প্রণয়ের সুর পর্ব ২৮

প্রণয়ের সুর পর্ব ২৮
মহুয়া আমরিন বিন্দু

সকাল সকাল হাতে মিষ্টির বাটি নিয়ে শেফালী বেগম শাড়ির আঁচল টেনে সদর দরজায় আসতেই পেছন থেকে একজন ডেকে বললো
–,,কোথায় যাচ্ছো মামি?
তিশার ডাক শুনে চকচকে হয়ে উঠলো শেফালী বেগমের চোখ মুখ।খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন–,,তুই ও চলনা পাশের বাড়িতে যাচ্ছি মিহিরের বন্ধু নিখিলদের বাড়ি!
তিশার মনটা হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে গেলো তবুও ওই মেয়েটা কে দেখার এক অদম্য ইচ্ছে মনে জেগেছে!তাই সে মাথা নেড়ে সায় দিলো।

হাতা গোটাতে গোটাতে সিঁড়ি বেয়ে নামছে মিহির,মা কে এতো খুশি দেখে জিজ্ঞেস করলো–,,তুমি এতো সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছো মা?এতো খুশি দেখাচ্ছে যে?
শেফালী বেগম হেসে বলে উঠলো–,,তোর বিয়ের কথা বলতে যাচ্ছি!
মিহির অবাক নেত্রে তাকালো তার মা কি করে জানলো তার আর বৃষ্টির সম্পর্কের কথা!
শেফালী বেগম হেসে বললো–,,কি মনে করেছিস কিছুই জানবো না?
মিহির অবাক হয়ে বলে–,,সত্যি তুমি জানতে মা?
শেফালী তিশার দিকে তাকিয়ে বলে আমার কি চোখ নেই নাকি।এই তিশা চল তো আমরা যাই!
মিহির যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না তার আর বৃষ্টির বিয়ের কথা বলতে তার মা যাচ্ছে।কি হবে তা দেখার জন্য নিজেও পেছনে যাবে ভাবছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সকালের খাবার শেষে বসার ঘরে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে, সপ্তাহ শেষে আজ আবার শুক্রবার।সদর দরজা বেধ করে ভিতরে আসলেন শেফালী ও তিশা!
তিশাকে দেখেই বৃষ্টি আর নেহা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।জেরিন, সাব্বির,রৌফ ও উপস্থিত।
শেফালী বেগম কে দেখেই হামিদা বেগম বললেন–,,আরে ভাবি কেমন আছেন?কতোদিন পর আসলেন।আমাদের তো ভুলেই গেছেন!
শেফালী বেগম হাতে থাকা সিরামিকের বাটিটা এগিয়ে দিয়ে বললো–,,ভাবি একটা খুশির খবর আছে,তাই আপনাদের জানাতে আসলাম!
হামিদা,সাহারা,তাহমিদা বেগম মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন।শেফালী বেগমের কথায় যেনো একটা বড়সড় বিস্ফো”রণ হলো বসার ঘরে!

–,,ভাবি আমাদের মিহিরের তো বিয়ে ঠিক করেছি আমার ননদের মেয়ের সাথে!এইতো আমাদের তিশা আমার মিহিরের হবু বউ।
হামিদা বেগম কাউকে কিছু বুঝতে না দিলেও নিজের মেয়ের দিকে তাকালেন।কথাটা শোনা মুহুর্তেই বৃষ্টির মুখটা রক্তশূণ্য ফ্যাকাসে হয়ে গেছে!
হামিদা বেগমের হৃদয়ে মোচড় দিয়ে উঠলো–,,ছোটরা মনে করে বড়দের থেকে সব কিছুু আড়াল করা যায়, তবে তা তো ঠিক না।বড়রা জেনেও না জানার মতো থাকে যাতে ছোটরা লজ্জায় না পড়ে,বাবা মায়ের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে যেনো ইতস্তত বোধ না করে।
হামিদা বেগম অসহায়ের মতো তাকালেন,মেয়েটার হৃদয়টা যে ভেঙে গেছে বুঝতে সময় লাগলো না তার,এই কষ্ট এবার কিভাবে একা সামলে উঠবে মেয়েটা!

তিশা নামক মেয়েটার দিক এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বৃষ্টি, বাকহারা হয়ে পড়েছে সে,তিশা মেয়েটা কতো সুন্দর দুধে আলতা গায়ের রঙ!আর বৃষ্টি উজ্জ্বল শ্যামলা বর্নের তার জন্যই কি মিহিরের সাথে তাকে মানাবে না?শেফালী বেগম কেনো মিহিরের সাথে তাকে একবার ভাবলেন না!বিভিন্ন তিক্ত চিন্তা এসে ভর করলো বৃষ্টি ছোট্ট মস্তিষ্কে।
নেহা,জেরিন, সাব্বির যেনো এখনো এই কথার ঘোর থেকেই বের হতে পারেনি!
হঠাৎ করেই সেখানে আসলো মিহির।তাহমিদা বেগম মিহির কে দেখেই আলতো হেসে জিজ্ঞেস করলো
–,,কি মিহির ভাবী যা বলছে তা কি সত্যি?

মিহির মুচকি হেসে সম্মতি জানাতেই বৃষ্টির পৃথিবীটা যেনো দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে পড়লো।চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে উঠলো।বৃষ্টি টলমল পায়ে উঠে দাঁড়ালো করুন চোখে তাকালো একবার মিহিরের দিকে।
তিশা বুঝে উঠলো না মিহির কেনো বললো সব সত্যি তবে কি সে এই বিয়েতে রাজি?তবে ওই মেয়েটা!
বৃষ্টিকে এলোমেলো পায়ে চলে যেতে দেখে তিশা বুঝলো এটাই হয়তো সে মেয়ে যার সাথে মিহির কে দেখেছিলো!
বৃষ্টি কে উঠতে দেখে নেহা,জেরিন,সাব্বির তার পেছনে ছুটলো।মেয়েটার মনে কি ঝড় চলছে এখন?
মিহির বুঝলো না বৃষ্টি কেনো চলে গেলো?মেয়েটা কি লজ্জা পেয়েছে?

তাহমিদা বেগম হামিদা বেগমের দিক তাকালো চোখে চোখে কি কথা হলো কে জানে।হয়তো দুজনের মনের অভিব্যক্তি একই!হামিদা বেগম মিহিরের উপর প্রচুর ক্ষেপ’লেন যদি অন্য কাউকে বিয়ে করার হতো তাহলে তার মেয়ের সাথে কেনো এতো অভিনয় করলো?
সৌজন্যেতার সহিত হাসলো তাহমিদা,সাহারা বলে উঠলো–,,হ্যাঁ তিশা তো ভীষণ মিষ্টি মেয়ে তা মা তুমি কোন ক্লাসে পড়ছো?
—,,আন্টি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার!
মিহির দ্রুত পায়ে হেঁটে গেলো উপরে।

বৃষ্টি এবার নেহাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো!মেয়েটা অনেক বুঝদার নিজেকে সহ বাকিদের ও সামলানোর অদৃশ্য এক ক্ষমতা আছে কিন্তু আজ মনের কাছে কিভাবে হেরে গেলো মেয়েটা।নিজের কঠিন খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছে!
জেরিন এগিয়ে আসলো।সাব্বির এখনো থ মেরে বসে রইলো–,,মিহির ভাই এটা কিভাবে করতে পারলো!
এতো এতো ভালোবাসা কি ফিকে পড়ে গেলো?বৃষ্টির জন্য কষ্ট হচ্ছে তার,মেয়েটা নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসে মিহির কে।আর মিহির?
জেরিন বৃষ্টির মাথায় হাত রাখলো।বৃষ্টি কাঁদতে কাঁদতে বললো–,,আপু মিহির কেনো আমার সাথে এমনটা করলো?কেনো ধোঁ’কা দিলো আমাকে!
নেহা বলে উঠলো–,,মিহির ভাই নিজের মুখে তো কিছু বলেনি,ভাইয়ার সাথে আগে কথা বলা উচিত তোর।
সাব্বির বলে উঠলো–,,বলার আর কি বাকি রেখেছে মিহির ভাইয়া?ছোট মা যখন জিজ্ঞেস করলো তখন কি সুন্দর হেসে হেসে সম্মতি দিলো!মনে তো হচ্ছিলো এ সিদ্ধান্তে ভাইয়া সবচেয়ে বেশি খুশি।ভাইয়ার সাথে একটা বুঝা পড়া তো আছেই,কেনো আমার বোনের সাথে এমন করলো এর জবাব তাকে দিতেই হবে!
নেহা বৃষ্টি কে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।

বৃষ্টির ঘরের দিকে যাওয়ার আগেই নিখিল এসে মিহিরের হাত চেপে ধরলো টেনে নিয়ে গেলো নিজের সাথে।
নিখিলের চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে,চোখ দুটি লাল।মিহির বলে উঠলো–,,কি করছিস ভাই এভাবে টানছিস কেনো?ওদের সাথে দেখা করে আসতাম আগে!
নিখিলের কঠিন শান্ত কন্ঠ –,,আমার বোনের সাথে কেনো এমন করলি মিহির?তুই আমার বন্ধু তাই তোকে আমি বেশি বিশ্বাস করতাম, এভাবে কেনো আমার বিশ্বাস ভাঙ্গলি তুই?আমার কোমল হৃদয়ের বোনের মনটা এভাবে না ভাঙলেও পারতি!যদি অন্য কাউকে বিয়ে করার ইচ্ছেই থাকতো তবে আমার বোনের সাথে এতোদিন ভালোবাসার নাটক কেনো করলি?তোকে এতো বড় অধিকার কে দিয়েছে বল আমাকে?

মিহির চোখ বড় বড় করে তাকালো–,,কি বলছিস এসব নিখিল?আমি কাকে বিয়ে করছি আবার?
–,,বুঝেও না বুঝার ভান ধরবি না মিহির।তখন তো নিজেই বললি আন্টি যা বলেছে তার সবই সত্যি! তোর অনুমতি না নিয়ে নিশ্চয়ই তোর আর তিশার বিয়ে ঠিক করেনি আন্টি?এখন বলবি না এসবের কিছুই জানিস না তুই!
–,,আমার সাথে তিশার বিয়ে?বিশ্বাস কর নিখিল এ কথা তো আমি এখন জানলাম!মা এখানে তো আমার আর বৃষ্টির বিয়ের কথা বলতে এসেছিলো!তাই তো আমি সম্মতি দিয়েছি!
—,,তুই কিছুই জানতি না?আন্টি এসে বললো তোর আর তিশার বিয়ে ঠিক করেছেন তিনি।তোদের বাড়িতেই তো কথা হলো আর তোর বিয়ে তুই বলছিস তুই জানিস না?

মিহির নিজের চুল টেনে ধরে বসে পড়লো–,,মা এসব কখন করলো,সত্যি আমাকে কিছু জানায়নি ভাই।তাহলে এরকম একটা কথা কোনো দিন উঠতোই না!তুই নিজেরও জানিস আমি বৃষ্টি কে কতোটা ভালোবাসি, ওকে ছাড়া আমার বউ অন্য কেউ?এ কথা তো আমি নিজেই মানতে পারছি না!
সর আমাকে এখনই বৃষ্টির সাথে কথা বলতে হবে!
নিখিল থামিয়ে দিয়ে বললো–,,না তুই আমার বোনের আশেপাশেও যাবি না!
মিহির রেগে গিয়ে বললো–,,তোর থেকে পারমিশন নিবো নাকি এখন আমি।বৃষ্টির সাথে কথা বলবো আমি, বিয়েও করবো পারলে তুই আটকে দেখা!

মিহির দরজা খোলে বের হয়ে যেতেই নিখিল মুচকি হাসলো।এবার একটু বুঝুক শা’লা কেমন লাগে কিন্তু বৃষ্টির জন্য কষ্ট হচ্ছে বোনটা সত্যি অনেক নরম প্রকৃতির!
দরজা ঠেলে হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকলো মিহির।তাকে দেখে হকচকিয়ে গেলে রুমের সবাই।
মিহিরের ফর্সা চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে শান্তশিষ্ট ছেলেটিকে এতো রাগতে আগে দেখেনি সাব্বির।তার পরও পথ আগলে দাঁড়িয়ে পরে সামনে
–,,তুমি এখানে কেনো এসেছো মিহির ভাই?নিজের বিয়ের দাওয়াত দিতে?
মিহির চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে সাব্বির কে বলে–,,সামনে থেকে সর সাব্বির।আমি বৃষ্টির সাথে কথা বলতে এসেছি!

বৃষ্টি রেগে গিয়ে বললো–,,আপনার সাথে আমি কোনো কথা বলতে চাই না মিহির ভাইয়া!চলে যান এখান থেকে।
মিহির চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,তরা সবাই রুম থেকে বের হ ওর সাথে আমার কথা আছে।
নেহা বৃষ্টির কানের কাছে বললো–,,কথা বল,অযথা ভুল বুঝিস না আমরা বাহিরে যাচ্ছি।
সাব্বির, জেরিন,নেহা রুম থেকে বের হতেই মিহির ধাম করে দরজা আটকে দিলো!
বৃষ্টি শব্দে কিছুটা কেঁপে উঠলো।
মিহির বৃষ্টির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো বৃষ্টির নত মুখশ্রী দুহাতে উঁচু করলো।
মিহির শান্ত কন্ঠে ডাকলো–,,বৃষ্টি তাকাও আমার দিকে

বৃষ্টি টলমল চোখে তাকলো,বৃষ্টির ফোলা চোখ দেখে বুকের ভিতর টা কেঁপে উঠলো মিহিরের।মিহির বৃষ্টির চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো—,, কি মনে করেছো আমি তোমাকে এতো সহজে ছেড়ে দিবো?এক চ’ড় লাগাইনি এখনো কানের নিচে এটাই তোমার ভাগ্য! আমাকে অবিশ্বাস করার সাহস হয় কি করে তোমার?
–,,কেনো বিশ্বাস করবো আমি আপনাকে?আপনি নিজেই তো বললেন আপনি সব কিছুতে রাজি।তবে কেনো এসেছেন এখানে?
–,,আমি ভেবেছিলাম মা আমার আর তোমার বিয়ের কথা বলতে আসবে!আমি জানতামই না তিশার সাথে বিয়ের কথা ভাবেছে মা।

–,,আপনার মা যেহেতু আপনার বিয়ে ঠিক করেছে বুঝে শুনেই করেছে!আপনি এখন এখান থেকে যান।
বৃষ্টি দুকদম পিছিয়ে গেলো।মিহির সরু দৃষ্টি রাখলো বৃষ্টি উপর।
–,,বৃষ্টি! মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো?যা খুশি করো জোর করে হলেও তোমাকেই বিয়ে করবো আমি,দরকার পড়লে তুলে নিয়ে যাবো!
বৃষ্টি মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,সামনে থেকে যেতে বলেছি আমি আপনাকে!
মিহিরের যেনো এখন রাগ রাগলো,নিজের মায়ের প্রতিও রাগ লাগছে তাকে কিছু জিজ্ঞেস না করে সোজা অন্যের বাড়িতে চলে এসেছে খবর দিতে?
মিহির রাগে বলে উঠলো–,,বৃষ্টি আমাকে রাগাবি না বলে দিলাম!পরিণাম ভালো হবে না।
–,,কি করবেন আপনি?যান গিয়ে করেন যাকে খুশি বিয়ে আমি কি আপনাকে বাঁধা দিয়েছি?আমাকে জ্বালা”তে কেনো এসেছেন?
–,,সারাজীবন তোকেই জ্বা’লাবো আমি।
মিহির এসে বৃষ্টির বাহু চেপে ধরে,একটা সামান্য বিষয় নিয়ে এরকম রিয়েক্ট কেনো করছো বৃষ্টি বলছি তো বাড়ি গিয়ে মায়ের সাথে কথা বলবো আমি!
–,,আপনি অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলবেন,এ কথা শোনার পর আমার কেমন লেগেছিলো সে কথা একবারও ভেবেছেন আপনি?ভুলে হোক বা যেভাবেই হোক কতোটা কষ্ট দিয়েছেন আপনি আমাকে!দ’ম বন্ধ হয়ে আসছিলো আমার মিহির।

যান আর আমার সামনে আসবেন না আপনি!আমার থেকে আপনার ওই তিশা বেশি সুন্দর, আপনাকে ওর সাথেই ভালো মানাবে।আমার মতো মেয়েকে বিয়ে করতে হবে না আপনার!
বৃষ্টি ফুপিয়ে কেঁদে দিলো।মিহির একটা ধ’মক দিয়ে বললো–,,একদম চুপ একদম চুপ করে থাকবে তুমি,উল্টো পাল্টা কি বলে যাচ্ছো তখন থেকে।
–,,ভুল কি বলেছি সবাই তো বললো আপনার পাশে তিশা কে বেশি মানাবে!

মিহির রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,আরেকবার অন্য কারো সাথে আমার নাম জড়ালে তোকে কাঁচা চিবি’য়ে খাবো আমি বৃষ্টি! আমার তোকে লাগবে বুঝতে পেরেছিস তুই?তোকে মানে তোকে।দুনিয়ার সবাই বিরো”ধীতা করলেও মানবো না!তুই নিজে না করলেও না।মিহিরের মানে মিহিরেরই,আগে ভাবা উচিত ছিলো এটা তোমার আমার একবার হয়ে গেলো আর ফিরে যাবার পথ নেই।ঘুরে ফিরে আমার কাছেই আবদ্ধ হতে হবে তোমায়!
কারো কথায় কিছু যায় আসে না আমার।তুমি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববে না বৃষ্টি। কেনো বুঝতে পারছো না তোমাকে ছাড়া আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো!

বৃষ্টি ফুপিয়ে উঠলো আবার মিহিরের চোখের দিক তাকিয়ে বললো–,,তুমি অন্য কারো হয়ে গেলে আমি বাঁচতে পারবো না মিহির!আমি তিলে তিলে নিঃশব্দে নিঃশেষ হয়ে যাবো। প্লিজ আমার হয়ে থাকো মিহির!
মিহির অগোছালো পায়ে এসে জড়িয়ে ধরলো বৃষ্টি কে।
কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো–,,স্যরি আবার লিমিট ক্রস করলাম।কিন্তু আমি নিরুপায় হৃদয়ের দহ’ন তুমি ছাড়া যে নিভে না মেঘবালিকা।কথা দিয়েছিলাম তো পাগ”লি মিহির শুধু তার মেঘবালিকার অন্য কারো তো মিহিরের প্রাণ’বিহীন দেহটাও হবে না।
মিহিরের মন, প্রাণ,ধ্যান, জ্ঞান, বউ,জান,কলি’জা সব কিছু শুধু বৃষ্টি বুঝেছো তুমি?
বৃষ্টি ঠোঁটে হাসি চোখে জল।মিহিরের কথায় তার বিধ্ব’স্ত মন যেনো এবার শান্ত হলো!
মিহির কে বৃষ্টি কে জড়িয়ে প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলতে দেখলো একজন খুব নিপুণ ভাবে!ব্যাথায় হৃদয় অসার হয়ে পড়লেও মুখে তার এক চিলতে হাসি,সে ও চায় ভালোবাসারা পূর্ণতা পাক,নিজের টা না হোক অন্যের টা হলেই বা তাতে ক্ষ’তি কি?

তিশা চট করে দরজা ভেজিয়ে সরে পড়লো সেখান থেকে।সাব্বির,নেহা,জেরিন রুমের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো।তিশা কে চলে যেতেও দেখলো কিন্তু কিছু বললো না তারা।
তিনজন মিলে এসে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো।
বৃষ্টি একপাশে বসে আছে আগের মতো আর বিষন্নতা নেই। চোখ মুখে এক খুশির ঝলক!
মিহির পকেটে দুহাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।মিহির রুম থেকে বের হওয়ার আগে বৃষ্টি কে কড়া ভাষায় বললো–,,যদি ভুলেও ব্লক করার চিন্তা ভাবনা করো,রাতে এসে তুলে আছাড় মারবো আমি!
সাব্বির কে দেখে মিহির বললো–,,মীরজাফরের মতো করছিস কেনো?কিভাবে ভাবলি তুই ছাড়া অন্য কাউকে শা’লা বানাবো!

সাব্বির মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,যা খুশি করো তোমার বিয়েতে যাবো না আমি।
–,,ভেবেছিলাম দুই পক্ষ থেকে তোকে মোট ছয় পিস রোস্ট দিবো!
–,,লোভ দেখিয়ো না তো ভাই।আমি আমার বৃষ্টি বইনের ক্ষেত্রে কোনো ঘু’ষ নেই না।ঘসেটিবেগমের বিয়ে হলেও ভেবে দেখতাম!
তোমার ওই না হওয়া বউ তো তোমার আর বৃষ্টির আলিঙ্গন করার রোমাঞ্চকর সময়ের স্বাক্ষী দেখো বাড়ি গিয়ে কি কান্ড বাঁধায়!
মিহির ভাবলেশহীন ভাবে বলে–,,দেখেছে?আগে বলতি তাহলে সাথে কয়েকটা চুমুও দিতাম!ওই তিশা টাকে সামনে রেখে বাসর করবো আমি,বিয়ে করার সখ ঘুচিয়ে দিবো একবারে।আমার মতামত না জেনেই নাচানাচি বের করছি আজ!

বৃষ্টি চোখ বড় বড় করে তাকায় এই ছেলের মুখটা এতো লাগামহীন হইলো কবে?
নেহা বলে উঠলো–,,বন্ধুর সাথে থেকে থেকে বেশ উন্নতি হচ্ছে তোমার!
নিখিল এসে বললো–,,তো কি তোদের মতো লজ্জাবতী নারী হয়ে বসে থাকবে আমার বন্ধু তো আমার মতোই হবে!
মিহির বলে উঠে –,,কথা বলবি না তুই।তোর বউ তোকে আজ রাতে ঘরে জায়গা দিবে না অভি”শাপ দিয়ে যাচ্ছি!
নিখিল বলে উঠলো–,,রাত দিয়ে কি করবো পুরোটা দিন তো এখনো পড়েই আছে।রাতের কাজ দিনেও করতে পারি আমি তাই নারে নেহা?
নেহা চোখ পাকিয়ে তাকালো। মুখে বললো–,,অসভ্য লোক!
বৃষ্টি বললো –,,আপনি এখন কোথায় যাচ্ছেন?

–,,তোমার শাশুড়ীর সাথে বোঝাপড়া করতে!
সাব্বির বৃষ্টি কে ভেঙ্গানি দিয়ে বললো–,,কেমন কি বৃষ্টি বইন তুই কয়েক মিনিট আগেও ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদছিলি এখনই আবার ভেটকি মাছের মতো ভেটকি মারছিস?
জেরিন বলে উঠলো –,,চুপ কর তুই।
–,,তুই চুপ কর ঘসেটিবেগম!
–,,তুই কর!
–,,তুই কর!
নেহা কানে হাত দিয়ে বললো–,,এই দুজনই চুপ করো!উফ!সারাদিন কেমনে ঝগ’ড়া কতো তোমরা।
নিখিল দাঁত কেলিয়ে বলে–,,তোর সাথে থাকে তো তুই যেভাবে করিস সেভাবেই!
নেহা তেড়ে এসে বললো–,,কি আমি ঝ”গড়া করি?
নিখিল হ্যাঁ বলতেই নেহা দৌড় চালালো নিখিলের পেছনে!

মিহির বসার ঘরে প্রবেশ করেই রাগে গজগজ করতে করতে ডাকলো–,,মা, মা তুমি কোথায়!
রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন শেফালী বেগম।তিশা দোতলায় দাড়িয়ে শব্দ পেয়ে বেরিয়ে আসলো মিহিরের ফুফু। মিহিরের বাবার সাথে বাহিরে গেছে তিশার বাবা।
শেফালী বেগম জিজ্ঞেস করলো–,,কি হয়েছে এভাবে চিৎকার করছিস কেনো?
–,,তুমি আমার বিয়ের সিদ্ধান্ত আমাকে না জানিয়ে কিভাবে নিতে পারো?আমার পছন্দ অপছন্দ বলতে কিছু নেই নাকি?

–,,তোর অনুমতি নেওয়ার কি আছে,আমার পছন্দই তো তোর পছন্দ। তুই আমার একমাত্র ছেলে তোর খারাপ কি আমি চাইবো নাকি?তিশা কে দেখ কতো লক্ষ্মী মেয়ে,দেখতে শুনতেও তো মাশাআল্লাহ!
–,,তিশা সুন্দর নাকি অসুন্দর ওসব দেখে আমার কি লাভ।আমি ওকে কোনো দিনই বিয়ে করবো না।আর তোমার পছন্দই যে সব সময় আমার পছন্দ হবে এমন তো কোনো কথা নেই।আমাকে একবার না জানিয়ে পাড়া শুদ্ধ লোক জানাজানি করেছো কেনো তুমি মা?

–,,তোকে জানায়নি দেখে রাগ করছিস?এখন তো জানলি?এবার তো কোনো অসুবিধে নেই!
–,,আমি তিশা কে বিয়ে করবো না।আমার বৃষ্টি কে পছন্দ মা!আমি বৃষ্টি কে ভালোবাসি বিয়ে করতে হলে তাকেই করবো, অন্য কোনো মেয়ে কে না। এটাই আমার শেষ কথা!
–,,তোর সব কথাই কেনো শুনতে হবে আমার?আমি তিশার বাবাকে কথা দিয়েছি।তিশার সাথেই তোর বিয়ে হবে,এসব ভালোবাসা আসবে যাবে, বিয়ের পর তিশাকে ও ভালোবেসে ফেলবি, বৃষ্টির ভুত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।তিশার দিকে মন দে!
মিহির রেগে টেবিলে থাকা গ্লাস আছাড় মারে

–,,পাগ’ল হয়ে গেছো মা তুমি?ভালোবাসা কি বললেই চলে যাবে?মা তুমি জানো না আমি বৃষ্টি কে কতোটা ভালোবাসি ওর জন্য সব করতে পারি আমি,সব!
—,,আর তোর মায়ের ইচ্ছের কোনো মূল্য নেই তোর কাছে?আমার একটা মাত্র ছেলে তুই মিহির।তিশাই তোর উপযুক্ত বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি!যদি তুই তিশা কে বিয়ে না করিস তো আমার ম”রা মুখ দেখবি!

–,,তুমি আসলে আমাকে কোনো দিন ভালোবাসোই নি মা!তুমি ভালোবাসার কি বুঝবে?ছোট বেলা থেকেই তো একা করে রেখেছো আমাকে সব সময় নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছো তোমার খুশির জন্য সব কিছু হাসি মুখে মেনে নিয়েছি,একবার ও জিজ্ঞেস করেছো মিহির বাবা তোর কি পছন্দ? তোর কি লাগবে?সব সময় নিজের যা পছন্দ তা দিতে আমায় একবারও ভাবোনি আমি কিসে খুশি হবো,এই দেখো না আজ তোমার একটা সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছি না বলে তুমি তোমার আসল রূপে ফিরে এসেছো! আমি তোমাকে ভালোবাসি মা তাই তোমার সব সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিতাম কিন্তু যখন আজ তোমার ভালোবাসা দেখানোর সময় আসলো তখন তুমি আমাকে জীবনের এই সুখ টুকু দিতে পারবে না মা?

প্রণয়ের সুর পর্ব ২৭

তোমার যদি এখন আমাকে স্বার্থপর মনে হয় অবাধ্য সন্তান মনে হয় তো তবে আমি তাই।তবুও তোমার জে’দের জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষ কে ছাড়তে পারবো না আমি!বেঁচে থাকলে শুধু বৃষ্টিই আমার জীবনসঙ্গী হবে অন্য কেউ না।বিরো’ধীতা করলে তুমি নিজে মরা’র আগে আমার ম’রা মুখ দেখবে!

প্রণয়ের সুর পর্ব ২৯