প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ২৮

প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ২৮
মিমি মুসকান

মান্নাতের বলা ক্যাফেতে অপেক্ষা করছে আমরিশা। এখানে আসার পর মনে হচ্ছে এখানে আসা একদম উচিত হয়নি। কেনই বা মান্নাতের কথা শুনে এখানে আসতে গেলো। মান্নাত কেমন সে জানে না? ফুল প্লে বয় টাইপের নাকি গ্রিন ফ্ল্যাগ। এই ব্যাপারখানা তাকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দিচ্ছে। প্রেম টেম সে করছে না তবু অনুভূতির আদান প্রদান তো ঘটছে। দুর্বল মনের অধিকারিণী সে নয়। কিন্তু মন যে তাকে দেখলে ছটফট করে। অন্ধকারে নিজেকে হারিয়ে ফেলার আগে চোখ কান খোলা রাখতে হয় যেন।

মান্নাতের সাথে আছে আজ বেশ কয়েকদন। কয়েকবার দেখাসাক্ষাৎ হয়েছে। ফোন আলাপ তো অসংখ্যবার। ভুল সে প্রথমেই করেছে। ফোন আলাপ করা উচিত হয়নি। তোল্লাই দিয়ে ফেলেছে অনেক। মান্নাত ভেবেই নিয়েছে তারা প্রেম করছে তাই তো এমন অধিকার বোধ দেখাচ্ছে। অবশ্য মান্নাতকে তার খারাপ লাগে না। এজন্যই তো দুর্বল হয়ে পড়ে প্রতিবার। লোকটা ঠিক জানে কিভাবে ইমপ্রেস করতে হয়!
ভয় এখানেই! একবার ফাঁ*দে পা দিয়ে ফেললে বের হওয়া মুশকিল। প্রেমে পড়ার আগে সকল ছেলেই ভালো, সবাই গ্রীন ফ্ল্যাগ মোটে। গার্লফ্রেন্ড ছাড়া কিছু বুঝে না। অন্যমেয়ে কি জিনিস বুঝেই না। খায় না মাথায় দেয়! এমন হাবভাব! একবার প্রেমটা হয়ে গেলেই তখন আর পাত্তা পায় না। এসব সে জানে। বান্ধবীদের অনেক দেখেছে প্রেমিকের শোকে রাত ভোর কান্নাকাটি করে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল করে ফেলতে। যাক বাবা, তার সেই ডার্ক সার্কেল নেই। কিন্তু এই মান্নাতের ফাঁদে পড়ে হতে কতোক্ষণ?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

না আর ভাবতে পারছে না। মাথায় জটলা পাকিয়ে ফেলেছে। কোল্ড কফি শেষ করে টাকা দিয়ে বেরিয়ে গেলো সে। মান্নাতের চেয়ে দূরে থাকাই ঢের ভালো। লাভ ম্যারেজ তার জন্য নয়। মানুষ চিনতে একদম কাঁচা। বাবা মা মিলে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ দিলেই সে খুশি। একদম প্রেম ফেম তার দ্বারা হবে না!
একা রাস্তায় ছুটে ছুটে হাঁটছে। সামনের বাস ধরে এখান থেকে বেরুতে হবে মান্নাতের আসার আগে। দেখে ফেললেই সর্বনাশ। সামনের বাস ও ছুটে চলে যায় অবস্থা! বাস ধরতে আমরিশা ছুটে চলল। আচমকা হাওয়ার বেগে গাড়ি থামল তার সামনে এসে। তাল সামলাতে না পেরে প*ড়ে গেল মাঝরাস্তায়। বাস ছুটে পালিয়ে গেল ততোক্ষণে!
হম্বিতম্বি করে গাড়ি থেকে বেরুলো এক সুদর্শন! আমরিশা তখনো মাঝরাস্তায় ধুলো বালিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সুদর্শন পুরুষ সরির বুলি গাইতে গাইতে হাত বাড়াল। আমরিশা ফিরে চাইল তার দিকে।
সূর্যের তীর্যক কিরণ এসে পড়ছে লোকটার উপর। মুখ দেখার জো নেই। আমরিশা চোখ দুটো ছোট ছোট করে ফেলল। একটা কালো সানগ্লাস ছাড়া আর কিছুই দেখতে পারছে না সে। হাত ধরতে দ্বিধে থাকা সত্ত্বেও উঠে দাঁড়াল সে। হাতে চোট পেয়েছে ভীষণ।

ছেলেটার মুখে এখনো সরির বুলি ফুটছে। আমরিশার রা*গে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এতো অনুশোচনা হলে ড্রাইভ করার সময় চোখ কোথায় রেখেছিলে রে। লোকটা এবার সানগ্লাস খুলে বিনয়ী হয়ে বলতে লাগল,
“বিশ্বাস করুন আমার খুব তাড়া ছিলো। বন্ধু হসপি’টালাইজড এই কারণেই আরকি, আই অ্যাম রিয়েলি সরি!
আমরিশার মন বুঝি এবার নরম হলো। আহারে বেচারার বন্ধু হসপিটালাইজড তাই এতো তাড়াহুড়ো করছিলো। সে বুঝতে পেরেছে। নরম সুরে বলল,
“ইটস ওকে!”
“নো নো, ইটস নট ওকে। আপনি হাতে চোট পেয়েছেন। আমার সাথে ফার্মেসিতে চলুন।”
“ওসব কিছু না। আপনি যেতে পারেন।
“আপনাকে এভাবে রেখে চলে যাওয়া ভীষণ অ*ন্যায় হয়ে যাবে যে।
আমরিশা চোখ মুখ কুঁচকে নিল। ছেলেটাকে এখন সুবিধার মনে হচ্ছে না। ছেলেটি দেখতে সুদর্শন। লম্বা চেহারা, মৃদু হাসিতে সূর্যের কিরণ মিলিয়ে মুখটা ঝলমল করছে। থিতুনিতে আবার খোঁচা খোঁচা দাঁড়িও আছে। তাদের ভাষায় বলে ছাগলের দাঁড়ি।

“আপনি প্লিজ আমার সাথে চলুন!”
লোকটা এবার জোরাজুরি করছে ভীষণ। অপরিচিত লোকের সাথে এতোসময় ধরে কথা বলাই যেন অ*ন্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমরিশার কাছে। এটা তার স্বভাববিরোধি কাজ। সে বিরক্ত স্বরে বলল, “আপনার বন্ধু না হসপিটালাইজড। তার কথা ভুলে গেলেন।”
“না না, সেখানে তো আরো মানুষ আছে। আপনার সাথে তো কেউ নেই। মানে কাউকে দেখছি না!”
চোখ কপালে তুলল আমরিশা। ছাগলে বলে কি? কেউ নেই বলে কি সে এবার তার গাড়িতে চড়বে। পেছন থেকে শক্ত কণ্ঠে কেউ বলল, “ও একা এটা তোকে কে বলল?”
আমরিশা থমকে দাঁড়াল কয়েক মূহুর্ত! মান্নাত! শুকনো ঢোক গিলল সে। গলা শুকিয়ে আসছে। ধুর! এই লোকটার কারণে দেরি হয়ে গেল নাহলে এতোক্ষণে সে পা*লিয়ে যেতে পারত। মান্নাতের জুতার শব্দ গাঢ় হচ্ছে। এদিকেই আসছে সে। মান্নাতের উপস্থিতিতে বাতাসের প্রবল ধাক্কা গায়ে লাগল তার। সে পাশেই দাঁড়িয়ে!
ছেলেটার গলার স্বর নেমে এলো। শুষ্ক গলায় বলল, “তুই?”

মান্নাতের তীক্ষ্ণ প্রশ্ন, “তুই এখানে কি করছিস?”
মিরাজ একগাল হেসে বলল, “তেমন কিছু না। একটা এক্সি’ডেন্ট হতে যাচ্ছিল এই আর কি? ম্যাম লাস্ট বার রিকোয়েস্ট করছি আপনি কি আমার সাথে যাবেন?”
“ও আমার সাথে যাবে মিরাজ। তুই ভাগ এখান থেকে!
“কি অদ্ভুত দোস্ত! আমি যার সাথেই কথা বলি সেই দেখি তোর জিনিস হয়ে যায়!”
আমরিশা চোখ মুখ কুঁচকে দুজনের কথা শুনছে। এরা কি দুজন দুজনকে চিনে? মান্নাত চোয়াল শক্ত করল। কথা না বাড়িয়ে আমরিশার হাত চেপে ধরে হাটা ধরল। মিরাজ কিয়ৎকাল চেয়ে দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। অতঃপর সানগ্লাস পরে গাড়িতে বসল।
আমরিশার হাতে লাগছে। চো*ট পাওয়া হাতই আবার চেপে ধরেছে মান্নাত। হাঁটছে বিদ্যুতের গতিতে। পা মিলাতেও কষ্ট হচ্ছে যেন। তার মৃদু স্বরে মান্নাতের কান অবধি পৌঁছাতে পারছে না। এক পর্যায়ে ধপ করে রাস্তায় থেমে দাঁড়ালো শক্ত পায়ে।
বাঁধা পড়ে পিছন ফিরে তাকাল মান্নাত। আমরিশার রাগে ঠোঁ*ট চেপে আছে। মান্নাতের হাতের বাঁধন নরম হলো। এগিয়ে এসে বলল, “কি হয়েছে?”

“ধরে বেঁধে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?
“এই তো সামনের ক্যাফেতে। চলো সেখানে।
“না, বাসায় যাবো!
বাসায় যাবে মানে? তুমি না আমার সাথে দেখা করতে এসেছো। এ কি কাঁদছো কেন?
কাঁদছি মনের সুখে?
হাতে কি হয়েছে তোমার?
এতোক্ষণে দেখার সময় হলো?
দেখি চলো চলো। ওই তো ফার্মেসি। লক্ষ্মী সোনা রাগ করে না চলো আমার সাথে!

হন্তদন্ত হয়ে মান্নাত একাই ছুটল ফার্মেসিতে। যাবার আগে হাতের ফুলের তোড়া দিয়ে গেল আমরিশার হাতে। তার রাগ ততোক্ষণে গলতে শুরু করেছে। হালকা গোলাপি রঙের গোলাপ ফুলগুলো গোলাপী রঙের একটা কাগজে মুড়ানো। মেডিসিন নিয়ে ছুটে বের হলো সে। আবারো তাকে সাবধানে ধরে বেঁধে নিয়ে গেল ক্যাফেতে। একটা টেবিল দেখে বসে পড়ল। চট করে মেডিসিন নিয়ে তার হাতে লাগিয়ে দিতে লাগল। আমরিশা নিশ্চুপ নয়নে দেখছে। মান্নাত খুব মনোযোগ দিয়ে তার হাত ধরে আছে। শক্ত হাতের উপর তার নরম হাতখানি। অতি সন্তর্পণে হাতের উপর ফু দিয়ে চলছে। আর কেবল বলছে, “রাস্তায় হাঁটার সময় একটু দেখে শুনে হাঁটবে না। কি করো এসব?”
আমরিশা জবাব দিতে পারছে না। সে হারিয়ে গেছে। এই লোকটার যত্নের কাছে সে হারিয়ে যাচ্ছে। লোকটিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। সাদা শার্টে এতো মানিয়েছে যে মনে হচ্ছে নজর লেগে যাবে। চুল গুলো এতো পারফেক্ট ভাবে আঁটসাঁট করে না বেঁধে রেখেছে যে খুলে এদিক ওদিক সরছে না। কয়েকটা চুল কেবল কপালের কাছে এসে জড়ো হচ্ছে তাও। আমরিশার মনে মনে একটা কথাও আওড়াচ্ছে, “কি সুদর্শন লোকটা!”

নীলকুঞ্জ ভিলা। ভিলার দুই পাশে লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুটো জারুল গাছ। গাঢ় বেগুনি রঙের ফুলে সজ্জিত গাছদুটো। হাতড়ে ছোঁয়া যায় না ভীষণ উঁচু! তবুও সে অনেকক্ষণ লাফালাফি করল ফুল দুটো ছোঁয়ার আশায়। পেলো না। এখন আঙুর ফল টক। মন খারাপ করে ভেতরে চলে গেল।
কলিং বেল বেজেই যাচ্ছে। থামার নাম নেই। আলফি ছুটে নিচে নামছে। কে এসেছে সে জানে? এই মেয়েটা খুব বজ্জাত। একবার কলিং বেল চাপলে চেপে ধরেই রাখে। ছাড়ে না। ইচ্ছে করে দুটো দিতে। বাদর মেয়ে একটা!
আলফি দরজা খুলে দাঁড়াল। বিরস তার চাহনি। সামনের পিচ্চি মেয়েটা মাথায় সিঁথি এঁকে দুটো বেনুনি করে দু পাশে রেখেছে। পরনে বেগুনি রঙের একটা ফ্রক। গলায় ওড়না ঝুলছে। কাঁধে স্কুল ব্যাগ। মাথা অবধি কোমড় এদিক থেকে ওদিক নাড়িয়ে বলল, “ভাইয়া আরবি আছে?”
বড়*সড় একটা ধমক খেলো জবাবে। সোজা হয়ে তটস্থ হয়ে গেল আফরিন। আলফি ফের গম্ভীর স্বরে বলে উঠল, “মিড়কি ব্যারাম হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন সাপের মতো?”

আফরিন ঠোঁট চেপে ধরল। চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে বেনুনি দুটো ধরে বলল, “আরবি আছে?”
“ঢং যতসব। এই সময় বাসায় থাকবে না তো কই থাকবে?”
“আপনি এমন করেন কেন ভাইয়া? সুন্দর করে জিজ্ঞেস করলাম সুন্দর মতো বলতে পারেন না?”
“তোরা এই যুগের মেয়ে হলি একেকটা ঢঙ্গী*বাজ। তোদের ঢঙের জ্বালায় বাঁ*চি না।”
“বাচ*তে কে বলেছে? ম*রে যান। দেখি সরুন যেতে দিন!”
আলফি ভ্রু কুঁচকে জায়গা দিয়ে দাঁড়াল। ভাব দেখিয়ে ধপ ধপ করে ভেতরে ঢুকে গেল আরবি। আলফি মুখে কুলে পেতে নিল। আজ এই বিচ্ছুর সাথে বেশি কথা বলে ফেলেছে। আর বলা যাবে না। তাহলে মাথায় উঠে বসবে।
আরবি ইন্টার পড়ুয়া কিশোরী মেয়ে। ভীষণ উড়নচণ্ডী। প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষা কিছুদিনের মধ্যে শুরু তাই এখানে এসে আরবির সাথে গ্রুপ স্টাডি করে। আরবি তার ক্লাসমেট!

কিন্তু কেবল চুপচাপ পড়াশোনা করার মতো মেয়ে না সে। একটু সুযোগ পেলেই হলো। বাড়িতে প্রথম যেদিন এসেছে সেদিন থেকেই আলফির পিছন লেগেছে। আরবিকে তো সোজাসুজি বলেছে, “বুঝলি আরবি, ভেবে নিয়েছি আমার ননদ তোকেই বানাবো। পড়াশোনা আমায় দিয়ে হবে না। তোর ভাই হেব্বি সুন্দর। তার গলায় ঝুলে তোর ভাবি হয়ে যাবো। বুদ্ধিটা কেমন বল তো?”
জবাবে আরবি কেবল হেসেছে। সে ভীষণ শান্তশিষ্ট আর নিশ্চুপ হয়ে। দরকার না পড়লে একটা কথাও বলে না। ওদিকে আফরিনের কাজ সবসময় আবোলতাবোল বলা। আরবি ও ভাবল আফরিন মজা করছে। কিন্তু আদলে সেটা না।

আলফি নিজের রুমের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। তার একদম মনে আছে বের হবার সময় দরজা বন্ধ করেই গেছে কিন্তু এখন খোলা। এর অর্থ সে নিশ্চিত ভেতরে ঢুকেছিল। আসলেও তাই। টেবিলের উপর মোড়ানো বেগুনি রঙের একটা খাম রয়েছে। শুদ্ধ ভাষায় প্রেমপত্র! এই প্রেমপত্র লিখেছে আফরিন স্বয়ং নিজেই। মেয়েটার সাহস আকাশচুম্বী। প্রথম প্রেমপত্র দিয়েছিল তাদের পরিচয়ের দ্বিতীয় দিনই। শুধু তাই নয়, একদম আলফির কাছে এসে সামনাসামনি তার হাতে খাম ধরিয়ে বলল, “পড়বেন কিন্তু! সময় না হলেও সময় করে পড়বেন ভাইয়া!”
শেষের ভাইয়া ডাক দিয়েছিলো টেনে টেনে। যেন ইচ্ছে করে তাকে জ্বা*লানো। আলফির পুরোপুরি তখন তা*জ্জব বনে গেল। এরপরের ঘটনা এর থেকেও সাং*ঘাতিক। চিঠির সম্বোধন দিয়েছে “হবু স্বামী” ডেকে! এই দেখেই আলফির বিষম উঠে গেল। বেচারা এক বোতল পানি শেষ করে ফেলল কিন্তু পুরো চিঠি শেষ করার সাহস পেলো না। এই মেয়ে তো জ্ব*লন্ত অগ্নি*শিখা!

বাঁদরের বংশোদ্ভূত! সৌভাগ্যবশত মানুষের ঘরে জন্ম কিন্তু জিন আছে ঠিক বাঁদরের। এর বাড়ির মানুষ এরে সামলায় কিভাবে এই চিন্তা আলফির। ইন্টার পড়ুয়া বেশির ভাগ মেয়েই অনেক ফাজিল।
এরা নতুন নতুন কলেজে উঠে নিজেকে বড় ভেবে বসে। ভাবে এই তাদের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। খুব লায়েক হয়ে গেছে। এখন গুনে গুনে তাদের চেয়ে ১০ কি ১২ বছরের বড় ছেলেকে পটিয়ে প্রেম করে ফেলবে। আফরিন হচ্ছে সেই দলের লিডার!
প্রেমপত্র পড়ে আছে পড়ে থাকুক। আলফি ভুলেও সেটা ধরবে না। নিশ্চিত এটা ধরলে তার জ্বর আসবে। এমন সব কথা লেখা থাকে না, লজ্জায় তার মুখ কান সব লাল হয়ে যায়। ইচ্ছে করে মেয়েটাকে ধরে আছাড় মার*তে। তার আর আফরিনের বয়সের তফাৎ কম করে হলেও ১১ বছর তো হবেই।
কিন্তু আফরিনও থামবার পাত্র নয়। গুনে গুনে আজ ২৪ দিন হলো সে প্রেমপত্র দিচ্ছে। ২৪ দিনে ২৪ টা প্রেমপত্র। অথচ ওই লোকটা একটার ও জবাব দেয়নি। পড়েছো তো? অবশ্যই পড়েছে। না পড়ে যাবে কোথায়? আফরিনের লেখা মারা*ত্মক সুন্দর। আর কিছু না হোক ওই সুন্দর লেখার কথা ভেবে লোকটা চিঠিগুলো পড়বে বলে আফরিনের ধারণা।

পড়াশোনায় আজ আফরিনের বিন্দুমাত্র মনোযোগ নেই। আরবি মনোযোগ দিয়ে অ্যাকাউন্টিং করছে। আর আফরিন খাতার উপর কলম দিয়ে আঁকিবুঁকি করছে। তার মন পড়ে আছে আলফি ভাইয়ার উপর। তাকে আজ কি হ্যান্ডসাম টাই না লাগছিলো। ইশ কালো রঙের জিন্স, কালো রঙের টি শার্ট। আরেকটু হলেই আফরিন হা*র্ট অ্যাটাক করত। লোকটা এতো সুন্দর কি দরকার আবার সেজেগুজে থাকার। আফরিনের মনে হয় আলফি ইচ্ছে করেই সেজেগুজে থাকে তাকে হার্টফেল করিয়ে দেবার জন্য। তা নয়তো আর কি?
না আজ আর পড়াশোনা হবে না। সে নিশ্চুপে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। আলফির ঘরে গিয়ে উঁকি ঝুঁকি মা*রছে। টেবিলের উপর খাম না দেখতে পেয়ে খুশিতে এক লাফ দিলো। আবার মুখে হাত চেপে ধরল। কেউ না আবার দেখে ফেলে। পা টিপে টিপে ঢুকল ঘরের ভিতর।

প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ২৭

কেউ নেই তো ঘরের মধ্যে। টেবিলের কাছে ডাস্টবিনে আবার একটু ঝুঁকে দেখল। লোকটা খাম ফেলে দেয়নি তো আবার। না নেই! একগাল হাসল সে। চোখ পড়ল টেবিলের উপর রাখা জারুল ফুলগুলোর উপর। ইশ! ফুল ও বেগুনি, সেও বেগুনি! ভাইয়া বেগুনি হলেই একটা সংসার সাজিয়ে ফেলত। খুশিতে গদগদ করে বেরিয়ে গেল সে। ফুল গুলো তার হাতের মুঠোয়!

প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ২৯