প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১২
মারশিয়া জাহান মেঘ
তাশরীফ আজ আর হসপিটালে গেলো না। ফারাবী আর রাহাকে পুলিশ সকালেই ধ’রে নিয়ে গেছে। তাশরীফ মাত্রই বাইরে থেকে এসেছে। খুব ইমার্জেন্সি কাজে তাকে ঘন্টা খানেকের জন্য বাইরে যেতে হয়েছিল। এসেই দেখে আভা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। সে ধীর পায়ে আভার কাছে গিয়ে বলল,
“কি ভাবছিস?”
আভা বলল,
“কিছু নাতো।”
“ফারহাদ কে?”
আভা তাকালো তাশরীফের দিকে। তারপর কি যেনো হলো তার, জ’ড়ি’য়ে ধরে তাশরীফকে। কান্না করতে করতে বলল,
“আমি যদি জানতাম, ফারাবী নিজের বন্ধুর প্রতি’শো’ধ নিতে আমাকে রেখে বিয়ের আসর ছেড়ে চলে গিয়েছে, তাহলে এই গল্পের সমাপ্তি আগেই টেনে যেতো।”
“ফারহাদ ফারাবীর বন্ধু?”
আভা সরে দাঁড়ায় তাশরীফের থেকে। তারপর রুমে গিয়ে বিছানায় বসল। তারপর বলল,
“শুধু বন্ধু বললে হবে, ভাইয়ের থেকে কোনো দিক দিয়ে কম ছিলো না ওরা। ফারহাদ আমাকে অনেক ভালোবাসতো। কিন্তু ছেলেটা কিছুটা ব’খা’টে টাইপের থাকায় আমি কখনোই পছন্দ করতাম না। রাস্তা-ঘাটে আমাকে বিরক্ত করতো। দিন দিন, খুব বাজেভাবে সে আমাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করলো। একদিন…”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“একদিন কি?”
“একদিন কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখলাম, সে বিল্ডিংয়ের ছাঁদে গিয়ে বলছে, ” আভা আমার সঙ্গে এই মুহুর্তে তুমি কাজী অফিসে না গেলে আমি এইখান থেকে লা’ফ দিব।” এইটা কখনো সম্ভব! একটা ছেলেকে হুট করে বিয়ে করা!। আমি তেমন পাত্তা দিইনি বিষয়টাকে। ভেবেছিলাম ফান করছে। কিন্তু সে সত্যি সত্যিই সেইদিন লা’ফ দিয়েছিল।”
“তারপর?”
আভা এক পলক তাশরীফের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“তারপর, হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পরও শেষ রক্ষা হয়নি। খুব বা’জে অবস্থা ছিল বলে, ওকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।”
তাশরীফ আভার দুই গা’লে হাত রাখলো। আভা একটু কেঁ’পে উঠল। তাশরীফ বলল,
“এতে তোর কোনো দো’ষ ছিলো না আভা। ফারাবী ভুল করতে যাচ্ছিলো। এখন ওসব নিয়ে ভাবিস না। এই চ্যাপ্টার এইখানেই বন্ধ করে দে।”
“আভা, আরেকটা মাছ দিই?”
সবাই খেতে বসেছে। নীরা চৌধুরী ঠিক তখনি আভাকে কথাটি বলল। আভা বলল,
” না না, মা। এইটাই খেতে পারছি না।”
রাফসান চৌধুরী বলল,
“খেয়ে নে মা, খেয়ে নে। তোর মামীর মনটা এখন ভাল হয়েছে। আবার কখন কি হয়ে যায় বলাতো যায় না, মানুষের মন বলে কথা।”
“বাবা, আমার মা বলে কথা, মন ভাল সবসময়ই থাকবে। মধ্য দিয়ে মা আমার আর আভার বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি বলেই এমন হয়েছে।”
“তা, নীরা, আবার বড় করে, তোমার মন মত করে, বিয়ে করাবে নাকি ছেলেকে?”
নীরা চৌধুরী অভিমানী স্বরে বললেন,
“আমার কথা কি কেউ শুনে?”
“তোমার মনের ইচ্ছে পূরণ করব নীরা। কয়েকদিন পর। আপাতত ব্যগ-ট্যাগ গুছিয়ে নাও। আর তাশরীফ হসপিটাল থেকে ছুটি নিয়ে নে।”
“কেন বাবা?”
“রাত্রির বিয়ে ঠিক হয়েছে।”
“কি!!”
অবাক হয়ে বেশ উচ্চ স্বরেই ‘কি!” শব্দটা উচ্চারণ করলো আভা।
রাফসান চৌধুরী হাসতে হাসতে বললেন,
“হ্যাঁ। সকালেই তোদেরকে জানাতাম, কিন্তু যা গেলো… বলার সুযোগই হয়নি।”
“রাত্রি আপুতো এখন বিয়ে করতে চাইনি মামা।”
“বিয়েতে রাত্রি মত দিয়েছে বলেইতো ঠিক হয়েছে।”
তাশরীফ ল্যাপ্টপে কাজ করছে সোফায় বসে। আভা ফোনে কথা বলছে রাত্রির সাথে। ওপাশ থেকে রাত্রি বলল,
“কখন আসছিস আভা?”
“আগামীকাল আসছি আপু। তা কিভাবে কিভাবে রাজি হলে বলোতো!”
ওপাশ থেকে রাত্রি লাজুক হেসে বলল,
“মনের মানুষ পেয়েছি তাই।”
“তলে তলে এইসব চলছিলো তাহলে?”
“২ দিনের পরিচয়ে বিয়ে বাবু।”
আভা অবাক হয়ে বলল, “মাত্র দুইদিন!”
“তোকে আসলে সব বলব। ঘুমিয়ে পড় জলদি। সকাল সকাল উঠতে হবে।”
আভা কল কে’টে শুয়ে পড়লো বিছানায়। তাশরীফোর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে কিছুক্ষণ দেখলো তাশরীফকে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো টের পায়নি সে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে, ভূত দেখার মত চমকে উঠে আভা। চিৎকার করে লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়ে সে। তাশরীফ ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বলল,
“চিৎকার দিচ্ছিস কেন?”
“আপ্ আপনি! এই্ এইখানে কি করছেন? বিছানায়!”
“আমার বিছানায় আমি থাকব নাতো কি তোর আত্মা থাকবে?”
“আরে তাশরীফ ভাই, বুঝতে পারছেন? ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী আমার সাথে একই বিছানায়!”
“আমার বউয়ের সাথে আমি থাকব না? আজব কথাবার্তা বলিস তুই আভা।”
আভা গোসল সেরে এসেছে। সে এখন সাজবে। এতদিন পর বাড়িতে যাবে সে এইটা ভাবতেই আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠছে। তারচেয়েও বেশি এক্সাইটেড রাত্রির লাভ স্টোরি শুনতে। রাত্রি শাড়ি খু’লে নতুন শাড়ি পড়তে যাবে এমন সময় তাশরীফ বেলকনি থেকে রুমে আসে। আচমকা তাশরীফকে দেখে হতবাক হয়ে যায় আভা। তাশরীফ রুমে ছিলো না ভেবেই সে সম্পূর্ণ ভাবে শাড়ি খু’লেছিল। “আ’হ’…..” চিৎকার করে উঠতেই তাশরীফ আভার মুখ চে’পে ধরে।
“চিৎকার করছিস কেন আভা?”
“উমমম….”
তাশরীফ বুঝতে পেরে হাত সরিয়ে নেয় মু’খ থেকে। আভা আমতা আমতা করে বলল,
“আপ আপ,আপনি?”
তখনি আভা খেয়াল করল তাশরীফ তার কোম’ড়ে’র দিকে তাকিয়ে আছে। আভা মুহুর্তেই শাড়ি ঝা’প’টে ধরে। তাশরীফ হেঁচকা টা’ন দিয়ে আভাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। শাড়িটা হাত থেকে ফে’লে দেয় আভার। কো’ম’ড়ে শক্ত করে ধরে। আভার চুলে ধ’রে ঠোঁ/টে/র সাথে ঠোঁ/ট মিশিয়ে দেয় সে। কয়েক মিনিট পর আভাকে ছেড়ে দিয়ে বাঁকা হেসে বলল,
“জলদি রেডি হয়ে নাও আভা সোনা, যেতে হবেতো আমার শ্বশুর বাড়ি।”
কথাটি বলে তাশরীফ রুমের বাইরে যেতেই, আভা ঠোঁ/টে হাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে তাশরীফের যাওয়ার পানে বলল,
“এইটা কি হলো আমার সাথে? স্বপ্ন! নাকি সত্যি! ”
নীরা চৌধুরী শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে রাফসান চৌধুরীকে বললেন,
“শুনছ? আমাকে কেমন লাগছে বলোতো।”
রাফসান চৌধুরী নাকের ডগায় চশমাটা এনে তাকালো স্ত্রীর দিকে। তারপর বললেন,
“সবসময় যেমন লাগে তেমনই লাগছে।”
মুখ ফুলিয়ে ফেললেন নীরা চৌধুরী। স্বামীর এমন নিরামিষ জবাব ওনার হজম হলো না। রাফসান চৌধুরী আচমকা হেসে বললেন,
“তোমাকে সেই বিয়ের দিনের মতো সুন্দর লাগছে নীরা। তবে এখনতো বুড়ো হয়ে গেছি আমরা। বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরল কেন তোমায়?”
তখনি রুমে আসে তাশরীফ। বাবাকে বলল,
“বাবা, তোমরাতো রেডি দেখছি। এক কাজ করো, তোমরা আগে আগে চলে যাও, আমি আর আভা পরের গাড়িতে আসছি।”
নীরা চৌধুরী বললেন,
“একেবারেই চলে যাব, খামোখা আগে পরে কেন?”
“মা, আভা এখনো রেডিই হয়নি। আর আমিতো গোসলই করিনি। কিভাবে যাব? আমরা সময় মতো চলে যাব। তোমরা চলে যাও এখন।”
রাফসান চৌধুরী নীরা চৌধুরীকে তাড়া দিয়ে বললেন,
“চলো, নীরা, চলো। নয়তো জ্যামে পড়তে হবে।”
রাফসান চৌধুরী আর নীরা চৌধুরী বেরিয়ে পড়ল। রাফসান উপরতলায় গেলো আভার কাছে। আভা তখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে কানে ঝুমকো পড়ছিল। সে খেয়াল করেনি তাশরীফ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। ঝুমকো পড়ার পর পেছনে ব্লা’উ’জের হুক লাগাতে দিয়ে পড়ল আরেক বিপদে। সে কিছুতেই লাগাতে পারছে না। ঠিক তখনি পি’ঠে কারো কোমল হাতের স্প’র্শ পায় সে। আয়নায় তাকিয়ে দেখলো তাশরীফ। তাশরীফ চুল সরিয়ে হুঁকটা লাগিয়ে নিজেও আয়নায় তাকালো। আভাকে দেখছে সে। আজ যেনো আভাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। কেন এত বেশি সুন্দর লাগছে আভাকে? সে ভালোবাসে বলে? জবাব পেলোনা এই প্রশ্নের। আভা লাজুক স্বরে বলল,
“আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? রেডি হয়ে যান জলদি, মা-বাবা অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। ”
“মা-বাবাতো চলে গেছে।’
” চলে গেছে! চলে গেছে মানে কি?”
তাশরীফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
“আমি কি জানি? আমি যাই গোসল সেরে আসি। এসে রেডি হয়ে একটা জায়গায় যাব। তারপর বিয়ে বাড়িতে।”
“ঘুরতে যাবেন মানে? এমনিতেই হাতে সময় নেই এখন কি বলছেন এইসব?”
“আমি একা না, তোকে নিয়েই যাব।”
“ঘুরতে!”
“হুম।”
“আরে…”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১১
আভাকে কিছু বলতে না দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায় তাশরীফ। আভা চুল বাঁধতে যাবে এমন সময়, তাশরীফ ওয়াশরুম থেকে উঁ’কি দিয়ে বলল,
“চুল বাঁধিস না, তোকে খোলা চুলেই অনেক বেশি সুন্দর লাগে।”
চমকে উঠে পেছনে তাকায় আভা। ততোক্ষণে তাশরীফ আবারও দরজা বন্ধ করে দেয়। আভা বুঝতেই পারছে না তার সাথে কি সত্যিই এইসব করছে তাশরীফ? আভা মিনমিনিয়ে হেসে আনমনে বলল,
“আমার ভালোবাসায় আপনি সিক্ত হয়ে থাকুন ডাক্তার সাহেব। হুট করে ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা গুলো খুব বেশি সুন্দর। ভালো লাগা, ভালোবাসা অতঃপর বিয়ে। জীবন মারাত্মক সুন্দর।”