প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২
মারশিয়া জাহান মেঘ

“না, বাইরে থেকে লাঞ্চ করে নিব একেবারে। নিচে টেবিলে খাবার সাজানো আছে। তুই আর ওহ খেয়ে নে।”
তোহা মিনমিনিয়ে হাসলো আভার দিকে তাকিয়ে। তারপর ভাইকে বলল,
“ওহ কে ভাইয়া?”
ওপাশ থেকে তাশরীফ বলল,
“আভা আর তুই।”
“আভা না ভাইয়া, তুই আর তোর ভাবী বলো।”

আভা আর তোহা নিচে ড্রইংরুমে খেতে গেল। খাবারের প্লেটের পাশে সুন্দরভাবে লিখা, “শুভ সকাল।”
আভা বলল,
“এইটা কি!”
“কি আবার? দেখতে পারছিস না? ছোট্ট একটা লিখা।”
“দেখতেইতো পারছি। লিখেছে কে?”
“কে আবার? ভাইয়া। সবসময়ইতো ভাইয়া এইভাবে লিখে যায়।”
আভা চুপসে গেল। তোহা বুঝতে পেরে বলল,
“তুই এখনো আপসেট আভা?”
“এইটা কি থেকে কি হয়ে গেল বলতো তোহা? ওই ছেলেটা বিয়ে না করলে বলে দিতে পারতো। বিয়ের দিনই কেন পালিয়ে গেল অন্য মেয়ে নিয়ে?”
তোহা উৎফুল্ল স্বরে বলল,
“যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে। এখন তুই আর আমি এক বাড়িতে সারাজীবন। ভাবতে পারছিস! ইশশ আমরা একসাথে খাব, একসাথে কলেজে যাব, একসাথে ছাঁদে উঠব। বাই দ্য ওয়ে আমার ভাইয়ের মত এমন একটা হ্যান্ডসাম হাসবেন্ড পেয়েও তোর ওই বিষয়টাতে এত আপসেট মানায় না আভা।”
আভা মিনমিন করে বলল,
“এইটাইতো ভ’য়। যেই মানুষটাকে আমি য’মে’র মত ভ’য় পাই। সেই মানুষটার সাথে সারাজীবনোর জন্য কিভাবে জড়িয়ে গেলাম!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এই তোহা তোর ফোনে কল এসেছে।”
ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে তোহাকে কথাটি বলল আভা। ওয়াশরুমের ভেতর থেকে তোহার বিরক্ত কন্ঠ, “কলটা ধর না আভা…”
অনেক ক্ষণ যাবৎ রিং হচ্ছে বলে অবশেষে আভা কলটি রিসিভই করল।
“এতক্ষণ লাগে কল ধরতে? কি করছিলি?”
কল ধরতেই ওপাশ থেকে তাশরীফের গম্ভীর কন্ঠে ধমক খেয়ে থতমত খে’লো আভা। ওপাশ থেকে ফের ধমক, “কথা বলছিস না কেন তোহা?”
“তোহা গোসল করতে ওয়াশরুমে গেছে তাশরীফ ভাই।”

ওপাশের দাম্ভিক কন্ঠের মানুষটা কিছুটা বোধহয় শীতল হলো। জবাব এলো ওপাশ থেকে,
“তুইতো পাশেই ছিলি, ধরলি না কেন? দেখিসনি? আমি কল দিয়েছি।”
“আপনার নাম্বারতো সেইভ করা নেই।”
ওপাশ থেকে তাশরীফ দ’মে গেল। আসলেইতো এই সিমতো তোহার ফোনে নেই। আজইতো সে এই সিমটা নিয়েছে। নিজের দো’ষ আড়াল করতে ওপাশের ব্যক্তিটি বোধহয় ঠে’কে গেল। বলল,
“ফরিদা আপা এসেছে?”

আভার মনে পড়ে গেল তোহার কথা। সে বলেছে আজ ফরিদা আপা আসেনি যে এইটা না বলতে তাশরীফকে। নয়তো বেচারির চাকরী নিয়ে টা’না’টা’নি পড়ে যাবে। তাশরীফ কিছু বুঝতে চায় না। তার কথা হচ্ছে ফরিদা আপাকে রেখেছে যেন তার বোনকে কষ্ট না করতে হয়। কিন্তু ফরিদা আপা? দুইদিন পর পর ছুটি নেয়। আজ নাকি মেয়ে অসুস্থ। তাই তোহাকে এসে বলে গেল, “আপা মনি এইবারই শেষ, ভাইজানরে কইয়েন না।”
“কি হলো? ফরিদা আপা আসেনি?”
ধ্যান ভাঙ্গলো আভার। সে সাথে সাথেই বলল,
“এসেছেতো।”
“আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে আজ লাঞ্চ আমি বাসায় এসেই করব।”
“কি!”
কিছুটা উচ্চ স্বরে শব্দটি উচ্চারণ করল আভা। ওপাশ থেকে তাশরীফ বলল,

“কি হয়েছে?”
“না না, কিছু না।”
কে’টে দিলো কল আভা। সঙ্গে সঙ্গে ওয়াশরুমের দরজা ইচ্ছে মত ধা’ক্কা দিতে লাগলো সে।
“এই তোহা, দরজা খো’ল, তোহাআআআ..”
আভার অ’ত্যা’চারে সাবান মে’খে ভূত হয়েই দরজা খুলল তোহা।
“কি হয়েছে আভা? দেখছিস না? গোসল করছি।”
“গোসল ছু’টে যাবে। তাশরীফ ভাই আসছে, দুপুরে নাকি বাসায় লাঞ্চ করবে।”
“কিহহহহ! কে বলল? ভাইয়া কল করেছে?”
“জি, হ্যাঁ।”
“হায় আল্লাহ, ফরিদা আপাকে কল দে।”
“কল দিলেতো ধরতেই ওনার ১০০ ঘন্টা লাগবে। তুই জলদি বের হ। কিছু একটা ভাবতে হবে।”

মুখে ন’খ নিয়ে তোহা আর আভা ভাবছে কি করবে এখন। তখনি তেহা হাতো তু’ড়ি বাজিয়ে বলল,
“আইডিয়া।”
“কি আইডিয়া?”
“রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনিয়ে নিলেইতো হয়।”
তোহার মাথায় গি’ট্টি মারে আভা।
“তোর কি মনে হয়? তোর ভাই বোকা? তিনি মনে হয় বুঝবে না যে এইটা ফরিদা আপার রান্না নয়। তোর ভাইয়ের যে বুদ্ধি মাঝেমধ্যেতো আমি কনফিউজডে পড়ে যাই, এত বুদ্ধি নিয়ে ওনি রাতে ঘুমায় কেমন করে?”
“এই কি বললি? আমার ভাইয়ের নামে।”

“তোহা, ঝ’গ’ড়া বাদ। আচ্ছা ঘরে আলু আছে?”
“আছে।”
“ডিম আছে?”
“আছে।”
“চিংড়ি মাছ আছে?”
“আছে।”
“চল আমার সাথে রান্নাঘরে।”
“কার সাথে?”
“আমার সাথে।”
চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তোহা জলদি বলল,
“এই আভা এই, তুই কি রান্না করবি নাকি?”
আভা রান্না করছে আর তোহা চুপচাপ বসে আছে।
“এই আভা কি করছিস? এত মরিচ দিচ্ছিস কেন? আল্লাহ এই জানে আজ আমাদের খাওয়াবি নাকি ওয়াশরুম নেওয়াবি।”
আভা নাক বেংচি কে’টে বলল,
“করছি যে সেই অনেক। এত কথা বলিস না।”
“এ্যাহ, যেই করা করছেন আপনি, ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী আজ অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খেয়ে বিছানায় পড়ে থাকবেন।”

আকস্মিক ঘ’ট’না’য় দুজনেই বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে। তাশরীফ বাসায় এসে উপরতলায় উঠছিল নিজ রুমে। আভাও নিচে নামছিল। হুট করেই আভা হুঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলে তাশরীফ আভার কো’ম’ড় ঝা’প’টে ধরে। এমন ঘটনায় তোহা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। তাশরীফ আর আভার দুজনের দৃষ্টিই দুজনার দিকে। তোহা গ’লা ঝেঁড়ে ছোট্ট একটা কাশি দিলো। আভাকে ছেড়ে দিয়ে বোনের দৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজ রুমে যায় তাশরীফ। তোহা দু’ষ্টু হাসি ঠোঁ/টে রেখে আভাকে বলল,
“ইশশ, রোমাঞ্চ দেখতেও ভালো লাগেরে আভা।”
“ভালো লাগে তাই না? দাঁড়া শেখাচ্ছি তোকে রোমান্স।”
তোহা দৌঁড়ে নিজ রুমে গেল।
খাবার টেবিলে খেতে বসেছে সবাই। তাশরীফ একটা আকাশী রংয়ের পলো শার্ট পড়ে আছে। চুলগুলো ভে’জা। হাতে সিলভার রংয়ের ঘড়ি। ব্ল্যাক জিন্স। কি সুন্দর লাগছে! একটা ছেলে এত সুন্দর হয় কেমন করে? ভাবছে আভা। তাশরীফ তাকালো তোহার দিকে। বলল,

“ফরিদা আপা কোথায়?”
“রান্না করে বাসায় গেছে ভাইয়া।”
তাশরীফ নিজের প্লেটে খাবার নিচ্ছে আভা আর তোহা শুকনো ঢো’ক গি’ল’ছে। তাশরীফ তাকালো ওদের দুজনের দিকে। বলল,
“কি হয়েছে? তোরা খাবার নিচ্ছিস কেন?”
তোহা আমতা আমতা করে বলল,
“আগ্ আগে তুমি খাও না ভাইয়া। এই নাও, টমেটো দিয়ে চিংড়ি মাছের ঝোলটা আগে নাও।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১

ভাইয়ের প্লেটে চিংড়ি মাছ তুলে দিলো তোহা।
তাশরীফ মুখে খাবার দিতেই চোখ বন্ধ করে ফেলল আভা। ভ’য়ে তার কলিজা যায় যায়।
তাশরীফ খাবার খেতে খেতে তাকালো আভা আর তোহার দিকে।
“আজকেতো ফরিদা আপা আমার মনের মত রান্না করেছে? এইরকমভাবে রোজ রান্না করলে আমাকেতো কষ্ট করে বাহিরে লাঞ্চ করতে হয় না।”
অবাক হলো তোহা। উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“সত্যি ভাইয়া? অনেক ভালো হয়েছে? আরও দিই? আরও নাও না, নাও। এই বাটির সবটুকু নিয়ে নাও। আমাদেরটা আছে।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৩