অস্থির হয়ে উঠল। কিভাবে অরিত্রিকা জেনে গেল তার মনের খবর? আফ্রিদি দুজনকে ফুসফাস করে কথা বলতে দেখে আগ্রহী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল ;
“তোমরা দুইজন কি গল্প করছো?”
অরিত্রিকা সহালকা হেসে বলল;
“ ওই আরকি খোঁজ খবর নিচ্ছিলাম।”
আবির এবং অরিন সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো। অরিন এদিকটায় না এসে কিচেনের দিকে গেল। আবির সরাসরি পদযুগল ফেলে এগিয়ে এসে বসল আফ্রিদির পাশে। অরিত্রিকাকে সাদাতের পাশে বসে থাকতে দেখে দুষ্টুমি করে বলল;
“ শ্যালিকা, তোমার দুষ্ট বর কোথায়? গতকাল রাত মহাশয়ের কোনো দেখা নেই।”
অরিত্রিকা হাসি মিলিয়ে গেল। মুখশ্রীতে ভর করল লাজুকতা। আড়ষ্টতা এড়িয়ে বলল;
“উনি ঘুমাচ্ছেন।”
আবির পূর্বের ন্যায় হেসে বলল;
“ বেশী রাত করে ঘুমিয়েছে বোধ হয়। ”
অরিত্রিকা থতমত খেয়ে চুপ করে রইল। আড় চোখে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে কাউকে দেখে আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলল ;
“ভাইয়া আমার দুষ্ট বর আসছে।”
লিভিং রুমে উপস্থিত সবাই তাকাল সিঁড়ির দিকে। সারহান গাম্ভীর্য ভাব নিয়ে নামছে। পরনে কালো টাউজার ও সাদা টি শার্ট। সে শাণিত পায়ে এগিয়ে আসলো। লিভিং রুমের চার জোড়া চোখ দিকে নিবদ্ধ দেখে কপালে সূক্ষ্ম ভাজ ফেলল। গলায় একরাশ বিরক্ত ঢেলে গম্ভীর কন্ঠে বলল;
“এ ভাবে পেঁচার মতো তাকিয়ে আছিস কেন তোরা? রুপ বেরিয়েছে আমার? ”
সবাই তড়িঘড়ি করে দৃষ্টি সরিয়ে পূর্বের ন্যায় বসল। সারহান এসে অরিত্রিকার পাশে দাঁড়াল । আদেশাত্নক কন্ঠে বলল;
“মাকে গিয়ে বল আমার জন্য কফি বানাতে। ”
অরিত্রিকা ভদ্র মেয়ের মতো উঠে দাঁড়াল। কিচেনের দিকে যেতে যেতে বলল ;
“আমি আপনার জন্য কফি বানিয়ে আনছি।”
সারহান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বসল সাদাতের পাশে। তখনি আবির লাফিয়ে উঠে ধপাস করে বসল বন্ধুর পাশে। সারহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। ভরাট কন্ঠে বলল;
“ছোট বাচ্চাদের মতো লাফালাফি কেন করছিস?”
আবির হেসে বলল;
“ এক্সাইটমেন্টে।”
“কিসের এক্সাইটমেন্ট? বউ বাড়ি নিয়ে যাওয়া?”
“আরেহ নাহ।”
সারহান নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল;
“তাহলে?”
আবির হাসি বজায় রেখে ফিসফিসিয়ে বলল;
“গতকাল রাতে কি কি করেছিস। ওটা জানার এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। রাতে কোথায় গিয়েছিলি?”
সারহান বাঁকা হাসল। স্বভাবসিদ্ধ কন্ঠে বলল;
“গ্রামে ঘুরতে গিয়েছিলাম। দীঘির পাড়ে বসে ছিলাম। ”
আবির কপাল চাপড়ে আত্নচিৎকার দিয়ে বলল;
“আমাকে বলতি, আমি রুমের ব্যবস্থা করে দিতাম। এটা তুই কি করলি ভাই গ্রামে গিয়ে খোলা দীঘির পাড়ে। ছিহঃ ছিহঃ। ”
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৬৪
সারহান বিরক্ত হলো। কটমট করে তাকাল আবিরের দিকে। চাপা স্বরে ধমকে বলল;
“আমাকে দেখে কি তোর উত্তেজনায় ডুবে যাওয়া কাপুরুষ মনে হয়! যেখানে সেখানে বউয়ের সাথে বাসর করা শুরু করেদিবো?”
“আহা! দোস্ত আমার শুদ্ধ পুরুষ। আমিও তোর মতো হতে চাই।”
“আমার মতো হতে হলে একশবার জন্ম নিতে হবে তোর।”