প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১১

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১১
মারশিয়া জাহান মেঘ

ধ্রুবর সামনে বসে আছে শায়ান। সানগ্লাস ব্লেজারের থেকে নিয়ে, চোখে পরতে পরতে বললো,
“খেলাটা তুই বড্ডা কাঁচা খেলে ফেললি ধ্রুব। এমন কয়েকটা মশা পাঠিয়েছিস? আমাকে মা’রা’র জন্য।”
ধ্রুব রক্তিক চোখে তাকিয়ে থাকে শায়ানের দিকে। হাত শক্ত করে দাঁতে দাঁত চে’পে বললো,
“অতিরিক্ত আমার কিছুই পছন্দ নয় শায়ান। যেইটা পছন্দ নয়, ওইটাই তুই বেশি বেশি করছিস।”
“এমনটা কি হওয়ার কথা ছিল না?”
“না, এতোটা হওয়ার কথা ছিল না। আমি বলেছিলাম, আঁধার রাজি হলে তবেই তুই ওর সাথে ক্লোজ হবি। তুইতো এর আগেই অতিরিক্ত করছিস।”
“এক হাতে তালি বাজে?”
ধ্রুব শায়ানের কলার চে’পে ধরে বললো,
“আর একটাও বা’জে কথা বললে তোর অবস্থা আমি খারাপ করে ফেলব শায়ান।”
“কুল ডাউন ডক্টর ধ্রুব চৌধুরী, কুললল। ছাড় আমাকে। তোর অতিরিক্ত রাগ আমাকে বুঝিয়ে দিলো, তুইও আঁধারকে ভালোবাসিস।আচ্ছা চল… তোর আর আমার মাঝে একটা চুক্তি করা যাক। যে জিতবে আঁধারীনি তার।”
“আর যে হারবে?”
“বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাবে।”
” ওকে, ডান… চ্যালেন্জ এক্সসেপ্টেড।”

ধ্রুব আর শায়ানকে একসাথে দেখে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস নিলো আঁধারীনি। ধ্রুব কিছু হয়নি এমন ভাব করে রুমে চলে গেল। আঁধারীনি চিন্তিত হয়ে বসেছিল নিচে। এইভাবে ধ্রুব পাশ কা’টি’য়ে চলে যাওয়াতে ক’ষ্ট পেলো সে। শায়ান পাশে গিয়ে বসে আঁধারীনির। মুচকি হেসে বলে,
“মন খারাপ?”
“না, যাইহোক কোথায় ছিলেন সকাল থেকে?”
“চিন্তা করছিলে?”
“আমি না, ধ্রুব ভাই।”
“সেতো করবেই। বেঁচে ফিরেছি ভেবেই বোধহয় মন খারাপ।”
“নিজে নিজে কি বলছেন?”
“কিছু না। উপরে চলো।”
“আচ্ছা।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শায়ানের সাথে আঁধারীনিও উপরতলায় গেল। ধ্রুবকে তার এখন বোরিং লাগছে। যে তাকে বিন্দু মাত্র বিশ্বাস করে না, তাকে দেখলে অ’স’হ্য লাগাটা অস্বাভাবিক কিছু না। শায়ান ধ্রুবকে দেখিয়ে আঁধারীনিকে বললো,
“আঁধার, ঘুরতে যাবে বিকেলে?”
আঁধারও ধ্রুবকে জেলাস ফিল করানোর জন্য বললো,
“হ্যাঁ যাব ভাইয়া। সবসময়তো ধ্রুব ভাইয়ের সাথেই যাই। ধ্রুব ভাইয়েরও মুড ভালো নেই আজ। তাই না ধ্রুব ভাই?”
আঁধারের কথা শুনেও কিছু বললো না ধ্রুব। মনে মনে যে খুব একটা জ্বলেনি সে, তাও নয়। আবার কিছু বলতেও পারছে না।
শায়ান বললো,
“তাহলে আর কি? আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। আজতো তোমাকে টাইম দিতে হবে। আমি অবশ্য, এমন টাইম আগে কখনো কোনো মেয়েকে দিইনি। তুমিই প্রথম।”
আঁধার ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি অনেক স্পেশাল আপনার কাছে তাই না শায়ান ভাইয়া?”
“অবিয়াসলি।”

কথাটি বলেই শায়ান ওয়াশরুমের দিকে যায়। যাওয়ার সময় ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের ইশারায় একটা হাসি দেয় সে। আঁধার যেই রুম থেকে বের হয়ে যাবে, ধ্রুব বললো,
“যাচ্ছিস কেন? শায়ানের জন্য অপেক্ষা কর। একসাথে ঘুরতে যাবি না?”
“যাওয়ার সময় যাব। এখন রুমে যাই।”
“না না, রুমে যেতে হবে না। এইখানে সুন্দর করে আসন পেতে দিই, আপনি বসে থাকুন ম্যাডাম। তারপর, স্যারকে নিয়ে রাজ্য ভ্রমণে যাবেন।”
কপাল কুঁচকে আসে আঁধারীনির। থমথমে গলায় বললো,
“এইভাবে কেন বলছেন ধ্রুব ভাই? আপনি যাবেন? চলুন আমাদের সাথে। আমাদেরতো না নেই।”
“ফুপ্পিকে কল দিব?”
আঁধারীনি থতমত খেয়ে গেল। আমতা আমতা করে বললো,
“ধ্রুব ভাই…”
“বলুন ম্যাডাম…”
“কোনো কিছু হলেই মায়ের কথা তুলেন কেন?”

“এক পা বাইরে রেখে দেখ, কোনো কথা ছাড়াই ফুপ্পিকে কল দিব।”
আঁধারীনি চুপ মেরে গেল। ওড়না প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে অনেকাংশে ঝড়ের বেগে বললো,
“আচ্ছা আচ্ছা যাব না। আপনার বু’কে ঘুমিয়ে থাকব। বু’কটা পেতে দিনতো। বালিশ ভেবে শুয়ে থাকি।”
আঁধারীনির মুখে এহেন কথা শুনে ধ্রুব শার্টের বোতাম খু’ল’তে খু’ল’তে আঁধারীনির দিকে এগুতে এগুতে বললো,
“আয়, কাছে আয়।”
আঁধারীনি অবাক হলো। সে ভেবেছিল সে কথাটা বললে, ধ্রুব তাকে ধ’ম’ক দিবে। কিন্তু! ধ্রুবতো সত্যি সত্যি দিয়ে দিচ্ছে। আঁধারীনি, দু হাত দিয়ে মুখ ঢা’কে। ধ্রুবর হঠাৎ চোখ যায় কিছু একটাতে। থেমে যায় সে। তারপর মগ্ন হয়ে বললো,
“তোর ওইটা অনেক সুন্দরতো।”
আঁধারীনি হা হয়ে তাকিয়ে বললো,
“ওইটা! ওইটা মানে কোনটা?”
“গলার নিচে, বু’কের উপরের বিউটি স্পট’টা।”

ধ্রুব পারফিউম দিয়ে মাত্রই চুল ঠিক করছিল, তখনি কল আসে তার ফোনে। স্মিতা কল দিয়েছে ওকে। মুখে ফোটে উঠে হাসি। ঝলমলে হেসে কল ধরলো সে। বললো,
“কেমন আছ স্মিতা?”
“ভালো আছি ধ্রুব, তুমি?”
“আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি।”
“তোমার কথা ভাবছিলাম অনেকদিন ধরে।”
“আমিও। তবে, সা হ স হয়নি কল দিতে।”

“আমাকে কল দিতে তোমার সাহসের প্রয়োজন কেন পড়বে স্মিতা? আ’ম অলওয়েজ ফ্রি ফর ইউ।”
ওপাশ থেকে শোনা গেল, স্মিতার ঝলমলে হাসি। শব্দ দিয়ে ঘেরা হাসি। আঁধারীনি বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে, মেয়েটা সুখ অনুভব করছে ধ্রুবের সাথে কথা বলে। আঁধারীনি দরজার বাইরে থেকে সব শুনছে ধ্রুব আর স্মিতার কথা। সে এসেছিল, ধ্রুবকে নিচে নিয়ে যেতে, ডিনার করার জন্য। দরজাতেই পা থামিয়ে দিলো। ধ্রুব বললো,
“স্মিতা, আসো, একদিন দেখা করি, কথা বলি। অনেকদিন তোমার ওই সুন্দর চোখ, সুন্দর, হাসি দেখি না।”
“কেন তোমার ওই কিয়ারা কোথায়?”
“কিয়ারা আমাকে চায়, আমিতো চাই না।”
“তাহলে তুমি কি চাও?”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১০

“আমি তোমাকে চাই স্মিতা, শুধুই তোমাকে।”
আঁধারীনি আর দাঁড়াতে পারলো না। সরে গেল দরজা থেকে। কল কে’টে দেয় ধ্রুব। শব্দ করে নিজে নিজেই হেসে গড়াগড়ি খায় সে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় আঁধারীনিকে পেছন থেকে দেখেই স্মিতার সাথে এমন কথা বলার ভান ধরেছিল সে। আপনমনেই হাসতে হাসতে ভাবলো সে,
“এইবার ঠিক জায়গায় ঢিল মে’রেছি।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১২