প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৮০ (২)

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৮০ (২)
আদ্রিতা নিশি

সময় নদীর মতোই অবিরত বয়ে চলে। গ্রীষ্মের দাহন ও অসহনীয় উষ্ণতা পেছনে ফেলে ধরণীতে নেমে এসেছে বর্ষা। আকাশে জমেছে মেঘমালা, হালকা শীতল আর উষ্ণ হাওয়া পালা করে ছুঁয়ে যায় শরীর। দূরে কোথাও মৃদু গর্জনে মেঘ জানান দেয় বর্ষাকালের আগমনের কথা আর মুহূর্তেই চারপাশ ভরে ওঠে বৃষ্টির গন্ধে। প্রকৃতি নতুন সাজে সেজেছে! গাছের পত্রপল্লব অধিক সবুজতর।মাটির গায়ে শ্যামলিমা ছড়িয়ে পড়েছে। সকাল-বিকাল নিয়ম করে প্রকৃতিতে নেমে আসে বৃষ্টিধারা। ছাদের টিনে, গাছের পাতায়, কিংবা জানালার কাচে বাজিয়ে তোলে স্নিগ্ধ সুর।

নবদম্পতি নদীর পাড়ে বেড়িয়ে আসার পর কেটে গিয়েছে কয়েকটি দিন। এদিকে আবির ও অরিনের রিসেপশনের দিন এগিয়ে এসেছিল। আজমল সাহেব বড় মেয়ের বিয়ের রিসেপশনে জমকালো আয়োজন করেছিলেন। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে দিনটি পার হলেও, অনুষ্ঠান শেষে আজমল সাহেব ও সাথী বেগম বড় মেয়ের জন্য মন খারাপ করেছিলেন। ধীরে ধীরে সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে।সারহান ও অরিত্রিকার দিন কাটছে ভালোবাসা, খুনসুটি আর মাঝে মাঝে ছোটখাটো ঝগড়ায়। এসবের মাঝে একটু আকটু চৌধুরী বাড়ির বড় বউ হওয়ার চেষ্টায় অরিত্রিকা। পূর্ণাঙ্গ সংসারী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও প্রতিনিয়ত উদ্ভট কর্মকান্ড ঘটায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সেসবকে ছাপিয়ে দুই- সত্তা অপেক্ষা করছে কাঙ্খিত দিনটির। সাদাত ও ইশরার প্রেম গোপনে আরও গভীর হয়ে উঠেছে।তারা এক মুহূর্তও একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারে না যেন চোখে হারায়। ইরফান ও রাহা সংসারে নতুন উদ্যমে পথ চলা শুরু করেছে, দূরত্ব মিটিয়ে প্রেমে ভরপুর দিন কাটাচ্ছে। আবির ও অরিনের মাঝে দুরত্ব ঘুচেছে। আস্তে ধীরে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এভাবেই হাসি-আনন্দে কীভাবে দুই মাস কেটে গেছে তা বোঝায় যায়নি।এক দম্পতির রিসেপশন শেষ হতে না হতেই আরেক দম্পতির রিসেপশনের দিন ঘনিয়ে এলো। আগামীকাল শুক্রবার সারহান ও অরিত্রিকার রিসেপশন অনুষ্ঠিত হবে। এই নিয়ে চৌধুরী বাড়ির সবাই মেতে আছে।

❝আপনাকে ছাড়া এ বিশ দিন আমার জন্য অসহনীয় যন্ত্রণার ছিল নেতাসাহেব! আপনাকে ছাড়া এক মুহুর্ত কল্পনা করা আমার জন্য কষ্টকর। আজ আমার জন্মদিন! অথচ আপনি আমার পাশে নেই। রাত বারোটায় সবার আগে ফোনে উইশ করেছেন আমি অনেক খুশি হয়েছি কিন্তু আপনি আমার সাথে নেই, পাশে নেই। আমি জানি, আপনি রাজনৈতিক কাজে ঢাকা গিয়েছেন তবুও আমার মন মানছে না। বুকে কেমন যেন হাহাকার, শূন্যতা বিরাজ করছে। আপনাকে একপলক দেখার জন্য মন তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠেছে। কতোদিন আপনাকে সামনাসামনি দেখিনা, আপনার বুকে মাথা রেখে অভিযোগ করি না, আপনাকে ছুঁতে পারিনা। আপনি কি বুঝতে পারছেন না নেতাসাহেব, আমার এ দহন! ❞
অরিত্রিকা ডায়েরির পাতায় লেখা টুকু লিখে বিমর্ষ চাহনিতে তাকিয়ে রইল। হাতের কলম টা অবহেলায় রাখল। কেন যেন চক্ষুদ্বয় উপচে অশ্রু গড়াতে চাইল।

মনে মনে, অভিমান, অভিযোগের পাহাড় গড়ল সে। সারহান বিশদিনের জন্য ঢাকায় গিয়েছে রাজনৈতিক কাজের জন্য। আজ রাতে আসার কথা। মানুষটা দূরে কাজের চাপে থেকেও তার জন্মদিন মনে রেখেছে। রাত বারোটায় সবার আগে উইশ করেছে এবং তার পছন্দের চকলেট ফ্লেভারের কেক আগে অর্ডার করে রেখেছিল। সেটা সাদাত গিয়ে নিয়ে এসেছিল। সেসবের সাথে ছিল পনেরো রকমের গোলাপ ফুল এবং তার সতেরো বছরের একটা শাড়ি পরিহিত পেইন্ট কৃত ছবি। সারহান তার নিভৃতসুধার বিশতম জন্মদিনে গিফট দিয়েছে। অরিত্রিকা খুশি হয়েছিল। কিন্তু সারহানের উপস্থিতি তাকে ভেতরে ভেতরে কষ্ট দিচ্ছিল। রাত বারোটার পরে বাড়ির সবাই মিলে কেক কেটেছিল। তখন সারহান ছিলো ভিডিওকলে। সে একবারও তাকায়নি।

অবুঝের মতো অভিমান করেছিল। সে ডায়েরিটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়াল। ধীরজ পায়ে এসে দেয়ালে টাঙানো তার পেইন্টেড ছবিটার দিকে তাকাল। লাল পাড়যুক্ত শ্বেতবর্ণ শাড়িতে আবৃত তার কিশোরী সময়ের ছবি।হালকাভাবে অলংকৃত, প্রসাধিত মুখশ্রীতে নির্মল হাসি, খোলা কৃষ্ণ বর্ণের চুলগুলো কোমর পর্যন্ত বিস্তৃত।কাজলবরণ আঁখিযুগল উন্মীলিত, স্থিরভাবে চেয়ে আছে দূর আকাশপ্রান্তে।সময় তখন গোধূলিলগ্ন। এই ছবিটা যে নেতাসাহেব তুলেছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিষাদগ্রস্ত মনটা একটু ভালো হয়ে গেল। এই রুপে দেখে সারহান ভাই তার প্রেমে পড়েছিল। আদৌও কি সম্ভব! অসম্ভব কিছু নয়। হঠাৎ তার মনে পড়ল পরের কাহিনী। মুখে থাকা সাজ লেপ্টে মঞ্জুলীকা সাজার চেষ্টা করেছিল। তারপর কোনো কারণে রুম থেকে বাহিরে বের হয়েছিল। ব্যস! দেখা হয়ে গিয়েছিল কাঠখোট্টা খাম্বার মতো মানুষটার সাথে। কেমন অদ্ভুত চাহনিতে দেখছিল তাকে ভেবেই হেসে উঠল। সে দৃষ্টি সরিয়ে এগিয়ে গেল বিছানার দিকে। বালিশের নিচে থাকা নীল চিরকুটটা বের করতেই ওষ্ঠ প্রসারিত হলো। তার নেতাসাহেব চিরকুট লিখে পাঠিয়েছে উপহার গুলোর সাথে।

❝ প্রিয় বিবিজান,
আমার নিভৃতসুধা
গোধূলিলগ্নের এক বিশেষ মুহুর্তে আপনাকে প্রথম দেখেছিলাম। লালপাড় শাড়িতে মোড়া, কোমরছোঁয়া কৃষ্ণ বর্ণের চুলগুলো দোদুল্যমান। কাজল-ঘেরা হরিণের মতো আঁখি মেলে দূর স্বপ্ন নিয়ে অনিমিষনেত্রে অদূরে আকাশে তাকিয়েছিলেন। সেই সপ্তদশী কিশোরীর নির্মল হাসি আমার হৃদয়ে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছিল।
যার ঢেউ আজও স্তিমিত হয়নি।এভাবেই অবিচ্ছেদ্য ভাবে চলছি।আজ, আপনার জীবনের বিশতম জানাই জানাই অশেষ শুভেচ্ছা।
আপনার আগামীর দিনগুলো হোক গোধূলির রঙে রঞ্জিত,আপনার হাসি হোক প্রথম দেখার মতোই অনন্তকাল দীপ্ত আর আমার ভালোবাসা থাকুক আপনার জীবনের প্রতিটি ঋতুর নিরবচ্ছিন্ন প্রহরী হয়ে। ভালোবাসা নিবেন বিবিজান!

__ আপনার নেতাসাহেব ❞
অরিত্রিকা চিরকুটটায় ওষ্ঠ ছোঁয়ায়। তার মন সিক্ত হয় আবেশে, ভালোলাগায়। নেতাসাহেব ভালোবেসে নিজের হাতে চিরকুট লিখে পাঠিয়েছেন। গতকাল রাত থেকে কতোবার এটা পড়ল সেটার কোনো হিসেব নেই। যত পড়ে ততই ভালোলাগে। মন খারাপ কর্পূরের ন্যায় মিলিয়ে যায়। সে লাজুক হেসে চিরকুটটা যত্ন করে ডায়েরির ভাজে রেখে হাস্যরত ভঙ্গিমায় নিচে ছুটে যায়।
“এমন লম্ফঝম্প করছিস কেন? বিয়ে হয়ে গেছে অথচ শুধরাসনি। বাড়ির মেয়ে বাড়িতে আছিস তাই সবাই মেনে নিচ্ছে। অন্য বাড়িতে গেলে বিয়ের দুইদিন পর ঘুরিয়ে দিয়ে যেতো। ”
সাথী বেগমের কথায় কোনো হেলদোল দেখা গেল না অরিত্রিকার মাঝে। সে লাফিয়ে লাফিয়ে সোফায় বসা রাহার কাছে গেল। শব্দ করে বসে দুষ্টমি করে হেসে স্বর টেনে বলল;
“ভাবীইইই! ভাইয়ার কথা ভাবছেন?”

সাথী বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কিচেনের দিকে চলে গেল। মনে মনে, আক্ষেপ করলেন মেয়েটার বাচ্চামো দেখে। কবে একটু ভার বুদ্ধি হবে কে জানে? সারহান দেখে মেয়েটার এসব কান্ডকারখানা সহ্য করে যাচ্ছে। অন্যকেউ হলে বাড়িতে রেখে যেত। রাহা চমকে অরিত্রিকার দিকে তাকাল। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল;
“তেমন কিছু না।”
অরিত্রিকা মিটিমিটি হেসে বলল;
“সব বুঝি আমি। আমিও এমন সময় পাড় করেছি।”
“তুই একটু বেশী বুঝিস।”
“বেশী বোঝা ভালো। কিন্তু কম বোঝা ভালো না। এবার বল ইশরা আর সাদাত কোথায়?”
“ইশরা তোর রিসেপশনের জন্য সাজগোজের জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখছে আর সাদাত আংকেলের সাথে কমিউনিটি সেন্টারে গিয়েছে ওখানকার ডেকোরেশন, অ্যারেন্জমেন্ট কতোটা হয়েছে দেখার জন্য।”

“ওহহ। এমন সময় রিসেপশনটা হচ্ছে কোনো মজাই করতে পারছিনা। অরিন আপুর পরীক্ষা আর উনার কাজ। ভাগ্যিস, সবাই মিলে আকদের আগে এনগেজমেন্ট, হলুদের অনুষ্ঠান করেছিলো। নয়তো আমার সব ইচ্ছে অপূর্ণ থাকতো।”
অরিত্রিকা মুচকি হেসে বলল। রাহা আগ্রহ নিয়ে বলল;
“দেখি তোর হাতে মেহেদী কালার কেমন এসেছে।”
দুইদিন আগে রাহা অরিত্রিকার হাতে অর্গানিক মেহেদী দিয়ে দিয়েছিল। অরিত্রিকা প্রফুল্লচিত্তে হাতদুটো মেলে ধরে বলল;
“গাঢ় খয়েরী এসেছে।”
রাহা হেসে বলল;
“শুনেছি, যার হাসবেন্ড অনেক বেশী ভালোবাসে তার হাতে মেহেদীর রঙ ভালো আসে। তারমানে ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে।”

অরিত্রিকা হাত নামিয়ে হাসল শুধু। ইশরা এসে অরিত্রিকা আর রাহার মাঝে বসে বলে উঠল;
“সারহান ভাই অরিত্রিকাকে অনেক ভালোবাসে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই দুই মাসে সেটা সবাই বুঝে গেছে। বাহির থেকে ফিরেই ফাইরুজকে খোঁজা শুরু করে দেয়। আশেপাশে না দেখলে হাঁকডাক দেয়। আমার তো মনে হয় এসব ছোট মামু খেয়াল করে অরিন আপু আর রিসেপশনের একমাস পরেই অরিত্রিকা আর সারহান ভাইয়ের রিসেপশন করছেন ।”
রাহা শব্দ করে হেসে উঠল। অরিত্রিকা লজ্জা পেলেও মেকি রাগ দেখিয়ে বলল;
“বেশী পেকে গেছিস! সাদাতকে বলবো? ”
“বল।”
“বাব্বাহ! কি সাহস।”
“কার কাজিন দেখতে হবে না?”

“তাও ঠিক। আমার কাজিন বলে কথা। সাহস তো থাকবেই।”
কথাটা বলে অরিত্রিকা তাল মিলিয়ে হেসে উঠল। রাহা হাসি থামিয়ে চাপা স্বরে বলল;
“অরিত্রি আগামীকাল তোর আর ভাইয়ার রিসেপশন কেমন ফিল হচ্ছে?”
অরিত্রিকা হাসি থামিয়ে কপাল কুঁচকে বলল;
“কেমন ফিল হবে? আগে যেমন ফিল হতো এখনো তেমন ফিল হচ্ছে।”
রাহা বিরক্তিপ্রকাশ করে বলল;
“ওসব কথা বলছি না। রাতের কথা বলছি।”
অরিত্রিকা অবুঝের ন্যায় বলল;
“রাতে কি?”
“আরে গাধী কাল তোদের স্পেশাল রাত।”
“হুমম। তাতে কী হয়েছে?”
“তোর সাথে কথা বলাই বেকার। বাদ দে।”
“আচ্ছা বাদ দিলাম। অরিন আপু কখন আসবে ইশরা? ”

ইশরা এতোক্ষণ না শোনার ভাণ করে শুনছিল। অরিত্রিকার কন্ঠ শুনে ধরফরিয়ে উঠে বলল;
“আপুর আজ এক্সাম আছে। তাই রাতে আসবে। সারহান ভাই কখন আসবেন?”
অরিত্রিকা ম্লান মুখে বলল;
“জানিনা। উনার সাথে আজ কথা হয়নি। দুপুর হয়ে গেল অথচ উনি আমায় একবারও কল করলেন না।”
“মন খারাপ করিস না। উনি চলে আসবেন।”
“হুমম। আমার লেভিটা কোথায় রে?”
“ওর বাবার রুমে। ”
কথাটি বলে ইশরা ফিক করে হেসে দিলো। তাল মিলিয়ে অরিত্রিকা ও রাহা হেসে উঠল। সেই দৃশ্য আরশাদ সাহেব ওপর থেকে দেখলেন। তিনি হাসলেন। এতো সুন্দর দৃশ্য দেখে তার মন শান্ত হয়ে গেছে। সে ভাবে, সারহান অরিত্রিকাকে বিয়ে একদম ঠিক করেছে।

গোধূলি লগ্ন পেরিয়ে সন্ধ্যা পেরিয়েছে। লিভিং রুমে ছোট পরিসরে জন্মদিন উদযাপন করার জন্য আয়োজন করা হয়েছে। অরিত্রিকা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এক দৃষ্টে তাকিয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখছে। পরনে তার সেই শ্বেতবর্ণ যুক্ত লাল পাড়ের শাড়ি। সেই গহনা, মেলায় কিনে দেওয়া লাল রেশমী চুড়ি,একই সাজ, কোমর অব্দি চুলগুলো ছাড়া। সে এরুপ দেখে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অবলোকন করে। পূর্বের থেকে খানিকটা মুটিয়ে গেছে তবুও একই রকম লাগছে। মানুষটা যখন এ সাজে তাকে দ্বিতীয়বার দেখবে তখন কি হবে? নিশ্চয়ই থমকে যাবে, চমকে যাবে। অপলক চাহনিতে তাকিয়ে থাকবে ভেবেই শরীর শিরশির করে উঠল। স্নিগ্ধ লাজুকতা ছড়িয়ে পড়ল মুখশ্রীতে। সে দৃষ্টি ফেরালো আয়না থেকে। হঠাৎ কি মনে করে ছুটল রুমের বাহিরে। নুপুরের ঝংকারে প্রতিধ্বনিত হলো চতুর্দিক। সে এসে থামে সারহানের রুমের দিকে। সময় ব্যয় না করে চঞ্চলা চিত্তে ভেতরে প্রবেশ করল। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে আশেপাশে তাকাল। কেমন যেন অস্থির মনোভাব! অরিত্রিকা এগিয়ে যায় ড্রেসিং টেবিলের দিকে। রুটিনমাফিক আজও মানুষটার পারফিউম ইউজ করল। তার ওষ্ঠদ্বয় কিঞ্চিৎ প্রসারিত হলো। এক অদৃশ্য আবেশে জড়িয়ে গেল। কেন যেন এই সুগন্ধ নাসিক্যে প্রবেশ করলে অনুভব হয় সারহান ভাই তার আশেপাশে আছে। এ মুহুর্ত তার মনটা অশান্ত,অপেক্ষারত কারো জন্য। কখন তার উদ্বিগ্নতা, অশান্ত মন কে স্বাভাবিক করতে নেতাসাহেব আসবেন? সামান্য দুরত্বের দাহন কমিয়ে দিবেন?

“ফাইরুজ!”
দীর্ঘ সময় পর এ মুহুর্তে অপ্রত্যাশিত কারো কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই অরিত্রিকা চকিত চাহনিতে তাকাল দরজার দিকটায়। কাঙ্খিত মানুষটিকে এতোদিন পরে সামনে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল। তার কাজল কালো আঁখিযুগল বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। কেমন গলরোধ হয়ে এলো। কেন যেন হলো সবকিছু ভ্রম। বিভ্রান্ত কন্ঠে অস্ফুটস্বরে আওড়ালো ;
“সারহান.. ভাই! ”

সারহানের চমকানো, থমকানো চাহনি নিবদ্ধ অরিত্রিকার পানে। মেয়েটা এ কোন রুপে সেজেছে! সেই সাজসজ্জা, শাড়ি…. এই ভুবনমোহিনী রুপে দেখে তো সে অরিত্রিকার প্রতি অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করেছিল। একটু একটু করে প্রণয়ানুভূতিতে ধাবিত হয়েছিল। আজও সেভাবে সেজেছে মেয়েটা! কার জন্য এমন মারাত্মক সেজেছে? কেন সেজেছে? তবে কি তার জন্য? সে বিমোহিত নয়নে তাকিয়ে এগিয়ে আসে অরিত্রিকা দিকে। অরিত্রিকার নেত্রপল্লব নড়ে ওঠে। তার কেন যেন মানুষটা ভ্রম মনে হয়। আগেও তো সারহান ভাই তার সামনে এসেছেন।কিন্তু সে ছুঁতে গেলে মিলিয়ে গেছে। মানুষটা তার স্বপ্নে এসেছে অথচ কেমন চুপচাপ থাকতেন। সে আস্তে ধীরে পিছাতে লাগল। মনে মনে স্থির করল ছুঁবে না মানুষটাকে।
“কি হলো পিছিয়ে যাচ্ছিস কেন?”

সারহান হঠাৎ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল। অরিত্রিকা নেত্রপল্লব ঝাপটে মিনমিন করে বলল;
“আপনি আমার ভ্রম তাই না নেতাসাহেব?”
সারহানের চাহনি শীতল হলো। মেয়েটা তাকে ভ্রম ভাবছে? আশ্চর্য! সে এগিয়ে যেতে লাগল। অতি ঠান্ডা করে বলল;
“আমি তোর ভ্রম নই।”
“সত্যি! ছুঁয়ে দিলে মিলিয়ে যাবেন না তো?”
“নাহ!একবার ছুঁয়ে দেখ।”

সারহান শান্ত কন্ঠে প্রতিত্তোর করল। সে তপ্ত শ্বাস ফেলল। বুঝতে পারল মেয়েটা তার অনুপস্থিতিতে তাকে কল্পনা করেছে। অরিত্রিকা পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকল। সে থমকে গেল। সামনে তাকাতেই দেখল মানুষটা তার অতি সন্নিকটে। সে সাহস সঞ্চার করে স্পর্শ করল পুরুষালি প্রশস্ত বক্ষ—বুঝতে পারল সত্যি মানুষটা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অরিত্রিকার বক্ষঃস্থল হুহু করে উঠল। বিশ দিন পর প্রিয় মানুষটিকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে গেল। সময় ব্যয় না করে জাপ্টে ধরল সুঠাদেহী শরীরটা। তার চক্ষুদ্বয় বেয়ে গড়িয়ে পড়ল আনন্দাশ্রু! সারহান এহেন ঘটনায় বিস্মিত হলো বটে। পরক্ষণে নিজেকে ধাতস্ত করে মেয়েলী শরীরটা জড়িয়ে ধরে গম্ভীর কণ্ঠে বলল;
“জার্নি করে এসেছি। এখনো ফ্রেশ হয়নি।”
অরিত্রিকা বুকে মাথা রেখে ভেজা কন্ঠে বলল;

“ফ্রেশ হতে হবে না।”
“কেন?”
“এটাই আপনার শাস্তি।”
“কিসের শাস্তি দিচ্ছিস?”
“আমাকে রেখে ঢাকায় গিয়েছিলেন সেই শাস্তি।”
অরিত্রিকার কন্ঠে অভিমান স্পষ্ট। মেয়েটা তার সঙ্গে ঢাকায় যেতে চেয়েছিল। কিন্তু সে নিয়ে যায়নি। সারহান নিগূঢ় চাহনিতে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলল;
“সামান্য শাস্তিতে আমার কিছু হবে না।”
অরিত্রিকা অভিমানী কন্ঠে বলল;
“আরও বড় শাস্তি দেব। শুধু অপেক্ষা করুন।”
“অপেক্ষায় রইলাম। এবার বল এতো সাজগোজ কেন করেছিস?”
“এমনি করেছি।”

অরিত্রিকা সারহানকে ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ক্ষীণ স্বরে বলল। সারহানের কপালের মধ্যাংশে সূক্ষ্ম ভাজ পড়ল। দৃঢ় কন্ঠে বলল;
“আমার জন্য সাজগোজ করেছিস অথচ মিথ্যা বলছিস?”
অরিত্রিকা হচকচিয়ে তাকাল। আমতা আমতা করে বলল;
“জন্মদিন তাই সেজেছি। আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।”
কথাটি বলে অরিত্রিকা ছুটে পালানোর জন্য পা বাড়াবে এমন সময় সারহান অরিত্রিকার হাত ধরে নিজেতে মিশিয়ে নিয়ে আবিষ্ট চাহনিতে তাকিয়ে গলা খাদে নামিয়ে বলল;
“You look unbelievably beautiful, My secret ambrosia.”
অরিত্রিকা বিস্ময়াভিভূত চাহনিতে তাকিয়ে রইল। সারহান পূর্বের ন্যায় বলল;
“You remind me of that seventeen-year-old girl who made the heart of a stern, unfeeling man like me beat a little softer.”
অরিত্রিকা লাজুক হাসল। এতোক্ষণের অভিমান কর্পূরের ন্যায় পালালো। সে একটু এগিয়ে আসলো। ফিসফিসিয়ে বলল;
“আপনার জন্য সেজেছি আজ নেতাসাহেব। এটা আমার তরফ থেকে আপনার জন্য সারপ্রাইজ ছিলো।”

রাত দশটা বেজে গেছে। অরিত্রিকার জন্মদিনের কেক কাটিং এবং খাওয়া দাওয়া সম্পূর্ণ শেষ। বড়রা ইতোমধ্যে ঘুমুতে চলে গেছে। কারণ আগামীকাল রিসিপশন আছে। তাই সকালে উঠে বাকী কাজ সারতে হবে। বাড়ির ছোট সদস্যরা ছাদে আড্ডার আসর জমিয়েছে। গোল হলে বসে সবাই ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলছে। আজ তাদের সাথে যোগ দিয়েছে সারহান।
“আবির ভাইয়া আপনি ট্রুথ নাকি ডেয়ার নিবেন?”
প্রথম বোতলটা ঘোরাতেই আবির পালা এলো। উপস্থিত সবাই উৎফুল্ল হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। আবিরের হাসি মুখখানা নিভে এলো। প্রথম চালে তার পালা আসলো। সে কিছুক্ষণ মৌন থেকে বলল ;
“ট্রুথ।”
সাদাত হেসে বলল;

“অরিন আপু তুমি ভাইয়াকে ট্রুথ দাও।”
আবির ঘাবড়ে গেল। অরিন সন্দিগ্ধ কন্ঠে প্রশ্ন করল ;
“কয়টা প্রেম করেছেন? আর কত বছর বয়সে প্রেম করেছেন?”
এ প্রশ্নে সবাই হৈচৈ করে উঠল। আবির পড়েছে মাইনকার চিপায়! বউ তার কি প্রশ্ন করল। সে অসহায় চাহনিতে তাকাল সারহানের দিকে। সারহান বাঁকা হাসল। তা দেখে আরও দুঃখ পেল।
কিছুক্ষণ মৌন থেকে মুখ গোমড়া করে বলল;
“একটা প্রেম করেছিলাম। তখন ক্লাস সিক্সে পড়তাম।”
ব্যস!সবাই হাসতে শুরু করল। অরিন রেগে বোম হয়ে গেল। সাদাত আবার বোতল ঘুরালো। এবার রাহার পালা আসলো। সাদাত বলল;
“ভাবী ট্রুথ নাকি ডেয়ার নিবেন?”
রাহা থতমত খেয়ে বলল;

“ট্রুথ।”
“ইরফান ভাই ভাবীকে ট্রুথ দাও।”
ইরফান নড়েচড়ে উঠল। রাহার দিকে তাকিয়ে বলল;
“তোমার বাবা – মায়ের পর কাকে বেশী ভালোবাসো?”
রাহা মুচকি হাসল ;
“অরিত্রিকা আর আপনাকে।”

এরপর ইশরার পালা এলো। সে ‘ডেয়ার’ নিল, আর সাদাত তাকে নাচতে বলল। ডেয়ার অনুযায়ী ইশরা এক সুন্দর গানের তালে নাচল। এরপর সাদাতের পালা এলো। সে-ও ‘ডেয়ার’ নিল এবং শর্তমতো গান গাইল। পরের পালা ছিল অরিনের; সে ‘ট্রুথ’ বেছে নিয়ে আবিরের করা প্রশ্নের উত্তর দিল। তারপর ইরফানের পালা এলো। রাহা তাকে ‘ডেয়ার’ হিসেবে একটি রোমান্টিক কবিতা আবৃত্তি করতে বলল, আর ইরফান একটি ইংরেজি কবিতা শুনিয়ে দিল। এরপর অরিত্রিকার পালা এলো।
“অরিত্রিকা ট্রুথ নাকি ডেয়ার নিবি। ”
অরিত্রিকা প্রথমেই ভেবে রেখেছিল ট্রুথ নেবে। সে তড়িঘড়ি করে বলল ;
“ট্রুথ।”
সাদাত সারহানকে উদ্দেশ্য করে বলল;
“ভাই অরিত্রিকাকে ট্রুথ দাও।”

সারহান অরিত্রিকার দিকে তাকাল। নির্লিপ্ত কন্ঠে প্রশ্ন করল ;
“আমাকে আর লেডির মধ্যে কাকে বেশি ভালোবাসো?”
উপস্থিত সবাই এ প্রশ্নে হতবাক হয়ে একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল। অরিত্রিকা তাজ্জব বনে গেল। এটা কি প্রশ্ন করল? সে বিস্ময়াভিভূত চাহনিতে তাকিয়ে রইল। সারহান ভ্রুযুগল গুটিয়ে বলল;
“কি হলো বল?”
অরিত্রিকা তবুও চুপ রইল। আবির অবাক হয়ে বলল;
“দোস্ত! এটা তুই কি ট্রুথ দিলি? মনে হচ্ছে অরিত্রিকাকে, স্বামী, সন্তানের মধ্যে একজনকে চুজ করতে বললি।”
সারহান গম্ভীর কণ্ঠে বলল;
“ তেমনটাই ভাব।”
সবাই আরেকদফা চমকাল। অরিত্রিকা কিছুক্ষণ মৌন থেকে মিটিমিটি হেসে জবাব দিলো ;
“আপনাকে। আপনার থেকে ০.০১ % কম ভালোবাসি লেভিকে। ”
সবাই হেসে উঠল। সারহাননের মুখখানা আরও গম্ভীর হয়ে গেল। সবার শেষে আসলো সারহানের পালা। সাদাত বলল;

“ভাই ট্রুথ নাকি ডেয়ার নিবে?”
সারহান ভরাট কন্ঠে বলল;
“ডেয়ার।”
সবাই উৎসুক হয়ে গেল। আবির বলে উঠল;
“অরিত্রিকা এবার সারহানকে শায়েস্তা করার সুযোগ পেয়েছো কাজে লাগাও।”
সারহান চাপা স্বরে ধমকে বলল;
“তুই চুপ করবি।”
“পারব না চুপ করতে।”
“অরিত্রিকা ভাইকে ডেয়ার দে।”
সাদাত হেসে বলল। অরিত্রিকা সারহানের দিকে তাকাল। ভ্রু নাচিয়ে হাসল ;
“আমার জন্য একটা রোমান্টিক গান বলুন নেতাসাহেব।”
আবির চিৎকার দিয়ে বলল ;

“এটা কি করলে তুমি? ব্যাটাকে সহজ ডেয়ার দিলে?”
অরিত্রিকা হাসি বজায় রেখে বলল;
“ভাইয়া এখন আপনার বন্ধুর থেকে রোমান্টিক গান শোনার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না।”
“আহারে, আমার বন্ধুটা তোমায় এখনো রোমান্টিক গান শোনায় নি?”
“সেটা করার সময়ই পায় না। সারাক্ষণ কাজ নিয়ে থাকে।”
“ভাই গান শুরু করো। ”
“গিটার নিয়ে আয়।”
সাদাত উচ্ছসিত ভাব নিয়ে দৌড়ে গিটার আনতে গেল। কিছুক্ষণ পরেই গিটার নিয়ে ফিরে এসে গিটারটা ভাইকে দিয়ে পাশে বসল। সারহান গিটারটা নিয়ে টুংটাং ধ্বনি তুলে অরিত্রিকার পানে তাকাল। সাদাটে আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেল মেয়েলী মুখশ্রীর হাস্যজ্জ্বলতা, লাজুকতা। সে বাঁকা হাসল। তার নিগূঢ়, শীতল চাহনি স্থির করে নিস্তব্ধতা ভেঙে অরিত্রিকা উদ্দেশ্য করে নিচু স্বরে বলল;

“This song is only for you, Bibijan.”
অরিত্রিকা অবাক হয়ে তাকাল। সারহান তা দেখে নীরবতা ভেঙে হঠাৎ সুর তুলে গেয়ে উঠল —
❝ Kaise Kahun ishq main tere
Kitna hoon betaab main
Aankhon se aankhe mila ke
Chura loon tere Khawab main (2)❞
অরিত্রিকা চক্ষুদ্বয় বড় করে তাকাল। সবার মিটিমিটি হাসি খেয়াল করে সে লজ্জায় হাসফাস করে উঠল। আড়ষ্টতা নিয়ে চাইল সারহানের পানে। মানুষটার মোহাবিষ্ট গাঢ় চাহনিতে আরেকটু মিইয়ে গেল। গানের স্বর মারাত্নক। কর্ণে প্রবেশ করতেই শিহরণ জাগাচ্ছে। সারহান প্রেয়সীর লাজুক ভাব দেখে মনে মনে ভীষণ আনন্দ পেল। অনিমেষ চেয়ে গলা ছেড়ে গানে যাওয়ায় মাতলো।
❝ Mere sayee hain saath main
Yaraa jis jagha tum hoon
Main jo jee raha hoon Wajah tum ho
Wajah tum ho (2)

আবির শিষ বাজিয়ে উঠল। অরিত্রিকা চমকে উঠল। সারহান তা দেখে ওষ্ঠ কামড়ে হাসল। গিটারের টুংটাং ধ্বনি বাজছে। সবার মাঝে উচ্ছ্বসিত ভাব, চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মাঝেই গিটারের তালে আবারও গান গাইতে লাগল।
❝ Hain ye nasha, Hain ye zeher
Iss peyar ko hum keya nam dein (2)
Kab se adhuri hain ik dastaan
Aja usey aj anjan dein
Tumhee bhuloon kaise main
Mere peheli khata tum ho
Main jo jee raha hu Wajah tum ho
Wajah tum ho (2)
সারহানের গান শেষ হতেই আবির, সাদাত শিষ বাজিয়ে উঠল। বাকীরা সবাই হাত তালি দিলো। সেই শব্দে অরিত্রিকার ধ্যান ভাঙল। সে মানুষটার সুগভীর স্বরে এতোটাই মত্ত হয়েছিল যে সব ভুলে বসে ছিল। আবির তখুনি দুষ্টমি করে বলে উঠল ;
“শালিকা! আমার বন্ধু কিন্তু রোমান্টিক আছে। ”
অরিত্রিকা থতমত খেয়ে সারহানের দিকে তাকাল। সারহান ভ্রু উঁচিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল ;
“রোমান্টিং সং কেমন লাগলো বিবিজান?”
অরিত্রিকা লজ্জা পেল। ক্ষীন কম্পনরত কন্ঠে বলল ;

“ভা…লো।”
রাতের গভীরতা বাড়ছে। ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলা শেষ হয়েছে ইতোমধ্যে। সবাই যে যার মতো রুমে চলে গেছে অথচ অরিত্রিকা আর সারহান ছাদে রেলিঙ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের মাঝে কথোপকথন নেই। একে অপর নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে।
“আপনার দেওয়া জন্মদিনের উপহার অনেক সুন্দর ছিলো নেতাসাহেব! আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।”
নিস্তব্ধতা ভেঙে ভেসে আসলো অরিত্রিকার প্রাণোচ্ছল, উচ্ছসিত কন্ঠস্বর। সারহান শীতল চাহনিতে তাকাল। অতি শান্ত কন্ঠে বলল;
“জানতাম পছন্দ হবে। এবার বল গতকাল রাতে আমার সাথে কথা বলিসনি কেন?”
অরিত্রিকা মিইয়ে গেল। আমতা আমতা করে বলল;
“সবার সামনে কি কথা বলতাম?”
সারহান সংকুচিত দৃষ্টিতে তাকাল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল;
“সবার সামনে কে কথা বলতে বলেছে? পরেও তো কথা বলতে পারতিস।”
”ইশরা ছিল আমার সাথে তাই কথা বলিনি।”
“ভালোই কথা ঘুরাতে শিখেছিস।”

সারহান অতি গম্ভীর কণ্ঠে বলল। অরিত্রিকা হতচকিত দৃষ্টিতে তাকাল। অপরাধীর ন্যায় মিনমিন করে বলল;
“আপনি ছিলেন না মন খারাপ ছিল তাই কথা বলিনি।”
সারহান খানিকটা এগিয়ে গিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল;
“কাজে গিয়েছিলাম। তবুও ব্যস্ততার মধ্যে তোর খোঁজ খবর নিতাম। এমন অবুঝের মতো কেউ করে?”
“সরি।”
সারহান নিশ্চুপ রইল। অরিত্রিকা বিচলিত হয়ে গেল। পূর্বের ন্যায় বলল;
“আপনি রাগ করেছেন?”
সারহান অরিত্রিকাকে সন্নিকটে টেনে নিয়ে কোমর পেঁচিয়ে ধরে শান্ত কন্ঠে বলল;
“আমার বিবিজানের ওপর রাগ করে থাকা যায়?”
“তাহলে ওমন ভাবে কথা বলছেন না কেন?”
“বিবিজানের মন খারাপ কেন তাই জানার জন্য।আগামীকাল রিসিপশন! কেমন অনুভব করছেন বিবিজান?”
“জানি না। ”

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৮০

কথাটা বলে লজ্জায় সারহানের বুকে মাথা রাখল। সারহান নিঃশব্দে হেসে উঠল। সে খানিকটা ঝুকল। সুগভীর কন্ঠে বলল;
“এভাবে লজ্জা কেন পাচ্ছিস ফাইরুজ?”
অরিত্রিকা কুন্ঠা ঠেলে বলল;
“এমনি।”

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৮১