প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৭

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৭
মারশিয়া জাহান মেঘ

চিঠিটা পড়ে চমকে উঠে আভা। এইটা কি ছিল! তার মানে! ইশশ কি ভুলটাই না করলাম।
আভা অনু সূচনায় কাতরে উঠছে। তড়িঘড়ি করে সে রুমে গিয়ে ফোন হাতে নেয়। তাশরীফের নাম্বারে কল দিতেই ফোন অফ পাচ্ছে সে। খুব বড় একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়ে গেল।
আভা রাফসান চৌধুরীকে কল দিল।
ওপাশ থেকে কল ধরতেই বলল,
“বাবা, তাশরীফ ভাই কোথায়?”
“হসপিটালে।”
“ফোন অফ কেন?”

“তোর সাথে রাগ করেই বোধহয় করেছে। আজ হসপিটাল থেকে ফিরে ৪ দিন আর যাবে না। কারণ বিয়েতো তোদের। বুঝলি মা? আমরা না বুঝেই ছেলেটাকে কষ্ট দিলাম।”
এপাশ থেকে আভার শব্দহীন কান্না অনুভব করলেন রাফসান চৌধুরী। শান্ত স্বরে বললেন,
“সব ঠিক হয়ে যাবে মা, কাঁদিস না। তাশরীফের জে’দ বেশি। একসময় রাগ দমিয়ে তোকে ঠিকিই কল দিবে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“শুনছ? আভা কিছুই খাচ্ছে না। খামোখা ছেলেটাকে ভুল বুঝে এখন নিজে শা’স্তি ভো’গ করছে।”
আভার মা স্বামীকে কথাটি বলতেই তিনি অবাক হয়ে বললেন,
“কি বলো! না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবেতো। আজ বাদে কাল গাঁয়ে হলুদ। আভা কি বুঝছে না? একটা সময় সব ঠিক হয়ে যাবে। আরতো মাত্র ৩/৪ দিন। এরপরইতো বিয়ে।”
পাঠান সাহেব কথাটি বলতেই আভার মা স্বামীর পাশে গিয়ে বসলেন। বললেন,
“মান অভিমান আছে বলেই সম্পর্ক সুন্দর।”

সারাদিন ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেছে তাশরীফ। গোসল সেরে বিছানায় এসে বসল সে। রুমটা কেমন ফাঁ’কা ফাঁ’কা লাগছে আভাকে ছাড়া। এই কয়দিনে মনের অজান্তে মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলে সে বোধহয় ভীষণ অন্যায় করেছে। নয়তো এত যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে কেন?
নীরা চৌধুরী রুমে আসলেন। ছেলেকে চিন্তিত থাকতে দেখে বললেন,
“কি হয়েছে তাশরীফ? কি নিয়ে ভাবছিস?”
মায়ের কন্ঠস্বর শুনে চোখ তুলে তাকায় সে।

“মা, ফুপ্পি আম্মু কল দিয়েছিল? ওইদিকে সব ঠিক আছে?”
নীরা চৌধুরী কাশি দিয়ে গলা ঝাড়লেন। ছেলের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে বলল,
“তুই কি কোনোভাবে আভা কেমন আছে ওইটা জানতে চাচ্ছিস?”
তাশরীফ মায়ের হাত দুটো মুঠো করে ধরে নিজের পাশে বসায়। হেসে বলল,
“ওটাই মা। আভার কথাই জানতে চাচ্ছি।”
“কা’ন্না’কাটি করে একাকার মেয়েটা। আজ নাকি সারাদিন কিছু খায়ওনি। এমন জে’দ ধরে কি করবি বলতো? দে না.. একটা কল।”

তাশরীফ মায়ের কথাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে বলল,
“মা, ক্লান্ত লাগছে। খাবারটা রুমে দিয়ে যাওতো। খেয়ে শুয়ে পড়ব। সকালে আবার হসপিটালে যেতে হবে।”
নীরা চৌধুরী বুঝলেন ছেলেকে এইসব বলে কাজ হবে না। কিন্তু তিনি অবাক হলেন। সকালে হসপিটালে যাবে মানে! আগামীকাল থেকেতো এ বাড়িতে অনুষ্ঠান। অতিথিরা এসে ভীড় জমাবে এ বাড়িতে। বর থাকবে না! তিনি বললেন,
“তুইতো কয়েকদিন হসপিটালে যাবি না বলেছিলি। বলিসনি কাউকে? যে তোর বিয়ে অনুষ্ঠান করে পালন করা হচ্ছে আবার।”

” মা, বিয়ের দিন বিয়ে করতে যাব, গাঁয়ে হলুদের দিন সময় মতো স্টেজে বসব। খামোখা সারাদিন বাসায় থাকব কেন?”
দ’মে গেলেন মিসেস নীরা চৌধুরী। ছেলের সাথে কথায় না পেরে বললেন,
“আচ্ছা আমি গিয়ে বরং খাবারটা নিয়ে আসি।”
মিসেস নীরা চৌধুরী চলে যাওয়ার পর তাশরীফ ফোনটা হাতে নেয়। মা যে তাকে বলল, কল দিতে, সে কিভাবে কল দিবে? সে যে এখন রা’গের মাঝে আছে। পুরো কথা না শুনে কিভাবে নিজে নিজেই ডি’ভো’র্সের কথা ভেবে নিলো আভা? আসলে সে বাসায় থাকবে না কারণ বাসায় থাকলেই আভাকে অনেক বেশি মিস করবে। তাই হসপিটালে যাবে।

তাশরীফ মিনমিনিয়ে বলল,
“আভা কাঁদছে!” একটা কল কি ফুপ্পি আম্মুকে দিব?”
ভাবতেই ফোনের লক খু’লে সে। লক খু’ল’তেই ঝলমল করে উঠলো আভার হাসি মুখের ছবিটি। আভাতো জানেই না, তাশরীফের মনে সে কত আগেই জায়গা দখল করে রেখেছে। তাশরীফ কল লা’গা’ল তার ফুপ্পি আম্মুকে।

“আপনি কেন এমন করছেন তাশরীফ ভাই? কিভাবে পারছেন আমার সাথে কথা না বলে থাকতে। সারাটা দিন গেলো একটাবারও কল দিতে পারেননি আমাকে? এত ব্যস্ত আপনি! আমি না হয় না বুঝে একটা ভুল করেই ফেলেছি তাই বলে এত ভাবে ক’ষ্ট দিবেন? আমি ম’রে গেলেই আপনি শান্তি পাবেন তাই না?”
কা’ন্না করতে করতে কথাগুলো ফোনের ওপাশ থেকে বলছিলো আভা। তাশরীফ বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে আভার কথা শুনে। সে কল দিয়েছিল তার ফুপ্পি আম্মুকে। আভার সামনে ফোন থাকায় হুট করে তাশরীফের নাম্বার দেখে তড়িঘড়ি করে সে কল রিসিভ করে। কে জানতো! আভাই কল ধরবে।
তাশরীফ রে’গে বলল,

“ম’রার কথা মুখে আনার সাহস কি করে হয় তোর আভা?”
ওপাশ থেকে শুধু কা’ন্নার শব্দ আসছে। নেই কোনো জবাব। তাশরীফ আবারও বলল,
“ম’র’তে হলে তোকে এই তাশরীফ চৌধুরীর বু’কেই ম’রতে হবে। ম’রা’র অনেক শখ তোর তা’ইনা? রেডি থাক তোকে আমিই মে’রে ফেলব। তোর আর কষ্ট করে রশি কিনতে হবে না ফ্যানে ঝু’লা’নো’র জন্য।”
তখনি আভার রুমে তার মা আসে। এসে মেয়েকে ফোন হাতে নিয়ে কাঁদতে দেখে উ’ত্তে’জ’নায় মেয়ের কাছে গেলেন। বিষয়টা বুঝতে এক মিনিট সময় লাগলো ওনার। ফোনটা হাত থেকে নিয়ে কানে ধরতেই বলল,

“তাশরীফ!”
ফুপ্পি আম্মুর কন্ঠ শুনে তাশরীফ বলল,
“ফু্প্পি আম্মু, ফোনের সাউড স্পিকার বাড়াও একটু।”
লাউড স্পিকার বাড়ালেন তিনি। ওপাশ থেকে আভা তাশরীফের দাম্ভিক কন্ঠে শুনতে পেলো,
“ফু্প্পি তাকে বলো জলদি খেয়ে নিতে। না খেয়ে থেকেছে আবার শুনলে, আমার চেয়ে খা’রা’প কাউকে সে দেখবে না। আফটার অল সে ডক্টর তাশরীফ চৌধুরীর ওয়াইফ। না খেয়ে রো’গী ব্যক্তিকে বিয়ের দিন মেকআপ করলেও সুন্দর লাগবে না।”

আভার মা হাসবে নাকি কাঁ’দ’বে ভেবে পেলেন না ভাই ছেলের কথায়। আভা চোখের পানি মুখে ফোনের কাছে মু’খ নিয়ে মাকে বলল,
“মা, তাকেও বলে দাও, আমি মিসেস তাশরীফ চৌধুরী। আমি যেহেতু বলেছি আমি খাব না, তার মানে আমি খাবই না। আমি না খেয়ে থাকলেও কারো যায় আসে না। আর মেক আপ করব না বিয়েতে। রো’গী’কে ডাক্তার বিয়ে করলে করবে না করলে নেই।”

মধ্য রাতে তাশরীফকে নিজের রুমে দেখে চমকে উঠে আভা। তাশরীফ ব্ল্যাক কালার শার্ট পড়েছে। হাতা বোল্ড করা। হাতে ব্রাউন কালারের ঘড়ি। শার্টের নিচে ব্ল্যাক টিশার্ট। কালোতে এত সুন্দর লাগে মানুষকে!
ভূ’ত দেখার মত চমকে উঠে আভা। আ’হ’হ’হ করে চিৎ’কা’র করতেই সাথে সাথে তাশরীফ মু’খ চে’পে ধরে আভার।
“এত চি’ৎ’কার কিভাবে করিস বলতো? তোর দ্বারাই এইসব সম্ভব।”
“আপ্ আপনি! এইখানে! কিভাবে সম্ভব?”
তাশরীফ আভাকে ছেড়ে খাবার আনপ্যাক করতে শুরু করল। আভা চোখ বড় বড় করে হেঁটে হেঁটে তাশরীফের কাছে গেল। বলল,

“বলছেন না কেন!”
“কল কা’টা’র সাথে সাথেই গাড়িতে উঠেছি। মানুষেরতো আবার মুখে ভীষণ কথা ফুটেছে।”
আভা গা’ল ফুলিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। গা’লে দুই হাত রাখলো সে। তাশরীফ খাবারের প্লেট সামনে নিয়ে মেখে আভার দিকে এগিয়ে বলল,
“হা কর।”
“আমি খাব না।”
“দেখ আভা, রা’গ কিন্তু যায়নি এখনো। খেতে বলছি খা।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৬

তাশরীফের দাম্ভিক কন্ঠ শুনে হা করল সে। তাশরীফ ধীর কন্ঠে বলল,
“ওনাকে খাওয়াতে আমাকে আসতে হলো এইখানে। মেয়েরা এত রং তা’মা’শা কিভাবে করে!”
“রং তা’মা” শা করলে যদি এমন কেয়ার পাওয়া যায় তাহলে রং তা’মা’শায় করা উচিৎ।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৮