প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৪
মারশিয়া জাহান মেঘ
আভার মাথায় হাত। তোহা ব্যাপারটা বুঝতে পারলো না। সে আভার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি হলো বুঝলাম না। তুই এইসব বলছিস কেন?”
“আমার পায়ে তাকা।”
তোহা তাকিয়ে ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
“তাকালাম। কি হয়েছে?”
“আরে তিতার বইন দেখিস না? আমার প্লাজু প্রায় হাঁ’টু’র উপরে। গ’র’ম লাগছিল বলে খো’লা’মে’লা হয়ে শুয়েছিলাম। ইশশ, কি ল’জ্জা’র বিষয়”
“আশ্চর্য আভা, এইখানে লজ্জার কি আছে? তোর জামাইইতো দেখছে।”
আভা কিছু একটা ভেবে বলল,
“আমার টিশার্ট, আমার টিশার্ট…. তার মানে!”
তোহা আবার বলল,
“কি বিড়বিড় করছিস আভা?”
আভা কাঁদো কাঁদো ফেইস নিয়ে বলল,
“কিছু না।”
সে কিভাবে তোহাকে বলবে? গ’র’মে’র জ্বা’লা’য় টিশার্ট পে’টে’র উপরে তু’লে রেখেছিল। কিন্তু এখনতো দেখছে সোজা হয়ে একদম ঠিকঠাক ভাবে আছে। তার মানে! তার মানে তাশরীফ ভাই….
আর ভাবতে পারলো না আভা। থতমত খেয়ে বসে রইলো বিছানায়।
তোহা তাড়া দিয়ে বলল,
“জলদি উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হ আভা। ভাইয়া এই এলো বলে….”
“আচ্ছা, তুই যা আমি আসছি।”
তোহা যেতেই আভা মনে মনে বলল,
“লজ্জায় আমার মাথা কা’টা যাবে এখন। কিভাবে যে তাশরীফ ভাইয়ের সামনে যাব।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তাশরীফ রুমে আসতেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। অপর প্রান্তের মানুষটাও যে থতমত খায়নি তা নয়। দুজনেই আপাতত চমকে বোবা হয়ে আছে৷ আভা জলদি শাড়ি সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তাশরীফ এসে দেখে আভা শাড়ি পড়ছে। এইটা ঠিক শাড়ি পড়া বলে কি না তা জানা নেই তাশরীফের। কারণ, বুঝাই যাচ্ছে না যে আভা শাড়ি পড়েছে। পে’ট দেখা যাচ্ছে। এলোমেলো হয়ে আছে শাড়ি। আভা এইবার ল’জ্জা’য় হতাশ হয়ে শাড়ির আঁচল আঁ’ক’ড়ে ধরে বিছানায় বসে পড়ল। মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বলল,
“আমি না, তোহা জো’র করেছে যে আজ শাড়ি পড়তেই হবে। কিন্তু, আমিতো শাড়ি পড়তে পারি না।”
“যেইটা পারিস না, এইটা পড়তে যাস কেন? তোহা আগুনে ঝাঁ’প দিলে তুইও আগুনে ঝাঁ’প দিবি?”
জবাবে নিশ্চুপ আভা। তাশরীফ এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে আভার দিকে৷ আভা ভ’য়ে কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছে।
“তাশরীফ এত কাছে আসছে কেন তার?”
কথাটা ভাবতেই হাত পা কাঁ’প’ছে তার।
আভার সব চিন্তাধারা পাল্টে দিয়ে তাশরীফ আভার শাড়ির কুঁচি ধরল। চোখ বন্ধ করে আভাকে বলল,
“উঠে দাঁড়া।”
“কি!”
“কানে কম শুনিস? বললাম বিছানা থেকে উঠে দাঁড়া। আমি শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছি।”
“আপনি শাড়ি পড়াতে পারেন?”
অবাক হয়ে কথাটি বলল আভা।
“এত কথা বলিস কেন আভা? আমি বেশি কথা পছন্দ করি না। ডু ইউ নো দ্যাট?”
চুপসে গেল আভা। সে উঠে দাঁড়াল। চোখ বন্ধ করে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে তাশরীফ। আভার সর্বাঙ্গ কেঁ’পে উঠছে অজানা কৌতুহলে। আভার চোখও বন্ধ করে নিলো অজানা কারণে। কুঁচি গুঁজে দিতে যাবে এমন সময় আভা নে’শা’লো কন্ঠে বলল,
“নাআআ… আমি পারব গুঁজতে।”
আভার হাতে কুঁচি ধরিয়ে দিয়ে, তাশরীফ সঙ্গে সঙ্গেই আভার দিকে না তাকিয়ে চলে গেল রুম থেকে। তাশরীফ বের হতেই তোহা রুমে প্রবেশ করব। বিস্ময় ভরা কন্ঠে বলল,
“আমি এ কি দেখলাম আভা! আমি এইটা কি দেখলাম! আমার ভাই….!
আভা রাগ দেখিয়ে বলল,
” তুই আসলি কেন? পড়ে থাকতি পিনের মধ্যে। পিন আনতে ১০০ ঘন্টা লাগে? পিন আনতে আনতে শাড়ি পড়াই হয়ে গেল।”
“ভাগ্যিস গিয়েছিলাম! নয়তো এত সুন্দর সিনটা মিস হয়ে যেতো না?”
“তোহা, তোকেতো আমি….”
“আহা, রেগে যাচ্ছেন কেন ভাবী? আমার ভাইকে কি তাবিজ-টাবিজ করছেন নাকি?”
আভা নাক বেংচি কে’টে বলল,
“আমার বয়েই গেছে এই তিতা মানুষকে তাবিজ করতে।”
“আমার ভাই মোটেও তিতা না, হেব্বি রোমান্টিক।”
“চল চল, শপিংয়ের জন্য বের হই।”
“হ্যাঁ, চল।”
কালো শাড়িতে আভাকে দেখে চোখ আ’ট’কে গেল তাশরীফের। চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে। চোখে কাজল। কপালে কালো টিপ। কিন্তু, তার কাছে মনে হচ্ছে সামথিং মিসিং। বাট হোয়াট? ওহ হো… ফুল। এত সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে কিন্তু কানে একটা লাল ফুল গুঁজেনি বলে সৌন্দর্যটা খাপ খাচ্ছে না যেনো।
তাশরীফ এইসব ভাবতেই হুট করে ভাবল,
“নো নো, ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী। নিড কন্ট্রোল।”
“তোহা.. উঠেছিস?”
“হ্যাঁ, ভাইয়া উঠেছি। গাড়ি ছাড়ো।”
তাশরীফ গাড়ি স্টার্ট দিলো। তোহার মনটা কেমন জানি ভালো হয়ে গেল। ভাইকে সে সবসময় আনমনাই দেখে আসছে।৷ কখনো পরিবারে সে সময়ই দেয়নি। ওহ, সেতো ভুলেই গিয়েছিল তাদের পরিবার নেই। কিন্তু তোহাকেওতো তাশরীফ কখনো সেইরকমভাবে সময় দেয় না। মামা বাড়ি সে অনেক আগেই ছেড়েছে তাশরীফ। খারাপ সময়ে যাদের কখনো সে পাশে পায়নি, তাদের সুসময়ে পাশে রাখার কি দরকার? “আসলে মানুষ সুদিনেই পাশে থাকে। খারাপ সময়টাতে সবাই পাশে থাকে না। আর যারা খারাপ সময়ে প্রতি নিয়তে সঙ্গ দেয়, তারা আমাদের ভীষণ কাছের মানুষ। আত্মার সাথে সম্পর্ক তাদের সাথে আমাদের।”
দীর্ঘ’শ্বাস নেয় তোহা। কখন যে চোখে পানি এসে আ’ট’কে’ছে তা সে টেরই পায়নি। চোখ মুছে মনে মনে ভাবল সে,
“একটা সময় আসলে সবকিছু কেবল স্মৃতি হয়েই বুঝি থাকে। হয়তো সবার একদিন বর্তমানে এসে মনে হয়, আগের সবকিছুই অতীত কিংবা স্মৃতি।”
তাশরীফ হয়তো জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এতটা কঠিন হয়ে গেছে। হাসি কখনোই সে দেখেনি তার ভাইয়ের।
“তোহা…”
ভাইয়ের ডাকে হুঁ’শ ফিরে তোহার। চোখ মুছে জবাব দিলো,
“কি হয়েছে ভাইয়া?”
“কখন থেকে ডাকছি তোকে এতক্ষণে রেসপন্স করেছিস? কি ভাবছিস এত?”
“কিছু নাতো ভাইয়া।”
“তোহা, মন খারাপ কেন?”
আভা তাকালো পেছনে। আসলেই তোহার চোখ মুখ স্বাভাবিক নয়। সেও বলল,
“কিরে কি হলো?”
“আসলে ভাইয়া, শরীরটা কেন জানি তেমন ভালো লাগছে না।”
ব্রেক ক’ষ’লো তাশরীফ। ব্যস্ত হয়ে বোনের গ’লা’য় কপালে হাত রেখে বলল,
“কই দেখি, জ্বর-টর এসেছে কিনা।”
তোহা নিতে পারলো না আর কেঁদে ফেলল। তাশরীফ অবাক হলো। সেতো কিছু করেনি তোহা কাঁদছে কেন?
“কি হয়েছে তোহা, কাঁদছিস কেন?”
তোহা কেঁদেই যাচ্ছে, কথা বলতে পারছেই না সে কান্নার জন্য। এইবার তাশরীফ গাড়ি থেকে নেমে পেছনের সিটে গেল। বোনের গা’লে দু হাত রেখে আদুরে স্বরে বলল,
“কি হয়েছে তোহা? কে কি করেছে? কোনো ছেলে খা’রা’প কিছু বলেছে? কলেজের কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত?”
তোহা জড়িয়ে ধরে ভাইকে। আভা তোহার মনের ভাব সম্পূর্ণটা বুঝতে সক্ষম হলো। সে তাশরীফকে নিচু স্বরে বলল,
“তোহাকে কখনো বুঝার চেষ্টা করেছেন ভাই হিসেবে? আপনি ডাক্তার হিসেবে বেস্ট তাশরীফ ভাই। কিন্তু একটা বোনের ভাই হিসেবে বড্ড বেখেয়ালি।”
আভার কথাগুলো বোধহয় তাশরীফ শুনতে পেলো। সে চুপসে রইল কিছু সময়। বোনের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
“স্টপ তোহা, আমরা শপিংয়ে যাচ্ছি। কাঁদিস না। তুই কাঁদলে কিন্তু আমি বাসায় ব্যাক করব।”
মুহুর্তেই কান্না থামিয়ে ফেলল তোহা। সে চায় না, সময়টা ওয়েস্ট করতে। তাশরীফ বোনের কপালে চু’মু দিয়ে বলল,
“তোহা, ভাইয়া তোকে সময় দিই না বলে তোর অনেক অভিযোগ আমি জানি। কিন্তু বিশ্বাস কর, সবকিছু তোর জন্যই করি। তুইইতো আমার সব।”
প্রশান্তি বয়ে গেল তোহার মনে। আভা হাসলো মুচকি। কি সুন্দর একটা মুহুর্তের সাক্ষী হয়ে রইল সে।
শপিং মলে এসেছে ১ ঘন্টার উপরে হয়ে গেল তাও তোহা আর আভার শপিং শেষ হচ্ছে না। এক দোকান থেকে আরেক দোকানে তাদের পেছন পেছন তাশরীফেরও যেতে হচ্ছে। তাশরীফ বিরক্ত হয়ে বলল,
“তোরা কি আজ পুরো শপিং মলটাকেই বাড়ি নিয়ে যাবি?”
তোহা বলল,
“আরে ভাইয়া, আরেকটু।”
হঠাৎ তোহা চিৎকার দিয়ে আভাকে ডেকে বলল,
“আভাআআআ দেখ দেখ, এইটা ওই ছেলেটা না? যে তোকে বিয়ে করার কথা ছিল?”
আভা তাকালো সেদিকে। আসলেইতো এইটাইতো পাত্র ছিল। একি! পাত্রের একি বেহাল অবস্থা। হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ কেন!
তোহা বলল,
“চল… আজ এই ব্যাটাকে আমি দেখে নিব। চল…”
আভার কথার জবাবের অপেক্ষা না করেই তোহা চলে গেল ওই ছেলের কাছে। তাশরীফ থামানোর চেষ্টা করতেও পারলো না। আভা আর তাশরীফ পেছন পেছন গেল। তোহা ছেলেটার টিশার্টের কলার চে’পে বলল,
“কিরে, যেই মেয়ের সাথে পালিয়েছিস, সেই মেয়ে কি মে’রে তক্তা বানিয়ে দিয়েছে?”
ছেলেটা আচমকা হা’ম’লা’তে ভ’য় পেয়ে গেল। আভার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি পালায়নি, আমাকেতো পালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৩
আভা অবাক হয়ে বলল,
“মানে?”
“মানে… ”
ছেলেটা কিছু বলতে যাবে এমন সময় দৃষ্টি যায় তাশরীফের দিকে। মুহুর্তেই ছেলেটার মুখ থেমে যায়।