প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৮

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৮
মারশিয়া জাহান মেঘ

“এই নিন পানি, আপনার মেইবি শ’রী’রটা ভালো লাগছে না।”
আঁধারীনির দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিলো, শায়ান। আঁধারীনি তাকালো ছেলেটার দিকে। ধ্রুবর দিকে তাকাতেই ধ্রুব বললো,
“খা পানি।”
আঁধারীনি পানির বোতলটা নিয়ে, পানি খে’লো। তারপর, বললো,
“আপনি কিভাবে বুঝলেন? আমার ভালো লাগছে না? আমি ঠিক নেই?”
“আপনার চোখ পড়তে পারি আমি। ”
ধ্রুব হঠাৎ বললো,

“তোরা এইখানে বস, আমি আসছি।”
আঁধারীনি বললো,
“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
“ওই যে সামনের ওই দুতলা বাড়িটাই।”
আঁধারীনি দৃষ্টি রাখলো সেইখানে। কি সুন্দর, বাঁশের ঘর! আঁধারীনি বললো,
“ওইখানে কেন? আমাকেও নিয়ে যান, কি সুন্দর!”
“আমি ওই সুন্দর ঘরে থাকার ব্যবস্থাই করছি। বস, আমি আসছি।”
ধ্রুব উঠে যেতেই শায়ান বললো,
“আমি যেইভাবে চোখ পড়লাম, আপনি সেইভাবে কারো মন পড়তে পারবেন?”
“অদ্ভুত কথা বললেনতো, চোখ, মন পড়া যায়?”
“পড়া যায়, যদি মন থেকে অনুভব করা যায়।”
“আপনি বলছেন, আপনি মন থেকে অনুভব করে আমার খারাপ লাগা বুঝলেন?”
হাসলো শায়ান। আঁধারীনির অজন্তেই ভালো লাগলো হাসিটা। বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপনার হাসি সুন্দরতো।”
“সত্যি?”
“আমি কি মিথ্যে বলছি?”
“আপনি যেহেতু বলেছেন, তার মানে একদম সত্যি, আমার হাসি আসলেই সুন্দর। কারণ, আপনি বলেছেন। আর, আপনার বলা কোনো কথাই মিথ্যে হতে পারে না।”
আঁধারীনি পরখ করলো শায়ানের দিকে। সাদা কাতুয়া পড়েছে ছেলেটা। সাথে জিন্স। হাতে ঘড়ি,চুলগুলো বেশ সুন্দর, পরিপাটি। বাংলাদেশের বেশভূষা। শায়ান বললো,

“আমাকে নিয়ে ভাবছেন?”
অবাক হলো আঁধারীনি। বললো,
“বুঝলেন কেমন করে?”
“ওই যে চোখ দেখে।”
শব্দ করে হেসে ফেললো আঁধারীনি। মনে মনে বললো,
“না, লোকটা ততোটা খারাপ নয়, যতোটা আমি ভেবেছিলাম।”

ধ্রুব দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিল, আঁধারীনি আর শায়ানের কথোপকথন৷ সে মূলত তাদেরকে একা সময় কাটাতে দেওয়ার জন্যই অজুহাত দিয়ে দূরে সরে এসেছে। বু’কে হাল্কা ব্যাথা অনুভব করলো ধ্রুব। বসে পড়লো সেইখানে। ভিন্ন কিছু ভাবছে সে। আঁধারীনিকে শায়ান ভালোবাসে। এখন থেকে নয়, সেই হাই স্কুল থেকেই। লন্ডনে ফারাবী আর শায়ান একসাথেই ছিল। মানে, বন্ধু হিসেবে। কিন্তু, পেশায় দুজন সম্পূর্ণ ভিন্ন। ধ্রুব ডক্টর, শায়ান বিজনেস ম্যান। দুজনই জানের বন্ধু। সেই, ছোট বেলা থেকেই। একজন আরেকজনের জন্য সব করতে পারে। এই সব করতে পারা থেকে যে, আঁধারীনিকেও ছেড়ে দিতে হবে তা ভাবনায় ছিল না ধ্রুবর। একদিন শায়ান বলে উঠল, “আঁধারকে আমার ভালো লাগে ধ্রুব, এইটাকে ভালো লাগা না, ভালোবাসাও বলা যায়। কারণ, আঁধারকে ছাড়া আমি বাঁচব না। ওহ আমার সবকিছুতে গভীরভাবে মিশে গেছে।” চোখ ফ্যালফ্যাল করে কেবল তাকিয়ে ছিল ধ্রুব সেইদিন। জবাবে কি বলবে ভেবেই যেন পাচ্ছিলো না। শায়ান দু হাতের মুঠোয় ধ্রুবর হাত রেখে করুণ কন্ঠে বলেছিল,
“তোর কাছ থেকে তেমন কিছুই কখনো চাইনি। আজ চাইছি, দিবি আঁধারকে আমার করে?”
বোকা ধ্রুব সেইদিন কথা দিয়েছিল। নিজের ভেতরে থাকা ভালোবাসাকে সে সেইদিন নিজেই হ’ত্যা করেছিল। বলেছিল,

“ঠিক আছে, প্রতিষ্ঠিত হ, পরে দেখা যাবে।”
আজ সেই দেখা যাওয়াটাই হলো। সবকিছু চোখের সামনে মেনেই যেন নিতে পারছে না ধ্রুব। আঁধারকে সেও ভালোবাসে। পাগলের মতো ভালোবাসে। বু’কের পেইনটা বাড়লো বোধহয়। ধ্রুব কোনোরকমে মিনমিন করে বললো,
“গ্যাস্ট্রিকের ব্যথাটা বাড়লো নাকি?”
ফিসফিস করে অদৃশ্য কিছু যেন তাকে বলে গেল,
“গ্যাস্ট্রিক নয়, ব্যথাটা অন্য কিছুর৷ আঁধারের জন্য এই যন্ত্রণা।”

রিসোর্টে ওরা তিনজন ফিরে ঠিক সন্ধ্যা ৬ টায়। আঁধারীনি ক্লান্ত হয়ে বললো,
“ধ্রুব ভাই, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। তোমরা গিয়ে বসো।”
“নাস্তা করবোতো আঁধার। একেবারে নাস্তাটা করেই রুমে যা।”
“ভালো লাগছে না। যাও তুমি, আমি আসছি।”
আঁধার চলে গেল রুমে। শায়ান আর ধ্রুব রিসোর্টের নিচতলায় থেকে গেল। এইখানেই সব খাওয়া-দাওয়া করা হয়। বুফে এইটা। শায়ান ধ্রুবকে বললো,
“তুই সব, ওর খাবারটা আমি ওকে দিয়ে আসছি।”
“তারতো কোনো প্রয়োজন নেই শায়ান, আঁধার এইখানেই আসবে খেতে।”
“তাও, আমি যাচ্ছি, তুই বস।
শায়ান প্লেটে করে খাবার নিয়ে আঁধারীনির কাছে গেল। আঁধারীনি মাত্র ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসেছে। বাইরে যেতেই ইচ্ছে করছে না তার। ক্ষিদেও পেয়েছে। আবার, যেতেও ইচ্ছে করছে না। অলসতা কাজ করছে। তখনি শায়ান রুমে প্রবেশ করলো। শায়ানকে দেখে আঁধারীনি বললো,

“আপনি এইখানে কেন? খেতে বসেননি?”
“আপনাকে খাবার দিতে আসলাম।”
“আমিতো নীচেই যেতাম।”
“তা হয়তো যেতেন, মনের বিরুদ্ধে। ক্লান্ত লাগছে অনেক? খেয়ে শুয়ে পড়ুন।”
“আপনি কিভাবে বুঝলেন, মনের বিরুদ্ধে যেতে হতো আমাকে?”
“চেহারায় সম্পূর্ণ শক্তি’হীন ভাসমান। তাছাড়া, সারাদিন বাইরে এত ঘুরেছি আমরা, যে আলাদাভাবে নিচে গিয়ে খাওয়াটাও একটা ঝামেলা মনে হচ্ছে আপনার কাছে।”
শায়ান খাবারটা রেখে বেরিয়ে গেল। আঁধারীনি এক ধ্যানে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
“এত কেয়ারিং! কি সুন্দর বুঝে গেল, মনের কথা।”

ধ্রুব রুমে এলো আঁধারীনির। সেই সন্ধ্যায় যে মেয়েটা রুমে এলো, বাইরে আর বের হয়নি। ধ্রুবকে দেখে আঁধারীনি শোয়া থেকে উঠে বসে। ধ্রুব বললো,
“রাতে মানুষ, বাইরে ঘুরছে এইখানে। আর তুই রুমে?”
“ভালো লাগছে না এখন। আজ পুরোপুরি রেস্ট নিয়ে, কাল থেকে দুমছে ঘুরব।”
“তাহলে, শুয়ে পড়। ঘুমা। আমিও যাই, শুয়ে পড়ি।”
“আচ্ছা।”
“সন্ধ্যায় যে সে খেয়ে ঘুমালি, এখন আর খাবি না? না খেয়েই রাত পার করবি?”
“পে’ট ভ’রাতো।”

ধ্রুব পাশে তাকালো। ব্রেড আছে৷ সে নিজেই এনে রেখেছিল। আঁধারের যদি মাঝরাতে কিছু খেতে ইচ্ছে করে? ওইটা ভেবে। ধ্রুব ব্রেড হাতে নিয়ে তাতে নিউট্রেলা ম্যাশ করলো। তারপর আঁধারের হাত ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“এইটা খেয়ে, পানি খাবি। তারপর, চুপচাপ শুয়ে পড়বি। ফোন টে’পা’টে’পি চলবে না।”
আঁধারীনি মুচকি হাসলো। ধ্রুব বেরিয়ে গেল রুম থেকে। আঁধারীনির হাসির রেখা যেন এখনো ঠোঁ/টেই লেগে আছে। ধ্রুব রুমে গিয়ে দেখলো শায়ান ল্যাপটপ টি’প”ছে। ধ্রুব বিছানায় উঠে বসে ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখে বললো,
“এইখানে এসেও কাজ?”
“আমিই কাজের পিছু ছাড়ছি না।”
“তাহলে আসার কি দরকার ছিল? না আসলেইতো পারতি।”
“কাজের পিছুইতো ছাড়ছি না, আঁধারের পিছু ছাড়ব কিভাবে বল?”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৭

মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গতেই, ধ্রুব লক্ষ করলো, শায়ান তার পাশে নেই। সঙ্গে সঙ্গে উঠে বসলো সে। দরজা খো’লা। ধ্রুব বিছানা থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে আঁধারের রুমের দিকে গেল। আঁধারও নেই! ধ্রুব ওদেরকে খুঁজতে খুঁজতে রিসোর্টের বাইরে বেরিয়ে এলো। এত রাত, অথচ কাপলদের আনাগোনা কমেনি। ধ্রুব পকেট থেকে ফোন বের করতে গিয়ে দেখলো ফোন নেই। বিরক্তে বলে উঠল,
“ওহ শীট, ফোনটাও রুমে ফেলে এসেছি।”
হঠাৎ ধ্রুবর চোখ যায় সুইমিংপুলের দিকে। আঁধারীনি আর শায়ান বসে আছে সেইখানে। সুইমিংপুলে পা রেখে বসে আছে দুজন। হাতে হাত রেখে কথা বলছে।

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৯