প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৪ (২)

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৪ (২)
জান্নাত নুসরাত

আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে ইরহাম আর নুসরাত। সকাল সকাল রেডি হয়ে ভার্সিটি চলে গেল দু-জন। ক্লাস শেষে নুসরাত, সৌরভি আর সাদিয়া ক্যাম্পাসে হাঁটতে লাগলো। হঠাৎ করে মুখের সামনে এসে দাঁড়ালো ইরহাম। নুসরাত বিরক্ত হয়ে তাকালো ইরহামের দিকে। কর্কশ গলায় সৌরভি বলল,”কীরে বাল মুখের সামনে এসে এরকম খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? সর সামনে থেকে বালডা।
ইরহাম সৌরভির কথা পাত্তা না দিয়ে নুসরাতের কানে ফিসফিস করে বলল, “একটা ব্যবস্থা করে দে না।
নুসরাত ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,

“কীসের ব্যবস্থা করে দিব?
ইরহাম গলা আরো কিছুটা নামিয়ে বলল,
” সৌরভি কে নিয়ে একটু বেড়াতে যাব।
নুসরাতের সোজাসাপ্টা উত্তর,
“তো যাস না, আমি ধরে রেখেছি কি তোদের কে?
” তুই একটু বল সৌরভিকে আমার সাথে যাওয়ার জন্য, আমার ভয় লাগে সৌরভিকে।
“চ্যাহ, চ্যাহ, চ্যাহ, তুই মেয়ে মানুষকে কেন ভয় পাস? তুই হবি আমার মতো সাহসী। চ্যাহ, বেডি মানুষ ভয় পাস। তোর বোনকে দেখ, কাউকে ভয় পায়।
ইরহাম দু-দিকে মাথা নাড়িয়ে না বলল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“তাহলে তুই কেন ভয় পাবি? আমার মতো ব্রেভ গার্ল হো।
ইরহাম মিনমিন করে বলল,
” আমি তো তোকে ও ভয় পাই। তুই তো ভয় দেখিয়ে রাখিস সবাইকে।
নুসরাত ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ইরহামের দিকে তাকালো। চোখ বাঁকিয়ে হাত তুলে পিঠে থাপ্পড় বসালো।
“তুই কি বলতে চাস? আমি তোর উপর জুলুম করি! আমি জল্লাদ! আমি তোকে ভয় দেখাই! আমি তোকে শান্তিতে থাকতে দেই না।
ইরহাম স্তব্ধ হয়ে গেল। সে কখন বলল, নুসরাত তার উপর ঝুলুম করে। একে তিল বললে তাল বানিয়ে ফেলে। ডেঞ্জারাস মেয়ে মানুষ।
নুসরাত রাগী মুখ বানিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ইরহাম ঁকাধ দিয়ে নুসরাতের কাঁধে ধাক্কা মারলো। সাদিয়া দু-জনের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ” কি এতো গুজুর গুজুর করছিস দু-জন। আমাদের বলছিস না কেন? আমরা তোদের ফ্রেন্ড না, তোরা দুটো একসাথে হলে আমাদের ভুলে যাস কেন?
সৌরভি ফোড়ন কেটে বলল,

“বাল দুটো যা ইচ্ছা তাই করুক,আমাদের কি ?
ইরহাম নাক ফুলিয়ে তাকালো নুসরাতের দিকে। এ কথা বলছে না কেন? এরকম জীম মেরে বসে আছে কেন? কিছু বলছে না কেন?
নুসরাত বলল,
” সৌরভি তুই একটু যা তো ইরাহামের সাথে।
“আমি কেন যাব ইরহামের সাথে? এসব সা*য়ার কথা বাদ দে। আসল কথা বল! দুটো মিলে কি এতো কথা বলছিস?

” প্যান প্যান করিস না তো সৌরভি কানের গোড়ায়,সর তো এখান থেকে।ভালো লাগছে না।!
“তুই আমাকে এভাবে বলতে পারলি।
নুসরাত রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
” হ্যাঁ বলতে পারি আমি! যা সর এখান থেকে।
“কোথায় সরবো?
“ডং করছেন দু-জন আমার সাথে। আপনি জানেন না কোথায় সরবেন? তাহলে আমি বলে দিচ্ছি আপনি আপনার ইরহামের সাথে একটু সাইড হয়ে যান।
সৌরভি কানের গোড়ায় প্যান প্যান করতে শুরু করল। কি হয়েছে? কি হয়েছে? সে কি করেছে? নুসরাত কেন এমন করে নাক ফুলাচ্ছে তার উপর? নুসরাত নাক মুখ কুঁচকে শহিদ মিনার চত্বরের দিকে এগিয়ে গেল। সৌরভি নুসরাতের কানে কাছে এসে বলল,”আরে রাগ করছিস কেন? আমি কি করেছি?

“তুই কিছু করিস নি। যা সর কানের গোড়া থেকে। আমার কানে গোড়ায় ব্যথা করছে।
সৌরভি নুসরাতের কথা শুনলো না। নুসরাতের কথার অমান্য করে কথা বলতে লাগলো। নুসরাত ব্জ্র কন্ঠে ধমল দিল,” চুপ একদম চুপ!আর একটা কথা বলবি না। মুখ বন্ধ করে থাক। আর এক শব্দ যদি বের হয় আমি স্টেপলার করে দিব তোর ঠোঁটে।
নুসরাত থেমে বলল,আমি কথা বলছি। দেখ কি রকম চুপ করে আছি আমি? আমার মতো চুপ করে থাকতে পারিস না তুই। কখন থেকে কথা বলছিস। না করছি তবুও ভ্যাঁ ভ্যাঁ করছিস গরুর মতো। থাপড়ে মুখ বাঁকিয়ে ফেলব, আরেকবার কথা বললে।

সৌরভি মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। সে এমন কি বলল যে নুসরাত তিনশত ষাট ডিগ্রী রেগে গেল? সাদিয়া মিনমিন করে বলল,”তুই ও তো কত কথা বলিস। আমরা তোকে কিছু বলি। না করলে ও তো শুনিস না। সারাদিন কথা বলিস।
নুসরাত থাপ্পড়ের মতো হাত করলো। তারপর আবার হাত গুটিয়ে নিল। ভাবসাব নিয়ে বলল,”আমি বললে সেটা অন্য বিষয়।
ইরহাম পরিবেশ ভালো না দেখে মানে মানে কেটে পরতে চাইলো। নুসরাত খেয়াল করে ধমকে দাঁড় করিয়ে দিল।
“তোর ওটাকে নিয়ে বিদায় হো!
সৌরভি কে নড়তে না দেখে নুসরাত বলল,
“তুই বসে আমার মুখ দেখছিস কেন? তোকে বলছি যেতে ইরহামের সাথে! যা এখান থেকে ভাগ! চুপচাপ ইরহামের সাথে যাবি আর একটা কথা বললে আমি তোর কানের গোড়ায় এমন থাপ্পড় বসাবো তোর জামাইয়ের জন্মে ও ভুলবি না!

নুসরাতের কথা থামিয়ে দিয়ে বজ্র কন্ঠে মোবাইলের রিং ভেজে উঠলো। ইরহাম পকেট থেকে মোবাইল বের করে চেক করলো কে কল করেছে। সেভ নম্বরে ছোট ভাই লেখা দেখা গেল। বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দিল। আরশ আবার কল করলো। ইরহাম ফোন ধরলো। নুসরাত কল স্পিকারে দেওয়ার জন্য বলল ইরহামকে।
ইরহাম ফোন কানে লাগাতেই আরশ ধমক দিল। ইরহাম ধমক খেয়ে মুখ কুঁচকে ফেলল। নুসরাত গালি দিল, শালা কল দিয়ে শুরু করে দিয়েছে ধমকা ধমকি। ভালো কথা বলতে জানে না।
” কখন আসবি অফিসে? আর তোর সাথের টা কই?
ইরহাম নাক কু।চকে নুসরাতের দিকে তাকালো। ফোন মিউট করে বলল,”শালার কি সাহস? আমাদের অফিসে যাওয়ার জন্য বলে।
নুসরাত ইশারা করে বলল আনমিউট করার জন্য।

ইরহাম কল আনমিউট করে বলল,”আজ আর আসবো না ভাইয়া,ভার্সিটি থেকে বেড়াতে চলে যাব।
আরশ রেগে মেগে আগুন হয়ে গেল। জোর গলায় ধমক মারলো ইরহামকে। ইরহামের কাছে মনে হলো তার কানে তালা লেগে গেছে। কোনো মানুষ এতো জোরে ধমক দিয়ে কথা বলতে পারে। উফ কান বন্ধ হয়ে গেল। কি বাজখাই গলা?
“ডং পেয়েছো দু-জন। ইচ্ছে হলে আসবে, নাহলে আসবে না। থাপড়ে কান লাল করে দিব। অসভ্য, বেয়াদব, ছেলে মেয়ে। বাপের অফিস হলে যা হয়। চুপচাপ চলে আসবে, নাহলে দু-জনকে কীভাবে নিয়ে আসতে হবে তা আমি খুব ভালো জানি?
ইরহাম আরশের মুখের উপর কথা বলল,

” যা ইচ্ছা তাই করুন ভাইয়া,আজ আর আমি আসবো না। আমি বেড়াতে চলে যাচ্ছি, আপনি আটকাতে পারলে আটকে নিন।
আরশের মুখের উপর ফোন কেটে দিল ইরহাম। নুসরাত মুখ হা করে চেয়ে রইলো ইরহামের দিকে। হাত তুলে চাপড় মারলো ইরহামের পিঠে।
“আমার মতো সাহসী হয়ে গিয়েছে দেখছি আমার বন্ধু।
এই তো আজ প্রমাণ হলো তুই আমার ব্রেভ বন্ধু ভাই। এভাবে এগিয়ে যা জীবনের যে, চূড়ায় সাফল্য আছে সেই দিকে।
নুসরাতের কথা শেষ হতেই হু হু করে হাসির রোল পরে গেল। নুসরাত পাত্তা না দিয়ে ইরহামের কানে কানে কিছু বলতেই ইরহাম উঠে দাঁড়ালো। সৌরভি কে টেনে নিয়ে চলে গেল মেইন গেটের দিকে। সৌরভি চিৎকার করতে চাইলো। ইরহাম দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো সৌরভির।
ইরহাম দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল,

” চুপচাপ চল আমার সাথে! একটা শব্দ করবি না মুখ দিয়ে। শব্দ করলেই চুমু খাব। যতটা শব্দ ততটা চুমু। ভাবিস না এখানে সেখানে চুমু খাব, ডায়রেক্ট তোর ঠোঁটে খাব।
সৌরভি আর ইরহাম চলে যেতেই নুসরাতের পাশে এসে ধপ করে বসলো আবির। নুসরাত একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল। আবির নুসরাত কে জিজ্ঞেস করলো,”কেমন আছো!
নুসরাত কিছু বলার আগেই ফোন আসলো। প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করলো অনিহার সহিত। আরশকে কল দিতে দেখে অফ বাটনে চেপে ফোন বন্ধ করে রেখে দিল। আরশ না থেমে আবার কল দিল নুসরাত কে। নুসরাত এবার কল কেটে না দিয়ে আরশের কল ধরলো অলস ভঙ্গিতে।

“হ্যালো মিসেস আরশ হেলাল স্পিকিং! কে বলছেন?
” মিস্টার আরশ হেলাল বলছি। তোর স্যার!
নুসরাত যারপনাই অবাক হয়ে বলল,
“আমার স্যার ভার কিছু নেই। আপনি ভুল নাম্বারে কল দিয়েছেন। কল রাখুন তো রাখুন! আপনি কল দিয়ে আমাকে ডিস্টার্ব করছেন। আমি বর্তমানে বিজি আছি। দয়া করে কোনো প্রয়োজন হলে একটু পর কল দিবেন।
আরশ বিরক্ত হলো। কি নতুন ডং শুরু করেছে এ?

” ডং বন্ধ করে চুপচাপ অফিসে আয়! বাপের অফিস বলে কোনো ছাড় পাবি বলে মনে হয় তোর কাছে? তাড়াতাড়ি আয়! কাজের বেলায় আমি কোন ধরনের মজা পছন্দ করি না নুসরাত? ডং বাধ দিয়ে আয়! আর তোর সাথের টা কই? আমাকে ব্লক মেরে রেখেছে কেন? কল পিক করছে না কেন?
“কীসের অফিস? কীসের সাথের টা? কীসের ব্লক? আর কীসের কল? আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমার মনে হচ্ছে আপনি ভুল মানুষকে কল দিয়েছেন। রং নাম্বার!
আরশের কাছে এসব মজা ভালো লাগলো না। এতো হেয়ালি করার কি আছে? নুসরাত আরশকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিল আরশের মুখের উপর। মোবাইল প্যান্টের পকেটে রেখে হাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভাঙ্গল। অলস ভঙ্গিতে বসে রইলো শহিদ মিনার চত্বরে। নুসরাতের একপাশে চুপচাপ বসে রইলো আবির আর আরেক পাশে বসে রইলো সাদিয়া।

ওয়াটসএপে হঠাৎ নোটিফিকেশন শো করল। নোটিফিকেশন শো করার পর পর শব্দ করে দুটো ছবি আসলো। মমো চিন্তিত ভঙ্গিতে গিয়ে ঢুকলো মাহাদির ইনবক্সে। প্রথম মেসেজ দেখে চোখ উপরে উঠে গেল মমোর।
” কই রে মরেছিস তুই? এতো মেসেজ দিচ্ছে রিপ্লে নেই কেন? তুই কি চাচ্ছিস আমি তোকে ভিডিও কল করি। সাবধান ব্লক মারার চেষ্টা করবি না। আগের নাম্বার থেকে ব্লক খুললি না কেন? তোকে কি বলেছিলাম গতকাল? তুই আমার বাংলা কথা বুঝিস না। তোকে কি ইংরেজি তে এখন বুঝাতে হবে কথা।
মমো মেসেজ পরে হা হয়ে গেল। দু-দিন আগে ও তো তুমি করে বলতো আর একদিনে তুমি থেকে তুই এ। এতো তাড়াতাড়ি তো গাড়ি চলে না যত তাড়াতাড়ি এ তুমি থেকে তুই এ চলে এসেছে।
মমো পিক ওপেন করতেই বটির ছবি দেখা গেল। মেয়েটা আঁতকে উঠল। মাহাদি তাকে রক্ত মাখানো বটির ছবি পাঠিয়েছে। মাহাদি কল দিল মমোকে। মমো কল ধরলো না কেটে দিল।
মেসেজ লিখলো,

“কি দরকার? এভাবে বলুন!
” কল ধর কথা আছে তোর সাথে।
মাহাদি কল দিল মমো না ধরে লিখলো,
“এভাবে বলুন, কল ধরতে পারবো না। চাচ্চুরা বাসায় আছে।
” তোর চাচা থাকলে আমি কি করবো? তোর চাচাকে আমি ভয় পাই নাকি। চাচা আছে বাসায় হুহ! এবার কল দিব চুপচাপ ধরবি তুই। নাহলে তোর বাসায় চলে আসবো এক্ষুনি।
“আপনি কি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছেন?
মাহাদি বিরক্ত হয়ে বলল,

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৪

” তোকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা আমি কেন করবো? আমি তোকে ব্ল্যাকমেইল করছি। এবার ফোন না ধরলে তোকে যে বটির পিক পাঠিয়েছি ওইটা দিয়ে কুপামু।
“কিন্তু…!
” কোনো কিন্তু না কল ধর?
মমো গাইগুই করলো। মেসেজের রিপ্লে দিল না। মাহাদি কল দিয়ে শুরু করলো ধমকা ধমকি। এতো লেট করে কেন কল ধরেছে মমো? মাহাদির ধমক চুপ করে শুনল। নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৪ (৩)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here