প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ২০
মহুয়া আমরিন বিন্দু
হাসিঠাট্টা গল্প আড্ডা শেষে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো।
মেহেরিন বেচারি এখনো লজ্জা পাচ্ছে,কারন একটাই নিঝুম নামক ব্যক্তির সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎ, আর এই লোকটা কে যতটা ভদ্র দেখায় সে ততটাও ভদ্র না, কি ভাবে এক কথায় তাকে পঁচা’নি দিয়ে কে’টে পড়লো,আর মেহেরিন কিনা কিছু বলতেও পারলো না।
তার উপর রৌফ সেই কখন থেকে মজা নিচ্ছে তার সাথে।
রাহার একটু ফ্রেশ হতে হবে, নিশাত রোহানের সাথে মজা করতে গিয়ে ওর জামার নিচের অংশে কিছুটা পানি পড়ে গেছে।
নেহা বলেছে উপরে মেহেরিনের ঘরে যাওয়ার জন্য। রাহা মেহেরিনের ঘর খুঁজে যেই না ঢুকতে যাবে তখনই রুম থেকে বের হয় রৌফ।রাহার তো আরো বেশি মে’জাজ খারা”প হয় এমন সময় এখানে রৌফ কে দেখে, যতই হোক লোকটা তার শিক্ষক কিন্তু ততটা সম্মান রাহা তাকে মন থেকে করতে পারছে না।প্রথম দিনই মানুষ টা কেমন ব্যবহার করলো,তার উপরে যতবারই দেখা হয়েছে জ্ঞান দিতে দিতে মাথা খারা’প করে ফেলেছে একদম।কেনো ভাই ক্লাসে জ্ঞান দিয়ে তোমার মন ভরে না যত্তসব!
রাহা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,আপনার কি সমস্যা বলুন তো,আপনার শিক্ষক না হয়ে খা’ম্বা হওয়া উচিত ছিলো যখন দেখি খাম্বা’র মতো সামনে চলে আসেন আর ধাক্কা মারে”ন!
রৌফ ও বিরক্ত হয়ে বললো–,,এই দেখো আমিও ইচ্ছে করে মারি’নি।তুমি কেনো অন্যের রুমে ন’ক না করে ঢুকতে যাও ম্যানা’র্লেস কোথাকার!
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
রাহা রেগে বললো–,,আপনার রুমে ঢুকেছি?ঢু’কিনি তো তাহলে বেশি কথা বলবেন না,আপনাকে না আমার দেখলেই বিরক্ত লাগে।বিরক্তিকর মানুষ একটা যখন তখন মানুষের সাথে লাগতে আসে।
সেখানে তখন আসে মিহির, রাহা মিহির কে বলে–,,ভাইয়া তুমি কি আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসবে,এখানে আমার বিরক্ত লাগছে।
মিহির বুঝলো রাহা রৌফ কে দেখেই বেশি বিরক্ত হচ্ছে আবার এখন রেগেও আছে, এখন রাহা যা বলছে তাই করা উচিত।
মেহেরিন ভিতর থেকে ডেকে বললো–,,রাহা,রাগ করো না প্লিজ ভাইয়া একটু এমনই ওর কথায় রেগে চলে গেলে আমি অনেক কষ্ট পাবো প্লিজ সবার সাথে যেও।
মিহির যেনো স্বস্তি পেলো সে রৌফ কে বললো–,,রৌফ তুমি আমার সাথে চলো সাহিল তোমাকে ডাকছিলো।
মেহরিন এসে রাহার হাত টেনে তাকে ভিতরে নিয়ে বসাল।
রাহা মুখ ফুলিয়ে রেখেছে, কেনো যে এর সাথে বার বার দেখা হয়,পারলে তো ভার্সটিতেও যেতো না ও।
মেহেরিনের বুঝতে বাকি রইলো না রাহাই সে মেয়ে যার কথা সাহিল সকালে বলছিলো।এবার রৌফ কে ইচ্ছে মতো পঁচা’নি দেওয়া যাবে।
শিলার সামনে বসে আছে শিলার ভাই সোহেল রানা।
সোহেল তার বোনের দিক রাগী চোখে তাকিয়ে
বললো–,, তোর জন্য কি কি করিনি আমি আর তুই কিনা শেষ মেষ আমার শ’ত্রু কে পছন্দ করেছিস?
শিলা গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো–,,ওকে পছন্দ করতাম ভাইয়া যতদিন ওকে পাওয়ার সম্ভবনা ছিলো।কিন্তু এখন তা কিছুতেই সম্ভব না।
আমাদের কাছে আমাদের ব্যবসাই আগে,আমি চাই না ওই এমপি আর পুলিশ অফিসারের জন্য আমরা ফেঁ’সে যাই।
তুমি ওই ডাক্তার টাকে অযথাই সুযোগ দিলে মে’রে ফেললে তো সব ঝা’মেলাই চু’কে যেতো।এখন ওটা ও লাপাত্তা সাথে ওই মেয়েটাও।কোনো ভাবে যদি পুলিশের হাতে পরে তো সব শেষ হয়ে যাবে।
–,,অন্য কিছু ভাব যাতে আমরা ধরা না পড়ি।
–,,নিখিলের একটা মেয়ে আছে,ওটা কে যদি কোনো ভাবে আমাদের কাছে আট’কে রাখতে পারি। ওই মেয়ে এখানে থাকতে থাকতেই দেশ ছেড়ে যাবো আমরা।কিন্তু ভাবি আর তোমার ছেলে?
–,,ওদের কথা পরে ভাববো ওদের কে তো কিছু করবে না, তোর ভাবি তো জানেই না আমরা কি করি।আর ওকে বলবো দেশের বাহিরে কাজের জন্য যাচ্ছি আগেও তো গিয়েছি সন্দেহ করবে না!
দরজা আড়াল থেকে সব কিছু শুনে ফেললো সোহল রানার স্ত্রী মিনা।সে জানে না তার স্বামী কি বিষয়ে কথা বলছে তবে এটা নিশ্চিত কোনো না কোনো খারা”প কাজে জড়িত!ওর ভালোবাসায় কি এমন কমতি ছিলো যার জন্য লোকটা তার সাথে এতো নিখুঁত অভিনয় করলো?এতো গুলো বছর ধোঁ’কায় রেখেছে তাকে!আর তাদের সন্তান তাকে কি জবাব দিবে মিনা,কিছুদিন পর যখন ছেলেটা বড় হবে তখন?তখন তাকে ও তো ভুগতে হবে তার বাবার কর্মফল।কষ্টে বুক ফে’টে কান্না আসলো মিনার,দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে, রুমে গিয়ে নিজের ছয় বছরের ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।
বসার ঘরে বসে সবাই শপিং করা নিয়ে আলোচনা করছে, বিয়ের কোন দিন কোন ড্রেস পড়বে এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।সবচেয়ে বেশি আনন্দে আছেন সেতারা বেগম, নাতি যে মেয়ে পছন্দ করেছে এতে যেনো তার খুশি আর ধরছে না।
এক সপ্তাহ পরে বিয়ের তারিখ দিয়েছে,এখন থেকেই আত্নীয়দের দাওয়াত দেওয়া ও বাকি প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বাড়ির বড়রা।
সাব্বিরদের বাড়িতে শিশির মুখ ফুলিয়ে বসে আছে কারন তার আদরের বোন তাদের ছেড়ে দূরে যাবে।
তোহা ও মুখ ফুলিয়ে বসে আছে,সে চায় হোস্টেলে থেকে পড়তে কলেজ বাসা থেকে দূরে আর সে কি একা যাবে নিশাত ও তো যাবে দুজনেরই এক সাথে চান্স হয়েছে।
আরো তো বেশ কিছুদিন আছে এখনই তার ভাই কান্না জুড়ে দিয়েছে।
সাব্বির তো খুশিতে লাফিয়ে বলছে–,,তুই গেলেই আমি বাঁচি আহ্ কি শান্তি শান্তি।
শিশির বরাবরই ইমোশনাল নিজের যখন ব্রেক’আপ হয়েছিলো সবার সামনে বসে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেছিলো তার পর থেকে বান্দা কে দিয়ে আর কোনো মেয়ে ভালো লাগাতে পারেনি সাব্বির আর না তার মায়ের পছন্দের কোনো মেয়ে পছন্দ হয়েছে,বিয়ে তো দূর প্রেম করার নামই নিচ্ছে না বেচারা।
হতাশ পুরাই হতাশ সাব্বির এমন ভাই তার কিভাবে হলো, অন্য দিকে তার বাপ রাজনীতির ভার নিখিলের ওপর ছেড়ে দিয়ে আমের ব্যবসা ধরেছে আর দিন রাত চিল করছে কি জীবন মাই’রি।শুধু সাব্বিরেরই কিছু হচ্ছে না।
তোহা সাব্বিরের সাথে কিছুক্ষণ ঝ’গড়া করে নিশাত দের বাড়িতে গেলো,একটু আড্ডা দিতে হবে ভাই তার করলার মতো মু’ডের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে একেবারে।
তোহা নিশাদের বাসায় এসেছে সবাই ব্যস্ত বিয়ের আলাপ আলোচনায়।
তোহা এই ফাঁকে উঠে গেলো সিঁড়ি বেয়ে,রাস্তায় হামিদা বেগম কে জিজ্ঞেস করলো নিশাত কোথায় সে জানিয়েছে ছাদে হয়তো দেখে আয় গিয়ে তুই।
তোহা তাই করলো, ছাদে উঠে গেলো গুন গুন করতে করতে।তোহা আশেপাশে তাকালো নেই মেয়েটা কি রুমে আছে? তোহা আপন মনে ভেবে যেই না নামতে যাবে হাত ধরে কেউ টান মার’লো, তোহা ভয় পেয়ে গেলো,তার থেকে বেশি অবাক হলো রোহান কে সেখানে দেখে।
তোহা অবাক হয়ে বললো–,,রোহান ভাইয়া তুমি!
রোহান ধম’ক দিয়ে বললো–,,কে তোর ভাই।তোর না দুইটা ভাই আছে আমাকে ভাই কেনো ডাকবি তুই?
তোহা বোকার মতো বললো—,,ভাই না ডাকলে কি ডাকবো?
–,,জামাই ডাকবি!
তোহা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো–,,ছি!ছি! কি আজেবা’জে কথা বলছো তুমি?দেখো আমি কিন্তু আন্টির কাছে বিচার দিবো!
–,,তুই এমন পানসে কেনো রে তোহা?তোর বয়সের মেয়েরা বিয়ে করে বাচ্চাকাচ্চার মা হয়ে যাচ্ছে আর তুই একটু কিছু শুনলেই ছি! ছি! শুরু করিস।
তোহা মিন মিন করে বললো–,,তো কি করবো।আপনি সরুন আমি যাবো।
–,,চুপ!একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে তোকে এখানে এনেছি।
তোহা তাকিয়ে আছে কি বলবে শোনার জন্য।
রোহান তোহার দিকে তাকিয়ে বললো–,,তোকে আমি পছন্দ করি,আমার মনে হয় শুধু পছন্দ না ভালোও বাসি।
তোহার মুখ থেকে আপনাআপনি বের হয়ে আসলো–,,অ্যাহ!
রোহান তোহার মাথায় মে”রে বললো–,,গা’ধী!
তোহা আবার বললো–,,কেমনে সম্ভব!
রোহান বিরক্ত হয়ে বললো–,,এই তোর বুঝা লাগবে না,শুধু এইটুকু মাথায় রাখ কলেজে গিয়ে বেশি লাফাবি না আর কোনো ছেলের সাথে যদি কথাও বলেছিস তোর একদিন কি আমার একদিন।যা এখান থেকে, তোর উপর আমার নজর সব সময় থাকবে মাথায় রাখিস।
তোহা বুঝলো না এই বলছে পছন্দ করি আবার এই এখনই ধম”ক দিচ্ছে অদ্ভুত ছেলে।
দুই দিন পর ইরফান ফোন করেছে নিখিল কে সে এখন পার্টি অফিসে ব্যস্ত।ইরফান ফোন দিয়ে বললো–,,এমপি সাহেব অপরা’ধীর খোঁজ তো পাওয়া গেছে।
নিখিল ও খুশি হলো ইরফানের সাথে কথা বলে সব প্ল্যান করে ফেললো।
ইরফান কথা বলা শেষ করেই রুমে আসলো সেখানে শুয়ে আছে আরুশি মেয়েটা এখনও দুর্বল, ভাগ্য ক্রমে এখনো ইরফান তাকে জানাতে পারেনি তার সাথী মা’রা গেছে, দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো ইরফান।মেয়েটা কে বাসায় রাখছে এটা নিয়েও নানান প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে কি করে সব সামলাবে কে জানে।আগে আসল কাল”পিট টা ধরা পড়ুক পরে এর ব্যবস্থা করা যাবে।
নামিরা বাহিরে এসেছে তাহমিদা বেগমের সাথে,দুজন গল্প করতে করতে ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে। এমন সময় একটা গাড়ি এসে থামলো দুজন লোক বেরিয়ে এসে তাহমিদা বেগম কে ধাক্কা মে’রে ফেলে দিয়ে নামিরা কে তুলে নিলো।
তাহমিদা বেগম গিয়ে পড়লো রাস্তায় থাকা ইটের উপর মাথায় জোরে আঘা’ত লাগায় সে উঠতে ও পারলো না।
নামিরা জোরে কেঁদে উঠলো, ডাকলো মাম্মা, নানু ভাই আমার খুব ভয় লাগছে।
তাহমিদা বেগম শক্তি করে উঠতে পারলেন না তার মনে হলো তাকে ফোন করতে হবে সবাই কে জানাতে হবে নামিরার কথা তার যা খুশি হোক।
প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ১৯
তাহমিদা বেগম ঝাপসা চোখে ফোনের স্ক্রিনে তাকালেন ফোন দিলেন কাকে বুঝতে পারলেন না।
রিসিভ হতেই তিনি শুধু বললেন–,,নামিরা কে ওরা নিয়ে গেলো ওকে কেউ বাঁচা!
জ্ঞান হারালেন তিনি,রাস্তায় মানুষের জটলা বাঁধলো, কোনো একজন পরিচিত হয়তো থামলো তাহমিদা বেগম কে দেখে।
