প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৮

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৮
জান্নাত নুসরাত

সকাল ৯:৪০মিনিট। মেহেরুন নেছা জরুরি তলব দিয়েছেন নুসরাতকে তার রুমে যাওয়ার জন্য। তাই নুসরাত ঘুম থেকে উঠতেই নাজমিন বেগম তাড়া দিলেন মেহেরুন নেছার রুমে যাওয়ার জন্য। নুসরাত ব্রাশ করে, নাস্তা করে, কিছুক্ষণ শুয়ে বসে আলসি ভঙ্গিতে গেল মেহেরুন নেছার রুমে।
মেহেরুন নেছার রুমে যেতেই মেহেরুন নেছা বললেন,
“দরজা জনালা লাগাইয়া আইয়া ব?
নুসরাত ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
” কেন?
“চুপ,কর! যা কইতাছি ও কর? ওতো জবান চালাইছ না।
নুসরাত দরজা লাগিয়ে জানালা লাগাতে গেল মেহেরুন নেছা নিজে উঠে গিয়ে জানালার বাহির দিয়ে উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখলেন তার রুমের পাশ দিয়ে কেউ হাঁটছে কিনা? যখন দেখলেন কেউ নেই,তখন তিনি জানালা লাগিয়ে কান লাগিয়ে বসে থাকলেন।
নুসরাত বিরুক্ত হলো মেহেরুন নেছার কান্ড কারখানায়। জানালা লাগিয়ে এতো উঁকি ঝুঁকি মারার কি আছে?

” এরকম করছ কেন? তোমার কিছু কি হয়েছে?
মেহেরুন নেছা উত্তর না দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে জানালার সামনে থেকে সরে এসে দরজার সামনে গেলেন। সেখানে কিছুক্ষণ কান লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে আসলেন।
“কি হয়েছে? এতো গোপনীয়তা পালন করছ কেন?
” আরে, চুপ কর! একটা কডা জানস না দেয়ালের ও কান আছে। তাই ভালা কইরা দেইখা লইতাছি, কোনডা আবার আমার রুমে আইসা কান লাগাইয়া বই রইছে কিনা?
“দরজা জানালা লাগিয়ে রুম এরকম অন্ধকার করলে কেন? অতিরিক্ত কোনো জরুরি কথা কি?
” অতিরিক্ত জরুরি কডা মানে কি? জরুরির উপরে যেইডা থাকব ওইডা কইতাম তোরে।
মেহেরুন নেছার এতো সতর্কথা দেখে নুসরাত মনে করলো সত্যি হয়তোবা কোনো জরুরি কথা আছে। তাই মেহেরুন নেছার মুখের পানে তাকিয়ে সিরিয়াস হয়ে বলল,”কি কথা বলো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“তোর মোবাইল আনচ্ছস?
নুসরাত পকেট থেকে মোবাইল বের করতে করতে বলল,
” হ্যাঁ এনেছি তো!
মেহেরুন নেছা মুখ হাসিহাসি করে বললেন,
“একটা গান বাজা?
নুসরাত কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
” কেন?
মেহেরুন নেছা ব্যথিত গলায় বললেন,
“ইসরাতের বিয়ায় নাচ করলাম আর তুই তো উডাইয়া নিয়া বিয়া কইরা ফালাইচ্ছ তোর বিয়েতে নাচতে পারিনি তাই এখন তোর বিয়া উপলক্ষে আমরা দুইজন দরজা লাগাইয়া নাচমু।
নুসরাত চোখ ছোট ছোট করে বলল,

” বুড়ি তুমি তো দেখছি প্রচুর এডভান্স। আর এটাই তোমার জরুরি কথা।
“হ এটাই জরুরি কডা। এখন কথা কম কইয়া গান বাজা। আর যেই সেই গান বাজাবি না ডিজে গান বাজা।
নুসরাত মাথা নাড়ালো সে ডিজে সং বাজাচ্ছে। নুসরাত ইউটিউবে ঢুকে প্রথমে একটা গান পেল সেটাই প্লে করে দিল। সাউন্ড লো তে থাকা সত্ত্বেও সং এর ব্যাগরাউন্ড সাউন্ড বেশি থাকায় আওয়াজ বেশি হলো। গানের সাথে ব্যাকরাউন্ড সাউন্ড ও বাড়তে লাগলো।
BLACKPINK in your area
BLACKPINK in your area
Been a bad girl, I know I am
And I’m so hot, I need a fan
I don’t want a boy, I need a man

মেহেরুন নেছা নুসরাতের দিকে চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়ে তাকলেন। গান বাজানোর জন্য বলায় এ কী সব গান বাজাচ্ছে? নুসরাত মেয়েগুলোর ডান্স স্টেপ দেখে মেহেরুন নেছার দিকে তাকিয়ে বলল,”এদের গানটা সুন্দর না। আর ব্যাগরাউন্ড সাউন্ড টা যাচ্ছে গানের সাথে।
মেহেরুন নেছা মুখ ফুলিয়ে রাখলেন কথা বললেন না। নুসরাত খেয়াল করে ডান্স স্টেপ দেখলো। তারপর নিজে উঠে গিয়ে মাথা নিচের দিকে দিয়ে ঘুরাতে যাবে তখন ঘাড়ের কাছে হাড্ডির মট করে শব্দ হলো। নুসরাত ঘাড়ে হাত দিয়ে চেপে ধরে উঠে দাঁড়ালো। মেহেরুন নেছা নুসরাতের উপর বিরক্ত হয়ে পিঠে থাপ্পড় লাগালেন।

“কি হয়েছে মারছ কেন?
” তোরে বলছি এসব তিড়িং বিড়িং গান বাজাইতে।
“তো কি বলছ?
” বলছি ডিজে গান বাজানোর জন্য।
“তো এইসবই তো ডিজে গান।
” দূর এসব গানের কোনো জাত হলো! আমাদের যুগের গান বাজা।
“তাহলে আগে বলবে তো?
” dil ye pukaare aa
Jaa mere gham ke sahaare aa jaa
Bhigaa bhigaa hai sama
Aise me hai tu kahaan
Mera dil ye pukaare aa
Jaa mere gham ke sahaare aa jaa

মেহেরুন নেছা হাত উপরের দিকে তুলে নাচছিলেন। নুসরাত অবাক হয়ে তাকালো মেহেরুন নেছার দিকে।
“বুড়ি তুমি তো সেই নাচ জানো।
মেহেরুন নেছা লজ্জা পেয়ে বললেন,
“তোর দাদা তো আমার নাচ দেখে প্রেমে পড়েছিল।
নুসরাত চোখ বড় বড় করে বলল,
” ও বাবা রে!

নুসরাত যখন নিজের রুমে আসলো চোখ বড় বড় হয়ে গেল। তার রুমের দরজায় ইয়া বড় একটা তালা ঝুলানো। কোমরে হাত দিয়ে কপাল ভাঁজ করে কিছুক্ষণ ইসরাতের রুমে দরজার দিকে তাকিয়ে নিজের রুমের দরজার কাছে গেল। যা এতোদিন ধরে পরিত্যক্ত পড়েছিল। সেখানে গিয়ে ও দেখলো তালা ঝোলানো। বাড়িতে যতটা খালি রুম পড়েছিল সবগুলো নুসরাত গিয়ে দেখে আসলো। সবগুলোর দরজায় ইয়া বড় বড় তালা ঝুলানো। জায়িনের রুম ও তালা মেরে রাখা হয়েছে।

নুসরাত সকাল থেকে সবকিছু মিলালো। মেহেরুন নেছার এভাবে জানালা লাগিয়ে থাকে বসানো তারপর একের পর এক গান বাজিয়ে নাচা সব তাহলে বুড়ির প্ল্যান করে করেছে। ইয়া আল্লাহ আমি বোকা বনে গেলাম। নুসরাত মাথার চুল টেনে ধরলো। এই বুড়ি তাকে ও গোল খাইয়ে দিল। ইসরাতের রুমের সামনে এসে কতক্ষণ মাথা ঘষলো। কি করা যায়? কি করা যায়? কোমরে হাত দিয়ে রুমের সামনে পায়চারি করতে লাগলো। কিছু ভাবতে হবে নাহলে বুড়ি তাকে আরশের রুমে ফিট করে দিবে। নুসরাতের ভাবতেই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে তাকে আরশের রুমে পাঠাতে চাচ্ছে এই বুড়ি। এরকম কোনো কালে হতে দেওয়া যাবে না! না মানে না…

নুসরাত নিজেকে বলল, মাথা চালা শালি নাহলে দুনিয়ার বাঁশ খাওয়া খাবি। মাথা কাজ করছে না দেখে মাথায় দু-একটা থাপ্পড় মারলো। হঠাৎ ইরহামের মুখ ভেসে উঠলো নুসরাতের মুখের সামনে। হায় সে তো ভুলে গিয়েছে ইসরাতের রুম গেলে কি হবে ইরহামের রুম তো তারই রুম? ইরহাম মানে সে আর সে মানেই তো ইরহাম? একজন থাকলেই হয়! আজ থেকে ওখানেই ডেরা ঢালতে হবে। নুসরাত নিজেকে বাহবা দিয়ে ইরহামের রুমের দিকে চলে গেল। যেতে যেতে নিজের প্রশংসা করলো কেয়া আইডিয়া লাগায়া হে তুনে। তেরি তো জাবাব নেহি হতি নুসরাত।

ইসরাত রেস্টুরেন্টে হাফ টাইম কাজ করবে। সকাল এগারোটার সময় থেকে তার কাজ শুরু হবে আর রাত আটটার সময় গিয়ে তার ছুটি।
ঘড়িতে আটটা বাজতেই ইসরাত নিজের জিনিস পত্র ঘুছিয়ে নিল। গলায় স্কার্ফ ভালোভাবে পেঁচাল। ক্যামেলিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসলো। পিছন থেকে ক্যামেলিয়া চিৎকার করে বলছে,”টেক কেয়ার সুইটহার্ট । আগামীকাল আবার দেখা হচ্ছে। দেখে শুনে যেও।
ইসরাত রেস্টুরেন্টের বাহিরে বের হতেই দমকা বাতাস এসে তাকে ছুঁয়ে দিল। ভিতরে হিটার অন থাকায় এতো শীত বোঝা যায়নি। কিন্তু এখন ইসরাতের কাছে মনে হলো তার শরীর শিরশির করছে এই শীতে। বিড়বিড় করলো, “বাপড়ে কি শীত?

ক্যাব বুক করে গিয়ে দাঁড়ালো। ইসরাত দেখলো তার দেওয়া লোকেশনে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ক্যাব আসছে। ইসরাত হাত দিতে হাত ঘষলো। মনে হলো, হাত জমে গিয়েছে। মাথায় ভালোভাবে ওড়না পেঁচালো যাতে কানে বাতাস না লাগে। পাঁচ মিনিট পর ক্যাব আসতেই ইসরাত ক্যবে উঠে বসলো।
জায়িনের এপার্টমেন্ট শহর থেকে কিছুটা বাহিরে হওয়ায় কখনো কখনো ক্যাব এপার্টমেন্টের দিকে আসতে চায় না। ড্রাইভার ভিতরে যেতে মানা করে দিল। ইসরাত পেঁচাল করলো না। যেতে চাইছে না, তাহলে তো আর জোর করে নিয়ে যেতে পারে না। অগত্যা গাড়ি থেকে নেমে গেল।

হাত ঘষতে ঘষতে সামনের দিকে হেঁটে গেল। ল্যাম্পপোস্টের গোলাটে আলোয় দেখা গেল দুটো ছেলে রাস্তার মধ্যে টাল হয়ে পড়ে আছে রাস্তার মধ্যে। ইসরাত যতদ্রুত সম্ভব এদের পার করতে চাইলো কিন্তু ইসরাত পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার সময় ছেলে দুটোর মধ্যে মাতালটা ইসরাতকে খেয়াল করে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
ইসরাত চুপচাপ নির্লিপ্ত চোখে তাকালো। মাতাল আর সাথের ছেলেটার দিকে। আশে পাশে একটু সতর্ক চোখ ঘুরালো! দেখলো মানুষ আছে কি না? কিন্তু কোনো মানুষের ছায়া নেই! চিৎকার করলে নিজেরি ক্ষতি।
ইসরাত নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো। মনে মনে বলল, “ডোন্ট প্যানিক, ইট’স নট আ বিগ প্রব্লেম।
ছেলে দুটোর দিকে শান্ত চোখে তাকালো,

” কি চাই?
মাতাল ছেলেটা ইসরাতের গালে ছুড়ি স্পর্শ করে বলল,
“Essaie pas de crier.
ইসরাত বুঝলো না ছেলেটা কি বলছে? ভ্রু কুঁচকে নিল। পাশের ছেলেটা ইসরাতের হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভাঙা ইংরেজি জোড়া লাগাতে লাগাতে বলল,”ডোন্ট ট্রাই টু স্ক্রিম।
ইসরাত মাথা নাড়ালো। মাতাল ছেলেটা ইসরাতের গালে ছুড়ি ভালো করে চেপে ধরে মুখ চুমু খাওয়ার মতো করলো। ইসরাত ছিটকে দূরে সরে গেল। একটুর জন্য ছুড়ি লেগে গাল কাটেনি।
” যা যা পকেটে,মানিব্যাগে,আর এই ব্যাগে আছে সব দিয়ে দাও?
ইসরাত ছেলে দুটোর দিকে পূর্ণ দৃষ্টি ফেলল। দু-জনের মুখ বাচ্চাদের মতো। বয়স সতেরো আটারো হবে। এই বয়সে এসব করছে?

“পড়াশোনার বয়সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মদ খাচ্ছো একজন আর আরেকজন রবারি করছ। তোমাদের দেখে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে।
মাতাল ছেলেটা বুঝলো না ইসরাতের কথা। ছুড়ি ইসরাতের দিকে তাক করে বলল,”পেটে ঢুকিয়ে দিব।
ইসরাত মাতালের কথা শুনে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল।
“এটা তো দেখেই বোঝা যাচ্ছে নকল নাইফ।
মাতাল ছেলেটা তার বন্ধুর দিকে নিভু নিভু চোখে চাইলো। দু-জন কিছু ডিসকাসন করলো নিজেদের মাঝে। মাতাল টা ঢুলো ঢুলো অবস্থায় মোবাইল বের করে তার বন্ধুর কাছে দিল। মাতালের বন্ধু মোবাইল নিয়ে কিছুটা দূরে গেল। যাওয়ার আগে বলে গেল দেখে রাখিস যেন পালাতে না পারে।
মাতাল ছেলেটা ইসরাতের দিকে ছুড়ি ধরে রেখে ঢেকুর তুলল। ঢেকুর তুলার সাথে মুখ দিয়ে বিচ্ছিরি একটা গন্ধ বের হয়ে আসলো। যা ইসরাতের নাকে স্পর্শ করতেই মনে হলো পেট গুলিয়ে বমি চলে আসবে।

মাতালের বন্ধু ফরাসি ভাষায় কলে কথা বলতে লাগলো। ইসরাত পকেট থেকে মোবাইল বের করলো ট্রান্সলেটের জন্য। ইসরাত কে মোবাইল বের করতে দেখেও মাতাল ছেলেটা কিছু বলল না। এদিক সেদিক চোখ টেনে টেনে তাকালো দেখে মনে হচ্ছে জ্ঞান হারাবে। এক জায়গায় দাঁড়াতে পারছে না পড়ে যাবে পড়ে যাবে অবস্থা। ইসরাত যতটুকু কথা শুনল তা ট্রান্সলেট করে তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। ছেলেটা বলছে এখানে একটা মেয়ে পাওয়া গিয়েছে। দেখতে সুন্দর বডি ফিট, আমরা আপনাদের কাছে থাকে বেঁচে দিব তার বিনিময়ে আমাকে দশ হাজার ইউরো দিতে হবে। ওপাশের কথা শোনা গেল না কিন্তু ছেলেটা বলল, আচ্ছা পাঁচ মিনিট আমি ওকে আটকে রাখতে পারবো ততক্ষণে তুমি চলে এসো।

ইসরাত মাতালটার দিকে একবার তাকালো। মাতাল ছেলেটা চোখ বুজে কোনোরকম দাঁড়িয়ে আছে। আর ছুড়ি দিয়ে এদিক-সেদিক তাক করছে। ইসরাত সু্যোগের সৎ ব্যবহার করলো মাতাল টাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দৌড় দিল। মাতাল রাস্তায় পড়ে গিয়ে ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো। মাতালের চিৎকার শোনে মাতালের বন্ধু পিছন ফিরে ইসরাতকে পালাতে দেখে চিৎকার করে ইসরাতকে পালানোর জন্য না করলো। ফোনে লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ” তাড়াতাড়ি আসো তোমার পাখি পালিয়ে যাচ্ছে।
ফোন কেটে পকেটে ঢুকালো। ইসরাত যত দ্রুত সম্ভব দৌড়ানোর চেষ্টা করলো। বুঝলো এরা তাকে হাতের কাছে পেলে ছিড়ে খুবলে খাবে। আল্লাহ এবারের মতো বাঁচিয়ে নাও আর জীবনে রাতে এপার্টমেন্ট থেকে বের হবো না।

রাতের খাবার শেষে নুসরাত ইরহামের রুমে গেল ঘুমাতে। তখন দেখলো রুম ভিতর থেকে লক করে রাখা। নুসরাত ইরহামের রুমের দরজায় বাহির থেকে ধাক্কা দিল কিন্তু ভিতর থেকে ইরহাম কোনো সারাশব্দ করলো না। নুসরাত কয়েকবার নক করলো! ইরহাম কথা বলল না, দরজা ও খুলল না।
“আমি জানি তুই সজাগ শালা, দরজা খুল। নইলে তোর দরজা আজ আমি ভেঙে দিব।
ইরহাম উত্তর দিল না। নুসরাতের রাগের পারদ আকাশ ছুলো। দরজায় লাত্তি মারলো। তবুও ইরহাম দরজা খুলল না। নুসরাত গালি দিতে যাবে তখন দেখল হেলাল সাহেব তার দিকে তাকিয়ে আছেন। নুসরাত বোকা হেসে হেলাল সাহেবের দিকে তাকিয়ে মাথায় ওড়না দিল।

” এখানে কি করছো তুমি?
“জি না কিছু করছি না। ইরহামের সাথে কথা বলতে এসেছি।
“এতো রাতে কথা বলতে হবে না। যাও গিয়ে শুয়ে পরো।
নুসরাত দাঁতে দাঁত চাপলো। হেলাল সাহেবকে চলে যেতে দেখে নুসরাত ভেবে নিল আজ সে অনিকার রুমে গিয়ে ঘুমাবে। চুপচাপ চলে যেতে নিল হেলাল সাহেব সামনের দিকে তাকিয়ে বললেন,”তাড়াতাড়ি এসো! আরশ পরে রুমের দরজা লাগিয়ে দিবে।

নুসরাত রাগে পা দিয়ে মেঝেতে মারলো। হেলাল সাহেব নুসরাত কে ধীরে ধীরে হাঁটতে দেখে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে নিয়ে গেলেন আরশের রুমের দিকে। নুসরাত মেহেরুন নেছাকে গালি দিল। এই বুড়ি সব করেছে। তাকে বসিয়ে রেখে নিজের কাজ হাসিল করে নিয়েছে। আমি ছাড়বো না বুড়ি তোকে। বুড়ি হলে কি হবে? এই বুড়ির মগজ এখনো কাচির ক্যাচ ক্যাচ করে মতো চলে!
হেলাল সাহেব আরশের রুমের দরজায় নক করলেন। আরশ দরজা খুলে মুখের সামনে নুসরাত আর তার বাপকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই হেলাল সাহেব বললেন, “আজ থেকে তোমার রুমে নুসরাত সিফট হবে।
আরশ বিরক্ত হলো। তার রুমে এই ময়লাকে সে কেন রাখতে যাবে?

” ওর রুমে কি হয়েছে?
“আম্মা তালা মেরে দিয়েছে। আজ থেকে ওর রুম ও এটা। নুসরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,মা তোমার কাপড় ও রাখা হয়েছে আরশের কাবার্ডে।
নুসরাত জোর করে ঠোঁট দিয়ে হাসি আনলো। তার মোটেও হাসার ইচ্ছে নেই। সবগুলো মিলে তাকে বাঁশ দিতে বসেছে।
আরশ হেলাল সাহেবের কথা অক্ষরে অক্ষরে মানার জন্য ভদ্রতা সহিত মাথা নাড়ালো। নুসরাত ইশারা দিয়ে না করার জন্য বলল কিন্তু আরশ হ্যাঁ বলে দিল। নুসরাত মুখের বিকৃতি ঘটিয়ে গালি দিল,”শালার ভদ্রতা!
হেলাল সাহেব নুসরাতকে ওখানে রেখে ধীরে ধীরে হেঁটে চলে গেলেন সিঁড়ির দিকে। আরশ দরজায় এক হাত রেখে নুসরাতের দিকে ঝুঁকে তাকালো। আরশ দরজায় এক হাতে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর জন্য রুমের ঢুকার জন্য দরজার পাশে ছিটে ফুটো জায়গা থাকলো না। নুসরাতের দিকে ভ্রু তুলে বলল,”কি?
নুসরাত ও বলল,
” কি?
“আমার রুমে কি? নিজের রুমে যা!

নুসরাত চিৎকার করে হেলাল সাহেব কে ডাকতে গেল। আরশ মুখ চেপে ধরলো। সতর্ক গলায় বলল,” চুপ আওয়াজ ভিতরে। বাহিরে যেন না বের হয়। পরে মেঝেতে শুয়াবো। বিছানায় জায়গা পাবি না।
নুসরাত আরশের হাত নিজের মুখ থেকে টেনে ছুটালো। এতক্ষণ মনে হচ্ছিল শ্বাস আটকে মরে যাবে। জোরে শ্বাস ফেলল। আরশের দিকে রুষ্ট নয়নে তাকিয়ে বলল,”মেরে ফেলবেন নাকি?
আরশ ওই কথার উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” নবম শ্রেণিতে কোন বিভাগের ছাত্রী ছিলি?
নুসরাত ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,
“কেন? আপনি কি করবেন আমি কোন বিভাগের ছাত্রী ছিলাম সেটা জেনে।
” বলতে বলেছি বলবি এতো কেন লাগিয়ে রেখেছিস কেন?
নুসরাত নিজের রাগ নিজের ভিতর চেপে রেখে কোনো রকমে বলল,”বিজ্ঞান!
“তোর মতো গাঁধি বিজ্ঞানে বিভাগে ছিল। হায় আল্লাহ তুই পাসড করলি কীভাবে?
নুসরাত কথা বলল না। কথা বললেই এখন মুখ দিয়ে যাতা বের হয়ে আসবে। যে-কোনো মুহুর্তে গালি দিতে পারে। তাই নিজেকে বলল কন্ট্রোল নুসরাত কন্ট্রোল।

” আচ্ছা তোকে আমি আজ রাতে আমার রুমে থাকতে দেব তার জন্য একটা কন্ডিশন পূরণ করতে হবে?
নুসরাত বিরক্ত হয়ে বলল,
“কি কন্ডিশন?
“একটা সূত্র বলতে হবে?
নুসরাত টেনে শ্বাস ফেলে বলল,
“কোন সূত্র বলতে হবে?
“নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র বল?
নুসরাত রাগে তিক্ত বিরক্ত হয়ে বলল,
” মানুষ বিয়ের দিন রাতে নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র ধরে?
“মানুষ না ধরলে আমি ধরি। নিউটনের সূত্র বলতে পারলে আজ এই রুমে জায়গা পাবি নাহলে পাবি না। আর কীসের বিয়ের রাত আমাদের বিয়ের আজ দু-দিন হয়ে গিয়েছে আর তোর কাছে মনে হচ্ছে আজ বিয়ের রাত। কিছু খেয়েছিস নাকি?
নুসরাত বিড়বিড় করে বলল,

“আপনি মানুষের কাতারে পরেন।
“কি বলছিস?
“কিছু না।
“তাড়াতাড়ি সূত্র বল?
নুসরাত দাঁতে দাঁত পিষলো। আরশের মাথায় চুলগুলো ছিঁড়ে ফেলতে পারলে ভালো লাগতো তার।
“একটা সূত্র বলতে এতো সময় লাগে। তাড়াতাড়ি বল?
” F=ma।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৭

নুসরাত সূত্র বলা শেষ হতেই হেলাল সাহেব নিচতলা থেকে চিৎকার করে বললেন,” দু-জন এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন? ঘুমাতে যাও! পরে ঘুম থেকে উঠতে লেট হবে।
আরশকে দরজার সামনে থেকে নড়তে না দেখে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নুসরাত গিয়ে বিছানা শুয়ে পড়ল। আরশ দরজা লক করে এসে নুসরাতের পা ধরে টেনে ধরলো। নুসরাত চিৎকার করে বলল,” এই মিয়া, পা ধরে টানাটানি করছেন কেন?

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৮ (২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here