প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৪ (৩)
জান্নাত নুসরাত
পাইন গাছের ফাঁকে ফাঁকে সূর্যের রশ্মি দেখা যাচ্ছে। অন্যদিনের তোলনায় আজকের দিন রৌদ্ধজ্জ্বল। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ওক আর পাইন গাছ। এপার্টমেন্ট থেকে বের হতেই ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে দিয়ে গেল রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া দুই মানব মানবী কে। মেইন টাউনে সাইক্লিং করছে কিশোর কিশোরীরা। তাদের হই হুল্লোড়ে মেতে আছে পুরো টাউন। ইসরাত চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটছিল। হঠাৎ ইসরাতের পাশ ঘেঁষে একটা সাইকেল শু করে চলে গেল। ইসরাত ভয় পেয়ে পিছন দিকে কিছুটা সরল।
চোখ বড় বড় করে ছেলেটার সাইকেল নিয়ে যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো। জায়িন হাত বাড়িয়ে ইসরাতের হাত চেপে ধরতেই ইসরাত চোখ ঘুরিয়ে সামনে তাকালো। জায়িন ইসরাতের কাঁধ নিজের সাথে চেপে ধরে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো। রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটার সময় দেখা হলো মিষ্টি মিষ্টি কিছু দম্পতি ও প্রেমিক যুগলের সাথে। প্রেমিক যুগলেরা একে অপরের হাত ধরে হাঁটছে। কেউ কেউ রাস্তা দাঁড়িয়ে কিস করছে। কেউ আবার রাস্তার পাশের বেঞ্চে বসে আছে একে অপরের কাঁধ জড়িয়ে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
জায়িন আজ ইসরাতকে নিয়ে বের হয়েছে বাহিরে। আজ সোমবার দিন হওয়ায় ছুটি জায়িনের। ইসরাতকে মন খারাপ করে এপার্টমেন্টে বসে থাকতে দেখে ঝটপট রেডি হয়ে ইসরাতকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে। সামনের দিকে যতো হেঁটে এগিয়ে গেল ইসরাত তত সুন্দর আর মনোমুগ্ধকর জিনিস দেখলো। পাইন গাছের নিচে বেঞ্চে বসে আছেন দুই বুড়ো বুড়ি। বুড়ো পুরুষটা বুড়ি মহিলার মাথায় যত্ন সহকারে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আর বুড়ো মহিলাটা বুড়ো পুরুষের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুজে শুয়ে আছেন।
ইসরাতের কাঁধ ধরে জায়িন সামনের দিকে এগিয়ে গেল। ইসরাত তবুও পিছন ফিরে ততক্ষণ চাইলো যতক্ষণ পর্যন্ত ওই বুড়ো আর বুড়ি দম্পতিকে দেখা যায়। ইসরাতকে বারবার পিছন ফিরে তাকাতে দেখে জায়িন ধমক মেরে সামনের দিকে তাকাতে বলল। ইসরাত গাল ফুলিয়ে সামনের দিকে তাকালো।
শহিদ মিনারে একপাশে আবির আর অন্যপাশে খালি পড়ে আছে। কিছুক্ষণ আগে সাদিয়া ফাতিনের সাথে চলে গিয়েছে। জায়গায় জায়গায় গ্রুপ আকারে বসে আছে ছেলে মেয়েরা। নুসরাত নিজের মাথা আবিরের কাঁধে ফেলে কিছু ভাবতে লাগলো। স্বাভাবিকের মতো ডান হাতের নখ দাঁতের মধ্যভাগে। নখে কামড়াতে কামড়াতে ভুলবশত নুসরাত আঙুলের ডগায় কামড় মেরে দিল। আবির হাত বাড়িয়ে নুসরাতের মাথায় রাখতে গিয়ে ও হাত ফিরিয়ে নিয়ে প্যান্টের পকেটে পুরল।
নভেম্বর মাসের শুরুর দিক হলেও সূর্যের খাড়া রশ্মি মাথা উপর দাপটে ভঙ্গিতে কিরণ ছড়াচ্ছে। গরমের কারণে ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে আছে আবির আর নুসরাত। নুসরাত আবিরের কাঁধ থেকে মাথা সরাতে চাইলো আবির হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে রাখলো নিজের কাঁধে। নুসরাত গালি দিতে গিয়েও গালি দিল না। মুখ আটকে বসে রইলো। সামনের দিক থেকে পরিচিত ব্যাক্তিকে আসতে দেখেও নুসরাত নিজের জায়গা থেকে বিন্দুমাত্র নড়লো না। ব্ল্যাক কালার অডি এ ফোর থেকে কালো শার্ট, কালো প্যান্ট, পরিহিত আরশ নেমে আসলো। নুসরাত শহিদ মিনার থেকে বসে শান্ত চোখে আরশের পানে তাকিয়ে রইলো। আরশের একটু জায়গা হেঁটে আসতে গিয়ে কপালে জমা হলো সেদ জল। পকেটে হাত ঢুকিয়ে রুমাল বের করলো আরশ। রুমাল দিয়ে কপাল মুছে দাপটে ভঙ্গিতে এগিয়ে আসতে লাগলো নুসরাতের দিকে। চোখের দৃষ্টি তেজী। ভিতরের কালো অক্ষিগোলক না ঘুরিয়েই নুসরাতের দিকে দৃষ্টি স্থির রাখলো। নুসরাত দেখলো সুদর্শন পুরুষটিকে। কালো শার্ট আটসাট হয়ে লেগে আছে শরীরের সাথে। শরীরের প্রত্যেকটি ভাঁজ কালো শার্টের উপর দিয়ে ভেসে আছে।
শার্ট ইন করে গুজে রেখেছে প্যান্টের ভিতর। কালো প্যান্টের সাথে কালো বেল্ট মানানসই মনে হলো। নুসরাতের কাছে মনে হলো আরশের স্কিন টোন সাদা হলে এরকম মায়াবী লাগত না। নুসরাত আরশের প্রশংসা করতে মোটেও কাপর্ণ্যতা করলো না। বেডা শ্যামলা হলেও সুন্দর বটে। তবুও আমি বেশি মায়াবী। নুসরাত মনে মনে হে হে করে হাসল। তারপর বলল এটাই বাস্তব।
আরশ নুসরাতের কাছে এসে আবিরের দিকে না তাকিয়ে হাত টেনে দাঁড় করালো। হাতে ধরে টেনে দাঁড় করানোতে নুসরাত হাতে ব্যথা পেল। তবুও স্বাভাবিক ভাবে নুসরাত মাথা কাথ করে আরশের দিকে তাকালো। গাল বাঁকিয়ে হালকা হাসল।
আরশ গরমে আর রাগে টাই টেনে লোজ করলো। গম্ভীর গলায় বলল,”ক্লাস শেষ!
নুসরাত হেসে হেসে মাথা নাড়ালো।
” তাহলে এখানে বসে আছিস কেন? অফিস থেকে চারঘন্টার ছুটি নিয়ে একঘন্টা বেশি লেট করছিস কেন? আর ইরহাম কোথায়?
নুসরাত মৃদ্যু হেসে বলল,
“প্রেমিকা কে নিয়ে লং ড্রাইভে গিয়েছে।
আরশ চোখ বড় বড় করে তাকালো। দেখে মনে হলো অক্ষিকোটর থেকে চোখ বের হয়ে আসবে। বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,” কীসের প্রেমিকা?
নুসরাত গালে দু-হাত দিয়ে অবাক হওয়ার মতে করে বলল,”ওমা আপনি বুঝতে পারছেন না! আরে প্রেমিকা প্রেমিকা! ইরহাম প্রেমিকা নিয়ে বেড়াতে গেছে বুঝছেন!
নুসরাত আরশের দিকে তাকালো। আরশকে ভ্রু উঁচিয়ে থাকতে দেখে বলল,”আরে গাঁধা বুঝেন না! আরে বুঝবেন কীভাবে? জীবনে কোনো দিন প্রেম করেছেন? করলে তো বুঝতে পারতেন। মনে হয় কেউ প্রপোজ করেনি।
নুসরাত আঙুল তুলে আরশের দিকে তাক করে হে হে করে হাসতে লাগলো। আবির ও নুসরাতের সাথে তাল মিলিয়ে হাসতে লাগলো। আশে পাশে বসে থাকা ছাত্র ছাত্রীরা ঘুরে ঘুরে নুসরাত আর আবিরের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকালো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল যে যার কাজে।
আরশ ধমকে বলল,
“চুপ হে হে করে খবিসের মতো হাসা বন্ধ কর! মানুষ তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
নুসরাত পাত্তা দিল না। আরশের কথা মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে ফু মেরে উঁড়িয়ে দিল। আবির শহিদ মিনারের সিঁড়ি থেকে উঠে বসলো। নুসরাতের পাশে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রাখলো আরশের। আরশ আবিরের দিকে না তাকিয়ে নুসরাতের দিকে তাকালো।
” চল অফিসে! অনেক লেট হয়ে গিয়েছে।
নুসরাত মাথা নেড়ে সায় দিল। আবিরকে বগলদাবা করে নিজের সাথে নিয়ে এগিয়ে গেল গাড়ির দিকে। আরশ হা করে তাকিয়ে রইলো আবির আর নুসরাতের দিকে। তার গাড়িতে যাচ্ছে আর তাকে নিয়ে যাচ্ছে না। মাথা থেকে কথা ঝেড়ে ফেলে এগিয়ে গেল গাড়ির দিকে।
নুসরাত ফ্রন্ট সিটের দরজা খুলে ডায়নাকে বসে থাকতে দেখে ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো। ডায়না চিকন মেয়েলি ন্যাকা স্বরে বলল,”ম্যাম আপনি পিছনে বসে যান। আমি ফ্রন্ট সিট ছাড়া বসতে পারিনা। আমি আসতে চাইনি স্যার আমাকে জোর করে নিয়ে আসছেন উনার সাথে ম্যাম।
নুসরাত চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো গাড়ির দরজা ধরে। আবিরের কথায় আবিরের দিকে ফিরে তাকালো।আবির নুসরাতের থেকে বিদায় নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে যেতে নিল। নুসরাত পিছু ডাকলো।
” এই শুনো আবির!
আবির পিছন ফিরে তাকালো। নুসরাতের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচালো। নুসরাত হাত দিয়ে ইশারা করলো এদিকে আসার জন্য।
“কি হয়েছে?
” চলো আমার সাথে।
আবির হ্যাবলার মতো করে বলল,
“কোথায়?
নুসরাত ইমোশনাল ডায়লগ দিল।
” তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না আবির।
আবির মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতেই নুসরাত বলল,
“তাহলে প্রশ্ন কীসের? আমাকে বিশ্বাস করলে চোখ বন্ধ করে চলো আমার সাথে।
” কিন্তু আমার ক্লাস..!
“আরে কিছু হবে না। চলো চলো…
নুসরাত আবিরকএ ধাক্কা দিয়ে ব্যাকসিটে বসিয়ে দিল।আবির মুখ কাচুমাচু করে বসে রইলো। নুসরাত লাফ মেরে গিয়ে বসলো। নুসরাতের লাফ মেরে গাড়িতে বসার সাথেই পুরো গাড়ি নড়ে উঠলো।
আরশ গাড়িতে উঠতে উঠতে বলল,
” ভেঙে ফেল গাড়ি!
নুসরাত ভেংচি কাটলো। আরশ ভিউ মিররে তাকালো। আবির আর নুসরাত একসাথে ভিউ মিররে দৃষ্টি দিল।আরশের সাথে চোখা চোখি হতেই চোখ সরিয়ে নিল নুসরাত। আরশ আর আবির সরাল না। আরশ নিশ্চুপ চোখে তাকিয়ে থেকে গাড়ি স্টার্ট করলো। বিড়বিড় করলো, ” এই আপদকে কেন আবার সাথে নিয়েছে?
আরশের বিড়বিড় করে কথা বলা বাতাসের বেগে মিশে গিয়ে শু শু শব্দ হলো। গাড়ির কাচের মধ্য দিয়ে শা শা করে বাতাস প্রবেশ করতে লাগলো।
“এই তুই কোথায়?
” ভার্সিটিতে ছিলাম!
মাহাদি রাগে তিক্ত বিরক্ত হয়ে বলল,
“তুই স্কুলে পড়িস এতোক্ষণ কি করছিলি ভার্সিটিতে?
মমো বিরক্ত হলো। এই লোক তুই তোকারি করছে কেন?
” ক্লাস ছিল!
“তুই আমাকে বাল বুঝাতে আসছিস। ভার্সিটিতে এতক্ষণ কি করছিলি? সত্যি সত্যি করে বল কোথায় গিয়েছিলি? কোন ছেলের সাথে?
” আরে আপনি বুঝেন না, ভার্সিটিতে ক্লাস ছিল বলছি তো।কার সাথে যাব। এতো পেঁচাল করছেন কেন?
“আমি পেঁচাল করছি! তুই কি বলতে চাস?
মমো কথা বদলে ফেলল। এই লোককে আম বললে জাম বুঝে।
” আমি বলতে চাইছি আপনি তুই তোকারি করে কথা বলছেন কেন?প্রথমে তো তুমি করে বলতেন।
“আমি এভাবে তুই তোকারি করে কথা বলি। এতো মধু মিশিয়ে কথা বলতে পারবো না। চুপচাপ এইসব সহ্য কর।বেশি কথা বললে বটি দিয়ে কুপামু।
” এই আপনি কথার সাথে কুপামু বলেন কেন? আপনার বাসা কি ব্রাম্মণবাড়িয়া?
মাহাদি অবাক হয়ে বলল,
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৪ (২)
“তুই কীভাবে জানলি আমার বাসা ব্রাম্মণবাড়িয়ায়?
” কথার সাথে কুপামু বলেন এইজন্য বুঝেছি।ব্রাম্মণবাড়িয়ার মানুষেরা কথার সাথে মারামারি,
ঝগড়াঝাটি করার কথা বলে।