প্রিয় ইরাবতী পর্ব ২৬

প্রিয় ইরাবতী পর্ব ২৬
রাজিয়া রহমান

সিড়ি বেয়ে শায়লা যখন নামছে তখন হিলের খটাখট আওয়াজে পুরো শেখ বাড়ি আতংকিত হয়ে উঠেছে। শায়লা শেখ,এই এক রহস্যময় নারী।
হাসিব শেখ অসুস্থ হওয়ার পর থেকে যে একা হাতে পুরো সাম্রাজ্য ধরে রেখেছে।
শুরুটা হাসিব শেখ করলেও এরপর সবকিছু শায়লা নিজেই করেছে।নাচতে নেমে ঘোমটা টানার মানুষ শায়লা না উল্টো স্বার্থ হাসিল করার জন্য সবচেয়ে নিচে নামতে ও শায়লার দ্বিধা নেই।টাকার জন্য শায়লা সবকিছু করতে পারে।

সেই স্বার্থ হাসিলের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোয় নিজের ছেলেকে দেশছাড়া করতেও শায়লা দ্বিতীয় বার ভাবে নি।
যদিও হাসিব শেখের তখন পূর্ণ সমর্থন থাকলেও দিন দিন হাসিব শেখ শায়লাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে।
শায়লা অবশ্য সেসব নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়।কারণ এক পুরুষের সঙ্গে রাত কাটানো যা,দশ জনের সঙ্গে রাত কাটানো ও তা।
গাসিব শেখ একজনকে জুড়িয়েছিলো শায়লা একাধিকে গেছে।
নিজের চেয়ার টেনে শায়লা খেতে বসলো।টেবিলে আজকের রাতের মেন্যু দেখে শায়লা ভ্রু কুঁচকে যায়।
মেজাজ নাকের ডগায় রাগ জমা হয় তিরতির করে।
রেগে গিয়ে হনুফাকে ডাকলেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হনুফা,হনুফা!”
“জ্বি ম্যাডাম?”
“এসব কী রেঁধেছিস তুই?”
হনুফা ভয়ে ভয়ে ইরার দিকে তাকালো।ইরা শান্ত সুরে বললো, “আজকর মেন্যু আমি ঠিক করেছি।হনুফা না।”
“তুমি মেন্যু চেঞ্জ করার কে?”
“এটা এখন আমার পরিবার। আমি ঠিক করবো তাই কোন খাবার সবার জন্য ভালো হবে,কোনটা ভালো হবে না।প্রতিদিন একই খাবার মেন্যু খাবারের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয়,একঘেয়েমি আসে খাবারে।”
“এই মেয়ে!কোথাকার পুষ্টিবিদ? কেউ জানতে চেয়েছে তোমার এডভাইস?কোন সাহসে এসব আজেবাজে খাবার রান্না করেছো?”

“সাহস! ওকে সেই সাহস আমি দিয়েছি।ও আমার ওয়াইফ, ওর সম্পূর্ণ রাইট আছে।ওর যা ইচ্ছে তাই করবে। যার ভালো লাগবে খাবে না হলে নিজেরটা নিজে করে খাবে।”
ইশতিয়াকের উত্তরে শায়লা হাসিব শেখের দিকে তাকিয়ে বললো, “আমি শুধু তোমাকে দেখছি।আমার এতো অপমান তোমার হজম হচ্ছে কীভাবে?”
“শায়লা,আমি পাথর হয়ে গেছি লোহা হজম করতে করতে।এখন তাই এসব আমার কাছে কিছুই মনে হয় না। তাছাড়া, অনেক বছর পর আজকে বোধহয় আমি তিন প্লেট ভাত খাচ্ছি।এতো মজার খাবার শেষ কবে খেয়েছি আমি জানি না।”

ইকবাল, ইশতিয়াক, লিনা সবাই-ই খাচ্ছে। ভীষণ আগ্রহ নিয়ে খাচ্ছে সবাই। মাছে ভাতে বাঙালি কথাটা এমনি এমনি আসে নি মনে হয়। বাঙালি দুই দিন মাংস খেলে পরের দিন মাছ ছাড়া খেতে পারে না আর।
ইকবাল শায়লাকে বললো, “না খেলে মিস করবে মা।জাস্ট একবার খেয়ে দেখো মা,তুমি পাগল হয়ে যাবে।”
শায়লা উঠে যেতে গিয়ে ও পারলো না।কারণ উঠে যাওয়া মানে এই মেয়েকে আরো সুযোগ দেওয়া হবে।
শায়লা প্লেটে এক চামচ ভাত নিলো।

ইকবাল বললো, “এক চামচ নিও না,পরে আবারও নিতে লজ্জা পাবে।”
শায়লা বিরক্ত হয়ে ছেলের দিকে তাকায়। ইকবাল হাপুস হুপুস করে খেতে শুরু করলো।
শায়লা বাইম মাছ এক চামচ তুলে নিলো প্লেটে।মুখে দিতেই শায়লার হাত থেকে যায়।
জিভে যেনো বোম ব্লাস্ট হয়েছে। এতো সুস্বাদু লাগছে এই খাবারটা।
শায়লার ইচ্ছে করলো আরো এক চামচ ভাত নিতে।কিন্তু লজ্জায় নিতে পারলো না।
শায়লার খাবার শেষ হতেই ইরা বললো, “তা আন্টি,এবার তাহলে মেনে নিলেন যে আমি এই বাড়ির কেউ হই।”
“কখনো মেনে নিই নি,নেবো না।”
“কিন্তু আপনি তো মেনে নিছেন আন্টি।”
“কখন?”

“এই যে এখন।দুপুর বেলায় খাবার সময় বলেছিলেন শেখ পরিবারের মানুষ বাহিরের মানুষের সঙ্গে একই টেবিলে বসে খায় না।কিন্তু এখন দেখেন যে টেবিলে আমি বসেছি সেই একই টেবিলে হাসিব শেখ, ইকবাল শেখ,ইশতিয়াক শেখ,শায়লা শেখ ও বসেছে।তাহলে কী হলো এখন?”
শায়লা থেমে গেলো।ইরা মুচকি হাসে।ইশতিয়াক মুগ্ধ হয়ে তাকায় নিজের বউয়ের দিকে। কী দারুণ একটা জবাব দিয়েছে তার বউ।বিউটি উইথ ব্রেইনের এক পারফেক্ট কম্বিনেশন।
ইকবাল ইমপ্রেস হলো।এই মেয়েটাকে সে যতটা সহজ ভেবেছিলো,মেয়েটা ততটা সহজ হবে না।
ইকবালের ভালো লাগে। যতো কঠিন পর্বত হয় তাকে জয় করার আনন্দ তত বেশি হয়।
সকালে ইরা তৈরি হয়ে নিলো ক্লাসে যাওয়ার জন্য। ইশতিয়াক ইরাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বের হলো গাড়ি নিয়ে।
লিনা ও বের হয়েছে। ইশতিয়াক ইরাকে নিয়ে বের হয়ে গেলো। লিনা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো। তারপর নিজের গাড়ি নিয়ে বের হলো।

ক্লাসে ইরার পিছন পিছন লিনা ও ঢুকলো।ইরাকে ইশতিয়াকের সাথে আসতে দেখে সবাই মিলে লিনাকে ঘিরে ধরে বললো, “কিরে,কী ব্যাপার? ইরা তোর ভাইয়ের সাথে আসলো যে?”
লিনা দাঁত মুখ কিড়মিড়িয়ে বললো, “ওই বেয়াদবটাকে আমার ভাই বিয়ে করেছে।”
“ওমা!তাই না-কি!”
নীলি,রিমি,ঝুমা,লাবণি সবাই চমকে উঠলো। রিমি লিনাকে জিজ্ঞেস করলো, “তোরা তোর বড় ভাইয়ের আগেই ছোট ভাইকে বিয়ে দিলি?বড় ভাইকে করাবি না?মেয়ে দেখেছিস ওনার জন্য?”
লিনা এক নজর চারজনের দিকেই তাকায়। ওদের উদ্দেশ্য লিনার অজানা না।তাই বললো, “না,ভাইয়া বলেছে সে সময় নিবে বিয়ে করতে।তার পছন্দ আছে বোধহয় কাউকে।”

লিনা চারজনের দিকে তাকায় কথাটা বলে। চারজনের মুখে লজ্জার আভাস।লিনার হাসি পায়। এই বোকা মেয়েগুলোর সাথে শুয়েছে বলে এরা ধরে নিয়েছে এদেরকেই বিয়ে করবে ইকবাল।
ইরা পেছন থেকে ডেকে বললো, “মিথ্যে বলছিস কেনো লিনা?গতকালই তো পাত্রীপক্ষ এলো বিয়ের তারিখ পাকা করতে।ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করার ভয়ে মিথ্যা কথা বলছিস?”
লিনা চমকে উঠে বললো, “তোকে জিজ্ঞেস করেছি আমি? বেয়াদব, লোভী কোথাকার! তোর যোগ্যতা আছে আমার সাথে কথা বলার?”

“না রে লিনা।আমার সে যোগ্যতা নেই।কারণটা আজকে সবার সামনে বললাম না।এখনো তো তোর গ্রাজুয়েশন শেষ হয় নি।এরপর আর মুখ দেখাতে পারবি না ক্লাসে।”
নীলি লিনার হাত চেপে ধরে বললো, “কী বলছে ও?সত্যি তোর ভাই বিয়ে করছে?”
রিমির হাত পা কাঁপছে। কাঁপা গলায় বললো, “কিন্তু উনি তো বলেছেন আমাকে পছন্দ ওনার।”
বাকি কথাটা রিমি বলতে পারলো না লজ্জায়,ভয়ে।
ঝুমা রিমির হাত ধরে বললো, “পাগল হয়ে গেছিস না-কি?উনি আমাকে ভালোবাসেন।”
নীলি বললো, “না আমাকে বলেছে আমাকে ভালোবাসে।”
লাবণি বললো, “আর আমাকে বলেছে আমাকে।”
চারজনেই একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলো।
এ কোন গোলকধাঁধা!

লিনার হাত পা ঘামছে।নীলি লিনার চুলের মুঠি চেপে ধরে বললো, “মিথ্যাবাদী, চুপি চুপি ভাইয়ের বিয়ে করাতে চেয়েছিলি?আমাদের সাথে তাহলে কেনো এমন করেছে তোর ভাই?”
ঝুমা,রিমি,লাবণি ও এগিয়ে এসে চেপে ধরলো লিনাকে।মুহুর্তেই চড়,থাপ্পড়ের ঝড় উঠলো লিনার দুই গালে।ইরা তাকিয়ে রইলো।

প্রিয় ইরাবতী পর্ব ২৫

পাপ বাপকে ও ছাড়ে না এ যে ভীষণ সত্যি কথা।
আশেপাশে অনেকে এসে ভীড় জমালো।কেউ কেউ ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দিলো।
লিনাকে যখন ছাড়ে তখন লিনার গাল লাল হয়ে আছে।নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। ঠোঁট কেটে গেছে।

প্রিয় ইরাবতী পর্ব ২৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here