প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৬
জান্নাত নুসরাত
রেস্টুরেন্টে চারিদিকে খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। খাবারের পাশে টেবিল ও উলটে পড়ে আছে। কিছু কিছু জায়গায় কাচ ও পড়ে আছে। ইসরাত রাগী চোখে মেঝের দিকে। রাগ সামলানোর জন্য চোখ বোজে শ্বাস নিতে যাবে তখনি নিজের সামনে কারোর উপস্থিতি বুঝতে পারল। চোখ খুলে তাকানোর আগেই গালে পড়া থাপ্পড়ের জন্য নিজের জায়গা থেকে দু-পা সরে গেল সে। থাপ্পড়ের দাপটে গালে হাত দিয়ে ঝুঁকে যেতেউ মেয়েটা আবার থাপ্পড় মারল ইসরাতের গালে। এবার ইসরাত টায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো নিজের জায়গায়।
গালে হাত রেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। মেয়েটা আবার ইসরাতকে থাপ্পড় মারতে যাবে ইসরাত মেয়েটার হাত মুচড়ে ধরলো। মেয়েটাকে কিছু বুঝে উঠতে দেওয়ার আগেই দু-গালে দুটো থাপ্পড় ফিরিয়ে দিল। ইসরাতের হাতের থাপ্পড় খেয়ে মেয়েটা দু-হাত দূরে গিয়ে সিটকে পড়ল। ইসরাত ধীরে ধীরে হেঁটে মেয়েটার কাছে গিয়ে এক পায়ে ভর দিয়ে বসলো। মেয়েটা উঠে বসে ইসরাতকে পাল্টা বার করার আগেই ইসরাত মেয়াটার দু-হাত মেঝের সাথে চেপে ধরে মুচড় মারল। হাতে মুচড় মারতেই মেয়েটা মুখ দিয়ে ব্যথাতুর শব্দ বের করে ইসরাতের উদ্দেশ্য গালি দিল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“ইউ মাদার ফাকার গার্ল! লিভ মি!
ইসরাত মেয়েটার গাল চেপে ধরলো। হাত মুচড়ে ধরে বলল,”ইউ ব্ল্যাডি ফাকিং গার্ল! হু আর ইউ? লুক, হু ইজ ডেফিনিং মাই মাদার ক্যারেক্টর। ওয়াট আর ইউ?
নিজের কথা ফিরিয়ে নে। নইলে আজ তোর এমন হাল করবো তুই কেন তোর বাপ-মা, তোর চৌদ্দ গুষ্টি তোকে চিনতে পারবে না।
মেয়েটা ইসরাতের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। ইসরাত গাল চেপে নিজের দিকে মেয়েটার মুখ নিয়ে আসলো। মেয়েটা ইসরাতের হাত থেকে নিজের মুখ সরানোর চেষ্টা এখনো জারি রেখেছে। ইসরাত ভ্রু একত্রিত করে আবার বলল,”নিজের কথা ফিরিয়ে নে? নাহলে আজ তোর কি হবে আমি নিজে চিন্তা করতে পারছি না?
জায়িন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ধীরে সুস্থে এদিকে আসছিল। তাদের টেবিলের আশে পাশে সবাইকে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো।
“এক্সকিউজ মি!
উল্টো দিকে ফিরে ইসরাতকে বসে থাকতে দেখে জায়িন এগিয়ে গেল। মেঝেতে সেদ বর্ণের একটি মেয়েকে পড়ে থাকতে দেখে জায়িনের চোখ রসগোল্লার মতো গোল গোল হয়ে বড় হয়ে গেল। ইসরাত আবার মেয়েটাকে থাপ্পড় মারতে নিলেই জায়িন ইসরাতের হাত চেপে ধরলো। টান মেরে বসা থেকে তুলে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। ইসরাত রাগে জায়িনের দিকে হিস্র বাঘিনীর মতো তাকালো যেন আজ জায়িনকে ছিড়ে খুবলে খাবে তার কাজে বাঁধা দিয়েছে বলে।
” হচ্ছে টা কি ইসরাত?
ইসরাত রাগে কথা বলতে গিয়ে ঠোঁট একসাথে থরথর করে কেঁপে উঠল। জায়িন সেদ বর্ণের মেয়েটাকে তুলে ধরে বলল,”আর ইউ ওকে মিসেস এমেলি?
মেয়েটা উঠে দাঁড়িয়ে শর্ট টি-শার্ট আর শর্ট প্যান্ট টেনে ঠিক করলো। ইসরাতের দিকে কি রকম চোখে তাকিয়ে তাকলো? বোঝা গেল না মেয়েটার মনোভাব। ইসরাত রাগে সাপের মতো ফুসফুস করে ফুলছে। জায়িন ইসরাতকে রাগ করতে দেখে এক হাত দিয়ে ইসরাতের মাথা টেনে বুকের সাথে চেপে ধরলো। ইসরাত দূরে সরার জন্য মুচড়া মুচড়ি করলো। তবুও জায়িন ধরে রাখলো। গম্ভীর গলায় সবার উদ্দেশ্যে বলল,”যে যার কাজে ফিরে যান। স্যরি আপনাদের ডিস্টার্ব করার জন্য!
সবাই নিজ নিজ কাজে ফিরে গেল। জায়িন সবাইকে সময় দিল ঠিক হওয়ার জন্য। সেদ বর্ণের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে জায়িন জিজ্ঞেস করলো, ” মিসেস এমেলি! ওয়াট হেপেন্ড!
এমেলি জায়িনের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। জায়িন ইসরাতকে নিজের থেকে দু-ইঞ্চি দূরে সরাল। নিজের বাঁ-হাত দিয়ে ইসরাতের কাঁধ চেপে ইসরাতকে জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে?
ইসরাত সময় নিল কথা বলতে। কিন্তু, বলতে গিয়ে থেমে গেল। ক্যামেলিয়া আগ বাড়িয়ে সবকিছু বলা শুরু করলো।
” আসলে, ইসরাইটের রুমমেট আমি বলছি কি হয়েছে?
সূর্য মাঝ আকাশ থেকে ধীরে ধীরে পশ্চিম আকাশের দিকে যাচ্ছে। নুসরাতের বক্তব্য এখনো শেষ হয়নি। আরশ জিজ্ঞেস করল, “আপনি তো রেখে দিয়েছেন দু-জন আপনার এসিস্ট্যান্ট কে রাইট!
নুসরাত উপর নিচ মাথা নাড়ালো। এবার আরশ বলল,
” আপনার একজন এসিস্ট্যান্টের বেতন অফিস থেকে দেওয়া হবে কিন্তু দ্বিতীয় জনের কোথায় থেকে বেতন দিবেন?
“গুড কুয়েশ্চন মিস্টার আরশ! এটা ও আমি ভেবে রেখেছি।
আরশ নুসরাতকে ভেঙিয়ে বলল,
” ওয়াও দেটস গ্রেট! তো বলুন কীভাবে?
নুসরাত হাসল।
“ওই তো আপনারা যা আমাকে বেতন দিবেন তার অর্ধেক আমি আমার এসিস্ট্যান্ট কে দিয়ে দিব।
আরশ নুসরাতের কথা থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” ধরি, আপনাকে অফিস থেকে আশি হাজার টাকা দিল আপনি কি চল্লিশ হাজার আপনার এসিস্ট্যান্ট কে দিয়ে দিবেন।
নুসরাত উপর নিচ মাথা নাড়াল। তারপর বলল,
“আমি আমার এসিস্ট্যান্ট কে ভালোবেসে সেভেন্টিন পার্সেন্ট টাকা দিয়ে দিতে পারি। আমার ইচ্ছে হলে! আবার আপনারা চল্লিশ হাজার টাকা দিলেও সব আমার এসিস্ট্যান্ট কে দিয়ে দিব।
আলম সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
” এতো টাকা দিয়ে দিবেন?
“হ্যাঁ! আপনি চাইলে আপনাকে ও আমার এসিস্ট্যান্ট বানিয়ে আমার বেতনের থেকে বোনাস দিয়ে দিতে পারি আঙ্কেল।
” না মা আমার লাগবে না!
আরশ নিজের গলা যতেষ্ট কড়া করে বলল,
“মিসেস নুসরাত আপনার নিজেরই তো কেবিন নেই, আপনার এসিস্ট্যান্টের কেবিন এর কোথায় ব্যবস্থা করবেন?
“মিস্টার আরশ চিন্তা করবেন না। আবিরকে ইশারা করে বলল, ওকে দেখছেন ও আমার সাথে আপনার কেবিনে সোফার উপর বসে থাকবে আর মিসেস রুবাকে আপনার এতো বড় কেবিন আছে না ওখানে কোনো কোণায় ছোট একটা জায়গা দিয়ে দিলেই হবে। উনি ওখানে বসে কাজ করবেন।
” আমি আপনাকে আর আপনার একজন এসিস্ট্যান্ট কে জায়গা দিয়ে দিয়ে দিলাম আপনার কথা চিন্তা করে। কিন্তু আরেক জনকে কেন দিব?
নুসরাত তাচ্ছিল্য করে বলল,
“না দিলে না দিবেন! আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি আরো একটা প্ল্যান করে রেখেছি মিসেস রুবার জন্য।
আরশ কৌতূহলিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কি?
“সেটা নাহয় প্ল্যান টা কার্যকর হলেই দেখবেন। তাহলে আজকের আলোচনা এখানেই শেষ হলো। সবাই যে যার কাজে যান।
সবাই নিজ নিজ ডেস্কে ফিরে গেল। আরশ নিজের কেবিনে ঢুকে গেল। নুসরাত ও তার পিছু পিছু আবিরকে নিয়ে আরশের কেবিনে ঢুকে গেল।
ক্যামেলিয়া সবকিছু খুলে বলল। জায়িন এমেলির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,” আপনি এরকম করলেন কেন মিসেস এমেলি? এরকম আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলেন কেন হঠাৎ করে?ইসরাতের ভুল কি ছিল?
এমেলি চোখ মুখ শান্ত করে বলল,
“আ’ম স্যরি! মিস্টার জাইন আমার মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গিয়েছিল।
জায়িন ভ্রু বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” কি রকম মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে আপনার?
“আমি তোমাকে পিছন থেকে দেখে মনে করেছি জোসেফ। ও অন্য মেয়ের জন্য আমাকে চিট করছিল।তাই এরকম উগ্র আচরণ করে ফেলেছি। আমি এগেইন স্যরি মিস্টার জাইন।
ইসরাতের দিকে আঙুল তোলে এমেলি জিজ্ঞেস করলো,
” হু ইজ সি? ইউ্যের গার্লফ্রেন্ড!
জায়িন ইসরাতকে টেনে আরেকটু কাছে নিয়ে আসলো। ইসরাতের পিঠ নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে বলল,”আমার ওয়াইফ মিসেস ইসরাত জায়িন!
এমেলি হাত মুঠ করে ফেলল। দাঁতে দাঁত চেপে রুড হয়ে বলল,”আর ইউ মেরিড জাইন?
” ইয়াহ ম্যাম!
এমেলি কোনোরকম দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“ওহ কংগ্রাচুলেশনস মিস্টার জাইন! এন্ড এগেইন স্যরি ইউ্যের ওয়াইফ! আমার খারাপ আচরণের জন্য।
জায়িন বিল পে করলো। ক্ষতিপূরণ দিতে গেল, এমেলি দিতে দিল না। তার কথা তার জন্য এসব হয়েছে সেই এর ক্ষতিপূরণ করবে। জায়িন এমেলি কাছে হার মানল অগত্যা বিল পে করতে দিল এমেলিকে।
জায়িন ইসরাতকে এখনো চেপে ধরে আছে নিজের সাথে। জায়িন আর ইসরাত বের হয়ে যেতেই ক্যামেলিয়া আর লিও ও বের হয়ে গেল। গ্লাস দ্বারা বিশিষ্ট রেস্টুরেন্টের বাহিরের দিকে এমেলি শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো। জায়িন যে হাত দিয়ে ইসরাতকে চেপে ধরে আছে ওই হাতের দিকে এক দৃষ্টিতে যতক্ষণ পর্যন্ত ওদের দেখা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত চেয়ে রইলো এমেলি। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কিড়মিড়িয়ে কিছু বলল। কথা শেষ করেই গাল বাঁকিয়ে পাগলের মতো হা হা করে হাসল।
কয়েকদিন পরের কথা,
রাতের খাবার খেয়ে সবাই নিজ নিজ রুমে ফিরে গিয়েছে। মেহেরুন নেছা বারান্দায় বসে আকাশ পানে তাকিয়ে বিড়বিড় করছেন,”এইগুলার বিয়া দিয়া তো এখন আমি ফাইসা গেছি। একডা ও আমার সাথে কথা কয়না। সবগুলা আমার থাইকা মুখ ফিরাই বইসা রইছে। আমি কি এমন করছি যে আমার সাথে রাগ করছে? সবগুলারেই তো শুধু ধইরা ধইরা বিয়া দিছি এর থাইকা বেশি তো কিছু করি নাইগা। কিন্তু এরা কথা না কইলে ও তো আমার কিছু আহে ও না যায় ও না। বড় কথা হইল এতোদিন বিয়া হইল একডা ও সু-খবরটা আমায় দিল না। মনে হইতাছে এদের উপরে নজর রাখন লাগব। মেহেরুন নেছা কাজে লাইগা পরো। এইভাবে বইসা থাকলে কিছুই হইব না।
মেহেরুন নেছা উঠে দাঁড়ালেন। লাঠি ভর দিয়ে ঠকঠক শব্দ করে এগিয়ে গেলেন ড্রয়িং রুমের দিকে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে যেতে গিয়ে মেহেরুন নেছাকে বেগ পোহাতে হলো। ২য় তলায় গিয়ে আরশের রুমে নক করলেন মেহেরুন নেছা। আরশ দরজা খুলে মেহেরুন নেছাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু বাঁকালো।
“দাদি এতো রাতে তুমি! কোনো সমস্যা হয়েছে?
মেহেরুন নেছা আরশকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে রুমের ভিতরে ঢুকলেন। বিছানায় বসে আশেপাশে তাকিয়ে নুসরাত কে খুঁজলেন।
” তোর বউ কই?
“ওয়াশরুমে!
মেহেরুন নেছা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
” কোনো সুখবর?
“কীসের সুখবর?
“না মনে করছিলাম ওয়াশরুমে গেছে তাই কোনো সুখবর হইতে পারে।
আরশ বিরক্ত হয়ে বলল,
“ওয়াশরুমে গেলেই সু-খবর হয়ে যায়। মানুষ এখন ওয়াশরুমে ও যেতে পারবে না তোমার জন্য। তোমার চিন্তা ভাবনা দাদি হাই লেভেলের।
নুসরাত ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মেহেরুন নেছাকে দেখে অবাক হলো। হঠাৎ এই বুড়ি এখানে কি করছে? আবার কি তাল-গোল পাকাতে এখানে আসছে।
নুসরাত কর্কশ গলায় বলল,
” কি হয়েছে? এখানে কি? এতো রাতে আমাদের রুমে কেন? নিজের রুম নেই! মানুষের প্রাইভেসি ভঙ্গ করতে চলে আসছো।
“তোর রুম কবে হলো এইডা! আর তুই কে আমাকে এই কথা জিজ্ঞেস করার? আইজ আমি এই রুমে থাকবো।
নুসরাত আর আরশ নাক মুখ বিকৃতি করে একসাথে চেচিয়ে উঠল এ্যাঁ বলে। মেহেরুন নেছা দু-জনের দিকে একবার তাকিয়ে বললেন,”এখানে এ্যাঁ বলার কি আছে? তোগো রুমে থাকলে কোনো পবিলেম হইব।
নুসরাতের নির্লিপ্ত গলা,
“আমার কোনো প্রবলেম নেই থাকতে চাইলে থাকো কিন্তু কোথায় শুবে।
মেহেরুন নেছা ঝটপট করে বললেন,
” তোদের দুটোর মাঝে।
নুসরাত চোখ রসগোল্লার মতো করে ফেলল। কি বলে এই বুড়ি? তাদের মাঝখানে ঘুমাবে। তারপর মনে হলো তার আর আরশের মধ্যে এক হাত জায়গা খালি পড়ে থাকে। তাহলে বুড়ি ওখানে শুয়ে পরলে কোনো সমস্যা হবে না নুসরাতের। কিন্তু আরশ মুখ ফুসকে বলে ফেলল, “নাহ!
নুসরাত আর মেহেরুন নেছার প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি সামনে আরশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। আরশ চোখ সরিয়ে বলল,”নাহ আমি বলতে চাইছিলাম তুমি আমাদের দু-জনের মাঝখানে শুয়ে পড়বে।
মেহেরুন নেছা মাথা নাড়ালেন উপর নিচ। আরশ ঢুক গিলে বলল,”আআচ্চচ্ছা শুয়ে পরো!
নুসরাত আরশের দিকে চোখ উল্টে চেয়ে রইলো? আরশের সাথে নুসরাতের চোখা চোখি হতেই আরশ ঝটপট চোখ সরিয়ে নিল। নুসরাত সন্দেহের দৃষ্টিতে আরশের দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলো পলক না ফেলে। আরশ চোরের মতো মুখ লুকিয়ে গিয়ে শুয়ে পড়ল। মেহেরুন নেছা ও গিয়ে শুয়ে পড়লেন মাঝখানে। নুসরাত লাইট অফ করে এসে আরেক পাশে শুয়ে পড়ল। মাথার নিচে হাত রেখে ছাদের দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। নিস্তব্ধ সময়, ঝিঝি পোকার ঝি ঝি ডাক শোনা যাচ্ছে চারিদিকে।
কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর মেহেরুন নেছা নড়েচড়ে আরশের দিকে ফিরে শুয়ে পড়লেন। আরশের কাপড় টেনে ধরে বললেন, “তুই মাঝে চলে যা আমার শ্বাস বন্ধ হইয়া যাইতাছে এইখানে।
“আমি কেন যাব? নুসরাত কে বলো তোমার পাশে আসার জন্য।
মেহেরুন নেছা যতেষ্ট গলা নিচু রেখে বললেন,
” ও ঘুমাইয়া পড়ছে। আমি ওর গেঞ্জি ধরে টান দিছি তারপর ও ফিরে তাকাইতেছে না।
আরশ মাঝে যেতে চাইলো না, মেহেরুন নেছা জোর দিলেন মাঝে যাওয়ার জন্য। আরশ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মেহেরুন নেছাকে তারপাশে আসার জন্য বলল। আরশ উঠে গিয়ে নুসরাতের পাশ ঘেঁষে শুয়ে পড়ল। মেহেরুন নেছা আরশের কানে কানে বললেন,”একটু পাশ ঘেঁইষা শুইয়া পর নুসরাতের আমার জাইগা হইতাছে নারে আরশ।
আরশ বিরক্ত হয়ে কিছুটা সরল। মেহেরুন নেছাকে বলল,
” জায়গা হইছে!
“নারে আরশ আরেকডু সর!
আরশ নির্লিপ্ত গলায় বলল,
” আর জায়গা নেই।
“জায়গা আছে। নুসরাতরে তোর বুকের সাথে ধইরা বিছানার কোণ লাগ।
” ধরা যাবে না। চিৎকার করবে!
“করবে না ঘুমাই গেছ। তোর বুকের সাথে চাইপা ধর তাইলেই তোগো ও জায়গা হবে,আমার ও জায়গা হবে।
আরশ কিছু বলতে গিয়ে ও বলল না। নুসরাতকে টেনে নিজের সাথে চেপে ধরলো। চেপে ধরার সাথেই নুসরাতের মুচড়া মুচড়ি শুরু হয়ে গেল তারপর হাফসাফ করতে লাগলো। আরশ নুসরাত কে টেনে উপরের দিকে তুলে নিজের হাতে মধ্যে শুয়ালো। যাতে হাফসাফ না করে। নুসরাত অন্য পাশ ঘুরে শুয়ে ছিল ঘুমের মধ্যে আরশের দিকে পাশ ফিরে শুলো। আরশ এক হাত দিয়ে নুসরাতের পিঠ আর অন্য হাত দিয়ে নুসরাতের কোমর চেপে নুসরাতকে ধরে রাখলো। টেবিল ল্যাম্পের হালকা সোনালি আলোয় নুসরাতকে ভীষণ সুন্দর দেখালো আরশের কাছে। আরশ হাত দিয়ে নুসরাতের মুখের সামনে আসা চুলগুলো গুছিয়ে কানের পিছনে গুজে দিল। নুসরাত ঘুমের মধ্যে হালকা নড়ে চড়ে উঠলো। আরশ এক পা নুসরাতের দু-পায়ের উপর রেখে পা দিয়ে নুসরাতকে চেপে ধরলো যাতে নড়চড় করতে না পারে।
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৫
” এই আরেকটু চাপ তো আমার জাইগা হইতাছে না।
“এতো জায়গা পেয়ে ও তোমার জায়গা হচ্ছে না।
” নাহ! বউয়ের পাশ ঘেইষা শুইয়া পর। তাইলেই আমার জাইগা হইব।
আরশ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মেহেরুন নেছাকে প্রয়োজনীয় স্পেস দেওয়ার জন্য নুসরাতের গলার এক পাশে মুখ নিয়ে আলগোছে শুয়ে পড়তেই নাকে মেয়েলি সুগন্ধি আসলো। আরশ জোরে নাক টেনে শ্বাস নিল। গলার ভাঁজে মাতালের মতো করে নিজের অজান্তেই হালকা ঠোঁট ছোঁয়াল। তারপর চোখ বুজল ওভাবেই নুসরাতের গলার ভাঁজে।