প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৫

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৫
জান্নাত নুসরাত

গাড়ি পাকিং করার পর নুসরাত আর আবির ব্যাক সিট থেকে বের হয়ে আসলো। মিস ডায়না আরশের পিছন পিছন কোমর বাঁকিয়ে হেঁটে আসলেন। নুসরাত আবিরকে নিয়ে চুপচাপ হেঁটে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।
“মিস ডায়না আপনার এসিস্ট্যান্ট তাই না?
আরশের ত্যাড়া জবাব,
” তুই মনে হয় জানিস না?
নুসরাত দাঁতে দাঁত পিষল। সোজা কথার সোজা উত্তর দিবে বাঁকা উত্তর দিচ্ছে কেন?
“প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে প্রশ্নের বিপরীতে কেন আবার প্রশ্ন করেন?

আরশ উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। নুসরাত ও উত্তরের আশা করলো না। আবির কিছুটা ঝুঁকে নুসরাতের দিকে জিজ্ঞেস করলো, ” তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো কেন?
“এতো প্রশ্ন কীসের? আমি যা বলব হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলাবে চুপচাপ! প্রশ্ন করা আমার পছন্দ নয়। আই হোপ তুমি আমাকে আর কোনো প্রশ্ন করবে না?
আবির নুসরাতের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল। আবিরের সাথে কথা বলতে গিয়ে নুসরাত আরশের থেকে কিছুটা পিছনে পরে গেল। পা চালিয়ে হাঁটতে লাগলো। আবিরকে ও বলল পা চালিয়ে হাঁটার জন্য।
দ্বিতীয় তলার স্লাইডিং ডোর টেনে দিতেই আরশ ভিতরে চলে গেল। তার পিছন পিছন ডায়না ঢুকলো। নুসরাত পিছন ফিরে আবিরকে নিশ্চিন্তে হাত পা এলিয়ে হেঁটে আসতে দেখে দৌড়ে গিয়ে আবিরের হাত চেপে ধরে টেনে নিয়ে আসলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” এতো ধীরে ধীরে হাঁটছ কেন? তোমার শশুর বাড়িতে আসছ নাকি? তাড়াতাড়ি হাঁটো!
আবির গাল ফোলিয়ে নুসরাতের দিকে তাকালো। নুসরাত সেদিকে না তাকিয়ে ভিতরে ঢুকলো। ভিতর ঢুকতেই দেখা হলো আলম সাহেবের সাথে। আলম সাহেবের সাথে নুসরাতের চোখাচোখি হতেই আলম সাহেব ভয়ার্ত চোখে তাকালেন নুসরাতের দিকে। আলম সাহেবের হাতে থাকা কফির মগ হালকা নড়ে উঠলো। বিড়বিড় করলেন, “বিপদ সংকেত আসতেই তার সাথে দেখা হবার ছিল?
নুসরাত আলম সাহেবকে তার দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে তাকতে দেখে ফায়দা নিল। আলম সাহেব নুসরাতকে তার দিকে তাকিয়ে স্মির্ক করতে দেখে কেটে পড়তে চাইলেন। নুসরাত আলম সাহেব কে পালাতে দেখে পিছু ডাকলো।

” মিস্টার আলম সাহেব!
আলম সাহেব জিহ্বায় কামড় মারলেন। বিড়বিড় করলেন, ফেঁসে গেছিরে বাবা! আজ আর রক্ষে নেই।
নুসরাত আলম সাহেবের মনোভাব হয়তো বোঝলো। তারপর ও গাল বাঁকিয়ে মিষ্টি করে হাসল আলম সাহেবের উদ্দেশ্যে। অফিসের চারিদিকে একবার চোখ ঘোরালো। সবাই যে যার কাজে বিজি। কেউ তাকে এখনো খেয়াল করেনি।
নুসরাত আলম সাহেবকে ইশারা করে তার দিকে এগিয়ে আসার জন্য বলল। আলম সাহেব এগিয়ে এসে কফির মগ নুসরাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে নেওয়ার জন্য সাধলেন। নুসরাত না করে দিল। আলম সাহেব সামাজিকতা রক্ষাতে টেনে হাসলেন।

“আরে আঙ্কেল টেনে টুনে হাসতে হবে না।
আলম সাহেব ঢোক গিললেন,সূক্ষ্ম গলা ভেজানোর জন্য। তারপর ও মনে হলো খড় হয়ে যাওয়া গলা একটুও ভিজলো না। আজ গলা এতো শুকিয়ে যাচ্ছে কেন?
” না মা টেনে হাসবো কেন? এটা তো সৌজন্যতা রক্ষাতে হাসলাম।
নুসরাত ভ্রু একত্রে নাচিয়ে বলল,
“উমম হু! সবই বুঝলাম! কিন্তু একটা কাজ করতে হবে আপনাকে আঙ্কেল!
আলম সাহেব ভয়ার্ত গলায় বললেন,

” কি কাজ?
” আপনি একটু মাইক টা নিয়ে আসেন।
আলম সাহেব বিপরীত কোনো প্রশ্ন না করে মাইক নিয়ে আসতে গেলেন। কথা বললে কথা বাড়বে, যতো দূরত্ব রাখা যায় এই মেয়ের থেকে তত ভালো। নুসরাত সামনে তাকিয়ে আরশকে খুঁজলো। আশে পাশে আরশকে খুঁজে পেল না।ধারণা করলো আরশ নিজের কেবিনের ভিতর এতক্ষণে পৌঁছে গিয়েছে। নুসরাত একবার কালো গ্লাস দিয়ে আবৃত আরশের কেবিনের দিকে তাকিয়ে পকেটে হাতড়াল মোবাইলের খুঁজে। মোবাইল বের করে হাতে নিয়ে কল লিস্টে ঢুকলো। কাইল্লা আরইশ্শা লেখে সেভ করা নম্বরে কল করলো।
আরশ কল ধরে কর্কশ কন্ঠে বলল,

” কি হয়েছে? কল দিচ্ছিস কেন? এই মাত্রই তো তোর সাথে দেখা হলো। কি দরকার তখন বললি না? এখন কল করেছিস কেন? তোর মতো তো আর আমি বসে নেই। কাজ করছি আমি।
নুসরাত শব্দ করে হাসল। কালো গ্লাস দ্বারা আবৃত কেবিনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,”আপনি কোনো কাজ করছেন না!
আরশ কিছুটা রুঢ় গলায় বলল,
“তুই কীভাবে জানলি? যে এভাবে নিশ্চিত হয়ে বলছিস,না জেনে আন্দাজে কথা বলা বন্ধ কর!
নুসরাত প্রতিবাদ করলো না আরশের কথার। শব্দ করে হেসে শুধু বলল,”আপনি এখন আপনার চেয়ারে বসে টেবিলে দুই হাত ভর দিয়ে হাতে রবি স্কিউব মিলাতে মিলাতে ঠিক আমি বরাবর তাকিয়ে আছেন।
আরশ থতমত খেল। তার মাথায় আসলো এ জানলো কীভাবে? নুসরাতকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে বলল,

“গাঁধার মতো কথা বলবি না! আমার হাতে রবি স্কিউব থাকলে আমি তোর সাথে কথা বলছি কীভাবে? আন্দাজে ঢিল ছুঁড়া বন্ধ কর!
নুসরাত হাসল। আবির হালকা ঝুকে নুসরাতের কানে ফিসফিস করে কিছু বলল। নুসরাত বলল,” একটু চুপ করে থাকো! আবির ঠোঁটে আঙুল রেখে চুপ থাকার মতো দেখালো। নুসরাত মুচকি হেসে আরশের কথার প্রতিউত্তর করলো, মুখে হাত দিয়ে অবাক হওয়ার বান করে।
“ও বাবা, আপনি তো দেখছি সব বুঝে গেছেন। কীভাবে বুঝলেন আমি আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ছি? বাহ আপনার কি ট্যালেন্ট?

আরশ আটকে রাখা শ্বাস ছাড়লো এবার। তাহলে আন্দাজে ঢিল ছুঁড়েছে। নুসরাত আরশের আবার শ্বাস আটকে দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বলল,” আমি যখনি বলেছি আন্দাজে ঢিল ছুৃঁড়েছি আপনি তখন আপনার আটকে রাখা শ্বাস নির্ভীগ্নে ছেড়ে দিয়েছেন তাই না?
আরশ ফোন হাতে হা হয়ে গেল। নুসরাত আরশের কেবিনের বরাবর তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থেকে বলল,
“মজা করছিলাম! এটা ও আন্দাজে ঢিল মেরেছি।
আলম সাহেব এর মধ্যে মাইক নিয়ে আসলেন। নুসরাত কল কেটে দিয়ে মোবাইল পকেটে পুরল। নুসরাতের পাশে ভদ্র ছেলে সেজে হাত সামনের দিকে আড়াআড়ি বুকে বেঁধে চুপচাপ আবির দাঁড়িয়ে রইলো। নুসরাত মাইক হাতে নিয়ে মিথ্যা কাশল। সবার দৃষ্টি নুসরাতের দিকে ফিরে গেল। নুসরাত কে মাইক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইমপ্লোয়ি থতমত খেয়ে দাঁড়াতে গেল। নুসরাত হাত দিয়ে ইশারা করলো না দাঁড়ানোর জন্য। সবাই দাঁড়াতে গিয়ে ও বসে গেল।

” আসসালামু আলাইকুম! সবাই কেমন আছেন? এক মিনিট! আমি জানি আপনারা সবাই ভালো আছেন! ভালো আছেন বলেই এখানে এসেছেন। কষ্ট করে বলতে হবে না। আমি কি ট্যালেন্টেড? আচ্ছা যাই হোক! এখন নিজের প্রশংসা আমি আর কি করব? আমি এতো এতো ট্যালেন্টফুল ব্যক্তি,নিজের প্রশংসা করতে গিয়ে অনেক সময় আটকে যাই। কীভাবে একজন ব্যক্তি এতো ট্যালেন্ট ফুল হতে পারে? তো আমার ট্যালেন্টের কথা বলতে গেলে অনেক সময় চলে যাবে। হয়তোবা আজকের পুরো দিন চলে যেতে পারে তাই আর আজকে বললাম না! তো যা বলতে চাইছিলাম আর কি?

নুসরাত আশে পাশে একবার তাকিয়ে নিল। কালো গ্লাস দিয়ে আরশের কেবিন আবৃত হওয়ায় ভিতরের অবস্থা বাহিরে থেকে দেখা গেল না। কিন্তু ভিতর থেকে আরশ বাহির পুরো ঝকঝকে পরিস্কার দেখতে পেল। নুসরাত কে গড়মিল পাকাতে দেখে উঠে দাঁড়ালো বসা থেকে।
কেবিনের বাহিরে কি কথা হচ্ছে তা ভিতর থেকে শোনা যায় না? আবার কেবিনের ভিতরের কথা বাহিরে শোনা যায় না। দু-জায়গায় সাউন্ডপ্রুফ হওয়ায়। নুসরাত তিন আঙুল তুলে আরশের কেবিনের স্লাইডিং দরজার দিকে তাকালো। মাইকের থেকে মুখ কিছুটা দূরে রেখে আঙুল দরজার দিকে তাক করে রেখে গণনা করলো ,”৩,২,১! এক বলতেই শব্দ তুলে আরশ স্লাইডিং দরজা খুলে বের হয়ে আসলো।
নুসরাত হে হে করে হাসল। আরশের দিকে মাইক তাক করে বলল,”আপনি কিছু বলতে চান?
আরশ কপালে চার পাঁচটা ভাঁজ ফেলে বলল,

“নো!
নুসরাত হাসল। উচ্ছাসিত গলায় বলল,
” তা যা বলছিলাম! আমি তো আপনাদের ম্যাম!
সবাই সমস্বরে বলল,
“জি!
নুসরাত হাত তুলে গলার সাউন্ড ডাউন করার জন্য নিচের দিকে দেখালো। সবাই চুপ হয়ে গেল। নুসরাত গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বলল,” আপনাদের স্যারের মুখ দেখুন!
সবাই পিছু ফিরতে নিলে নুসরাত বলল,
“আরে দাঁড়ান! কথা শেষ করতে দিন। তারপর তাকান স্যারের দিকে।

সবাই নুসরাতের দিকে ফিরে তাকালো। নুসরাত হেসে বলল,” তো যা বলছিলাম! আপনাদের স্যার যতটুকু সম্মান পান তা তো আমার ও প্রাপ্য! এখন বলবেন আপনার কেন? আপনি তো ম্যাম নিউ এসেছেন? আর স্যারতো অনেক আগ থেকে এসেছে! প্রায় সাত মাস তাই না! তো স্যার আগে আসলে স্যার আর আমি বর্তমানে তো আপনাদের বস দু-জনেই। কিন্তু এখানে আপনাদের স্যারকে যতটুকু আপনারা মূল্যায়ন করেন ততটুকু তো আমাকে মূল্যায়ন করেন না।
আলম সাহেব বললেন,

“কীভাবে?
নুসরাত আঙুল তুলে চুটকি মেরে আলম সাহেবকে থামজাপ দেখালো।
” গুড কুয়েশ্চন মিস্টার আঙ্কেল? আপনাদের স্যারের এসিস্ট্যান্ট এর ব্যবস্থা করলেন আমার কোনো এসিস্ট্যান্ট এর ব্যবস্থা করলেন না। এটা কি মানা যায়? এখানেই তো আপনারা বৈষম্য করে ফেললেন। উনি আগে এসেছেন বলে উনাকে বেশি প্রায়োরিটি দিবেন। আমাকে দিবেন না? এটা তো অন্যায় করছেন আমার মতো অবলা শিশুর উপর?
সবাই বলল ঠিক ঠিক। নুসরাত মাইক হাতে নিয়ে আরশের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে হাসল। আরশ দরজার সামনে এক হাত পকেটে পুরে বলিষ্ঠ শরীর নিয়ে নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে নুসরাতের পানে তাকিয়ে তাকলো চুপচাপ। দেখতে চাইলো নুসরাত কতদূর যেতে পারর।

বেলা গড়িয়েছে। সূর্যের দেখা মিললে ও এর দু-ঘন্টা পর সূর্যের আর কোনো দেখা পাওয়া গেল না। লাঞ্চ করার জন্য জায়িন ইসরাতকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। কাউন্টারে গিয়ে খাবার অর্ডার দিয়ে এসে বসতেই ক্যামেলিয়া ঝড়ের গতিতে এসে জায়িনের পাশ ঘেঁষে বসে পড়ল।
ক্যামেলিয়া পিছন ফিরে তাকিয়ে লিও এর উদ্দেশ্যে বলল, “লিও এখানে চলে আসো!
লিও বিরক্ত হয়ে ক্যামেলিয়ার দিকে তাকালো। তার সাথে লাঞ্চ করতে এসে এখানে বসে পড়েছে কেন? উফ এই মেয়ে নিয়ে আর পারা যায় না! লিও এগিয়ে এসে টেবিলের পাশে দাঁড়াতেই ক্যামেলিয়া বলল ইসরাতের পাশে বসার জন্য।
লিও রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,

“হুয়াই? শুড আই সিট নেক্সট টু ইসরাইট. হুয়াই আর ইউ সিটিং নেক্সট টু দিজ গায়? আ’ম ইউ্যের হাজবেন্ড ক্যামেলিয়া!
ক্যামেলিয়া নিজের জায়গা থেকে নড়লো না। লিও রাগ করে গিয়ে ইসরাতের কাছে বসলো নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। খাবার আসতেই ক্যামেলিয়া খাবার নিজের দিকে টেনে নিল। সবাইকে সবার প্লেটে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার দিয়ে খেতে লাগলো। ইসরাত ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এর সাথে মেয়োনিজ লাগিয়ে খাচ্ছিল। মেয়োনিজ খাওয়ার সময় হালকা মেয়োনিজ ঠোঁটের পাশে লেগে গেল। জায়িন খেয়াল করে পকেট থেকে রোমাল বের করে ইসরাতের দিকে হাত বাড়িয়ে আলগোছ ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা মেয়োনিজ মুছে দিল। আকস্মিক এমন ধাক্কা সামলাতে না পেরে একইসাথে ইসরাত মুখের খাবার গিলতে না পেরে কেঁশে উঠলো। জায়িন পানির গ্লাস ইসরাতের ঠোঁটের কাছে ধরলো। ইসরাত চোখ বড় বড় করে জায়িনের দিকে তাকিয়ে তাকলো। জায়িন চোখ দিয়ে গ্লাসের দিকে ইশারা করলো পানি নেওয়ার জন্য। ইসরাত বিস্ময়ে চোখ বড় করে পানি হাতে নিয়ে এক চুমুকে সব পানি খেয়ে নিল।
জায়িন গম্ভীর গলায় বলল,

” ধীরে পানি খাও!
ক্যামেলিয়া গালে হাত দিয়ে জায়িনের পানে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। লিও এর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল,”হাউ সুইট? ইসরাইট তোমার রুমমেট অনেক কেয়ারিং। আমি ও এমন কেয়ারিং রুমমেট ডিজার্ভ করি।
ইসরাত বিচলিত হয়ে ঠোঁট টেনে সৌজন্যতার হাসি হাসল। ক্যামেলিয়ার দিকে দাঁত কিড়মিড় করে তাকিয়ে তাকলো লিও। ক্যামেলিয়া লিও এর রাগী চোখের হাত থেকে বাঁচার জন্য ফিরে তাকালো না।
জায়িন বা-হাত দিয়ে চুল ব্যাক ব্রাশ করলো। ইসরাতের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,”আর ইউ ওকে?
ইসরাত ইতস্তত করে বলল,

“ইয়াহ!
জায়িন শান্ত গম্ভীর গলায় বলল,
” আর ইউ সিউর?
ইসরাত থতমত খেয়ে কথা গুলিয়ে ফেলল। বাংলা ইংরেজি মিশ্রণে বলল,”ইয়াহ আমি সিউর!
জায়িন কপালে হাত রেখে নিজের সিটের পাশে গ্লাসে দ্বারা আবৃত জায়গার বাহিরে তাকিয়ে কোনোরকম হাসি আটকানোর চেষ্টা করলো।

নুসরাত চোখ সরিয়ে নিয়ে সবার দিকে তাকালো। গলার আওয়াজ আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে বলল,” যখন অফিসের পক্ষ থেকে আমাকে কোনো এসিস্ট্যান্ট দেওয়া হয়নি আমি তাই নিজে নিজের এসিস্ট্যান্ট এর ব্যবস্থা করে ফেলেছি।
সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। নুসরাত পা দিয়ে চেয়ার টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। চেয়ারের উপর উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” তো যা বলছিলাম! আমার এসিস্ট্যান্ট এর ব্যবস্থা করে ফেলেছি। এবং আমার এসিস্ট্যান্ট হলো নিজের এক হাত দিয়ে আবিরের এক হাত চেপে উপরের দিকে ধরে বলল, দ্যা গ্রেট আবির।
আরশ প্রতিক্রিয়াহীন দাঁড়িয়ে রইলো কেবিনের সামনে। নুসরাত হাত তালি দিল। তার সাথে তাল মিলিয়ে সবাই হাতে তালি দিতে শুরু করলো। আবির হা করে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে তাকলো। এসব হচ্ছে টা কি? ও নুসরাতের এসিস্ট্যান্ট আর ও নিজেই জানে না। এসব কখন হলো! নুসরাত কে কিছু বলতে যাবে নুসরাত ঠোঁটে আঙুল রেখে আবিরকে চুপ থাকার জন্য বলল।

আবির চুপ করে গেল। নুসরাত চেয়ারের উপর থেকে নেমে গিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসলো চেয়ারের উপর।
“কিন্তু আপনারা যে আমাকে এসিস্ট্যান্ট এর ব্যবস্থা করে দিলেন না তাতে আমি প্রচুর ব্যথিত হয়েছি।
আরশ এতোক্ষণ চুপ করে থাকলে ও এবার নুসরাতকে প্রশ্ন করলো। আরশের ডিপ গলার স্বর শুনতেই হালকা কথা বলার শব্দ এক নিমেষে থেমে গেল। তার গম্ভীর গলার স্বর নীরব পরিবেশ প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসলো।
” তো মেডাম আপনার ব্যথিত হওয়ার কারণ আমরা কি জানতে পারি? কারণ আপনি তো আপনার এসিস্ট্যান্ট এর ব্যবস্থা নিজে নিজে করে নিলেন। অফিস কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার করার কথা চিন্তাই করলেন না। তারপর ও আপনি ব্যথিত! হুয়াই ম্যাম? আমাদের একটু জানান। আমরা জানতে চাইছি।

সবাই আরশের কথায় মাথা নাড়ালো। নুসরাত একটু ভাবসাব নিয়ে সামনে দিকে চলে আসা বেবি হেয়ারগুলো পিছনে সরিয়ে নিল। আরশের দিকে তাকিয়ে মাথা কাত করে বলল,”আসলে আমি এমনিতেই বলতাম ! কিন্তু, আপনারা যখন এতো ফোর্স করছেন তাহলে এখন তো আর বলবই না। আসলে মানুষ যখন আমার কাছ থেকে কিছু জানার জন্য অনেক বেশি ফোর্স করে তখন আর আমার সে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না। মুড চলে যায়! অন্য একদিন বলব, আজ আর বলব না,যে যার কাজে যান।

সবাই যেতে নিলেই নুসরাত পিছু ডাকলো। আরশ নুসরাতের কথা শোনে নিজের জায়গা থেকে এক চুল ও নড়লো না। দুই পকেটে দু-হাত গুজে আরাম করে দাঁড়ালো দেয়ালে ভর করে। আরশকে দেখে মনে হচ্ছে তার কেবিনের ভিতর যাওয়ার তাড়া নেই। তার তো একে রগে রগে চেনা। ন্যানো সেকেন্ডের ভিতর এর মতামত নিজের কথা পরিবর্তন হয়ে যায়। নুসরাতের সবাইকে পিছু ডাকে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল আরশ। সে জানতো ডাক দিবে। কারণ নিজের কীর্তি কলাপের কথা তো বুক ফুলিয়ে বলতে হবে।
“তো যা বলছিলাম আমি তো এসিস্ট্যান্ট এর ব্যবস্থা তো করেছি কিন্তু আমি আরেকটা সারপ্রাইজ আপনাদের জন্য রেখেছি।
আলম সাহেবের দিকে তাকিয়ে নুসরাত মাথা নাড়ালো। আলম সাহেব বললেন, ” কি?
নুসরাত মাথায় হাত দিয়ে বলল,

“আরে আপনি বুঝলেন না!
আলম সাহেবের ভয়ার্ত গলা,
” জি না!
” মিস্টার আঙ্কেল প্রশ্ন করুন, কি সারপ্রাইজ?
“কি সারপ্রাইজ?
নুসরাত আবার হাসল। আজ নুসরাতের মুখ থেকে মনে হচ্ছে হাসি সরছেই না।
” আপনারা যখন এসিস্ট্যান্ট এর ব্যবস্থা করে দেননি তাই আমি আমার জন্য দু-জন এসিস্ট্যান্ট এর ব্যবস্থা করেছি।
আরশ মাথায় হাত দিল। এই পাগল কি করেছে? সবাই হাততালি দিল নুসরাতের কথা শুনে।
নুসরাত বলল,

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৪ (৩)

“জিজ্ঞেস করুন কাকে আমার দ্বিতীয় এসিস্ট্যান্ট বানিয়েছি?
সবাই সমস্বরে বলল,
” কাকে?
নুসরাত শয়তানি হাসল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে নুসরাত ধীরে সুস্থে বলল,”……..মিসেস রুবা! কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ?
নুসরাত মাইক লাউড স্পিকারে দিয়ে চিৎকার করে বলল। সবাই নুসরাতের কথায় হাতে তালি দিল। নুসরাত ও দিল সবার সাথে ধীরে ধীরে হাতে তালি আরশের দিকে তাকিয়ে থেকে। ঠোঁটে মুচকি হাসি তার! আরশের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে ঠোঁট নাড়িয়ে বলল, “কেমন লাগলো সারপ্রাইজ মিস্টার সৈয়দ আরশ হেলাল।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here