প্রিয় ইরাবতী পর্ব ২৯
রাজিয়া রহমান
শুক্রবার এগিয়ে আসছে।ইকবালের বিয়ে উপলক্ষে চারদিকে সাজ সাজ রব।
অথচ ইরা জানে সবকিছুই আসলে মেকি।বাড়িতে অতিথিরা আসতে শুরু করেছে।
ইকবালের বড় খালা রাহেলা আর ছোট খালা লায়লাও এসেছে। রাহেলা বোনের অন্ধ ভক্ত।যার অন্যতম কারণ তার ছেলে,মেয়েদের জামাইয়েরা সবাই শেখ বিল্ডার্স,শেখ টেক্সটাইল, শেখ কেমিক্যালে ভালো ভালো পজিশনে চাকরি করে। আর সবকিছুই তার বোনের বদান্যতা।
হাসিব শেখের ভাইয়েরা কেউ-ই আসে নি।ভাই,ভাইয়ের বউয়ের ওপর জমে থাকা ক্ষোভ থেকে কেউ-ই আসে নি।
মানুষ যখন বড় হয় তখন সে চায় একা সে-ই বড় হবে।তার ভাই-বোন কেউ যাতে তার সমকক্ষ হতে না পারে। এই ভেবেই বোধহয় তাদের ভাই কখনোই তাদের সাহায্য করতে চায় নি।
একই মায়ের পেটের তিন ভাই তারা।অথচ একজন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ১০ জন ধনীর মধ্যে একজন অথচ অন্য দুই ভাইকে পরিবার পরিচালনা করার জন্য মিডলইস্টে কাজ করতে হয়।
নিজেদের বয়স হয়ে যাওয়ায় যার যার সন্তানকে ও তারা নিয়ে গেছেন সেখানে। অথচ তাদের ভাই চাইলেই পারতো নিজের ভাইদের,ভাইদের ছেলেদের কর্মসংস্থান করে দিতে।হাজার হাজার মানুষ ওদের কোম্পানিতে চাকরি করে। অথচ নিজের মানুষের জন্য ওদের দরজা বন্ধ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হাসিব শেখ ভাইদের বলতে পারে নি এই সংসারের কোনোকিছু তার হাতে নেই।সে এক প্রকার কাঠের পুতুল হয়ে আছে।নিজেকে কারো চোখে ছোট করতে চায় না হাসিব শেখ।
তা না হলে আরো আগেই তিনি সবকিছু জানিয়ে দয়ে শায়লার নোংরা চেহারাটা সবাইকে দেখিয়ে দিতেন।
হাসিব শেখের ঔষধ নিয়ে এলো শায়লা। শায়লাকে গুনগুন করে গান গাইতে শুনে হাসিব শেখের মনে হলো কোনো একটা বিপদ ঘনিয়ে আসছে।কার বিপদ?
ইরার?
কিন্তু শায়লা কী করবে?
আগে থেকে জানা থাকলে হাসিব শেখ ইরাকে সাবধান করে দিতে পারতো।
শায়লার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে শায়লা মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো, “কী ব্যাপার? এরকম করে দেখছো যে আমাকে?মুগ্ধ হয়ে যে দেখছো না তা বুঝতে পারছি ভালো করে।”
“মুগ্ধতা! তোমার ওপর?হাসালে!”
“তাই না?হাসছো?খুব হাসি পাচ্ছে?”
এগিয়ে এসে হাসিব শেখের ওপর ঝুঁকে পড়ে শায়লা। চোখে আগুন জ্বলে শায়লার।প্রচন্ড ক্ষোভে হিসহিসিয়ে বললো, “সেদিন মনে ছিলো না যেদিন নিজ থেকে আমাকে আরেক পুরুষের রুমে ঢুকিয়েছিস তুই?সেদিনই তো আমি নষ্ট হয়েছি।তুই আমার স্বামী হয়ে যদি আমার ইজ্জতকে ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে ভাবতে পারিস তাহলে আমি কেনো বাদ যাবো?বল তুই?”
হাসিব শেখ উত্তর দিতে পারে না। তিনি যে সূচনা করেছেন তা যে এতো গভীরে চলে যাবে তা ভাবেন নি।এই অপরাধবোধের জন্য ও তিনি এক প্রকার সব সহ্য করে যান।
মুহূর্তেই চেহারায় মিষ্টি ভাব ফুটিয়ে শায়লা বললো, “শোনো,অযথা রাগারাগি চেঁচামেচি লাভ নেই।আমি তোমার গলায় কাঁটার মতো বিঁধে আছি যা তুমি গিলতে ও পারবে না,উগড়ে দিতে ও পারবে না।আমরণ এই কাঁটা গলায় নিয়ে তোমাকে বাঁচতে হবে।এটাই তোমার শাস্তি।”
হাসিব শেখ জবাব দিলেন না।বেঁচে থাকা তার কাছে নরক যন্ত্রণার মতো।
ইশতিয়াক ভীষণ ফুরফুরে মেজাজে ঘুরছে।ইরার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করাই তার এখন একমাত্র লক্ষ্য।
ইরা রান্নাঘরে হনুফা আর রেনুকে মেন্যু ঠিক করে দিচ্ছে।হনুফা আর রেনু দু’জনেই দল পালটে এখন ইরার দলে ভিড়েছে।
এই ম্যাডাম আসার পর ওদের সবার বেতন আগের চাইতে ৩ হাজার করে বাড়িয়েছেন।চুরি চামারি করে লাভ নাই।
ইরা রান্নাঘর থেকে বের হতেই রাহেলা শায়লাকে উদ্দেশ্য করে বললো, “এতো সোনার জিনিস!মাগো মা,শায়লা তোর কলিজাটা অনেক বড়।ছেলের বউরে এতো সোনা দিতেছস তুই?”
শায়লা এক নজর ইরার দিকে তাকিয়ে বললো, “আপা যে কী বলো!ও আমার একমাত্র ছেলের বউ।শেখ পরিবারের একমাত্র বউ।এই পুরো সাম্রাজ্যই তো আমি ওর পায়ের কাছে এনে দিবো।শায়লা শেখের পুত্রবধূ বলে কথা।যেই সেই ঘরের মেয়ে তো না।”
টেবিলের ওপর থেকে একটা আপেল তুলে নিয়ে ইরা আপেলে কামড় বসিয়ে এগিয়ে গেলো শায়লাদের দিকে।শায়লা আশ্চর্য হয় এই মেয়েটার ব্যবহারে। কোনো কথাতেই এই মেয়েকে আঘাত দেওয়া যায় না।
না সে রাগ হয় না তো হিংসা করে আর না তো বিরক্তি।
বরং তার হাসিহাসি মুখের দি তাকালে শায়লার মনে হয় তার এই বাক্যবাণ মেয়েটার কাছে বোধহয় কৌতুকের মতো লাগে,তাকে বোধহয় এই মেয়ে জোকার ভাবে।তাই উল্টো হাসে সে।
ইরা রাহেলার পাশে সোফায় বসে বললো, “খালা,এখানে কতো ভরি গোল্ড আছে?”
লায়লা রসিদটা ইরার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো, “দেখো।আপা আপার ছেলের বউকে সোনায় মুড়ে দিচ্ছে।”
ইরা রসিদটা হাতে নিয়ে বললো, “ও,৪০ ভরি?”
“এমন ভাবে ৪০ ভরি বলছো মনে হয় ৪০ ভরির মূল্য ৪০ টাকা? ৪০ ভরির ওজন জানো?এগুলো সব ২২ ক্যারেটের সোনা।বাপের জন্মে দেখছো এসব?বাপের বাড়িতে তো দেখোই নাই।শ্বশুর বাড়িতে ও পাইবা না।কপাল লাগে।”
ইরা আপেলে কামড় দিয়ে রাহেলাকে বললো, “ঠিক,ঠিক খালা।অতি উত্তম কথা বলেছেন।আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুক এরকম উত্তম কথার জন্য।আমিন।”
রাহেলা কেঁপে উঠলো। সে কী মরে গেছে নাকি এই মেয়ে যে এই কথা বলতেছে?ভীত চোখে রাহেলা শায়লার দিকে তাকালো।
ইরা চোকারটা নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে শায়লাকে বললো, “তা আন্টি,সবকিছুই কী আপনি দিচ্ছেন?যিনি বিয়ে করছেন তিনি কি দিচ্ছেন বউকে?”
লায়লা আড়চোখে তাকায় শায়লার দিকে। শায়লার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
ইকবাল কিছুই করে না এখন পর্যন্ত।সেই তুলনায় ইশতিয়াক ভালো অর্থ উপার্জন করে।
বসে খেলে রাজার ভান্ডার ও ফুরিয়ে যায়। সেখানে ইকবালের এরকম খামখেয়ালীর জন্য শেষ পর্যন্ত ওর কী যে হবে!
শায়লার ফ্যাকাসে মুখের দিকে তাকিয়ে ইরা বললো, “আন্টি,মেয়েটা তো বিয়ে আপনাকে করবে না?যাকে বিয়ে করবে সে কিছু দিচ্ছে না?”
তারপর নিজেই বললো, “ওহ সরি,আমি তো ভুলেই গেছিলাম উনি যে টোটো কোম্পানির ম্যানেজার। বাপের টাকায় গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়ান।”
“আমার ছেলে কী করবে না করবে সেটা নিয়ে কথা বলার তুমি কে?”
“আমি? আমি ইশতিয়াক শেখের বউ আন্টি।কাবিননামা দেখতে চান?তাছাড়া অবশ্যই আমার বলার অধিকার আছে।কারণ যেহেতু আমার স্বামী ও আমার শ্বশুরের সন্তান তাই সমান সমান পাওনা আমার স্বামীর ও আছে।আমাকে তো অবশ্যই হিসাব চাইতে হবে আন্টি।”
শায়লা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইরার দিকে। ইরা আপেল শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “যেহেতু আমার হাজব্যান্ডের এসব পাপের টাকার ওপর কোনো আগ্রহ নেই তাই সেসব আমার হাজব্যান্ড তার ভাগের অংশ আপনার চরিত্রহীন ছেলেকে দান করছে আন্টি।ভয় পাবেন না।”
ইরার কথায় শায়লার পা থেকে মাথার তালু পর্যন্ত জ্বলতে শুরু করে। ইরা মুচকি হেসে খালা শাশুড়ী আর ফুফু শাশুড়ীদের উদ্দেশ্য করে বললো, “চা দেবো আপনাদের?”
বিছানায় বসে ইশতিয়াক ল্যাপটপ কোলে নিয়ে কাজ করছে।ইরা গুটিগুটি পায়ে ভেতরে এলো।ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বসে থাকা সাদা টি-শার্ট পরা ছেলেটার প্রতি ইরার একটু একটু ভালো লাগা জন্মাচ্ছে ইরা বুঝতে পারছে।
কফির মগটা ইশতিয়াকের দিকে ঠেলে দিয়ে ইরা সামনে বসে বললো, “আমি বোধহয় আপনাকে একটু একটু করে পছন্দ করতে শুরু করেছি বেবি হাল্ক।”
ল্যাপটপটাকে কোল থেকে সরিয়ে দিয়ে ইশতিয়াক বউকে কোলে তুলে নিয়ে বললো, “এই খুশিতে আসো একটা ফ্রেঞ্চ কিস করি তোমাকে।”
ইরা সরে গিয়ে বললো, “দূর মিয়া,মোটে বাংলা কিস পান না আপনি আসছেন আবার ফ্রেঞ্চ কিসের আলাপ নিয়ে?
বলি একটা কিসের জন্য কেনো আমাকে ফ্রেঞ্চ যেতে হবে?
তাছাড়া বাঙালি হয়ে ফ্রেঞ্চ কিস করলে পাপ হবে বুঝলেন।আপনি কফি পান করুন,আমি যাই।”
ইশতিয়াক ইরাকে ধরতে হাত বাড়ায়,ইরাকে ধরতে পারে না তার বদলে ইরার ওড়নার এক প্রান্ত ইশতিয়াকের হাতে চলে আসে।অন্য প্রান্ত ইরার গায়ে।
লজ্জায় ইরার দুই গাল লাল হয়ে উঠে। ইশতিয়াক হো হো করে হেসে উঠে বললো, “আমার কাছে আসো ইরাবতী।”
“যাবো না।আপনি ওড়না ছাড়ুন।”
“ছাড়বো না কাছে না এলে।”
“আসবো না বলছি তো।বাহিরে যেতে হবে।”
জোরে টান দিয়ে ইশতিয়াক পুরো ওড়নাটা নিজের কাছে নিয়ে আসে।
ইরা নাক ফুলিয়ে বললো, “আপনি যে ভীষণ খারাপ একটা লোক জানেন?নির্লজ্জ আপনি।”
“তুমি ফুল হয়ে ফুটতে পারো আমি ভ্রমর হতে গেলেই দোষ?তাছাড়া, এই ফুলটা আমার জন্য পাঠিয়েছেন উপরওয়ালা।তার সামনে আমার নির্লজ্জ হতে,বেশরম হতে একটুও লজ্জা করে না ইরাবতী। উল্টো আমি ভীষণ প্রাউড ফিল করি।”
পাকা টমেটোর মতো লাল দুই গালের দিকে তাকিয়ে ইশতিয়াক বললো, “আসো,একটা বাংলা চুমু খাবো।ফরাসি চুমু ইস্তফা দিলাম।”
“কোনো চুমুই হবে না জনাব।আজেবাজে কথা না বলে কফি নিন।ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
“আগে তুমি তারপর কফি।”
“ওড়না কী দিবেন?”
“এই যে বিছানায় রাখলাম,তুমি এসে নাও।”
“আপনি ছুঁড়ে মারুন এখানে।”
ইশতিয়াক ওড়নাটা বিছানার ওপাশে ছুঁড়ে মেরে বিছানায় আরাম করে বসে বললো, “এবার এসে নাও।”
ইরা মুচকি হেসে আলমারি থেকে আরেকটা ওড়না বের করে বললো, “এতটা ও পাগল না ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের সামনে যাবো আমি।আসছি।”
ইশতিয়াককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইরা ছুটে বের হলো। সোফায় বসে ইকবাল বড় খালা ছোট খালার সাথে কথা বলছে।ইরাকে হাসিমুখে সিড়ি দিয়ে নামতে দেখে ইকবালের বুকের ভেতর ঝড় উঠলো।
কথা বন্ধ করে শায়লার দিকে তাকায় ইকবাল।শায়লা চোখের ইশারায় ছেলেকে আশ্বস্ত করে মুখে বললো, “সবুরে মেওয়া ফলে।তোমার মায়ের কাছে চাইছো অথচ পাও নি এরকম কখনো হয়েছে? এবার ও হবে না বেটা।”
ইকবাল নিশ্চিত হতে পারে না। ইকবালের বুকে আগুন জ্বলে। একটা মেয়েকে বিছানায় পেতে তাকে কখনোই এতো ধৈর্য্য ধরতে হয় নি,অপেক্ষা করতে হয় নি।অথচ মন এই মেয়েটার জন্য বিদ্রোহ করছে রীতিমতো।
ইকবালের যন্ত্রণা আরো বাড়িয়ে দিতেই বোধহয় ইরার পেছন পেছন ইশতিয়াক নেমে এলো সিড়ি দিয়ে। তারপর সবার সামনে দিয়ে ইরাকে কোলে করে নিয়ে গেলো সিড়ি বেয়ে নিজের রুমের দিকে।
শায়লা বিড়বিড় করে বললো, “বেহায়া,নির্লজ্জ মেয়ে।আমার দুই ছেলের জীবনে অভিশাপ এটা।এটার যে কী হাল করবো আমি কল্পনা ও করতে পারবে না।”
ইরা অনেকক্ষণ জোরাজোরি করলো কোল থেকে নামার।ইশতিয়াক শান্ত সুরে বললো, “আমি না ছাড়লে আমার হাত থেকে বের হওয়ার মতো শক্তি তোমার নেই জানো তুমি?”
“হ্যাঁ জানি।”
“তাহলে অযথা কেনো মোচড়ামুচড়ি করছো?চলো,যত রকমের,যত দেশের কিস আছে আজকে সব ট্রাই করবো আমি ইরাবতী। নির্লজ্জ যখন বলেছো তাহলে তেমন কাজই করবো আজ।”
ইরা মিষ্টি হেসে বললো, “না না,কী যে ব।ওটা তো এমনিতেই বলেছি।আমার হাজব্যান্ড ভীষণ লাজুক একজন মানুষ।”
“তুমি মানুষ না-কি রাজনীতিবিদ বলো তো?ক্ষণে ক্ষণে মত বদলাও?”
সাগর মনের শান্তির জন্য ৪০ দিনের চিল্লাতে চলে গেছে।মসজিদের ইমাম সাহেবের পরামর্শ মতো নিজের সব কষ্ট যন্ত্রণা ভুলতে,নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে,দুনিয়ার চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সাগরের।
নিয়ম করে প্রতিদিন বোনের সাথে কথা বলে একবার করে। সাগরের অবাক লাগে শারমিন ওকে কল করে না দেখে।
সাগরের কল ও শারমিন রিসিভ করে না।
সাগর, ইরা না থাকায় শারমিন নিজেদের ফ্ল্যাটটা সাবলেট ভাড়া দিয়ে দিলো।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো আর কখনো ছেলে মেয়ে একটাকে ও শারমিন এখানে জায়গা দিবে না।কতো বড় লায়েক ওরা শারমিন দেখবে।
রুমার হাজব্যান্ড মনির এলো সন্ধ্যার দিকে।রুমা জর্জেটের একটা শাড়ি পরেছে।দরজা খুলে দিতেই মনির ভেতরে এসে রুমাকে জড়িয়ে ধরে।বাচ্চারা বাবাকে পেয়ে আনন্দে লাফালাফি করতে শুরু করে। উপমা এক কোণে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে সরে যায় আড়ালে।
মনির বউকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খায়। তারপর বাচ্চাদের বুকে জড়িয়ে ধরে। রুমার মুখ কেমন জ্বলজ্বল করে আনন্দে।
উপমার বুকে আগুন জ্বলে ওঠে।
এমন তো তার ও হতে পারতো।
নিজের সন্তান!
পেটের ওপর হাত রাখতেই উপমার বুকের ভেতর জ্বলে ওঠে। নেই সে এখানে।উপমা নিজ হাতে তাকে শেষ করে দিয়েছে।
শেষ করে দিয়েছে উপমা নিজের সন্তানকে!
কতটা নিষ্ঠুরতার সাথে এরকম করেছে উপমা নিজেই ভেবে অবাক হয়।
রুমার এই ভরা সংসার, বাচ্চাদের বাবাকে নিয়ে আনন্দ, রুমার স্বামীকে পেয়ে উচ্ছ্বাস সবকিছু উপমার গায়ে তীরের মতো বিঁধে। সেই বিষাক্ত তীর,যেই বিষে দুনিয়ার সব সম্পর্ক ভেঙে চুরমার করে দিতে পারে মানুষ।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উপমা।
প্রিয় ইরাবতী পর্ব ২৮
নিজে স্বামীর সাথে সুখের সংসার করছে অথচ তাকে কি-না সবসময় উস্কানি দিয়েছে!
দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে উপমা।কাউকে সুখী হতে দিবে না সে।