প্রিয় ইরাবতী পর্ব ২৫

প্রিয় ইরাবতী পর্ব ২৫
রাজিয়া রহমান

শারমিন সাগরকে কল করলেন।গতরাতে ছেলেটা বের হলো আর ফিরলো না।ইরাকে তিনি ওর রুমেই দেখেছিলেন।ইরা ও কখন বের হয়ে গেছে।
কেউ-ই এখনো বাড়িতে ফিরে নি।
শারমিন নিজের জন্য দুমুঠো ভাত রেঁধে নিলেন।
ইরার কথা মনে হতেই শারমিনের মুখ বিরক্তিতে বিকৃত হয়ে যায়। এই মেয়ে তার মুখের সামনে থেকে খাবার কেড়ে নিছে।
কষ্টে শারমিনের বুক ফেটে যায়।
এজন্যই কী এদের পেলেপুষে বড় করেছেন?

এদের না পেলে একটা অ্যানাকোন্ডা পুষলেও ভালো করতেন।সে অন্তত এরকম করে তাকে কষ্ট দিতো না।
শারমিন কতো আনন্দিত হয়েছিলেন ইশতিয়াকের সাথে বিয়ে দিয়ে।বড়লোক জামাই পেলে মেয়েরা আড়ালে আবডালে মায়ের সংসার ও টানে।মা বাপের হাত খরচ চালায়।
শারমিন এক মুহূর্তেই হাজারো স্বপ্ন বুনে ফেললো।
অথচ সেখানে ইরা তার মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে গেছে। নিজের পেটের মেয়ে এই তার?
হাসপাতালে জন্ম নিলে শারমিন নিশ্চিত ধরে নিতো তার বাচ্চা বদল হয়েছে কিন্তু তার তিন সন্তানের জন্মই যেহেতু বাড়িতে তাই সেই চিন্তা আপাতত বাদ দিলেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইরার জন্য চিন্তা হওয়ার চাইতে রাগ বেশি হচ্ছে শারমিনের।
সাগরকে কল করলেন শারমিন। সাগর মা’য়ের কল পেয়ে ফোনটা বন্ধ করে দিলো।
মা বলে ডাকলে মনের মধ্যে যে শান্তির পরশ আসে সেটা সাগরের আসছে না।বরং মা’য়ের কথা ভাবলে সাগরের অস্থির লাগে। মনে হয় এই মানুষটা যদি নিজেকে চেঞ্জ করতো,নিজের স্বভাব চেঞ্জ করতো তাহলে তাদের জীবন আরো সুন্দর হতো।
শারমিন বিরক্ত হয়ে আবারও কল দিলেন।ফোন বন্ধ বলছে এবার। সেই মাত্র রিং হলো আর এখন বন্ধ!
তাহলে কী সাগর তার কল পেয়ে ফোন বন্ধ করে রেখেছে!
শারমিনের বিরক্ত লাগে।আর ভাববে না এদের জন্য। ফিরলে ফিরবে না ফিরলে নাই।দুই দামড়া ছেলেমেয়ে বের হয়ে গেছে বাড়ি থেকে একবার ভাবে নি তার কথা কেউ!

তিনি কেনো অযথা ওদের কথা ভাবতে যাবেন?
ভেবে ভেবে তো নিজের জীবন শেষ করলেন।
আর না।
ইরা খাবার শেষ করে রান্নাঘরে ঢুকলো।বিয়ে করে যখন এই বাড়িতে এসেছেই তাহলে কেনো এতো জড়তা ধরে রাখবে।
একটা সংসারের আসল জায়গা হচ্ছে তার রান্নাঘর। যুদ্ধক্ষেত্রে যখন নেমেই গেছে তাহলে পিছু হটার আর সুযোগ নেই।
রান্নাঘরে ঢুমতেই কাজের লোক দুজন চমকে একে অন্যের দিকে তাকায়। এই বাড়ির কিচেনের একচ্ছত্র আধিপত্য তাদেরই।

শায়লা ম্যাডাম,লিনা ম্যাডাম কেউ কখনো রান্নাঘরে পা দেন না।
সেখানে বাড়ির ছোট বউ আসতে না আসতেই রান্নাঘরে ঢুকলো কেনো?
ইরা রান্নাঘরের এদিক ওদিক তাকায়। রান্নাঘরটা খোলামেলা। ঢাকা শহরে ফ্ল্যাটগুলোর বেডরুমের চাইতেও বড় আছে।
দুইটা বড় বড় ডিপ ফ্রিজ, দুইটা নরমাল ফ্রিজ রান্নাঘরের পাশের আরেকটা রুমে।
ইরা ভেতরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকালো।
কি আশ্চর্য!
চারদিকে সব খাবার খোলা অবস্থায় পড়ে আছে ঢাকনা দেওয়া ছাড়া।
এক পাশে বালতিতে ময়লা জমিয়ে রাখা।
ইরার কপাল কুঁচকে যায়।

এরা এমন অগোছালো করে রেখেছে কেনো এই জায়গাটা?
শাকসবজি, তরকারি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারদিকে।
ইরা রেনুকে ডেকে বললো, “রান্নাঘর এরকম হয়ে আছে কেনো?”
রেনু আমতাআমতা করে হনুফার দিকে তাকালো।হনুফা বয়সে বড়,অনেক বুদ্ধিমতী।
রেনুর ধারণা হনুফার বুদ্ধি বড় ম্যাডামের চাইতে ও বেশি।
হনুফা এক গাল হেসে বললো, “আসলে ভাবী…”
“ম্যাডাম বলে ডাকবে।ভাবী না।”
হনুফা আড়চোখে তাকায় রেনুর দিকে।দুই দিন আগে কি ছিলো আর এখন বিয়া হইতে না হইতে ম্যাডাম সাজতে আসছে!

হনুফা আবারও বললো, “ম্যাডাম,রান্নাবান্না শেষ হইছে তো কিছুক্ষণ আগে। এখনো সব গুছাই উঠতে পারি নাই।এই তো এখন ঠিক করমু।রেনু নে,হাত লাগা।”
ইরা এগিয়ে যায় সিংকের দিকে একটা বড় বালতিকে লক্ষ্য করে।এগিয়ে গিয়ে হনুফাকে জিজ্ঞেস করলো, “এটা খোলো তো।বাজে স্মেল আসছে মনে হয় এখান থেকে।”
হনুফার ভয় করে।
খুলতেই বাজে গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। ইরা হনুফাকে জিজ্ঞেস করলো, “এসব কী?”
“গাচে দেওয়ার জন্য তরকারির খোসা জমাইতে বলছে।এখানে জমাইতেছি।”
“এগুলো রান্নাঘরে কেনো রেখেছো?”
“প্রতিদিন এগুলো নিয়ে ছাদে উঠা লাগে।এতো বার কে উঠে।”
“তোমরা দুজন উঠবে।এক্ষুনি এটা নিয়ে ছাদে রেখে আসো।৩০ মিনিটের মধ্যে সবকিছু পরিপাটি দেখতে চাই।রান্নাঘর এতো নোংরা আমি এই জীবনে দেখি নি।ছি!
এখান থেকে খাবার বানিয়ে সবাইকে দেওয় হয় সেখানে এই জায়গায় যদি এতো ময়লা হয়ে থাকে তাহলে সেই খাবার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে ও আমার দ্বিধা আছে।”
ইরা দাঁড়িয়ে থাকলো।

হনুফা আর রেনু ঝড়ের গতিতে সবকিছু করতে লাগলো।ইরা এখান থেকে না গেলে ওদের সর্বনাশ হবে এখনই।
ঝড়ের বেগে কাজ করলেও ৩০ মিনিটের জায়গায় ৪৫ মিনিট লেগে গেলো। ইরা দাঁড়িয়েই রইলো।
সবকিছু ধুয়ে, মুছে নিলো।রান্নাঘর ডীপ ক্লিন করে নেওয়া হলো।
সবকিছু শেষ হতেই ইরা জিজ্ঞেস করলো, “এখন তোমাদের কাজ কী?”
“জ্বি, রাইতের খাওন রান্না করা।”
“দুপুরের যে এতো খাবার রয়ে গেছে সেসব কী হবে?”
হনুফা চুপ করে রইলো।টেনশনে ওর হাত পা সবকিছু ঘামছে।এক্ষুনি একটা কেলেংকারী ঘটবে।হনুফার ধারণাকে সত্যি করে দিতেই বাজার করার সোহাগ ভেতরে এলো।ইরাকে খেয়াল না করেই বললো, “খালা,কই সব খানা প্যাকিং করছো নি?আরে দেরি হইয়া গেছে আইজ অনেক।গতকাল লাভ বেশি হয় নাই।আইজ খানা বেশি, লাভ ও হইবো।”

“কিসের প্যাকিং সোহাগ?”
সোহাগ থতমত খায়।
“ইয়ে মানে ভাবী..”
“ভাবী না,ম্যাডাম বলবে।”
সোহাগ হনুফার দিকে তাকায়। হনুফার দুই চোখে অসহায়ত্ব।
“জি ম্যাডাম,না তেমন কিছু না।”
“যা জিজ্ঞেস করছি,সত্যি কথা বলো।”
“কিছু না ম্যাডাম।”
“সোহাগ…”

হনুফার ইবাক লাগে।এই মাইয়াটাকে দেখতে নরম-সরম লাগে।পুতুলের মতো একটা মাইয়া।একদিন আগেই তো দেখছিলো ডরে কেমন জুবুথুবু হইয়া আছিলো।সে আইজ কেমন কঠিন কঠিন কথা বলতেছে!
মাইনসের উপরের রূপ আর ভিত্রের রূপে এতো ফারাক!
সোহাগ হনুফার দিকে তাকিয়ে বললো, “খালা,তুমি বলো।”
হনুফা ছুটে গিয়ে ইরার পা চেপে ধরে বললো, “ভুল হয়ে গেছে ম্যাডাম, মাফ করে দেন।আর হবে না।”
“কি করছো বলো আগে।”
“ম্যাডাম,দুপুরের আর রাইতের খাওন যেগুলো বেশি হয় সোহাগ ওইগুলো বাহিরে নিয়ে বেইচা আসে।টাকা আমরা তিন জনে ভাগ কইরা নিই।”
“কতো দিন ধরে এসব করতেছো?”
“অনেক দিন ম্যাডাম।অনেক বছর।”
“ঠিক আছে,যাও।আজকেরগুলো ও দিয়ে দাও।তবে এরপর থেকে আর এসব চলবে না।আজকেই শেষ।”
হনুফার ধড়ে প্রাণ এলো শুনে।
এতটাও খারাপ মনে হইতেছে না এইবার আর।
ইরা জিজ্ঞেস করলো, “রাতে মেন্যু কী?”

“সবকিছুই ম্যাডাম।গরু,মুরগী, মাছ, ডিম,ডাল।”
“প্রতিদিনই কী এমন হয়?”
রেনু বললো, “হ ম্যাডাম,পতিদিনই এই সবকিছু রান্ধন লাগে।”
“খাওয়া যায় কী কী?”
“কোনোটাই খাওন যায় না ম্যাডাম।পতিদিনই সব খাবার থাইকা যায়।এক বেলার খাওন পরের বেলায় দিতে নিষেধ করছে বড় ম্যাডাম।”
“১২ মাস তোমাদের এই একই রেসিপি চলতেই থাকে?”
“হ ম্যাডাম।১২ মাসই এগুলো চলে।”
“তোমার বড় ম্যাডাম কখনো কিছু বলেন না?”
হনুফা বুঝতে পারলো বার ম্যাডামের দিন শ্যাষ হই আসছে।এই ম্যাডামই হইবো সবকিছুর হর্তাকর্তা। তাই এর লগে মিল দিতে হইবো।গলার আওয়াজ নিচে নামিয়ে বললো, “বড় ম্যাডাম জীবনেও এইদিকে ফিরা তাকায় না।ওনার এতো সময় কই?উনি তো বাড়িতেও থাকে না।এমন ও হয় উনি ১ সপ্তাহ বাড়িতে আসেন না।কই যায়,কি করে কেউ জানে না ম্যাডাম।তেমন একটা সুবিধার লাগে না।”

“তোমাকে কেউ সেসব জিজ্ঞেস করেছে কেউ?নিজের গন্ডির ভেতর থাকবা।আজ থেকে এসব খাওয়া দাওয়ার মেন্যু চেঞ্জ হবে।”
“জি,আইচ্ছা।”
“সোহাগ!”
“জি ম্যাডাম!”
“বাজারে যাবে।বাজার থেকে সিজনাল যা সবজি পাবে নিয়ে আসবে।দেশি ছোট মাছের মধ্যে যা পাও ৪-৫ রকমের আনবে।”
“জি ম্যাডাম।”
“বাজার নিয়ে আসলে আমাকে ডাকবে রেনু।”
“জি ম্যাডাম।”
ইরা রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলো। এবার তাকে লিনার ঘরে যেতে হবে।লিনার ঘরের দিকে যেতে গিয়ে ইরা থমকে দাঁড়ায়। কেউ তার নাম নিয়ে কিছু বলছে।ইরার কান কজাড়া হয়ে যায়।
ইকবাল!

“লিনা,লিসেন।এতো ভয় পাবার কিছু নেই।কিছুই হবে না।ইরাকে তুই আর একবার ম্যানেজ করে নে।লাগলে ওর কাছে মাফ চাবি।ওকে একবার শুধু একা পেতে হবে আমার। একবার পেলেই হবে।তোর ঘরে কোনোভাবে একবার নিয়ে আয় তুই।বাকিটা আমি সামলে নিবো।”
“আমার ভয় করছে ভাইয়া।ইরা আমাকে বিশ্বাস করবে না।তাছাড়া ছোট ভাইয়া আমাকে খুন করে ফেলবে।”
“উফ লিনা।কাম ডাউন।এতো অস্থির হওয়ার কিছু নেই।ভেবে দেখ,কাজটা করতে পারলে একটা হিরের রিং পাবি কিন্তু। না করতে পারলে কি আর করার।আমি যেহেতু ওকে টার্গেট করেছি।ওকে আমি শিকার করেই ছাড়বো।”
ইরা বাহিরে দাঁড়িয়ে সবটা শুনে।মুচকি হেসে ইরা নিজেদের রুমের দিকে যায়।ইশতিয়াককে এসব কিছু বলা যাবে না।জানতে পারলে সে কি না কি করে বসে।এই সামান্য কাজ ইরা নিজেই করতে পারবে।আল্লাহর উপর ইরার আস্থা আছে শতভাগ। তিনি ইরাকে কখনো বিপদে ফেলেন নি।এবার ও ফেলবেন না।

ইশতিয়াক বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।কি আশ্চর্য এই মেয়েটা এখনো কেনো আসছে না রুমে?
ইশতিয়াকের শ্বাস প্রশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে আসছে।ইরা ঘরে আসতেই ইশতিয়াক টেনে ওকে বারান্দায় নিয়ে এলো।
ইশতিয়াকের চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে ইরা বললো, “কি হয়েছে? আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?”
“তুমি মানুষ না-কি গাছ ইরা?”
“মানে কী?আমি গাছ হতে যাবো কেনো?”
“আমার তো মনে হয় তুমি গাছ।”
“কেনো?”
“তুমি কাছে না থাকলে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে কেনো তাহলে? মনে হয় পৃথিবী জুড়ে সব শুধু কার্বন ডাই-অক্সাইড। অক্সিজেন শুধু তুমি। তুমি কাছে থাকলেই আমি বাঁচি।”
“ইশ!ভীষণ সস্তা ফ্লার্ট করছেন আপনি। এগুলো ইরা অনেক আগেই শুনে এসেছে।”
ইশতিয়াক নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো, “না ইরা না,এই প্রেমিকের ভালোবাসা নিয়ে তুমি এরকম হাসিঠাট্টা করতে পারো না।আমার বুকটা কেটে যদি দেখাতে পারতাম।তুমি তাহলে বুঝতে তোমাকে এই মন কতটা চায়।”
“অ্যাক্টিং স্কিল একেবারে জঘন্য আপনার।”

ইশতিয়াক ইরার কোমর ধরে ইরাকে টেনে নেয় নিজের দিকে।কপালে চুমু খেয়ে বললো, “অ্যাক্টিং স্কিল বাজে হতে পারে কিন্তু এই হৃদয়ের ভালোবাসা শতভাগ খাঁটি ইরা।তোমাকে আমি ভীষণ রকম ভালোবাসি।”
“জানি আমি সেটা।”
“তুমি আমাকে মেনে নিতে পারছো না, তাই না ইরা?”
ইরা দ্বিধায় পড়ে যায়।
“মিথ্যা করে হলেও বলো যে তুমি ও আমাকে ভালোবাসো ইরা।সত্যি ভালোবাসতে হবে না।তবুও আমার কাছে থাকো।তুমি পাশে না থাকলে আমার সত্যি সাফোকেশন হয়।আমার দুনিয়া বলতে শুধু তুমি এখন।”
“দেখবেন,একদিন আপনি ও আমার পুরো দুনিয়া হয়ে যাবেন।সেদিন আমি ও আপনার মতো করে বলবো আপনাকে ছাড়া আমার সাফোকেশন হয়।”

“আমি মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করে যাবো সেই দিনের ইরাবতী।মৃত্যুর আগ মুহূর্তে ও যদি তুমি আমাকে এই কথা বলো আমার মনে হবে আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ জিনিস পেয়ে গেছি।এরপর আমার আর কোন আফসোস থাকবে না।”
সোহাগ বাজার নিয়ে আসতেই রেনু এলো ইরাকে ডাকতে।ইরা ওর নোটসগুলো দেখছিলো ইশতিয়াক পাশে শুয়ে ছিলো।আসরের নামাজ পড়েছে সে ইরার সাথে।
রেনুর ডাক শুনে ইরা বের হয়ে নিচে গেলো।
শায়লা ড্রয়িং রুমে বসে ফোনে কথা বলছে।ইরাকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখে শায়লার কপাল কুঁচকে যায়।
ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। এসব থার্ডক্লাশ ফ্যামিলিতে বিলং করা মেয়েরা যত হাই সোসাইটিতেই যাক না কেনো এদের রুচি উন্নত হবে না।তা না হলে এই মেয়ের জায়গায় শায়লা হলে বেডরুম থেকে ও বের হতো না।বিলাসিতাকে উপভোগ করতো।সেখানে ও কি-না রান্নাঘরে যাচ্ছে!
গাঁইয়া একটা মেয়ে।

তারিন অবশ্য এমন হবে না।শায়লা সেদিকে আর মনোযোগ দেয় না।তার সময়ের অনেক দাম।এসব মেয়েদের নিয়ে ভেবে সেই সময় শায়লা নষ্ট করবে না।
ইরা ভেতরে ঢুকে প্রথমে সবগুলো বাজার আলাদা আলাদা পাত্রে ঢেলে নিতে বলো।
সোহাগ ৭ রকমের মাছ এনেছে বাজার থেকে। শাকসবজি এনেছে করলা,পুঁইশাক, আলু,পটল,গাজর,বরবটি, টমেটো,ঝিঙে, কাচা মরিচ।

আজকের রান্না ইরা নিজের হাতে করবে ইশতিয়াকের জন্য।বাঙালি নারীদের স্বামীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার একটা অন্যতম মাধ্যম হলো নিজ হাতে ভালো কিছু রান্না করা।
ইশতিয়াক নিশ্চয় অনেক বছর দেশীয় এসব খাবারের স্বাদ পায় না।
হনুফাকে বললো আগে মলা মাছ,চিংড়ি মাছ,কই মাছ,বাইম মাছ কেটে দিতে।
রেনু আর হনুফা সেই কাজে লেগে গেলো। ইরা তরকারি কেটে নিলো।
মলা মাছ,কই মাছ,বাইম মাছ সবগুলোই ইরা রান্না করলো আলাদা আলাদা।কোনো তরকারি দেয় নি এগুলোর সাথে।
আলু,গাজর,বরবটি, ঝিঙে দিয়ে মিক্স সবজি করলো।
চিংড়ি মাছে ভর্তা করলো নিজে শিল পাটায় বেটে।
রাতে খাবার টেবিলে সবাই এলো শায়লা ছাড়া।ইরা রেনুকে পাঠালো শায়লার রুমে গেলো।শায়লা কতগুলো কাগজপত্র নিয়ে বসেছে।
রেনু ডেকে বললো, “ম্যাডাম,আপনারে ছোট ম্যাডাম খাইতে ডাকে।”

“কে?”
“ছোট ম্যাডাম।ইশতিয়াক স্যারের বউ।”
শায়লা অবাক হয়। ইরাকে ওরা ম্যাডাম বলছে?
ইরা তাহলে ওর ওদেরকে হাত করে ফেলেছে।
“আমি খাবো না।”
“ম্যাডাম বলছে,যুদ্ধ করতে গিয়ে যারা লুকিয়ে যায় তারা আসলে কাপুরষ। আপনার নাকি সাহসের অভাব তাই ওনার মুখোমুখি হতে ভয় পান।”

প্রিয় ইরাবতী পর্ব ২৪

শায়লা ক্রুদ্ধ হয়ে বললো, “কী বললি?”
“হ্যাঁ ম্যাডাম।”
“আমি আসছি।”
বড় বড় পা ফেলে শায়লা নেমে এলো সিড়ি দিয়ে।

প্রিয় ইরাবতী পর্ব ২৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here