প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৭
মারশিয়া জাহান মেঘ
দীর্ঘ জার্নির পর, সিলেট রিসোর্টে এসে পৌঁছালো আঁধারীনি আর ধ্রুব। ধ্রুবকে আঁধারীনির সাথে রুমে ঢু’ক’তে দেখে,আঁধারীনি আমতা আমতা করে বললো,
“রুম কি একটাই নিয়েছেন?”
ধ্রুব গলা কাশি দিয়ে ঝেড়ে বললো,
“তুই কি চাস? একটাই রুম নিই। অবশ্য একটাই নেওয়া উচিত। অনেক কিছু করা বাকি।”
“কি!”
“না, মানে একসাথে বসে বসে সিনেমা দেখা, স্ন্যাকস খাওয়া, ভালো হতো না? কিন্তু, রুম নিয়েছি ২ টা। বিয়ের আগেতো আর ওইসব করা যায় না।”
“মানে! কিসব? আর বিয়ে মানে কি? কি বলছেন এইসব ধ্রুব ভাই? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“না, কিছু না। তুই ফ্রেশ হতে যা, আমি আমার রুমে যাচ্ছি।”
তখনি ধ্রুবর ফোনে একটা কল আসলো। ধ্রুব আঁধারীনিকে বললো,
“তুই থাক, আমি আসছি।”
“আচ্ছা।”
ধ্রুব বেরিয়ে ফোন রিসিভ করে বললো,
“এসেছিস? আচ্ছা, ওইখানেই থাক, আমি আসছি।”
আঁধারীনি ব্যগ রেখে, জানালার পর্দা ছড়িয়ে দিলো। পর্দা ছড়াতেই দেখতে পেলো প্রকৃতির চমৎকার সৌন্দর্য। রিসোর্টটা সুন্দর। রুমটা বেশ বড়ো। মজার ব্যাপার হলো, রুমটাতে এডজাস্ট একটা কিচেন রুমও আছে। খানিক বাদেই আঁধারীনি শুনতে পেলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আঁধার…”
ধ্রুবর ডাকে পেছন ফিরে তাকালে আঁধারীনি। ধ্রুবর পাশে অজানা কাউকে দেখতে পেলো সে। সুদর্শন মানুষটা কালো স্যুট পড়ে আছে। আঁধারীনি কিছু বলার পূর্বেই ধ্রুব বললো,
“আঁধার, এদিকে আয়।”
আঁধার এগিয়ে গেল। অবুঝ চাহনি নিয়ে বললো,
“উনি?”
“আমার বন্ধু শাফায়েত খন্দকার শায়ান। আমেরিকার একজন টপ বিজনেসম্যান।”
আঁধারীনি পরখ করলে শায়ানকে। শায়ানের সুন্দর দৃষ্টি তার দিকেই। আঁধারের চোখাচোখি হতেই আঁধার বিব্রত হয়ে বললো,
“ধ্রুব ভাই, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি, তোমরাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমার ভীষণ ক্ষি’ধে পেয়েছে।”
ধ্রুব বললো,
“আচ্ছা, তুই যা।”
আঁধারীনি ওয়াশরুমে যেতেই ধ্রুব তাকালো শায়ানের দিকে। শায়ান এখনো আঁধারীনির ওদিকেই তাকিয়ে আছে। ধ্রুব বেশ ধরা সুরে বললো,
“সাবধান শায়ান, তোর ওই কুদৃষ্টি সব জায়গায় মানায় না।”
“কেন? আঁধার কি মেয়ে নয়? তুই ভুলে যাস না আমি কেন এই জায়গায় এসেছি।”
“ধ্রুব চৌধুরী, আমানতের খেয়ানত করে না।”
[২০]
আঁধারীনি, ধ্রুব আর শায়ান একসাথে বসে রিসোর্টে খাচ্ছে। আঁধারীনি হেসে ধ্রুবকে বললো,
“ধ্রুব ভাই, সাত রংয়ের চা হয় নাকি!”
শায়ান হেসে বললো,
“সিলেটে হয়।”
আঁধারীনি চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললো,
“হ্যাঁ, তাইতো দেখছি।”
ধ্রুব শায়ানকে হেসে বললো,
“তাও ভালো, চা সাত রংয়ের হয়। মানুষতো ১০০ রংয়ের হয় শায়ান।”
শায়ান বাঁকা হেসে বললো,
“এইটাতো আদিম যুগের খেলা। তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। চা বাগানে যাব।”
“বাগানে? তুই আর আঁধার যা।”
সঙ্গে সঙ্গে আঁধারের আপত্তিকর বাক্য,
“আপনাকে ছাড়া যাব না।”
“শায়ান আছেতো। শায়ান থাকা মানেই আমি থাকা।”
“না, আপনাকে ছাড়া আমি কোথাও যাচ্ছি না ধ্রুব ভাই।”
শায়ান বললো,
“এত কথা কিসের বুঝতে পারছি না ধ্রুব। তুই জলদি খা, তোকে নিয়েই যাব।”
গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শায়ান। মূলত সে আঁধারীনির মতে ঘোর অন্যায় করেছে। অনুমতি ব্যতীত একটা অচেনা মেয়ের হাত ধরা কতোটা যৌক্তিক? কিন্তু, শায়ান কোনো রিয়েক্ট করলো না। উল্টো হেসে বললো,
“সরি।”
আঁধারীনি বিব্রত হয়ে দৌড়ে গেল ধ্রুবর কাছে। ধ্রুব কিছুটা দূরে একটা দোকানের সামনে। এই পুরো বাগানে দোকান যে পাওয়া যাবে তাতে বেশ সন্দিহান ছিল ধ্রুব। কিন্তু, ভাগ্য ভালো থাকায় পেলে ফেললো। পানিও নিয়ে নিলো। আঁধারীনিকে চুপসে থাকতে দেখে ধ্রুব কিছু একটা আঁচ করলো। চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা নিশ্বাস নিলো। বললো,
“কি হয়েছে আঁধার?”
“আপনি এইখানে কেন? আমার সাথে চলুন।”
“কিছু হয়েছে?”
“না, কিছু হয়নি। কিন্তু, একা ভালো লাগছে না।”
“একা কোথায়? শায়ান আছেতো।”
“সবাইকে আমার ভালো লাগতে হবে?”
“কি সমস্যা আঁধার? শায়ান ভালো ছেলে। ওহ তোকে কিছুই করবে না।”
“সে কি যে ভালো, আমি বেশ বুঝতে পেরেছি।”
ধ্রুব কৌশলে জেনে নিলো যে কিছু একটা আসলেই শায়ান আঁধারীনির সাথে করেছে। ধ্রুব আঁধারীনির হাত ধরে বললো,
“চল, বাগানের ভেতরে যাই।”
শায়ানের কাছে ওরা দুজন যেতেই শায়ানের দৃষ্টি গেল, আঁধারীনি আর ধ্রুবর হাতের দিকে। ধ্রুব সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিলো, আঁধারীনির হাত। প্রসঙ্গ এড়িয়ে বললো,
“চল যাই।”
আঁধারীনি বুঝলো না কিছু। ওর হাত কেন ছেড়ে দিলো ধ্রুব?! আঁধারীনি ধ্রুবর হাত নিজ থেকে ধরলো। ধ্রুব ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও পারলো না। মনে মনে বললো,
“এখন সমস্যায় আছি আঁধার, কেন বুঝতে পারছিস না তুই?”
“এই নিন পানি, আপনার মেইবি শ’রী’রটা ভালো লাগছে না।”
আঁধারীনির দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিলো, শায়ান। আঁধারীনি তাকালো ছেলেটার দিকে। ধ্রুবর দিকে তাকাতেই ধ্রুব বললো,
“খা পানি।”
আঁধারীনি পানির বোতলটা নিয়ে, পানি খে’লো। তারপর, বললো,
“আপনি কিভাবে বুঝলেন? আমার ভালো লাগছে না? আমি ঠিক নেই?”
“আপনার চোখ পড়তে পারি আমি। ”
ধ্রুব হঠাৎ বললো,
“তোরা এইখানে বস, আমি আসছি।”
আঁধারীনি বললো,
“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
“ওই যে সামনের ওই দুতলা বাড়িটাই।”
আঁধারীনি দৃষ্টি রাখলো সেইখানে। কি সুন্দর, বাঁশের ঘর! আঁধারীনি বললো,
“ওইখানে কেন? আমাকেও নিয়ে যান, কি সুন্দর!”
“আমি ওই সুন্দর ঘরে থাকার ব্যবস্থাই করছি। বস, আমি আসছি।”
ধ্রুব উঠে যেতেই শায়ান বললো,
“আমি যেইভাবে চোখ পড়লাম, আপনি সেইভাবে কারো মন পড়তে পারবেন?”
“অদ্ভুত কথা বললেনতো, চোখ, মন পড়া যায়?”
“পড়া যায়, যদি মন থেকে অনুভব করা যায়।”
“আপনি বলছেন, আপনি মন থেকে অনুভব করে আমার খারাপ লাগা বুঝলেন?”
হাসলো শায়ান। আঁধারীনির অজন্তেই ভালো লাগলো হাসিটা। বললো,
“আপনার হাসি সুন্দরতো।”
“সত্যি?”
“আমি কি মিথ্যে বলছি?”
“আপনি যেহেতু বলেছেন, তার মানে একদম সত্যি, আমার হাসি আসলেই সুন্দর। কারণ, আপনি বলেছেন। আর, আপনার বলা কোনো কথাই মিথ্যে হতে পারে না।”
আঁধারীনি পরখ করলো শায়ানের দিকে। সাদা কাতুয়া পড়েছে ছেলেটা। সাথে জিন্স। হাতে ঘড়ি,চুলগুলো বেশ সুন্দর, পরিপাটি। বাংলাদেশের বেশভূষা। শায়ান বললো,
“আমাকে নিয়ে ভাবছেন?”
অবাক হলো আঁধারীনি। বললো,
“বুঝলেন কেমন করে?”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৬
“ওই যে চোখ দেখে।”
শব্দ করে হেসে ফেললো আঁধারীনি। মনে মনে বললো,
“না, লোকটা ততোটা খারাপ নয়, যতোটা আমি ভেবেছিলাম।”