প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৭
মারশিয়া জাহান মেঘ
আভার দিকে এক পলক তাকালো তাশরীফ। মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে। কখন কি বলে ফেলে আবেগের বশে তা হয়তো আভা জানেইনা। আচ্ছা আভা কি কোনোভাবে তাশরীফের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছে?
কথাটি ভাবতেই তাশরীফ বলল,
“দূ’র্ব’লতো আভাকে হতেই হতো। আগ বাড়িয়ে মানিয়ে নিচ্ছে, সমস্যা কোথায় তাতে?”
তখনি তাশরীফের ফোনে একটা কল আসে। তাশরীফ রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলল,
“হ্যালো, ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী…”
তাশরীফ পেছন ফিরে তাকালো আভার দিকে। না, সে ঘুমিয়েই আছে। তাশরীফ ফিসফিস করে বলল,
“ওদিকের খবর কি? কিছু জানতে পেরেছ?”
“ডক্টর, আপনার সন্দেহ একদম ঠিক।”
তাশরীফ বাঁকা হেসে কলটা কা/ট/লো। মিনমিনিয়ে বলল,
“গ্রেট সারপ্রাইজ কামিং সোন।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই আভা দেখল তাশরীফ রুমে নেই। আভা হাই তুলতে তুলতে বলল,
“ডক্টর সাহেব কোথায় গেলেন?”
সে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে যায়। ফ্রেশ হয়ে আয়নায় নিজেকে একপলক পরখ করে নিচ তলায় যায় সে। রাহা সোফায় বসে নীরা চৌধুরীর সাথে কথা বলছে। আভা রাহাকে দেখেই মামাকে বলল,
“মামা, তাশরীফ ভাই কোথায়?”
“হসপিটালে গেছে। আয় মা, পাশে আয়।”
আভা গিয়ে বসল মামার পাশে৷ তারপর রাহাকে দেখিয়ে দেখিয়ে বলল,
“যাওয়ার আগে তাশরীফ বলে গেছে বিকেলে যেন সুন্দর করে সেজে থাকিস। আজ তোরা একটা পার্টিতে ইনভাইটেড।”
রাহা তখন বলে উঠল,
“আংকেল, আপনি কি কোনোভাবে খান ইন্ডাস্ট্রির পার্টির কথা বলছেন?”
রাফসান চৌধুরী নাকের ডগা থেকে চশমাটা একটু উপর দিকে নিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, কেন? তুমি জেনে কি করবে?”
রাফসান চৌধুরী খোঁ’চা মেরে কথাটি বলেছে তা বুঝতে পেরেছে রাহা। রাহা তাও বলল,
“ওইখানের ইনভাইটেশন কার্ড আমিও পেয়েছি আংকেল।”
ভ্রু কুঁচকে তাকালেন রাফসান চৌধুরী, আভাও মামার দিকেই তাকাল। তারপর আভা বলল,
“আপনি কিভাবে কার্ড পাবেন আপু? বাংলাদেশেতো আপনার কেউ নেই।”
রাহা থতমত খেয়ে গেল। হুট করেই বলল,
“থাকেনা কে বলল? আমার একজন আংকেল থাকে। তিনি যেতে পারবেনা বলে, আমাকে পাঠাবেন।”
“আমরা যেইখানে যাই, সেইখানেই এই মেয়েটার কেন যেতে হবে?”
কথাটি বেশ মিনমিনিয়েই কথাটি বলল আভা।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো তাশরীফ। একটু আগেই সে হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরেছে। আভার দিকে তাকাতেই দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল তার। কালো রংয়ের শাড়ি পড়েছে আভা। চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে। চোখে কাজল ঠোঁ/টে গোলাপি লি/প/স্টি/ক। আভা পেছে তাকিয়ে দেখল তাশরীফ তার দিকে তাকিয়ে আছে। আভা মাথা নিচু করে ফেলল ল’জ্জা’য়। তাশরীফ কাছে আসে আভার। আভার ল’জ্জা মাখা হাসি দ্বিগুন হয়ে যায়। তাশরীফ নে’শা’লো কন্ঠে বলল,
“এত সেজেছিস কেন? কাকে দেখানোর জন্য?”
আভা ভুলবশত বলে ফেলল,
“আপনাকে দেখানোর জন্য।”
“তো পার্টিতে কি একা আমি থাকব?”
আভা আমতা আমতা করে বলল,
“না ইয়ে…মানে,…
” কি ইয়ে ইয়ে করছিস?”
“মিসেস চৌধুরী আমি, সুন্দরভাবে গেলে আপনারইতো সম্মান বাড়বে তাশরীফ ভাই। সবাই বলবে, ওই দেখুন দেখুন, এইটা চৌধুরী বাড়ির একমাত্র ছেলের বউ।”
তাশরীফ আর আভা পার্টিতে এসেছে। তাদের সাথে এসেছে রাহা। আভা ফারাবীকে পার্টিতে দেখে অবাক হয়ে বলল,
“তাশরীফ ভাই দেখুন… ফারাবী!”
তাশরীফ এক পলক তাকালো ফারাবীর দিকে। আভার হাত ধরে বলল,
“সামনে চল, ফারাবী এইখানে থাকবেই। কারণ ওর বাবাও একজন বিজনেসম্যান।”
তখনি একটা ইয়াং ছেলে আসল তাশরীফের কাছে। তাশরীফকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“হেই তাশরীফ, হাউ আর ইউ?”
“হেই শিথিল। আ’ম ফাইন, এন্ড ইউ? ফাইনালি… রাইট?”
শিথিল হাসল। বলল,
“আসলেই, অনেকদিন পর তোর সাথে দেখা। পাশে কে? ভাবী?”
তাশরীফ পাশে না তাকিয়েই বলল,
“হ্যাঁ।”
শিথিল যেই পাশে হাত বাড়াল চমকে উঠল তাশরীফ। আভা নেই পাশে। পাশে হলো রাহা। তাশরীফ কিছু বলতে যাবে তার আগেই শিথিল বলল,
“বিয়ে করেছিস জানাবিনা? ইনভাইটও পেলাম না।”
“শিথিল আস্…”
শিথিল তাশরীফকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“নো প্রবলেম, একটা পার্টি কিন্তু Obviously চাই। এনজয় কর, আমি আসছি…”
শিথিল যেতেই তাশরীফ রাহাকে বলল,
“আভা কোথায় রাহা? সবাই ভুল বুঝছে।”
রাহা বুঝেও না বুঝার মত করে বলল,
“আমার কি দো’ষ তাশরীফ? আমি কি জানতাম? সবাই আমাকে তোমার ওয়াইফ ভাববে?”
“আভাকে দেখেছ?”
“আই ডোন্ট নো।”
তাশরীফ গম্ভীর ফেইস নিয়ে আভাকে খুঁজতে গেল। এইদিকে রাহা ফারাবীকে চোখে চোখে কিছু একটা ইশারা করতেই সে হাত দিয়ে ওকে দেখালো।
আভা মন খারাপ করে হাঁটছে তাশরীফের পাশে। তাশরীফ তাকে ভীষণ ব’কে’ছে। তার কি দো’ষ? রাহাইতো তাকে বলল, বাইরে তাকে নাকি কে ডাকছে। তো সে তাশরীফকে না বলে বাগানে এসেছিল। এতেই তার দো’ষ হয়ে গেল। মনে মনে রাহাকে ডা’ই’নি থেকে নিয়ে সবভাবেই ধুঁয়ে দিচ্ছে আভা। তাশরীফকে কিছু বলার সুযোগই পেলোনা সে। তাশরীফ প্রচুর রাগী রাগী ফেইস নিয়ে আভাকে নিয়ে বসল একটা জায়গায়। তখনি রাহা তাশরীফের সামনে জুসের গ্লাস রাখে। আভাকে নিজের হাতে একটা গ্লাস দিয়ে, তাশরীফের দিকে আরেকটা গ্লাস এগিয়ে দিল। আর বলল,
“Take This Tashrif”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৬
তাশরীফ তাকাল রাহার দিকে। রাহা আভাকে তাড়া দিয়ে বলল,
“কি হলো আভা? জুসটা খাও, খাচ্ছো না কেন?”
তাশরীফ আভার হাত থেকে জুসের গ্লাসটা ট্রেতে রেখে রাহাকে বলল,
“দুটো গ্লাসের জুস’ই আগে তুমি খাও রাহা।”