প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১০
মারশিয়া জাহান মেঘ
রাতের আঁধারো ছেয়ে আছে আকাশ। চারিদিকে নির্জনতা। আভা ধীর পায়ে ক্লাবে ঢু’কে খুঁজছে সেই কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি। টর্চ লা’গি’য়ে খুঁজছে। বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন টপ বিজনেসম্যান রাফসান চৌধুরী। আভাকে এই রাতে একা তিনি এইখানে কোনোভাবেই আসতে দেয়নি। তখনি আভার চোখ যায়, ওই কাঙ্ক্ষিত জিনিসটিতে। চোখ ঝলমল করে উঠে তার। মনে মনে বলল, “ফাইনালি পেয়ে গেছি। আমি বেঁচে থাকতে ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী এবং রাফসান চৌধুরীর মান সম্মান নিয়ে খেলতে আমি কাউকে দিব না। কাউকে না…”
তাশরীফ চোখ দুটো ধীরে ধীরে খু’লে চারদিকে এক পলক তাকায়। ঝাপসা দেখছে সে। চোখ ঢ’লে তাকালো চারিদিকে। উঠে বসে বিছানায়। মাথাটা ভীষণ ব্যথা করছে তার। কপালে হাত রেখে মনে করার চেষ্টা করছে তার সাথে কি হয়েছে। কিছু একটা ভেবে চি’ৎ’কার করে বলল,
“আভা…., আভা… এই আভাআআ…”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে আভা। চুলগুলো ভেজা তার। এত ক্লা’ন্ত লাগছিলো তার যে গোসল না দিয়ে থাকতে পারলো না। হুট করেই তাশরীফের এমন চি’ৎ’কার শুনে চমকে উঠে সে। আভা তড়িঘড়ি স্বরে বলল,
“কি হয়েছে তাশরীফ ভাই? এমন করছেন কেন? বা’জে স্ব’প্ন দেখেছেন?”
“আমরা না পার্টিতে ছিলাম? আমি এইখানে এলাম কখন?”
আভা তাশরীফের পাশে গিয়ে বসলো। তারপর বলল,
“পার্টিতে কি কি হয়েছিল, আপনার কোনো কিছুই মনে নেই?”
তাশরীফ অবুঝ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আভার পানে। আভা ন’র’ম কন্ঠে বলল,
“ঘুমান, সকালে হয়তো অনেক কিছু অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। ”
আভার কথার পূর্ণাঙ্গ অর্থ বুঝতে পারলো না তাশরীফ। আভাকে বলল,
“কি বলছিস এইসব?”
আভা তাশরীফের দিকে এক ধ্যানে তাকালো। মানুষটা কতটা নিষ্পাপ, অথচ তাকে কত বড়ই না অ’প’বা’দ দিয়ে দিলো?
“পার্টিতে কি কি হয়েছিলো আমাকে বলুনতো। শেষের দিকে।”
“তোকে খুঁজতে খুঁজতে আমি আবারও বাগানে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনি রাহা এসে বলল, তুমি কি আভাকে খুঁজছ তাশরীফ?” আমি বললাম, “হ্যাঁ, তুমি ওকে দেখেছ?” রাহা বলল, ক্লাবের পেছনের বেড রুমে তুই জানি কান্না করছিস। আমি গেলাম তারপর হুট করেই লাইট অফ হয়ে যায়। ব্যাস এতটুকুই মনে আছে। এরপর কি হয়েছে তা মনে করতে পারছি না।”
আভা তাশরীফের একদম কাছে গেছে। গিয়ে নে’শা’লো স্বরে বলল,
“আমাকে আজ একটু ভালোবাসেন না, ডাক্তার সাহেব। আমার যে আপনাকে আজ বড্ড কাছে টা’ন’তে ইচ্ছে করছে।”
আভাকে দূরে সরিয়ে দেয় তাশরীফ। উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“এইসব কি যা তা বলছিস আভা? অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়। আমিও শুয়ে পড়ছি।”
কথাটি বলেই তাশরীফ সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। সবটা মানিয়ে নেওয়ার সে চেষ্টা করছে ঠিকিই কিন্তু এতোটা জলদি আভাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে চায়না সে। হয়তো এইটা শুধু আভার ভালোর জন্যই। আভা বিছানায় শুয়ে পড়ে। চোখে ট’ল’ম’ল করছে পা’নি। দিনকে দিন তাশরীফের প্রতি সে দূর্বল হয়ে পড়ছে।
তাশরীফ ড্রইং রুমে যেতেই চমকে উঠে। বাড়ির পরিবেশ বেশ অন্যরকম। রাহা বসে কান্না করছে। তাশরীফের মা মিসেস নীরা চৌধুরী ছেলেকে দেখে বললেন,
“বাবা, আমি জানতাম তুই আভাকে পছন্দ করিস না, তাহলে জলদি ডিভোর্স দিয়ে দে ওকে। আর রাহাকে বিয়ে করে ফেল। যেহেতু একটা ঘ’ট’না ঘ’টে গেছে।”
তাশরীফ মায়ের কথা কিছুই বুঝতে পারছে না। রাফসান চৌধুরী স্ত্রীকে ধ’ম’ক দিয়ে বললেন,
“তুমি মা হয়েও এইটা বিশ্বাস করলে?”
আভা নিরব দর্শকের ন্যায় বসে সবকিছু দেখছে।
রাহা তাশরীফের সামনে এসে, তাশরীফকে জ’ড়ি’য়ে ধরে বলল,
“চলো তাশরীফ, আজই আমরা বিয়ে করে ফেলি, নয়তো আমি এই সমাজে মুখ দেখাতে পারব না যে।”
“এইসবের মানে কি রাহা? আমার সাথে এইসব হচ্ছে কি?”
“কেন? গতরাত রাতে যখন মা’তা’ল হয়ে আমার দে’হ উ’প’ভো’গ করছিলে, তখন এইসব ধ্যান কোথায় ছিলো?”
সাথে সাথেই রাহার গা’লে ক’ষি’য়ে একটা থা’প্প’ড় পড়ে। রাহা গা’লে হাত দিয়ে তাকায় আভার দিকে। চোখ কঠিন করে বলল,
“হাউ ডেয়ার ইউ! আমাকে মা’র’লি?”
তখনি প্রেসের লোকজন বাসায় প্রবেশ করে। পেছন পেছন আসে ফারাবী। সব নাটের গুরু যে সে তা আভা অনেক আগে থেকেই জানতো। প্রেসের একজন লোক তাশরীফের কাছে গিয়ে বলল,
“একজন সিনিয়র, ফেমাস ডক্টর হয়ে আপনি কিভাবে একটা মেয়ের সম্মান নিয়ে খে’লা করতে পারলেন ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী? ডক্টররা নাকি নতুন জীবন দান করে, আপনি সেই জায়গায় জীবন নিয়ে কিভাবে খে’লা করতে পারলেন? আপনার বিবেক বাঁধা দেয়নি?”
সবগুলো কথা তাশরীফের মাথার উপর দিয়ে গেল। তখনি আভা তাশরীফের সামনে গেল। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলল,
“আজ আমি আপনাদের এমন কিছু দেখাব, যা দেখার পর আপনাদের কিছু মেয়ের প্রতি যে সূক্ষ্ম বিশ্বাস, তা নিমিষেই ভেঙ্গে যাবে।”
“কি ম্যাম?”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৯
ল্যাপ্টপ ওপেন করে আভা। গতরাতে সে সিসি ক্যামেরা খুঁজতেই সে ওই ক্লাবে গিয়েছিল। স্পষ্ট সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাহা জো’র করে তাশরীফকে ড্রিংক করিয়ে, ইচ্ছে করে তাশরীফের শার্ট খু’লে নিজেই গিয়ে তাশরীফকে জ’ড়ি’য়ে ধরেছে। এবং, তাশরীফের হাত দুটো নিজের পি’ঠে নিয়েছে। সবাই বেশ বিস্ময়ের সাথে দেখছে ভিডিওটি। তখনি আভা রাহার কানে ফিসফিস করে গিয়ে বলল,
“কোন সময়, কোন মুহুর্তে, হাঁটে হাড়ি ভাঙ্গতে হয়, তা মিসেস তাশরীফ চৌধুরী ভালো করেই জানে মিস রাহা।”