প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ শেষ পর্ব 

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ শেষ পর্ব 
মারশিয়া জাহান মেঘ

আভা হেসে হেসে কথা বলছিলো সবার সাথে। আজ তার মা, বোন তাদের বাসায় এসেছে৷ কতদিন পর এসেছে! মধ্য দিয়ে বিয়ের রিসেপশন করার কথা হলেও তা আর হয়ে উঠেনি ঝামেলায়। আর আভার মা,বাবা, বোনও আসতে পারেনি এর মধ্যে। এখন আর পাঁচটা স্বামী- স্ত্রীর মতই তাদের সংসার। আভা মাঝে মাঝে স্বস্তি পায় যে, তার আর তাশরীফের মাঝে সবটা ঠিক হয়ে গেছে ভেবে। তার বিশ্বাস ছিল, সবটা ঠিক হবে। কারণ, তাশরীফকে সে চিনতো। আর যাইহোক, এই ছেলেটা কখনো আভাকে কষ্ট পেতে দিবে না। রাত্রি বলল,

“তুই সুখীতো এইখানে আভা?”
“আপু, আমার ভয় হয় এইটা ভেবে, এত সুখ কপালে সইবেতো? এইবার ভাবো, আমি ঠিক কতটা সুখী। একটা মেয়ে, কতটা সুখী হলে এই কথাটা ভাবতে পারে।”
রাত্রি কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি আভার ফোনে কল আসে। রাত্রি বলল,
“কে কল দিয়েছে?”
“ডাক্তার সাহেব।”
রাত্রি হেসে বলল,
“কথা বল।”
আভা বারান্দায় গিয়ে কল ধরলো। বলল,
“বলুন…”
“কি করছ বিবিজান?”
“বসে বসে কথা বলছি মা আর আপুর সাথে।”
“খেয়েছে ওরা?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হ্যাঁ, খেয়েছে। ১ ঘন্টা হলো আসলো। আপনি কখন আসবেন? আজ কিন্তু জলদি আসার কথা ছিল।”
“তাড়াতাড়িই আসব। তোহাকে কল দিয়েছ?”
“না, অনলাইনে নেই ওহ, আসলেই কল দিব।”
কথাটি বলতেই আভা অন্য কিছু একটা অনুভব করলো। সঙ্গে সঙ্গে বলল,
“একটু পর কল দিচ্ছি ডাক্তার সাহেব।”
আভা দৌড়ে ওয়াশরুমে গেল। রাত্রি আর, আভার মা মেয়ের পেছন পেছন গিয়ে বলল,
“কি হয়েছে আভা? শ’রী’র ঠিক আছেতো?”
আভা চোখে -মুখে পানি দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বলল,
“ব’মি পাচ্ছিলো মা।”
আভার মায়ে ঝলমলে হাসি। রাত্রি অবাক হয়ে বলল,
“তুমি হাসছ কেন মা?”
“আরে রাত্রি তুই খালামনি হতে যাচ্ছিস।”
রাত্রি খুশিতে জড়িয়ে ধরে বোনকে। আভা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল এক জায়গায়। সঙ্গে সঙ্গে বারান্দায় গিয়ে কল লাগালো তাশরীফকে। তাশরীফ ওপাশ থেকে কল রিসিভ করতেই, এপাশ থেকে আভা বলল,
“আপনি বাবা হতে চলেছেন ডাক্তার সাহেব।”

থম মে’রে বসে আছে আভা। তাশরীফের দৃষ্টি তার পানেই। সে ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি, তাশরীফ এই সময় বাসায় চলে আসবে৷ এসেছেতো এসেছে, হাতে ২ কার্টুন মিষ্টি এনেছে৷ কিসের সুবাদে? বাবা হওয়ার আনন্দে। অথচ এসে যখন শুনলো, পর পর সবারই পে’টে ব্য’থা ব’মি ব’মি ভাব হয়েছে সে রেগে আভার দিকে সেই কখন থেকে তাকিয়েই আছে৷ তাশরীফ দরজা লা’গি’য়ে বলল,
“কি ল’জ্জাটাই না পেতে হলো আমার তোর জন্য। ভালো করে না দেখে বললি কেন ওই কথা? আমিতো ভেবেছিলাম, সত্যি সত্যিই আমি বাবা হতে চলেছি। পুরো হসপিটালে বলে আসলাম। এখন কি হবে এইটার?”
আভা শাড়ির আঁচল প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে বলল,

“আমি কি জানি? মা-ইতো বলল। এই সময় ব’মি ব’মি ভাব পাওয়া মানেই নাকি বেবি হবে। কিন্তু কে জানতো? রাত্রি আপু, মারও এমন হবে। পরে বুঝলাম আসলে আমার বেবি হবে না৷ অন্য কিছু হয়েছে।”
তাশরীফ হাসবে না কাঁদবে বুঝে পেলো না। মা বলল আর ওমনিই তাকে কল দিয়ে কথাটি বলে দিলো? কত খুশী হয়েছিল তাশরীফ ওইটা ভেবে যে, ‘তার বাড়ি আলো করে বুঝি সত্যিই নতুন কেউ আসছে।’ নিমিষেই শেষ। তাশরীফ এপ্রোনটা খু’লে বিছানায় রেখে বেশ গম্ভীর স্বরে বলল,
“ইডিয়ট।”
আভা ফ্যালফ্যাল করে তাকালো তাশরীফের দিকে। মিনমিনিয়ে বলল,
“আমি ইডিয়ট!”

তাশরীফের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে পে’টে পেইন উঠে গেল রাত্রির। বেচারা না বুঝেই, মিষ্টি নিয়ে এলো। ইশ! রাত্রি হাসতে হাসতে বলল,
“বেবি নিয়ে নে আভা। তাশরীফ দেখিসনি? কতটা খুশী হয়েছিল।”
আভা মলিন হয়ে বসে আছে। তার জন্য ডাক্তার সাহেবের মন খারাপ হয়ে গেল। সমস্ত কাজ ফে’লে রেখে বাসায় এসেছিল ওই কথাটা শুনে। একটা মানুষ কতটা সিরিয়াস হলে এত হাসি-খুশিভাবে মিষ্টি হাতে বাসায় আসে? রাত্রি বলল,
“কিরে আভা? কি ভাবছিস? মা চলে গেছে, আমাকেওতো চলে যেতে হবে বল? তাশরীফ কোথায়? ওকে ডাক। দেখা করে চলে যাই।”
আভা উপরতলায় যাবে এমন সময় দেখলো তাশরীফ নিচে নামছে টিশার্টের হাতা হোল্ড করতে করতে। আভা রাত্রিকে বলল,

“চলে এসেছে।”
রাত্রি সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলল,
“তাশরীফ, কেমন আছ? দেখা না করেই রুমে চলে গেলে যে?”
“আপু, আপনি ওই রুমে রেস্ট নিচ্ছিলেন তাই আর যাইনি। ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ। তোমার সাথে দেখা না করে যাব না ভেবেই বসেছিলাম। আজ তাহলে যাই, আভাকে নিয়ে একবার বোধহয় তোমার, আমাদের বাসায় যাওয়া উচিৎ।”
“যাব আপু, সময় হচ্ছে না তাই যাওয়াও হচ্ছে না। দেখুন না… তোহাকে কল দেওয়ার অবধি সময় পাইনি।”
“তোহাকে এখন কল দাও, কথা বলো। আমি বাসায় গিয়ে সময় নিয়ে ওকে একবার কল দিব।”
“আচ্ছা আপু। আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসব?”
“না না, লাগবে না। সামনে থেকে তোমার ভাইয়া রিসিভ করতে আসবে।”
“আচ্ছা। সাবধানে যাবেন।”
“ঠিক আছে।”
রাত্রি বেরিয়ে যেতেই আভা বলল,
“তোহাকে কল দেন।”
“ডিনার দে, খেয়ে তারপর কল দিব।”
আভা বুঝতে পারলো তাশরীফ গাল ফুলিয়ে রেখেছে। সবসময় সব বলতে হয় না। গাল ফোলানো দেখেই বুঝে ফেলা যায়, কে কেন এমন করছে।

ফারাবীর সাথে বার বার কথা বলার চেষ্টা করছে তোহা। ফারাবী বার বার তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। তোহার ছবিটা দেখে এমন করা উচিৎ হয়নি। তার উচিৎ ছিল, ফারাবীর মুখ থেকে সত্যিটা শোনা। রাতের খাবার খেয়ে ফারাবী রুমে আসতেই, পেছন পেছন তোহাও রুমে এলো। পেছন থেকে ফারাবীকে জ’ড়ি’য়ে ধরে বলল,
“সরি, আসলে ওই ছবিটা দেখে ক’ষ্ট পেয়ে ফেলেছিলাম। তাই এমন করেছি। পরে জানলাম ওইটা আপনার বোন। আমিতো জানতাম না যে আপনার বোন আছে।”

ফারাবী তোহার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। কোনো জবাব না দিয়ে বিছানায় বসলো। বলল,
“সব কথাতে এত রিয়েক্ট করা কি আদৌ ভালো তোহা? তুমি বাচ্চা নও। আজ এমন করেছ, সবসময় এমনই করবে। তোমার উচিত মনে কিছু না রেখে সরাসরি আমাকে সবকিছু শেয়ার করা। তাহলেই কিন্তু এত ভুল বুঝাবুঝি হয় না। সবসময় এমন করলে হবে না তোহা। আমি সবসময় এইসব ভালো পাব না।”
তোহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে কেবল শুনছে কথাগুলো। ফারাবী তোহাকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কাছে গিয়ে থুতনিতে হাত দিয়ে, মুখ উঠালো। কপালে চু’মু দিয়ে বলল,
“আমার জীবনে তুমি ব্যতীত আর কোনো নারী আসেনি তোহা। আর আসবেও না। তুমিই আমার শুরু, তুমিই আমার শেষ। মনে কোনো প্রশ্ন জাগলে আমাকে জানাবে সবার আগে। আমি সব ক্লিয়ার করব। আর যাই হোক, তোমার মনে অবিশ্বাস জাগতে দিব না।”

তোহা হাসি মুখে জ’ড়ি’রে ধরে ফারাবীকে৷ ফারাবী হেসে বলল,
“পাগলী একটা।”
তখনি ফারাবীর ফোন বেজে উঠে। সে বিরক্ত স্বরে বলল,
“কে কল দিলো এখন? বউকে একটু আদরও করতে পারি না শান্তিতে।”
ফারাবী প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলে ভিডিয়ো কল দিয়েছে তাশরীফ। ফারাবী তোহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার ভাইয়া কল দিয়েছে।”
তোহা ফারাবীর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কল ধরলো। ওপাশ থেকে তাশরীফ আর আভা হেসে বলল,
“কেমন আছিস তোহা?”
তোহা সুখের হাসি হেসে বলল,

“ভালো আছি ভাইয়া, তোমরা কেমন আছ?”
“ভালো আছি। ফারাবী, গিয়ে কল দিলি না কেন?”
“আর বলিস না, সময় হয়নি। আমিতো ভেবেছিলাম তোহা কল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে।”
“ওর কি সেই বুদ্ধি আছে?”
ভাইয়ের কথা শুনে ল’জ্জা পেল তোহা। আচমকাই বলে উঠল, “অনেককক ধন্যবাদ ভাইয়া।”
আভা অবাক হয়ে বলল,
“ধন্যবাদ কেন দিলি তোর ভাইয়াকে?”
“ভাইয়ার জন্যইতো, আমি উনাকে পেয়েছি নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে।”
স্বল্প মূল্যে নিজেদের জন্য কিনতে অথবা কাউকে গিফট করতে ভিজিট করতে পারেন : রূপঅঙ্গন By Megh পেইজে। ফলো দিয়ে রাখুন সবাই।

আভা অবাক হয়ে ভাবছে, তোহা ফারাবীকে এত সহজেই মেনে নিলো নিজের করে! এইটাতো স্বপ্নের মত হয়ে গেল। সে তাশরীফকে বলল,
“এই শুনেন না… ”
“শুনছি।”
“তোহা ফারাবী ভাইয়ার সাথে কি সুন্দর একসাথে বসে হেসে হেসে কথা বলছিল তাই না? মানে, পুরাই জাদু!”
তাশরীফ অতো কিছু গভীরভাবে ভাবলো না। বলল,
“বিয়ে হয়ে গেছে, মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় আছে? আর তোহাও বুঝেছে, আমি যা করেছি ভালোর জন্যই করেছি। দেখলিইতো, ফারাবী কতটা হাসি-খুশি রেখেছে আমার বোনকে।”
আভা সাইড টেবিল থেকে মিষ্টির বাটি নিয়ে বলল,

“নেন মিষ্টি খান।”
তাশরীফ বিছানায় বসে বলল,
“আমার বাবা ডাক শুনার অনেক শখ আভা। শুনাবি?”
ল’জ্জা পেল আভা। বলল,
“ডাক্তার সাহেব, আমাদের একটা বাবু আসলেই দরকার তাই না?”
হাসলো তাশরীফ। কাছে টেনে নিলো আভাকে।
রাত ৩ টা বাজে। তাশরীফের বু’কে শুয়ে আছে আভা। গভীর কিছু সময় কা’টি’য়ে একসাথে ওরা। তাশরীফ আভার চুলে বি’লি কে’টে দিয়ে বলল,

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২৬

“আমাদের ছেলে বাবু আগে হবে নাকি মেয়ে বাবু?”
“ছেলে।”
“না, মেয়ে।”
“আমি বললাম তো ছেলে।”
“না, মেয়ে। পাপা কা প্রিন্সেস।”
“আচ্ছা, মেয়ে হলে নাম কি রাখবেন ডাক্তার সাহেব?”
তাশরীফ অনেকক্ষণ ভেবে বলল,
“ফারিস্তা।”
“আর ছেলে হলে?”
“ছেলে হলে, ছেলে হলে.. তুমিই বলো বিবিজান।”
“উম্মম ধ্রুব? ধ্রুব নামটা সুন্দর না?”
“হুম অনেক সুন্দর।”
“কার মত সুন্দর বলুনতো?”
“নাম আবার কার মত সুন্দর হবে?”
“আপনার মত সুন্দর ডাক্তার সাহেব। আপনার মত….”

সমাপ্ত