প্রণয়ের সুর পর্ব ১৬
মহুয়া আমরিন বিন্দু
সাহিল নামক ব্যক্তিটি মুহুর্তেই সবার দৃষ্টিগোচর হলো।নিখিল মুর্তির ন্যায় এখনো দাঁড়ানো,মানুষ যে জিনিস থেকে মুক্তি পেতে চায়,এরিয়ে যেতে চায় সে জিনিস টাই ঘুরে ফিরে নানান রূপে সামনে চলে আসে!
বৃষ্টি, জেরিন,সাব্বির,রৌফ দাড়িয়ে আছে চুপচাপ নেহা কে ধরে রেখেছে বৃষ্টি। নেহা চুপচাপ বনে গেছে পুরো।এরা কেউই সাহিল কে চিনে না,ব্যবসায়িক ঝা’মেলা কখনো বাড়ি বয়ে আনেনি চৌধুরী পরিবারের বড়রা।
মিহির নিখিলের হাতে টান দিলো,নিখিল অদূর অন্ধকারে এখনো তাকিয়ে, মিহির সবাই কে বললো–,,যে যার রুমে যা তো,রাত বেড়েছে গিয়ে শুয়ে পর কাল আবার আড্ডা দেওয়া যাবে।
বৃষ্টি তুমি নেহা কে নিয়ে যাও তোমার রুমে,নিখিল আসার পর রুমে যাবে!
সবাই চুপচাপ কথা মেনে নিলো,হঠাৎ কি হলো কে জানে ওরাও প্রশ্ন করলো না।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরে জানা যাবে।
নিখিলের অতিসয় গম্ভীর কন্ঠ —,,ও এখানে কি করছিলো? বিজনেস মিটিং করার জন্য আর জায়গা পেলো না?এই খান নামযুক্ত মানুষ গুলা পুরাই ভে”জাল!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
,, আমার ভালোবাসার দিক নজর দিয়েছে,যদি ছোট আব্বুর বারণ না থাকতো কবেই এটাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতাম আমি!
মিহির নিখিলের কাঁধে হাত রাখে–,,রুমে যা তো, একটা কথাই বলবো নেহা কে যত তাড়াতাড়ি পারিস আপন করে নে।সময় অনেক কিছু পাল্টে দেয় নিখিল,অবহেলা যদি ভুলেও এক ফোঁটা করিস অন্য জন্য সে সুযোগ টা নিয়ে সামান্য তম যত্ন দেখিয়ে জায়গা দখল করে নেয়!
তখন কিন্তু তোর এতো গভীর ভালোবাসা, আদর, যত্নেও কারো মন গলবে না,হারিয়ে গেলে সত্যি আর ফিরে পাওয়া যায় না!
নেহা সেই যে ওয়াশরুমে ঢুকেছে এখনো বের হচ্ছে না।বৃষ্টি কতো করে জিজ্ঞেস করলো–,,বললো এসে বলছি!
দীর্ঘ সময় পর নেহা বের হলো,ফর্সা হাতটায় লাল লাল ছাপ স্পষ্ট, যত পেরেছে হাতটা ঘঁষে ঘঁষে পরিষ্কার করেছে নেহা।নিখিল ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ তার হাত ধরেছে বিষয়টা এখনো মেনে নিতে পারছে না।সাব্বির ভাইয়া,রৌফ হাত ধরেছে কতোবার কতো মারামারি করেছে তবুও তাদের সামনে এতো অস্বস্তি ফিল হয়নি নেহার।নিজের আপন ভাইয়ের মতোই লাগে তাদের।নেহা বুঝলো না ওই ছেলেটার এভাবে হাত চেপে ধরাটা কি কাকতালীয় নাকি পরিকল্পনা মাফিক!
বৃষ্টি নেহা হাত দেখে চমকে উঠলো –,,তোর হাতে কি হয়েছে নেহা?
,,ময়লা লেগেছিলো পরিষ্কার করেছি!
বৃষ্টি অবিশ্বাস্য সুরে বললো–,,পাগ’ল হয়েছিস?এভাবে কেউ করে নাকি।ভাইয়া তোকে দিবে এবার বকাটা!
নেহা মৃদু হেসে বলে–,,তোর ভাই ওটা ছাড়া আর কিছু পারে না।
,,ভাইয়ার উপর রেগে আছিস?সকাল থেকে দেখছি তোর মন খারাপ!
,,তুই যে বেশি বুঝোছ,কেউ তো বুঝলো না মন খারাপ কিন্তু সারাদিন আজাইরা চিন্তা করোস তাই তোর মনে হলো মন খারাপ আমার।
বৃষ্টি বিরক্তি নিয়ে বলে–,,আমার থেকে কিছু লুকাতে আসবি না তোকে ভালো করেই চিনি আমি।ভাইয়া কিছু বলেছে তোকে?
,,তেমন কিছু না!আমার মনে হয় আমি তোর ভাইয়ের লাইফে বেশি ইন্টারফেয়ার করি যেটা ওনার পছন্দ না।আচ্ছা আমাকে একটা কথার উত্তর দে তো,,
,,কি কথা?
,,আমি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তোর ভাই এক মাস আমার সাথে কথা বললো না, পরে হঠাৎ এসে প্রেম দেখাচ্ছে,ভালো করে কথাও বলছে,কাহিনি টা বুঝলাম না!না মানে ডাক্তার কি এমন কোনো কথা বলেছে,যে আমি ম’রে টরে যাবো!তাই সবাই মিলে ভালোবাসা দেখাচ্ছে।
,,এসব ফালতু কথা তোর মাথায় কেনো আসে নেহা?ভাইয়া তোকে ভালোবাসে তাই এসব করছে।সম্পর্ক ঠিক করার চেষ্টা করছে,তুই ও তো ভালোবাসিস তুই ও ভাইয়ার সাথে ভালো করে কথা বলবি দুজনের মধ্যে সব ঠিক করে নিবি তাহলেই হলো!
,,বাদ দে তো এসব ভালোবাসার উপর থেকে রুচি উঠে যাচ্ছে এখন আমার,আগে জানলে ভালোবাসার কথা মুখেও আনতাম না!
,,ভালো তো বেসে ফেলেছিস এখন আর কি করবি!
,,তুই বন্ধ কর এসব ভালোবাসার কথা,এখন আমি বিবাহিত বুঝলি বিবাহিতদের জীবনে এসব প্রেম টেম নেই।তোর ভাইকে বিয়ে করে এখন আমার জীবনের সব প্রেম ভালোবাসা নাই হইয়া যাইতাছে!
নিখিল দরজায় দাড়িয়ে বলে–,,নেহা রুমে আয়!
নেহা একবার দরজায় তাকায় পরে বলে –,,আজকে বৃষ্টির সাথে থাকবো আমি!
নিখিল রাগী কন্ঠে বললো—,,তুই আমার কোলে উঠতে চাচ্ছিস বললেই হয়!এভাবে বাহানা না বানিয়ে সরাসরি বললেই তো পারিস!
নেহা বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো নিখিল কে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
নিখিল বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,বল নেহা কাকে ভালোবাসে কার কথা বলছিলি তোরা?
বৃষ্টি চোখ ছোট করে তাকালো–,,তার ভাই সব সময় মাঝপথে এসে অর্ধেক কথা কেনো শুনে পুরোটা শুনলেও তো পারে!
,,আমি বলতে পারবো না!তুমি নেহা কে জিজ্ঞেস করো ও তোমাকে বলে দিবে।
নিখিল চুপচাপ চলে আসলো, সে ভালো করেই জানে তার বোন বান্ধবীর কথা ভুলেও ফাঁস করবে না।
নিখিল রুমে ঢুকে দেখে নেহা বিছানার উপর শুয়ে পড়েছে।নিখিল টেবিলের উপর হাত ঘড়ি খুলে রাখলো,দরজা আটকে এসে বসলো খাটের এক পাশে।
নেহা একবারের জন্য ও তাকালো না তার দিকে!
নিখিল ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো–,,এখন ভাব দেখাচ্ছিস কেনো,ভুত দেখে ভয় পেয়ে তো আমার উপর এসেই পড়লি তখন,সব সময় তো কিছু না হতেই এসে জড়িয়ে ধরোস।এখন এমন করছিস কেন?কি করেছি আমি!
নেহা থমথমে কন্ঠে জবাব দিলো–,,কবে থেকে জড়িয়ে ধরি আমি আপনাকে আগে কখনো ধরেছি বলুন?একদিন শুধু নিজ থেকে চেয়েছি আর আজ ভুল ক্রমে তার জন্য তো স্যরি বলেছি!আপনার এতো অসুবিধে থাকলে মুখে বলে দিলেও পারেন।আর কোনো সময় ভুলক্রমে ও ধরবো না।আপনাকে বিরক্ত করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।আমার সাথে থাকার জন্য আপনাকে জোর করিনি আমি।বিয়েটা করেছেন নিজের ইচ্ছেতে,এখন যদি এতো সমস্যা হয়,আপনার মতো যদি কেউ থাকে তো তাকে জীবনসঙ্গী বানান,আমি আসবো না মাঝখানে আমার ওরকম স্বভাব নেই!
নেহা উল্টো দিক মুখে করে শুয়ে পড়লো।নিখিল হা হয়ে তাকিয়ে আছে,নেহার হাত টান দিতে গিয়ে আরেকদফা চমকালো।উৎকন্ঠায় চেঁচিয়ে উঠলো
,,তোর হাতে কি হয়েছে নেহা!
নেহা শান্ত কন্ঠে বললো–,,সামান্য লালই হয়েছে,এমন করছেন যেনো ম’রে গেছি।ম’রে গেলে তো আপনি বেঁচে যান একটা আপ’দ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।যাকে ভালোবাসেন তাকেও পেয়ে যাবেন!
নিখিল এবার নেহা কে এক টানে উঠিয়ে গালে ঠা’স করে একটা চ’ড় বসিয়ে দিয়েছে।
নেহা এবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো ঠোঁট উল্টে অভিমানী সুরে বললো–,,আপনি একটা খারা”প মানুষ নিখিল ভাই।
নিখিল এবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নেহাকে,নেহা ছাড়িয়ে নিতে চাইলো নিজেকে।
,,তোর হাত ধরেছিলো সাহিল?তাই হাতের এই অবস্থা করেছিস তুই!
,,আপনাকে কেনো বলবো?দূরে সরুস বলছি!
কান্না ভেজা কন্ঠে স্পষ্ট অভিমান, নিখিল নেহার মাথায় চুমু দিলো।নেহাকে টেনে ভালো করে বুকের উপর রাখলো,শক্ত হাতে জড়িয়ে নিলো,যেনো একটু ছাড়া পেলে পালিয়ে যাবে পাখি!
,,তোর কেনো মনে হয় আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি?
,,আমি আপনাকে কয়েকদিন একটু বেশি জ্বালি’য়েছি নিখিল ভাই?তাই আপনি আমার উপর এতো রাগ দেখান সব সময়?আমি কি অনেক বা’জে আমার সাথে একটু ভালোবেসে কথা বলতে পারেন না আপনি?সব সময় শুধু ধ’মক দেন।
,,আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে,সব অভিযোগ শুনবো আজ আমার কোনো তাড়া নেই!
,,আপনি তো কোনো দিন বলেননি আপনি আমাকে ভালোবাসেন তাহলে কিভাবে বুঝবো আমি?
,,মুখে ভালোবাসি না বলে কি ভালোবাসা যায় না?আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ তো খুঁজে পাস কিনা?
,,আপনার চোখে তাকাতে আমার ভয় হয়!
,,এই যে আদুরে বিড়াল ছানার মতো লেপ্টে আছো আমার সাথে এখন ভয় করছে না তোমার?শুধু চোখে তাকাতেই এতো ভয়?
নেহা লজ্জা পেলো অনেকটা,গুটিয়ে গেলো আরো নিখিলের সাথে,নিখিল হাসলো গাল এলিয়ে!
,,যদি ভালোবাসি কোনো দিন ছেড়ে যাবি না তো নেহা?ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি না আমি,তাই বলে ছেড়ে চলে যাওয়ার মতো এতো বড় সিদ্ধান্ত টা নিয়ে ফেলবি তুই?একবার ও ভেবেছিস তুই? জানিস তুই নেহা? ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্র’ণা টা কতো গভীর, কতোটা পু’ড়ায়?জীবনে যখন প্রেম বুঝলাম, ভালোলাগার অনুভূতি আসলো, তখন তোকে দেখে সেটা অনুভব করতে পেরেছিলাম।আমি বরাবরই কাটখোট্টা, প্রকাশ করতে পারি না, হয়তো কোনো দিন পারবোও না অন্যদের মতো!তোর প্রতি অনুভূতি গুলো এলোমেলো করে দিতো আমায়,নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তোর উপর রাগ দেখিয়ে ফেলতাম। অধিকার বোধ শাসনের আড়ালে বার বার ঢাকা পড়ে যেতো অনুভূতি!
তোর যখন চৌদ্দ বছর বয়স!অষ্টম শ্রেনি পার হবি,সে সময়টায় আমি তোর প্রেমে পড়েছিলাম।ভালোলাগা টা তীব্র পছন্দে পরিনত হয়েছিলো আমার।তখন আমি পরিপক্ব যুবক বুঝতে পারছিস নেহা কি করে সামাল দিয়েছি নিজেকে,রোজ রোজ তোকে চোখের সামনে দেখে কতো রূপে কতো শতো বার তোর প্রেমে পড়েছি!আমি কোনো দিন প্রেমিক হতে চাইনি,প্রেমিক স্বত্ত্বা নড়েবড়ে আমার,তোর অভিমান ভাঙ্গাতে ব্যার্থ হয়ে যেতাম জানি।তোকে এমন এক বন্ধনে আবদ্ধ করতে চেয়েছিলাম,যেই সম্পর্কে তুই অভিমান করে দূরে থাকতে পারতি না,মুখ ঘুরিয়ে নিলেও তোকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরার অধিকার থাকতো আমার।
আমি জড়িয়ে ধরা ছাড়া কিছু পারি না জান প্লিজ একটু মানিয়ে নিস!
আমি ভেবেছিলাম তুই শুধু মোহ কিন্তু তুই ভুল প্রমান করে দিতে যেনো উঠে পড়ে লাগতি নেহা।তুই বড্ড অবাধ্য এই আমার মতো মানুষ টাকে ঠিক নিজের জালে জড়িয়ে নিয়েছিস।
“আমি ঘুড়ি হয়ে গেলাম নাটাই টা তুই নিজের হাতেই রেখে দিলি ইচ্ছে মতো উড়ালি নিজের আকাশে,তাও নিজের অগোচরে “!
ভালোবাসা টা কখন এসেছে জানি না,হয়তো প্রথম থেকেই ছিলো নয়তো প্রেমে পড়ার পড়!তুই জানতে চেয়েছিলি না তুই আমার যোগ্য কিনা,তোকে আমার পছন্দ কিনা?তুই কি জানিস আমি রোজ রাতে এটা ভাবতাম এই শুভ্রতম ফুলের ভালোবাসা কোনো দিন হতে পারবো কিনা?তার ভালোবাসার যোগ্য আমি কিনা!তার চোখে আমি সুন্দর রূপে ধরা দেই কিনা,তার শীতল হরিণী আঁখি জোড়া আমার উপর থমকে থাকে কিনা?তার মনের দখলদারী কোনে দিন পাবো কিনা!
আমি প্রতিনিয়ত তোকে হারানোর ভয় মনে পুষি।তোকে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেও আমার বুক খা খা মরুভূমির মতো হয়ে যায় নেহা!জানিস তার কারন?
,,তোর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য যে মনটা আজও ব্যাকুল, তোন মন দুয়ারে দাঁড়িয়ে তৃষ্ণায় কাতর পথিক আমি, দিবি না ভালোবাসার এক চিলতে পরশ।যা শান্ত করে দিবে আমার মনে বয়ে চলা অশান্ত ঝড়!
ভালোবাসা প্রকাশ করিনা বলে দূরে চলে যাস তুই পাখি?একবার ও বুঝে নিতে পারিস না এ মনের অব্যক্ত অনুরুক্তি!
জানি তুই বুঝবি না বুঝেও কষ্ট দিবি,তবুও তো আমি এতেই খুশি পাখি,তুই যে আমার খুব যত্ন করে আগলে রাখা অবুঝ পোষা পাখি!
ভালোবাসি কিনার জানার জন্য এভাবে এতো কিছু করলি?অভিমানে এক মাস দূরে থেকেছি।তুই বড্ড পাষা’ণ জান পাখি,আমি আসি নি বলে নিজেও আসবি না?এতো রাগ এতো অভিমান আমার প্রতি?রাগ করে কখনো অধিক কাছে আসতে পারিস না?সব সময় কেনো দূরে যেতে হবে তোকে?নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি ভাবিস তুই সব কিছু মিটে যাবে।এতো বোকা কেনো তুই নেহা, নিজের নাম করে বার বার আমার হৃদয়ে রক্ত’ক্ষরণ করিস তুই!আমাকে জ্বা’লিয়ে পুড়ি’য়ে মারিস
এর শাস্তি তো তোকে আমি ভালোবেসে দিবো,তুই রোজ রোজ এর শাস্তি ভোগ করবি আমার ভালোবাসার পরশে!
,,আমার ভালোবাসার তা’ন্ডব স’হ্য করতে পারবি তো জান?না পারলেও তোকে এক বিন্দু ছাড় দিবো না আমি।আমি তোকে ভালোবাসতে চাইনি তুই চুম্বক নেহা,তুই মা’দকের চেয়েও বড় নে”শা!তুই নিজ থেকে নিজের কাছে টেনে এনেছিস আমায়।এখন তুই আমার বদলে অন্য কাউকে ভালোবাসলেও আমার কিছু যায় আসে না।তুই আমার মানে আমার,অন্য কারো নাম মুখে ও আনলে —,,তো’কে তো’কে আমি নিজ হাতে খু’ন করে ফেলবো জান!
আমার ভালোবাসা মানে পুরোটাই আমার তোকে আমি কাউকে দিতে পারবো না।আমি মহান মানুষ হতে পারবো না এক্ষেত্রে বড্ড স্বার্থপর আমি,আমি তোকে দিয়ে দিলে ম’রে যাবো।অন্য কারো কাছে যাওয়ার আগে আমাকে নিজ হাতে মে’রে ফেলিস নেহা!
তবুও তবুও অন্য কারো হওয়ার কথা বলিস না।
নিখিলের কন্ঠ কেঁপে উঠলো, চোখ চিকচিক করছে জলে,নেহা নিরব শ্রোতার ন্যায় সব শুনছে,নেহা চায় আজ শুধু নিখিল বলুক ও শুনবে!নিখিল নেহার মুখ দুহাতের আজলে ধরলো,অসংখ্য চুমুয় ভরিয়ে দিলো ছোটখাটো মুখটা!আদরে আবেশে চোখ বুজে নিলো নেহা।
নিখিল নেহার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে চুপ রইলো কিছুক্ষণ।
কাঁপা কন্ঠে বললো–,,কথা দে ছেড়ে যাবি না!
নেহা নিখিলের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো,নিখিল ভয় পেয়ে গেলো হঠাৎ এই বুঝি মেয়েটা বললো–,,কথা দিতে পারবো না নিখিল!ভিতর টা কেমন মুচড়ে উঠলো তার।
নেহা চট করে নিখিলের হাত ধরলো দৃষ্টি নিখিলের আকুল চোখে–,,যদি ভালো না বেসে সারাজীবন থাকার প্রতিশ্রুতি দেই! তবুও কি আপনি মেনে নিবেন?
তবে আমি কথা দিতে পারি ছেড়ে যাবো না কোনো দিন!মৃত্যু ছাড়া কেউ আলাদা করতে পারবে না আমাদের।
আপনি কি এই নিদা’রুণ কষ্ট হাসি মুখে মানতে রাজি?
,,আমার ভালোবাসার গভীরতা পরীক্ষা করতে চাচ্ছিস?
তবে তাই হোক!তার পর ও কথা দিতে হবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারবি না তুই,আমাকে কথা দেওয়ার মানে তুই আমার নেহা।আমাকে ভালোবাসতে মানা করতে পারবি না,অধিকার ফলাতে বাঁধা দিতে পারবি না।আমি ভীষণ রকম পসে’সিভ নেহা,তুই জানলে ভালো না জানলে এখন থেকে জেনে নে,তুই নিখল মেহমেত চৌধুরীর বউ সে তার জিনিসে এক ফোঁটা ও ছাড় দেয় না।
নেহা মনে মনে হাসলো,তার মন এখন খুশিতে আকুপাকু করছে মন চাচ্ছে এখনই নিখিলের গলা জড়িয়ে বলে দেই ভালোবাসি, ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি।কিন্তু নেহা বলতে চায় আর কিছুদিন পর!
ততদিন এই পাগ’লটা ঠিক থাকলে হয়।নেহা যথাসম্ভব নিজেকে কঠিন করে রেখেছে!
,,আমার একার ভালোবাসাতে চলবে না তোর নেহা?কথা দিচ্ছি ভীষণ রকম ভালোবাসবো তোকে।তুই আমাকে ভালোবাসতে সময় নিবি নে,আমি তোকে সময় দিলাম আমৃত্যু!শুধু আমি ভালোবাসবো তুই শুধু আমার সাথে থাকবি আমার সামনে থাকবি আমি তোকে তৃপ্তি নিয়ে দেখবো তাতেই হবে!আর কিছু চাই না আমি, শুধু তোকে ছাড়া!
নেহা আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরলো নিখিল কে, চোখ বন্ধ করে ফেললো এবার,এটা না করলে নিখিল কখন কি করবে তা নেহার ধারনার বাহিরে,কন্ট্রোল হারিয়েছে নিখিল!নেহার মনে হলো ঘুমের ভান ধরাটাই উত্তম।
নিখিল নেহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো—,,শুনতে পাচ্ছো নক্ষত্রের রাত?
এই অগোছালো প্রেমিকটা আজ জানাতে চায় তার প্রেম প্রেয়সীকে। ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি!ভীষণ রকম ভালোবাসি নক্ষত্রের রাত!
তুমি নীহারিকা থেকে হয়েছো নক্ষত্র, জ্বলেছো আমার হৃদয়ে ভালোবাসার স্ফুলিঙ্গ হয়ে!
তুমি জ্বলজ্বল করবে ততদিন ভালোবেসে যাবো আমি তোমায় যতদিন!
নেহার ভীষণ রকম কান্না পেলো এখন ভালোবাসার মানুষটির এমন স্বীকারোক্তি অনুভূতির অতল সাগরে তলিয়ে নিচ্ছে তাকে।চুপচাপ পড়ে রইলো শুধু যেনো নিজেকে আড়াল করতে চায় নিজেরই থেকে!
নিখিল যেনো নেহার লুকোচুরি ধরে ফেললো সহজে,সেও দেখতে চায় তার বউ কতদূর যেতে পারে।তাকে ভালোবাসে কিন্তু বলতে সময় নিচ্ছে!নিখিল না হয় করলো আরো ক্ষণকাল অপেক্ষা।তবে বেশি সময় দিতে নারাজ নিখিলের মন।তবুও জানতে চায় নেহার ভালোবাসার পরিসর,দেখতে চায় প্রেমিকা সত্তা যেতে পারে কতদূর!
নিখিল নেহার চুল গুলো সরিয়ে কাঁধে গভীর চুমু আঁকলো।নেহার ঘুমের ভান ধরাটা যেনো ধরা পড়ে গেলো নিজের শরীরের কাঁপুনি তে। নিখিল থামলো না মোটেও নেহাকে অতিষ্ঠ করার সুযোগ টা মিস করতে চাইলো না কিছুতেই!
ছোট ছোট চুমু দিতে থাকলো কাঁধ জুড়ে।কাঁধ ছড়িয়ে মুখ গুঁজলো গলায়,নেহার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা!তবুও নড়তে পারছে না।নেহার বুঝতে বাকি নেই নিখিল ইচ্ছে করে এমন করছে।মনে মনে বলে উঠলো –,,শয়’তান একটা!
নিখিল ঠোঁট কামড়ে হাসলো—,,নেহার কানে হিসহিসিয়ে নে’শা ভরা কন্ঠে বললো আমাকে ব’কা পরেও দিতে পারবি।তুই সত্যি ভীষণ বোকা আমার থেকে পালাতে চেয়ে আমার ভিতরই লুকানোর চেষ্টা করছিস! আমার চোখে তাকালে তুই নিজেকে প্রকাশ করে ফেলবি সেই ভয়ে তাকাতে পারিস না।
চুপ থাকলে কিন্তু আমি আজকে ছাড়বো না তোকে, আমাকে বাধ্য করবি না, একবার একবার কাছে,,,,,
নিখিল আর কথা বললো না,নেহাকে টেনে উঠিয়ে তাকলো তার মুখের দিকে,লজ্জায় লাল হয়ে এসেছে মুখ,চোখ দুটি কাঁপছে তড়তড় করে।ঠোঁটের কোনে হাসিটা নিখিল ধরে ফেললো খুব দ্রুত।নিখিল নিজের মুখ বাড়িয়ে আনলো নেহার মুখের দিকে,নেহা এবার চোখ খুলে ফেললো।চোখে চোখ মিললো,নিখিল নেহার চাহনি এরিয়ে ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হলো,আঁকড়ে ধরলো নেহা কম্পনরিত ঠোঁট।
বেশ কিছুক্ষণ পর নেহাকে ছেড়ে দিলো নিখিল।নেহা হাঁপাতে থাকলো এবার,নিখিলের বুকে এলোপাতাড়ি কি’ল, ঘু’ষি দিলো নিখিল খিলখিল করে হাসছে, ছেলেটার প্রাণবন্ত হাসিটা চোখ ভরে মনের মাধুরি মিশিয়ে দেখলো নেহা।
নিখিল নেহাকে বললো–,,এই আয় ঘুমাবি,উফ”নেহা তুই আমাকে দিয়ে ভালোবাসার স্বীকারোক্তি নিয়েই ছাড়লি!তুই একটা কি যেনো বলে হ্যাঁ হ্যাঁ তুই একটা ব্লাক”মেইল কুইন!
নেহা তেতে উঠে বললো আমি ব্লাক’মেইল করি?তার মানে এসব আপনি ভয়ে বলেছেন? কিছু সত্যি না!
নিখিল হাসি দিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।নেহা তেড়েফুঁড়ে গিয়ে বললো–,,তবে রে অসভ্য লোক একটা!আজকে তো আমি আপনাকে,,,,
নিখিল নেহার ঠোঁট আঙুল চেপে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বললো –,,ঘুমা!না হয় কিন্তু যা হবে তার জন্য দায়ী থাকবি শুধু তুই।
নেহা নিখিলের পিঠে আলতো হাতে চাপড় মেরে বললো–,,আপনি একটা যা তা!
ঘুম থেকে উঠে নেহার মন ফুরফুরে নিখিলের ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।
ইশ!তার জামাইটা কতো সুন্দর, হ্যান্ডসাম,গুড লুকিং।উফ পার্সোনালিটি একদম ঘায়েল করার মতো।এই মানুষটা রাতে তাকে ভালোবাসি বলে বলে কতো পাগলা’মি করলো নেহার নিজেকে সবচেয়ে ভাগ্যবতী বলে মনে হচ্ছে।
নেহা নিখিলের মুখে হাত রাখলো,ছুঁয়ে দিলো আলতো হাতে।মুখ বাড়িয়ে চুমু দিলো নিখিলের কপালে।
নিখিল এখনো ঘুমে না হয় নেহার এতো সাহস কোথায়?নিখিলের কাছে আসতেই সব শক্তি লোপ পায় তার।
নিখিলের বুকে মুখ লুকিয়ে বললো–,,ভালোবাসি!
নিখিলের ঘুম ভেঙ্গে গেলো কিছুক্ষন পর, নেহা রুম থেকে বেরিয়ে গেছে ইতিমধ্যে, বৃষ্টি নেহাকে হাসি হাসি মুখে বের হতে দেখে এগিয়ে গেলো,খোঁচা মেরে বললো
,,কি ব্যাপার ভাবী ভীষণ ফুরফুরে লাগছে তা কি খবর?
,,বলবো না!
জেরিন,সাব্বির বের হয়ে আসলো হাই তুলতে তুলতে,মিহির আসলো আরো কিছুক্ষণ পর।তিনজন কে একসাথে দেখে জিজ্ঞেস করলো
,,তা নেহা তোমার বর মশাই কোথায়?
,,রুমে ভাইয়া তুমি যাও না!
মিহির যেতেই তিন জন চেপে ধরলো নেহা কে,,,বল বল বলে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে।নেহা কান চেপে বললো–,,এই চুপ করো তোমরা!বলছি
তিন জন উৎসুক হলো নেহা গলা খাদে নামিয়ে বললো–,,তোমাদের ভাই রাতে স্বীকার করেছে সে আমাকে ভালোবাসে!
তিন জন একসাথে চেঁচিয়ে উঠে বললো–,,কিহ্!
সাব্বির বললো–,,তুই কি বলেছিস কিছু?
নেহা ভাব নিয়ে বললো–,,না আমি আবার কি বলবো!কিছু বলিনি।
,,তোকে ভালোবাসি বললো তুই ভালোবাসার কথা জানাবি না নিরামিষ কোথাকার,তাহলে তো তোদের বাসর টা কাল রাতেই হয়ে যেতো!
নেহা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,চুপ করো তো সাব্বির ভাইয়া।ভাইয়ের সাথে থাকতে থাকতে নির্লজ্জ হচ্ছো ব্যাটা আস্ত ব’দ হাড়মাস জ্বালি’য়ে খেয়েছে!
ওফ!আর বলো না ভালোবাসার কথা বলেছে কিন্তু শর্ত দিয়েছে পাঁচশো টা!কি ডাকা’ত লোক।
জেরিন বললো–,,তাও তো বলেছে ভাইয়ের মতো মানুষ! এতেই খুশি থাক,এবার তুই কবে বলবি বল তো ভাই, ফু্প্পি হতে হবে তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি!
সাব্বির চোখ ছোট করে বললো–,,চশমা ওলাটা মন্দ না লাইন টাইন করে ফেল, তোর টা ক্লিয়ার আমাদের ও পথ ও সহজ হবে কি বলিস বৃষ্টি?
বৃষ্টি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো–,,চশওলা টা কে আবার!
তাদের কথার মাঝে মিহির,নিখিল চলে আসলো।
সবাই মিলে খেতে যাবে এখন!
নিখিল নেহা এগিয়ে যেতেই মিহির কে থামিয়ে দিলো বাকিরা।
সাব্বির জেরিন বললো–,,আজ রাতে এদের বাসর প্ল্যান করবো আমরা তুমিও সাথে থাকবে ভাইয়া কোনো না শুনতে চাই না আমরা!
প্রণয়ের সুর পর্ব ১৫
মিহির ভ্রু বাঁকিয়ে বললো–,,বাসর করার মতো আদো কিছু আছে এদের মধ্যে?
তিনজনই গদগদ হয়ে সব বলে দিলো,মিহির হাসলো যাক অবশেষে গা’দা টা বলেছে,সাহিলের আগমন টা ভালো কিছুই বয়ে আনলো এবার!