প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ১০

প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ১০
মিমি মুসকান

প্রান্তিক চৌধুরী হার মানে নি। সে এসে দাঁড়িয়েছে বাড়ির দক্ষিণ দিকটায়। উপরে তাকালেই তাঁর বউয়ের ঘরের বেলকনি। বিয়ের পরেও বুঝি বর বউয়ের রুম আলাদা হয়। প্রান্তিকের জানা নেই। সে আনমনে গিটার বাজানো শুরু করল। তার দৃঢ় বিশ্বাস, গিটারের শব্দ শুনে তাঁর বউ ছুটে আসবে। ছুটে আসলো আসলেই। নিচে উঁকি দিয়ে প্রিয় পুরুষ কে দেখতে পেয়ে তাঁর চক্ষু ছানাবড়া। তাঁর বর তাঁর জন্য এখানে দাঁড়িয়ে গান গাইছে। কি অদ্ভুত ভালো লাগা। ভেবে পায় না, এই মানুষটির উপর রাগ করে কিভাবে থাকবে সে।
প্রান্তিক সুর তুলে গান গাইছে। প্রিয়তা মুগ্ধ হয়ে গালে হাত রেখে গান শুনে যাচ্ছে। গানে কেবলই ভালোবাসার কথা। উপচে পড়ছে সমস্ত আবেগ! বর মশাইয়ের গানের গলা তো ভালো।
গান শেষে প্রান্তিক গিটার রাখলো মাটিতে ঠেসিয়ে। মুচকি হেসে বলল, রাগ কমেছে বউ!
প্রিয়তা মুখ ভেংচি কাটল। প্রান্তিক বলে উঠলো,

– নাও! দরজা খুলো এবার!
– না!
– না মানে? এতোক্ষণ ধরে গান গাইলাম তোমার জন্যে। তুমি দরজাটা খুলতে পারবে না ।
– না পারব না।
– না পারলে ফ্রি ফ্রি গান শুনতে কেন এলে?
– আপনি কেন গাইলেন? বলেছি গাইতে?
– কি আশ্চর্য! দয়ামায়া নেই তোমার?
– না নেই।
– দরজা না খুললে এখানে দাঁড়িয়ে থাকব কিন্তু!
– থাকুন দাঁড়িয়ে!
বলেই প্রিয়তা ঘরে ঢুকে গেল। তাঁর ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। মূলত প্রান্তিক কে ভড়কে দেবার জন্যেই সে আলো নিভিয়ে ঘুমের ভান ধরল। কে জানত সত্যি সত্যি চোখ লেগে যাবে।
তখন মধ্যরাত! প্রিয়তা সেই কখন থেকে অনুভব করছে, একজোড়া বাহু তাকে নিজের দিকে টানছে। সে যতই চাইছে দূরে যেতে ততোই যেন নিজের কাছে ডাকছে। প্রিয়তার হুঁশ ফিরল! ঘুম ভাঙলো। এখানে কেউ আছে। সে চেঁচালো না। পারফিউমের তীব্র ঘ্রাণ নাকে আসছে। এই গন্ধ তার চেনা। অনুভব করেই বলে দিতে পারে প্রান্তিক তার রুমে। কিন্তু আসলো কি করে? দরজা তো বন্ধ!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চোখ গেল বেলকনির দিকে। ভুল করে দরজাটা খোলাই রেখে এসেছিল সে। প্রান্তিক এদিক দিয়েই এসেছে। দরজা এখনো খোলা। বাইরের চাঁদের আলো এসে জুড়েছে ঘরের মেঝেতে। চারদিক অন্ধকার। বরের মুখ দেখার জো নেই। কিন্তু সে অনুভব করতে পারছে বরের মুখ তাক গলার কাছে ডুবানো আছে। তার শীতল দেহের স্পর্শে প্রিয়তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠছে। প্রান্তিকের ভীষণ বাজে স্বভাব উদাম গায়ে ঘুমানো। প্রিয়তা টের পাচ্ছে। প্রান্তিক তাকে ডাকছে তার বুকের দিকে। সেও লেপ্টে রইলো বুকের মধ্যে। অভিমান করল না, অভিযোগ করল না। অভিমান তো কবেই পড়ে গেছিল। তবুও দেখতে চেয়েছিল তার বর তাঁর জন্য কতোটুকু করতে পারে। প্রান্তিক বিভোরে ঘুমাচ্ছে। ঘুমের মধ্যেই তার গলার কাছে চুমু খেলে বসল। তার এমন কাজে প্রিয়তা আহম্মক বনে গেল!

আমরিশা আবারো এসেছে মান্নাতের শো রুমে। কিন্তু আজ মান্নাত নেই। কিভাবে স্টাফদের হাতে টাকা দিবে সেটাও বুঝে উঠতে পারল না। এসেই শো রুমে ঘুরাঘুরি করছে। আশায় আছে কখন মান্নাত চলে আসে। কিন্তু আসছে না তো। আধঘন্টা হয়ে গেল। এবার যে তাকে বেরুতে হয়। টিউশনি আছে তো। মান্নাতের আশা আজ প্রায় ছেড়েই দিল সে। হঠাৎ দেখতে পেল সেই পুরুষালি কণ্ঠ,
– পছন্দ হয়েছে এটা?
আমরিশা প্রায় চমকে উঠল। কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখতে পেয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচল সে। খেয়াল করল তার হাত একটা ড্রেসের উপর। এই না আবার ড্রেসটা প্যাক করে দিয়ে দেয়। এর দাম দেখেও তার মাথা ঘুরাচ্ছে। এতো টাকা তার কাছে নেই। আজকের ৮ হাজার অনেক কষ্ট করে যোগাড় করেছে। আফরিনের থেকেও ধার করেছে কিছুটা।
– না না! আমি আপনাকে খুঁজছিলাম।
মান্নাত মৃদু হেসে বলল,

– আমাকে? হঠাৎ!
– হ্যাঁ, একটু দরকার ছিলো।
– বেশি দরকার পড়লে ও সমস্যা নেই।
আমরিশা কপাল কুঁচকে নিল। মান্নাত হেসে তার দিকে এগিয়ে আসছে। আমরিশা আশপাশ তাকাচ্ছে। কাউকেই দেখতে পারছে না। মান্নাত তো থামছেই না। হাঁসফাঁস করতে লাগলো এবার। মান্নাত থেমেছে। একটু ঝুঁকে গিয়ে বলল,
– এতো অপেক্ষা করার কি দরকার ছিলো? নাম্বার তো আমি দিয়েছিলাম। ফোন করে আসলেই তো পারতে!
চমকে উঠল আমরিশা। তাঁর কম্পিত কণ্ঠস্বর। চেপে ধরল ব্যাগটা। ড্রেসের ভেতরেই একটা চিরকুটে নাম্বার লেখা ছিলো। কিন্তু আমরিশা সাহস করে নি। তাই এখনো চিরকুটটি তার ব্যাগের কোণায় পড়ে আছে। বুঝতে পারছে না ফেলে কেন দিলো না সেটা।
মান্নাত অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে আরমিশার হাত চেপে ধরল। আমরিশা হতভম্ব! মান্নাত বলে উঠলো,

– উপরের তলায় আমাদের একটা রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে চলো!
জবাবের অপেক্ষায় থাকলো না সে। তাকে একপ্রকার টেনেই নিয়ে যাচ্ছে সে।আরমিশা বোকার মতো তার সাথে চলেও গেলো। শেষে মনে হল, এসব কি করছে সে?
ততোক্ষণে তাঁরা রেস্টুরেন্টের ভেতর চলে এসেছে। আমরিশা অবাক না হয়ে পারল না। এতো সুন্দর রেস্টুরেন্টে খুব কমই আসা হয় তার। মান্নাত তার হাত ছেড়ে এগিয়ে গেল।বলতে শুরু করল,
– আগামীকাল রেস্টুরেন্টের ওপেনিং। দেখে বলো তো ডেকোরেশন কেমন হয়েছে।
কেমন সহজ গলায় বলল। যেন সে আর আমরিশা কতোদিনের চেনা। অথচ তাদের পরিচয়ের আজ দ্বিতীয় দিন।
আমরিশা বিস্ময় স্বরে বলল, – ভীষণ সুন্দর!
মান্নাতের ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিত হাসি। চেয়ার এগিয়ে দিয়ে ইশারা করল সে। আমরিশা বসে পড়ল। মান্নাত চেয়ার টেনে তার পাশে বসে বলল, – আমাদের প্রথম কাস্টমার তুমি? বলো কি খাবে? খেয়ে দেয়ে রেটিং দিবা কিন্তু!
– না, আমি কিছু খাবো না।

কিসের কি? মান্নাত নিজেই জোর করে খাবার অর্ডার করল। প্রথমেই তাদের ওয়েলকাম ড্রিংকস সার্ভ করা হলো। আমরিশা খেয়াল করল, এই লোকটাকে আজ আর তার বিরক্ত লাগছে না। সে দেখতে সুদর্শন! আজ যেন একটু বেশিই সুন্দর। কারন তার এলোমেলো চুল।মনে হচ্ছে কোথা থেকে ছোটাছুটি করে এসেছে। আমরিশার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করছে, তিনি কিভাবে জানলেন আমরিশা এখানে? কিন্তু প্রশ্ন করার সাহস কুলাল না। সে বেশ বুঝতে পারছে মান্নাত তার উপর লাইন মারছে।
– বলো? কি কাজে এসেছো?
আমরিশা ব্যাগ থেকে টাকা গুলো বের করে এগিয়ে দিল। মান্নাত সামান্য বিরক্ত!
– কিসের টাকা?
– ওই ড্রেসটার। আপনি প্লিজ দামটা রাখুন।
মান্নাত তার উরুতে একহাতে ভর দিয়ে আমরিশার দিকে এগিয়ে গেল। মিনমিন স্বরে বলল,

– কি? টাকা কি বেশি হয়ে গেছে তোমার?
– মানে?
– আমায় টাকা দেখাচ্ছো?
– না তো। আপনি ভুল বুঝছেন?
আমরিশা ভয় পাচ্ছে। কারন মান্নাতের কণ্ঠস্বর বদলে গেছে। মনে হচ্ছে তিনি রেগে যাচ্ছেন।
– টাকা গুলো চুপচাপ ব্যাগে রাখো। তোমার কি মনে হয় আমি টাকার জন্য তোমাকে গিফট করেছি।
আমরিশা চাঁপা স্বরে বলে উঠলো,
– কিন্তু আপনিই বা এতো দামি ড্রেস আমায় কেন গিফট করবেন?
– সেটা আমার ব্যাপার। ওয়েটার আসছে টাকা ব্যাগে রাখো।
আমরিশা মুখ ফুটে বলতে যাচ্ছিল, না আপনি নিন। কিন্তু মান্নাত যেভাবে ঘাড় বাঁকিয়ে চেয়ে আছে আর সাহস করল না। টাকা গুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখল। তার ভীষণ খারাপ লাগছে। বুকের মধ্যে পিনপিনে ব্যাথা হচ্ছে। সে কি কেঁদে ফেলবে নাকি? কিন্তু কেন? এই ছোট কারণে কাঁদার মতো কি হলো? সে তো ছিচকাদুনি নয়। ওটা তো আফরিনের স্বভাব।

তারা খাবার দিয়ে গেল। মান্নাত দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলো,
– আমি লাঞ্চ রেখে তোমার জন্য ছুটে এসেছি। প্লিজ খাওয়া শুরু করো।
আমরিশা মুখ ভেংচি কাটলো। চামচ হাতে নিয়ে ভাবতে লাগল, সে কেন লাঞ্চ ছেড়ে এসেছে। সে কি একবারও বলেছে আসতে? লাঞ্চ সেরেই আসতো। এত ঠেকা কেন পড়ল তাঁর। অদ্ভুত ভাবে খেয়াল করল, মান্নাতের সব কথা সে মানতে শুরু করেছে। কি আশ্চর্য!
– কিসে পড় তুমি? দেখে তো মনে হয় ভার্সিটিতে! কি ফাইনাল ইয়ারে নাকি?
আমরিশা কাশতে কাশতে বলল, – না না, ফার্স্ট ইযারে।দু মাস বাদে ফাইনাল এক্সাম দিয়ে সেকেন্ড ইয়ারে উঠব!
মান্নাত পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,
– এমা! তুমি তো পিচ্চি! ভালোই হলো, কথা না শুনলে দু গালে দুটো অনায়সে দেওয়া যাবে।
আমরিশা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে গোল গোল চোখ করে চেয়ে রইল। মান্নাতের কথা শুনে তাঁর কাশিও থেমে গেছে। থমথমে কণ্ঠে বলল,
– আপনি কিসে পড়েন?
– আমি? আমার যখন পড়াশোনা শেষ হয়েছে তখন তো মনে হয় তুমি মাধ্যমিক ও দিতে পারোনি!
আমরিশা খাবার ভুলে হা করে মান্নাতের দিকে চেয়ে রইল। লোকটা কি বলল? লোকটা তার এতো বড় নাকি! তার মাথা ভনভন করছে। আর কিছু ভাবতে পারছে না সে। তার আগেই ধারণা করা উচিত ছিলো, ভাইয়ার ফ্রেন্ড তিনি। বয়স তো বেশিই হবেই। কিন্তু আমরিশার চিন্তা ভাবনা তখনো এসব ছুঁতে পারেনি!

প্রিয়তার এক বান্ধবীর বার্থডে। তাকে যেতেই হবে এমন ভাবে বলে দিয়েছে সে। শুধু তাকে না, বর সহ ইনভাইটেশন এসেছে। সেদিন প্রান্তিক ওদের ট্রিট দিলো যে, সেই ভদ্রতা বজায় রাখতে মেয়েটাও তাদের দাওয়াত করল। প্রিয়তার যাবার এতো শখ ছিলো না। ভেবেছিল তাঁর বর মশাই ও না করে দিবে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে বর মশাই তাকে যাবার পারমিশন দিলো। এমনকি বলল, তুমি সোজা গাড়ি নিয়ে চলে যেও। আমি অফিস থেকে চলে যাবো। প্রিয়তা হ্যাঁ না কিছু করেনি। চুপ থাকা তো সম্মতির লক্ষণ। বর যেতেই সে ঘর গোছাতে শুরু করে দিল। এখন সে প্রান্তিকের রুমে। এখানে থাকাটাই যেন পার্মানেন্ট হয়ে গেছে। মেয়েগুলো ওঘর থেকে প্রিয়তার জিনিসপত্র এনে এই ঘরে সাজিয়ে রাখছে। নিজেদের মধ্যে কানাঘুষা করছে। এদের ভাব বেশিদিন টিকবে না। আবার ঝগড়া হবে, অভিমান হবে। তখন আলাদা ঘরে চলে যাবে তারা। মেয়েদুটো আফসোস করছে। এদের কাজ কেবল এ ঘর থেকে জিনিসপত্র নিয়ে ওঘরে দিয়ে আসা!

প্রিয়তা নিজের ঘরকে নিজের মতো সাজালো। বেলকনিতে একটা দোলনা বসানোর বন্দোবস্ত করছে। বিকেলে সে দোলনায় বসে চা খাবে আর বই পড়বে। একটা বুকশেলফ ও আনবে। বেলকনি ভালোকরে পরিষ্কার করে রাখল। এদিকে ফুলের টব রাখবে সে। পুরো নিজের মনমতো সাজিয়ে রাখবে। নিজের পছন্দমত ঘরের চাদর থেকে পর্দা অবধি বদলে দিল সে। এমনকি নিয়ম করে বাগান থেকে ফুল এনে ঘরের ফুলদানিতে রাখছে। একটু বাদে বাদে তাঁতে সুবাস নিচ্ছে। নিজের সংসার গোছাতে পেরে আনন্দে তার চোখের কোণে অশ্রু জমে গেলো।
জন্মদিনে প্রিয়তা এসেছে থ্রি পিস পড়ে। গোলাপি রঙের হালকা কারুকাজ করা থ্রি পিস পরা সে। অনেকেই চলে এসেছে এর মধ্যে। যার জন্মদিন তার নাম হচ্ছে লামিয়া। লামিয়া তাকে দেখতে পেয়েই প্রান্তিকের কথা জিজ্ঞেস করল। প্রিয়তা মুচকি হেসে জানাল, সে আসবে।
সুমনা পাশেই ছিল। শুধু সুমনা না, যারা এসেছে সকলেই এখানে। সবাই প্রিয়তার বরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ! লামিয়ে তার থিতুনিতে হাত রেখে বলল,

– কি ব্যাপার প্রিয়তা? দিন দিন মনে হচ্ছে সুন্দর হয়ে যাচ্ছিস! কারন কি? বরের সোহাগ নাকি?
সকলে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। প্রিয়তা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। মনে হচ্ছে তার কানের কাছে গরম ধোয়া উড়ছে। সুমনা আড়চোখে এদিক তাকাচ্ছে। তার সমস্যা কোথায় প্রিয়তা বুঝতে পারছে না। লক্ষ করছে একটু। সুমনা সবার সামনেই বলল,
– পেলে মেয়েটার খোঁজ?
– কোন মেয়ে?
– যাকে তোমার বরের সাথে দেখেছিলাম তার কথা বলছিলাম। পাও নি? আজ আসছে নাকি। বুঝছি না, এমন একটা ক্যারেক্টার‘লেস ছেলেকে তুই জন্মদিনে দাওয়াত কিভাবে দিলি লামিয়া?
প্রিয়তার স্তব্ধ। তার সাথে বাকি সকলেও । কেউ কেউ সুমনা কে চুপ করতে বলছে। সুমনা ইচ্ছে করেই যেন বাড়াবাড়ি করছে। প্রিয়তা চোখ ঘুরিয়ে নিল। তাকাল সুমনার প্রেমিকা ইশানের দিকে। হেসেই বলল,
– শুনেছিলাম কিছুদিন আগে তোমরা টুরে গিয়েছিলে। তাও দুজন! বিয়ের আগেই প্রেমিকাকে নিয়ে এতো ঘুরছো? পরিবার জানে তোমার?

ইশান হতবাক হয়ে রইল। সবাই বুঝল প্রিয়তা রেগেছে। কেউ বাধা দিল না তাকে। সুমনা ফুসে উঠল।
– তুমি কি বলতে চাইছো? ইশানকে তুমি ক্যারেক্টার‘লেস বলছো নাকি?
– বিয়ের আগেই তুমি আর তোমার প্রেমিক ঘুরতে গেলে রাসলীলা আর বর গেলেই বুঝি ক্যারেক্টার‘লেস!
ইশান বাঁধা দিতে চাইল। প্রিয়তা তাকে থামিয়ে বলল,
– প্রথম দিনই তোমায় বলতে চেয়েছিলাম, বলিনি। ভেবেছিলাম তুমি বুঝদার। কিন্তু তুমি তো দেখছি ভারী অবুঝ মেয়ে। আমার বরের কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল এই নিয়ে তো তোমার খুব আগ্রহ দেখছি! কারন কি? তোমার আর ইশানের মাঝে কি কিছু হচ্ছে না! প্রেম করছো! বিয়ে তো করোনি। গ্যারান্টি কি ইশান আর তোমার বিয়েই হবে? বলো আমায়! কোন সাহসে আমার বরকে নিয়ে আলোচনার সাহস করো তুমি? হু আর ইউ? আমার বরকে জাজ করার তুমি কে?

এবার দু একজন মুখ খুলল। তারা প্রিয়তার হয়েই কথা বলল। সুমনার ভারী অন্যা‘য় হয়েছে। এখনকার যুগে অনেকেই প্রেম করছে। কিন্তু ক’জন তার প্রেমিকাকে বিয়ে করতে পেরেছে আদৌও। সে নিজেও তো সেই দলের। লামিয়া প্রিয়তাকে শান্ত হতে বলল। প্রিয়তা হাঁফাচ্ছে। এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন সুমনাকে আস্ত গিলে ফেলবে সে। ইশান সুমনার হয়ে মাফ চাইলো। তবুও প্রিয়তার মন টিকলো না আর।
প্রিয়তা সোজা সেখান থেকে বের হতে যাচ্ছিল। তখনই প্রান্তিক চৌধুরী ঢুকল রেস্টুরেন্টে। প্রিয়তা তার কাছে আসতে দেখে সে স্মিত হাসল। কিন্তু প্রিয়তমার মুখে আধার জমতে দেখে চোখের সানগ্লাস খুলে ফেলল সে! কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই প্রিয়তা তার হাত ধরে টেনে বেরিয়ে গেল। প্রান্তিক আদৌও বুঝতে পারল না কি হয়েছে?
প্রান্তিক গাড়ি চালাচ্ছে। তার পাশের সিটেই বসা প্রিয়তা। একদম ধম মেরে বসে আছে। কোনো কথা বলছে না সে। প্রান্তিক নিজ থেকেই আগ বাড়িয়ে বলল,

– কিছু হয়েছে?
– না। বাসায় চলুন।
– বাসায়ই তো যাচ্ছি। তুমি বলো? ওভাবে চলে এলে কেন? কেউ কিছু বলেছে।
প্রিয়তা জবাব দিলো না। কি বলবে? তারা তার বরের চরিত্র নিয়ে কথা বলছে। ভালো শুনায় এসব। প্রান্তিক একা মনে বকেই যাচ্ছে।
– এতো রাতে ফিরে যাচ্ছি। খাওয়া দাওয়া কিছুই তো হলো না। খিদে পেয়েছে তোমার?
জবাব না পেয়ে আবার শুরু করল, – খিদেয় মনে হয় তোমার মাথা গরম। সামনে রেস্টুরেন্টে থামবো। খাবে কিছু?
প্রিয়তা নিশ্চুপ! সে আবারো বলল, কি হলো? খিদে পাই নি।
– চুপ থাকবেন আপনি? আর একটা কথা বললে আপনাকে আস্ত গিলে খাবো আমি!
প্রান্তিক তার দিকে ফিরে একগাল হেসে বলল,

প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ৯

– আমি রাজি! পেট ভরবে তোমার? পেট না ভরলেও মন ভরবে। ট্রাস্ট মি!
বলেই চোখ টিপ মারল। এখনো হাসছে লোকটা। প্রিয়তার বুকের মধ্যে জ্বলা দাউ দাউ আ‘গুন এখন বোধহয় নিভে যাচ্ছে। প্রান্তিক আবারো বলল,
– সামনের রেস্টুরেন্ট আমার পছন্দের। থামি বলো! আমার বউ না খেয়ে একদম শুকিয়ে গেছে। এভাবে থাকলে কি আমার সাথে আর রাগ করতে পারবে বলো!
প্রিয়তা মুখ ঘুরিয়ে নিল। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখছে। এই লোকটা এমন কেন? তার একটু কথায় সে কেন গলে যায়। ধীরে ধীরে তিনি যেন তার দুর্বলতা হয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে তো তাকে ছাড়া বাঁচা মুশকিল হয়ে যাবে!

প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ১১