প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৬
মারশিয়া জাহান মেঘ
“আমি তোমাকে কল ব্যাক করব বলেছিলাম না ফারাবী?”
ওপাশ থেকে ফারাবী বিরক্ত কন্ঠে বলল,
“তুমি কি এখন তাশরীফের সাথে আছ?”
“ছিলাম তাশরীফের সাথে। ভাগ্যিস বেরিয়েছিলাম। আমাকে দেখেছিলে ভার্সিটিতে?”
“না, তুমি বোধহয় গাড়িতে ছিলে। শুনো রাহা, যেকোনো মূল্যে এখন আমি আভাকে আমার করে চাই। I Want the Girl, at any Cost.”
“এত যেহেতু ভালোবাসা, তাহলে কেন বিয়ের আসর থেকে উঠে পড়লে? তোমার একটা ভুলের জন্য আমি তাশরীফকে হারাতে বসেছি।”
“রিভেঞ্জ.. রাহ, ইটস এ রিভেঞ্জ।”
“এখন কোথায় গেল তোমার রিভেঞ্জ ফারাবী?”
“রাহা, তুমি ভুলে যেওনা আমার হেল্প ছাড়া তাশরীফকে তুমি কখনো পাবেনা।”
রাহা চুপ হয়ে গেল। আসলেইতো ফারাবীকে ছাড়া সে তাশরীফকে কখনো নিজের করে পাবেনা।
“কি করতে হবে বল?”
“আজ রাতে দেখা কর আমার সাথে।”
“কোথায়?”
“লোকেশন মেসেজ করে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
“ওকে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কল কাটতেই পেছন ফিরে তাশরীফকে দেখে চমকে উঠে রাহা। আমতা আমতা করে বলল,
“তাশ্ তাশর্ তাশরীফ তুমি এইখানে! কখন বেরুলে?”
“কার সাথে তুমি কথা বলছিলে রাহা? কোথায় যাবে রাতে?”
রাহা জোরপূর্বক হেসে বলল,
“আমার একটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাব তাশরীফ।”
“দাঁড়াও আভা।”
পেছন ফিরে তাকাতেই ফারাবীকে দেখে চোখ মুখ কঠিন করল আভা। সে তাশরীফের জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল কলেজ শেষে। কোথা থেকে ফারাবী আসলো সে ভেবে পাচ্ছেনা।
“আভা….”
“তুমি আমাকে কেন ডাকছ ফারাবী? সকালের থা’প্প’ড়’টা এত জলদি ভুলে গেছ?”
“আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।”
“ল’জ্জা করেনা তোমার? একটা বিবাহিতা মেয়েকে বি’র’ক্ত করতে?”
“না করেনা। বিকজ আই লাভ ইউ।”
কথাটির বলার সাথে সাথে ফারাবীর ক’লা’র চে’পে ধরে তাশরীফ। ঘু’ষি দিতে দিতে বলল,
“নেক্সট টাইম আভার পেছনে তোকে দেখলে, আই জাস্ট কি’ল ইউ ফারাবী… জাস্ট কি’ল ইউ।”
আচমকা তাশরীফ এইভাবে চলে আসবে তা ভাবতে পারেনি আভা। আভা ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,
“স্টপ দিজ তাশরীফ ভাই। চারিদিকে সবাই তাকিয়ে আছে। ছাড়ুন ওকে।”
ফারাবীকে ছেড়ে দিতেই, ফারাবী শার্টের কলার পেছনে নিতে নিতে বলল,
“ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী খুব শীঘ্রই তুমি এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে। এইটা ফারাবী রাজের Challenge.”
বাসায় প্রবেশ করতেই কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা উপরতলায় চলে যায় তাশরীফ। তার পেছন পেছন বাসায় ঢু’কে’ছে আভা। রাফসান চৌধুরী বসে বসে চা খাচ্ছিলেন। সাথে ছিলেন, নীরা চৌধুরী। রাফসান চৌধুরী ছেলের এমন হাবভাব দেখে আভাকে বলল,
“আভা… কি হয়েছে? তাশরীফ এমন করছে কেন?”
আভা উপর তলার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল,
“ক্ কই মামা, কিছু হয়নিতো।”
নীরা চৌধুরী কপট রা’গ নিয়ে বললেন,
“শুধুমাত্র তোমার জন্য আমার ছেলেটার আজ এই অবস্থা। কি জানি, কি করেছ। যার জন্য তাশরীফ এতটা রে’গে আছে।”
আভা নিচু স্বরে বলল,
“আমি সত্যিই কিছু করিনি মামী।”
“এই মেয়ে একদম ত’র্ক করবেনা। যাইতো…. গিয়ে দেখি, ছেলেটার কি হয়েছে। নীরা বেগম উঠে দাঁড়াতেই রাফসান চৌধুরী আভাকে ন’র’ম কন্ঠে বললেন,
“আয় মা, আমার পাশে বস।”
আভা গিয়ে মামার পাশে বসল। রাফসান চৌধুরী মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“কি হয়েছে?”
আভা সব ধীরে ধীরে বলল রাফসান চৌধুরীকে। রাফসান চৌধুরী মনোযোগ দিয়ে শুনলেন সবটা।
“তাহলে এই ব্যাপার?”
আভা চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,
“হ্যাঁ।”
“যা হচ্ছে তা খারাপ হলেও তোদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা ভালোই হবে।”
মামার কথা বুঝতে পারলোনা আভা। সে কোন ভালোর কথা বলছে?
চুপচাপ বসে আছে আভা। সে বিছানায় তাশরীফ সোফায়। সে ল্যাপ্টপে কিছু করছে। আভা একটু পর পর তাকায় তাশরীফের দিকে। তাশরীফের হেলদোল নেই। সে নিজের মতো করে নিজের কাজ করছে।
“শুনছেন?”
তাশরীফ তাকালোনা আভার দিকে। আভা আবার বলল,
“তাশরীফ ভাই শুনছেন?”
ল্যাপ্টপের দিকে দৃষ্টি রেখেই তাশরীফ বলল,
“কি হয়েছে?”
“আপনি এমন করছেন কেন?”
“কেমন করছি?”
“এই যে বাসায় আসার পর থেকে কথা বলছেন না।”
“তোর সাথে আগে কি অনেক কথা বলতাম?”
আভা না বোধক মাথা নাড়াল।তাশরীফ বলল,
“ফারাবীকে দেখলে, মাথা গ’র’ম করাটা ওর প্রতি তোর দূর্বলতা প্রকাশ করে। কাজেই এমন না করলেই বোধ হয় ভাল। আর আরেকটা কথা, এখন তুই আভা নয়, মিসেস আভা চৌধুরী। নিজেকে একটু হলেও বদলা।”
আভা চ’ট করে গিয়ে তাশরীফের পাশে বসল। বেশ উৎফুল্ল নিয়েই বলল,
“আপনি ভালোবেসে কাছে টা’ন’লে আমি নিজেকে একটু নয়, তাশরীফ ভাই, সবটুকু বদলে ফেলব।”
“ফারাবী…”
ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রাহার দিকে তাকাল ফারাবী।
“এতক্ষণ কেউ কাউকে ওয়েট করায় রাহা?”
“কাম অন ফারাবী, আমি একটু আমার আংকেলের বাসায় গিয়েছিলাম। হেইই দেখি দেখি… তোমার গা’লে কালো দা’গ কিসের?”
ফারাবী সঙ্গে সঙ্গে হাত দিয়ে ঢে’কে ফেলল তার গা’ল। বুঝতে দিলোনা তাশরীফ তাকে আ’ঘা’ত করেছে। কথা এড়াতে বলল,
“ওইটা কিছুনা। বসো এইখানে।”
বসল তারা দুজন। রাহা বলল,
“তোমার জন্য আমি লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ব্যাক করেছি। কিন্তু এসেই দেখছি সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তাশরীফ আভার প্রতি অনেক বেশি কেয়ারিং ফারাবী। আমি চিনতেই পারছিনা তাশরীফকে।”
“রাহা, এতটা কেয়ারিং হতে দেওয়া যাবেনা তাশরীফকে। শুনো আমার কথা মনোযোগ দিয়ে। তুমি এমন এমন কাজ করবে তাশরীফের সাথে। যাতে, আভার স’ন্দে’হ হয়। তাশরীফের প্রতি ভালোবাসা না সৃষ্টি হয়।”
“তারপর?”
“তারপরইতো জমবে খেলা। লিসেন, কালকে একটা পার্টি আছে। ওই পার্টিতে আমাদের কোম্পানি ইনভাইটেড। মানে, ওই পার্টিতে বড় বড় বিজনেসম্যান ইনভাইটেড আছে। আ’ম শিউর আভা আর তাশরীফও ওই পার্টিতে আসবে। বিকজ, তাশরীফের বাবাতো যাবেইনা।”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৫
“ওইখানে গেলে কি হবে?”
“যা হবে, তা ডক্টর তাশরীফ চৌধুরীর পুরো ক্যারিয়ার ফিনিশড হয়ে যাবে।”
এইটা বলেই বাঁকা হাসে ফারাবী।