প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১২
মারশিয়া জাহান মেঘ
তাশরীফ, ফারাবীর রুমে বসে আছে। বসে বসে লারার নাটক দেখছে। ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে লারা সাজছে ফারাবী আর তাশরীফ সার্কাস দেখছে। লারা বেশ ন্যাকামি করে বলল,
“বেব, প্লিজ কাম। লি’প’স্টি’ক পড়িয়ে দাও আমায়।”
চোখ বড় বড় করে তাকালো তাশরীফ। এই মেয়ে বলে? ল’জ্জা শরম নেই জানতো, ফারাবী তাকে বলেছে। কিন্তু এত বেশি যে লাজ ছাড়া তা জানতো না সে। ফারাবীর জবাব,
“পারব না। তুমি আগামীকালই ব্যাক করবে আমেরিকা। এন্ড, ইটস ফাইনাল লারা।”
“তোমাকে না নিয়ে আমি যাচ্ছি না ফারাবী।”
“বেশি হচ্ছে না লারা?”
“ডেডকে কল দিব?”
তাশরীফ বুঝলো না বিষয়টা। ফারাবী চুপচাপ লারার কাছে গিয়ে লি’প’স্টি’ক পরিয়ে দিচ্ছে লারাকে। তাশরীফ অবাক না হয়ে পারে না। কি এমন আছে? যে মেয়েটা তার ডেডকে কল দেওয়ার ভয়ে ফারাবী চলে গেল।
“ওহ, ডেড কল দিয়েছে বেব। আমি কথা বলে আসি। তোমরা থাকো।”
ফারাবী স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ তাশরীফ ফারাবীকে বলল,
“চল, ছাঁদে যাই।”
“চল, তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে তাশরীফ।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তাশরীফকে সব খু’লে বলল ফারাবী। তাশরীফ থুতনিতে হাত রেখে সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো। পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে বলল,
“একটা দারুণ আইডিয়া পেয়েছি। কিন্তু… ”
“কিন্তু?”
“এই আইডিয়াতে, তোহা আর আভাকে মাস্ট লাগবে।”
“কেন!”
“ওরা বিষয়টা পুরোটা না জানলে কখন আমাদের প্ল্যানে কি করে বসে বলা ডিফিকাল্ট।”
“জানাবি কখন?”
“ডিনার শেষ কর আগে।”
“চল নিচে যাই…”
“চল।”
“এইসব কি রান্না করেছে ফারাবী? এইসব আমি খাই?”
“এইটা বাংলাদেশ লারা। তোমাকে এইগুলোই খেতে হবে। বিদেশের কোনো ফুড তুমি এই দেশে পাবে না।”
লারা ফারাবীর এক হাত ঝা’প’টে ধরে বলল,
“আমি এইসব খাব না ফারাবী। চলো, রেস্টুরেন্টে যাই।”
“আর ইউ মেড লারা? এই রাতে আমি বাইরে যাব তোমাকে নিয়ে খেতে?”
“সো হোয়াট? আমি না খেয়ে থাকলে তুমি বুঝি ভাল থাকবে? কষ্ট হবে না তোমার?”
“তুমি না খেয়ে ম’রে যা, আমার কি?” ( মনে মনে) কথাটি বলল ফারাবী। সে বিরক্ত এই মেয়ের উপর। তাও খাবার টেবিলে বসে এইসব প্যারা নিতে হচ্ছে তাকে। তাশরীফ, আভা, তোহা সবাই তাকিয়ে আছে লারার দিকে। তাশরীফ বেশ বুঝতে পারছে, ফারাবী ডিস্টার্ব মেয়েটাকে নিয়ে। তাশরীফ বলল,
“লিসেন, আমাদের বাসা থেকে রাত ৮ টার পর বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ।”
লারা তোয়াক্কা করল না তাশরীফের কথায়। সে নাক মুখ কুঁচকে বলল,
“লারা কখনো, এইসব নিয়মের ধার ধারে না মিস্টার তাশরীফ চৌধুরী।”
“আপনি না মানলে এই বাসা থেকে লিভ নিন। বিকজ, রুলস মিনস, রুলস। নিয়মের অনিয়ম হওয়া আমি পছন্দ করি না। আভা, খাবার দে সবাইকে। তোদের বাড়ি থেকে কল দেয়নি আজ?”
আভা জবাব দেওয়ার পূর্বেই তোহা বলল,
“দিয়েছেতো। বলল, রিসিপশনের সেইট ফিক্সড করতে। সময়তো চলে যাচ্ছে।”
“আগামীকাল ডেইট ফিক্সড করব। ডেকোরেশনের রেসপনসেবলিটি আমি ফারাবীকেই দিব।”
ফারাবী আলতো হেসে বলল,
“কি কপাল আমার! তোর বিয়ের রিসিপশনের দায়িত্ব আমাকে নিতে হলো? অথচ এই বয়সে, তোর ২ বাচ্চার বাপ থাকার কথা।”
ফারাবীর কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেলে সবাই। লারা ছাড়া। সে ভেতরে ভেতরে যা নয় তা বলছে সবাইকে। প্রকাশ করছে না শুধু। হুট করে তাশরীফ তাকায় আভার দিকে। আভা মাথা নিচু করে হাসছে। শাড়িতে কাকে কেমন লাগে তাশরীফ জানে না। কিন্তু আভাকে পরী লাগছে। কি সুন্দর তার হাসি!
তোহা বলল,
“ভাইয়া, তুমি এমন কেন? আমাকে আর আভাকে একবারও খেতে বসতে বলোনি।”
তাশরীফ খাবার খে’তে খে’তে বলল,
“আমি জানি, আমাদের খাবার শেষে তোরা দুজন, দুনিয়ার সব কথা নিয়ে আলোচনা করতে করতে খাবি। তাই বলিনি।”
তোহা নিরব হাসে। তার ভাই আগেতো কথাই বলতো না। বিয়ের পর, এখন মজা, কথা বলা একটু হলেও শিখেছে। সব ক্রেডিট আভার। তোহার দৃষ্টি ফারাবীর দিকে। ফারাবীকে কেমন যেন এলোমেলো লাগছে আজ। কি যেন একটা ভাবনায় যুক্ত সে।
খাবার শেষে চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে তাশরীফ আভাকে বলল,
“আভা…”
“হুম..”
“তুই আর তোহা খেয়ে, আমার রুমে আসিস একটু।”
তোহা বলল,
“কেন ভাইয়া?”
“আসলেই বুঝবি। খেয়ে নে আর্লি। আমি যেন ডাক দেওয়া না লাগে। গট ইট?”
“ইয়াহ।”
তাশরীফের মুখে সব কথা শুনে হা হয়ে আছে তোহা আর আভা। ফারাবী মন খারাপ করে বেলকনির এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। সে শুনছে তাশরীফের কথা। আজ পৃথিবীকে তার অসহায় লাগছে। আসলে, কিছু কিছু সময় আমাদের মনে হয়, পৃথিবী আমাদের জন্য না। পৃথিবী অধিক সুখীদের জন্য। আর যারা, দুঃখকে স্প’র্শ করেছে তাদের কাছে পৃথিবী এক ফালি রোদ কেবল। যা নিমিষেই মেঘে ঢাকা পড়ে যায়।
“ফারাবী…”
তাশরীফের ডাকে হুশ ফিরে ফারাবীর।
“কি?”
“কখন থেকে ডাকছি তোকে? এতক্ষণ ‘কি?'”
“খেয়াল করিনি।”
“প্ল্যান শুন আমার….”
“বল।”
তাশরীফের প্ল্যান শুনে হাতে হিরা পেয়ে গেল যেন ফারাবী। আভা বলল,
“ভাইয়া, চিন্তা করবেন না একদম। ওই লারাকে,শরবত খাইয়ে দিব চিনি ছাড়া।”
সবাই একসাথে বলে উঠে,
“মিশন শুরুওওওওওওও।”
“লারা, জান.. আগামীকাল বের হবে ঘুরতে?”
ফারাবী কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গেই লারা এক্সাইটেড হয়ে বলল,
“সত্যি বেব?!”
“৩ সত্যি।”
“আমার বেব দেখছি ভাল হয়ে গেছে। আমার প্রতি দিন দিন উইক হয়ে পড়ছ নাকি বেব?”
“এত সুন্দর তুমি, ইমপ্রেস না হয়ে থাকতে পারি নাকি?”
লারা ফারাবীকে জ’ড়ি’য়ে বলল,
“লাভ ইউ সো মাচ বেব।”
“লাভ ইউ টু।”
ফারাবী লারাকে জ’ড়ি’য়ে ধরে মনে মনে বলল,
“আগামীকাল তোমাকে চিনি ছাড়া লারা দিব বেবি, জাস্ট একটু ওয়েট কর। ফারাবী রাজকে পুতুল নাচ করার শা’স্তি এইবার তুমি হারে হারে টের পাবে।”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১১
তাশরীফ হাতের ঘড়ি খু’লে বিছানায় শুতে শুতে বলল,
“আভা, কি করছিস?”
আভা কাপড়-চোপড় ভাজ করে ওয়ারড্রবে রাখতে রাখতে বলল,
“কিছু লাগবে?”
“লাগবেতো, অনেক কিছু লাগবে?”
“বলুন আমি এনে দিই।”
“আনতে হবে না, আসতে হবে।”
“মানে?”
“আমার কিছু লাগবে না, তোকে লাগবে শুধু।”
“আমার প্রতি দিন দিন একটু বেশিই উইক হয়ে যাচ্ছেন নাকি তাশরীফ ভাই?”
“তোর প্রতি আমি বরাবরই উইক ছিলাম আভা। গো’প’ন রাখতাম বেশি, প্রকাশ করতাম কম।”