প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৪
মারশিয়া জাহান মেঘ
অনু কথাটা বেশ রসিকতা নিয়েই বলল। অনুর কথা শুনে তিশা আর প্রাপ্তি ফিক করে হেসে ফেলে। তাশরীফ কোনোরকমে তাদেরকে এইটা ওইটা বুঝিয়ে ওই রুম থেকে বেরিয়ে আসে। তাশরীফ আভার রুমে ঢু’ক’তে’ই চমকে উঠে। আভা হলুদ একটা লেহেঙ্গা পড়েছে। কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। তাশরীফ মনে মনে বলল,
“তোমাকে কি নামে সম্বোধন করব মেয়ে? রুপবতী, মায়াবতী, নাকি গোলাপী সুন্দরী?”
তাশরীফের এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকা দেখে সংকোচ বোধ করে আভা। তাশরীফ বলল,
“এত সেজেছিস কার জন্য? বিয়েটা কি তোর নাকি রাত্রির?”
তাশরীফের কথাকে এভয়েড করল আভা। সে তাশরীফকে এড়িয়ে চলে গেল রুম থেকে। তাশরীফ অবাক হয়ে বলল,
“আজব! মিষ্টি কুমড়োর মত এইভাবে গা’ল মু’খ ফুলিয়ে রেখেছে কেন?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আভা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিজেকে হাসি-খুশি রাখার। এই মুহূর্তে সে কোনো সমস্যা ক্রিয়েট করতে চায় না। তাশরীফকে এড়িয়ে চলতেই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে তাশরীফের সামনেই পড়বে না আর। আভাকে রুমে প্রবেশ করতে দেখে রাত্রি বলল,
“বাহ্, মনেতো হচ্ছে আমি না তুই বউ। কি সুন্দর লাগছে তোকে আভা!”
আভা হেসে বলে,
“আজ রাতে অনুষ্ঠানের পর কিন্তু তুমি ঘুমাতে পারবে না আপু। সারা রাত তোমার আর হবু দুলাভাইয়ের পরিচয় কিভাবে তার গল্প শুনব।”
রাত্রি আভাকে ফিসফিস করে বলল,
“আভা, এদিকে আয় তোকে একটা কথা বলি।”
আভা কান পেতে ধরল বোনের কাছে। রাত্রি বলল,
“রং নাম্বারে পরিচয়।”
“কি! অনেক ইন্টারেস্টিংতো, কি বলল কল দিয়ে?”
“এক্ষুনি সব শুনে ফেললে রাতে কি করবি?”
“হুম হুম তাও ঠিক।”
তখনি আভার মা আসে। আভাকে বলল,
“আভা, রাত্রিকে নিয়ে স্টেজে বসা।”
“এইতো আমি নিয়ে যাচ্ছি মা, তুমি যাও।”
রাত্রিকে নিয়ে আভা বেরুতেই দেখলে ক্যামেরা ম্যান এর জায়গায় তাশরীফ। রাত্রি আভার দিকে এক পলক তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,
“কিরে আভা? ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী ডাক্তারি ছেড়ে আবার ক্যামেরা ধরল কখন?”
আভা কথা বলল না। তাশরীফ বলল,
“ক্যামেরার হ্যান্ডেল সবটুকু আমিই করব রাত্রি। বের হ একটু মুচকি হাসি দিয়ে, আমি ভিডিও শুরু করে দিচ্ছি।”
ক্যামেরার দিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে তাশরীফ আবারও তাকালো আভার দিকে। তারপর রাত্রিকে বলল,
“রাত্রি তোর সাথেরটাকে বল করলার মত মুখটাকে মধুর মত করতে।”
হলুদ ছোঁয়া শেষে, নাচের পালা। তাশরীফ ক্যামেরা নিয়ে এত ব্যস্তই ছিল যে, সে খেয়ালই করেনি আভা নাচতে নেমেছে। ভিডিও ক্লিক করতে করতে হুট করেই আভাকে অন্য একটা ছেলের সাথে নাচতে দেখে চমকে উঠে তাশরীফ। হাতের মুঠো আবদ্ধ করে মনে মনে আওড়ালো, “মিসেস আভা, এর শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে।”
তাশরীফ ক্যামেরা অন্য একটা ক্যামেরা ম্যানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজেও নাচতে গেল আভার সাথে। আচমকা তাশরীফকে দেখে উপস্থিত সবাই ভরকে গেল। তাশরীফ নাচবে! তাশরীফ! ভাবা যায়!
“গালি গালি মে ফিরতাহো, তু কিউ বানকে বানজারা,
আও মেরে দিল মে বাজছা, মেরি আশেক আওয়ারা…..”
গানের তালে তালে নাচছে আভা আর তাশরীফ। সাথে রাত্রির ফ্রেন্ড রোহান। আভা চমকের উপর চমক পেয়ে ভরকেই যাচ্ছে। সে এখনো ভাবতেই পারছে না, তাশরীফ তার সাথে ডান্স করছে।
নীরা চৌধুরী রাফসান চৌধুরীকে কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“এইটা কি আমার ছেলে!”
“না, আমাদের ছেলে।”
“উফস, দেখ, মজা করবে না বলে দিচ্ছি। তোমার ছেলে নাচছে, এইটাও দেখার বাকি ছিল!”
রাফসান চৌধুরী হেসে বলল,
“মাত্রতো শুরু, দেখ, আর কি কি নতুন নতুন দেখা লাগে।”
“তুই ওই ছেলের সাথে নাচতে গিয়েছিলি তাই না? অনেক বাড় বেড়েছে তোর তাই না?”
“ইশশ, হাত ছাড়ুন তাশরীফ ভাই, আমার হাতে লাগছে
আ/হ ছাড়ুন।”
হাত ছেড়ে দেয় তাশরীফ। অতিরিক্ত শক্ত করে ধরাতে হাত লা’ল হয়ে গেছে আভার। তাশরীফ দেয়ালের সাথে আভাকে চা’পি’য়ে বলল,
“তুই ভুলে গেছিস? তুই ম্যারিড? লজ্জা করে না? অন্য কারো সাথে এইভাবে নাচতে?”
আভার খুব ইচ্ছে হলো তাশরীফকে বলতে “কেন লজ্জা করবে? আপনিতো আমাকে নিজের বউ ভাবেনই না।” ইচ্ছে করলেও সে বলতে পারলো না। জবাব না দিয়ে চুপসে রইল।
“আর কখনো যদি তোকে….”
কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি রোহান সেইখানে আসলো। আভাকে দেখে হেসে বলল,
“হেই আভা, তোমাকে অনেক খুঁজতেছিলাম, তুমি এইখানে যে?”
আভা কিছু বলার আগেই তাশরীফ বলল,
“কেন খুঁজছিলে? আভাকে কি দরকার?”
রোহান ব্যাপারটা বুঝতেই পারলো না। আভার দিকে তাকালো এক পলক পরক্ষণেই তাশরীফের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
“উম… একচুয়ালি… আপনাকেতো আমি চিনলাম না।”
“আমি ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী।”
“ওহ হ্যাঁ, রাত্রির কাজিন রাইট?”
“Not Only Cousin, Also Ava’s Husband”
“What!”
“Yes. জানতে না তাই না?”
“আভা! তোমার বিয়ে হয়ে গেছে? রাত্রিতো আমাকে বলেনি।”
“আসলে রোহান ভাইয়া, হঠাৎ করেই…”
তাশরীফ রোহানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“পরে কথা হবে, এখন আসি। চল আভা।”
তাশরীফ আভাকে নিয়ে চলে আসলো সেইখান থেকে। আভা মিনমিনিয়ে বলল,
“ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী, জেলাস হয় অনেক তাই না? অনেক বেশি জেলাস হয় আমাকে অন্যের সাথে দেখলে? এইবার থেকে যা দেখলে আপনি জেলাস ফিল করবেন, তাইই করব। ইয়াহ… আই উইল ডু ইট।”
“তুই বালিশ নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?”
“উপরে।”
“আজব! তুই উপরতলায় কেন যাবি? আমি এইখানে।”
“আপনি এইখানে হলে আমি কি করব তাশরীফ ভাই? আজকে আমি রাত্রি আপুর সাথে ঘুমাব।”
“রাত্রির সাথে তুই গিয়ে কি করবি?”
“কিভাবে দুলাভাইয়ের সাথে সম্পর্ক হলো সেই গল্প শুনব না? আর আজ বাদে কাল আপু চলে যাবে, গিয়েতো থাকতেই হবে।”
তাশরীফ আর বাঁধা দিলো না। আভা চট করে বালিশ নিয়ে চলে গেল উপরতলায়।
আভাদের বাড়িটা গ্রামের মাঝে বেশ বড় বাড়ি। মধ্য দিয়ে উঠোন, গোলাকারে নিচতলা করা আর উপরতলা। চারিদিকে গাছগাছালি।
“হুট করেই একদিন আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। আমি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা ছেলে বলে উঠল, ” আপনি কি কোনো ইয়াং মেয়ে? আপনার বাড়ি কোথায়? আপনি কি আনম্যারিড? একচুয়ালি বাসা থেকে বিয়ের ভীষণ চা’প দিচ্ছে। আমি দুদিন প্রেম করে হলেও কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। কাজ নিয়ে এতটাই সিরিয়াস ছিলাম, যে জীবনে কখনো প্রেম-টেম করিনি।”
রাত্রি থামতেই আভা উ’ত্তে’জি’ত কন্ঠে বলল,
“তারপর, তারপর?”
“তারপর আর কি? এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলেই থামলো সে। প্রথমত কোনো ছেলের এমন কথায় আমি বেশ অবাকই হলাম। জানি না, ছেলেটার কথায় কি ছিল, তবে সত্যি বলতে ফান হিসেবেই আমি দুদিন কথা বলি, তারপর ছবি আনা নেওয়া। দেখেই ভালো লেগে গেল। আমারতো বিয়ে করতেই হতো। কাজেই আমিও রাজি হয়ে গেলাম। দিয়ে দিলাম ঠিকানা।”
“এত ইন্টারেস্টিং লাভ, দুদিনের মাথায় আবার বিয়ে! আমি এই প্রথম দেখলাম আপু।”
এইদিকে…
মধ্য রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় তাশরীফের। সে জেগে বের হয়ে আসে উঠোনে। উঠানে দাঁড়িয়ে উপরতলায় তাকালো সে। কি হলো যেন, সে রাত্রিকে কল দিল।
রাত্রি আর আভা কথা বলছিল, হুট করেই তাশরীফের কল দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠল। রাত্রি আভাকে বলল,
“তাশরীফ ভাই কল দিয়েছে, এত রাতে? নে কল ধর।”
“আমি পারব না আপু, তুমিই ধরো।”
“ইশ আভা ধর না, হয়তো কোনো কিছু লাগবে।”
আভা কল ধরতেই ওপাশ থেকে তাশরীফ বলল,
“জলদি একটু বারান্দায় আয়তো আভা।”
আভাকে কোনো কিছু বলার সুযোগ দিলো না সে। সাথে সাথেই কল কে’টে দিল।
“কিরে কি বলল?”
“বারান্দায় যেতে।”
রাত্রি ঢং করে হেসে বলল,
প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৩
“যা যা, তোকে ডাকছে। তোকে ছাড়া বোধ হয় ঘুম আসছে না তার দু চোখে।”
তাশরীফ দাঁড়িয়ে আছে উঠোনে। পরিবেশ বেশ গা ছমছম’ময়। ঠান্ডা, শীতল পরিবেশ। চারিদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ। আভাকে বারান্দায় আসতে দেখতেই, তাশরীফ এক ধ্যানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। সে আবারও কল দিল। রাত্রির ফোন আভার হাতে থাকায় সে কল ধরে তাকিয়ে তাকিয়ে বলল,
“ডাকলেন কেন?”
“তোকে দেখতে।”