প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২১
মারশিয়া জাহান মেঘ
পা’নির তৃষ্ণায় জেগে উঠে তোহা। জ্বরে অবস্থা ভীষণ করুণ তার। ঠোঁ/ট মুখ শুকিয়ে আছে। মলিন হয়ে আছে পুরো চেহারা। বিছানার পাশ থেকে পা’নির গ্লাসটুকু হাতে নিয়ে এক ঢো’কে পুরো পা’নি শেষ করে সে। আবার মাথা রাখে বালিশে। পেইন করছে মাথা। তাও পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিলো সে। কাব্যকে এত ম্যাসেজ করলো কোনো সীন নেই? অথচ সে অনলাইনে এসেছিল। উ’ত্তে’জ’নায় আরও বেশি খারাপ লাগা কাজ করছে ওর মাঝে। ঠিক তখনি ফারাবী আসে তোহার রুমে। তোহাকে জেগে থাকতে দেখে থতমত খেয়ে গেলো ফারাবী। তোহা অবাক হয়ে ছোট ছোট চোখ মেলে প্রশ্ন করলো,
“এত সকালে আপনি এইখানে কি করছেন?”
তোহা অবুঝ। সেতো আর জানে না, প্রেয়সীর অসুস্থতা, ফারাবীর দু চোখ সারা রাত এক হতে দেয়নি। অস্থিরতায় কেটেছে সারা রাত৷ রাতের মধ্যে ৭/৮ বার দেখে গেছে সে তোহাকে। মধ্য দিয়ে কপালে ভে/জা কাপড়ের পট্টিও রেখেছিল। তোহার এই পরিস্থিতির জন্য বার বার নিজেকে দায়ী করছে ফারাবী। ভেতর থেকে সে বড্ড কষ্ট পাচ্ছে।
“কি হলো জবাব দিচ্ছেন না কেন?”
তোহার আবারও প্রশ্নে ফারাবী বলল,
“তোমার ভীষণ জ্বর শুনলাম, তাই দেখতে এসেছি।”
“আমার জ্বর এইটা দেখতে এসেছেন? নাকি, মরে গেছি কিনা এইটা দেখতে এসেছেন?”
“তোহা….”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আপনাকে আমার স/হ্য হচ্ছে না, প্লিজ চলে যান আমার চোখের সামনে থেকে।”
“আমি যাব না। অ/স/হ্য মানুষ, জিনিস, অথবা সবকিছুকে স/হ্য করতে শিখো তোহা। অস/হ্য মানুষটার সাথে সারাজীবন থাকতে হবে তোমাকে।”
“আপনি আসলে চানটা কি?”
“তোমাকে। বিশ্বাস করো, শুধু তোমাকে চাই। তুমি জীবনে চলে আসলে, আর কিছু লাগবে না আমার।”
“কিন্তু আমার আপনাকে চাই না।”
“তুমি হয়তো ভুলে গেছ, অলরেডি উই আর হাসবেন্ড এন্ড ওয়াইফ।”
তোহা তাচ্ছিল্য করে হাসলো। বলল,
“ফোর্সলি? মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে, জো’র করে বিয়ে করেছেন আমাকে। ভুলে যাচ্ছেন কেন? আপনি আমাকে পাবেন ঠিকিই। কিন্তু আমাকে নয়। অর্থাৎ আমার মনকে নয়, আমার দে’হকে ঠিকিই পাবেন।”
ভেতরে ভেতরে কষ্ট পেলেও ফারাবী তা প্রকাশ করলো না। বলল,
“সে যা হবে দেখা যাবে। তুমি ঘুমাও। নীড রেস্ট, রাইট?”
“আমার চোখের সামনের থেকে চলে যান বলছি, চলে যানননন।”
তোহার আলতো চিৎকার শুনে ফারাবী বের হয়ে গেল তোহার রুম থেকে। ব্ল্যাক টিশার্ট, ব্ল্যাক টাওজার পড়েছে ফারাবী। বু/কে দু হাত গুঁজে নিজেকে প্রশ্ন করলো সে,
“তোহা কি কখনোই আমাকে ভালোবাসবে না? আজীবব ইচ্ছের বিরুদ্ধেই আমার সাথে সংসার করবে? সত্যি সত্যিই কি তা হবে!?”
আভা রান্না করছে। সবকিছু অনেক তাড়াতাড়ি তার জীবনে ঘটে গেল৷ সে কি ভেবেছিল? এলোমেলো বিয়েটা এইভাবে পূর্ণতা পেয়ে যাবে। তাশরীফ তাকে মেনে নিয়েছে। সম্পূর্ণ নিজের অর্ধাঙ্গীনি হিসেবে। তাশরীফকে নিচে নামতে দেখে আভা জলদি রান্না শেষ করে নিচ্ছে। তাশরীফ সোফায় বসে বলল,
“তোহা কোথায়? ওর জ্বর এখনো সারেনি?”
“ঘুমিয়ে আছে। আমি সকালে গিয়ে দেখে এসেছি।”
“ঔষধ খাইয়ে দিস। আর, আমি সকালে যা যা বললাম, সেই অনুযায়ী যেন সব ঠিকঠাক থাকে।”
আভা চা নিয়ে আসলো তাশরীফের কাছে। তাশরীফকে চা দিয়ে বলল,
“তোহা কি সবটা মেনে নিবে?”
“আমার সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত। কে কি মেনে নিলো না নিলো ওইগুলো আমার দেখার বিষয় না।”
ফারাবী আসলো ড্রইংরুমে। তাশরীফ ওকে দেখে বলল,
“ফারাবী, তোর বাবা আজ আসবে মনে হয়।”
ফারাবী চমকে উঠল। অবাক হয়ে বলল,
“ডেড আসবে মানে? কই? আমাকেতো এই বিষয়ে কিছু বলেনি।”
“তোর ফোন অফ। চেক করে দেখ… কল তোকেও দিয়েছিল।”
“আজ! কিন্তু কেন?”
“রাতেই বুঝতে পারবি। আমি হসপিটালে গেলাম।”
তাশরীফ উঠে চলে যেতেই আভা মুচকি হাসলো। স্বামীর সুখ কি জিনিস এত দিনে সে বুঝেছে। বিয়ের পর একটা মেয়ে, স্বামীর স্পর্শ না পেলে, সংসারটা নিজের, এইটা অনুভব করবে কিভাবে? স্বামী মেনে না নিলে, জীবনটা এলোমেলো হয়ে যায় না? ফারাবীকে বসে থাকতে দেখে আভা বললো,
“ভাইয়া আপনাকে চা/কফি কিছু দিব?’
” না, আমি রুমে যাই। আজ ডেড আসবে এইটাতো ভাবতেই অবাক হচ্ছি আমি। ডেড আসা মানে, তোহার এইখানে শেষ দিন। আমার মনে হয়, তোহাকে আরও বুঝানো উচিৎ।”
“আপনি রুমে যান, আমি দেখছি…”
ফারাবী, বিদ্যুৎ গতিতে, উপরতলায় যায়। এক্ষুনি ডেডকে কল করতে হবে তার।
“তোর ভাই না বুঝলে আমি কি করব তোহা? আমি কি কম বুঝানোর চেষ্টা করেছি?”
“আমি ওই ফারাবীকে পছন্দ করি না আভা। যেই মানুষটাকে আমি পছন্দ করি না, সেই মানুষটার সাথে আজীবন সংসার করব কিভাবে? ভাইয়ার মত ম্যাচিউরড একটা মানুষ, এইভাবে ইম্ম্যাচিউরডের মত কাজ করছে? ওই ফারাবী নিশ্চিত ভাইয়াকে কিছু করেছে।”
“কান্না করিস না তোহা। তুই অসুস্থ। মাথা ব্যথা করবে কান্না করলে।”
“মরে যাই না কেন আমি? আমি কাব্যকে ভালোবাসি আভা। কাব্যকে ছাড়া আমি নিজেকে ভাবতেও পারি না।”
আভা অবাক হয়ে বলল,
“কাব্য! কাব্য কে?”
তোহা সবকিছু আভাকে খু/লে বলল। আভা তারপর বলল,
“দেখ তোহা, ভার্চুয়াল লাইফের সবাই রিয়েল হয় না। ছেলেটা তোর মনের কথাও জানে না। তুই শিওর কিভাবে? ছেলেটা তোকে ভালোবাসবে। আর এইদিকে ফারাবী ভাইয়া ভিন্ন। সে তোকে ভালোবাসে।”
তোহা সরে এলো আভার কাছ থেকে। গাল, নাক ফুলিয়ে বলল,
“বুঝেছি, তুইও চাস না আমি এইখানে থাকি। নয়তো, আমাকে তাড়ানোর জন্য এত তাড়াহুড়ো করছিস কেন? বিয়ের পর, আমাকে ননদ ভেবে এইটা করছিসতো? ঠিক আছে। মনে রাখিস শুধু এইসব। হিসাবের খাতায় তুলে রাখব সব।”
আভা অবাক হয়ে বলল,
“তুই আমাকে ভুল ভাবছিস তোহা।”
“না, ভুল না ঠিকটাই ভাবছি। ”
আভার কোনো কথাই মানতে রাজি নয় তোহা। সে একাধারে ভুল বুঝেই যাচ্ছে আভাকে। আভা তোহার এমন আচরণ দেখে বলল,
“আচ্ছা, ফারাবী ভাইয়াকে তোর বিয়ে করতে হবে না। আমি তোকে আইডিয়া দিচ্ছি।”
“তোর আর কোনো আইডিয়া দিতে হবে না আভা। আমার রুম থেকে যা এইবার। আমার বিরক্ত লাগছে সব।”
তোহা অন্যদিকে মুখ নিয়ে স্ট্রেইটলি বলল,
“আমি চাই না এখন, আমার রুমে কেউ থাকুক।”
“তোমার নাম কি মা?”
“তোহা।”
ফারাবীর বাবার সামনে মাথায় উড়না টেনে বসে আছে তোহা। একপ্রকারের জোরেই তাকে এইখানে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কারণ, তাশরীফ তার সামনেই বসে আছে। ফারাবী তার বাবার পাশে বসে আছে। একটু আগেই তার বাবা বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছেন। তোহা বুঝতে পারে না, ছেলের সাথে, সাথে বাবাও মত জানতে ইচ্ছুক নয়? ফারাবীর বাবা একবারও জিগ্যেস করলো না? সে এই বিয়েতে রাজি কিনা…
ফারাবীর বাবা বললেন,
“তোহাকে আমার কোনো কিছুই জিগ্যেস করার নেই। কারণ, আমার ছেলে ওকে পছন্দ করেছে। তাশরীফ….”
“জি আংকেল।”
“তোমার যদি কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে আজই বিয়েটা হয়ে যাক?”
তোহা অবাক হয়ে গেল। আজই বিয়ে!
তাশরীফ আভার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এত তাড়াতাড়ি! আংকেল আমার বোনতো একটাই।”
“দেখো বাবা, আমাদেরকে আবার ব্যাক করতে হবে। অনুষ্ঠান পরবর্তীতে দেশে আসলে করিও। অনেক ক্ষেত্রে অনেকে বেবি হওয়ার পরও শখ পূরণে আবার অনুষ্ঠান করে বিয়ে করে। ওইখানে গিয়ে, আমার ছেলের বউয়ের কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখব না।”
তাশরীফ আভার দিকে তাকিয়ে বলল,
“রেডি করে নিয়ে আয় ওকে।”
তোহা টলমল চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালো৷ যত দেখছে ততোই অবাক হচ্ছে তাশরীফকে দেখে সে। কোনো মানা নেই! কোনো কথায়।
আভা বাধ্য হয়ে তোহাকে উঠিয়ে রুমে গেল। তাশরীফের সামনে কিছু বলার সাহস হয়নি তার। ফারাবীর দৃষ্টি তোহার দিকে। সে জানে, তোহা কি ভাবছে। সে এইটাও জানে, তোহা এখন কান্না করবে। অনেক কাঁদবে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলবে, নাক লাল করে ফেলবে। তোহা রুমে যেতেই উড়না ছুঁড়ে ফেলে দেয়। সাজ পাগলের মত হাত দিয়েই মুছতে থাকে। আভা শান্ত করতে বলল,
“এইসব কি করছিস তোহা? এমন করিস না, আমার কথা শুন…”
কোনো কিছুই শুনতে ইচ্ছে করলো না তোহার। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল তাশরীফ। আভা, তোহার পেছন পেছন সেও এসেছিল। পর্দার ওপাশ থেকে বলল,
“তোহা, আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না তুমি। সুন্দরভাবে রেডি হয়ে নাও। কাজী সাহেব আসবেন একটু পর।”
বোরকা পড়ে, বাড়ির দেয়াল টপকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে তোহা। এই বাড়িতে থাকলে আজ নিশ্চিত, ‘বিবাহিতা’ তকমা লাগাতে হবে তাকে। আভা এই পথ অবলম্বন করতে বলেছে তাকে। এ ছাড়াতো উপায়ও নেই। গেইট দিয়ে বের হতে গেলে সিকিউরিটি গার্ড বলবে,
“কে আপনি? এই রাতে কোথায় যাচ্ছেন?”
নানান প্রশ্নের সম্মুখীন থেকে, এইভাবে বেরিয়ে যাওয়াই ভালো। তোহা যখনি দেয়াল টপকাতে যাবে, ঠিক তখনি পেছন থেকে ভেসে এলো ফারাবীর কন্ঠ।
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২০
“আমি হেল্প করব?”
চমকে উঠে তোহা। পেছন তাকায় সে। আমতা আমতা করে বলল,
“আপ্ আপ্ন আপনি!”
ফারাবী তোহার হাত ধরে ফেলে। দৃষ্টি শান্ত তার। পরক্ষণেই বলল,
“আমাকে বিয়েতো তোমায় করতেই হবে তোহা।”