প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৭

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৭
জান্নাত নুসরাত

মধ্যরাত নিয়ন বাতির ঘোলাটে আলো জানালার পর্দার ফাঁক ফোঁকড় দিয়ে রুমে প্রবেশ করছে। নিয়ন বাতির হালকা আলোয় মেহেরুন নেছা বিছানা থেকে উঠে বসলেন। হাত তুলে শরীরে আড়মোড়া ভাঙ্গলেন। মাথা ঘুরিয়ে আরশ আর নুসরাতের দিকে একবার তাকিয়ে ঠোঁট চেপে মুচকি হেসে লাঠি দিয়ে ঠকঠক শব্দ তুলে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।

সকাল নয়টা বেজে চুয়াল্লিশ মিনিট। জায়িন অফিসে চলে গিয়েছে প্রায় দশ মিনিট হবে। ইসরাত আগের তোলনায় শরীর ভালো হওয়ায় রেস্টুরেন্টে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ইসরাত ক্যাব ও বুক করে নিয়েছে। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল। ইসরাত গলায় স্কার্ফ পেঁচাতে পেঁচাতে একবার দরজার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল। আরাম করে ওভার কোট পরে চুলে পনিটেল করলো। ইসরাতের ভাবসাব দেখে মনে হলো দরজার খোলার কোনো তাড়া নেই।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এরমধ্যে পাঁচ বারের বেশি কলিং বেল ভেজে উঠেছে। ইসরাত গরম পানির পট আর শুকনো মরিচের গুড়ো ব্যাগে ঢুকিয়ে ধীরে সুস্থে রুম লক করে বের হলো। বের হওয়ার আগে চেক করে নিল পার্সপোট সাথে আছে নাকি? ইসরাত সবসময় সাথে এন আই ডি কার্ড,পার্সপোট সহ আত্মরক্ষার জিনিস নিজের সাথে ক্যারি করে। কখন কোন বিপদ হয়ে যায় বলা যায় না। তাই নিজের সাথে সবকিছু রাখে।
বাহির থেকে অনবরত কলিং বেল বেজে যাচ্ছে। ইসরাত একবার দরজার দিকে তাকিয়ে পায়ে শু পরে নিল। বাহিরের মানুষটার অনেক তাড়া ভিতরে আসার ইসরাতের কাছে মনে হলো। নাহলে একবার না থেমে কেন অনবরত কলিং বেল দিয়েই চলেছে? কলিং বেলের উপর থেকে মনে হচ্ছে হাতই সরছে না।

ইসরাত অলস ভঙ্গিতে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজার হ্যান্ডেলে ধরে মুচড় মারতেই ও-পাশের ব্যক্তি ক্ষীপ্র ভঙ্গিতে ইসরাত কে থাপ্পড় মারতে নিল। ইসরাত হঠাৎ এমন আক্রমণে তাজ্জব বনে গেল। চোখ গুল গুল করে তাকিয়ে থেকে সামান্য নিচের দিকে ঝুঁকে গেল। মেয়েটা অশ্রাব্য ভাষায় ইসরাতকে গালি দিচ্ছে।
” ইউ বিচ, হাউ কুড ইউ টেইক জায়িন এওেয়ে ফ্রম মি.
ইসরাত তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। মেয়েটা ইসরাতকে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসতে দেখে গালি দিল,” ইউ ব্লাডি বিচ গার্ল ডোন্ট স্মাইল।
ইসরাত তবুও হাসল। মুখ আর কান লাল হয়ে গিয়েছে এতক্ষণে। সেকেন্ডের সাথে ইসরাতের মুখের রিয়েকশন চেঞ্জ হয়ে গেল।
মেয়েটা ইসরাতকে হাসতে দেখে থাপ্পড় মেরে বসল। ইসরাতকে ধাক্কা দিয়ে এপার্টমেন্টে ঢুকে গেল। ইসরাত শুধু মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইল। পিছন থেকে কিছুক্ষণ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থেকে বিশ্রী হাসি হাসল।

আরশের ঘুম ভাঙল সকাল আটটার দিকে। মুখে গরম বাতাসের ছোঁয়ায়। চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো নুসরাতের মুখের উপর তার মুখ। আরশ ভ্রু বাঁকিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তাকল। সে কি সারারাত নুসরাতের মুখে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে ছিল? নুসরাত এখনো ঘুমিয়ে। আরশ হাত ঝাড়া দিল। নুসরাতের শরীরের নিচে একহাত সারারাত থাকার জন্য হাত ব্যথা হয়ে আছে এখন। পাশ ফিরে একবার তাকাল আরশ। মেহেরুন নেছার জায়গায় খালি পড়ে আছে। আরশ চোখ ঘুরিয়ে নুসরাতের মুখের দিকে আবার তাকাল। ছোপ ছোপ লাল দাগ হয়ে আছে। আরশ তর্জনী আঙুল দিয়ে লাল দাগ স্পর্শ করতে গিয়ে থেমে গেল। ভয়ার্ত চোখে একবার বাহিরের দিকে তাকিয়ে নুসরাতের চোখের উপর হাত তুলে উপর নিচ করলো। নুসরাতকে গভীর ঘুমে দেখে হাত দিয়ে হালকা হাতে স্পর্শ করলো লাল দাগ বিশিষ্ট জায়গা গুলোতে।

আরশ নিজের গালে হাত দিল। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির উপস্থিতি গালের মধ্যে পেল। অনেক দিন সেভ না করার ফল। নুসরাতের গালের দিকে তাকিয়ে বুঝল লাল দাগ হওয়ার জন্য দায়ী সে নিজেই। নিজে বললে ভুল হবে তার খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি এর জন্য দায়ী। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আরশ নুসরাতের নাক বৃদ্ধা এবং তর্জনী আঙুল দিয়ে চেপে ধরলো।

নাক ধরার পাঁচ সেকেন্ডের ভিতর নুসরাতের হাফসাফ শুরু হলো,আরশ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে নাক ছেড়ে দিল। মিনিট দুয়েক কাটার পর আরশ ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নুসরাতের নাকে হালকা হাতে টোকা দিল। হাতে ভর দিয়ে নুসরাতের মুখের দিকে ঝুঁকে নুসরাতের ঠোঁটে আলগোছে চুমু খেল। চুমু খেতে গিয়ে আরশের নাকে কস্তুরি আর ভ্যানিলা ফ্লেভারের গ্রাণ আসলো। নাক টেনে শ্বাস নিল আরশ। বিড়বিড় করল,”কি পারফিউম ইউজ করে? এতো সুন্দর গ্রাণ!
চুমু খেয়ে আরশ নিজেই লজ্জা পেল। লজ্জিত ভঙ্গিতে ঝাকড়া চুলে হাত বুলিয়ে মুচকি মুচকি হাসল। সে কি সুযোগ নিয়েছে নুসরাতের? ভিতর থেকে কেউ বলে উঠলো, তোর বউ তুই কেন সুযোগ নিবি? এটা তোর অধিকার! আরশ নুসরাতের দিকে আবার তাকাতেই দেখল নুসরাতের চোখের পাতা হালকা নড়ছে। আরশ সরে গেল!এককথায় পালিয়ে গেল, নুসরাতের থেকে দূরে।

আরশ ওয়াশরুমের দরজা লাগাতেই নুসরাত নড়ে চড়ে চোখ মেলে তাকালো। নির্লিপ্ত চোখে কিছুক্ষণ দরজার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বিশ্রীরকম হাসি হাসল। বিড়বিড় করলো,”সৈয়দ আরশ হেলাল গু হারান হারার জন্য রেডি হোন! নুসরাত ঠোঁট উলটে ন্যাকা গলায় বলল,
“এরকম করছেন কেন আপনি? উঁহু, এটা তো ঠিক হচ্ছে না। একদম ঠিক হচ্ছে না!
নুসরাত মুখ দিয়ে চুকচুক করলো। ওয়াশরুমের দিকে পিঠ ফিরিয়ে শুয়ে তাচ্ছিল্য করে বলল,”পুরুষের ভালোবাসা যেমন একজন নারীর জন্য ভয়ংকর। তেমনি, নারীর ছলনা পুরুষের জন্য ভয়ংকর।

“তোর বাসর সম্পর্কে কিছু বল? কী রকম কাটল বায়া..সসস..রর….রয়ায়য়া… ততত।
বাসর রাত বলতে গিয়ে মমো একটু টেনে টেনে বলল। নুসরাত ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো। মমোর ডাবল মিনিং কথার উত্তর দিল ডাবল মিনিং ভাবে। কিছুটা টেনে টেনে ডিপ গলায় বলল,” তুই যেরকম ভাবছিস তার থেকে অনেক হট ভাবে কেটেছে।
মমো আগ্রহ নিয়ে নুসরাতের দিকে তাকালো। নুসরাত একপাশে শুয়ে মোবাইলে নোবেল পড়ছিল। মমো নুসরাতের হাত থেকে মোবাইল টেনে নিয়ে এক পাশে ছুঁড়ে মারল। নুসরাত মোবাইলের দিকে কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মমোর দিকে চোখ ঘুরালো। নুসরাতের এমন শান্ত চোখে তাকানো দেখে মমো কিছুটা ভরকে গেল। নুসরাতের উপর কোনো ভরসা নেই। কোনো সময় সিম্পল বিষয় নিয়ে রাগ করে আবার, কোনো সময় অতিরিক্ত মাত্রা কোনো কিছু হলে রাগ করে না। তাই এই মেয়েকে বিশ্বাস করা যাবে না।
মমো আমতা আমতা করে বলল,

” কি রে বোন? এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? মনে হচ্ছে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবি আমায়!
নুসরাত শান্ত গলায় বলল,
“কি?
মমো কিছু বলার আর সাহস পেল না। মুখ লটকে চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে বলল,”কিছু না!
নুসরাত এবার উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো। মমো নুসরাতের দিকে রাগ করে তাকালো না। নুসরাত হেসে হেসে বলল, “বল কি বলবি?
মমো মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। কথা বলল না।
নুসরাত নাক মুখ বিকৃতি করে বলল,

“ন্যাকামি করবি না! তোদের মতো বুড়ো মেয়েদের ন্যাকামি করতে দেখলে ইচ্ছে করে পশ্চাৎ দেশে লাত্তি মেরে সৌরজগতে পাঠিয়ে দিতে। বুড়ো হয়ে যাচ্ছে এখনো ডং করেছে বাচ্চাদের মতো করে। তোর তোলনায় বাচ্চারা তো আরো বেশি ম্যাচিউর।
মমো নুসরাতের কাছ থেকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না পেয়ে মুখ লটকে এসে নুসরাতের পাশ ঘেঁষে শুয়ে পড়ল। মমো শুয়ার মিনিট তিনেক কাটার পর নুসরাত বলল,” দূরে গিয়ে শোয়ে পর। আমার সাথে লেগে শুবি না। আমার কি রকম লাগে?

মমো এবার চ্যাঁতে গেল। নুসরাত কে দু-হাতের মধ্যে বন্ধি করে শুয়ে পড়ল। নুসরাত মমোর কাছ থেকে সরার চেষ্টা করোল। মমো ছাড়লো না নুসরাত কে। নুসরাত ধীরে ধীরে হাত তুলে মমোর টি-শার্টের উপর থেকে ইনারের ফিতা চেপে ধরে টেনে ধরলো। দু-সেকেন্ড ইনারের ফিতা ধরে রেখে ঠাস করে ছেড়ে দিল। ব্যথায় মমো চিৎকার করে উঠলো।
“এই বাল ছাড়! আহ, ব্যথা পাইছি! আম্মু গো…..
বালডা ছাড় আমারে! তুই আমার লজ্জাহরণ করতে চাইছিস। ছাড় বলছি!

” না এখন ছাড়ব কেন? আয় জড়িয়ে ধর আমায়! তোর না শখ আমাকে জড়িয়ে ধরার আয় আয়…!
নুসরাত কে ধাক্কা দিয়ে মমো উঠে বসলো। নুসরাত ছেলেদের মতো চোখ বাঁকিয়ে মমোর শরীরের উপর থেকে নিচের দিকে তাকালো। এক চোখ ছোট করে মমোর বুকের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল।
“চ্যাহ চ্যাহ চ্যাহ! আরশ ভাইয়া একটা ছেলে রুপি মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছে। একজন মেয়ের লজ্জাহরণ করতে তোর লজ্জা লাগলো না। কি মেয়েরে বাবা? আমি তো সন্দেহিত তুই না, আবার আরশ ভাইয়ার ভার্জিনিটি হরণ করে নিয়েছিস।
নুসরাত আবার ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। ভ্রু নাচিয়ে মমোর দিকে হাত বাড়িয়ে তাকালো। মমো নুসরাতের থেকে কিছুটা গুলুমুলু হওয়ায় নুসরাতের হাত চেপে ধরে নুসরাত কে উল্টে ফেলে দিল বিছানার উপর। মমো নুসরাতের হাত পৃষ্ঠদেশে চেপে ধরলো।নুসরাত চিৎকার করে উঠল। হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে মমোর উদ্দেশ্যে বিশ্রী গালি ছোঁড়ে দিল।

” এই শালি ছাড়! একবার ছাড় দেখবি কি করি? থাপড়ে তোর চেহারার নকশা বদলে দিব। বড় বোনের উপর অত্যাচার করছিস। তোর থেকে দুই মাস ২দিনে বড় আমি।
নুসরাতের চিৎকার শুনে আরশ রুম থেকে দৌড়ে বের হলো। ইরহামের রুমের দিক থেকে চিৎকারে শব্দ আসছে বলে তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে ইরহামের রুমের দিকে এগিয়ে গেল।
মমো নুসরাতের ওভার সাইজড টি-শার্টের উপর দিয়ে পিঠে কিছু খোঁজল। নুসরাত কে অতিরিক্ত নড়াচড়া করতে দেখে এক হাত দিয়ে নুসরাতের হাত পৃষ্ঠদেশে চেপে নিজে দু-পা তুলে আরাম করে নুসরাতের পিঠের উপর বসলো।
“তোর জামাইয়ের উপর বসেছিস! শালি নাম! ব্যথা পাচ্ছি তো! এরকম গন্ডারের মতো শরীর নিয়ে আমার মতো অবলা নারীর উপর উঠে বসেছিস কেন? আমার মতো অবিবাহিত নারীকে মেরে ফেলতে চাচ্ছিস তাই না! আমি কিন্তু এখনো বিয়ের লাড্ডু খাইনি! বইন নাইমা যা, আমি মরার আগে! আমার ভবিষ্যৎ বাচ্চাদের জন্য হলেও নেমে যা!
মমোকে পিঠ থেকে নামতে না দেখে নুসরাত নিচের দিক থেকে পা তুলে মমোকে লাথ মারতে নিল কিন্তু পারল না। মমো নুসরাতের পিঠে ইনারের ফিতা খোঁজতে লাগলো। ফিতা খুঁজে না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে গেল। বিভ্রান্ত হয়ে বলল,

“তোর ইনারের ফিতা কোথায়?
নুসরাত দাঁত কেলিয়ে হাসল। মমো পিঠের উপর বসায় শ্বাস টেনে ফেলে বলল,”ইনার থাকলে না ফিতা পাবি।
মমো হতবিহ্বল হয়ে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল। নুসরাতের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল, “মানে কি ভাই?
নুসরাত সুযোগ নিল মমোর অন্যমনস্ক তাকার। হাত টান দিয়ে ছুটিয়ে নিয়ে এসে মমোকে পায়ের সাথে পা চেপে উল্টে ফেলে দিল বিছানায়। নুসরাত শোয়া থেকে উঠে বসে কোমর চেপে ধরলো। হাত তুলে শরীরের আড়মোড়া ভেঙে চুল হাত খোপা করতে করতে বলল,” আমি ইনার পরি না!
দরজার বাহির থেকে আরশ গলা ফাটিয়ে অবাক গলায় জিজ্ঞেস করলো,”কি?

নুসরাত আর মমো একসাথে দরজার দিকে ফিরে তাকালো। মমো এক আকাশ সমান লজ্জা নিয়ে রুম থেকে বারান্দায় পালালো। নুসরাত আরশের দিকে নির্লিপ্ত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিল। আরশের মুখ এখনো হা হয়ে আছে। এতো বড় শকড বেচারা নিতে পারেনি। হাত দিয়ে মুখ মুছে নিয়ে চুল পিছনের দিকে ঠেলে দিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো নুসরাতের দিকে।
নুসরাত ঠান্ডা গলায় বলল,
” মুখ বন্ধ করুন! মশা ঢুকে যাবে।
আরশ মুখ লটকে নুসরাতের দিকে তাকালো। ঢোক গিলে নুসরাত কে জিজ্ঞেস করলো,”আমি যা শুনেছি তা কি সত্যি!

“তুই জাইনের জীবন থেকে সরে যা!
ইসরাত শান্ত পায়ে হেঁটে গিয়ে সোফার উপর বসলো। মেয়েটা ইসরাতকে বসতে দেখে পায়ের উপর পা তুলে বসলো। ইসরাত হাসল গাল বাঁকিয়ে। সামনে থাকা কাচের টেবিলের উপর দু-পা তুলে ক্রস করে রাখলো। পায়ের মাঝখানে রাখল মেয়েটার মুখ। গলা যতেষ্ট শান্ত রেখে কথা বলল ইসরাত।
” কীভাবে সাহায্য করতে পারি আমি আপনাকে মিসেস জোসেফ এ…মে….লি!
ইসরাত টেনে টেনে এমেলির নাম বলল। চোখ মুখ বাঁকিয়ে এমেলির পানে নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে রইলো। এমেলির কাছে মনে হলো ইসরাত তাকে নিয়ে মজা করছে। রাগে এমেলি চিৎকার করে দাঁড়িয়ে গেল।
“ইউ বিচ! তুমি আমার কাছ থেকে জায়িনকে কেড়ে নিয়েছ।

ইসরাত চোখ ছোট ছোট করে তাকালো এমেলির দিকে। এমেলি ইসরাতের তীক্ষ্ণ চোখে তাকানো দেখে ভরকে গেল।ইসরাত নিজের দিকে আঙুল তুলে বলল,”ওহ রিয়েলি, তুমি আমাকে দুশ্চরিত্রা বলছ। আগে নিজের দিকে একবার তাকাও। নিজে কি তুমি? স্বামী থাকা সত্ত্বেও অন্যের জামাইয়ের দিকে চোখ দিচ্ছো। ছি্হ…. কি ঘৃণ্য তুমি? ডাসবিনের নোংরা কিট তোমার থেকে পরিস্কার।

ইসরাত বমেট করার মতো মুখ করলো। এমেলি চিৎকার করে ইসরাতের দিকে এগিয়ে আসতে নিলে ইসরাত বলল,”উঁহু! সামনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করবে না। আর এক পা বাড়ালে আমার দিকে, আস্তো পা নিয়ে এপার্টমেন্টের বাহিরে যেতে পারবে না। আমাকে মোটেও অবলা মনে করবে না। একটা থাপ্পড়ের বদলে দশটা থাপ্পড় ফিরিয়ে দেওয়ার এভেলিটি আমি রাখি। সো, নিজের সীমা লঙ্গন করার একদম চেষ্টা করবেন না মিসেস এ.মে.লি।
এমেলি ইসরাতের দিকে কাথ হয়ে তাকিয়ে ক্যানাইন দাঁত বের করে অদ্ভুত হাসল। বুঝল ইসরাতের সাথে হাত দিয়ে পারা যাবে না। যা করতে হবে, সব মুখ চালিয়ে করতে হবে। এমেলি ইসরাতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে গিয়ে সোফার উপর বসলো আবার আরাম করে। টেবিলের উপর থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেল এক চুমুক। তারপর হাত থেকে পানির গ্লাস ফেলে দিল ইচ্ছাকৃত ভাবে। মুখ দিয়ে শব্দ করলো, “উপ’স!
ইসরাত ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে রইলো গ্লাসের ভাঙা টুকরোর দিকে। এমেলি বুকের কাছে দু-হাত বেঁধে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে হাসল।

“এতো যে মুখ চালাচ্ছিস তুই, তুই জানিস এই পুরো বিল্ডিং এর মালিক কে?
ইসরাত এমন ভাব করলো সে এমেলির কথা শুনছেই না। ডান হাত তুলে নখ খুঁটতে লাগলো। তারপর নিজের মুখের সামনে হাত নিয়ে নাড়িয়ে চাড়িয়ে নেলস দেখতে লাগলো।
এমেলি নাক মুখ কুঁচকে গালি দিল,
” বা নি কে তা মেখ! ( ফ্রান্সের ভাষায় একটা জঘন্য গালি)
ইসরাত ফিরে তাকালো না।
“এতো ভাব কীসের তোর? এই যে এখানে থাকছিস! কার এপার্টমেন্টে থাকছিস? আমার! আমার এপার্টমেন্টে থেকে আমার সাথে বেয়াদবি করছিস। তোর বাপ-মা এর এই যোগ্যতা নেই তোকে একটা এপার্টমেন্ট কিনে দেওয়ার। আত্মসম্মানহীন মেয়ে! তোর কি সেই পরিমাণ অর্থ নেই একটা এপার্টমেন্ট কিনার? আচ্ছা যা আমি তোকে কিনে দিব একটা এপার্টমেন্ট! শুধু তুই জাইনকে ছেড়ে দিবি।

ইসরাত পা থেকে জুতো খুলে এমেলির দিকে ছুঁড়ে মারল। জুতো এমেলির মাথার ০.০১ সে.মি উপর দিয়ে চলে গেল। কাচের টেবিল লাথ মেরে উল্টে দিল। ইসরাত ভদ্রতা না দেখিয়ে বলল,” কি বলেছিলি আবার বল? আমার বাপ -মা কে নিয়ে তোকে কথা বলতে না করেছি না একবার। তারপর ও তুই তাদের টানিস এসবে বার বার!
ইসরাত চিৎকার করে বলল,

“তোর জায়িনকে চাই না। যা নিয়ে যা! গো টু হেল উইথ ইউ্যের ফাকিং জায়িন। আর তোর এপার্টমেন্ট। তোর এপার্টমেন্টের আমি গুষ্টি কিলাই। এরকম হাজার হাজার এপার্টমেন্ট কিনতে আমার মিনিট লাগবে না। এক চুটকিতে আমি এসব এপার্টমেন্ট কিনে নিতে পারি।
ইসরাত নিজের আরেক পায়ের জুতো খুলে ছুড়ে মারল এমেলির দিকে। এমেলি কিছু বুঝে উঠার আগে জুতো গিয়ে পড়ল তার মুখে। সেন্ট লরেন্ট এর সাইট ব্যাগ নিয়ে মুজা পরা অবস্থায় এপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে গেল ইসরাত।
ইসরাত বেরিয়ে যেতেই এমেলির মুখে ফুটে উঠলো পৈচাশিক হাসি। ঘাড়ে ধরে এ -পাশ থেকে ও-পাশ ফিরে হা হা করে হাসল।
“তোমার জন্য আমি একশত হাজার টা জুতোর বারি খেতে ও রাজি জাইন।

নুসরাত একটা গ্রুপ খুলল। গ্রুপে ইরহাম, আরশ, জায়ান,মাহাদি, নাহিদ,আরমান,আবির সবাই আছে। নুসরাত মমোকে জিজ্ঞেস করলো, ” একটা গ্রুপ খুলছি। গ্রুপে তোকে এড দিব?
“তুই গ্রুপে থাকলি আমার কোনো সমস্যা নেই! এড দিয়ে দে!
নুসরাত মমোকে এড দিয়ে বসে থাকলো। কিছুক্ষণের মধ্যে জায়ান মেসেজ পাটালো।

” কি রে?
ইরহাম লিখলো,
“কিছু না ভাইয়া!
ইরহাম নুসরাত কে মেনশন দিয়ে লিখলো,
” কই মরেছিস তুই? গ্রুপ খুলে গ্রুপ এডমিন নিজেই উধাও।
নুসরাত লিখলো,
“তুই বাল কোথায় গিয়েছিস? ঘুম থেকে উঠে দেখি বাড়ি থেকে উধাও! আমি তো শুধু গ্রুপ থেকে উদাও হয়েছি।
ইরহাম ইমোজি পাঠালো।
” ভাই আব্বুর সাথে বিজনেস ট্রিপে এসেছি।
নুসরাত লিখলো,
“শালা সকল বাল ছালে যাইতে তো নিলা,এখন বড় জায়গা গেলা নিলা না!
ইরহাম লিখলো,
” ভাইয়ারা আছে!
নুসরাত লিখলো,

“আমি ওগো ধারদারি! ওরা থাকলে কি আর না থাকলে কি? নুসরাত কাউকে ভয় পায় না?
মাহাদি রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল নিজের কিছু পিক পাঠালো। মমো শুধু বসে বসে সবার চ্যাট দেখতে লাগলো। মাহাদি গ্রুপ থেকে বের হয়ে মমোর ইনবক্সে মেসেজ পাঠালো,
” এতো গুলো ছেলের ভীরে তুই কি করছিস?
মমো তার উত্তর না দিয়ে বলল,
“এখানে নুসরাত আমাকে এড দিয়েছে।
” এটা কথা নয়, তুই এতক্ষণ ধরে এতোগুলো ছেলের মধ্যে কি করছিলি। তুই যখন এড দিয়েছিল ভাবি তখন লিফট নিয়ে নিতে পারতি গ্রুপ থেকে।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৬

“আমি তো কথা বলিনি! শুধু দেখেছি।
” তুই কথা বলিস আর না বলিস তুই এতক্ষণ ধরে ননমাহরামদের মাঝে কি করছিলি। আর এসব করে তুই নিজেকে পিউর দাবি করিস!
“আপনি ও তো ননমাহরাম! তাহলে আপনি আমার সাথে কথা বলেন কেন?
” আরে পাগল মহিলা, আমি কি থাকব নাকি ননমাহরাম? কয়েকদিন পর আমি তোর জন্য হালাল হয়ে যাব।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here