প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৭

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৭
মারশিয়া জাহান মেঘ

তোহা দরজা খু’ল’তেই মু’খে এক বালতি পা’নি ঢে’লে দিলো। কিন্তু ভুল মানুষকে দেওয়াতে তার চোখ মুখে ভীতুতা সুস্পষ্ট। একটু আগেই তোহা আভাকে গালে কাজলের কালি লাগিয়ে দিয়েছে। তোহা আর আভা ছিল বাগানে। আভার দৌঁড়ানিতে তোহা ড্রইংরুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাজতে শুরু করায় সে ভাবে এইটা আভা। তাই মাথায় আনে দুষ্টু আইডিয়া। এক বালতি পানি নেয় আভার মুখে ঢালার জন্য। কিন্তু একি! এতো আভা নয়, এইটাতো একটা ছেলে! ছেলেটার পেছনে এসে দাঁড়ায় আভা। সে অবাক হয়ে তাকাচ্ছে তোহার দিকে। একবার তাকায় তোহার দিকে, আরেকবার তাকায় ছেলেটার দিকে।
আভা বলল,

“এই তোহা, ওনি কে? আর পানি ঢে’লে’ছিস কেন?”
তোহা আমতা আমতা করে বলল,
“আরে, ইয়ে মানে আমিতো ভেবেছি তুই এসেছিস, তাই…”
আভা ফিক করে হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে বলল,
“ইশ, ভুল মানুষের উপর দিয়ে ফেললি তাইতো?”
ওরা ওদের মত কথা বলেই যাচ্ছে, সামনে যে কেউ একজন আছে তারা যেন পাত্তাই দিচ্ছে না। আভা হাসি থামিয়ে বলল,
“আপনিতো একদম ভি’জে গেছেন? আপনি কেন? এইখানে কেন?”
হাত দিয়ে মুখের পানি মুছে কোনোরকমে ছেলেটি বলল,
“আমি ফারাবী, তাশরীফ এর বেস্ট ফ্রেন্ড।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তোহা অবাক হয়ে বলল,
“আপনি ফারাবী রাজ? ভাইয়ার স্কুল ফ্রেন্ড? যে আমেরিকাতে থাকে?”
ফারাবী বোকাসোকা হয়ে বলল,
“জি।”
তোহা ঠোঁ/ট ভি’জি’য়ে নিয়ে আভার দিকে তাকিয়ে, দৌঁড়ে রুমে চলে গেল। ল’জ্জা’য় মাথা কা/টা যাচ্ছে তার। তার ভাইয়া যদি জানতে পারে, তাহলেতো হলোই…
আভা জলদি ব্যস্ত হয়ে বলল,
“আসুন না, আসুন… ওদিকে ওয়াশরুম, আপনি আর্লি চেইঞ্জ করে নিন, নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে।”
ফারাবী মনে মনে বলল,
“ঠান্ডা লাগবে কি, লেগেই গেছে।”
“আপনি, তাশরীফের ওয়াইফ মিসেস আভা রাইট?”
আভা মাথা নাড়িয়ে বলল,
“হ্যাঁ, আপনি জানলেন কেমন করে?”
“মিস্টার তাশরীফ চৌধুরীই জানিয়েছেন। ইভেন আপনার পিকও দেখেছি।”
“পিক!”

আভা অবাক হলো। তাশরীফের কাছে তার পিক ছিল! সব চিন্তা মাথা থেকে বের করে আভা বলল,
“ভাইয়া, চেইঞ্জ করে নিন।”
ফারাবী হাঁচি দিতে দিতে, ওয়াশরুমের দিকে গেল। বেচারার নাক, লাল হয়ে গেছে একদম। ঠান্ডা ওর সই না। অল্পতেই অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
আভা উপরতলায় গেল। দেখল তোহা পড়ার টেবিলে। চোখ বড় বড় করে তাকালো আভা তার দিকে। আড়চোখে আভাকে দেখেও না দেখার ভান ধরল তোহা। অবশেষে না পেরে বলল,
“এমন হা করে তাকিয়ে আছিস কেন আমার দিকে?”
“তুই পড়তে বসেছিস! তাও এখন?”
তোহা তু’ত’লি’য়ে বলল,
“ত্ তো তো কি্ কি হয়েছে শুনি? ভাইয়া এসে খাতা দেখবে।”
আভা মজা নিয়ে বলল,
“দোষ ঢা’ক’তে কত কি! তোর ভাইয়ের বন্ধু এসেছে, রান্না-বান্না কি আমি একা করব? আয় আমার সঙ্গে।”
“না ভাই, আমি যাব না। তুই যা। ওই ছেলের মুখে মাথায় আমি পা’নি দিয়েছি জানলে, ভাইয়া আমার অবস্থা….
কাঁদো কাঁদো ফেইস দেখে হেসে ফেলল আভা। বলল,
” কিছু হবে না। আয়তো…”
এক প্রকার টে’নেই তোহাকে আভা নিয়ে গেল।

সন্ধেবেলা তাশরীফ বাসায় আসাতে অবাক হলো তোহা আর আভা। এত জলদিতো সে কখনোই বাসায় ফিরে না। তাশরীফ পায়ের মোজা জোড়া খু’ল’তে খু’ল’তে বলল,
“ফারাবী এসেছে না? কোথায় ওহ?”
আভা জবাবে বলল,
“তিনি ঘুমাচ্ছে।”
“কোন রুমে?”
“তোহার পাশের রুমে।”
“খেয়েছে?”
“হ্যাঁ, খেয়েই শুয়েছে।”
তোহা বলল,
“ভাইয়া, এত তাড়াতাড়ি এলে যে?”
“ফারাবী এসেছে তাই।”
তোহা নাক বেংচি কে’টে মিনমিনিয়ে বলল,

“কোন না কোন বন্ধু এসেছে তাই জলদি বাসায় ফিরেছে। কোথায়, দেখলাম নাতো, বিয়ের পর বউয়ের জন্য জলদি করে বাসায় ফিরতে।”
তাশরীফ তোহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কিছু বললি তোহা?”
” কই? নাতো কিছু বলিনি ভাইয়া।”
তাশরীফ উপরতলায় গেল। ফারাবী যেই রুমে আছে, সেই রুমে গেল সে। গিয়ে দেখে ফারাবী বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। তখনি ফারাবী চোখ মেলে তাকায়। চোখের সামনে তাশরীফকে দেখে চমকে উঠে। শুয়া থেকে সঙ্গে সঙ্গে উঠে বসে। অবাক স্বরে বলল,
“কখন আসলি হসপিটাল থেকে?”

“মাত্রই। আর ভাবছিলাম, আমাকে কল দিয়ে বলল, বাসায় আয় যত দ্রুত সম্ভব। অথচ, নিজে এখন ঘুমাচ্ছে! ”
ফারাবী হাঁচি দিতে দিতে বলল,
“আরে, দেখ আমার অবস্থা কি। ঠান্ডা লেগে গেছে। হাঁচি দিতে দিতে শেষ।”
“বাংলাদেশের হাওয়া তোকে টাচ করতে না করতেই তোর এই অবস্থা! ”
“বাংলাদেশের হাওয়া না, তোর…”
থেমে গেল ফারাবী। পেছনেই দেখতে পেলো তোহাকে। তোহা বার বার ইশারায় বলছে, তাশরীফকে যেন কথাটি না বলে। তাশরীফ বলল,
“কিরে?”
“না, কিছু না। আসলেই বাংলাদেশের হাওয়া আমাকে চাচ্ছে না বোধহয়।”
“বিদেশি বিড়াল বুঝে ফেলেছে হাওয়াও।”
ফারাবী রাগী ফেইস নিয়ে বলল,
“বিদেশি বিড়াল তাই না? আমি বিদেশি বিড়াল?”
“আরে রেগে যাচ্ছিস কেন? এই নে এই ট্যাবলেটটা খেয়ে নে। ঠিক হয়ে যাবে। তুই রেস্ট নে, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
“ঠিক আছে যা।”
তাশরীফ বেরুতেই তোহা দরজার পাশ থেকে সরে যায়। বড় একটা নিশ্বাস নেয় সে। ভেবেছিল ছেলেটা মনে হয় তাশরীফকে বলেই দিব কথাটা। তোহা ফারাবীর রুমে প্রবেশ করতে করতে মনে মনে বলল,
“যাক বাবা, এবারের মত বেঁচে গেলাম।”
তোহাকে আসতে দেখে ফারাবী বলল,
“আমি চাইলে আপনার ভাইকে কথাটি বলে দিতে পারতাম।”
“দেখুন মিস্টার, বলেও কাজের কাজ কিছুই হতো না। আমার ভাই আমাকে অনেক ভালোবাসে। সো, কিছুই বলতো না।”

ফারাবী মুচকি হেসে বলল,
“তাই? তো, ডাকব নাকি তাশরীফ কে?”
“না না, প্লিজ ভাইয়াকে বলবেন না।”
ফারাবী থুতনিতে হাত রেখে ভাবার ভঙ্গিমা নিয়ে বলল,
“বলব না, একটা শর্তে।”
“কি শর্ত?”
“আমাকে পুরো শহর ঘুরিয়ে দেখাতে হবে। তাশরীফ অনেক ব্যস্ত ওর কাজে। কাজেই, আমাকে সময় দিতে পারবে না।”
“আজবতো! আপনি কেমন ছেলে বলুনতো? লাজ ল’জ্জা কি নেই? একটা মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে চাচ্ছেন?”
“এই বয়সে, এমন একটু -আধটুতো, হওয়ারই কথা তাই না?”
“আমারই ভুল হয়েছে আপনার সাথে কথা বলতে আসা। কথার ধরণ এমন কেন? গার্লফ্রেন্ড ভাবেন নাকি সবাইকে?”
“যেহেতু সিঙ্গেল, সব মেয়েকে গার্লফ্রেন্ড ভাবা, দোষের কিছু না। ইভেন, আপনাকে ভাবাও….”
“কি!”

তাশরীফ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে টাওয়াল দিয়ে ফেইস মুছতে মুছতে দেখল, আভা পড়তে বসেছে। আভাকে দেখে আনমনেই তাশরীফের মনে জেগে উঠল একটা বাক্য।
“কি অদ্ভুত! ছোট্ট এই মেয়েটা শাড়ি পড়লেই এমন পুতুল পুতুল লাগে কেন!”
তাশরীফকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আভা বলল,
“কিছু লাগবে আপনার?”
তাশরীফ বু’কে হাত দিয়ে বলল,

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৬

“লাগবে, পানি লাগবে।”
“আপনি বসুন, আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।”
আভা রুম থেকে বেরুতেই তাশরীফ বড় করে একটা নিশ্বাস ছাড়ল। হাতটা বু’কে নিয়ে আপন মনেই বলে উঠল,
“পা’নির তৃষ্ণা না, সত্যিতো এইটাই, দেখার তৃষ্ণায় শেষ হয় না।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৮